Next
Previous
0

গল্প - সুনীল দাশ

Posted in






অতি সাধারণ একটা টেবিল। দেখতে আহামরি নয় মোটে। আকারে বড় নয় তেমন, তবে খুব ছোটও না। চোখ টানে না সেভাবে। টেবিলটার ওপর খাতাপত্তর বা কাগজপত্তর রেখে, টেবিলটার সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে, তাতে বসে, টেবিলটার দিকে সামান্য ঝুঁকে, লিখে যাওয়া চলে মর্জি মাফিক। বিখ্যাত উপন্যাস ‘বুড্ডেনব্রুকস্‌’ অথবা অসামান্য উপন্যাস ‘দ্য ম্যাজিক মাউন্টেনে’র কয়েকপৃষ্ঠা, অন্তত বেশ কিছু অনুচ্ছেদ এই টেবিলে বসেই লিখেছিলেন কিনা টোমাসমান তাতো কেউ বলতে পারবে না। তবে উত্তর জার্মানির বন্দর শহর লুবেক-এর চার নম্বর মেঙ্গস্ট্রাসের বুড্ডেনব্রুকসহাউসে টোমাসমানের খোদ যে লেখার টেবিলটি রয়েছে তা আকারে অনেক বড়। বিশ শতকের গোড়া থেকে সেই লেখার টেবিলের মাঝবরাবর যে টেবিল ল্যাম্পটি দাঁড় করানো তার সিলিনড্রিকাল শেডটাও বেশ বড়সড়। সেটার সঙ্গে এটার তুলনা চলে না। সচ্চিদানন্দ সেনশর্মা লুবেক শহরে কাটিয়েছেন সাতাশ বছর। লুবেক বন্দরের এক অফিসে চাকরি করেছেন। বার্লিনের বাসিন্দা ডাক্তার টমাস ইয়াঙ্কে সচ্চিদানন্দের চার দশকের বন্ধু। এই বন্ধুত্ব সচ্চিদানন্দের স্ত্রী ক্যাথরিনের সুবাদে। ক্যাথরিন মারা গেছে এগারো বছর আগে। ক্যাথরিন – সচ্চিদানন্দের একমাত্র সন্তান সুখময় সেনশর্মা এখন ওই টোমাসমানের টেবিলটির মালিক। দুর্ভাগ্য সচ্চিদানন্দের যে তার পুত্র সুখময় সেনশর্মাকে অনেক চেষ্টা করেও মানুষ করতে পারেননি। অসৎসঙ্গে পড়ে সচ্চিদানন্দের একমাত্র উত্তরাধিকারী পরিণত হয়েছে আস্ত এক উড়নচণ্ডীতে। জার্মানির কর্মজীবনে সচ্চিদানন্দ কম উপার্জন করেননি। তার ওপর ক্যাথরিনকে বিয়ে করার পর বিত্তবান অভিজাত শ্বশুরবাড়ির অনেক সম্পত্তি তার সেনশর্মা পরিবারের আওতায় চলে এসেছিল। কিন্তু অপদার্থ সুখময়ের নয়ছয় করার বেসামাল বিপত্তিতে হাতছাড়া হয়েছে সবই একে একে। এখন খবর এলো কুলাঙ্গার সুখময় সেনশর্মা টোমাসমানের ওই টেবিলটিকে নিলামে বেচার বন্দোবস্ত করে মোটা অঙ্কের ইউরো পকেটস্থ করবার মতলবে আছে।

একাধিক আত্মীয়র ফোন পেলেন সচ্চিদানন্দ। আমাদের পরিবারের এতোকালের একটা ঐতিহ্য, একটা গৌরবের সম্পদ, একটা ইতিহাস – এভাবে আমাদের পারিবারিক অধিকারের বাইরে চলে যাচ্ছে অথচ আমাদের কিছুই করার থাকবে না?

কী বা কিছু করা যাবে? কিছু করার নেই। সকালবেলায় তিনতলার তার পড়ার ঘরটায় বসে একা চুপচাপ ভেবে যাচ্ছিলেন তিনি খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে। ঘরের পূর্বদিকের জোড়া জানালার বাঁদিকে লোহার গ্রিলের কালো রঙ করা শিক বেয়ে ওঠানামা করছে একটা কাঠবিড়ালি।

অতি সাধারণ মাঝারি মাপের ‘টোমাসমানের টেবিল’ নামে খ্যাত ওই আসবাবটির প্রথম মালিকানা অস্কার ইঙ্কের। অস্কার ইঙ্কে ছিলেন টোমাসমানের সমসাময়িক লেখক এবং টোমাসমানের বন্ধু। অস্কার ইঙ্কের আবাসে মাঝেমধ্যে সাহিত্যের আসর বসতো। সেইসব সাহিত্যের আসরে টোমাসমান অবশ্যই আসতেন এবং দীর্ঘসময় থাকতেন। লেখক অস্কার ইঙ্কের সহধর্মিনী ছিলেন টোমাসমানের লেখার বিশেষ অনুরাগিনী। সাহিত্য আসরের আগে পরে টোমাসমান অস্কার ইঙ্কের আবাসে থাকাকালীন লেখালিখিও করতেন। তবে তাঁর লেখালিখির যা কিছু ওই বাড়িতে ওই অতি সাধারণ মাঝারি মাপের টেবিলটাতে।

আবার ওই টেবিলটাই শিশু বয়স থেকেই খুব পছন্দের ছিল সচ্চিদানন্দের ছেলে সুখময়ের। বাবা মার সঙ্গে, কখনওবা শুধু বাবা সচ্চিদানন্দের সঙ্গে বাবার অনেককালের বন্ধু অস্কার ইঙ্কের বাড়িতে এলেই – বাড়িতে ঢোকামাত্র বাচ্চাছেলে সুখ, সুখময় ছুটে যেত টেবিলটার কাছে। টেবিলটার ওপর বসতো, দাঁড়াতো, নাচতো, মহানন্দে টেবিলটাতে চেপে। শিশুকাল থেকে বালককাল, তারপর কিশোরকালেও কেমন যেন খুব পছন্দের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠেছিল সুখের, তার অস্কার আঙ্কেলের বাড়ির ওই টেবিলটা। নাদুসনুদুস গোলগাল, ভারি সুন্দর মুখের – দেবশিশুর আদল ছিল সুখময়ের চেহারায়। পরিচিতদের মধ্যে শিশুবয়স থেকে সচ্চিদানন্দের ছেলেটিকে দেখে আসছে যারা – তারা কল্পনাও করতে পারেনি ওই ছেলে যুবাকালে পা দিতে না দিতে এমন অধঃগতিতে তলিয়ে যেতে থাকবে। দেবশিশুর মত বন্ধুপুত্রের পছন্দ দেখে টোমাসমানের ব্যবহার করা টেবিলটা অস্কার ইঙ্কে বালক সুখময়কে উপহার দিয়েছিলেন সস্নেহে।

অস্থির কাঠবিড়ালিটা সচ্চিদানন্দের চোখ টেনে রেখেছে। পেছনে বিরখে গাছটার পাতায় পাতায় ঢেকে আছে আকাশটা। কাঠবিড়ালিটা গ্রিলের একটা শিক বেয়ে ওপরের দিকে তড়বড়িয়ে উঠতে উঠতে – আচমকা সামনের একটা পা বাড়িয়ে দুইঞ্চি দূরের শিকটাকে আঁকড়ে ধরল। তারপর সেই শিক বেয়ে চড়বড়িয়ে মাথার দিকে উঠে গেল। ওধারটায় একটা ডাউফলের গাছ। সচ্চিদানন্দ আর কোথাও ওই ডাউফলের গাছ দেখেছে বলে মনে করতে পারে না। বড় বড় পাতা ওর। আমের মত বা মাঝারি মাপের গোল চালতার মত সবুজ ডাউফল পেকে ক্যাট্‌ক্যাটে হলুদ হয়। ভারি দৃষ্টনন্দন ফল। মানুষকে খেতে দেখেনি সচ্চিদানন্দ। পাখিতে খায়। কুটুস্‌ কুটুস্‌ করে পাকা ডাউফল কাঠবিড়ালিকে খেতে দেখেছে সচ্চিদানন্দ।

আবার এক আত্মীয়ের ফোন এল। আবার টোমাসমানের ওই টেবিল প্রসঙ্গ। সচ্চিদানন্দের কী করার আছে? তার ওই বংশ কলঙ্ক, জঘন্য বেয়াদপ ছেলে তার কোনও কোথায় কি কান দেয়? তাছাড়া সত্যি কথা বলতে কি ওই টেবিল তাদের পরিবারের মধ্যে ধরে রাখার জন্যে তার জার্মান আত্মীয়বর্গ যতটা উদগ্রীব সচ্চিদানন্দ ততটা নয়। ততটা কেন, সত্যি কথা বলতে কি, তার আদৌ আগ্রহ নেই। তার মানে এই নয় যে জীবনের তিনভাগের দুভাগ জার্মানিতে কাটিয়েও সচ্চিদানন্দ সেনশর্মা তাঁর জার্মান আত্মীয়স্বজনদের মত, শুধু জার্মান আত্মীয়স্বজন কেন, দুনিয়ার তাবৎ প্রকৃত সাহিত্যের অনুরাগীদের মত টোমাসমানকে বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করেন না – তা নয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে টোমাসমানের সুভদ্র সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, সেকথা মনে রেখে টোমাসমানের প্রতিভার মূল্যায়নে কিছুটা কম করে ফেলবেন এমন বাঙালী সেন্টিমেন্ট সচ্চিদানন্দ সেনশর্মার নয়। টোমাসমানের সৃষ্টির সঙ্গে তার পরিচয়ও শুধুমাত্র কথাশিল্পীর বৃহদায়তন উপন্যাসগুলোর মধ্যে দিয়েই নয়, ‘ডেথ ইন ভেনিস’, ‘সোয়ান সং’এর মত লেখাগুলোও একাধিকবার পড়েছেন। তাই লম্বা মুখের আদল, লম্বা শারীরিক উচ্চতার আর লম্বা সাহিত্য জীবনের এই কথাকার মহোদয়কে তাঁর যথাযোগ্য উচ্চতাতেই রেখেছেন। লুবেকের মান পরিবারের একাধিক মানুষের সঙ্গে পরিচিত এই প্রবীণ বাঙালী ভদ্রলোক।না, খোদ টোমাসমানের সঙ্গে তার কখনও সুযোগ ঘটেনি কথা বলার। তবে সচ্চিদানন্দের জানা আছে বিশ্ববিখ্যাত জার্মান সাহিত্যিক টোমাসমানের সঙ্গে এক জনপ্রিয় বাঙালি লেখকের পরিচয় হয়েছিল এবং সেই পরিচয় নিছক একবার দেখা হয়ে যাওয়ার মত চকিত ঘটনা নয়, রীতিমত বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

বাংলাভাষায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এক লেখক ছিলেন মণীন্দ্রলাল বসু। একসময় মণীন্দ্রলাল বসুর ‘রমলা’ উপন্যাসটি কাহিনী পিপাসু বাঙালি পাঠকের ঘরে ঘরে পাওয়া যেত। ‘রমলা’র পাশাপাশি উপন্যাস ‘সহযাত্রিনী’ বা ছোটদের জন্যে লেখা ‘অজয়কুমার’ উপন্যাস শিক্ষিত বাঙালির মুখে মুখে ফিরত।

টোমাসমানের ‘ম্যাজিক মাউন্টেন’ উপন্যাসের পটভূমি একটি স্যানাটোরিয়াম সুইৎজারল্যান্ডের। দুনিয়ার নানা জায়গা থেকে আসা অগণন রোগগ্রস্ত মানুষের আরোগ্যলাভের চিকিৎসা চলে ওখানে।

মণীন্দ্রলাল বসুর ঘনিষ্ঠ এক প্রিয়জনের চিকিৎসা হয়েছিল বিখ্যাত ওই স্যানাটোরিয়ামে এবং সেইসময়েই জনপ্রিয় বঙ্গভাষী লেখকের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার জয়ী জার্মানভাষী লেখকের সাক্ষাৎকার এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এতটাই বন্ধুত্ব যে ‘ম্যাজিক মাউন্টেন’এর লেখক তাঁর ওই শিরোনামের এক কপি গ্রন্থের পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করে ‘রমলা’র লেখককে উপহার দিয়েছিলেন।

এখন ঘরের মধ্যে বসে খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে গাছের পাতার দোলন দেখলে বোঝা যাচ্ছে – বাতাস জোরে বইছে। সবুজ পাতায় রোদের বোনা আলো ছায়ার নক্সা অস্থির। খানিকদূরে সরু একটা ডালে বসে পাতার ফাঁক দিয়ে কাঠবিড়ালিটাকে চুপচাপ কি দেখছিল ছোট্ট একটা পাখি? এইমাত্র ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল পাখিটা তার খয়েরি ডানা মেলে।

আচমকা অনেক বছর আগের সেই আগুন লাগার দৃশ্যটা মনে পড়ল সচ্চিদানন্দর। ভয়ঙ্কর মারাত্মক কিছু হয়নি। হতে পারত। সেদিন ওই টেবিলসমেত ঘরের অনেককিছুই পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারত সেই ইলেকট্রিক ইস্ত্রি থেকে লাগা শর্ট সার্কিটের আগুনে। শুধু টেবিলটপ্‌টার অনেকখানি পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল। কদিন পরেই ছুতোর ডাকিয়ে সচ্চিদানন্দ টোমাসমানের টেবিলের ওপরের কাঠটা পুরো পালটে মেরামত করে নিয়েছিলেন। সারানোর পর টেবিলটাকে দেখে আগের চেয়ে দামী বলে মনে হত। এ ঘটনা টোমাসমানের মৃত্যুর পর। সচ্চিদানন্দের মনে আছে – জুরিখের কাছে কিলশবুর্গে ঊনিশশো পঞ্চান্ন সালের বারোই আগস্ট টোমাসমান মারা গিয়েছিলেন। জার্মানিতে নাৎসিদের উত্থান হ’ল যখন টোমাসমানকে ইউরোপবাস পরিত্যাগ করে আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সপরিবারে। মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী মান পরিবারের খবর পেতে কোনও অসুবিধে হত না, কারণ সচ্চিদানন্দের স্ত্রী ক্যাথরিনের বান্ধবী ছিলেন টোমাসমানের মেয়ে এরিকা মান।

বেপরোয়া, আত্মধ্বংসী, দুশ্চরিত্র সন্তান যে কোনও একটি পারিবারিক জীবনে কী মারাত্মক অভিশাপ সচ্চিদানন্দ তার শেষ জীবনে ক্রমিক দগ্ধ হতে হতে টের পাচ্ছেন। আরও যে কটা দিন আয়ু তাঁর, এই বেয়াদপিকে সহ্য না করে উপায় কি? সৌভাগ্য যেমন তাকে দুহাত ভরে দিয়েছে; দুর্ভাগ্য তার তেমনই একে কেড়ে নিচ্ছে সব।

বেশ কয়েকবছর আগের সুখময়ের সেই বেসামাল, জুয়া খেলে বিপর্যস্ত, ক্রোধান্ধ দুর্বিপাকে, বাড়ি ফিরে বুকফাটা বিলাপ করতে, হাতের সামনে টোমাসমানের টেবিলটা পেয়ে, আচমকা নিচু হয়ে দুহাতে টেবিলটাকে একেবারে মাথার ওপর উঁচিয়ে তোলার দৃশ্যটা স্মৃতিতে ভেসে উঠল সচ্চিদানন্দের। দুনিয়ার ওপর যাবতীয়, নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারার বিদ্বেষ – শয়তান ছেলেটার দুচোখের আগুনে ঠিকরে পড়ছিল। কানের পর্দা ফাটানোর মতন করে ভয়াবহ এক জান্তব চিৎকারের সঙ্গে মাথার ওপর দুহাত দিয়ে উঁচিয়ে রাখা টেবিলটাকে সজোরে আছাড় মেরে ছিল মেঝের ওপর। টেবিলটার চারটে কাঠের পায়াই ভেঙে গেছিল। কিন্তু এমনভাবে আছাড় খেয়েছিল টোমাসমানের টেবিলটা যে পায়া চারটের দফারফা হয়ে গেলেও – আগেরবার অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া কাঠের বদলে লাগানো টেবিল টপ্‌টা – পুরোপুরি অক্ষত ছিল।

টোমাসমানের ছ’টি সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান – এরিকা মানের সঙ্গে সচ্চিদানন্দের যেমন পরিচয় অন্য পাঁচজনের সঙ্গে তেমন নয়। দ্বিতীয় সন্তান ক্লাউসমান ১৯৪৯এ মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে মারা যান। বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করে গেছেন ক্লাউসমান। তার মধ্যে ‘আলেকজান্ডার’, ‘কিনিডার্নওভেলে’ আর ‘মেফিস্টো’ বই তিনটি কিনেছেন সচ্চিদানন্দ। ‘মেফিস্টো’ ফিল্মটা দেখেও খুব ভালো লেগেছিল তার। ক্লাউসমান আর এরিকা মান – ভাইবোন দুজনে মিলে লিখেছেন ‘অন্য জার্মানি’ বইটা। নিজের লেখা বই ‘টোমাসমানের শেষ বছর’ এরিকা উপহার দিয়েছেন সচ্চিদানন্দকে।

লেখিকা এরিকা মানের অভিনেত্রী হিসেবেও খ্যাতি কম নয়। এরিকার নিজের বিয়েটাও একটা মনে রাখার মত কান্ড বটে। এক ব্রিটিশ সাহিত্যিক মার্কিন মুলুকে প্রবেশের ছাড়পত্র যোগাড় করতে পারছিলেন না কিছুতেই। ইংরেজ লেখকের প্রতি তখন সহমর্মিতায় জার্মান লেখিকা মুশকিল আসানের ভূমিকা নিলেন। এরিকা মান বিয়ে করলেন ইংরেজ লেখককে। মার্কিনী সহধর্মিনীর স্বদেশে যাওয়ার অনুমোদন পেতে বাধা রইল না আর ইংরেজ লেখকের।

এদিকে টোমাসমানের টেবিল নিলামের খবরের উদ্বেগ নিয়ে আবার টেলিফোন এল সচ্চিদানন্দের কাছে। ওপ্রান্ত থেকে বলা হ’ল –‘আচ্ছা, আমরা পরিবারের সবাই মিলে চাঁদা তুলে তো নিলামে টেবিলটা কিনে নিয়ে তারপর ঘুরিয়ে টেবিলটা নিজেদের মধ্যে রাখতে পারি – টোমাসমানের ছোঁয়া লেগে রয়েছে এতকালের ওই টেবিলটাতে।

“একফোঁটাও নেই।“সচ্চিদানন্দ জোর গলায় বললেন,”টেবিলটার ওপরের কাঠটা থেকে শুরু করে চারটে পায়া, - আগাপাশতলা একট ইঞ্চি নেই টোমাসমানের টাচ্‌। ছুতোরে খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। মিথ্যে ‘টোমাসমানের টেবিল’ নামটা আঁকড়ে রয়েছে। শোনো, বরং তোমরা যে যার চাঁদার বরাদ্দের টাকায় টোমাসমানের কটি বই কিনে বাড়ির বইয়ের তাকে রাখো। জানি, যাঁর নামে টেবিল দেখাতে এত আগ্রহ – তাঁর একটিও বই তোমাদের কারও সংগ্রহে নেই।“

উল্টোদিক থেকে ততক্ষণে লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।