কবিতা : ইন্দিরা দাশ
Posted in কবিতা
কবিতা
জিয়নকাঠি কোথায় গেল
ইন্দিরা দাশ
‘আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে’- সে বয়েসে কে খুঁজেছে মানে
‘ঘোড়াডুম’ ব্যাপারটা ক’জনই বা জানে
জীবনের সিদ্ধান্ত কম-বেশিটাই
এ ছড়ার অন্তমিল পঙক্তিতেই
ছিল সীমাবদ্ধ তাই
একতাল শৈশবের বেলেমাটি গন্ধভরা দিন
ছিল সরল রঙ্গিন।
‘পাখিওলা, ও পাখিওলা –
ঝুঁটিতে যে মেখে আছে পাহাড়ি ফুলের লাল নাম কি গো ওর?
আর ঐ ছটফটে, লেজ কেন নাচাস রে তোর?’
কৈশোরের পাখিওলা – এতদিনে সব পাখি দিয়েছে উড়িয়ে
হয়ত হয়েছে মুক্ত নিজেকেও নিয়ে, মেঘেদের সীমানা পেরিয়ে।
সেইসব পাখির ডানায় আকাশের যত নীল, গন্ধ মেঘের
লেগে লেগে আছে ভেবে কত ভালবেসেছি ওদের ।
‘ও মালিকাকা, গোলাপেতে শুধু কেন দাও সার?
চলনা পুকুরপাড়
যেখানেতে ছোটছোট ছেলেমেয়ে নীল ফুল সারাদিন গড়াগড়ি
রোদের তলায় বল দেখি কি নামে ওদের ডাকা যায়?’
“ওসব ফুলের নাম কেউ দেয় নি যে খুকি।”
আমার এ প্রশ্নেতে উঁকিঝুঁকি
দড়িপাকানো এক অশত্থ গাছ
কুটিপাটি হত হেসে হেসে
দুই বিনুনির দিন... কত স্মৃতি আসে ভেসে।
গ্রীষ্ম দুপুরে তন্দ্রাহীন
মা’র পাশে ব্যাঙ্গমা-বেঙ্গমী’র দেশে
কখনও বা মোমবাতি ছায়ানাচে গুরুতর খোক্কসের ভয়
তখনও তো জানতাম, পলেস্তরা খসে যাওয়া দেয়ালেতে
কিছু কিছু পঙ্খীরাজ ও হয়।
কতবার পেঁজা তুলো মেঘ যেন ফেনা হয়ে সমুদ্রের নীলে
অথবা রবিঠাকুরের দাড়ি, কখনও সে মীরাবাই মিলে
আকাশে আকাশে বাজিয়ে দোতারা বেড়াত যে ঘুরে নিশ্চিন্ত কৈশোরে –
কখনও বা টিফিনবাক্স, লাল পেন্সিল হারিয়ে
বকুনি’র শেষে
একগাল হেসে
কোমর জড়িয়ে ধরে প্রিয়মুখে চেয়ে তবু প্রশ্ন দোনামোনা
‘রাত্রে, কি রেঁধেছ গো মা?’
এককালে কত ছিল অবনঠাকুরের লেখা ছবি
ভিলরাজ্যে ভাইবোন ‘গায়েব-গায়েবী’
কবে যেন পড়ে গেছে হাত থেকে জিয়নকাঠিটি
তাই ভুলে যাওয়া ‘বেড়াল’রা আজকাল
অতি সহজেতে আর হয়না ‘রুমাল’
শুধু মনে পড়ে, একদিন বাজারের ব্যাগ হাতে শীতের মেঘলা সকাল
দু’হাতে জড়িয়ে গলা, জাদুঘুম থেকে উঠে পড়ে
বলে উঠেছিল কে সেই রাজকন্যে, মিঠে আবদার করে –
‘রোদ্দুর এনো, আমার জন্যে বাপি, - দু পকেট ভরে’
‘রোদ্দুর এনো, বাপি, - দু পকেট ভরে’।