0

প্রবন্ধ - ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়

Posted in




















(২য় পর্ব)


মহারাজা প্রতাপচাঁদ
নানকী দেবী ও পুত্র প্রতাপের মৃত্যুর পর(যদিও সেই মৃত্যু ঘিরে অনেক সন্দেহ, অনেক প্রচার ও অপপ্রচার) পরিণত বয়সে মহারাজা আবার সন্তানের আশায় বিবাহ করেন উজ্জ্বলকুমারীকে। তাঁর একটি সন্তানও হয় কিন্তু সেই সন্তানের মৃত্যু হয় এবং পরে মহারাজার মহিষী উজ্জ্বলকুমারীরও মৃত্যু হয়। ইনি ছিলেন মহারাজ তেজচাঁদের সপ্তম মহিষী। মহারাজ তেজচাঁদের পঞ্চম মহিষী কমলকুমারী ব্যতীত অন্যান্য মহিষীদের নাম বা পরিচয় রাজপরিবারের ইতিহাসে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। উজ্জ্বলকুমারীর মৃত্যুর পর মহারাজা তেজচাঁদ দত্তক নেন কমলকুমারীর ভ্রাতা পরানচাঁদ কাপুরের পুত্র চুনিলালকে। দত্তক নেবার পরে যাঁর নাম হয় মহতাব চাঁদ। এরপরেও মহারাজ বৃদ্ধ বয়সে আবার বিবাহ করেন রাণী বসন্তকুমারীকে। বালিকা বসন্তকুমারীকে বৃদ্ধ বয়সে বিবাহ মনে প্রশ্ন জাগায়। কিন্তু তেজচাঁদের অষ্টম মহিষীর পরিচয় জানার আগে জানা প্রয়োজন রাণী কমলকুমারীকে। বিষেণকুমারীর পর বর্ধমান রাজপরিবারে যে নারীর নাম উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন মহারাজা তেজচাঁদের পঞ্চম পত্নী মহারাণী কমলকুমারী। রাণী কমলকুমারীর মহারাণী বিষেণকুমারীর মত রাজকার্য্য, রাজ্য পরিচালনার দক্ষতা তাঁর ছিল না, কিন্তু রাজপুরনারীদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী, প্রখর বুদ্ধিশালিনী এবং সুচতুরা মহিলা ছিলেন এই নারী। ছল, কপটও তাঁর কম ছিল না। পূর্বেই বলা হয়েছে, প্রতাপচাঁদের গৃহত্যাগের পিছনে এই নারীর হাত আছে বলে অনেকের অনুমান। সুরায় আসক্ত প্রতাপের সঙ্গে প্রতাপের স্ত্রীর ছদ্মবেশে মিলিত হ’লে মাতৃগমনের পাপবোধে প্রতাপ গৃহত্যাগ করেন এইরকম একটি জনশ্রুতি আছে। কমলকুমারীর ছলনায় প্রতাপ পরাজিত হন। মহারাজার প্রিয় পত্নী হবার সুবাদে কমলকুমারী যে কিছু সুযোগ কাজে লাগাতেন, সেকথা বলাই বাহুল্য। একরকম তাঁর চতুরতার জন্যই পরাণচাঁদ কাপুরের ভগিনী কমলকুমারী নিজ ভ্রাতার পুত্র (পরানচাঁদের পুত্র) চুনিলালকে রাজার দত্তক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য করেন। কিন্তু প্রতাপচাঁদের মৃত্যুর পর( এখানে বলা ভালো যে মহারাজকুমার প্রণয়চাঁদও প্রতাপচাঁদের মৃত্যুকেই সমর্থন করেন এবং জাল প্রতাপচাঁদকে স্বীকার করেন না, সম্ভবতঃ বর্ধমান রাজপরিবারের কেউই তা স্বীকার করেন না) পরাণচাঁদ কাপুরের পুত্র চুনিলাল ওরফে মহতাব চাঁদকে দত্তক নেবার পরেও পরিণত বয়সে পরানচাঁদ কাপুরের কনিষ্ঠা কন্যা বসন্তকুমারীকে মহারাজ তেজচাঁদ আবার বিবাহ মনে ঔৎসুক্য জাগায়।

বসন্তকুমারীর বয়স তখন ছিল মাত্র এগারো বৎসর। শ্রী প্রণয়চাঁদের মতে এই বিবাহ ছিল কেবলমাত্র মহারাজা জনিত খেয়াল। আবার এই বিবাহ রাণী কমলকুমারীর অতিশয় চতুরতার ফল হতে পারে। পরানচাঁদ ছিলেন বর্ধমান রাজকার্যে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। কমলকুমারী ছিলেন তাঁর ভগিনী। দুজনেই ছিলেন অর্থলোলুপ, অতিশয় চতুর। একই পরিবারের দুই কন্যা(পিসি কমলকুমারী এবং ভাইঝি বসন্তকুমারী)এবং এক পুত্র(মহতাব চাঁদ) রাজপরিবারের সঙ্গে যুক্ত হলে রাজ-ঐশ্বর্য্যের যে অনেকখানি কাপুর পরিবারের করায়ত্ত হবে, তা পরানচাঁদ কাপুরের অজানা ছিল না। সুচতুরা কমলকুমারী ভ্রাতার সঙ্গে সহমত ছিলেন। পরানচাঁদের কনিষ্ঠা কন্যা বসন্তকুমারীর সঙ্গে মহারাজার বিবাহ হ’লে রাজ্য-রাজত্বের প্রায় সমস্ত কিছুর উপরেই কায়েম হবে দেওয়ান পরানচাঁদের একরকম একছত্র অধিকার। ভগিনী, কন্যা আবার পুত্রের পরবর্তীকালে মহারাজা হ’বার আকাঙ্খায় (কারণ পরবর্তী সময়ে মহারাজ তেজচাঁদ যাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনিই হন মহারাজাধিরাজ মহতাবচাঁদ) এই ধরণের একটি কাজ করা তাঁদের উভয়ের পক্ষেই সম্ভব ছিল। মহারাজা তেজচাঁদ এই বিবাহ করেন দত্তক পুত্র গ্রহণ করার পর, সুতরাং পুনরায় পুত্র আশায় যে তিনি এই বিবাহ করেননি তা বোঝাই যায়। তাছাড়া মহারাজ তেজচাঁদ তখন বৃদ্ধ, তাঁর বয়স তখন ছিল ৬৭ বৎসর। সুতরাং এই বিবাহ পরানচাঁদ কাপুর ও কমলকুমারীর ষড়যন্ত্র, মহারাজার উপর চাপসৃষ্টি এবং রাজপরিবারে প্রাধান্য স্থাপন এমন একটি সম্ভাবনার কথা ভাবা যেতেই পারে। এছাড়া এই বিবাহের অন্য কোন অর্থ হতে পারে না কারণ বসন্তকুমারী রাণী কমলকুমারীর মত পূর্ণযোবনা এবং সুন্দরী ছিলেন না যে, মহারাজ তার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে পারেন। তাছাড়া বিবাহের সময় বসন্তকুমারী ছিলেন এগারো বৎসরের প্রায় বালিকা মাত্র। পাঁচ বৎসর পরেই মহারাজার জীবনাবসান হয়। রাণী বসন্তকুমারীর বয়স তখন মাত্র ষোল।
মহারাজ তেজচাঁদের জীবনাবসানের সময় তাঁর অষ্টম মহিষী রাণী বসন্তকুমারীর বয়স ছিল মাত্র ষোল বৎসর। কিন্তু মহারাজ তেজচাঁদের মৃত্যুর পর এই অল্পবয়স্কা রাণীর জীবন কাটে অত্যন্ত কষ্ট ও মানসিক যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে। তাঁকে প্রায় একবৎসর ঘরবন্দী করে রাখা হয়। যুক্তি ছিল, অল্পবয়স্কা নারীর নানান প্রলোভনে চরিত্র নষ্ট হতে পারে এবং কুসংসর্গে পড়তে পারেন। রাণীর রাজপরিবারের অপর পুরুষমানুষের প্রতি প্রণয়াসক্তিও জন্মাতে পারে। তাই ঘরবন্দী করে রাখাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, প্রধানতঃ এই যুক্তি ছিল রাণী কমলকুমারী এবং পরানচাঁদ কাপুরের। কারণ রানী বসন্তকুমারীকে বিষয় আশয় থেকে বাইরে রাখলে তাঁদের লাভই ছিল সকলের চেয়ে বেশি। রাণী বসন্তকুমারী নিজ অধিকারের জন্য মামলা করেন এবং এই মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য নিতে হত কার এন্ড ট্যাগোর কোম্পানীর ব্যারিষ্টার তখনকার বিখ্যাত ডিরোজিও সাহেবের শিষ্য ইয়ং বেঙ্গলের দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের। একটা কথা হয়ত বলা যেতে পারে কার এন্ড ট্যাগোর কোম্পানী ছিল বর্ধমান মহারাজাদের আইনী পরামর্শদাতা। এই কার এন্ড ট্যাগোর কোম্পানীর একজন ছিলেন আমাদের অতি পরিচিত প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরমহাশয়ও। জাল প্রতাপচাঁদের মামলার সময় বর্ধমান রাজপরিবারের পক্ষে ইনি ছিলেন একজন প্রধান সাক্ষী ও সহায়। সে প্রসঙ্গ আগেই আলোচিত হয়েছে।

দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ছিলেন রাণী বসন্তকুমারীর পক্ষের উকিল। এই সময়েই দুজনের মধ্যে প্রণয় জন্মায় এবং রাণী বসন্তকুমারী এক দুঃসাহসিক যাত্রা করেন দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গে যা বর্ধমান রাজপরিবার তো বটেই, সে যুগের পক্ষেও এক অতি দুঃসাহসের পরিচয়। দুজনে পলায়নের পর রাজার লোকলস্কর দিয়ে তাঁদের ধরে আনলেও আবার দুজনে পলায়নে সক্ষম হন এবং তাঁরা কোর্টে সিভিল আইন অনুযায়ী বিবাহ করেন। বিবাহের পর তাঁরা অযোধ্যার নবাবের অন্তর্গত লক্ষ্মনৌ শহরে বাকি জীবন কাটান এবং তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা জন্মে। রাণী বসন্তকুমারীকে নিয়েও অনেক গবেষক, লেখক নানা আলোচনা ও চিন্তাভাবনা তাঁদের লেখনীতে প্রকাশ করেছেন। এখানে তার পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেকালের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে বলা যেতে পারে তিনি একজন অসমসাহসী মহিলা। রাণী বসন্তকুমারী যে তাঁর নিজের ইচ্ছামত জীবনকে বেছে নিতে পেরেছিলেন, একজন রাজঅন্তঃপুরবাসিনী হয়েও এতে তাঁর অসম সাহসিকতার পরিচয় মেলে, যদিও সেই জীবনকে বেছে নেবার পথ ছিল অত্যন্ত দুরূহ এবং কঠিন। তবু, একথা বলা যেতে পারে যে বর্ধমান রাজপরিবারে বসন্তকুমারী অবশ্যই এক অন্যরকম চরিত্র।

প্রতাপেশ্বর মন্দির
শ্রী প্রণয়চাঁদ মহতাবের মতেও রাণী বসন্তকুমারী যা করেছিলেন তা সঠিক কাজ। অল্পবয়স্কা এক মহিলা যিনি রাণীর জীবন কাটাতে অভ্যস্ত, তাঁর বন্দী জীবন কাটানোর চেয়ে নিজের খুশিমত জীবন কাটানো অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে তাঁর। সকল মানুষেরই অধিকার আছে তার নিজের জীবনকে বেছে নেবার। মাত্র এগারো বৎসরের বালিকার পক্ষে বৃদ্ধ রাজাকে স্বামী হিসাবে মেনে নেওয়া এবং সেই স্বামীর অবর্তমানে বন্দী জীবন কাটানো এক নারীর পক্ষে যে কি ভয়ানক সেটা যে কোন মানুষই চিন্তা করলে বুঝতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তৎকালীন রাজপরিবারের মান-মর্যাদা এবং সামাজিক বাধা কাটিয়ে সে যুগে এই নারী যে একজন প্রেমিকের হাত ধরে গৃহত্যাগের মত(তাও আবার রাজপরিবারের বধূ এবং বিধবা মহারাণী) সাহস দেখাতে পেরেছিলেন, এজন্য তাকে বাহবা দেওয়া উচিত। সেদিক থেকে দেখতে গেলে রাণী বসন্তকুমারী বর্ধমান রাজ অন্তঃপুরবাসিনী রমণীগণের মধ্যে অবশ্যই এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র। যদিও রাণী বসন্তকুমারী বর্ধমান রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে বর্ধমান রাজপরিবারও তাঁদের পারিবারিক ক্রিয়াকরণ ইত্যাদি থেকে রাণী বসন্তকুমারী এবং তাঁর পরবর্তী পরিবার-পরিজনদের নাম রাজবাড়ির বংশলতিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন এবং এককথায় বলতে গেলে বর্ধমান রাজপরিবারে তাঁদের আর কোন স্থান নেই।

তেজচাঁদের পর বর্ধমান রাজপরিবারের রাজা হন দেওয়ান পরানচাঁদ কাপুরের পুত্র চুনিলাল, যাঁকে মহারাজ তেজচাঁদ দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী কালে যাঁর নাম হয় মহতাবচাঁদ। ইনি ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন না, সেকথা আগেই বলা হয়েছে। বলতে গেলে একরকম তাঁর আমল থেকেই ব্রিটিশ ভক্তি শুরু হয় এবং পরিবারেও ব্রিটিশ নিয়ম-কানুন লাগু হয়। মহতাবচাঁদের দুই বিবাহ। প্রথমা পত্নী নয়নকুমারী। তাঁর মৃতুর পর তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন নারায়ণকুমারীকে। রাজপরিবারে নারায়ণকুমারীর বেশি কিছু অবদানের কথা শোনা যায় না। কিন্তু মহারাজকুমার প্রণয়চাঁদের মতে নারায়ণকুমারী ছিলেন একজন জবরদস্ত মহিলা। রাজকার্য বা অন্যান্য ব্যাপারে নারায়ণকুমারীর বিশেষ কোন অবদান না থাকলেও তিনি মহারাজের সবরকম কাজের সহায়ক ছিলেন এবং অনুমোদন করতেন, বাধা দিতেন না। নারায়ণকুমারী এবং মহতাব চাঁদেরও কোন সন্তানাদি না থাকায় মহারাণীর ভ্রাতা বংশেগোপাল নন্দের পুত্রকে দত্তক নেওয়া হয়। তাঁর নাম হয় আফতাব চাঁদ। পরে আফতাব চাঁদেরও সন্তান না থাকায় দত্তক পুত্র গ্রহণের সময় আফতাব চাঁদের মহিষী বেনোদেবীর সঙ্গে নারায়ণ কুমারীর মকদ্দমা বাধে, কিন্তু নারায়ণকুমারী মিতাক্ষরা আইন অনুসারে পরাজিত হন। সেই সময় দত্তক পুত্র নেবারও একটা নিয়ম ছিল। যাকে বিবাহ করা যায় না সেই রকম কোন সম্পর্কের কারো সন্তানকে দত্তক নেওয়া যেত না। তাই শেষ পর্য্যন্ত বেনোদেবীর মতানুসারেই বনবিহারী কাপুরের পুত্র বিজনবিহারী কাপুরকে দত্তক পুত্র গ্রহণ করা হয়, যাঁর পরবর্তী নাম হয় বিজয়চাঁদ মহতাব।

বিজয়চাঁদই প্রথম ‘মহতাব’ উপাধি কে পদবী হিসাবে গ্রহণ করেন। নারায়ণ কুমারী মামলায় হেরে গেলেও বেশ কিছু বিষয় সম্পত্তির অধিকারিণী হন। শ্রী প্রণয়চাঁদের মতে, নারায়ণকুমারী ছিলেন তন্ন্ত্রসাধিকা। রাজবাড়ির ভিতরে এইরকম মড়ার মাথা, খুলি এইসব নিয়ে তন্ত্রসাধনা রাজ পরিবারের অন্যান্য লোকজন সুনজরে না দেখার জন্য আফতাব চাঁদ রাজমাতা মহারাণী নারায়ণ কুমারীর জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই মন্দিরটি রাজবাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ভুবনেশ্বরী কালিমন্দির, বর্ধমানের বুকে যা আজও ‘সোনার কালিবাড়ী’ নামে খ্যাত এবং নারায়ণ কুমারী সেইখানেই তাঁর জপতপ, সাধনা নিয়েই বাকী জীবন কাটান। নারায়ণ কুমারীর কথা চিন্তা করলে একটা কথা অতি বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবা যেতে পারে যে সেই কালেও একজন মহিলা (যদিও তিনি রাণী) স্বাধীনভাবে একা তন্ত্রসাধনার মত কঠিন পথকে বেছে নিতে পেরেছিলেন, রাজপরিবারের লোকেরা তা অনুমোদন করেছিলেন এবং তাঁর থাকা ও সাধনার জন্য অন্যত্র মন্দির ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেদিক থেকে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা অবশ্যই। তবে তেজচাঁদের আমল থেকেই সাধক কমলাকান্তের তন্ত্রসাধনার সঙ্গে রাজপরিবার পরিচিত ছিলেন। যার কিছু আধ্যাত্মিক প্রভাব পড়েছিল প্রতাপচাঁদ এবং পরবর্তী কালে মহারাজ বিজয়চাঁদের উপরেও, যদিও তা তন্ত্রসাধনা ছিল না।

বর্ধমান রাজঅন্তঃপুরের মহিলাদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেইযুগের একজন মহিলা, যিনি রাজরাণী, রাজমাতা আবার তিনিই যে তন্ত্রসাধিকা---একথা ভেবে অবাক না হয়ে পারা যায় না। কতরকমের যে বিস্ময় লুকিয়েছিল এই অন্তঃপুরে, ভাবলেও অবাক হতে হয়! সাধারণভাবে যে সকল অন্তঃপুরবাসিনীরা ছিলেন ঘেরাটোপের মধ্যে, বাইরে বেরোতে পারতেন না, ছিলেন পর্দানশীন তাঁরাও কিন্তু সকলের অলক্ষ্যে রচনা করে গেছেন নিজ নিজ ইতিবৃত্ত। তাই কখনও পাই রাণী ব্রজকিশোরীর মত দান-ধ্যান রতা রাণী, কখনও পাই রাণী বিষ্ণুকুমারীর মত জমিদারি রক্ষাকর্ত্রী, আবার কখনো পাই নারায়ণকুমারীর মত তন্ত্রসাধিকা, ছিলেন বসন্তকুমারীর মত দুঃসাহসিকা।
কিন্তু বর্ধমান রাজঅন্তঃপুরে ছিলেন আরো অনেকে। তাঁদের কথাও জানা যাক......
(ক্রমশঃ)

0 comments: