0

সম্পাদকীয়

Posted in




সম্পাদকীয় 

দেখতে দেখতে কাটতে চলেছে করোনা আক্রান্ত ২০২০। এমন ঘটনাবহুল বারোটা মাস সম্ভবত আমাদের অনেকেরই কল্পনাতীত ছিল। লকডাউন শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি এই সময়ের মধ্যেই। শিখেছি কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করা যায়। যাকে সত্যিই মেলামেশা বলা যাবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। মানুষের তৈরি করা এই সমাজের রীতি নীতি আদব কায়দার সমীকরণ এই সাবধানী পদক্ষেপের ফলে ভেঙে পড়তে পারে কিনা সেটাও আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে। এ কেমন সময় যখন করমর্দন, আলিঙ্গন বা চুম্বন অলীক হয়ে উঠলো? তবুও তো আমরা স্বপ্ন দেখবো, অপেক্ষা করবো নতুন এক ভোরের। ফেলে আসা দিনগুলো দুঃস্বপ্ন বলে মনে হবে।

নববর্ষের শুভেচ্ছা সকলকে!

0 comments:

0

প্রচ্ছদ নিবন্ধ - রঞ্জন রায়

Posted in



 (১)

[এই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লি প্রবেশের সমস্ত রাজপথে তাঁবু খাটিয়ে অবরোধে বসেছেন লক্ষাধিক কৃষক। বেশির ভাগ এসেছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশ থেকে। এর সমর্থনে মন্ত্রীপদ ছেড়ে জোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন শিরোমণি আকালি দল।আন্দোলনের সমর্থনে গায়ক, খেলোয়াড় , সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদেরা সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার, মায় পদ্ম-সম্মান। এই শান্তিপূর্ণ অসহযোগ এবং ক্রুদ্ধ আন্দোলন তুচ্ছ করেছে টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ এবং জলকামানকে। অথচ বহিষ্কার করেছে বিজ্ঞান ভবনে মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময় সরকারি ভোজন এবং চা-জলখাবার। এই অভুতপূর্ব আন্দোলনের প্রেরণা শক্তি এবং দুই যুযুধান পক্ষের যুক্তিতর্ক ও গপ্পো বুঝতে আমরা চেষ্টা করব, কিন্তু দুই কিস্তিতে।]

১ বরফ গলছে না

দেশের রাজধানীতে এখন তীব্র শীত লহর চলছে। রাত্রে পারা নেমে আসে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।পাঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে দেশের রাজধানী দিল্লির চারদিকে রাজপথে অবস্থান করে অবরোধ গড়ে তোলা কৃষকদের মধ্যে ঠান্ডা লেগে বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃতের সংখ্যা এক ডজন ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু নয়ডা-দিল্লি রাজপথের সংযোগস্থল সিংঘু মোড়ে শিবির খাটিয়ে তৈরি করা আন্দোলনকারী
সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্ব দেয়া চল্লিশটি ইউনিয়নের অস্থায়ী সদরদপ্তরে কেউ পিছিয়ে আসার বা তুমিও-ভাল আমিও-ভাল গোছের সমঝোতার কথা ভাবছেন না। সরকার ও কৃষকেরা নিজের নিজের পূর্ব-অবস্থানে অনড়। সুপ্রীম কোর্টে রাজপথ থেকে অবস্থানকারী কৃষকদের সরিয়ে দেবার দাবিতে বেশ ক’টি মামলা দায়ের হয়েছে। পালটা মামলা দায়ের হয়েছে ওই তিনটি কৃষি আইন সংবিধানসম্মত কিনা তার বিচার করতে। কোর্ট কৃষকদের আন্দোলনের অধিকার স্বীকার করেও অন্যের অসুবিধে না করে আন্দোলনের অন্য ফর্ম খোঁজার কথা বলেছে। পরামর্শ দিয়েছে সরকার এবং কৃষকদের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গড়ে আইনগুলো খুঁটিয়ে দেখে দু’পক্ষের মেনে নেওয়ার মত সমাধান খুঁজতে এবং সরকারকে বলেছে আদালতের ফয়সালা না হওয়া পর্য্যন্ত আইনগুলোর প্রয়োগ স্থগিত রাখার কথা ভেবে দেখতে। সরকারের ভাববঙ্গী নেতিবাচক। কৃষিমন্ত্রী আন্দোলনকারী কৃষকদের উদ্দেশে আঁট পাতার চিঠি লিখে মিডিয়াকে জানিয়েছেন। কিন্তু অখিল ভারতীয় কিসান সমন্বয় সমিতির মুখপাত্র বলছেন এই চিঠিতে কংগ্রেস, আকালী, অন্যান্য বিরোধী দল নিয়ে তেতো মন্তব্য আছে, বর্তমান সরকারের কাজকর্মের ফিরিস্তি আছে, নেই শুধু আন্দোলনরত কৃষকদের আপত্তিগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ ও জবাব। গত ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের উদ্দেশে দীর্ঘভাষণ সমস্ত মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে টেলিকাস্ট করেছে।কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকেরা বিরক্ত। ওদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশের প্রধানসেবকের ভূমিকা ছেড়ে নিজের দলের মুখপাত্রের মত কথা বলছেন।

কৃষকেরা এখন অবধি সুপ্রীম কোর্টে ওদের পক্ষ রাখতে কোন অ্যাডভোকেট নিযুক্ত করেনি। তবে নেতারা বলছেন ওঁরা সুপ্রীম কোর্টের নামকরা কিছু অ্যাডভোকেট যেমন বার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দুষ্যন্ত দাভে বা মানবাধিকার আইনজীবী প্রশান্তভূষণ ও কলিন গঞ্জালভেসদের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এদিকে দিল্লির ‘আম আদমী পার্টি’র সরকার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে কৃষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওই তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে প্রস্তাহ পাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ওই ‘কালা কানুনের’ কপি ছিঁড়ে ফেলে নাটকীয় ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।সুপ্রীম কোর্টের প্রাথমিক বক্তব্য কৃষকদের আন্দোলনকে একরকম বৈধতা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কৃষকদের চোখে এটা ওঁদের নৈতিক জয়। কারণ, এর ফলে আর ওই আন্দোলনকে মাওবাদী-খালিস্তানি- হেরো কংগ্রেসিদের উস্কানিপ্রসূত বলা লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।

আজ দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও কেরলের দশজন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, এঁদের মধ্যে জবাহরলাল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অরুণ কুমার ও অধ্যাপক হিমাংশু রয়েছেন, কৃষিমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে এই তিনটে আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। ওঁরা পাঁচটি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন কেন এই সংস্কার ছোট ও প্রান্তিক চাষিদেরও সর্বনাশ করবে। এই কুয়াশা কাটতে একটু সময় লাগবে মনে হয়। আসুন, ততক্ষণ আমরা এক পারস্পরিক অবিশ্বাসের আবহাওয়ায় দুই ইকো-সিস্টেমের লড়াইকে বোঝার চেষ্টা করি।

নিজের ভালো পাগলেও বোঝে, চাষিরা বোঝে না?

প্রধানমন্ত্রী বলছেনঃ কৃষিসংস্কারের উদ্দেশ্যে তৈরি এই তিনটি বিল পাশ হওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা! এবার শোষিত পরাধীন কৃষকেরা খাঁচা থেকে বেরোতে পারবে, স্বাধীন হবে! কীভাবে? দেখা যাক ।

এক, কৃষক নিজের উৎপন্ন দ্রব্যের দাম নিজে ঠিক করতে পারবে এবং আড়তিয়া বা মিডলম্যানদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন হবে।

দুই, দেশের এক প্রান্তের কৃষক তার নিজের সুবিধে মত দেশের আরেক প্রান্তে বা যে কোন জায়গায় নিজের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবে। এভাবে একটি রাষ্ট্রীয় কৃষিপণ্যের বাজার রূপ নেবে।

তিন, কন্ট্রাক্ট ফারমিং বা চুক্তিমাফিক চাষের মাধ্যমে পণ্যের বিক্রয় মূল্যের দাম চাষ শুরু করার আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকবে। ফলে বাজারদরের ওঠানামার ঝক্কি চাষিকে পোয়াতে হবে না। এর ফলে কৃষকের আয় ২০২২ নাগাদ দু’গুণ হয়ে যাবে।

এতসব ভাল ভাল কথা!

তাহলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষকেরা করোনা এবং ৪ ডিগ্রি তীব্র শীতের কামড়কে অগ্রাহ্য করে কেন পথে নেমে রেলরোকো –রাস্তা রোকো করছে? কেন গত তেইশ দিন ধরে এভাবে রাজপথ অবরোধ করে ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলন করছে? নিজের ভাল তো পাগলেও বোঝে। চাষিরা কেন বোঝেনা? বিরোধিরা উসকেছে?

ভুল বুঝিয়েছে? সে তো ওদের কাজ--ঘোলা জলে মাছ ধরা। কিন্তু এনডিএ বা বিজেপির পুরনো জোটসঙ্গী আকালি দল? বা খোদ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ? এদের কেন সন্দেহ হচ্ছে যে এই তিনটি বিল বা আইনের সম্মিলিত প্রভাবে চাষিদের লাভের বদলে ক্ষতি বেশি? লাভের গুড় কর্পোরেট হাউসের পিঁপড়ে খেয়ে যাবে?

দেখা যাচ্ছে দু’পক্ষের চাপান-উতোরের জট খুলে ‘গ্রাউন্ড রিয়েলিটির’ সত্যিটুকু বুঝতে একটু খতিয়ে দেখতে হবে। তাই আমরা খতিয়ে দেখব এতদিন কৃষিপণ্যের কেনাবেচার ব্যবস্থাটি কী ছিল? তিনটি বিলে কী কী পরিবর্তন করা হল এবং তার বাস্তব প্রয়োগের রূপরেখাটি কেমন হতে পারে । তাহলে এই সংস্কারের ফলে কার লাভ কার ক্ষতি তার কিছুটা অনুমান করা সম্ভব হবে। এই আলোচনায় আমাদের চারটি শব্দের তাৎপর্য বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণঃ এপিএমসি, আড়তিয়া, এম এস পি ও কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং।

এতদিন কী হচ্ছিল?

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশে কৃষকেরা কীভাবে তাদের উৎপাদন বাজারে বেচত তার চমৎকার ছবি রয়েছে তৎকালীন নার্গিস -সুনীল দত্ত অভিনীত ফিল্ম “মাদার ইন্ডিয়া”তে। সুখীলালার ( কানহাইয়ালাল) মত মহাজনেরা চাষিদের বীজ- হালবলদের জন্যে ঋণ দিত। এবং উৎপন্ন ফসল নানা অজুহাতে অনেক কম দামে কিনত। গরীব কৃষকের ঋণের বোঝা বেড়েই চলত, তারপর একদিন বন্ধক রাখা ভিটেমাটি চাটি হয়ে যেত। এই শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিতে নেহরু সরকারের সময়ে পঞ্চাশের শেষের দিকে মডেল আইন তৈরি করে রাজ্যসরকারদের বলা হল এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট রেগুলেশন (এপিএমআর) অ্যাক্ট পাশ করাতে। কারণ, কৃষি সেক্টর-- সংবিধান অনুযায়ী- কেন্দ্রের বদলে রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে।এর ফলে ষাট সত্তরের দশক থেকে “সবুজ বিপ্লবের” সময় অধিকাংশ রাজ্য নিয়ম করল যে আগের মত আর কৃষকের দোরগোড়া থেকে ফসল কেনা চলবে না। তৈরি হল এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি বা এপিএমসি।

এর দুটো কাজঃ

১ এটা সুনিশ্চিত করা যে কৃষকেরা যেন সুদখোর মহাজন বা ফড়েদের চক্করে নিজেদের ক্ষেতের ফসল খুব কম দামে বেচতে বাধ্য না হয়।

২ সমস্ত খাদ্যান্ন (ফুড প্রোডিউস) আগে কৃষি মন্ডীর চত্বরে আনতে হবে, তারপর সেখানে নীলামের মাধ্যমে লাইসেন্সড ক্রেতাদের কাছে বেচতে হবে। তৈরি হল সরকারি কৃষিপণ্যের বাজার বা ‘মন্ডী’, ঠিক আজকালকার মিউনিসিপ্যালিটির সব্জীবাজারের মত। তাতে দোকান লাগিয়ে বসবে লাইসেন্স-প্রাপ্ত ক্রেতারা। তারা নীলাম করে ফদলের দাম ঠিক করবে। রাজ্যের এবং জিলাস্তরের এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি বা এপিএমসি তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তাদের থেকে ট্যাক্স নেবে। কৃষক তার পণ্য নিয়ে এসে আড়তিয়ার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাবে। তারপর দরাদরি করে যার দর উপযুক্ত মনে হবে তাকে বেচবে। আড়তিয়ারা খানিকটা পুরীর পান্ডাদের মত।চাষিদের কী চাই সেটা বুঝে ঠিকঠাক ক্রেতার কাছে নিয়ে যাবে, বিনিময়ে দুই বা আড়াই প্রতিশত কমিশন নেবে।

হোলসেল এবং খুচরো দোকানদারেরা সোজাসুজি চাষিদের থেকে ফসল কিনতে পারবে না । তাদের ওই কৃষি মন্ডীতে এসে রেজিস্টার্ড বিক্রেতাদের(যারা চাষির জন্যে ক্রেতা) থেকে কিনতে হবে এবং সরকারকে ট্যাক্স দিতে হবে। ফলে চাষিরা যে দামে ফসল বেচে আর সেটা যে দামে উপভোক্তা (কনজিউমার)—সে শহরের লোকই হোক বা গ্রামের—তার মধ্যে থাকে বিস্তর ফারাক।

আড়তিয়াদের কাজঃ

লাইসেন্সধারী বিক্রেতারা চাষীর থেকে কেনা পণ্য নিজের খরচে গুদামে রাখবে যাতে নষ্ট না হয়ে যায় এবং পরে বাজারের অবস্থা বুঝে বড় ব্যবসায়ী বা খুচরো দোকানদারের কাছে যাতে ভাল দামে বেচতে পারে। এপিএমসি এটা দেখবে যাতে ওরা কৃত্রিম ভাবে খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম খুব বেশি বাড়াতে না পারে। নইলে খোলা বাজারে হোলসেল এবং খুচরো ব্যাপারিরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। ভোগান্তি হবে অন্তিম ক্রেতার, মানে সাধারণ মানুষের। এই নিয়ন্ত্রণের একটি হাতিয়ার হল এসেনশিয়াল কমোডিটিজ কন্ট্রোল অ্যাক্ট বা আবশ্যক পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন যার মাধ্যমে ওই জরুরি পণ্যগুলি কতটা মজুত করে গোডাউনে ধরে রাখা যাবে তার উর্ধসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এভাবে আড়তিয়ারা উৎপাদনকর্তা কৃষক এবং হোলসেল থেকে রিটেল চেনের মধ্যে মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ করে।
কিন্তু যদি কোন বছর এত বেশি ফসল হয় যে খোলা বাজারে দাম খুব পড়ে যায় তাহলে ওই রেজিস্টার্ড ক্রেতারা নিজেদের মধ্যে সাঁটগাট করে (কার্টেল) বানিয়ে দর এমন কম রাখে যে চাষীদের পড়তা পোষায় না তখন?
এর জন্যে এসেছে মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এম এস পি), অর্থাৎ সরকার ধান গম তেলতিসি থেকে শুরু করে ২১টি কৃষিউপজ পণ্য এমন একটি দামে কিনে নেবে যাতে কৃষকের চাষের খরচা উঠে গিয়ে সামান্য লাভ থাকে যাতে সে খেয়ে পরে বাঁচে এবং আগামী বছর আবার ফসল ফলাতে উৎসাহী হয়। সরকার এই এমএসপি প্রতিবছর চাষের মরশুমে আগাম ঘোষণা করবে এবং কেনা ফসল ফুড করপোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) গোডাউনে রাখবে। তার থেকে রেশনে সস্তা দরে মানুষকে চাল-গম-চিনি দেবে। গত দু’দশক ধরে মনমোহন সরকারের সময় থেকে দু’টাকা কেজি দরে গম এবং

তিনটাকা কেজি দরে চাল বিপিএল কার্ডধারকদের দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য সুরক্ষা আইনের (২০১৩) 1 প্রয়োগে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ হল যে কেউ যেন অনাহারে মারা না যায় এটা দেখা জিলা কলেক্টরের দায়িত্ব। তার জন্যে দরকার হলে গোডাউনে পড়ে থাকা উদ্বৃত্ত চাল গরীবদের বিনে পয়সায় বিতরণ করতে হবে।

1 Food Security Act, 2013.

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এপিএমসি (এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি) এবং মন্ডী ব্যবস্থায় ফাটল ধরেছে এবং তাতে সংস্কারের আবশ্যকতা গত দু’দশক ধরেই অনুভব হচ্ছে। তাই ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি এবং এফ সি আই সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত হল শান্তাকুমার কমিটি (বিজেপি নেতা এবং হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী)। এই কমিটি ২০১৫তে রেকমেন্ড করে যে কৃষকদের থেকে শস্য এফ সি আইয়ের গোডাউনে রাখার কাজটা রাজ্যসরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হোক। সেই রেকমেন্ডশন মেনেই প্রথমে ১৪ এপ্রিল ২০১৬তে, আম্বেদকরের জন্মদিনে, প্রধানমন্ত্রী দেশের সমস্ত মন্ডীকে(প্রায় ৭০০০) ডিজিটালি যুক্ত করবার যোজনা ঘোষণা করে বললেন –এর ফলে বাংলার কৃষক কেরালায় ভাল দাম পেলে ডিজিটালি অর্ডার বুক করে ওখানে চাল পাঠিয়ে দেবে ।

এ’বছর কৃষিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জুন নাগাদ মাত্র ৯০০ মন্ডী এভাবে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এর ফলে বাংলার চাল লাভজনক ভাবে দেশের অন্যপ্রান্তে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটা জানা যায়নি। 2 বর্তমান বিলগুলো কেন সিলেক্ট কমিটিতে না পাঠিয়ে বা কিসান সমিতি এবং বিরোধীদের সঙ্গে চর্চা না করে সাততাড়াতাড়ি পাশ করানো হল প্রশ্ন করলে সরকারের মন্ত্রী/মুখপাত্ররা বলছেন—এটা শান্তাকুমার কমিশনের সুচিন্তিত অনুশংসা মেনে করা হয়েছে। বেশি কচকচি করে সময় নষ্ট করার কি দরকার? 

3 কোন সন্দেহ নেই যে কৃষি পণ্যের বিক্রির ব্যাপারে চালু ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। এমনকি গত ২০১৯শের কংগ্রেসের ইলেকশন ম্যানিফেস্টো বলছে—“Congress will repeal the Agricultural Produce Market Committee Act and make trade in agricultural produce—free from all restrictions’. 

4 তাহলে আজ এত চেঁচামেচি কিসের? ‘তোর ভবনে-ভুবনে কেন হয়ে গেল আধাআধি’? আসুন বিলগুলো দেখি। থুড়ি, ওগুলো গত সেপ্টেম্বরে তাড়াহুড়ো করে সংসদের দুটো সদনে পাশ করানো হয়েছে এবং বলে রাখা ভাল যে রাষ্ট্রপতির মোহর লেগে ওগুলো এখন আর বিল নয়, পুরোদস্তুর আইন। তিনটে কৃষি বিল ও তাদের বৈশিষ্ট্যঃ

2 রবীশকুমার, এনডিটিভি, ২৪ সেপ্টেম্বর।

3 কৃষিমন্ত্রীর বিভিন্ন চ্যানেলে বক্তব্য, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

4 Ashok Gulati, Indian Express, 28 th September, 2020.




১ The Essential Commodities (Amendment) Bill, 2020

গোদা বাংলায় বললে ‘ আবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন) বিল’, ২০২০। এতদিন চাল-গম-ডাল-তেল-পেঁয়াজ-আলু এসব একটা নির্ধারিত পরিমাণের বেশি মজুত করা যেত না । করলে সেটা কালোবাজারি বলে গণ্য হত এবং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ত। এখন থেকে এর আগল খুলে দেওয়া হল। যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে তখন সরকার এ নিয়ে মজুতের উর্দ্ধসীমা ঘোষণা করতে পারে। নইলে কোন দোকানে পুলিশ স্টক চেক বা গোদাম সার্চ করতে পারবে না। কবি সুকান্তের “শোনরে মালিক, শোনরে মজুতদার” পংক্তিটি আজ অর্থহীন। সরকারের বক্তব্য এর ফলে প্রাইভেট সেক্টর এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ পুঁজি এখানে এসে কোল্ড স্টোরেজ বানিয়ে সাপ্লাই চেনকে কম্পিটিশনের মাধ্যমে আধুনিক এবং মজবুত করবে। অর্থাৎ সরকার ক্রমশঃ চাষির ফসল কেনা , এফসিআইয়ের গোডাউন বানিয়ে মজুত করা এসব থেকে হাত ধুয়ে ফেলবে। এর বিরুদ্ধমতে বলা হচ্ছে এর ফলে বড় ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট হাউস প্রথম বছর ভাল দামে চাষির থেকে কিনে বিশাল স্টক করবে। পরের বছর ঔদাসীন্য দেখিয়ে চাষিকে বাধ্য করবে কম দামে ফসল বেচতে।



Farmer’s Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Bill, 2020

বাংলায় বললে কৃষিপণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য (উন্নতি ও সুবিধে প্রদায়) বিল, ২০২০। এই বিলের বিরুদ্ধেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বিক্ষোভ বেশি হচ্ছে। কারণ এই বিল অনুযায়ী চাষিরা তাদের পণ্য মন্ডীর বাইরে , জেলার বাইরে এমনকি রাজ্যের বাইরে অবাধে বিক্রি করতে পারবে। এবং ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ী এসেও কিনে নিয়ে যেতে পারবে। ওদের সরকারকে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। আড়তিয়াদের মন্ডীকে ট্যাক্স দিতে হয় । তাই চাষিরা মন্ডীর বাইরে বড় এবং অন্য রাজ্যের ব্যাপারীর থেকে ভালো দাম পেলে স্বাধীন ভাবে বেচতে পারবে। ফলে আড়তিয়াদের কব্জা থেকে মুক্তি পাবে। গমচাষের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের সুফল বেশি পেয়েছে--পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশ । সেখানে মন্ডীর ও আড়তিয়াদের নেটওয়ার্ক অর্ধশতাব্দী ধরে সুসংগঠিত। প্রচূর লোক এই বিজনেসে এবং মন্ডীর চাকরিতে জড়িত। তাই এই এলাকায় বিক্ষোভ বেশি।

সরকার অস্বীকার করলেও এটা স্পষ্ট যে এই অবাধ ছাড়ের ফলে মন্ডীর এবং আড়তিয়াদের ব্যবসা মার খাবে। রাজ্যগুলো ট্রেডিং এর ফলে যে ট্যাক্স পেত তাও হারাবে।


The Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Bill, 2020 এটাকে এক কথায় বলা যায় দাদন দিয়ে কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিচাষ। ধরুন, এতে বড় বড় হাউস যাদের খাদ্যদ্রব্যের রিটেইল চেইন (যেমন ইজি ডে বা রিলায়েন্স) বা বিস্কুট কোম্পানি একটা গোটা গ্রাম বা এলাকার সমস্ত চাষিদের সঙ্গে আগাম চুক্তি করল যে ওদের জমিতে কোম্পানির শর্ত অনুযায়ী বিশেষ ফসল বুনতে হবে বা বিশেষ জাতের মুরগী বা দুধেল গাই পালন করতে হবে। উৎপন্ন পণ্য কী দামে ওরা চাষিদের থেকে কিনবে তাও চুক্তিপত্রে লেখা থাকবে । ফলে ফসল ফলানোর পর চাষি নিশ্চিন্ত। অতি-উৎপাদনে বাজারে দাম নামলেও কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী বেশি দামে কিনতে বাধ্য থাকবে।ফলে চাষি ঘরে বসেই হাতে হাতে ভাল টাকা পাবে। কোন চাপ নেই। সরকার দেখাচ্ছে এটা চাষিদের জন্য উইন-উইন সিচুয়েশন। এটা ইউপিএ -১ সরকারের সময় চেষ্টা করা হয়েছিল, বিশেষ সফল হয়নি। সরকার বলছে এর ফলে ফসল বাজারে বেচার রিস্ক চাষির নয় বড় কর্পোরেশনের।ওরা উন্নত বীজ দেবে, ট্র্যাক্টর দিয়ে ক্ষেতের পর ক্ষেত হাল জোতানোর কাজ করে দেবে এবং ফসল কাটার সময় হার্ভেস্টর লাগিয়ে রাতারাতি ক্ষেত সাফ! এতে লাভ প্রান্তিক ও ছোট কৃষকের। বিরোধী যুক্তি হচ্ছে চুক্তি যদি সমানে সমানে হয় তবে চাষির লাভ। কিন্তু সাধারণ চাষি কী ভাবে বিশাল কর্পোরেশনের সঙ্গে দরাদরি করে লাভদায়ক চুক্তি করবে? বিজেন্দর সিং এর সঙ্গে রিংয়ে নেমে বক্সিং লড়বে পাড়ার মাস্তান পোটকে ?

সচিনকে বল করবে আমাদের টেনিদা? হাঃ! পরে যদি পণ্যের কোয়ালিটি কম বা অন্য কোন অজুহাতে করপোরেশন না কেনে বা চাষিকে চাপ দিয়ে কম দামে বেচতে বাধ্য করে তার প্রতিকার কী? বিবাদ বা চুক্তিভঙ্গের স্থিতিতে চাষিরা কর্পোরেশনের সঙ্গে মামলা লড়বে? খাবে না উকিলকে ফীজ দেবে? এগুলো নতুন কিছু নয় , আগেও লাতিন আমেরিকার দেশে দেখা গেছে কীভাবে কফি, কোকো, তামাক এবং কলা ইত্যাদির চাষিরা আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অসম চুক্তির ফলে পথে বসেছে।

আচ্ছা, আমাদের বঙ্গে দেড় বা দু’শতাব্দী আগে যে নীলচাষ হত, তখনও নীলকর সাহেবের দল চাষিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে ধানের বদলে নীলচাষ করতে বাধ্য করত না? মানছি্, স্বাধীন ভারতে ওই তুলনাটা হয়তোএকটু বাড়াবাড়ি। আজ অমন হান্টার চালিয়ে জোর করে টিপছাপ দেওয়ানো যাবে না । কারও ঘর থেকে ক্ষেত্রমণিদের তুলে আনা যাবেনা। কিন্তু রাষ্ট্র যদি আইন ও প্রশাসনের শক্তি নিয়ে বিশাল কর্পোরেটদের পাশে দাঁড়ায় (যেমন ওদের মজুত করার একতরফা ছাড় দেয়া হয়েছে এবং মন্ডীর বাইরে কৃষিপণ্য কেনাবেচার জন্যে ট্যাক্সে ছাড় দেয়া হয়েছে) তাহলে সাধারণ কিসান কী করে সমানে সমানে পাঞ্জা লড়বে? এতে দু’পক্ষের মতভেদ হলে বিবাদ সমাধান বা ডিস্পিউট রেজোলুশনের পদ্ধতি নিয়ে কোন কথা এই বিলে নেই।

তাহলে সবমিলিয়ে দাঁড়াল কী?

তিনটে কৃষি সংস্কার বিলের প্রভাব বুঝতে হলে তিনটেকে একসাথে দেখুন।

সরকার পক্ষের দাবিঃ

এক, এই বিলগুলো সরকার -নিয়ন্ত্রিত মন্ডীর (পড়ুন এপিএমসি) একচেটিয়া অধিকার খর্ব করে কৃষকদের সোজাসুজি প্রাইভেট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির সুযোগ করে দিচ্ছে।

দুই, কৃষকদের বড় বড় কোম্পানিদের সঙ্গে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে তাদের ফ্যাক্টরির জন্যে কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের আইনি পরিকাঠামো জোগাচ্ছে।

তিন, কৃষিব্যবসায়ীদের তাদের দরকার ও সুবিধেমত কৃষিপণ্য মজুত করার অনুমতি দিচ্ছে। আগের সরকারি নিয়ন্ত্রণ, স্টক চেকিং, মজুত করার উর্দ্ধসীমা সব তুলে নেয়া হচ্ছে।

বিলের বিপক্ষেঃ কৃষকদের আশঙ্কা

এক, বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কৃষকদের চুক্তি এক অসম পাঞ্জা লড়া। দর- কষাকষির সুযোগ ও ক্ষমতা কৃষকের কোথায়?

দুই, কৃষকদের ভয় মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে।

তিন, অসংখ্য আড়তিয়া এবং মন্ডী কর্মচারি রোজগার খোয়াবে। কিন্তু কর্পোরেট হাউসের ব্যানারে বড় আড়তিয়ারা কার্টেল অথবা এলাকা ভিত্তিক/পণ্যভিত্তিক মনোপলি চালাবে।

চার, রাজ্য সরকারগুলো মন্ডীর ট্যাক্সের আমদানি খোয়াবে। কৃষি রাজ্যসরকারের এক্তিয়ারে আসে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে আইন পাশ করে রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করল কিছু বড় কর্পোরেট ঘরানার স্বার্থে। 

5 আশংকাগুলো কি একেবারে অমূলক?

1. চাষীদের ফসল বিক্রির জন্যে স্থান-কাল-পাত্র চয়নের স্বাধীনতা থাকবে বটে, কিন্তু প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দরাদরি করে ভালো লাভজনক চুক্তি করার মত জ্ঞান এবং সামর্থ্য ( আর্থিক এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক) থাকবেনা বলেই মনে হচ্ছে।

2. মন্ডীর বাইরে কোন নিয়ন্ত্রণ কোন নিয়ম নেই। কোন ‘ক্ষোভ উপশমন ব্যবস্থা’ বা গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেম নেই । এইসব আশংকার ফলেই ২৫ শে সেপ্টেম্বর থেকে অল ইন্ডিয়া কিসান সংঘর্ষ (এ আই কে এস) এর নেতৃত্বে ৩৫০টির বেশি কৃষক সংগঠন আন্দোলনে নেমে পাঞ্জাবে রেল-রোকো, দিল্লি-ইউপি রাজপথে রাস্তা রোকো আন্দোলন শুরু করেছে। বলছে তিনটে বিল ফেরৎ না নেয়া পর্য্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ওদের মুখ্য অভিযোগ – এই তিনটে বিলে মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস নিয়ে একটিও কথা না বলে কৃষকদের মাথার উপরে সুরক্ষার ছাতাটি কেড়ে নেয়া হয়েছে। যদি এমন কোন ধারা থাকত যে খোলা বাজারে যেই কিনুক চাষির থেকে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামের কমে কেনা চলবে না তাহলে মনে হয় বিক্ষোভ এত ব্যাপক ও তীব্র হত না । কেউ কেউ সরকারি এবং বেসরকারি স্টাডির উল্লেখ করে বলছেন যে মাত্র ৭% কৃষক মন্ডী এবং এম এস পি’র লাভ পায়। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন যে ওই ৭% এর ৯০%ই বা অধিকাংশই পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশের। তারা ওইএপিএমসি’র মন্ডী ব্যবস্থায় স্বচ্ছন্দ এবং সুরক্ষিত। আজ ভারতের কৃষি উৎপাদন জনসংখ্যার দরকারের চেয়ে কম নয়, বরং সমস্যা অতি-উৎপাদনের (ওভারপ্রোডাকশন) ফলে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের লোকসানের। দু’বছর আগে পাঞ্জাবে কিছু বিক্ষুব্দ কৃষকের রাস্তায় দুধ ঢেলে দেওয়ার দৃশ্য অনেকেই চ্যানেলে দেখে থাকবেন। এখানেই এমএসপি’র গুরুত্ব।

এম এস পি নিয়ে সরকারের “না- বলা –বাণী” এবং কিছু কথাঃ

5 যোগেন্দ্র যাদব। একাধিক চ্যানেলে ইন্টারভিউ, ২৪ সেটেম্বর, ২০২০।

ন্যুনতম সমর্থন মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) অর্থাৎ সরকার যে দামে কৃষকের বিভিন্ন অবিক্রীত শস্য কিনতে রাজি তার ভিত্তি কোন আইন নয়, বরং ‘কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্টস এন্ড প্রাইসেস (সি এ সি পি) এর রেকমেন্ডেশন, যার জোরে এটি ১৯৬৬-৬৭ থেকে শুরু হয়েছে। 6 আরম্ভ হয়েছিল গম নিয়ে, এখন তাতে ধান, গন্না, তেলতিসি সমেত যুক্ত হয়েছে আরও ২১টি আইটেম। খেয়াল করুন, গত কয়েক বছর ধরেই এই সব রাজ্যের কৃষকরা পথে নামছেন – মূলতঃ তাদের কৃষি এবং পশুপালনের উৎপাদনের নায্য দাম নির্ধারণের দাবিতে।

স্বামীনাথন কমিশনের রেকমেন্ডেশন অনুযায়ী ন্যুনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করার দাবিতে। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎপাদন ব্যয়ের উপর ১৫০% প্রতিশত , মানে দাম খরচের চেয়ে ৫০% বেশি হবে) এম এস পি হওয়ার কথা। সরকার বলছিল—তাই তো করলাম।

কিন্তু এই বক্তব্যে ফাঁক ও ফাঁকি দুইই ছিল। আসলে রিপোর্টে দুটো কস্টের কথা বলা আছে –সি-১ এবং সি-২। পরেরটিতে মূল ব্যয়ের অতিরিক্ত কিছু আনুষঙ্গিক খরচ এবং শ্রমের প্রতীক মূল্য ধরা হয়েছে। সরকার হিসেব কষছে সি-১ নিয়ে, কৃষকদের দাবি সি-২র ১৫০% ধরে এম এস পি ঘোষণা করা হোক। ওই সমস্যা আজও অমীমাংসিত। এবং ওই বিলগুলোতে কোথাও এম এস পি নিয়ে একটি শব্দও নেই ।

ইউপিএ-২ সরকারের সময় শুরু হল দ্য ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৩ (এন এফ এস এ) যাতে সরকার আর্থিক হিসেবে দুর্বল নাগরিকদের রেশনের মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে গম ও ৩ টাকা কেজি দরে চাল দিতে আইনগত ভাবে দায়বদ্ধ হল। 


7

কিন্তু বর্তমান সরকারের তিনটি বিলে এম এস পি নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। ঠিক যেভাবে নাগরিকতা সংশোধন বিল ২০১৯ তেও( সি এ এ) ওপার থেকে আসা মুসলমানদের নাগরিকতা দেওয়া নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। সরকারের ওই “না বলা বাণী”ই আতংকের কারণ।

তাই প্রধানমন্ত্রী যতই আশ্বাসবাণী দিন,মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপ্ত নাগরিকতা ছিনিয়ে নেওয়ার আতংক প্রকাশ পেয়েছিল শাহীনবাগ আন্দোলনে। একইভাবে “এম এস পি ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে” এই আতংক পাঞ্জাব/হরিয়ানা/ উত্তর প্রদেশ/ বিহার

6 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৫ সেপ্টেম্বর।

7 ঐ।

/তামিলনাড়ুর এবং মহারাষ্ট্রের কৃষকদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ওরা পথে নেমেছে।




উপসংহারঃ

বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদরা কী বলছেনঃ

টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের (টি আই আই এস) নাবার্ড প্রফেসর অর্থনীতিবিদ আর রামকুমার সম্প্রতি হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে এককথায় বলতে গেলে এই তিনটে কৃষি রিফর্ম বিলের তাৎপর্য্য হল ‘থ্রোয়িং দ্য বেবি উইথ বার্থ -ওয়াটার’--- জন্মজল ফেলতে গিয়ে শিশুটিকেও ছুঁড়ে ফেলা। 

8 প্রধানমন্ত্রীর ‘ঐতিহাসিক ঘোষণা’কে কটাক্ষ করে রামকুমার বললেন যে এমন ঘোষণা উনি আগেও করেছেন, যেমন নভেম্বর, ২০১৬তে, ডিমনিটাইজেশনের সময়। তার ফলাফল আজকে গোপন নয়। কৃষি অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র শর্মা সম্প্রতি বিভিন্ন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছেন –এই কৃষির খোলাবাজারের মডেলটি নতুন কিছু নয় বরং ইউরোপ আমেরিকায় অনেক আগে থেকেই পরীক্ষিত একটি ব্যর্থ মডেল। এর ফলে ওদের দেশে কৃষকদের আমদানি বছরের পর বছর সমানে কমছে এবং কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। প্রথম বিশ্বের ওসব দেশে কৃষি এবং তার পণ্য রপ্তানি মূলতঃ সরকারি সাবসিডি নির্ভর। প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাপার সংগঠন বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন প্রতিবছর রীতিমত বৈঠক করে এই ভর্তুকির পরিমাণ ঠিক করে। 

9 দিল্লির জে এন ইউয়ের ‘সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিং’ এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিমাংশু’র বক্তব্য ভাবার মত। উনি বলছেন যদিও কৃষকদের মন্ডী ব্যবস্থার অদক্ষতা/ত্রুটি/আড়তিয়াদের কার্টেল নিয়ে প্রচূর ক্ষোভ রয়েছে তবু তারা এটাকে তুলে দেয়ার বদলে সংস্কারের পক্ষপাতী। কেন ? ওদের চোখে বর্তমান ইকো-সিস্টেমে আড়তিয়ারা গাঁয়ের কৃষকদের জন্যে ‘ তথ্য, খবরাখবর, বীজ-সার এবং কখনও কখনও বিনা কোল্যাটারাল সরল ঋণ পাওয়ার উৎস’।এছাড়া যেভাবে ওদের প্রতিনিধিদের , মন্ডী সংগঠনের বা রাজ্যসরকারের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে বিলগুলো ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হল তাতে

8 হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়া; ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

9 দেবেন্দ্র শর্মা, ২৪ সেপ্টেমবর, ২০২০।

ওরা ক্ষুব্দ। ওরা বলছে এই বিলগুলো কৃষকদের নয়, বড় কর্পোরেটদের কৃষিতে যা খুশি করার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। এর আগে কৃষি উৎপাদন বা বিপণন নিয়ে যত সংস্কার হয়েছে তাতে সবসময় স্টেক-হোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়েছে। 

10 কিন্তু এবার কারও সঙ্গে কোন চর্চা বা সিলেক্ট কমিটিকে পাঠানো – সব এড়িয়ে একরকম গা-জোয়ারি করা হয়েছে। অবশ্য খোলা-বাজারের সমর্থক অর্থনীতিবিদরা যেমন প্রধানমন্ত্রীর ইকনমিক অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায় বা অশোক গুলাটিরা (Infosys Chair Professor at ICRIER) বলছেন—আজকে আর সেই সবুজ বিপ্লবের , মানে পাঁচ দশকের আগের পরিস্থিতি নেই । ওসব সংগঠন (এপিএমসি), মন্ডী তামাদি হয়ে গেছে। আসল কথা হল আজকের কৃষককে খাঁচা থেকে বের করে তার ইচ্ছেমত যেখানে ইচ্ছে যাকে ইচ্ছে পণ্য বেচার স্বাধীনতা দেওয়া।

দেবরায় সঠিক ভাবেই বলেছেন যে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং কেরালার চাষিরা এপিএমসি বা মন্ডী ব্যবস্থা চান না , তাদের রাজ্যে এপিএমসি এবং মন্ডী নেই । (এটা ব্যাখ্যা করে কেন কিসানদের আন্দোলন কিছু নির্দিষ্ট রাজ্যেই সীমিত; বামপ্রধান কেরালা, ত্রিপুরা ও বঙ্গে কোন হেলদোল নেই) । তাতে ওদের কৃষকদের কোন ক্ষতি হয়েছে এমন তথ্য কোথায়?

আমার আপত্তি দুটোঃ

এক, ওদের লাভ হয়েছে এমন ডেটা কোথায়? বিহার এখনও কৃষকদের গড়পড়তা আয়ের হিসেবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এবার লকডাউনের সময় যে রিভার্স মাইগ্রেশন হল তার ডেটা বলছে দ্বিতীয় স্থানে বিহারের গ্রাম থেকে আসা কৃষক পরিবারের লোকজন, যারা রোজগারের টানে শহরমুখী হয়েছিলেন?

দুই, কৃষককে স্বাধীন করা হল।

বেশ, কিন্তু বক্সিং রিঙে কোন রেফারি থাকবে না ? বড় বক্সার ফাউল করলে কে দেখবে? এটা কি সরকারের দায়িত্ব নয়? লকডাউনে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও কর্পোরেট সেক্টর ছাঁটাই বা মাইনে কাটা বন্ধ রেখেছে কি ?

প্রখ্যাত কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং কৃষক সমস্যা নিয়ে গবেষক পি সাইনাথ বলছেন যে এই বিলগুলো এপিএমসি এবং মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস তুলে দিয়ে বিগ কর্পোরেটকে

10 হিমাংশু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

কিসানের কবজি মুচড়ে কমদামে ফসল কেনার অধিকার দিচ্ছে। ফলে কৃষক অদূর ভবিষ্যতে নিঃস্ব হবে। 

11 তাহলে বিকল্প কী?

দেবেন্দ্র শর্মার মতে এভাবে সাধারণ কৃষকদের—যাদের প্রধানমন্ত্রীন’অন্নদাতা’ বলেন--কর্পোরেটের দয়ার পাত্র না করে ওদের দরাদরির ক্ষমতা বাড়ানো হোক। যেমন মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসকে আইন পাশ করে কৃষকদের ‘অধিকার’ বানিয়ে দেওয়া হোক, তবে ওরা স্বস্তি পাবে। 

12 প্রোফেসর রামকুমারের ( টাটা ইন্সটিট্যুট অফ সোশ্যাল সায়েন্স) মতে এপিএমসি এবং মন্ডী সিস্টেমের দুর্বলতার সংস্কার প্রয়োজন, ওসব প্রাইভেট সেক্টরকে তোল্লাই দেয়া আইন নয়। যেমন বিহার ও কেরালায় এপিএমসি আইন নেই। মহারাষ্ট্র দু’বছর আগে সংশোধন করেছে। তাতে কি? আজ বিহারের কৃষকের আয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তালিকায় বেশ নীচের দিকে। এবং ওই অ্যাক্ট না থাকায় বিহার  কেরালার বা মহারাষ্ট্রের কৃষিতে দেশি বিদেশি পুঁজিনিবেশ এবং আধুনিকীকরণের বন্যা বয়ে যায়নি।

তাহলে সরকার কী কী করতে পারে?

চাইলে অনেক কিছুই।

 প্রথমে দরকার কৃষিক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ( ইনভেস্টমেন্ট) বাড়ানো। দেশের জনসংখ্যার ৫০% কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত, মোট জিডিপির ১৬% আসে কৃষি থেকে। কিন্তু সরকারের কৃষির জন্যে বাজেট বরাদ্দ জিডিপি’র মাত্র ১৫%।

এর মধ্যে পশুপালন মৎস্যপালন সব ধরা আছে। 

13

 মন্ডীতে ট্যাক্স কম করে কৃষকদের লাভ দিতে পারে।

 কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং পুরোটাই খারাপ নয়। কিন্তু সরকার সেই কন্ট্র্যাক্টে থার্ড পার্টি হিসেবে সাইন করে কৃষক স্বার্থ দেখতে পারে , আশঙ্কা দূর করতে পারে, যেমনটি ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং ব্যাবসায় ব্যাংক লোন দেবার জন্যে ১০০% গ্যারান্টি দিয়েছে। 

11 পি সাইনাথ, দ্য ওয়্যার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২০।

12 দেবেন্দ্র শর্মা, ‘চ্যানেল ইন্ডিয়া টুডে”, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২০।

13 Moneycontrol.com; June 30, 2019.

 মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস নির্ধারণে স্বামীনাথন কমিটির রেকমেন্ডেশন পুরোপুরি মেনে সি-২ উৎপাদন ব্যয়ের উপর ১৫০% বৃদ্ধির কথা ভাবতে পারে ।

খাদ্য-সুরক্ষার প্রশ্নঃ

কিছু নিন্দুকের আশঙ্কা-- চড়া লাভের লোভে যদি বেশির ভাগ কৃষিজমি ফুড ক্রপ (ধান-গম-জোয়ার-বাজরা) ছেড়ে ক্যাশক্রপ বা ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল তৈরিতে লেগে যায় (সেই নীলচাষের মত), তাহলে ভারত আবার খাদ্যসুরক্ষা হারিয়ে চাল-গম রপ্তানির বদলে ষাটের দশকের মত আমদানি করার দিনে ফিরে যাবে না তো? সেই ষাটের দশকেরআমেরিকা থেকে পিএল ৪৮০’র গম আর বাজরা?

পদী -ময়রাণীরা সব যুগেই থাকেন। কিন্তু সেই দুর্দিনে (ভগবান না করুন) আমরা নীলদর্পণের শিশুদের মত নেচে নেচে “ময়রাণী লো সই, নীল গেঁজেছ কই” বলার সাহস পাব তো?

( পরের কিস্তিতে থাকবে সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে অবিশ্বাস এবং দুই ইকোসিস্টেমের লড়াই)

0 comments:

0

প্রবন্ধ - দিলীপ মজুমদার

Posted in


করোনা সংক্রমণপর্বে বাইক বা সাইকেলপ্রেম এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গেছে। একেই ‘বাইক বুম’ বলছেন অনেকে। বাস-ট্যাক্সি প্রভৃতি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সংক্রমণের ভয় থেকে যায়। সাইকেল বা বাইক সে ক্ষেত্রে নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংগঠন বিকল্প পরিবহন হিসেবে সাইকেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। 

ইউরোপে লকডাউন শিথিল হতেই সাইকেল কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। লন্ডনে সাইকেল চালাবার জন্য সাময়িকভাবে পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্রিক লেন বাইকসের দোকানে ক্রেতাদের লম্বা লাইন ব্রাসেলসের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে সাইকেলের ভিড়। ফ্রেঞ্চ ফেডারেশন অফ বাইক ইউজারের সভাপতি অলিভার সাচনেইডার সাইকেলের বিক্রি ও ব্যবহার দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন যে অচল পরিবহনকে সচল করেছে বাইক। 

আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। ট্রেন-বাস বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে নিরুপায় পরিযায়ী শ্রমিকরা সাইকেলের উপর ভরসা করে দেশে ফিরেছেন। পঞ্জাব ও হরিয়ানায় সাইকেল ব্যবসায়ীরা পরিযায়ীদের সাইকেলের যোগান দিতে পারছেন না। তাঁদের বিক্রি বেড়ে গেছে ২০%। সাইকেলে চেপে চেন্নাই থেকে ২৪০০ কি মি পাড়ি দিয়ে গোরক্ষপুর, দিল্লি থেকে ১২০০ কি মি পাড়ি দিয়ে দ্বারভাঙ্গা, মহারাষ্ট্র থেকে ২২০০ কি মি পাড়ি দিয়ে তাঁরা চলে যাচ্ছেন অসম। 

কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর মন্ত্রক বাজারগুলিকে ‘পথচারী বান্ধব’ করার কথা বলেছেন। সেখানে থাকবে পায়ে হাঁটা ও সাইকেল চালনার পথ। রাজ্যগুলিকে একটি অ্যাডভাইজারি জারি করে বলা হয়েছে, শহরগুলিতে যখন লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে তখন প্রয়োজন হল পরিবহনের নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং উপযুক্ত মাধ্যমের সুবিধা দেওয়া ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। বাজারগুলিতে সুরক্ষাবিধি মেনে যাতায়াত করার রাস্তা আছে কি না, সে সম্পর্কে স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। অন্যান্য পরিবহন একে সংখ্যায় কম, তার উপর বিপদের ভয় থাকায় মানুষ সাইকেলের উপর নির্ভর করতে শুরু করেছেন। আমাদের প্রতিবেশী অনুপ বেহালা থেকে সাইকেলে তার ধর্মতলার অফিসে যাচ্ছে, স্মিতার 











কাপড়ের কোম্পানির ম্যানেজার মানস সাইকেলে মাল ডেলিভারি করছেন। আমার মেয়ে সাইকেল কিনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল, সবিনয়ে দোকানি বলেছেন তাঁর এক মাসের বিক্রি গত দিন দিনে হয়েছে, তাই স্টক শেষ। 

১৮১৮ সালে জার্মানির ব‍্যারন কার্ল ভন ড্রেইজি প্যাডেলহীন যে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন, সেটিই সাইকেলের পূর্বসূরী। কালান্তরে সে যন্ত্রের বিবর্তন হয়েছে। তার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। ১৮৬০ সালে প্যারিসে তৈরি হল আধুনিক সাইকেল। ইউরোপ-আমেরিকায় তাকে নিয়ে সৃষ্টি হল উন্মাদনা। কার্লটন রিড তাঁর ‘বাইক বুম- দ্য আনেক্সপেক্টেড রিসার্জেন্স অফ সাইকেলিং’ বইতে ‘বাইক বুমে’র ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। আমেরিকায় এই হিড়িক দেখা গিয়েছিল গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে। কার্লটন এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের হার্ট অ্যাটাকের প্রসঙ্গ উথ্থাপন করেছেন। প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক তাঁকে সাইকেলে চড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমেরিকায় ১৯৭০ সালে ৭০ লক্ষ ও ১৯৭২ সালে ১ কোটি ৪০ লক্ষ সাইকেল বিক্রি হয় । ‘লাইফ’ পত্রিকা একে ‘বাইসাইকেল ম্যাডনেশ’ বলেছিল। ‘টাইমস’ পত্রিকা লিখেছিল সাইকেলের ১৫৪ বছরের জীবনে এমন জনপ্রিয়তার তরঙ্গ দেখা যায় নি। 

এই হিড়িক বা পাগলামি সাময়িক ব্যাপার। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে বিকল্প পরিবহন হিসেবে সাইকেল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেসব দেশের জনসংখ্যা, সাইকেলের সংখ্যা, সাইকেল ব্যবহারকারীদের শতকরা হার দেওয়া হল : 

ক] নেদারল্যান্ড—১৬,৬৫২,৮০০----১৬,৫০০,০০০ ----৯৯.১% 

খ] ডেনমার্ক---৫,৫৬০,৬২৮-----৪,৫০০,০০০------৮০.১% 

গ] জার্মানি------৮১,৮০২,৩০০---৬২,০০০,০০০ ---৭৫.৮% 

ঘ] সুইডেন---৯,৪১৮,৭৩২------৬,০০০,০০০------৬৩.৭% 

ঙ] নরওয়ে---৪,৯৪৩,০০০-----৩,০০০,০০-------৬০.৭% 

চ] ফিনল্যান্ড—৫,৩৮০,২০০----৩,২৫০,০০০-------৬০.৪% 

ছ] জাপান---১২৭,৩৭০,০০০---৭২,৫৪০,০০০-----৫৬.৯% 

জ] সুইজারল্যান্ড—৭,৭৮২,৯০০---৩,৮০০,০০----৪৮.৮% 

ঝ] বেলজিয়াম—১০,৮২৭,৫১৯----৫,২০০,০০---৪৮% 

ঞ] চিন—১,৩৪২,৭০০,০০০---৫০০.০০০.০০০—৩৭% 

পরিবহন হিসেবে সাইকেলের ব্যবহার সম্বন্ধে জাতীয় নীতি নির্ধারণের চেষ্টা করেছিল ইউরোপীয়ান কনফারেন্স অফ মিনিস্টারস অফ ট্রান্সপোর্ট। ২০০৪ সালে তাদের পক্ষ থেকে ‘সাসটেনেবল আরবান ট্রাভেল রিপোর্ট’ পেশ করা হয়। যে ২১ টি দেশের তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, সেগুলি : চেক রিপাবলিক, বেলারুশ, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, আর্য়াল্যান্ড, জাপান, লাটভিয়া, মাল্টা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, স্লোভাক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইউনাইটেড কিংডাম, যুক্তরাষ্ট্র। 

এই প্রতিবেদনে সাইকেলকে ‘পরিবেশ বান্ধব’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাইকেলের ব্যয়ভার কম। সাইকেল থাকলে অযথা ট্রাফিকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। তাছাড়া সাইকেল চালনা এক ধরনের ব্যায়াম। এতে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে সাইকেলের সীমাবদ্ধতার কথাও প্রতিবেদনে ছিল। শহরাঞ্চলে, স্বাভাবিক অবস্থায় যখন মোটরচালিত যান চলে, তখন সাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অস্বাভাবিক আবহাওয়াতে সাইকেল ব্যবহার করা যায় না। দুরবর্তী গন্তব্যস্থলে সাইকেল ব্যবহার সম্ভব নয়। এসব অসুবিধের কথা মাথায় রেখে শহরাঞ্চলে কিভাবে সাইকেল ব্যবহারের বৃদ্ধি ঘটানো যায়, তারই চেষ্টা করেন ই সি এম টি। 

করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প পরিবহন হিসেবে সাইকেল গুরুত্ব পাবে। কিন্তু তারপরে আমরা কি ‘বিদায় ঘন্টা’ বাজাব সাইকেলের? গত কয়েক মাসে প্রকৃতির ক্ষতে যতটা প্রলেপ পড়েছিল, তাকে আবার খুঁচিয়ে দ্বিগুণ করে তুলব? মোটরচালিত যানকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না? করোনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতির প্রতিশোধের কথা মনে রেখে আমরা কি আমাদের দেশে সাইকেল সম্বন্ধে একটা জাতীয় নীতি তৈরি করতে পারি না?

0 comments:

0

ক্রোড়পত্র - প্রিয়দর্শিনী সোম

Posted in






শীতকাল একটা আনন্দের সময়। সে অনেক কাল আগেকার কথা। তখন এই সময় ঠাকুমা-দিদিমারা বাড়িতে বাড়িতে পিঠে- পার্বণের উৎসব লাগিয়ে দিতেন। কেউ বানাতেন রসপুলি, কেউ বা গুড়ের পায়েস। সারা রাত ধরে চলতো পিঠে-পায়েস তৈরির পর্ব। এছাড়া শীতকাল মানেই কত অন্যান্য উৎসব। এই যেমন বইমেলা, নাচ-গানের সপ্তাহ ব্যাপি অনুষ্ঠান, ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স, হস্তশিল্প মেলা। এই সবই তো শীতের উৎসবের অঙ্গ। তাই এল যে শীতের বেলা বরষ-পরে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের লাইন ধার করে বলছি শীত এসে গেছে। ঋতবাকের ক্রোড়পত্রে আমাদের পাঠক মহলের কাছে আমাদের এই বারের নিবেদন “শীতের উৎসব”। এই পর্বে লিখেছেন প্রিয়দর্শিনী সোম, লিপিকা দে, কৃষ্ণকলি দাশগুপ্ত, ইন্দ্রায়ুধ সোম, শিবালিকা মণ্ডল।

১। ডঃ লিপিকা দেঃ বৈজ্ঞানিক, টি সি এস-এ ইনোভেশন ল্যাবের প্রধান বৈজ্ঞানিক, দিল্লি
২। প্রিয়দর্শিনী ঘোষঃ নৃত্য গবেষক এবং শিল্পী, কলকাতা
৩। এনাঙ্কশেখার রায়ঃ স্থপতি, কলকাতা
৪। কৃষ্ণকলি দাশগুপ্তঃ পোস্ট ডঃ গবেষক এবং নৃত্যশিল্পী, নিউ ইয়র্ক
৫। ইন্দ্রায়ুধ সোমঃ সঙ্গীত শিল্পী এবং সঙ্গীত শিক্ষক, ফিলডেলফিয়া
৬। মধুমিতা পালঃ নৃত্যশিল্পী এবং গবেষক, কলকাতা
৭। শর্মিষ্ঠা গুহঃ ইংরেজি ভাষা এবং সাহিত্যের শিখিকা, কলকাতা
৮। শিবালিকা মণ্ডলঃ গবেষক এবং শিক্ষিকা, কলকাতা





শীতের ব্যালাড 
লিপিকা দে 

কালিপুজোর পর থেকেই চরাচর জুড়ে ভেজা ভেজা বিষণ্ণতা নেমে আসত ইস্পাতনগরীতে। বিকেলবেলাটা টুক করে শেষ হয়ে যেত। কোক ওভেনের চিমনি থেকে নির্গত দুধ সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলীটা সারা বছর যথেচ্ছ হোরি খেলায় মাতত বিদায়ী সূর্য্যের সাথে। হেমন্তের ধূসর চাদর ওটাকেও শুষে নিত সাত তাড়াতাড়ি। বাড়ীতে বাড়ীতে উনুনে আঁচ পড়ত। এ বাড়ীর রূপোলী ছাই ধোঁয়ার সাথে ও বাড়ীর পোড়া কাঠ কয়লার গন্ধ মাখামাখি হয়ে ভেসে বেড়াত বাতাসে। ধোঁয়া ধোঁয়া বিষাদে ছেয়ে যেত মন। কোন কারণ ছাড়াই গলার কাছটা বুজে আসত। যেন কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে - অথচ সেটা যে কি তা জানি না।

বাৎসরিক পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ত তখন। বাড়ী ফিরেই ইতিহাস - ভূগোল - বিজ্ঞানের জগতে ডুব যাওয়ার পালা। জানালা দরজা বন্ধ থাকত বলে রান্নাঘর থেকে ফুলকপি বা বাঁধাকপি রান্নার গন্ধ ভেসে বেড়াত বাড়ী জুড়ে। দীর্ঘ এক বছর প্রতীক্ষার পর দেখা হত তাদের সাথে। সারা বছর চূড়ান্ত ভেতো হোলেও শীতের দু মাস গরম গরম রুটির স্বাদ বড়ই মধুময় - বিশেষ করে টোম্যাটোর চাটনি আর খেজুর গুড়ের সঙ্গতে। 

ডিসেম্বরে পরীক্ষার পর লম্বা ছুটি পাওয়া যেত। তখন দুপুরের রোদে মাদুর পেতে কমলা লেবু খেতে খেতে সোয়েটার মোজা টুপী বোনার দিন। প্রথম পাঠ স্কুল থেকেই। তারপর পাড়ার কাকীমা দিদিমারা। উলওয়ালারা আসত বস্তা ভরা পশমের গোলা নিয়ে। তার রঙের চুবড়িতে ডুব দিয়ে রঙ মিলিয়ে মিলিয়ে নরম উল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখার সুখ ভুলতে পারি না আজও। উলের গোলা বানিয়ে, রং বেছে বেছে নতুন নকশা তুলে, তারপর সুতো থেকে আস্তে আস্তে একটা আস্ত সোয়েটার অথবা শাল বোনা - সে তো কেবল উল বোনা নয় সে এক বহুমাত্রিক ইন্দ্রিয় সুখে অবগাহন। তার পরতে পরতে জড়িয়ে যেত ভালোবাসা। 

কালিপুজোর পর থেকেই শুরু হত গানের আসর।
পাড়ায় পাড়ায় জলসা হত তখন। 
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় - মান্না দে - ভূপেন হাজারিকা - গান তখন বুকের ভেতর মোচড়। 

"বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা - দূর নীলিমায় ওঠে চাঁদ বাঁকা - তবু এই পথ চেয়ে থাকা - ভালো কি লাগে!" - নিঃসীম একাকীত্ব বয়ে আনত দূর থেকে ভেসে আসা গানের কলি। 
কলকাতার শিল্পীরা আসতেন। 

সারা দিন হ্যালো - মাইক টেস্টিং - ওয়ান - টু - ...-জিরোর পর সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ শিল্পীরা স্টেজে উঠতেন। 
যত বড় হওয়া - তত কমে আসছিল জলসা শুনতে যাওয়ার সুযোগ। 
শিশিরে শিশিরে ভেসে আসত "মনে পড়ে - মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে বিদায় সন্ধ্যেবেলা - আমি দাঁড়ায়ে রয়েছি এপারে - তুমি ওপারে ভাসালে ভেলা - মনে পড়ে ...।"

সম্পূর্ণ অচেনা বিরহ বিচ্ছেদ বেদনা অবশ করে দিচ্ছে অস্তিত্ব।
ভালোবাসার সাথে পরিচয় কেবলমাত্র শরত রচনাবলিতে।
আরেকটু পরে হয়ত গোরা কিংবা শেষের কবিতা। 
বিরহ - মিলন সবটুকুই বড় ছায়াময়। 
ওই অবশ করা যন্ত্রণাও তাই বড়ই মায়াময়। 
তারই মধ্যে মিশে থাকে ডানা মেলার স্বপ্নও।

রাত্রি নিবিড় হয় - পাড়া ঘুমিয়ে পড়ে - টেবিলে টেস্টপেপার - গরম লেপের উষ্ণ আহ্বান উপেক্ষা করে ঘড়ি ধরে অঙ্কগুলোকে বাগে আনার প্রচেষ্টা - জীবনের সিঁড়ি ভেঙ্গে নিরন্তর ওপরে ওঠার নিরুচ্চার অঙ্গীকার আর মাধবীলতার মৃদু সুবাসের সাথে খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া সুরের মূর্ছনা - সব মিলেমিশে যায় কঠোর শীতের রাত্তিরে। 

বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে একদিন। 
ভূপেন হাজারিকার গান শুনতে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। 
পাড়ার মেয়েরা দল বেঁধে গেলাম শুনতে।
ক্লাবের ছেলেরা তৎপর। ভালো সীট জুটে যায় আমাদের।
চেনা ছকের বাইরে সে গানের অন্য রকম আবেদন।
সুরের মায়াজাল ছিঁড়ে শব্দের স্ফুলিঙ্গরা আমাদের মন নিয়ে খেলা করে। 
উড়ন্ত স্বপ্নরা ডানা ঝটপটিয়ে উড়ে বেড়ায় ভোলগার তীরে, এমাজনের জঙ্গলে।
সহজ সুখের গণ্ডি ছেড়ে বেরোবার ডাকে মন চঞ্চল হয়। 
বুকের গভীরে ধাক্কা মারে "মানুষ মানুষের জন্যে - জীবন জীবনের জন্যে - একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না" - নিশ্চিন্ত সুখের স্বপ্নরা কোথাও যেন একটু অপরাধবোধ জাগায়।
চিরস্থায়ী নয় যদিও। 
সুরের দোলাটুকু রেখে কথার অভিঘাত মুছে যায় অচিরেই।
সত্তরের দশক শেষ হয়ে আসির দশক শুরু হল।
দুনিয়াটা অনেকটাই বদলে গেছে। 
চাকুরে মেয়েরা কেবল স্কুল - কলেজের দিদিমণি হতে পারে এই ধারণাটা একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে। 
সংখ্যায় অল্প হলেও কেউ প্লেন চালাচ্ছে তো কেউ কারখানায় অফিসার হয়ে যাচ্ছে।
মাধ্যমিকের পড় আর এক চিলতে অবসর রইল না রোদ্দুর মেখে গল্পের বই পড়ার। 
উল কাঁটাগুলো কোথায় হারিয়ে গেল। আহ্রিয়ে গেল এক বাক্স রেশমি সুতো। 
বিছানা জুড়ে অঙ্কের বই। অন্যান্য বিষয় থাকলেও তাদের সাথে সম্পর্কটা সেরকম ঘনিষ্ট হল না কিছুতেই। 
কি করে যেন এটা মনের মধ্যে গেঁথে গেছিল যে নিজের জীবনটা নিজের নিয়ন্ত্রণেই রাখতে হবে। 
বন্ধ রইল পাড়ার লাইব্রেরী থেকে বই আনা।
সে এক কঠোর তপস্যা। 

তাই কোন চোখ, কোন চকিত ছোঁয়া, জন্মদিনের উপহারে দু এক কলি কবিতা মনকে উতরোল করলেও বিহ্বলতাকে চৌকাঠ পেরতে দিই না মোটেই।
তখন গভীর অধ্যয়নের সময়।
একা একা সামাল দেওয়া একটু কঠিন মনে হোল। 
তাই জীবনে প্রথম এক মাস্টারমশাই বহাল হলেন অঙ্ক করাতে।
আমারই পছন্দের মানুষ। 
নামেই মাস্টারমশাই! 
বয়স - থাক! বয়সে কি বা যায় আসে! 
পরিবারের সকলের চোখে মাস্টারমশাই তো!
আমার মন - সে তো দূরাভিসারি - সবাই জানে।
তাঁর মনের খবর জানার প্রয়োজন নেই - তিনি না মাস্টারমশাই!
বাকি বিষয়গুলোর জন্যে কাউকে পছন্দ করা গেল না - তাই তারা উপেক্ষিতই থেকে গেল। 
কমলালেবুর গন্ধ মাখানো অঙ্ক খাতার পাতারা ভরে উঠল ত্রিগোনমিতির জটিল উপাখ্যানে। 
সুর রইল বীজগণিতের সমীকরণে - মন রইল অটল তার সাধনায়।
দু বছরের কঠিন অধ্যাবসায়ের পর তখন উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট সবে মাত্র শেষ হয়েছে। ফল মন্দ না। 
অর্থাৎ প্রস্তুতি মোটামুটি খারাপ না। 
সাহস করে একদিন উচ্চাঙ্গ সংগীতের জলসার টিকিট নিয়ে এলেন মাস্টারমশাই। 
ধোঁয়াশা মাখা মাঠে তাঁবু পড়বে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। 
আমজাদ আলি, গুলাম মুস্তাফা খান, বিলায়েত খাঁ আসবেন সারা রাত্রি ব্যাপী অনুষ্ঠানে।
টিকিটখানা দেখে পিয়াসী মন হঠাত টের পেল কতদিন ভালো করে গান শোনা হয়নি! 
প্রায় পনের জন দল বেঁধে যাওয়া হবে জলসায়।
সে এক অদ্ভুত রাত্তির। 
রাত দশটা। 
চোখ বন্ধ করে আলাপ ধরলেন আমজাদ আলি। 
রাগ দুর্গা আমার বড় প্রিয়।
উচ্ছ্বলতা আর তেজের অদ্ভুত মিশ্রণ। 
তাঁবুর তলা দিয়ে ধুঁকে পড়া হিমেল হাওয়া গলে যাচ্ছে সরোদের মূর্ছনায়।
কয়েক হাজার মানুষ প্রত্যেকেই নিবিড় একাত্মতায় ডুবে যাচ্ছি সুরস্রষ্টার সাথে। 
মধ্যরাতে ওস্তাদজী ধরলেন সেই অমোঘ মালকোষ - যা রক্ত উদ্বেল করে দেয় মধুর যন্ত্রণায়।
পাশাপাশি বসে সুরের সমুদ্রে ডুবে যেতে যেতেও আমরা দুজনেই জানি যে আনন্দধারা বইছে চারপাশে তা ক্ষণস্থায়ী। 
যেন সে কথাই প্রমাণ করতে এরপর গুলাম মুস্তাফা খান সাহেব ধরলেন দরবারি কানাড়া। 
শীতের রাত্তির ভিজে যাচ্ছে গুমরে গুমরে ওঠা অব্যক্ত আর্তিতে। 
যেন কোথাও কোন উষ্ণতা নেই।
কোথাও কোন ফাঁক নেই। 
পুরো পৃথিবী ডুবে গেছে কান্না-ভেজা সুরের নিশ্ছিদ্র গহীনে। 
একলা শীতের রাত্তিরে আজও মনখারাপের বিমূর্ত রূপ চতুর্দিকের জমাট বাঁধা আঁধারে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফেরা দরবারি কানাড়ার হৃদয় খোঁড়া সুর। 
যখন নিকষ কালো আঁধার ছিঁড়ে লেবু চায়ের মত ভোরের আভাস দেখা দিল - তখন সেতারের তার বাঁধতে বসলেন বিলায়েত খাঁ সাহেব।
ধরলেন ভৈরবী। 
বড় মনোরম ছিল তাঁর বাজাবার ভঙ্গিমা। 
সুন্দর হাতখানি বাড়িয়ে সুর ছেঁচে নিতেন পারিপার্শ্বিক থেকে - তারপর তাকে বইয়ে দিতেন সাত তারে। 
তাঁর আহ্বানে স্বরেরা স্বর্গ থেকে নেমে এসে খেলে বেড়াতে লাগল আমাদের চারপাশে। 
কোমল হোল ঋষভ। 
কোমল গান্ধার বড় যত্ন করে একটু একটু করে মুছে দিতে থাকল চরাচরের যত নিকষ কালো। 
কোমল ধৈবত সোনালী আলোর গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে আবীরের মত। 
স্বর্গীয় সুখে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে কোমল নিষাদে এসে মোচড় দেয় ওস্তাদের আঙ্গুল। 
বুঝতে পারি পরিপূর্ণ সুখ এক অলীক কল্পনা।
সেই মীড়ের মূর্ছনায় সুখের ঝড়ে মিশে যায় অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা।
ভৈরবীর আবেদনে সূর্য্য ওঠে। 
কোষ অনুকোষে অনুরণিত হয় জগজ্জনীর আরাধনা।
সূর্য্য দিগন্ত ছেড়ে আকাশে উঠে পড়ে। 
কারখানার চিমনিতে ধোঁয়া ওঠে।
ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিস্তব্ধ পথ হাঁটি দুজনে। 
কয়েক পা।
তারপরেই জীবন দ্রুত গতিতে উড়িয়ে নিয়ে যায় সেই ছোট্ট শহরের চৌহদ্দির বাইরে। 
স্বপ্নরা দ্রুত গতিতে সত্যি হতে থাকে।
পিছে রয়ে যায় ছোট্ট ইস্পাত নগরী।
এ পথ সে পথ ঘুরতে ঘুরতে বেলা বয়ে যায়। 
কোন এক অচেনা শহরে বর্ফিল হাওয়ায় ভেসে আসা সুরে হঠাত হঠাত ফিরে আসে কৈশোর। 
বৃহৎ জীবনপটে জীবনের অঙ্ক খানিক মেলে খানিক মেলে না।
পাওয়া - না পাওয়ার পারাবারে দাঁড়িয়ে মনে হয় বিষাদের নাম কোমল নিষাদ। 




Winter Festival of Dances
Priyadarshini Ghosh


Annual Festival of CLT

The cool change in breeze heralding winter brings many diverse cool feelings and perennial memories. Picnics, Christmas parties, holidays, silk saris…..But for me one event that remains foremost amongst them is the Annual festival of performances of CLT, the Children’s Little Theatre.

Clildren’s Little Theatre has been a premiere performing and fine arts institution for the children for the past many years. A brain child of Sri Samar Chatterjee, CLT was established in for imparting knowledge of dance, music, art and craft taught in a fun simplified pedagogy. Dance classes, held throughout the year culminated in a new production to be presented in the CLT festival.

It was not just learning dance, but creating a fantasy world for me and other children. Apart from dance we learnt music, drawing and painting and roller skating. We were the proud possessor a beautiful skating ring.

As we grew older the regular music and art classes gave way to learning the whole process of creating a production. Story selection, scripting, music composition, set design, light design, costume design etc.

Once CLT opened after pujo and Kalipujo, bhaiphota, the build up for the ‘December’ festival excitement started. It was almost a month long picnic. Week/ten days before the commencement of the festival, rehearsals started, sometimes a full day affair on holidays with a picnic like lunch. These continued through the two to three weeks of the festival duration.

Apart from CLT ‘picnics’ each group of friends also had their personal get together. Lunches and sleepovers after CLT rehearsals or performances; the planning of what dresses to wear which day. Eating at the various stalls put up for the festival duration, prime being churan at the Jaina Shilpa Mandir stall.

There were crazy incidents which also became part of our festival memories. Once during our performance of Ramayan I was enacting Mohini. I danced my portion till the nose is chopped off. In the next scene another performer entered as Surpanakha with red color on the nose requesting for revenge to Ravana. But this day that particular performer couldn’t be found. So red color was applied to my nose and I re-entered for the scene. Later we found out, the two girls, close friends, who largely played the rakshas, wore masks and didn’t have to apply make up, had gone out to have phuchkas during the performance. The reprimand was severe but fortunately we were at such a happy place that all reprimands were well accepted and lessons were learnt.

Some invaluable memories are also part of this happy winter times. We were the lucky generation who experienced the golden era of CLT through the 60’s, 70’s and 80’s.

A new production named ‘Rivers’ was being produced based on the classical dances. The introduction prelude was to be sung by Sri Hemanta Mukherjee. We remember him coming for this and singing ‘ogo nodi apan bege pagal para….’recorded in CLT’s own recording studio with Prasad da of the famous Prasad Studios, at the helm. 

Many other stalwarts like Rabi Shankar, Timir Baran have created outstanding music for various productions of CLT.

It is during these festivals I have witnessed amazing performances of many illustrious personalities. We watched mesmerized, the four Jhaveri sisters spin on their knees during their Manipuri recital. Was wonderstruck watching a totally new dance style, Odissi performed by Sanjukta Panigrahi to the mellifluous singing of Shri Raghunath Panigrahi and the pakhwaj being played by this small man who created magic, Guru Kelucharan Mahapatra. An Italian performing Indian Classical dance? Yes we were fortunate to have watched one of Ileana Citariti’s earliest Odissi performances.

There was another element to our winter festival memories of CLT. Performance tours to various places. The absolute highlight of these was being invited to perform at the Teen Murti Bhawan for Nehru’s birthday celebrations on the 14th of November. Children’s Day, another winter festival that all kids celebrate heralding winter. All schools gave permission immediately for all girls to travel for 3 days to Delhi. Smt Indira Gandhi came backstage to wish us happy Children’s Day. We performed with the Prime Minister, Smt Gandhi with Sonia Gandhi sitting with a young Rahul and Priyanka beside her, President Shri Fakruddin Ali Ahmad and many erstwhile dignitaries as our audience. We were housed also at Teen Murti Bhawan and walked and enjoyed the beautiful grounds of the Bhawan on that cool November morning.

The Annual winter festival of CLT, though much waned in glory, has remained a part of my life through various stages; as a student, as a young teacher, as visiting choreographer, as a senior teacher and now a Governing Body Member.


Uday Shankar, Khajuraho and the Margazhi season in Chennai.

As I grew up, festival of dances expanded its fold to encompass many more renowned dance festivals. I had graduated from children’s performances to a soloist. 

It was an amazing experience to perform under open skies, on a cool wintry evening, with the majestic Khajuraho temples as a backdrop. The Khajuraho dance festival is held for a week starting on Shivratri which is typically in Feruary.

For us, practitioners of Southern dance styles, ‘Season in Chennai’ is a big thing. Typically known as the Margazhi season, Margazhi in Tamil calendar starts around 22nd Nov ending 21st Dec. The performances however continue till March. Chennai bustles during the Natyakala Conference with dancers from all parts, including the ‘Migratory Birds’, a term coined for the NRI dancers, congregating there. Enriching lectures and seminars and performances by stalwarts like Vyjayantimala Bali taking the stage as Andal; a relatively pleasant Chennai, rich aroma of filter coffee with piping hot idlis over animated conversations with friends and colleagues in beautiful saris off the rich southern looms, are some of my heartwarming memories of Margazhi season.

Closer to home, come 8th of December, Rabindra Sadan becomes a Mela ground, in celebration of the Uday Shankar Festival. Clearly the biggest dance festival held for a week, under the State Rajya Sangeet Academy showcases some of finest performances from dancers of Kolkata and India. Simultaneous performances are held inside the auditorium and on the erected outside stage. Performances across genres and stylizations are presented. So you can watch a solo classical, a group folk, contemporary and dance dramas all in one day. The bustling dressing room of the Rabindra Sadan, if performing, or hanging around outside with friends, it’s definitely winter picnic all around, lebu cha’ and chanachur and silk saris replacing the coffee and idli.

Many many more dance festivals dot the winter season and it usually is a busy, hectic but fulfilling time for me. From soloist to forming a repertory, co-directed with friend and colleague, as a performer my strongest festival memories of winter will always be associated with my dance memories.


।। শীতের শহর ।।

এনাঙ্কশেখার রায়


বাড়ির সামনে লম্বা একটা বারান্দা । নিচু পাঁচিলের গা ঘেঁষে চলেছে সরু এক রাস্তা । অন্য সময়ে চলমান মানুষ এবং রিকশা ব্যস্ত করে রাখে তাকে । কিন্তু শীতের দুপুরে সে রাস্তায় লোকজন নেই । মনে পড়ে, শিলিগুড়ি শহরে ছোটবেলায় ওই বারান্দায়, ওই পরিবেশে, রোদে পিঠ ঠেকিয়ে, হাতে একটি কমলা লেবু নিয়ে দুপুরগুলি কাটতো আমাদের । সে কালে মফস্বল শহরে মেলামেশা ছিল অবাধ । পায়ে হেঁটে যাওয়া কোনো পরিচিত মানুষ একটু দাঁড়িয়ে দু একটা কথা বলে আবার চলে যেতেন নিজের গন্তব্যে । শীতের প্রায় নিশ্চুপ দুপুরে কখনো একটি রিকশায় লাগানো মাইকে - "আসিতেছে, আসিতেছে, মেঘদূত সিনেমায়, দিলীপ কুমার, সায়রা বানু অভিনীত সাগিনা মাহাতো ।" আমি গেট খুলে দৌড়ে রাস্তায়, লাল হলুদ কাগজে সিনেমার বিজ্ঞাপন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিতে ।

কলকাতায় পড়তে এলাম এগারো-বারো । মনে হল শীত ঋতু এখানে অনেকটাই মানুষের মনে । বর্ষা বা গ্রীষ্ম যেমন জানান দেয়, শীত তত টা নয় । বর্ষায় বা গ্রীষ্মে প্রকৃতি নিজেই ধরা দেয় তাঁর নিজের রূপ নিয়ে, কিন্তু শীত কে উপভোগ করতে লাগে বই মেলা, ক্রিসমাস ইত্যাদি । ট্রাংকবন্দী শীতের পোশাকগুলি বেরিয়ে আসে, প্রয়োজনে যত, শখে তার বেশি । আর একটি আকর্ষণ, যা আমাকে ধীরে ধীরে পৌঁছে দিয়েছিল এক অন্য জগতে, যা কাজের বাইরের পুরো জীবনটাকেই জড়িয়ে নিয়েছিল, তা হলো গান । শীতের সন্ধ্যায় আর রাতে কলকাতা হয়ে উঠত সংগীতময় । আর আমি দুএকটি বন্ধুর সঙ্গে গান শুনবার নেশায় পৌঁছে যেতাম রবীন্দ্র সদন বা একাডেমী বা নেতাজী ইনডোর । শেষরাতে আহির ভৈরোর আগে এক কাপ গরম চা আর ভোর হতে অদ্ভুত এক আমেজ নিয়ে বাড়ি ফেরা - স্মৃতির মণিকোঠায় সেসব জমা হয়ে আছে আজও ।

বাড়ি বদলে যায়, শহরও ।
দিল্লি প্রথম পৌঁছেছি ঘোর গ্রীষ্মে। এখানে দুটিই ঋতু । দুটিই বড্ড কড়া ধাতের, একে অপরের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা । হয়তো ঋতুর প্রভাবে মানুষ গুলিও তেমনি কড়া এখানে। মনে পড়ে, প্রথম শীতের গোড়ায় এক আত্মীয়া বলেছিলেন যে শীতকালে অফিসের প্রধান বা কর্মচারী, পোশাক দেখে কাউকেই আলাদা করে চেনা যায় না । দেখলাম ও তাই । ক্রমে বোঝা গেল, এখানকার মানুষ বাইরের আবরণ নিয়ে ব্যস্ত থাকে খুব । অগত্যা আমিও পৌঁছেছি দর্জির দরজায় সাহেবী পোশাকের ব্যবস্থা করতে । তবে সত্যিকারের শীতের দেখা পেলাম ওই দিল্লীতেই । 

বড় সুন্দর সাজানো শহর ছিল দিল্লি, সেই সময় । আরো সুন্দর করে সেজে উঠতো নানা রঙের শীতের ফুলে । কুয়াশা ঢাকা দিল্লির সকাল ছিল যেমন বড্ড মায়াবী, তেমনি বিপদে ভরা । মনে পড়ে, আমার ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে বাসস্টপে অপেক্ষা করছি । ওর সাথে গল্পে মশগুল থাকতাম আমি । সেদিন ও তাই । হঠাৎ, দু পা দূরে বাঘের চোখের মত দুটি হেডলাইট দেখে বুঝতে হয়েছিল যে স্কুলবাস উপস্থিত ।
তবু প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছানোর আগে অবধি, দিল্লির কড়া শীতও বড্ড মোলায়েম লাগতো আমার, শরীরে এবং মনে ।

কিন্তু, প্রৌঢ়ত্ব চায় উষ্ণতা, আর তাই ফিরে আসা সেই কলকাতায়, যেখানে শীত শুধু ঋতু নয়, শীত এক সময়, উৎসবের সময়, রোদে পিঠ ঠেকিয়ে আড্ডা দেবার সময় ।
কিন্তু, তাই বা হচ্ছে কোথায় !
পরের শীতের অপেক্ষায় থাকি অগত্যা ।



Krishnakali Dasgupta
Winter Festivals I : Thanksgiving


It’s a crispy cold morning here today, with the winter wind crackling over the dried leaves and the honeyed rays of a late November sun setting the last few fiery red leaves on the bare brown branches aflame. We sip into our piping hot cinnamon teas and start prepping for the winter rituals of the western hemisphere. For it is Thanksgiving morning today and in less than a month it will be Christmas time. 

Over the past century and a half, the holiday of ‘Thanksgiving' has become almost eponymous with the North American countries of the United States and Canada, being identified as unmistakably indegenous to the land and its inhabitants, and irretrievably tied to the immigrant identity of the nations. But it is only since 1863 that Thanksgiving has been officially celebrated in the United States as a national holiday on the last Thursday of November, commemorating what is now considered a historic feast between one of the first group of British settlers in Plymouth, Massachusetts of New England and their neighbouring Wampanoag Native Americans in November of 1621. Specifically, this group of colonists called ‘Pilgrims’ were Englishmen fleeing religious persecution from the Church of England due to their Brownist/Separatist beliefs. Initially exiled to Holland around 1608, by 1619 they decided to leave Europe for the New World. In 1620 they boarded the vessel Mayflower from Plymouth, England and after an extremely perilous voyage, eventually reached Cape Cod, Massachusetts on November 21, 1620. But the Pilgrims were unaware that they were facing months of New England’s bitingly harsh and bitter winter. Caught completely unprepared the Pilgrims suffered deeply throughout the winter and were only able to survive due to the spontaneous and continued help received from the Native American people in the area, who not only taught the new settlers ways to survive the winter, but as the year wore on helped plant and successfully harvest their first round of crops by the following autumn. Having survived the year, the then Governor of the newly built Plymouth colony (named after the port in England they sailed form), William Bradford, convened a celebratory feast inviting the members of the Wampanoag tribe, especially their chief Massasoit, to express the gratitude of the Pilgrims to the native tribesmen for their help during the past year and share the autumn harvest with them. These celebrations, chronicled to have run for 3 days, was later officially eulogised as the ‘First Thanksgiving Meal’. 

Thus in its true essence, Thanksgiving is an Autumn harvest feast, celebrated right before the onset of the coming winter months by sharing the first meal made from fresh harvest, with friends, family and the entire community. Precedence of such Autumn harvest festivals are actually found in countries and cultures all over the world, but their exact month of observance can range from September to November according to the time of harvest as set by different weather conditions in different latitudes. For this exact reason, Canada observes Thanksgiving in early October, as their ‘end of harvest’ period precedes that of the US by almost 2 months. 

In truth, the roots of this idea of a ‘Thanksgiving feast’ can be traced back by at least another century to the Protestant Reformation movement in England during Henry VIII’s reign. The ‘Puritans’ leading this movement wanted to eliminate the ‘Church holidays’ (pertaining to events in the lives of the Christ, or those deemed holy by the Church etc) and usher in an era of special religious services with Days of Fasting during ongoing catastrophic events ( like plague (1604), drought (1611) or floods (1613)) or Days of Thanksgiving on events of nationwide celebration (Victory over the Spanish Armada (1588) or failure of the Gunpowder plot (later Guy Fawkes Day, 1605). This was done in order to make the celebrations more relevant to the daily lives of common men and in a sense make them ‘secular’ in nature, in contrast to holidays of only deep religious connotation. The Pilgrims, already deeply influenced by this Reformative thought, decided to continue this tradition of secular Thanksgiving and Fasting in their new colonies. Historically, we find mention of several ‘Thanksgiving events’ across the New England states during the 1620s, and different colonies continued to hold these traditions independently for a century and a half, till as the first President of the United States, George Washington declared Thanksgiving Day as a National celebration on November 26, 1789. Eighty years later, influenced by author Sarah Joseph Hale’s campaign, President Abraham Lincoln created the modern version of the National holiday of Thanksgiving in 1863 for the final Thursday of November. Though in 1939 Franklin D. Roosevelt changed the date of the National Holiday to the last but final Thursday of November to relieve traders during the Great Depression, but following intense pressure from the populace he changed it back to the last Thursday by joint regulation of the Congress in 1941. 

In its modern form in the US, the National holiday is celebrated with a home-cooked feast of roasted turkey, stuffing and mashed potatoes served with cranberry juice (jelly) and pumpkin pie, shedding its original religious roots and rather commemorating the ‘shared bountiful meal’ with friends and family. Several food drives are organised all over the nation in an effort to not let anyone go hungry on ‘Thanksgiving Day’. Besides the close-family dinner, the tradition of an annual parade is also organised at club, county, town and city level all over the country with thousands taking part every year. Besides North America, today Thanksgiving is also celebrated in its autumn harvest feast format in countries like Brazil, Australia, Grenada (Caribbean islands) , Liberia , Netherlands, Philippines and Saint Lucia. 

All these traditions have over time made Thanksgiving a truly secular and modern ‘American’ holiday. But, over the course of it’s almost 400 year long tumultuous history the questions slowly arose of whether the true essence of those First Thanksgiving meals in honour of the help extended by the native american tribesmen was truly honored by the white settlers. Historically, what followed was a bloody trail of systemic genocide and brutal oppression of the native tribes by the colonisers, leaving a collective memory of horrific violence among the original masters of the land. To the current generation of Native American people, Thanksgiving Day holds the symbolism of not that of gratefulness but that of betrayal. 

As generations pass their traditions on, the age old harvest festival is never able to completely throw off it’s socio-political connotations gathered from cycles of passage, and every year we learn to serve with one hand and raise the other in protest. 

Winter Festivals II : Christmas 

As the last of the orange hued leaves fall off leaving the branches bare, slowly a droplet or 2 of morning dew starts settling on the twigs paving the way for the flurries, till one early morning we wake up to find the world covered in a silvery white blanket of fresh snow. 

Deep in the hours of these snow-clad times begins preparations for the most widely celebrated Christian festival of modern times, that of Christmas or the ‘Feast of Nativity’ (Christmas being a shortened form of ‘Christ’s mass, referring to the special church service held for this event). Early in the era of development of Christianity as a religion, in around 4th century CE, the church leaders decided on marking December 25 of the Gregorian calendar or the Winter solstice for an annual festival commemorating the Nativity or birth of Christ. In truth, the real birthdate of Jesus is not known, but there existed a long history of pagan festivities on winter solstice (including the Germanic ‘Yule’ celebration), which appears to be the primary reason for choosing this specific date (the period being already marked as a period of festivities), besides the fact that it occurs 9 months from the vernal equinox ( March 25) marked as the day of conception of the Christ. For some Eastern Christian churches who still follow the old Julian calendar, Christmas day or December 25th falls on January 7th of the current Gregorian calendar. By 6th century CE, the period of celebration was extended by 12 days by the Council of Tours (mostly to accommodate the eastern provincial lunar calendars) giving rise to the traditional ‘Christmastide’ that begins at sunset or vespers on December 24th (Christmas Eve) and continue upto the ‘,Twelfth Night’ on January 5th, with various celebrations and feasts during the intervening days, including New Year celebrations. The 4 weeks leading up to Christmas was added to be observed as Advent of Christmastide, while churches of Western Europe and Latin America prefer to extend the celebrations for 40 days upto Candlemas on February 2, the day of presentation of Christ at the Temple. Thus, over the 17 centuries this celebration slowly grew into a myriad amalgamation of various religious and cultural traditions first originating in the western world and eventually spreading all across the globe spanning the entire final fortnight of December and a week of January, effectively making this period a winter holiday ‘season’ of ‘Christmastide’. 

As mentioned, at the very core of Christmas festivities lies the celebration of Nativity or birth of Jesus in Bethlehem. The story traces the journey of Mary and Joseph, parents of infant Jesus, from their town of residence Nazareth to Joseph’s native town of Bethlehem to register in the census declared by the reigning Roman emperor Ceaser Augustus. On reaching Bethlehem, they are unable to find proper accommodation and take shelter in a stable where a heavily pregnant Mary delivers her child and places him on the manger. The impending birth of the son of God had already been prophesied for the couple by angels, and on his birth the angels send out the message of the arrival of the blessed child to the shepherds who come to see the infant Jesus and then send the message far and wide. Other than the shepherds the story of Nativity also talks about the arrival of 3 wise men of the East who anticipate the arrival of the ‘True King of the Jews’ and travel from distant lands to the stable in Bethlehem, following a shining star. They bring with them gifts of gold, frankincense and myrrh for the savior and kneel and pray before the child. Since Jesus is effectively born the night before December 25th, the major church services as well as all cultural celebrations begin the night before, on evening of December 24th, known as Christmas Eve, when families gather together for a feast and wait together for midnight of Dec 24th, marked as the moment of arrival of the savior. 

Historically, over the past 2 millenia, the celebration of Christmas has gone through several phases of loss of popularity and eventual resurrection. After its inception around 4th century CE (there are historical records of a Christmas celebration in Rome in 336 CE), it largely remained a church holiday and service, and lost its prominence somewhat by the 8th century up until Charlamagne the conqueror was coronated Emperor of Holy Roman Empire on Christmas day of 800CE at St. Peters Basilica. Charlamagne famously chose Christianity as his state religion to unite his conquered territories spread all across Europe and is responsible for the first revival of all Christian festivals including that of Christmas.

In the Middle ages the festive nature of Christmas celebrations expanded exponentially to include several feasts, music and dancing and rising popularity of Christmas decorations using ivy, holly and evergreen leaves. Carol singing by small groups of troubadours also dates back to the Medieval times. But this open revelry caught the ire of the Puritans of England (the same Pilgrims who traveled to the US and pioneered the Thanksgiving celebrations) who vehemently opposed Christmas celebrations citing ‘drunken brawls’ leading to open conflicts during Christmas celebrations. The tides were effectively turned by several English thinkers and authors most prominently led by Charles Dickens, who championed towards reviving the ‘spirit’ of Christmas in close alignment with ‘Christian’ concepts of compassion, charity and goodwill combined with festive activities with close friends and family. In 1834 Christmas became a bank holiday in the UK and in 1843 Dickens published ‘A Christmas Carol’ that championed the transformation of a rich ‘miser’ Scrooge to a more kind and charitable human being who by the end of the story would become more beneficial to society in general. This reformist movement was able to transform the pagan ‘merrymaking’ ritual into one of charity and sharing. 

Thus at the close of almost 17 centuries of its existence, the modern Christmas celebrations are effectively an explosion of visual, auditory, gustatory and philosophical traditions and a rich concoction of religious, secular, pagan and multi-socio-cultural expressions and symbolisms. In simplest terms, Christmas celebrations signatorially involve magnificient display and decorations, music and performances, multiple feasts and social congregations, religious engagements and traditions and most popularly, widespread exchange of the Season’s greetings and gifts. 

Among the visual displays, the oldest tradition is that of recreation of the Nativity scene (since 10th century Rome) with the infant Jesus on a manger moments after his birth with his parents, the shepherds, the angels and the 3 wise men surrounding him and gazing at him, and the bright shining guiding star above them. Concurrently there is the tradition of opulently decorated Christmas trees (using heirloom decorations collected and gifted over generations) started by the German Lutherians in the 16th century, wreaths ( like the Advent wreaths) using the Christmas colours of red, green and gold and eventually extensive lighting decorations. The decorations are traditionally put up during Advent and are taken down on the Twelfth night or on Candlemas. Among church activities, attending church on Christmas eve and early morning mass on Christmas day make up the 2 most important engagements for practising Christians during the period. In a divergence from typical religious festivals, Christmas masses are open to the general public and people of all faiths and creeds are known to turn up for an experience of the midnight mass of Christmas eve.

Carol and choir singing along with performances of Nativity plays have been common activities since the Middle Ages, but the modern writers and composers have added a plethora of Christmas material that have also become a part of an annual ritual. One of the most well known examples of the latter is Tchaikovsky’s 2 -act ballet ‘The Nutcracker’ made exclusively for children which first debuted in 1892 and is today a most beloved Christmas tradition. Festivities for children hold a major significance in Christmas celebrations, most likely in accordance with the idea of the celebrations being held primarily in honour of the birth of infant Jesus. Feasts and festivities prepared specially for children along with preparation of special gifts for them hold such a special place in Christmas traditions, that among all festivals Christmas is easily the most favourite of children. 

Exchanging gifts with one’s close friends and family, and sending Christmas cards to all acquaintances also forms a major Christmas tradition, along with release of commemorative items like official Christmas stamps.

Naturally the direct involvement of children together with the significance of gift exchange during the period helped making the symbolism of Father Christmas or ‘Santa Claus’ (Sinterklaas in Netherlands),- the picture of the’ mirthful grandfatherly character with a jolly infectious laughter flying through the sky on his reindeer driven chariot bringing gifts for every child’, the most popular and readily identifiable icon to be associated with the spirit of Christmas. The iconography of ‘Santa Claus’ is traced back to Saint Nicholas of Myra , a Greek bishop from the 3rd century. Though not much is known about him, the legend associated with him speaks of his practise of asking children whether they have been good throughout the year on Christmas day and rewarding them on learning of their good behavior. The current iconography of ‘Santa Claus’ owes its origins to a revivalist movement in New York ( formerly the Dutch colony New Amsterdam) led by Washington Irving and cartoonist Thomas Nast in late 19th century, who in an effort to revive New York’s pre-anglo Dutch heritage used the popular Dutch tradition of ‘Sinterklaas’ to design the modern Santa Claus. 

Simply put, Christmas celebrations across the world have more variations and local traditions that can ever be captured in their entirety, but no matter where you are the traditional Christmas desserts, especially the fruitcakes, puddings and sweets and a glass of hot cider can never be far away. Your favourite Christmas memories may be of picnics, ice skating over frozen lakes, carefully piling gifts under the Christmas tree or just sitting on your bed drinking hot chocolate and listening to the ringing of the Christmas bells/ But whichever it may be, Christmas celebrations have this uncanny ability of reminding one of all good times of past and raising a sense of hope over the feelings of loss at the advent of Fall. Unbelievably, Christmas is able to create a sense of ‘Magic’. Everytime. 

For auld lang syne, my dear
For auld lang syne
We'll tak a cup o' kindness yet
For days of auld lang syne




Winter Festivals

A Christmas Rant
Indrayudh Shome

Although I was born in Kolkata, I have never properly lived there. My father’s career made us somewhat nomadic. After my first 7 years in Bengaluru, Mumbai, and New Delhi, we moved to Hong Kong and then Singapore. At 18, I moved to the US for higher studies and eventually immigrated for my work in music, media, and education.

For a little over 10 years our family got a taste of the things money could buy and I received an education and exposure on that same level, but we don’t come from or reside in any great wealth, and as a young boy I was blessed to have thoughtful parents and privileged to see a lot of life from multiple, and sometimes opposite, perspectives.

My mother is Hindu, my father is Atheist, my stepmother is Muslim, I went to a Christian school, and I grew up around Taoists and Buddhists. By secondary school, I had seen nearly 20 countries and had spoke some degree of Bengali, English, Hindi, Mandarin, and Spanish. In Asia, I went to Western-style schools, and in the America, I studied Eastern traditions.

So where am I from? What are my traditions and festivals?

Diverse as they are, these countries were all Christian colonies and Christmas has remained a constant cultural fixture.

The first Christmas I can remember with some clarity is my fourth, in Mumbai. We had a Christmas tree — a foot-tall plastic trunk with branches of silver glistening confetti needles coming out of it. If I remember correctly, there was also cotton to create a snowy effect. If I was good, Santa would bring me a gift.

It was also the first time I learnt the word “Christian.” I learnt that our domestic helper was Christian, whatever that meant, and she was going to visit the nearby church at night. She asked if I wanted to come and I was delighted to. If my distant memory serves me, the church was a mostly open-air island in the middle of a traffic circle near our building, its base painted blue. It was small, beautiful, and I had admired it curiously, without knowing what it was.

In the courtyard, there was a small shrine and a set of idols I didn’t recognize. Taking my hand, she walked over to the shrine and knelt.

“That is Jishu Christo. Christmas is a celebration of his birthday.”

I didn’t understand. I get a gift for his birthday? That was a rare early moment of the pure beautiful Christmas spirit.

I didn’t yet understand that this Christ was who modern years were counted on. I didn’t know the acts of love, joy, and brutality that he inspired, or the complicated power dynamics in his confrontation with Kali Ma, our black, naked, dancing, dripping-blood mother goddess, before Kolkata fell and rose as the capital of British India.

Speaking of idols and deities, my early Christmas lore revolved mainly around Home Alone and Batman Returns (thanks to my much-appreciated movie-loving, censorship-hating father). At some point I also watched The Grinch Who Stole Christmas, and I should probably warn you that I thought the Grinch was hilarious. Besides that, there was Santa.

At the end of 1996, my father’s career moved our family to Hong Kong months before the handover, from the UK back to China.

This was a big move for my father’s career and we enjoyed new comforts. There were Christmas trees like I had never seen before; air-conditioned shopping malls with Christmas Trees as big as buildings. Our personal Christmas tree was now multiple feet tall and with green, more realistic pine needles.

My new multicultural group of friends brought new quandaries to my little mind. People came from different countries, speaking different languages, and celebrating different festivals. Elementary school debates wandered not only to the existence of God, but which God, about whether Jesus or Buddha were real. Was Santa real?

Was Santa even real?

Santa became really good at knowing exactly what I wanted and even granting my wish, so much so that it was suspicious. While my parents were probably trying to show me their love in a way that they materially couldn’t before, it was all highly suspicious to me. I tried to send secret letters to Santa, tried to catch my parents in the act of placing the gifts, all sorts of stuff.

At some point in elementary school, that last bit came into focus, and it was no longer a question but a point of derision. “I bet that kid still believes in Santa! Har har har!”

An obese man flying around and squeezing down chimneys all across the world to deliver toys to “good” kids within the span of one calendar night. Nothing about it made sense, but I also just couldn’t believe my parents would lie to me about something absurd like this. That would make even less sense!

But alas. My loving parents were unintentional pawns in a global capitalist conspiracy to create attachment to material goods and sow the seeds of distrust. I mean. Santa? Satan? Red, little on the gluttonous side. It’s too obvious.

No thought of Mrs. Clause, the elf labourers — who knows their working conditions, let alone the little human children probably working somewhere along the toy supply chain, little children in Côte d'Ivoire farming chocolate who had never even tasted chocolate.

Going to a Christian school with Christians of many different denominations, I soon got more educated about Christmas. I met people who were both emanating divine inspiration and others who were confused and judgmental.

One of my best friends is Catholic. In high school as a teenager, I visited his Church and even attended a Sunday school lesson. Visiting my friend’s home, we said a prayer of thanks before dinner. That was a totally novel experience that got me one step closer to understanding the pure spirit of Christmas.

Finally, I moved to the America, and it was a whole other level.

I experienced beautiful snowy winters, just like in the movies. I had only seen snow on one occasion until now, but could clearly see the enchantment of four seasons. Who knew trees were even more beautiful as they lost their leaves? Fiery patterns dance with the wind and lay a golden carpet on the streets, leaving the branches in melancholic yearning. Except for the evergreens.

Christmas Trees are real trees! Would you believe it? People chop up real evergreens and sell them and decorate them. Then, the trees lay on sidewalks turning a beautiful orange over time. If the opportunity arises, let me tell you they are also helpful for a bonfire. Artificial trees are also popular, but I have a hard time calling them artificial compared to what I had known before.

Santa is the King of the America, and Christmas is his big-time puja. People are sometimes trampled to death for sales while the homeless sit outside desperately hoping for alms. Commercialized remixed Christmas music blares through every speaker from October onwards, advertisements you can’t skip or escape, except by virtue of the occasional soulful young person caroling in the streets late at night, bringing some love to the otherwise joyless sonic assault. They say Jesus was born on Christmas, but it looked to me like Jesus was killed on Christmas. He dies over and over again every year.

Jokes aside, over time, I came to see what Christmas truly represented to so many people. As I matured, as most of my friends and I all moved away from the town of our parents (and for many of us continents) and as work and life and relationships began to demand more time, that time between Christmas and New Year’s became precious. For us, it became the only holiday long enough to visit family and friends who were a long-weekend-round-trip away. Like many traditions, the heart has survived in the pure wisdom of appreciation, family, food, and rest.

More recently, I must say Christmas in the America has taken a new turn. For 3 of the last 5 years, I spent Christmas day sitting in shorts in the yard reading in the sun. God bless climate change, it’s like a trip to the beach. First the sun, then the soil turns to sand, then the oceans engulf us. I can feel Jesus returning and Kaliyug turning the corner.

Okay, maybe we can’t individually tackle climate change, but from everything that I’ve experienced and learnt about Christmas, I think remembering that Jesus was born a brown-skinned Middle Eastern homeless refugee who was on a quest to feed the poor would be a good start in the moment. 



পুরুলিয়ার লোকনৃত্য ও শীতের পরব নিয়ে একটি আলোচনা :--
লেখিকা শ্রীমতি মধুমিতা۔۔ পাল (নৃত্যশিল্পী ও গবেষিকা )

"Dancing as an art, we may be sure, cannot die out but will always be undergoing a rebirth , not merely as an art, but also as a social custom. It perpetually emeeges afresh from the douk of the people."
-Havelock Ellis, 'The dance of Life'
জীবন ছন্দবদ্ধ গতিময় এই গতিময় জীবন এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বৃত্ত জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আছে |প্রাচীনকাল থেকে নাট্যকলার অন্যতম উপাদান নৃত্য আবার নৃত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো নাট্য |আদিম যুগ থেকে আজও নৃত্য কিন্তু মানুষের জীবনধারণের জীবনে বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান | নৃত্য এমন একটি মাধ্যম যেখানে মানুষের হর্ষ-বিষাদ সুখ-দুঃখ ধরে ললিত অঙ্গরাগে নৃত্যের মূর্ছনায় | প্রাচীন গুহা যে চিত্র বলেছে তাতে স্পষ্ট পাথরে পাথরে নৃত্য রসের উদ্বেল মহিমা |নৃত্য গীত বাদ্য এই তৌর্যত্রিক বি দয়ার একত্র মিলনকে নাট্য অথবা সংগীত বলে| নাট্যশাস্ত্রে বলাই আছে নাট্য সংগঠিত হচ্ছে নৃত্ত নৃত্য গীত সহযোগে | সুতরাং নাট্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নাট্যশাস্ত্র কার বলেছে নাট্য হচ্ছে অবস্থানুকৃতি |অর্থাৎ কোন একটি অবস্থাকে বা সিচুয়েশন কে অনুকৃতি করা বা ইমিটেশন করাই হচ্ছে না যেটা প্রাচীনকালে আদিম যুগ থেকে মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগে আমরা বিভিন্ন রূপে সেটিকে দেখেছি |আর লিখতে চরণচিহ্ন থেকে অভাসিত ; নৃত্য ছন্দ তলমাত্রিক রেখা মাত্র নয় জীবনের প্রতি আগ্রহের কথা ও একদা গ্রামজীবনের গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ নিজেদের পরিমণ্ডলে নাচ করতো তা কোন দর্শক সাধারণের মনোরঞ্জনের অপেক্ষাই নয় কারুর জন্য সেটি অনুষ্ঠিত হতো না তা অনুষ্ঠিত হতো একান্ত মনের আবেগে বা তাদের ধর্ম পালনের জন্য ও যে আদিবাসী জনজাতি উপজাতি জনসমাজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে বাধ্য হতো কিংবা প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তারাও কিন্তু নাহিতো আপন খেয়ালে মনে যা আসতো তাই এই সবই কিন্তু লোক নাচের কায়ানির্মাণের প্রাককথা | ভরতের নাট্যশাস্ত্রে স্বাভাবিক ভাবমুক্ত এবং অতিভাষিত কার্যানুসারে যুক্ত দু'ধরনের নাট্য ধর্মের কথা বলা হয়েছে এক লোকধর্মী আর দুই নাট্যধর্মী . লোকধর্মী :

. স্বাভাবিক ভাবযুক্ত শুদ্ধ ও অবিকৃত জনসাধারণের জীবিকা ও কার্যকলাপ সংক্রান্ত এবং কৃত্রিম অঙ্গলীলা শূন্য , স্বাভাবিক অভিনয়যুক্ত নানাবিধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকাশ্রিত - এই রূপ যে নাট্যে প্রযুক্ত , তাহাই লোকধর্মী বলে খ্যাত |

. . নাট্যধর্মী :

অতিবাক্য ও কার্যকলাপযুক্ত, অতিমাত্রায় অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন , অতিভাসিত, লিলাপূর্ণ ,অঙ্গহারপূর্ণ , অভিনয়যুক্ত (শাস্ত্রজ্ঞ ) নাট্যলক্ষণযুক্ত , স্বর অ অলংকার , স্বর্গ অ দিব্যপুরুষাশ্রিত যে নাট্য প্রযুক্ত , তাহাই নাট্যধর্মী নামে অভিহিত| প্রস্তর যুগের আদিপর্বে মানুষ মূলত শিকারি ও সংগ্রহ জীবি |বলতো শিকার ভিত্তিক নাচি ছিল নব্য প্রস্তর যুগ পর্বে পশুপালন ও পশুপাখির বিচিত্র ভঙ্গি অবলম্বন করে নৃত্য অনুসরণ উল্লেখ্য |লক্ষনীয় শিকারি থেকে পশুপালক এবং পশুপালক থেকে কৃষিজীবীদের উত্তোরনের ফলে তাদের অবস্থান হলো লোকালয়ে | এর ফলে কিন্তু আদিম জীবনের আবরণ সরে গেল ,লোকসংস্কৃতির জন্ম হলো | বলাবাহুল্য এই রূপান্তর কিন্তু সহজে হয়নি কালানুক্রমিক পর্যায়ে এটি দেখতে হবে |

মধ্য যুগে এসে আমরা দেখছি মৃত্যু যেন এক আলাদা অস্তিত্ব ঘোষণা করতে চাইছে এই সময় বিষয়বস্তুকে পারফর্মিং আর্টস এর মাধ্যমে প্রকাশ করার একটি অভিনব রীতি তৈরি হলো | তাহলো নৃত্যনাট্য শুধু বাংলায় নয় সারা পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধের আরো অন্যান্য দেশগুলিতেও নৃত্যনাট্য এই বৈশিষ্ট্য গুলি বিদ্যমান তাতে এটা দেখা যায় একদিকে গল্প থাকছে একদিকে নিজেকে বা নিজেদেরকে প্রকাশ করার আঙ্গিকগত যে চলন অঙ্গ ভঙ্গি তা ক্রমশ তাই হচ্ছে স্বভাবতই সাধারণ অঙ্গভঙ্গি থেকে stilised অঙ্গভঙ্গি নৃত্য এতে অন্তর্ভুক্ত হয়| মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় |এই stylisation এর জন্যই কিন্তু লোকধর্ম নাট্যধর্মী দুটো একদম আলাদা আলাদাভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে | মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতির পূর্ব পটভূমি :- . এবারে আমরা সরাসরি চলে যাব মধ্যযুগের লোকধর্মী নাট্যে যেখানে সরাসরি উল্লেখ আছে ভরতের নাট্যশাস্ত্র সেখানে | ভরত নাট্যশাস্ত্র তে প্রাচীন বাংলা নাট্যরীতির স্বরূপ উদঘাটন ,বাংলা নাট্যরীতি স্বতন্ত্র চর্যাপদ এর নাটক ও অভিনয় রীতি ,তিব্বত থেকে সংগৃহীত সিদ্ধাচার্যদের রেখাচিত্র বিচার প্রাচীন বাংলার চিত্রকলা এই সমস্ত উদাহরণ কিনতে পাওয়া যায় যেখান থেকে আমাদের লোক নৃত্যের উৎপত্তি | 

লোকনাচ পর্বন্তিক |ঋতু পর্যায়ে চাষবাস আচার-আচরণ জন্ম-মৃত্যু প্রেম-বিরহ প্রভৃতিতে অনুষ্ঠিত হয় | যুথবদ্ধ নাচের খবর মহেঞ্জোদারো হরপ্পা থেকেও প্রাচীন বহুকালের সমন্বয় ভিত্তিক আমাদের লোকনৃত্য | পুরাতাত্ত্বিক উপাদানে নৃত্যকলার উদ্ভাশ লক্ষণীয় সিন্ধু সভ্যতার কালেই | ঋগ্বেদে নৃত্যশিল্পীর নৃত্য শিল্পীর স্পষ্ট করেছেন পরিচয় নৃতু |বেদ ভাষ্যকার সায়নাচার্য নৃত্যরত দেবতার প্রসঙ্গে বলেছেন মৃত মৃত শব্দটি এবং মৃত বলতে স্পষ্ট করেছেন বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন মৃত্যু চলাকালীন এর পারিভাষিক শব্দ বলতে বুঝিয়েছেন নৃত্য রামায়ণ-মহাভারতের যুথবদ্ধ নাচের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার প্রাচীনত্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সূত্রবদ্ধ করা হলো এইভাবে :--

১ ۔ আদিবাসী উপজাতি জনসমাজে এই নাচ স্পষ্ট ;
২ ۔ যুথবদ্ধতা মানে একসাথে এক রকম ভাবে হাত ধরে বা হাত ছেড়ে নৃত্য করা |
৩ ۔যে কোনো মুহূর্তে উপলক্ষে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দৈব দুর্বিপাক এ কিংবা হরিষে বিষাদ ঐন্দ্রজালিক জাদুক্রীড়ার প্রয়োজনে |
৪ ۔ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে অস্তিত্ব রক্ষার কারণে বা শত্রু আক্রমণ প্রতিরোধের অঙ্গ সঞ্চালন যুদ্ধ অভিনয় এই নাচের মধ্যে নিগূঢ় ব্যঞ্জনা |
৫ ۔ পারিবারিক সম্মেলন গোষ্ঠী বদ্ধতার এই নাচের প্রাণ |
৬ ۔ বেঁচে থাকার উপায় , জীবনযাপনের মূলে, উদরপুরাণে কৃষি - শস্য সুফসল কামনার সঙ্গে নৃত্যের উৎস কথাও স্বীকার্য |
৭ ۔ আচার-অনুষ্ঠান উৎসব ধর্মীয় আবেগ বা বা ঐতিহ্যে বরণে লীলা যাত্রায় লোকনৃত্যের প্রচলন |
৮ ۔ আনন্দ উল্লাস সম্মিলিত অভিনয়, নাচের লৌকিক কলা , ধ্বনি সহায়ক বাদ্যযন্ত্র নৃত্যের অনুষঙ্গ | কণ্ঠসঙ্গীত প্রায় সব লোকনৃত্যের বিশেষ অঙ্গ স্বরূপ |

এইবারে আমি আলোচনায় আসব লোকনৃত্যের একটি বিশেষ রূপ নিয়ে | এতক্ষণ ধরে আমি মৃত্যু এবং লোক নৃত্যের উৎপত্তি উৎস তার ব্যক্তি তার বিভিন্ন দিক গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম | কিন্তু আমার আলোচ্য বিষয় মানভূমের লোকনৃত্যের একটি বিশেষ দিক |মানভূম নাচের দেশ বাজাজের সাম্রাজ্য বলা হয় লোকসংস্কৃতি অন্যতম পীঠস্থান | মানভূম কিন্তু পুরুলিয়া কেই বলা হয় ,লালমাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের প্রাণ ভোমরা ছৌ নাচ | এছাড়াও লাল মাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে যে যে সংস্কৃতি সেটি কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কে হে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকে এই রাঢ়বঙ্গ | |ছৌ নাচ সহ মাছানী নাচ ,নাচনি নাচ ,কাঠি নাচ , ধুমড়ে নাচ ,বৌ নাচ ,নাটুয়া নাচ , ঘোড়া নাচ ,কাপ নাচ , ভকতা নাচ , দাঁড়শ্যাইলা নাচ , মনসা জাত নাচ , ধুলোট নাচ ,জাওয়া করম ভাদু নাচ ,সাঁওতালি নাচ , আঝি মুঝি নাচ , ঘেরা নাচ ,টুসু নাচ ,ধাগর নাচ , সাঁওতাল নাচ , লাগড়ে এবং বাহা এছাড়াও আরো বহু নাচ পুরুলিয়া তে ছড়িয়ে আছে | তবে মানভূমের প্রাণ কিন্তু ঝুমুর গীত |এই গীত কত প্রাচীন? ঝুমুর বা কীর্তন এর মধ্যে কোনটি সবথেকে প্রাচীন এই নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য আছে |তা হলেও সর্বজন বিদিত এটাই প্রমান হয়েছে ঝুমুর গান অতীব প্রাচীন | এই লোকনৃত্য গুলোর সাথে ঝুমুর গান অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে | ছৌ সহ লোকনৃত্য গুলো ঝুমুর গাবের উপরেই হয়ে থাকে |উল্লেখ নাচনি নাচ | যেখানে দরবারী ও ভাদুরিয়া ঝুমুর গীত ই তার প্রধান ও একমাত্র অবলম্বন | 

শীত কালীন উৎসব :- আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হল শীতের উৎসব বা পরব | পুরুলিয়া তথা ঝাড়খন্ড বাঁকুড়া বীরভূম ঝাড়গ্রাম বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পুজো হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো টুসু পুজো | টুসু মূলত কৃষিকাজের উৎসব বলেই বিবেচিত ,এটিকে শীতের পরব বলা যায় |অঘ্রান মাসের সংক্রান্তিতে মেয়েরা তুলসী তলায় কিংবা ঘরে যে কুলুম -নি থাকে মানে ঘরের মধ্যে দেওয়ালে মাটির ছোট্ট ঘর বানিয়ে প্রদীপ রাখে সেখানে নতুন সরা বানিয়ে গাঁদা ফুল ধান দুর্ব্বা এই সমস্ত দিয়ে টুসু পাতা হয় | যেখানে টুসু পাতে আর তার চারপাশে আলপনা দেয় | এরপর মেয়েরা রোজ সন্ধ্যাবেলায় শুদ্ধ বসনে টুসু গান করে |কখনো কখনো মেয়েরা তাদের নিজেদের তৈরি টুসু গান করে বা বহুকাল আগে কোন কবি টুসু গান লিখে থাকলে সেই গান করে | এইভাবে এক মাস ধরে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলায় মেয়েরা টুসু পাঁচালী পড়ে গান গায় টুসু র সামনে | তারপর এক মাস বাদে মানে পৌষ সংক্রান্তি আগের দিনে মেয়েরা চৌউড়ল বা চরুল কিনে আনে বাজার থেকে অথবা অনেকের বাড়িতেই আবার সেটি বানানো হয় | সেই চড়ুল নিয়ে এক একটা গ্রুপ বানায় মেয়েরা কখনো পাঁচজনের গ্রুপ কখনো সাতজন আবার কখনো বারোজনের গ্রুপ তারা এক একটা জায়গায় জড়ো হয় এবং গান করে সেই গ্রুপ বানিয়ে | আসে পাশের বাড়ির মেয়েরা আবার নিজেদের মত করেও জড়ো হয় | এটা ঠিক মকর সংক্রান্তি আগের দিন | এই টুসুর সামনে মেয়েরা একদিন অন্তর একদিন "আটকুলুইয়া " বলে একটা রীতি পালন করে | যেখানে আট ধরণের ডাল ভেজে ভোগ দেয় টুসু কে | মকর সংক্রান্তির আগের দিন নিয়ে মেয়েরা গান গায় এবং চৌউড়ল বা চড়ুল এর মধ্যে টুসু ঠাকুর বসায় ও ফুল দিয়ে পুজো করে এবং সারা রাত ধরে জেগে থাকে গান গায় একে বলে "জাগরন "| মেয়েদের দল কিন্তু এই সময় সারাটা রাত জেগে থাকে | পরের দিন সকালে সেই চড়ুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে মেয়েরা নদীর পাড়ে পাড়ে গিয়ে সেই চড়ুল বিসর্জন দেয় |যদি কোথাও নদী না থাকে তাহলে যে কোনো জলাশয় ও তারা চড়ুল ভাসান দেয় | তারপর নদীর ধারে ধারে মেলা বসে , বিশাল উৎসব হয় সাথে প্রচুর মানুষের ঢল নামে `

টুসু পুজো কিন্তু শুধু পুরুলিয়া নয় বাঁকুড়া ,ঝাড়গ্রাম ,বীরভূম সহ সমগ্র ঝাড়খন্ডেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে হয় অর্থাৎ পুরো রাঢ়বঙ্গেই এই পুজো প্রসিদ্ধ | যেখানে টুসু ভাসান হয় সেই বিখ্যাত নদনদী গুলো হলো কাঁসাই ,দামোদর , শিলাই ,সুবর্ণরেখা | টুসু ভাসান দিয়ে বাড়ি এসে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে পিঠা পায়েস বানায় পাশের বাড়ি ,পাড়ার সবাইকে দেয় ও নিজেরাও আনন্দ করে খায় | মকড় সংক্রান্তিতে পিঠে পায়েস কিন্তু প্রত্যেক বাঙালিদের ঘরেই জনপ্রিয় আচার আজও | কিন্তু এই টুসু পুজোর একটি উল্লেখ্য আচার হলো পরের দিন ,যার নাম হলো "আখান যাত্রা " | সেদিন পুরুষরা আড়াই পাক লাঙ্গল দেয় আর মেয়েরা তা প্রদক্ষিণ করে | এর পর বোরাম থান , জাহেদ থান , ভাওথিন থান --মানে প্রত্যেক গাছের গোড়ায় গোড়ায় যে গ্রাম্য দেবতা থাকে তার পুজো করে | সেই দেবতার সামনে বলি দেয় |এই প্রথাই চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে | এই বলি র উৎসর্গীকৃত পশুরা হলো -মুরগি , হাঁস , পায়রা , ছাগল ,ভেড়া বা পাঠা | আর এই ভাওথিন থান হলো সূর্য দেবতার প্রতীক | আসলে এই দেবতারা আমাদের জগতের রক্ষাকারী | সূর্য না উঠলে প্রাণী জগৎ যেমন বাঁচবে না তেমনি গাছ বা ফসল ফলবে না | তাই তো সূর্য দেবতার আরাধনা হয় | ওই ভাওথিন থান এ আবার ভাও মেলা হয় | সেখানে দেবতা নাকি আসে আর পুজনকারী রা আবার ভরে পরে |সে এক দেখবার মত উৎসব | 

তাহলে মূল বিষয় আমরা পাচ্ছি যে কৃষি কাজ | কৃষির প্রথম হিসাবে ধরা হয় এই দিন | এটাই শীতকালীন উৎসব | টুসুর মাহাত্য এখানেই | টুসু পুজো তাই এতটাই গুরুত্বপূর্ণ পুরুলিয়া তথা রাঢ়বঙ্গে |




BOOKS, BOOK FAIR AND ME
Sarmistha Guha 

I opened my book and in I strode.
Now nobody can find me.
I’ve left my chair, my house, my road,
My town and my world behind me. 
-Julia Donaldson

This is exactly how I feel when I enter through the tastefully designed gateway of the Kolkata International Book Fair. Like a child, I enter into a world of fantasy and adventure, knowledge and entertainment. The books speak to me, they befriend me and I am lost in a world which transports me to a different dimension, away from the mundane routine, petty misunderstandings and self-centred woes.

Winter in Kolkata is brief but a welcome change from months of sweltering heat and discomfort. The timid sunshine and the cool breeze invite us to leave the cosy corner and enjoy the refreshing atmosphere.

Here the festival season begins sometime in October and extends till the New Year, followed by Saraswati Puja. The streets of the city dazzle with colourful lights and festoons, shops full of goodies and sumptuous culinary delights. This is also the time for ‘Melas’, myriads of them, of which, my favourite is the Book Fair held sometime in February.

In 60’s and 70’s the number of fairs were fewer, each having its own fare to exhibit and sell. At present, there are too many, with different names, selling similar products. Even now the Book Fair stands apart, a bibliophile’s paradise.

The Kolkata Book Fair started in 1976 organised by the Publishers and Book Sellers’ Guild established in 1975. This had fifty six stalls of thirty four publishers and an entry fee of 50 paisa. The first venue was the field beside the Victoria Memorial. In 1979, to commemorate the bicentenary of the Bengali publishing house Anandabazar Patrika, a book exhibition cum fair was organised opposite Rabindra Sadan. Later it used to be held at the ‘maidan’ but after 2007 the venue had to be changed due to environmental issues.

My love affair with the fair started in my youth. Those were the times when we shared our joys and sorrows with our peers. So, my first visit was with my school friends. I was absolutely dazed to see so many books at one place. With little or no money, we could not buy much but that did not curb our enthusiasm or excitement. Looking, touching, smelling and browsing was enough to make us happy. We spent hours moving from stall to stall, making a mental list of books to be bought when we have enough money. As we returned home with maybe one or two of the cheapest books, we felt a sense of achievement. How ecstatic we were!

There used to be a few artists who sketched people for a nominal fee. They even sold some pictures or paintings. I loved watching them at work. Once, I decided to buy a poster of Charles Chaplin. A gentleman was sitting on a stool nearby. My friends started a conversation with him and he offered to sign my poster. He was none other than Mr. Pritish Nandy, who needs no introduction now. The fair offers many such experiences with famous writers or other dignitaries who frequent the fair. Even now, we come across authors signing their new books, book readings and other such activities which are added attractions for book lovers. 

Since 1983, when the fair got its international accreditation, seminars and symposia are being organised at the fair. With the focus on a particular country, its culture, heritage, art, books and tourist attractions are showcased and dignitaries of the country are invited. 

Few years back, the publishers and book sellers rued about the dwindling number of readers and buyers. I remember, in their heydays, the renowned publishers’ stalls used to be out of limits for me. The long queue outside was the first deterrent and the experience inside was worse. The crowd proceeded on a path, getting glimpses of the displayed books, choosing books while on the move, ordering at a counter, getting a slip from there, reaching the cash counter, paying, then waiting at the despatch counter for the books to arrive. All these happened while being pushed and shoved by the crowd. One such experience was enough for me to avoid it. In fact, I like to check the lesser known publisher’s stalls. Sometimes we can discover real treasures there. I also love to buy the little magazines by young aspiring writers. 

I remember how sad I was to know about the fire that gutted many stalls and destroyed thousands of books in 1997, although it was reopened within three days by the initiative taken by the then State Culture and Home Minister Sri Buddhadev Bhattacharya. From then on, the food kiosks were moved to a far corner of the field.

At this ripe old age, my visit to the fair is more purposeful. I carry two big bags and a long wish list, my purse being a little heavier than before. Then is the hurdle of locating the desired publishers among the maze of lanes and by-lanes. The maps and directions provided are a great help but many a times, I am lost in the labyrinth. Once my friend accompanied me, not guessing what was in store for her. As I flitted from stall to stall looking for the books, she trailed behind me, stoically, without a complaint. At last, when I called it a day, she sighed in relief. Now, I go alone, more than once, each year and return with at least two bags full.

The footfall in book fair has again increased but I am sorry to say, it may not be exclusively for books. The number of food stalls and other entertainments are responsible for that. Maybe I am being boorish but I cringe when people pout and pose for ‘selfies’, least bothered about the books and their contents. The instant quizes held by some organisations are commercially motivated with very little connection to books. Nevertheless, the increase in the number of young book lovers are a welcome sight.

With age, there’s another change in my reading habit. I used to like fictions only, which I still like from time to time but I enjoy biographies, philosophical writings and non-fictions more these days. Poetry is another subject, which I used to avoid before, but it has silently entered my reading list. I read a short poem a few days back, which I want to share.
Sometimes I am caught between
Poetry and prose like two lovers
I can’t decide between.
Prose says to me, let’s build
Something long and lasting
Poetry takes me by hand,
And whispers, come with me,
Let’s get lost for a while.
Lang Leav




Chinese New Year
Shivalika Mondal

The Chinese New Year is celebrated in the first lunar
month of the Chinese calendar. It is also called the
Spring Festival. A distinctive quality of the Chinese New
Year is that every year has an animal associated with it.
This is based on the twelve animals of the Chinese
zodiac – rat, ox, tiger, rabbit, dragon, snake, horse, goat,
monkey, rooster, dog, pig. Interestingly, 2020 was the
year of the rat. No wonder we had a pandemic! 2021 is
going to be the year of the Ox. The qualities associated
with the ox are fortitude, the ability to bear hardships
and overcome adversity. There is also a ten-year cycle
of heavenly stems, and in turn, these ten stems are
associated with five elements namely, earth, water, fire,
metal, wood – these elements rotate yearly with their yin
and yang qualities.

The two things which form the crux of Chinese New
Year is family and food. This is a time when people from
all around the world, travel back to their families. In fact,
airplane companies hike the ticket prices during this time
the most. At times, one must book the tickets three to
four months in advance. In a sense, Chinese New Year
is like their Durga Puja. The celebrations last at least
two weeks. A traditional Chinese New Year would seem
like the whole family gathering together and indulging in
hotpots or all the traditional dishes eaten during the new
year like mustard greens, steamed cake, daikon cakes,
chicken, tangerines, fish, dumplings etc.
When the entire family gets together, the older members
give the younger ones, a red envelope or hóngbāo 紅包.
As red is a very auspicious colour in the Chinese
culture, it is used in traditional Chinese weddings, in
scrolls and couplets, or lanterns during the new year.
The character 福 is written on red paper to bring good
luck. The whole day and night are spent together while
playing card games, board games, drinking tea and
enjoying time together. People come together and sing
old songs, one of the most popular song is 恭喜恭喜
Gōngxǐ gōngxǐ which means “congratulations” and “all
the happiness to you”. They remember their ancestors
and worship their deities.
The food is of special importance. Food is eaten for
good luck. It is a tradition to make dumplings together as
a family. Dumplings 餃子, fish 漁, are eaten for wealth,
fortune and abundance. Glutinous rice balls 汤圆 is
eaten to signify that the family has come together,
wontons for wealth and treasure, noodles and long
mustard greens for health and longevity – you cannot
break the noodles from the bowl! Spring rolls for
wealth and fresh start, glutinous rice cakes for rise in
career and salary. Additionally, tangerines, apples and
pineapples are eaten, not only as desert but also
because these represent peace and wellbeing,
heralding that prosperity is coming.
As Chinese New Year also coincides with the Spring
festival, culturally it also means the start of the new
year agriculturally, when you put the seeds in the
earth. This marks the end of winter and the coming of
Spring. Spring cleaning, or cleaning ones house
thoroughly is also part of the tradition which signifies
clearing away the ill-fortune to make way for new
blessings. Similarly, lanterns signify a bright future, so
often Chinese characters are written on the lanterns
and then lit at night. All streets in Chinese diaspora
countries are filled with these red lanterns which also
at times carry phrases for good luck like 萬事如意
wàn shì rú yì which means “I wish all your dreams come true”.
Even though every culture and community have their
own new year cycles, the Chinese New Year has
influenced the new year traditions of Tibet, Korea,
Philippines, Singapore, Indonesia, Malaysia, Myanmar,
Thailand and Cambodia.














0 comments: