0

ধারাবাহিক - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in




৫ 

My tooth for yours, your eye for mine?
Oh, if Revenge did move the stars
Instead of Love, they would not shine.” 

রণজয় বসুর ফোন এসেছিল বাসব দত্তগুপ্তর কাছে। থানায় এখনও ভিড় নেই। দত্তগুপ্ত এই শহরের এককোণে এক থানার বড়বাবু। কোনকালে বাসব আর রণজয় একসঙ্গে কলেজে পড়ত সেসব এখন অতীত। একটা সূত্র যে রয়ে গেছে সেটা নেহাতই কেজো। ‘এইদিন’ কাগজের চীফ রিপোর্টার আর থানার অফিসারের সঙ্গে যে সূত্র থাকে। থাকা উচিত। দুজনেই কাজ বুঝে নেয়। সময় বুঝে কাকে বা কোন কেসটাকে ভাসিয়ে তুলতে হবে বা কাকে ডুবিয়ে দিতে হবে সে নিয়ে একটা আঁতাত আছেই। এতদিন ধরে নিখুঁত ভাবে সেটা কাজে লাগছিল। কিন্তু এই অসুখ এসে সব ভাসিয়ে দিলো। এখন আগেকার সব প্রায়রিটি বদলে গেছে। এখন আর দলাদলির কোঁদলে কাকে সাপোর্ট দিতে হবে, কাকে চেপে দিতে হবে সেসব চাপা পড়ে গেছে। যেটা আছে তা হল অসুখ নিয়ে, ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি। সে আর কত কাজ। রিপোর্টারও আর কত খবর করবে। সব খবর তো সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাকি যে বেওয়ারিশ লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার টেন্ডার নিয়েছে পুলিশ, তা নিয়ে তো আর রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলা চলেনা! তবে রণজয় যে ফাঁকেফোঁকরে চেষ্টা করেনি তা নয়। 

আজ একটু আগেই ফোন এসেছিল। ওদের কাজকর্ম বন্ধই প্রায়। কোনোরকমে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এসময়ে যদি একটু মুচমুচে খবর পাওয়া যায়। রণজয় জানে সুনন্দ ও অতসী চক্রবর্তীর বাচ্চা ছেলেটার ডেথ নিয়ে একটা রিপল তৈরি হয়েছিল। দুয়ে দুয়ে চার করতে পারা শক্ত নয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের তো কুকুরের নাক। কিন্তু কেসটা খুব নিপুণভাবে চাপা পড়েছে। বাসবের হাত আছে ঠিক। ওর থানার আন্ডারে। রণজয় তাই একটা চেষ্টা করছে। ওর অনলাইন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারের জন্য একটা টাইম ফিক্স করে দিয়েছে বাসব। অতসী চক্রবর্তী একেবারেই রাজি ছিলেন না। “না না, মিস্টার দত্তগুপ্ত। নেহাত আমার ফ্যামিলির সম্মান জড়িয়ে। সুনন্দ আর আমি দুজনেই সমাজে একটা পজিশনে আছি। আমাদের ইমেজ এত খারাপ নয়। নাহলে আপনার কি মনে হয়? ওই পাঁচটা ছেলে রেহাই পেত? কোথায় আপনারা আর একটু সিমপ্যাথি নিয়ে আমাদের দিকটা দেখবেন তা নয়!” বাসব সাবধানে শব্দ খোঁজে। ও জানে অতসীর ‘পত্রিকা’ অনেক বড় ছাতা। তুলনায় ‘এইদিন’ পুঁচকে। এই টারময়েলে ‘এইদিন’ প্রিন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ‘পত্রিকা’ কিন্তু চালু আছে। সমস্ত সরকারি বিজ্ঞাপন ‘পত্রিকা’র জন্য বাঁধা। এখন সেই ‘এইদিন’ কিনা যাবে অতসী চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নিতে? তবে ওদের একটা মেয়ে আছে। দারুন কাজের। ডেয়ার ডেভিল। সব জায়গায় চলে যেতে পারে। ওদের চিরজিত সেন মারা যাবার পর থানাতেও এসেছিল। টেবিলে দুটো হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বাসবকে বলেছিল -ডাক্তার সার্টিফিকেট দিলেন স্ট্রোকে ডেথ। কার্ডিয়াক ফেলিওর। তাহলে চিরজিত সেনের বডি ফ্যামিলিকে দেওয়া হলনা কেন? 

বাসব চট করে উত্তর দেয়নি। কি বলা যেতে পারে? একটু ভেবে বলেছিল -ওপর থেকে এরকমই অর্ডার আছে। আমাদের কিছু করার নেই। 

-তাই? নাকি হসপিটালে কনট্যামিনেশান হল? শেষ মুহূর্তে? টেস্ট হয়েছে? রিপোর্টটা একটু দেখাবেন? 

-বাব্বা! আপনি তো একেবারে বরখা দাত! হাসপাতালেই দেখুন না! রিপোর্ট তো আমাদের দায়িত্ব না? 

-শুধু বডি যেনতেন ডিসপোজ করে দেওয়াটা আপনাদের দায়িত্ব। তাই তো? -দেখুন, এত কথা বলার সময় নেই আমার। আপনি এখন আসুন। বাসবের কথা বিন্দুমাত্র গায়ে মাখেনা মেয়েটা। বিশ্রি হাসে। বলে -আমি কস্তুরী দাস। আপনার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হবে এবার। অনলাইনের কাজ ম্যাক্সিমাম আমিই করব কিনা। তা আজ কোন পাড়ায় গান গাইতে যাবেন? অন্ধগলি বলে যে পাড়াটায় গণকবর বা গণচিতা খুঁড়ে রেখেছেন? উত্তেজনায় বাসব চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। -আপনি আসুন এখন। অকারণে এখানে এসে হুজ্জুতি করবেন না। -না না। অকারণে একদম আসব না। শুধু ওই চিরজিতদার ব্যাপারটা একটু জানতে আসব। চলি? 

বাধ্য হয়েই বাসব অতসী চক্রবর্তীকে ফোন করেছে। এবং উনিও খানিক বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছেন। স্ক্যান্ডালটা যদি অন্যভাবে চাপা দেওয়া যায়। কেস চাপা পড়ে গেছে। এক্সিডেন্ট বলে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মানুষের কৌতূহল কি চাপা থাকে? এভাবে যদি চাপা দেওয়া যায়? একটা অলটারনেটিভ ন্যারেটিভ দিয়ে? 

গৌতম দোকানের বাইরে বেঞ্চে একটা জলের ক্যান উপুড় করে রেখেছে। আগে বেশ আড্ডা বসত। পাড়ার দোকান যেমন হয়। জিনিস কিনতে এসে হাতে সময় থাকলেই লোকে বসে যেত। তারপর তো কেউ কারোর মুখ দেখেনি কতদিন। গৌতম একা একা ভেতরের সিঁড়ি বেয়ে এসে ভেতরের মালপত্র দেখে যেত। বহু মাল নষ্ট হতে বসেছিল দেখে কস্তুরীই ওকে বলে -ওগুলো যখন আর কিছু করার নেই তখন ‘উই কেয়ার’কে দিয়ে দিই। ওরা আবার কারা? গৌতম জানতে চেয়েছিল। এমনিতেই এত লস হয়েছে, দোকান বন্ধ, আবার খাবার জিনিস নষ্ট হতে বসেছে তখন কস্তুরীর কথাটা ভালো লাগেনি। কস্তুরী তাই সময় নিয়ে বুঝিয়েছিল -ওরা আমাদের এখান থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা গৌতম। বারো নম্বরের পাশে পার্কের গায়ে যে ঘরটা, সেটা ওদের অফিস। ওরা এগুলো এখন পেলে ভালো। সত্যিই যখন কিছু করারা নেই, মালগুলো ঢেলে দিতে হবে রাস্তায় তখন এই পরামর্শটা মেনে নিয়েছিল গৌতম। তারপর একদিন এসেছিল ওরা। নিজেদেরই কারোর সাইকেল ভ্যানে মাল চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো। গৌতমের বুকের ওপর থেকে একটা পাথর সরে গিয়েছিল। সেই থেকে কস্তুরী আর গৌতমের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক। তার আগে কেউই কাউকে চিনত না। 

দোকান আবার যখন সবে খুলল তখন সব জিনিসই বাড়ন্ত। খদ্দেরদের কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছে। সবাই নয়। যারা সেদিন ওদের দোকান থেকে মালপত্র ভ্যানে তুলতে দেখেছিল তাদের মধ্যে কেউ জানতে চেয়েছিল -এত মাল কে কিনল রে গৌতম? তারপর সব জেনে অবাক। বাঃ! বেশ করেছিস। গৌতম যে লস কবে রিকভার করবে! তবু তারই মধ্যে ওই একটু প্রফিট। ছেলেমেয়েগুলো বড্ড ভালো। 

এখন কেউ দল বেঁধে আসছে না। দফায় দফায় আড্ডা হয়। দু একজন করে করে আসে। বিক্রিবাটা অল্পে অল্পে শুরু হয়েছে। তবে সব জিনিস এখনও সাপ্লাই নেই। সেদিন একটা মেয়ে ম্যাগি কিনতে এসেছে। কিন্তু ম্যাগি সাপ্লাই নেই। ম্যাগি আনানো যাচ্ছে না। একহাজার টাকার ম্যাগির জন্য একহাজার টাকার ক্যাডবেরি কিনতে হবে। এ সম্ভব নয়। এখন লোকে ক্যাডবেরি খাবেনা। আর এটা নিতান্তই মধ্যবিত্ত পাড়া। এরকম অনেক জিনিসই গৌতম রাখতে পারছে না। তার ওপরে কস্তুরীর অবস্থাটা এখনও টলমল করছে। টাকাপয়সা ভুলভাল খরচ করলে বিপদ। কস্তুরী সেই গোলাপি কুর্তা পাজামাটা পরেই নেমেছে। অদ্ভুত একটা মেয়ে। কিছুতেই সাজে না। এখন তো তার ওপরে হাজারটা ধড়াচুড়ো। গৌতম একবার দেখে নেয়। আজ দুদিন হল নিম্নচাপের বৃষ্টি। গুমোট হয়ে আছে চারিদিক। কস্তুরী তারই মধ্যে বেরোচ্ছে। বলেছে -এ খুব হার্ড নাট। ক্র্যাক করতে পারলে চ্যানেলের ভিউয়ারশিপ বাড়বে। কষ্ট করেও যেতে হবে, বুঝলে। গৌতম ওর হাতে এক্সট্রা টাকা দিয়েছে -কি হবে? আছে আমার কাছে! 

-রাখো না! একটু বেশি থাকলে ক্ষতি কি? তার ওপর তোমার ওই সেবকপার্টি দেখা হলেই তো মুখ শুকোবে। নাও। কস্তুরী জানে। গৌতম ওই ছেলেগুলোকে ভালোবাসে। ওদের এই কাজকর্ম দেখে বলে -পয়সাওলাদের অবস্থা দ্যাখো! জানলা দরজা এঁটে বসে আছে! এগুলোর চাল নেই চুলো নেই দৌড়ে চলেছে। বেরোবার মুখে কস্তুরী একবার বলে গেল -দেরি হলে খেয়ে নিও। আজ একবার বারো নম্বর হয়ে আসব। ওদের সব বাইরে থেকে ফিরছে। হেঁটে হেঁটে ফিরছে। কি জানি কি অবস্থায় ফিরছে। গৌতম চমকে তাকায় -মানে? হেঁটে হেঁটে কোথা থেকে ফিরছে? 

-দিল্লি পাটনা এরকম কত জায়গা আছে! 

-এখন ফিরছে? হেঁটে? পৌঁছবে? 

কস্তুরী বেরিয়ে যেতে যেতে বলে যায় -জানিনা। খোঁজ নিতেই তো যাবো। আর ওখানেই বা কে জামাই আদর করতে বসে আছে! রাস্তায় দেখতে পেলেই পুলিশের ডাণ্ডা। মালিক জবাব দিয়েছে। আজ অতসী চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া গেল। সিকিওরিটি বিগলিত -আসুন ম্যাডাম, এখানেই আপনার কোট রাখুন। হ্যাঁ, মাস্ক আর গ্লাভস স্যানিটাইজ করে দিই দাঁড়ান। চলুন লিফটের কাছে পৌঁছে দিই। কস্তুরী একটা গন্ধ পাচ্ছিল। বারো নম্বরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আস্তাকুঁড়টা দিয়ে এরকম পচা গন্ধ বের হয়। চট করে পুরসভার গাড়ি ওসব ময়লা তোলে না। এনভায়রনমেন্ট পলিটিক্স। রণজয়দা বলেছিল। থাক ওরকম। ওটাই ওই বারো নম্বর বস্তির আইডেন্টিটি। সবাই ভদ্রলোক হলে হয়? কিন্তু এখানে ওই পচা গন্ধটা কেন? কস্তুরী সিকিওরিটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল -পচা গন্ধটা কিসের? -ওটা ম্যাডাম ডিসইনফেক্টেন্ট। স্প্রে করা হয়েছে। লিফটে একা উঠতে উঠতে কস্তুরী ভাবছিল। ময়লার পচা গন্ধ আর জীবাণুনাশক দুটোই এমন বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ বয়ে আনে? নাকি বারো নম্বরে যা জীবাণু এখানে তাই জীবাণুনাশক? দুটো কেমন কমপ্লিমেন্টারি না? 

আজও ঘরটা ওরকমই অন্ধকার। বাইরে ঝিপঝিপে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটা কালো মেঘের চাদর খুব সন্তর্পণে আকাশটাকে ঢাকছে। অথচ ভারি পর্দাগুলো একই ভাবে বাইরেটা ঢেকে রেখেছে। উত্তাপ নেই। তবু। কি যে ঢাকে এরা! সেন্টার টেবিলে কেউ একগ্লাস ঠাণ্ডা পানীয় রেখে গেল। দরজা দিয়ে অতসী চক্রবর্তী বেরিয়ে এলেন। এখনও এককোণে কিশোরের ছবিটি সুগন্ধি মোমের আলোয় তিরতির করছে। কোথায় যেন এমন দেখেছে কস্তুরী? ওঃ, মনে পড়েছে। নর্থ ইস্টের মনাস্ট্রিগুলোতে এরকম সুগন্ধি মোমের তিরতিরে আলো থাকে। সে আলোয় কখনও তথাগতর মুখ কাঁপে। কখনও বীভৎস মার, কালপুরুষ বা তারামূর্তি। অতসী চক্রবর্তীর গলা নরম -কিছু মনে করবেন না। সেদিন বড্ড ডিপ্রেসড ছিলাম। ভালো করে কথা বলতে পারিনি। বসুন। একটু সরবত খেয়ে নিন। কস্তুরী মনে মনে প্রস্তুত হয় -না না ঠিক আছে দিদি। আমি বুঝি। আপনি মা। মনের কি দোষ বলুন। আসলে আমরা আলোচনা করছিলাম। সকলেই খুব উৎসুক। অথচ কেউ ভাবল না আপনাদের ঠিক কতটা ক্ষতি হয়ে গেল। আমি এসেছিলাম একবার সমবেদনা জানাতে। আর সত্যি বলতে চারিদিকে যা ডামাডোল! হঠাৎ এমন আনফরচুনেট একটা ইন্সিডেন্ট কেন ঘটল সে সম্পর্কে আপনারও কিছু বলার থাকতে পারে। দ্যাট শ্যুড কাম আউট ইন দ্যা ওপেন। লোকের অন্যায় আলোচনা শেষ হোক। নাহ, মেয়েটা বুদ্ধি ধরে। গল্পটা ভেবে বলতে হবে। ফাঁক না থাকে। 

-সুনন্দর সঙ্গে কথা হয়েছে তোমার? হয়নি? আসলে কী হয়েছে জানো, ছেলেটা খুব লোনলি ফিল করছিল ইদানীং। ওর বাবা তো এখানে থাকেন না। ইউ নো উই আর মিউচুয়ালি ডাইভোরসড। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। উই স্টিল মেনটেইন আ হেলদি রিলেসান। আ ফ্রেন্ডলি ওয়ান। বাট দ্যাট ক্যুডনট স্যাটিসফাই মাই সন’স নিড। হি নিডেড হিজ ফাদার। এই বয়সে ছেলেদের বাবাকে খুব দরকার হয়। কতরকম হরমোনাল সার্জ, কত ইমোশনাল টারবিউলেন্স। কিন্তু সেটা ফাঁক রয়ে গেল। তার ওপরে হি ফেল ইন আ ট্র্যাপ। অবশ্য এটা তুমি একেবারেই অফ দ্যা রেকর্ড রাখো। এটা নিয়ে আমি কোনো কথাই বলব না। স্পেশালি সুপ্রই যখন নেই। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনিবডি টু বি ইন মাই শ্যু। আর কেউ যেন এরকম না ফিল করে। আমি চাইনা কারোর এগেনস্টে পুলিশ কিছু স্টেপ নিক। কস্তুরী থামালো -আপনি কি অন্য কিছু সন্দেহ করছেন? মানে ইট ওয়াজ নট অ্যান এক্সিডেন্ট? অতসী মাথা নাড়ে -আয়াম নট সিওর। কিন্তু হঠাৎ ওইখানে ও পড়ে যাবে কি করে? কস্তুরী গলাটা পরিষ্কার করে নেয় -আমি অবশ্য শুনেছিলাম দে হ্যাড সাম বুজ। এন্ড দেয়ার ওয়াজ আ গার্ল টু। ওদের আইডেন্টিটি ডিসক্লোজ করা হয়নি। কেন দিদি? ওরা যদি এভাবে ইনভল্ভড থাকে সেক্ষেত্রে পুলিশের কাজ তো পুলিশ করবে! -আমি তো আগেই বলেছি আমি চাইনা আমার মতন আর কেউ কষ্ট পাক। আর ইন এনি কেস, সুপ্র ফিরবেনা। -কেসটা কিন্তু স্টেট ভার্সেস বাকিদের মধ্যে হবে। ইউ উইল বি জাস্ট আ উইটনেস। -কেস হবে না। আপনার চ্যানেলে যাই বলুন, বলবেন দিস ইজ আ কেস অফ সুইসাইড। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার। শেষ কথাগুলো এসারটিভ। 

আবার ‘তুমি’ থেকে ‘আপনি’? মনে মনে হেসে ওঠে কস্তুরী। যাক, উদ্দেশ্য পূর্ণ। এবার সাক্ষাৎকার কিভাবে সাজাবে সেটা রণজয়দা জানে। ও উঠে দাঁড়ায়। -চলি দিদি। ভালো থাকবেন। 

কস্তুরীর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে অতসী চক্রবর্তী মনে মনে হাসেন। বেচারা পেটি মিডলক্লাস। স্কুলের খাতা থেকে পাঁচটা নবম শ্রেণীর নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। ওদের কেরিয়ার শেষ। এখন কোথায় ভর্তি হবে? জানবেই বা কি করে যে স্কুল ওদের রাসটিকেট করেছে? মেল দেখে বাপমাকে বলার অবস্থায় তো থাকবেনা! ও স্কুলের গভর্নিং কমিটিতে সুনন্দ আছেন। মরে গিয়ে সুপ্র তো সিম্প্যাথি পাবে, এরা পাবেনা। 

এখান থেকে কস্তুরী সোজা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালো। সাহিলকে বলা ছিল। ও আসবে। স্কুটারে বারো নম্বরে চলে যাবে ওরা। অল্পসময়ের মধ্যেই দেখা গেল সাহিলের স্কুটার। রোগা ফর্সা বছর সাতাশের ছেলে একটা। সব ওদের গুরুর কথায় চলে। ওদের ‘উই কেয়ার’ প্রতিষ্ঠানটা বহু কষ্টে একটুকরো জমি পেয়েছে। ছেলেমেয়েগুলো দিবারাত্রি পরিশ্রম করে। অল্পবিস্তর বিদ্যে ছিল। খুব সম্ভবত ওদের গুরু এখন ওদের বাকি লেখাপড়ার ভারটুকুও নিয়েছে। সাহিলের মুখের দিকে চাইলেই ভালো লাগে। সবসময় একটা মিষ্টি হাসি। বলল -দিদি খুব কষ্ট হল? কস্তুরী মাথা নাড়ল -না রে। আজ তো ওয়েদারটা ভালো। রোদ্দুর নেই। এবার মনে হয় বর্ষা চলে আসবে তাড়াতাড়ি। সাহিল স্কুটারে স্টার্ট দিল। ওর কথাগুলো হাওয়ায় কেটে কেটে কানে ঢুকছে। -দিদি সব আগের মতো হলে আমরা বিয়েটা করে নেবো। -বিয়ে করবি করে ফ্যাল। কবে অবস্থা আগের মতো হবে তার জন্য অপেক্ষা কিসের? সাহিল আর সরিতা বিয়ে করবে। ওদের পাড়ায় সবাই জানে। অসুখ আসার আগে এ নিয়ে রোজ মারপিট লেগে থাকত। সাহিল যে কতবার হুমকি পেয়েছে! জানে মেরে দেবো। সরিতাকেও শুনতে হয়েছে। ওরা অনেক সময়ই কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলত না। ওদের গুরু বলেছিল -দিন একরকম থাকবেনা। একটু ধৈর্য রাখ। ঠিক হবে সব। তা এখন আর এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। সাহিল সরিতা শিবু তন্ময়, সবাই মিলে ওই এলাকাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখন সরিতার ঘর থেকে ওর জ্যাঠা উঁকি দিয়ে সাহিলকে খোঁজে -বেটা, দাওয়াই মাঙ্গয়া দে। সাহিলের আম্মি ডেকে বলে -এই সরিতা, লাইন দিবি আমারও একটা লাইন রাখিস তো। কস্তুরীর মনে হয় অসুখটা কিছু ভালো করেছে তবে। 

বারো নম্বরের মুখে এসে ওরা দেখল গলিতে ঢোকা দায়। পুলিশ এসে কর্ডন দিয়েছে। কতগুলো রিক্ত নিঃস্ব চেহারা ফাটা পায়ে ধুঁকতে ধুঁকতে ঢুকছে। এলাকার কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গলির ঘরগুলো থেকে আর্তনাদ উঠছে। কেউ ককিয়ে কেঁদে উঠছে। এক মহিলার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়া একটা বাচ্চাকে কে যেন টেনে নিতে গেল, পুলিশের এক ধমক -এই শুয়োর! থামবি? রমণীকণ্ঠের কান্না ভেসে এলো -স্যার। বাচ্চাটাকে নিতে দিন। নেতিয়ে গেছে। মরে যাবে। কে যেন আর্তস্বরে ডাকল -রামুয়া রে! তোহার বিটিয়া কাঁহা? উত্তর এলো না। পথে কত হারিয়ে গেছে কে জানে? 

কস্তুরীর চোখ জ্বালা করছে অনেকক্ষণ। কিছুতেই এদেরকে মানুষের মতো ফেরানো গেল না? এরকম অমানুষের মতো ফিরতে হলো? অথচ কত লোককে স্পেশাল ফ্লাইটে ফেরানো হয়েছে। তারা অবশ্য কর্পোরেটের বড় বড় চাকুরে। সাহিল সারা রাস্তা ওকে অনেক সঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু গলির কাছে এসে ও আর নিজের মধ্যে নেই। ছোটাছুটি করছে। কে কে ফিরল তাই যেন মিলিয়ে নিতে চাইছে। উদ্ভ্রান্তের মতো ওরা সবাই তাই করছে। কস্তুরীও বুঝতে পারছেনা কি করবে। হঠাৎ চেনা গলায় ফিরে চাইল -কি ম্যাডাম? এখানে কি? খবর করবেন? কতজন পথে মরল? কতজন না খেয়ে মরল? কস্তুরী তাকালো। ওঃ! অফিসার দত্তগুপ্ত। -না, স্টোরি নয়। আমি ওদের সঙ্গে আছি। -কাদের সঙ্গে? -ওই সাহিল ওদের সঙ্গে। রিলিফের কাজে আছি। কথাটায় মন্ত্রের মতো কাজ হল। -ও ওকে ওকে। আপনি এদিকে একটু সরে আসুন। আগে এদের টেস্ট করাতে হবে। তারপর আইসোলেশান। এখনই এভাবে গায়ে পড়লে তো আগুনে ঝাঁপ দেবার সমান হবে। -সে বুঝেছি। এখন ওই বাচ্চাগুলোকে অন্তত কিছু করুন। -হ্যাঁ, হ্যাঁ। সবাইকেই আগে জল আর খাবার দেওয়া হবে। তারপর বাকি সব। 

কস্তুরী দাঁড়িয়ে ছিল। দেখা গেল সাইকেল চালিয়ে তন্ময়ের সঙ্গে একটা লোক আসছে। কস্তুরীর চেয়ে কিছু বড় হবে হয়তো। লোকটা অগোছালো চেহারা নিয়ে এলেও বোঝা যাচ্ছিল ও বারো নম্বরের নয়। দত্তগুপ্ত এগিয়ে এসে মুখের মাস্ক সরালো -আপনিই অতীন গুপ্ত? আচ্ছা, তাহলে টেস্টের ব্যবস্থা করি? 

ওঃ! এই অতীন গুপ্ত? সাহিলদের গুরু? কখনও সামনাসামনি দেখা হয়নি। 

কস্তুরী দেখছিল খুব সুষ্ঠুভাবে মানুষগুলোকে একটা ফাঁকা ঘরে বসানো হল। ওই লোকটা একটুও দ্বিধা না করে সে ঘরে ঢুকল। আর তখনই সম্মিলিত কান্না কষ্ট আর শোক ওখানকার বাতাস ভারি করে তুলল। আকাশ ভেঙে বৃষ্টিও এলো তখনই। -ম্যাডাম চলুন পৌঁছে দিই। এখানে দাঁড়িয়ে ভিজছেন তো। কস্তুরী দত্তগুপ্তর কথার উত্তর দিলো না। ও কি একটুও আঁচ করতে পারেনি যে দৃশ্যটা কি হতে পারে? নিজের ওপরে রাগ হচ্ছিল ওর। সরিতা ওর মধ্যেই এসে দত্তগুপ্তকে বলল -স্যার, অন্ধগলির যে বাড়িটা ফাঁকা পড়ে আছে, ওখানে চাচাদের নিয়ে গেলে হয়না? আলাদা থাকতে পারবে। কষ্ট হবেনা। আমরা খাবার পৌঁছে দিতে পারব। দত্তগুপ্তর মুখটা নরম হয়ে আসছিল। মুখ থেকে বৃষ্টির জলটা মুছতে মুছতে বললেন -আগে একবার বাড়িটা দেখে নিই। ওরা একটু সুস্থ হোক। ল্যাব থেকে লোক আসছে। স্যাম্পল কালেক্ট করে নিক। তারপর ওবেলা নাগাদ ওদের ওখানে নিয়ে গেলেই হবে। আর থ্যাঙ্ক ইউ! তুমি তো খুব বুদ্ধি রাখো? 

শিবু ভেঙে পড়েছে খুব। ওর এক দাদা ফিরতে পারেনি। রাস্তায় মরে গেছে। 

এবার কস্তুরী বলল -আমাকে একটু ওই অন্ধগলিতে নিয়ে চলুন তো? -কেন? ওখানে কোনো স্টোরি নেই আর ম্যাডাম। সব শেষ তো। -আগে চলুন তো। 

কেন জানি দত্তগুপ্ত আর দ্বিরুক্তি করেন না। মেয়েটার শিরদাঁড়াটা শক্ত। দেখা যাক কোথায় যেতে চায়। জিপে বসতে বসতে সরিতাকেও ডেকে নিলেন। আপাতত গলির মুখে ব্যারিকেড। পাহারা রইল। 

অন্ধগলির সামনে বাঁশগুলো আটকানো আছে বটে তবে হেলে গেছে। দত্তগুপ্ত নির্দেশ দিলেন -সরিয়ে নাও ওগুলো। মুখটা খুলে যেতেই জিপ ঢুকে গেল ভেতরে। উত্তর কলকাতার একটা পুরনো গলি। বারো নম্বর বস্তির ভেতর দিয়ে পাঁচিল টপকে গলির পেছন দিয়ে ঢুকে আসা যায়। রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসলে একটু সময় লাগে। কস্তুরী সরিতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। জিপ থেকে টপটপ করে নেমে পড়ল ওরা। কস্তুরীর লালখাতাটা মনে পড়ল। মিলিয়ে নিতে হবে। 

“একটা তেতলা বাড়ি। তার অর্ধেক পুড়ে যাওয়া দেওয়ালের গা বেয়ে মোটা শেকড় মেলেছে অশ্বত্থ গাছটা। 

বড় তেতলা বাড়িটার ভগ্নদশা। মাঝে হয়ত বাড়ি ছিল একটা। খুবই ঘিঞ্জি গলি তো। কিন্তু এখন সেখানে একটা উঁচু ঢিবি। সদ্য মাটি খুঁড়ে যেন একটা গুপ্তধন ভরা হয়েছে। জায়গা নেহাত কম নয়। এপাশের বাড়িটা একতলা। অবশ্য তাতে যে তার কিছু কম এসে গেছে তা মোটেই নয়। উল্টোদিকের বাড়িগুলোরও একই দশা। যেন একটা ভীষণ প্রলয় ঘটে গিয়েছে। যেন বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গিয়েছে। যেন রেডিয়েশানে মারা পড়েছে তাবৎ বাসিন্দা। আর বাড়িটা যেন পুড়ে গিয়েছে বোমার আঘাতে। ছোট একতলাটা বেঁচে গিয়েছে নেহাতই বরাতজোরে। নয়তো ওরকম একটা ভয়ংকর যুদ্ধে ওই বা বাঁচে কি করে?” 

দত্তগুপ্ত সরিতার দিকে চাইলেন -কোন বাড়িটা? -ওই যে স্যার। তেতলাটা। প্রায় একমাস হল কেউ থাকছে না। দেখব? -না, তুমি দাঁড়াও। ওটা শর্ট সার্কিট হয়ে পুড়ে গিয়েছিল। আমরা ঢুকি আগে। আচ্ছা এই তেতলাটা কাদের? জানো নাকি? 

সরিতা উত্তর দেবার আগেই কস্তুরী বলে উঠল -ওটা কান্তিজ্যাঠার বাড়ি। ওনার ছেলে ইউএসএতে থাকে। বাপন। কান্তিজ্যাঠা ক্যান্সারে ভোগেন। পাশ থেকে নীচু গলায় দত্তগুপ্ত বলে ওঠেন -ভুগতেন। পাস্ট। কস্তুরী থামেনা -এই যে এই বাংলোটা বুড়িপিসিদের বাড়ি। ওরা সাত ভাইবোন। কেউ বাড়ি ফেরেনি। এদিকে মিত্তিরদের বাড়ি। ওরা বেঁচে গিয়েছেন। পাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন কোয়ারানটাইনে। আশা করা যায় ফিরবেন। আর এইটে রায়চৌধুরীদের বাড়ি। দেশের বাড়ি চলে গিয়েছেন। দত্তগুপ্ত নির্বাক। খানিক পরে হুঁশ পেতে বলে ওঠেন -আপনি কি করে এত জানলেন? কতবার এসেছেন এ পাড়ায়? 

দত্তগুপ্ত ঢুকে পড়েন তেতলায়। সরিতা আস্তে আস্তে কস্তুরীকে ডেকে নিয়ে যায় একতলাটার দিকে। সরু গলির মধ্যে দিয়ে পেছনের প্যাসেজে চলে যায় ওরা। তারপর পেছন দিয়ে খিড়কির দরজায় টোকা দেয়। কেউ খুলছে না তো? বারবার মৃদু টোকা দিয়েই চলে ওরা। একসময় হাল ছেড়ে চলে ফিরে আসবে ভাবছে যখন, তখন দরজাটা খুলে যায়। ছায়া ছায়া শরীর একটা। সরিতা কাছে যায় -ঝুম্পাদি? কি হয়েছে তোমার? ছায়াটা কথা বলে না। ঠোঁট নাড়ানোর বিফল চেষ্টা করে। উঃ! কস্তুরী চোখ বন্ধ করে ফ্যালে। মেয়েটা অতগুলো মৃত্যু দেখেছে! সরিতা তখনও কথা বলছে -ঝুম্পাদি তোমার ফোন কই? মাসি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা যে! ফোন পর্যন্ত করতে পারেনা! এই কথাটায় ছায়াশরীরটা যেন ফিসফিস করে কি বলল -মা? মা! সরিতা বলল -হ্যাঁ গো, মা! তোমার মা! তোমার ফোন কই? মেয়েটা কোনো উত্তর দেয়না। 

একতলাটার ভেতর ঘরে অন্ধকারে মিশে আছে আর এক ছায়ামূর্তি। কস্তুরী নিজের অজান্তেই ডাকে -হারুকাকা। মূর্তিটা সাড়া দেয় -কে? মণি? মনীষা? দেবুদা নেই রে। কিন্তু সে গলাতেও কোনো জোর নেই। ফ্যাসফ্যাসে গলা। 

গলিটা একদম নির্জন। কেউ যে কখনও এ গলিতে বেঁচে ছিল সেটা মনেই হয়না। 

বৃষ্টি থামলেও আকাশ ধূসর। হারুকাকার ঘরের জানলা দরজা সব খুলে দেওয়া হয়েছে। রাজু তার রিকশা নিয়ে গলির মধ্যে ঢুকে বসেছে। গোপু পাগলাও তার সঙ্গে এসেছে। মুড়ি ছড়াচ্ছে আর বকবক করছে -হ্যাঁ রা রাজু? এখেনটায় বেশ ছাওয়া বল? মরতে এদ্দিন কেন যে বাইরে রইলুম! খাড়া রোদ্দুরটা! রাজু আড় চোখে এক একবার হারুকাকার শোবার ঘরের জানলার দিকে লক্ষ রাখছে আবার এক একবার দুহাতের তেলোয় খৈনি ডলছে। অতীনদা নজর রাখতে বলেছে। মায়াদি আসবে। হারুকাকার কাজকম্ম করে দিয়ে যাবে। দেবুকাকার কাছে কাজ করত মায়াদি। একা লোক ছিল। মায়াদি যত্ন করত খুব। এবার হারুকাকার কাছে আসবে। 

হঠাৎ গোপু বলে উঠল -হ্যাঁ রা? বলি তোর বিবেক আচে? খৈনি কদ্দিন বলেচি খাবিনা? ক্যানছার হয় জানিস? রাজু এক ধমকে পাগলকে থামাতে যায়। লেগে যায় ধুন্দুমার। জানলা দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে বহুদিন পর হারুকাকা হাসে। মানুষের ঝগড়াও দেখতে ভারি ভালো লাগে। আবার মায়া হয়। গলিটা নিঝুম হয়ে গেছে। কেউ কোথাও নেই আর। সেদিকে তাকিয়ে রুগ্ন লোকটার চোখ ভারি হয়ে আসে। 

কিন্তু বেশিক্ষণ গলি ফাঁকা থাকেনা। 

বিকেলে পুলিশের গাড়ি করে ভিনরাজ্য থেকে ফেরা বারো নম্বরের আপনজনেরা এসে ঠাই নিলো তেতলায়। অসুখ হোক বা না হোক, এখন একা একা থাকুক ওরা। তারপর যে যার নিজের জায়গায় যাবে। শুধু শিবুর এক দাদা মাধুর ঘরে রয়ে গেছে। শিবুর মা ভীষণ কান্নাকাটি করছে। এক দাদা ফেরেনি। যারা ফিরেছে তাদের মুখে কিছু কিছু শোনা গেছে। কি করে যে ফিরল ওরা! 

ঘরে ফিরেছে ঝুম্পা। মা বিছানায় শুয়ে থাকলেও স্বাভাবিক। ওদের ঘরে একটা টুলে বসেছিল অতীন। ঝুম্পার দিকে চেয়ে বলল – যাক। মায়ের দেখাশুনো করো। মা তো একেবারে হন্যে হয়ে উঠছিল। ঝুম্পা চারপাশটা বারবার দেখছিল। অচেনা যেন। অজানা কোনো জায়গা। এখানে কি ও থাকত কোনোদিন? মেয়েটা এত চুপ করে গেছে! অতীন উঠে আসে বাধ্য হয়ে -ঝুম্পা, এত ভেঙে গেলে চলবে না। অসুখ সরছে। তুমি নিজের মধ্যে ফেরো। আজ দাদা এলে জেনে নেবো। তোমার কোনো ট্রিটমেন্ট দরকার কিনা। এই প্রথম ঝুম্পা মুখ খুলল -আমি তো সাইলেন্ট ক্যারিয়ার। কেউ বুঝতেই পারবেনা আমি তাকে রোগ দিচ্ছি! অতীন চমকে ওঠে -কে বলেছে এসব? চুপ! স্কুল পুরোপুরি খুলবে সামনের সপ্তাহ থেকে। তৈরি হও। 

the plague bacillus never dies or disappears for good; that it can lie dormant for years and years in furniture and linen-chests; that it bides its time in bedrooms, cellars, trunks, and bookshelves; and that perhaps the day would come when, for the bane and the enlightening of men, it would rouse up its rats again and send them forth to die in a happy city. 

অতীনদা কি জানে না এটা? ঝুম্পা অবাক হয়। অসুখ তো যায়না? যাবেনা। থাকবে এখানেই। সুযোগ পেলেই মাথা তুলবে। শুধু ফার্নিচার বিছানার চাদর আর আলমারির মধ্যে নয় তো? মানুষের মধ্যে। তার দেহের কোষে, তার রক্তে, তার মগজে, তার স্বার্থপরতায়। কেউ জানে? অতীনদা জানে? জানলেও হয়তো বিশ্বাস করেনা।

0 comments: