ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল
Posted in ধারাবাহিকআট
হঠাৎ রত্না দি র ডাকে সুমন্ন্ত দার লুপ্ত চেতনা ফিরে এলো । দাদা বললেন , বসো বসো আমি একটু আসছি ।তারপর দুই কাপ চা এনে বললেন, দিদি চা খাও ।দাদা চা খুব ভালো করেন ।দিদি বললেন, দাদা চা খুব ভালো হয়েছে ।দাদা বললেন, ধন্যবাদ। তার পর কি খবর বলো ।দিদি বললেন, গতকাল এক ভদ্রলোক ফোন করেছিলেন বেড়াতে যাওয়ার জন্য।কোথায় ?বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া র কাছে মথুরাপুর গ্রামে । দাদা নতুন জায়গা দেখতে ভালোবাসেন । ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে পরের দিন দুজনে হাওড়া রামপুর হাট এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে বস লেন ।ট্রেনে বসে জানালা দিয়ে দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে যাওয়া অন্তরে এক অদ্ভূত অনুভূতির সৃষ্টি করে । এ রসে যে বঞ্চিত তাকে বোঝানো কঠিন । দাদা ও দিদিকে এই কথা গুলি বলছিলেন ।দিদি বললেন, সত্য কথা । ট্রেন জার্নির স্বাদ আলাদা ।তারপর বারোটার সময় ওনারা মথুরাপুর গ্রামে এসে গেলেন । পরেশবাবু ফোনে খবর পেয়ে আগে থেকেই তৈরি ছিলেন ।জলটল খাওয়ার পর পরেশবাবু দাদাও দিদিকে নিয়ে ময়ুরাক্ষী নদী দেখাতে নিয়ে গেলেন । নদীতে এখন বেশি জল নেই ।পায়ে হেঁটে ওনারা নদীর ওপাড়ে গেলেন ।পরেশবাবুর ব্যবহার দেখে দাদা ও দিদি খুব মুগ্ধ হলেন ।তারপর খাওয়া দাওয়া করে দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বিকালে গ্রাম ঘোরার পালা । কত কিছু দেখার আছে আমাদের দেশের গ্রামে । গাছপালা নদীনালা এই নিয়েই আমাদের গ্রাম । কবিগুরু তাই বলেছিলেন, " দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ... একটি ঘাসের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু "।আমরা আজীবন ঘুরে বেড়াই, আনন্দের খোঁজে । আর এই আনন্দ হলো জীবনের আসল খোঁজ । কথা গুলি জয়ন্ত দা বললেন ।দিদি পরেশ বাবু কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন । পরেশ বাবুও কথা বলে খুব আনন্দ পেলেন ।তার পর রাতে খাওয়া বেশ ভালোই হলো । পরেশ বাবুর বিরাট জায়গা জুড়ে বাগান ।অনেক হিম সাগর আম । গাছের টাটকা আম । আর সাঁকিরের পাড় থেকে আনা দৈ আর রসগোল্লা । রসিক মানুষ জয়ন্ত দা । বললেন, পরেশবাবু কব্জি ডুবিয়ে ভালোই খেলাম ।পরেশবাবু বললেন, আপনাদের খাওয়াতে পেরে আমি খুব খুশি ।ভোরবেলা তখন চারটে বাজে । জয়ন্ত দার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । পরেশবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার এত কল রব কেন ?পরেশবাবু বললেন, আর বলবেন না । আমার বাগানে অনেক জবা গাছ আছে নানা জাতের । কোনোটা লঙ্কা জবা, পঞ্চ মুখী , গণেশ জবা , সাদা জবা, ঝুমকো জবা ,খয়েরী জবা , লাল, ঘিয়ে জবা প্রভৃতি।এখন একটা লাল জবা গাছে ঘিয়ে জবা হয়েছে । সবাই তাই ভোরবেলা পুজো দেয় । বলে , ঠাকুরের দয়া । তাই এক গাছে দুই রকমের ফুল ।দিদি দেখছেন প্রচুর মহিলা চান করে কাচা কাপড় পড়ে পুজো দিতে এসেছেন ।দাদা বললেন , এদের বোঝাতে হবে ।এটা বিজ্ঞান নির্ভর ব্যাপার ।দিদি বললেন , আপনারা শুনুন, এটা বিজ্ঞানের ব্যাপার ।তখন মহিলাদের একজন বললেন, একথা বলবেন না দিদি । পাপ হবে ।দিদি বললেন , পরাগ মিলনের ফলে লাল গাছের পরাগ রেণু ঘিয়ে গাছের পরাগ রেণুর সঙ্গে মিলিত হয় । এই কাজটি করে পতঙ্গ রা ।সংকারয়নের ফলে জটিল পদ্ধতি পার করে এইসব ব্যাপারগুলো হয় । সেসব বুঝতে গেলে আরও পড়াশুনা করতে হবে ।আরেকজন মহিলা বললেন, কই আর কোনো গাছে তো হয় নি ।দিদি বললেন, এত বড় বাগান ঘুরে দেখুন। নিশ্চিত দেখা যাবে ।দাদা জানেন সবাই প্রমাণ চায় । প্রমাণ ছাড়া এদের কুসংস্কার মন থেকে যাবে না ।দাদা ডাক লেন, আপনারা এদিকে আসুন । দেখুন এখানেও দুটি গাছে অই একই ঘটনা ঘটেছে।সবাই ওখানে গিয়ে দেখলেন, সত্য কথা তাই হয়েছে । লাল গাছে ঘিয়ে জবা ।দাদা বললেন ,মনে রাখবেন বিজ্ঞান অসম্ভব কে সম্ভব করে । বিজ্ঞান এর দৃষ্টি দিয়েই আমাদের সবকিছু বিচার করতে হবে ।সবাই বুঝতে পারলেন এবং খুশি হয়ে বাড়ি চলে গেলেন ।পরেশবাবু বললেন, এবার আপনাদের জন্য কফি নিয়ে আসি বর্ধমান জেলার সিঙ্গি গ্রামে কবি কাশীরাম দাসের জন্ম স্থান ।অই গ্রামে আমার এক আত্মীয় বাড়িতে ক্ষেত্রপাল পুজোর সময় বেড়াতে গেছিলাম ।এই পুজোর সময় এই গ্রামে খুব ধূমধাম হয় ।রতন আমার থেকে বয়সে একটু ছোটো হলেও বন্ধু র মতোই ভালোবাসি । যেখানে যাই আমরা দুজন একসাথে যাই ।আমার অনেক দিনের ইচ্ছা কিশোর মনোবিজ্ঞানের সহ সম্পাদক সুমন্ত ভট্টাচার্য ও সহ সম্পাদনা সচিব রত্না রায় কে এই সিঙ্গিগ্রামের পুজো দেখাবো । রতন কে আগেই বলে রেখেছি । দাদা ও দিদিকেও একমাস আগে বলে রেখেছি ।আজ তাঁরা আসবেন ।আমরা ক্ষেত্র পাল তলায় ঢাকের তালে মত্ত । হঠাৎ একটি ছোট ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে সবাই কে বলছে, সবাই দেখে এসো মিত্র বাড়িতে ঠাকুর এসেছে ।আমরা ছেলেটির কথা শুনে কৌতূহল বশত মিত্র বাড়িতে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য ।