Next
Previous
Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


যং কাময়ে তং তম্‌ উগ্রং কৃণোমি
তং ব্রহ্মাণং তম্‌ ঋষিং তং সুমেধাম্‌

আমি যাকে চাই, সে হয় ওজস্বী, ব্রহ্মা, মেধাবী ও ঋষি।

তিনি যাঁকে চান, আমাদের আরাধ্য তাঁরাও। তিনি মেধা। তিনি ধী। তিনি মনস্বিতা। সেই তিনি চেয়েছিলেন বিবেকানন্দকেও। ১৮৯৩ এর ১১ই সেপ্টেম্বর,নিজের মনন-মেধা অনু্যায়ী ভারতকে বাণীরূপ দিয়ে বিদেশের সামনে তুলে ধরেন স্বামীজি। দেশে ফেরার পর ১৮৯৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেবের উদ্যোগে শোভাবাজার রাজবাড়িতে আয়োজিত এক জনসভায় বিবেকানন্দকে প্রথম নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয় তাঁর নিজের শহরে। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজা বিনয়কৃষ্ণ নিজেই। শিকাগো বক্তৃতার একশ’পঁচিশ বছর পূর্তি এবং বিবেকানন্দের প্রথম নাগরিক সম্বর্ধনার স্মৃতিকে হৃদয়ে ধরে, শোভাবাজার রাজবাড়ির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আমরা তাঁর ১৫৫ তম জন্মজয়ন্তী পালন করলাম শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে। কোনও নরদেহধারী দেবতাকে স্মরণ করিনি আমরা। স্মরণ করেছিলাম সেই মনস্বীকে যিনি নিজেকে বলতেন a voice without a form। এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবারের ঋতবাকের নাম বিবেকানন্দ সংখ্যা।

আরও কয়েকজন ধীমানকে আমরা বরণ করেছি গত বারোই জানুয়ারি। শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ী। এবারের ঋতবাক মুদ্রণ সংখ্যায় এঁদের সবার সৃজন থাকছে। লেখা দিচ্ছেন একালের কবি শ্রীজাতও। দার্শনিক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ছাড়াও কল্প-প্রকল্প –অণুকল্প-কে বর্ণে-গন্ধে সাজিয়েছেন বহু গুণীজন। তাঁরা সবাই ঋতব্রতী।

মুদ্রণ সংখ্যা পাওয়া যাবে বইমেলায়। ৩৩৪ নম্বর স্টলে। সবাই আসবেন। আরও বই থাকবে। আগের বছরে মুদ্রিত বইগুলো তো থাকবেই; তাছাড়াও থাকবে এ’ বছরের নির্মাণগুলিও। এই বছর মোট সাতাশটা বই নিয়ে আসছি। মন্দ নয়। কী বলেন?

ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। 

শুভ কামনা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


অব্যক্ত প্রকৃতিরয়ং কলাশরীরঃ
সূক্ষ্মাত্মা ক্ষণত্রুটিশো নিমেষ রোমা।
সন্ধ্যাংশঃ সমবলশুক্লকৃষ্ণ নেত্রঃ
মাসাঙ্গো ভবতি বয়োহয়ো নরাণাম্‌।। (মহাভারত)


ঘন্টা-মিনিটে তৈরী দেহ, নিমেষ রোমে ঢাকা কলেবর, সাদা-কালো দুই চোখে অমাবস্যা আর পূর্ণিমা, বারোমাস তার মাংস, সন্ধ্যাকে কাঁধে নিয়ে ছুটছে যে দুর্জ্ঞেয় স্বভাবের জন্ত- তার নাম সময়। বাঁচা মানে, এই কালতুরঙ্গের পিঠ আঁকড়ে সওয়ারি করা। ঋতবাকও তাই করে। কতটা পথ পেরিয়ে আসা হলো। কতজন এল গেল। কতজন আসবে। ঋতবাক তার যাত্রাপথ বদলায়নি, বদলাবে না।

এই চলার পথে নানা উৎসব। বন্ধুমিলন। আগামী বারোই জানুয়ারী ২০১৮, শুক্রবার, বেলা আড়াইটে থেকে শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে হবে তেমনই এক উৎসব। যৌথ উদ্যোক্তা শোভাবাজার রাজবাড়ি আর ঋতবাক। স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার একশ পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো। শিকাগো বিজয়ের পর কলকাতা ফিরে এলে, তাঁকে প্রথম জনসম্বর্ধনা জানানো হয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে। প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে সম্বর্ধনা সভার সভাপতিত্ব করেন রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব। এই দুটি ঘটনাকেই স্মরণ করা হবে ঐদিন। সকাল দশটায় বেরোবে পদযাত্রা- ঠাকুরদালান থেকে বিবেকানন্দের বাসভবন পর্যন্ত। তারপর, এক বর্ণাঢ্য বিচিত্রানুষ্ঠান। বরণ করে নেওয়া হবে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি জগতের নানা নক্ষত্রকে। প্রকাশিত হবে এক বিবেকানন্দ স্মারক সংখ্যা: সব অর্থে যা সংরক্ষণযোগ্য। এছাড়াও, প্রকাশ পাবে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর লেখা আর ঋতবাকের নির্মাণ করা বই মন্দকথা; এবং আর একটি ঋতবাক- নির্মাণ – মহারাজকাহিনী: ইতিহাসের অন্য আলোয় শোভাবাজার রাজবাড়ি-র তৃতীয় সংস্করণ। তার, অল্প ক’দিন পরেই বেরোবে আরও অনেক'কটা নানা স্বাদের ঋতবাকের বই। শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরদালানেই। ঋতবাকের এখন উৎসবের মরসুম। আমি জানি, ঋতবাকের সত্যিকারের বন্ধুদের নেমন্তন্ন করতে হয় না। তাঁরা নিজে থেকেই আসেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সফল করতে তাঁদের নিজেদের অনুষ্ঠানগুলিকে। কারণ, তাঁরাই তো ঋতবাক।

উৎসবে থাকুন। আনন্দে থাকুন। 

শুভকামনা নিরন্তর।
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



সময় স্থির নয়। ঘটনা পরম্পরাও অ্যাবসার্ড নাটককে মনে পড়াচ্ছে বার বার। যেমন, এই মুহূর্তের ডেঙ্গির ডঙ্কা। সেদিন সুমনদা’র প্রেসে বসে আছি। একটা মশা এক ভদ্রলোকের গায়ে এসে বসল।

- ডেঙ্গির মশা! সুমনদার দৃঢ় ঘোষণা।

- কী করে বুঝলে? আমাদের প্রশ্ন।

- মশাটা ওকে আই কার্ড দেখিয়েছিল। গম্ভীর মুখে বললেন মশকবাহক।

এই একটা বিষয় লক্ষ্য করে অবাক না হয়ে পারিনা। চূড়ান্ত অসুবিধের মধ্যে পড়েও মানুষ দিব্যি ঠাট্টা, তামাসা করে তা নিয়ে। এই মুহূর্তে মহামারীর সামনে দাঁড়িয়ে সে চুটকি লিখছে, কার্টুন আঁকছে, প্যারডি গাইছে। এককথায় বিপণ্ণতা হয়ে উঠছে শিল্প মাধ্যম। আসলে, কৌতুক সুখের আতিশয্য থেকে আসে না। হঠাৎ অসঙ্গতি, বিড়ম্বনা বা লজ্জার পীড়া থেকেই উঠে আসে। হাসির আড়ালে একরকম নিয়মভাঙার আমোদ থাকে। লুকোনো থাকে নিয়মতান্ত্রিকতাকে পরিহাস। হাসি প্রতিবাদের আরএক নাম। দেখুন না, এই পুজোতেই তো অসুররূপে মণ্ডপে হাজির হলেন ডাক্তারবাবুরা। তাই নিয়েও কত কৌতুক করলেন তাঁরা নিজেরাই। নিজেকে নিয়ে হাসা বড় হিম্মতের ব্যাপার। আর, যাঁরা যমের সঙ্গে রোজ পাঞ্জা লড়েন তাঁদের তো সে হিম্মত থাকবেই। তবে, সমস্যা হয়, যদি সহনশীলতার অভাব ঘটে, তখন। গণতান্ত্রিক পরিসরে নিজের মত প্রকাশ করতে গেলে যদি ক্ষমতা গলা টিপে ধরে। প্রতিবাদের জন্য হাঁটলে অরওয়েলের পৃথিবীর বড়দা’ এসে অতি মিহিন স্বরে প্রশ্ন করেন – গতকাল কোথায় ছিলেন? তখন গলাটা কেমন শুকিয়ে আসে। হাসি নয়, গলা চিরে বেরোতে চায় চিৎকার। তখন, সেই চিৎকারকেই অবলম্বন করে গাইতে হয়, আঁকতে হয়, লিখতে হয়। যদি সেটাও না পারি, তবে, ক্ষমতার আস্ফালনের মধ্যেই মাথা উঁচু রাখার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতেই হয়। সেটাই করে চলেছি। সঙ্গে আপনারা আছেন। 

সকলে সজাগ থাকুন, সুস্থ থাকুন।

শুভ কামনা নিরন্তর।
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



"If all the women who have been sexually harassed or assaulted wrote 'Me too.' as a status, we might give people a sense of the magnitude of the problem.” - Alyssa Milano

এই একটা টুইটে কত কাণ্ড! গেল গেল রব। একে হুজুগ বলে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত বলে চালাবার চেষ্টা। আর, নারীবাদ বলে গাল পাড়া! আচ্ছা, নারীবাদ বস্তুটা ঠিক কী বলুন তো? নারীর পুরুষের ওপর খবরদারি চালানোর অধিকার? নাকি মেয়েদের যখন তখন, যার তার সঙ্গে জোট বাঁধার অধিকার? এরকমই কিছু মনে না করলে শব্দটা একটা গালির মতো ব্যবহার করার কারণ কী? নারীবাদ তো একটা অবস্থানের নাম। একটা বিশেষ চোখে বিশ্ব দেখার নাম। উদাহরণ? নারীবাদ চায়, কোনও মেয়ে যদি মাধ্যমিকে ফিফথ্ হয়, তবে তাকে তাই বলা হোক। মেয়েদের মধ্যে প্রথম নয়। নারীবাদ চায়, ষাটের দশকের কবিদের মধ্যে শক্তি, সুনীল, প্রণবেন্দু, নবনীতা, কবিতা - এই নামগুলো একসঙ্গে উচ্চারণ করা হোক। কোনও সাহিত্যের ইতিহাসেই যেন মহিলাকবি বলে একটা আলাদা অধ্যায় না থাকে। খুব কঠিন কি কাজটা? খুব কঠিন সহনাগরিক ভাবা মহিলাদের? বোধহয় কঠিনই। কেননা, তা না হলে আজ এত জনকে তাদের শরীরে অবাঞ্ছিত নোংরা হাতের ছোঁয়ার কথা বলে সরব হতে হতো না। সবচেয়ে তাজ্জব ব্যাপার হলো, যে বাঙালি সমাজের পরতে পরতে মাতৃকাসাধনের এত চিহ্ন, সেখানেই এত নারীনিগ্রহের ঘটনা ঘটা। এই তো, এখনও, মণ্ডপে শোভা পাচ্ছেন এক নগ্নিকা দেবী। তাঁর নগ্নতাকে লালসার চোখ দিয়েই দেখেন কি পুরুষ ভক্তরা? বলা কঠিন জানেন! 'যৌনতা ও বাঙালি' বইতে ঋতবাকের প্রধান উপদেষ্টা নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ীর 'শৃঙ্গার' বলে একটা প্রবন্ধ আছে। তাতে তিনি এক পৌরাণিক শ্লোক ঊদ্ধৃত করেছেন : 

মত্রা সস্রা দুহিত্রা বা ন বিবিক্তাসনো ভবেৎ।
বলবান্ ইন্দ্রিয়গ্রামঃ বিদ্বাংসপি কর্যতি।।

এর অর্থ, মা, বোন অথবা মেয়ের সঙ্গেও নির্জনে কখনও বেশিক্ষণ থেকো না, কেননা প্রবল ইন্দ্রিয়বৃত্তি বুদ্ধিমান লোককেও মথিত করে। 

এই যদি পুরাণকারের ভারতীয় পুরুষ চরিত্রের মূল্যায়ন হয়, তবে আর কথা না বাড়ানোই ভালো ! 

কিন্তু, কোনওভাবেই যে এই মূল্যায়ন শেষ সত্য নয় তার প্রমাণ আমাদের ঘরে ঘরে। আমাদের বাবা, দাদা, ভাই, ছেলে, বন্ধু, সহকর্মীদের মধ্যে। সমস্যাটা অন্যত্র। বুঝতে হবে, একটা মেয়ের অধিকার, একটা ছেলের অধিকারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সে অধিকারটা তার শরীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কী নারী, কী পুরুষ, হেনস্থা মানে হেনস্থাই। নারীবাদের নয়। প্রশ্নটা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের। মেয়েরা মানুষ। মেয়েমানুষ নয়। 

ঋতবাকের যাত্রা আলোর পথে। সব ঋতব্রতীও আলোকপথযাত্রী। তাই, এইসব সামাজিক আঁধারের ওপর মননের আলো ফেলে, সে আঁধার  একদিন দূর করবেনই তাঁরা, এটা নিশ্চিত। কাল ছিলো আলোর উৎসব। আজ ভাইফোঁটা। সকলে আলোকস্নাত হোন। যমদুয়োরে কাঁটা পড়ুক সব্বার... 

শুভকামনা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



এবং যেন আবার জড়ো এক পুরনো কলধ্বনি
শুনতে যে পাই, কইছে কথা কিংবা কথার ফিসফিসানি
সন্দেহ, কি, জিহ্বা বাকি - তার বাদে সব উড়ন্ত ছাই
শ্রুতির মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, শব্দ তোমার সম্প্রীতি চাই। 

(ওমর খৈয়ামের রুবাই, অনুবাদ : শক্তি চট্টোপাধ্যায়।) 


ঋতবাকের চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নতুন। আবার, পুরনোও। ৩০শে অগাস্ট, ২০১৪তে যখন প্রথম আত্মপ্রকাশ করে আমাদের পত্রিকা, নিজেদের কাছে নিজেরা ক'টা কথা দিয়েছিলাম। যে দিকেই চলি না কেন, সত্যের পথ থেকে সরব না, নীতির ক্ষেত্রে আপোস করব না - এটা স্থির করে নিয়েছিলাম। যদি দরকার হয়, বদলে নেব নিজেদের। কিন্তু শব্দ, শ্রুতি আর বাকের সঙ্গে কোনও বেইমানি করব না কখনও : এই কথা বলে পথ চলা শুরু করেছিলাম। দেখলাম, বদলাতে হলো। ঋতবাক যা ছিল, যা হবে ভেবেছিলাম আর আজ যা হয়েছে তার মধ্যে ফারাক আছে বেশ। তবে, আমাদের পথ একই আছে কিন্তু। ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা : এই মন্ত্রে বিশ্বাস করিনি আর করবও না। একদিকে বলার ইচ্ছে আর অন্যদিকে বোঝবার। এই দুইয়ে মিলে লেখা-পড়া চলে। লেখক লেখেন। পাঠক পড়েন। মাধ্যম হয় শব্দ। আমরা বরাবর চেয়েছি, শব্দের ধোঁয়ায় যেন বুঝ ঢাকা না পড়ে যায়। ঋতবাকের আঙিনায় সহজভাবে গভীর কথার আদান প্রদান চলে যেন। সরস কথা, আঁতের কথা, প্রাণের কথা। কথায় ভেজে চিঁড়ে, মুড়ি, খই, বাতাসা। সেইটুকুনই দেখতে আসা। বাণীর ধারা নেমে প্রাণের গভীর থেকে যেন উঠে আসেন বোধির জননী বাক্, যেন বিশ্বসৃষ্টির অলঙ্ঘ্য নিয়ম ঋতকে অক্ষর-অবয়বে প্রকাশের চেষ্টা নিয়ত করে চলেন আমাদের সমধর্মী ঋতব্রতীরা - এটাই চেয়ে আসছি শুরুর ক্ষণটি থেকে আজ পর্যন্ত। এই চাওয়াকে আড় চোখে দেখেছেন কেউ কেউ। খোলাবাজারে পণ্য করতে চেয়েছেন ঋতবাকের অস্তিত্ব। ঘাম আর রক্ত ঝরিয়ে চড়া নিয়ন আলোর প্রলোভনের সঙ্গে যুঝতে হয়েছে। আমরা জানি, টিঁকতে গেলে বাজারের সঙ্গে দুশমনি করা চলে না। তবে, বাজারকে শেষ কথা বলতে দিতেও আমরা নারাজ। আমরা ব্র্যন্ড ঋতবাক গড়তে চাই। বুদ্ধিদীপ্ত প্রবন্ধ, সরস কাহিনী, হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চিত্ত ঝলমলিয়ে দেওয়া কবিতা, হাতে গড়া বইয়ের ফ্যাকসিমিলি - এসব নিয়ে এখনও অবধি প্রায় ত্রিশটি গ্রন্থ নির্মাণ করে উঠতে পেরেছি : প্রতিটি তার স্বকীয়তায় ভাস্বর। এই কাজটা করেই যাব। কথা দিচ্ছি, ঋতবাকের বই বলতে বাজার বুঝবে আলাদা কিছু, নতুন রকম কিছু। চারটে বই আগামী সাতাশে অগাস্ট, রবিবার, বিকেল পাঁচটায় শোভাবাজার রাজবাড়ির গোপীনাথ জীউ-এর নাটমন্দিরে প্রকাশ পেতে চলেছে। এই সংখ্যার 'বইয়ের খবর'-এ তাদের সম্বন্ধে পড়লেই বুঝবেন, আমরা চোখ ঝলসাতে চাইনে। মন আলো করতে চাই। সফরের গোড়ার দিকে যাঁরা হামরাহী ছিলেন, তাঁরা অন্য পথ ধরেছেন একসময়। অগণন ধারালো শর হেনেছে অন্ধকার। হানছে এখনও। তবু চলব। সঙ্গে আপনারা আছেন। কোথায় চলেছি, সেটা আসল কথা নয়। চলাটাই আসল কথা। 

এই সংখ্যায় শুরু হলো নতুন বিভাগ, কৈশোরনামা। কিশোর-কিশোরীদের জন্য লেখা। তাদের নিয়ে লেখা। ঋতবাক রুচি গড়তে চায়। পাঠকের হাতে তুলে দিতে চায় বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতির রত্নভাণ্ডারের চাবি। এই গড়ার জন্যেই কাঁচা মনে পাকা ছাপ ফেলার দায়িত্বটা নিতেই হলো। 

আর কী? ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন। 

শুভ কামনা নিরন্তর।
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



মহান্তং কোশম্ উদ্ অচা ভি ষিঞ্চ
সবিদ্যুতং ভবতু বাতু বাতঃ। 
তন্বতাং যজ্ঞং বহুধা বিসৃষ্টা 
আনন্দিনীর্ ওষধয়ো ভবন্তু।। (অথর্ববেদ। ৪।১৫।১৪।)

মহাজলাধার তুলে ধরো, অভি
ষিক্ত করো এ ধরা। 
জ্বলুক বিজুরী, বয়ে যাক বায়ু,
যজ্ঞের আয়োজন হোক সুরু
চারিদিকে মেঘ- ভাঙা জলে জলে --
খুশী হোক ওষধিরা। (অনু. গৌরী ধর্মপাল) 


শ্রাবণ এসেছে। শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। ঋতবাকও পায়ে পায়ে পেরিয়ে এল চার চারটে বছর। এই সংখ্যা আমাদের তৃতীয় বর্ষের শেষ সংখ্যা। মন চলে যাচ্ছে অতীতে। ঋতবাক যা হবে ভেবেছিলাম, আজকের ঋতবাক কি তাই? না। পথ চলতে চলতে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে, নিজেদের বদলে নিতে হয়েছে। মারীচ-সুবাহুর রক্ত বৃষ্টির মধ্যে যজ্ঞের আগুন জ্বালিয়ে রাখতে বলা- অতিবলা মন্ত্র জপ করতে হয়েছে। নতুন ভাবে যজ্ঞ আরম্ভ করার আগে আপনাদের সকলকে অর্ঘ নিবেদন করছি আজ। সাত পা একসঙ্গে চললে বন্ধু হয়। আপনারা চলেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি পথ। এই চার বছরে কোন কোন দিকে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে ঋতবাক আপনারা জানেন। ঋতবাকের বইগুলো আপনারা আপন করে নিয়েছেন। আশানিকেতনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের সঙ্গে। ম্যাজিকের মতো প্রায় এক লাখ টাকা জমিয়ে ফেলেছি আমরা ওদের কচি মুখগুলোয় হাসি ফোটাবো বলে। সামনের মাসের উনিশ তারিখ ঋতবাক ওদের পুজোর জামা দেবে। আপনারাও আসবেন তো? পুজোর মধ্যে যে কোনও একদিন ওদের সকলকে কলকাতার কয়েকটি বিখ্যাত পুজো ঘুরিয়ে দেখানো ও শোভাবাজার রাজবাড়ীতে মধ্যাহ্নভোজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কৃষ্ণেন্দু আর রিয়া নামের দুটি শিশুর স্কুলে ভর্তি এবং প্রতিমাসের স্কুল ফী-র ব্যবস্থাও করা গেছে। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি, আপনারা আছেন সঙ্গে। 

আরও অনেকদূর যেতে হবে। অনেকটা দূর। যাব। ঋতবাক যে এক স্বপ্নের নাম!

শুভাচ্ছা নিরন্তর





0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



এব স্য সোমঃ পবতে সহস্রজিদ্ -
হিন্বানো বাচম্ ইষিরাম্ উষর্বুধম্। (ঋক ।৯।৮৪।৪৮) 

অনন্তজয় এই তো সে সোম চলছে বয়ে 
ছুটিয়ে দিয়ে তীরের মতো উষায় জাগা বাক্। (অনু.গৌরী ধর্মপাল) 

আঁধার পেরিয়ে সেই অতিথি যখন প্রাণের দ্বারে আসেন, তখনই জাগে নবজন্মের অরুণ আলোয় রাঙা ভোর। এই ভোরকেই বেদের ঋষি বলেন উষা। এই উষায় আবির্ভূত হন তমোনাশ বৈশ্বানর, চোখ মেলেন সূর্য আর চেতন পান বাক্ : সর্বদেবময়ী বাক্। এই বাক্ -এরই বন্দনা করল ঋতবাক ৩ আষাঢ়, ১৪২৪, (১৮জুন, ২০১৭) শোভাবাজার রাজবাড়িতে গোপীনাথের নাটমন্দিরে। বর্ষা বন্দনা আর বাক্ আরাধনা এক হলো বই উৎসবের মধ্য দিয়ে।

সেতারে বাজল ভীমপলাশ, কবি কালিদাসের মেঘদূতম্ কায়া ধারণ করল সুরে, নাচের তালে আর মন্দ্র পাঠে। ঋতবাক প্রকাশ করল পাঁচটি বই। এবারের 'বইয়ের খবর'- এ তাদের কথাই বিস্তারিত বলা রইল।

আশানিকেতনের কথা তো আগেই জানিয়েছি আপনাদের। এফ -এম - আর (Fellowship with Mentally Retarded)-এর অধীনে আশানিকেতনের কলকাতা শাখার জন্ম হয় ৯জুন, ১৯৭৩। এবছর ঐ শাখার চুয়াল্লিশতম জন্মদিনে আমাদের নেমন্তন্ন ছিল ওখানে। আরও কিছুকাল বাঁচার আনন্দে বেঁচে থাকা কাকে বলে; কাকে বলে জীবনউৎসব উদযাপন তা ওদের কাছ থেকে শিখে এলাম। ওরা ওদের আশানিকেতনের জন্মদিনে প্রাণভরে আনন্দ করল। অনুষ্ঠানের শুরুতে যখন রাখীদি 'হ্যাপি বার্থডে টু আশানিকেতন' - গাইছেন আর ওরা গলা মেলাচ্ছে আমরা সবকটা মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। কী জ্বলজ্বলে! তাকানো মাত্র প্রত্যেকে হেসে হাত নাড়ছিল। যেন কতকালের চেনা। এগিয়ে এসে ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছিল। আমরা খেলাম, গাইলাম, নাচলাম ওদের সঙ্গে। নেচে নেচে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়তেই চোখ পড়ল সামনের হুইলচেয়ারে বসা বুলানিদার দিকে। ঊনসত্তর বছর বয়স, ডাউনস্ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত, মুখ হাঁ, জিভ বাইরে ঝুলছে। কিন্তু দুটো হাত ঊর্ধ্বে তোলা। দশটা আঙুল কাকে যেন হাতছানি দিচ্ছেন। নাচছেন বুলানিদা'। বাঁচার আনন্দে। একা। জীবনের কি অফুরান প্রকাশ!

অথচ দেখুন, এই ক'দিন আগেই 'খবরে প্রকাশ' -এক পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে; নাম তাঁর অদ্রীশ বিশ্বাস। অদ্রীশদা, তুমি স্রেফ একজন প্রৌঢ় হয়ে গেলে? তোমার মেধা, বিদ্যাবত্তা, তোমার লেখা কিছুরই কথা মনে করালো না মিডিয়া দেবতা? বুধমণ্ডলীতে এক অতি পরিচিত নামকে হঠাৎ করে বেনামী লাশ হতে দেখলে গা শির শির করে। 

দীর্ণ হই। তবুও আশা ছাড়ি না। 

সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভকামনা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in



সম্পাদকীয়



গ্রীষ্মস্ তে ভূমে বর্ষাণি
শরদ্ হেমন্তঃ শিশিরো বসন্তঃ।
ঋতবস্ তে বিহিতা হায়নীর্
অহোরাত্রে পৃথিবি নো দুহাতাম্ (অথর্ববেদ। কাণ্ড ১২। সুক্ত ১। শ্লোক ৩৬।) 

গ্রীষ্ম তোমার, ওগো ভূমি, বর্ষা শরৎ হেমন্ত
শিশির এবং বসন্ত
বাঁধাধরা এই ঋতুরা, বছরগুলি, দিন ও রাত
মোদের 'পরে, ও পৃথিবী, দুধের ধারা ঝরঝরাক (অনু. গৌরী ধর্মপাল) 

গ্রীষ্ম তার উপস্থিতি প্রবলভাবেই জানান দিচ্ছে। এই গ্রীষ্মে ঋতবাক চায় যে তার সকল ঋতব্রতী আপনজন বঙ্গবাণীর মাতৃদুগ্ধের ধারাস্নানে সিক্ত হোন। আজ থেকে ছিয়ানব্বই বছর আগে এই গ্রীষ্মেই জন্মেছিলেন সত্যজিৎ রায় (০২.০৫.১৯২১ ---২৩.০৪.১৯৯২)। ঋতবাক এই সংখ্যায় তাঁকে স্মরণ করছে। আমাদের তৃতীয় বর্ষ, দশম সংখ্যার নাম সত্যজিৎ সংখ্যা। 

এই সংখ্যা থেকে শুরু হলো ঋতবাকের নতুন বিভাগ 'আলাপ বিস্তার'। জীবনের এক অন্যতর অভিজ্ঞতা - সরাসরি। 

একটা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করছে। গত ৫ই মে, দুপুর ১.৩০ আমরা গিয়েছিলাম আশানিকেতনে। এফ-এম-আর (Fellowship with Mentally Retarded)ইন্ডিয়ার অধীনে ১৯৭২ সালে ব্যাঙ্গালোরে শুরু হওয়া আশানিকেতনের এখন ভারতে মোট ৫টি শাখা। ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, কেরালা, কলকাতা, আসানসোল। ১৯৭৩এ কলকাতার আশানিকেতন শুরু হয় একা কাশীদাকে নিয়ে। এখনও আছেন কাশীদা। বয়স হয়েছে। আর্থারাইটিসের ব্যাথাটা মাঝে মাঝেই বড় কাবু করে ফেলে। 



'সরকারী সাহায্য পাওয়া যায়না কিছুই। আসলে ওদের প্রোডাক্টিভিটি তো তেমন বেশি নয়! সরকার প্রোডাকশন চায়।' ওয়ার্কশপ আর শোরুম দেখাতে দেখাতে বলে চললেন সুব্রতাদি। 'অনেক খরচ, জানেন। সবচেয়ে বেশি খরচ ওষুধের। সকলেরই প্রায় মৃগীর সমস্যা। ডে-কেয়ার আর রেসিডেন্স্যিয়াল মিলিয়ে ১১৫ জন ওরা। সকলকেই চেষ্টা করি ওষুধটুকু অন্তত দিতে। পুরোটা না পারলেও, খানিকটা। পুজোর সময় নতুন জামা দেওয়ারও চেষ্টা করি। প্রতি বছর সবাইকে পারিনা। গতবছর পেরেছিলাম, জানেন! টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম।'

'কতজন থাকেন এখানে?' -জানতে চাই
'১৬ জন। ওদের সব খরচ আমাদের। আগে আগে একটা ফেসবুক গ্রুপ এই ১৬ জনের ব্রেকফাস্টের খরচটা দিতো। তারপর গ্রুপটাই ভেঙ্গে গেল।'
'কত খরচ হয় মাসে?''
'ব্রেকফাস্টের জন্য? মাসে দু'হাজার টাকা'

এলাম কম্যিউনিটি হলে। সেখানে তখন অপেক্ষাকৃত বড়রা প্রার্থনা করছেন। পুরো হলটার সবকটা দেওয়াল জুড়ে সব ধর্মের প্রতীক চিহ্ন। সর্ব ধর্ম সমন্বয় এখানে চর্চা করানো হয়। ওদের বিশাল বিশাল হৃদয়ের উত্তাপে ওরা হিংসা-গ্লানি-অসম্মান-পরাজয়-কুটিলতার বিষ-পাঁক নীলকন্ঠের মতো শুষে নিতে জানে। নিজেদের বড় শুদ্ধ মনে হচ্ছিল। নিজেদের কাছেই নিজেরা কথা দিয়েছি, ওদের জন্য কিছু একটা করব। কি করব, জানিনা। কিন্তু কিছু একটা করতেই হবে। আপনারাও আছেন  সঙ্গে, বুঝেছি। এরই মধ্যে পেয়েছি সাহয্যের প্রতিশ্রুতি এবং বেশ কিছু চেক  FMR INDIA-র নামে। আরও যাঁরা সাহায্য করতে চান,  FMR-INDIA-র নামে একটা অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক পাঠাতে পারেন,  SWAPAN DEB, 16B RAJA NABA KRISHNA STREET, KOLKATA-700005 -এই ঠিকানায়। চেকের সঙ্গে একটা আলাদা কাগজে আপনার নাম, মোবাইল নং এবং মেল আইডি লিখে দেবেন। পাঠানোর আগে মোবাইলে চেকের একটা ছবি তুলে রাখবেন। চেকে তারিখ বসাবেন না। যাঁর চেক তাঁকে জানিয়েই চেক ব্যাঙ্কে ফেলা হবে।

সঙ্গে থাকার কথা বলতে মনে এল আগামী ১৮ই জুনের কথা। ঐ দিন ৩ আষাঢ়, ১৪২৪ ঋতবাক বর্ষাবন্দনা করবে শোভাবাজার রাজবাড়ীর গোপীনাথ জিউয়ের নাটমন্দিরে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে আর প্রকাশ পাবে ঋতবাকের পাঁচটি বই। আপনারা আসছেন নিশ্চয়ই? 

সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন। 

শুভকামনা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in




সম্পাদকীয়


"যে অক্ষর পুরুষকে আশ্রয় করিয়া

অহোরাত্রাণ্যর্ধমাসা মাসা ঋতবঃ সম্বৎসরা ইতি বিধৃতাস্তিষ্ঠন্তি,

দিন এবং রাত্রি, পক্ষ এবং মাস, ঋতু এবং সম্বৎসর বিধৃত হইয়া অবস্থিতি করিতেছে, তিনি অদ্য নববর্ষের প্রথম প্রাতঃসূর্যকিরণে আমাদিগকে স্পর্শ করিলেন। এই স্পর্শের দ্বারা তিনি তাঁহার জ্যোতির্লোকে তাঁহার আনন্দলোকে আমাদিগকে নববর্ষের আহ্বান প্রেরণ করিলেন। তিনি এখনই কহিলেন, পুত্র, আমার এই নীলাম্বরবেষ্টিত তৃণধান্যশ্যামল ধরণীতলে তোমাকে জীবন ধারণ করিতে বর দিলাম—তুমি আনন্দিত হও, তুমি বরলাভ করো।"

১৪২৪ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশিত হলো ঋতবাক তৃতীয় বর্ষ, নবম সংখ্যা। মানব সভ্যতার সকল সংকটের মহা অবসান সেই মানুষটিকে আশ্রয় করেই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 

"জীবনস্মৃতি অনেক কাল পূর্বের লেখা। তার পরে বয়সও এগিয়ে চলেছে, অভিজ্ঞতাও। বৃহৎ জগতের চিন্তাধারা ও কর্মচক্র যেখানে চলছে, সেখানকার পরিচয়ও প্রশস্ততর হয়েছে। দেখেছি চিত্ত যেখানে প্রাণবান্‌ সেখানে সে জ্ঞানলোকে ভাবলোকে ও কর্মলোকে নিত্যনূতন প্রবর্তনার ভিতর দিয়ে প্রমাণ করছে যে, মানুষ সৃষ্টিকর্তা, কীটপতঙ্গের মতো একই শিল্পপ্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি করছে না।
"মত বদলিয়েছি। কতবার বদলিয়েছি তার ঠিক নেই। ...শেষ দিন পর্যন্ত যদি আমার মত বদলাবার শক্তি অকুণ্ঠিত থাকে তা হলে বুঝব এখনো বাঁচবার আশা আছে। নইলে গঙ্গাযাত্রার আয়োজন কর্তব্য।"

সব সাধনার একতম শেষ পরিণাম... শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন বদলে যাওয়া, প্রতিদিন নতুন মানুষ, নতুন ভাবনা, নতুন 'শিল্পপ্যাটার্নের' প্রবর্তনা... এইভাবেই প্রতিদিন নতুন নতুন সত্যকে উপলব্ধি করা... এটাই জীবন, এটাই এগিয়ে চলা। খুব সঙ্গত কারণেই একটা কথা স্বীকার করা ছাড়া আজ আর উপায় নেই যে, মানুষই সৃষ্টিকর্তা। তাই আজ নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে, ভালো থাকবো, না খারাপ! স্বভাবতই ঋতবাক ভালো থাকাতেই বিশ্বাস করে। ঋতবাকের সঙ্গে সহযাত্রায় আপনারাও ভালো থাকুন, নববর্ষে এই শুভেচ্ছাই জানাই। 

সম্প্রতি এক অনন্য সাধারণ প্রাপ্তিতে ঋদ্ধ হলো ঋতবাক। একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হওয়া গেল সজনীকান্ত সেনের দৌহিত্র, সঙ্গীতসাধক দিলীপ রায়ের(১৯১৭- )। অভিমানী শিল্পীর সঙ্গে কাটানো সেই কয়েক ঘন্টার অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন ভগিনীপ্রতিম কস্তুরী সেন, এই সংখ্যাতেই। ঘটনাচক্রে আগামী ২৯শে এপ্রিল কিংবদন্তী এই শিল্পীর শততম জন্মতিথি। শতায়ু প্রতিভাকে ঋতবাকের শুভেচ্ছা ও প্রণাম। 

নিরন্তর সহযোগিতা ও দীর্ঘ সহযাত্রার কামনায় সম্পৃক্ত হয়ে, ঋতবাকের যাত্রাপথ উত্তরোত্তর মসৃণ হোক, এই প্রত্যাশাই রাখি। 

শুভেচ্ছা নিরন্তর 

সুস্মিতা বসু সিং












0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



বসন্ত এল। লাল পলাশের রঙে রঙে নতুনের ডাক দিয়ে প্রকাশিত হলো ঋতবাক তৃতীয় বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা। 

আচ্ছা, কোনও নতুনই কি এই বসন্তের মতো আপনাআপনি আসে? যাও পুরাতন বললেই কি নতুন খেলা আরম্ভ হয়? এই যে গত ৮ই মার্চে এত মত মতান্তর, নারী দিবস না মানব দিবস তা নিয়ে কথার তুফানের কি সত্যিই প্রয়োজন আছে? শতাব্দী প্রাচীন এই স্মারক দিবসটির ইতিহাস সকলের জানা। সে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু যে কোনও একটি বিশেষ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি দিবস চিহ্নিত করা এবং সেটিকে যুগপৎ নিষ্ঠা ও উত্তেজনার সঙ্গে পালন করার অর্থই হলো বিষয়টি সম্বন্ধে ব্যপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস ও প্রয়োজনীয়তা। আর এই প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই কোথায় যেন নিহিত রয়েছে পুরুষের প্রচ্ছন্ন অহংকার। পৃথিবীতে ‘পুরুষ দিবস’ পালনের প্রয়োজনীয়তা তো কই অনুভূত হচ্ছে না এমন ব্যপক ভাবে? এর কারণ একটাই হতে পারে। ক্ষমতার অসম বন্টন। বারবার দেখা যায় এই 'প্রয়োজন' অনুভব করে তারাই যারা ক্ষমতাবৃত্তের মধ্যে থেকে এই অসাম্যের জন্য একটা অস্বস্তি বোধ করে এবং মোটামুটি স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই এক ধরণের 'রিফর্মেশনের' তাগিদ অনুভব করে। যদি অধিকার থেকেই থাকে তাহলে আজও সেটা অর্জন করার কথা বলতে হবে কেন নারীকে? একটা বিশেষ দিন বরাদ্দ করাটাই তো ফারাককে মনে করিয়ে দেওয়া। একবার ভাবুন, মাধ্যমিকে প্রথম দশের মধ্যে থাকা কোনও ছাত্রীকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম বলে পিঠ চাপড়ানোর প্রবণতা আসে কোন অবস্থা থেকে? অবস্থাটা হলো এই যে সারা বিশ্বে সমগ্র মানবজাতির অগ্রগতির নিরিখে নারীর অগ্রগতির হার এখনও বেশ কম। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বারবার সেটা প্রমাণ করে। একটা উদাহরণই যথেষ্ট হবে। চাষের কাজে সাহায্য, গ্রামাঞ্চলে দূর দূরান্ত থেকে গৃহস্থলীর কাজের প্রয়োজনে জল সংগ্রহ করা, ইঁট ভাটায় সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করার মতো অজস্র কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় ৬৫% বেশী। অথচ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের প্রয়াসে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাসম্পন্ন একজন নারী পারিশ্রমিক এবং দায়িত্বশীল পদাধিকার লাভে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে পুরুষদের তুলনায়। সামগ্রিক সামাজিক সুরক্ষা লাভের অভাবে উচ্চকোটির স্বনিযুক্তি প্রকল্পেও মেয়েদের অংশগ্রহণ দুঃখজনক ভাবে কম। আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চপর্যায়ের অধিকর্তা পর্যায়ে মেয়েদের কাজ পাওয়ার অধিকার এখনও মাত্র ২৫%। সমাজের অন্যান্য স্তরে মেয়েদের বহুল চর্চিত বঞ্চনার বিবরণে আর নাই গেলাম। সচেতনতা বেড়েছে, নিঃসন্দেহে। কিন্তু, সচেতনতা বাড়ার অর্থ কি শুধুই জ্ঞান সংগ্রহ, মোমবাতি মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন আর ফেসবুক-ট্যুইটারে পাতা ভরানো? এখনও যদি ঘুম না ভাঙ্গে, তাবে আর কবে? আমার সন্তানকে কোন্‌ মুল্যবোধ, কোন্‌ বাসযোগ্য পৃথিবীর উত্তরাধিকার দিয়ে যাবো, সে কথা ভাবার সময় কি এখনও আসেনি? আর শুধু ভেবে ভেবে বসে থাকাই বা কেন? আসুন না, হাতে হাত মিলিয়ে সক্রিয় প্রয়াস ও সদ্‌ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সম্মার্জনাকে জীবনচর্চার প্রাসঙ্গিক অন্তরঙ্গ সঙ্গী করে তুলি! আলাদা করে নারী বা পুরুষ নয়, সসম্মানে মানুষ হিসাবে মিলে মিশে ভালো থাকা কি নিতান্তই অসম্ভব?

এই মাস আমাদের এক অপূরণীয় ক্ষতিও করেছে। পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন প্রিয় গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। বন্ধ হয়ে গেল লোকসঙ্গীত চর্চা ও গবেষণার এক ধারা। 

তবুও বসন্ত আসে, নতুনের নিশান ওড়ায়, আমরা বসন্ত উৎসব করি।

ঋতবাকের বসন্ত-উদযাপন এবার হলো দিল্লীতে। বেঙ্গল অ্যাসোশিয়ন আয়োজিত দিল্লী বইমেলায় ১৪ই মার্চ থেকে ১৯শে মার্চ পাঠকের রঙ ছড়ানো মনে খুঁজে পেলাম বসন্তকে। সঙ্গে ছিলেন ঋতবাক পরিবারের দিল্লিবাসী আত্মজনেরা।

স্বস্থ থাকুন। সুস্থ থাকুন। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


সমিদ্ধম্ অগ্নিং সমিধা গিরা গৃণে। 

আমার বাণীর সমিধে যে অগ্নি জ্বলে তাকে বন্দনা করি। 

এই বন্দনাই সেই তপ যা ঘনীভূত হয়ে হৃদয়ে জন্ম নেয় আলোকবিহগী বাক্। তারপর তার যাত্রা আরম্ভ। আলো থেকে আলোতে, লৌকিক চেতনা থেকে লোকোত্তর চেতনায়, বৈখরী থেকে পশ্যন্তীতে। মাতৃভাষার ধ্বনি স্রোত থেকে জেগে ওঠে বিশ্বভাষা পরাবাক্। তাই ঋতবাক অর্চনা করে তার মাতৃভাষাকে। 

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একবার আপনার, আমার মাতৃভাষা বাংলার দিকে তাকাই আসুন। আমরা বাংলা গদ্যকে নিয়ে ভাবছি এই মুহূর্তে। কারণ, আমরা গদ্যেই ভাব বিনিময় করে থাকি। ১৫৫৫ সালে অহোমরাজকে রাজা নরনারায়ণ মল্লদেবের লেখা পত্রটি লিখিত বাংলা গদ্যের আদিতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এবং এর ভাষা বোধগম্যও : 'লেখনং কার্যঞ্চ [।] এথা আমার কুশল [।] তোমার কুশল নিরন্তরে বাঞ্ছা করি [।]...' 

তবু, আমরা ১৮০১ সালটিকে বেশী গুরুত্ব দেব। কারণ ঐ বছরই বাঙালীর লেখা প্রথম বাংলা বই প্রকাশ পায়। মিশনারী বাংলাকে আলোচনায় না আনার কারণ তাঁদের বাঙলা যতটা না ধর্মপ্রচারের মাধ্যম ততটা ভাষা বা সাহিত্য চর্চার নয়। উইলিয়ম কেরির বিচিত্র বাংলা যে তৎকালীন বঙ্গীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়েরও অস্বস্তির কারণ হয়েছিল এবং কোনওভাবেই যে তা বাংলা ভাষার বহমানতার অংশ বলে পরিগণিত হতে পারে না, ঋতবাকের এই সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। অতএব, রামরাম বসু বা মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বাংলা গদ্য দিয়েই বাংলা গদ্যের পথচলা শুরু। দুটি উদাহরণ দিই। 

১) পরে রাজা বিক্রমাদিত্য ও বসন্তরায় ও প্রতাপাদিত্য তিনজন এক নিভৃত স্থানে যাইয়া বসিলে রাজা বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন পুত্র কি সমাচার আসিবামাত্রেই কিমার্থে এমত ২ আচরণ করিলা। (রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র। রামরাম বসু। ১৮০১) 

২) যদি কাহারও কোন দ্রব্য হারায়, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাকে দেওয়া উচিত; আপনার হইল মনে করিয়া লুকাইয়া রাখিলে চুরি করা হয়। (বোধোদয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৫১) 

ঠিক পঞ্চাশ বছরের ব্যবধান। কোথা থেকে কোথায় এসেছে বাংলা গদ্য! অন্য যে কোনও ভাষায় যে পরিবর্তন আসতে সময় লাগে দু'তিন শতাব্দী, বাঙলায় তা এসেছে মাত্র অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে। বাংলা ভাষা তাই বিশিষ্ট। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ঝরা রক্তের তিলক কপালে এভাষা সযত্ন পরিচর্যার দাবী রাখে। ঋতবাক এ দাবী মানে। আপনারাও। 

সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। মাতৃভাষাকে যাপনে এনে স্বস্থ থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর

0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


অবিন্দদ্ দিবো নিহিতিং গুহানিধিং 
বের্ ন গর্ভং পরিবীতম্ অশ্মনি --
অনন্তে অন্তর্ অশ্মনি। (ঋকবেদ)

পেয়েছিল খুঁজে গুহাতে লুকোনো কোন দ্যুলোকের ধন
বিহগগর্ভ যেন বেষ্টিত পাথরে
অননন্ত গভীর কঠিন পাথরে।

ঋতবাক এই গুহায় নিহিত মণিরত্নেরই সন্ধান করে নিয়ত। এবং খুঁজে পায়ও। 'এসো গল্প লিখি' প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। আর ঋতবাক পেয়েছে ছটি দ্যুতিময় রত্নখণ্ড। ছটি ছোটগল্প। আপনাদের সভায় ঋতবাক সদর্পে এনে হাজির করছে ছটিকেই। ঋতবাকের জানুয়ারী সংখ্যাকে আপনারা অনায়াসে গল্প সংখ্যা বলে ডাকতে পারেন।

এই রত্নসন্ধান প্রয়াসে ঋতবাক খোঁজ পেয়েছে আরও চোদ্দটি নানারঙের মণি-মাণিক্যের। এদেরকে দু'মলাটের মধ্যে আনতেই হলো। চোদ্দটি গ্রন্থ নির্মাণ করল ঋতবাক পাবলিকেশন। এবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় এই সব রত্নের ডালি নিয়ে ৩৩৩ নম্বর স্টলে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবে ঋতবাক। থাকছে ঋতবাক মুদ্রণ সংখ্যা (দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা)ও।জানি আপনারা আসবেনই।

আজ, ২১শে জানুয়ারী, ২০১৭। আজই বেলা সাড়ে চারটের সময় শোভাবাজার রাজবাড়ী (ছোট তরফ)তে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ লাভ করবে ঋতবাক মুদ্রিত সংখ্যা। প্রকাশ করবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভাবাজার রাজবাড়ী (ছোট তরফ) ও ঋতবাক যৌথভাবে সম্বর্ধনা জানাবে ২০১৬র সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার বিজয়ী নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ীকে। উপস্থিত থাকবেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, অমিত ভট্টাচার্য্য, বিশ্বনাথ রায়, সৈয়দ হাসমত জালাল, কালীকৃষ্ণ গুহ, অমর মিত্র, বিকাশ গায়েন প্রমুখ বুধমণ্ডলী। 

২০১৬র শেষ লগ্নে কবি শঙ্খ ঘোষ পেলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। ঋতবাকের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে কবিকে জানাই হার্দিক অভিনন্দন ও গভীর শ্রদ্ধা। খুব ভালো থাকুন, স্যার।  

আজ এই পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর

সুস্মিতা বসু সিং

 



0

সম্পাদকীয়

Posted in




সম্পাদকীয়


যুবাং চিদ্ হি ষ্ম অশ্বিনৌ অনু দ্যূন্
বিরুদ্রস্য প্রস্রবণস্য সাতৌ।
অগস্ত্যো নরাং নৃষু প্রশস্তঃ
কারাধুনীব চিতয়ত্ সহস্রৈঃ। (ঋক্ বেদ)

রুদ্রনিনাদে ঝরঝর ঝরে বিপুল প্রস্রবণ
তাকে জিনে নিতে, ওগো অশ্বীরা, অনুদিন, অনুখণ
জাগিয়ে তুলতে তোমাদের ডাক দিয়েছে শঙ্খস্বনে
লোকবিশ্রুত এই অগস্ত্য শতসহস্র গানে। (অনুঃ গৌরী ধর্মপাল) 

বেদ যাকে প্রস্রবণ বলছে তা হ'ল কথার নির্ঝর। গানের ঝরণা। কথাসাহিত্যের উৎসমুখ এই সুরলোকে পৌঁছতে হয় সুরেরই পথ ধরে, গানের সরণী বেয়ে। বেদ সে পথকে বলে গাতু। গীতিপথ। ঋষি অগস্ত্য তাঁর বোধনসঙ্গীতে জাগিয়ে তুলতে চান রচয়িতার অন্তঃস্থিত ঋতবানের যুগল মূর্তিকে। তাঁরা জাগ্রত হ'লে সৃজনবাহনে সওয়ার হয়ে স্রষ্টা এসে পৌঁছবেন কথাপারাবারের তীরে। সেই অনাদ্যন্ত বারিধিতে ডুব দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে তিনি মিশিয়ে দেবেন চিরনবীকৃত সৃজনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে। প্রাতিস্বিকতাকে ছাড়িয়ে এক সর্বত্রব্যাপী সৃষ্টিসুখের আনন্দধারার অংশ হয়ে তাঁর গান হয়ে উঠবে অপৌরুষেয়। 

ঋতবাকও সেই চিরন্তন সৃজনলোকের সন্ধানী। সে জানে আগামীতে যখন ব্যক্তি স্রষ্টার স্মৃতিও বিলুপ্ত হবে তখনও তিনি রয়ে যাবেন ঋতবাকের সঙ্গে অদ্বয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। তাঁর ঋত বাক্ হবে অপৌরুষেয়। 

উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে যে তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে সমর সেনকে কথাশরীরি অস্তিত্ব দান প্রকল্পে যোগদান করেছে ঋতবাকও। সমর সেন এখন আর কোনও ব্যক্তির নাম নয়। তিনি এখন শব্দসৃজিত বিশ্বের অংশীভূত। তাই তাঁর উচ্চারণ অপৌরুষেয়। 

সকলে ভালো থাকুন। সৃজনে থাকুন।।
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়




সময় স্থির নয়। ঘটনা পরম্পরাও অ্যাবসার্ড নাটককে মনে পড়াচ্ছে মাঝে মাঝে। যেমন সদ্য ঘটে যাওয়া কালা ধন সফেদ করার কর্মকাণ্ড। একটা বিষয় লক্ষ্য ক'রে অবাক না হয়ে পারিনি। চূড়ান্ত অসুবিধের মধ্যে পড়েও মানুষ দিব্যি ঠাট্টা, তামাসা করছে তা নিয়ে। লিখছে চুটকি, আঁকছে কার্টুন। রবীন্দ্রনাথের কথা মনে এল। পঞ্চভূত প্রবন্ধাবলীতে তিনি বলেছেন, কৌতুক সুখের আতিশয্য নয়। হঠাৎ অসঙ্গতি, বিড়ম্বনা বা লজ্জার পীড়া থেকেই উঠে আসে কৌতুক। হাসির আড়ালে একরকম নিয়মভাঙার আমোদ থাকে। লুকোনো থাকে নিয়মতান্ত্রিকতাকে পরিহাস। কৌতুকরস রসাভাস থেকে সৃষ্ট। আমরা দন কিহোতের হাওয়াকলের দিকে বর্শা তুলে ঘোড়া ছোটানো দেখে হাসি। কারণ, বীররসাভাস। কোনও সদর্থক পদক্ষেপ না ক'রে নিরন্নের দুঃখে চোখের জল ফেলা দেখে আমরা হাসি। কারণ, করুণ রসাভাস। ‘আমি প্রণত - আমি ভক্ত’ ব'লে ভৈরব হুংকারে আমরা হাসি। কারণ শান্ত রসাভাস। আমরা হাসি। হেসে চলি। আর সেই মানুষটিকে স্মরণ করি এই গত মাসের তিরিশ তারিখে যাঁর জন্মদিন গেল। ইচ্ছে হয় ডেকে ব'লি, "মশাই গো, নেমে আসুন। ঋতবাককে উপহার দিন আর একটা আবোলতাবোল বা হযবরল। আপনাকে বড় দরকার এখন।" 

ঋতবাক সত্যকথা বলে। সত্যপথে চলে। আর সত্য আর ঘটে চলা ঘটনাবলীর অসংগতি দেখে হাসে। হাসছে। ভবিষ্যতেও হাসবে। আপনারাও থাকুন হাস্যমুখে, হাস্যসুখে।

শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in




সম্পাদকীয়


দীপাবলী আসছে। আসছে আলোর উৎসব। কিন্তু আমি যেন কোথাও আলো দেখতে পাচ্ছি না। অদ্ভুত এক আঁধার ঘিরছে চারিপাশ। বধূ নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় যুবক ছুরিকা বিদ্ধ, প্রেমিককে সুপারি দিয়ে স্বামীকে খুন করানো, যৌন হিংসা, গার্হস্থ্য হিংসা ...এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা? সমস্ত সত্তা যেন ফাঁদে পড়া পাখির মত ছটফটাচ্ছে। আর্ত চীৎকারে ফেটে পড়তে চাইছে আমার স্বর: 

অপ ধ্ব্যন্তম্ ঊর্ণুহি পূর্ধি চক্ষুর্
মুমুগ্ধি অস্মান্ নিধয়েব বদ্ধান্।

---অন্বকারের জাল সরিয়ে আলোয় ভরো চোখ, আমরা জালে আটকানো পাখি, মুক্ত করো আমাদের। 

শক্তিরূপিণী দেবী কালিকাকে প্রলয়ঙ্করী রূপে আবির্ভূতা হতে দেখতে চাইছে ইচ্ছা। বিনাশ -- বিনাশ চাইছে সমস্ত অশুভের। দেবীকে তাঁর মহারুদ্রী, প্রচণ্ডা রূপে বন্দনা ক'রে মন বলতে চাইছে: 

কলনাৎ সর্ব্ব ভূতানাং মহাকালঃ প্রকীর্ত্তিতঃ।
মহাকালস্য কলনাৎ ত্বমাদ্যা কালিকা পরা।।
কালসংগ্রসনাৎ কালী সর্ব্বেষামাদিরূপিণী।
কালত্বাদাদিভূতত্বাদাদ্যা কালীতি গীয়সে।।

পরক্ষণেই বুঝতে পারছি এ আমার প্রতিহিংসাকামীতা। হিংসার বিরূদ্ধে হিংসাকে ব্যবহার করলে তার অন্ত ঘটে না কখনও। তা কেবল বেড়েই চলে। আর, আমি কে বিচারের ভার নেওয়ার? কোনও না কোনও অন্যায় কি এই মরদেহও করে নি? 

অব দ্রুগ্ধানি পিত্র্যা সৃজা নো
অব যা বয়ং চকৃমা তনূভিঃ। 

----আমায় মুক্ত কর পিতৃপিতামহ থেকে প্রাপ্ত দ্রোহ থেকে, মুক্ত করো এই শরীর যে অন্যায় করেছে ,তার থেকেও দাও মুক্তি।

এই তীব্র প্রক্ষোভ মনে নিয়েই মাসির বাড়ী থেকে রওনা দিয়েছিলাম ঘরের দিকে উবের ক্যাবে সওয়ার হয়ে। একটা ছেলে - হ্যাঁ প্রায় আমার ছেলের বয়সী - গাড়ী চালাচ্ছে। হঠাৎ সে প্রশ্ন করল, "ম্যাম্ আপনি কী এখান থেকে কোথাও চলে যাচ্ছেন?" 

---"হঠাৎ এ প্রশ্ন?" 

অপ্রস্তুত হাসি হেসে সে বলল, "না, মানে, আপনার হাতে বড় বড় দুই ব্যাগ ভর্তি জামাকাপড় দেখছি কী না..." ভারী ভদ্র বাচনভঙ্গীটি। 

---"এগুলো পুরনো সব। এক NGO তে যাবে। যে সব বাচ্চার মা বাবার তাদের পুজোর জামা দেওয়ার সাধ্য নেই তাদের জন্য।" 

খানিক স্তব্ধতা। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে ছেলেটা আপন মনেই ছাড়া ছাড়া ভাবে বলতে লাগল: 

"ভগবান আপনাদের ভালো করবেন ম্যাম্। ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। একটা ছেঁড়া জামাও কেউ দেয়নি আমায় বা আমার বোনকে। বাপ মা মরে গেল, কাকা বোনটার সঙ্গে অসভ্যতা করল। বাড়ী ছেড়ে চলে এলাম। হার মানি নি, ম্যাম্। আর্ট কলেজে চার বছর পড়েছি। কলকাতা পুলিশের যে অ্যাডগুলো হয় না, ওগুলোর ড্রয়িংটা করি।  এখন বি.ফার্মা পড়ছি যাদবপুরে। সকাল বেলা একটা তরকারি বসিয়ে দু'ঘন্টা পড়ি। তারপর খেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। পথে দু'একটা ট্রিপ সেরে ইউনিভারসিটি। সাড়ে চারটে পর্যন্ত। তারপর থেকে রাত বারোটার মধ্যে চোদ্দটা ট্রিপ সেরে বাড়ী গিয়ে আবার পড়তে বসি। বোনটা জোকা আই.আই.এম. এ পড়ে। ফাইনাল ইয়ার। প্লেসমেন্টও হয়ে গেছে। তিনটে সিমেস্টার মিলিয়ে মোট ২৪ লাখ টাকা। দিতে পেরেছি ম্যাম্। এখন ও চাকরিটা পেয়ে গেলেই আমার ছুটি। বাবা নেই, বাবার কাজটুকু করে দিয়েছি। এরপর ও আমায় ভুলে গেলেই ভালো।"

ভবানীপুর এসে গেল। আমায় বাড়ীর সামনে নামিয়ে ছেলেটা চলে গেল। ওর নামটাই জানা হয় নি। তাতে কিছু এসে যায় না। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে আমার চিত্ত এখন ঝলমলাচ্ছে। কান্নার আকাশ পেরিয়ে এসে পৌঁছেছে আলোকবিহঙ্গ সুপর্ণ। আলোর ভাষায় আকাশ ভরল ভালোবাসায়। আমি সেই আদিত্যবর্ণ পুরুষের দেখা পেয়েছি। 

ন দক্ষিণা বি চিকিতে ন সব্যা
ন প্রাচীনম্ আদিত্যা ন - উত পশ্চা।
পাক্যা চিদ্ বসবো ধীর্যা চিদ্
যুষ্মা নীতো অভয়ং জ্যোতির্ অশ্যাম্।

ডানও জানিনে, জানিনে কো বামও
পুব না, বসুরা, নয় পশ্চিমও
যাব সেই পথে, হে আদিত্যেরা,
নেতা -- নিয়ে যাবে যেখানে তোমরা
বুঝেই হোক বা না বুঝেই হোক
পেতে চাই সেই অভয় আলোক।।

ঋতবাকের সকল স্বজনকে জানাই আসন্ন দীপাবলীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।



2

সম্পাদকীয়

Posted in



সম্পাদকীয়


আমরা শুনি, সব কিসু ব্যাদে আসে। অর্থাৎ, প্রশ্নহীন আনুগত্য, অচলায়তনের সাধনা এবং বেদ সমার্থক। কারণ? বেদ অপৌরুষেয়। খোদ ভগবানের বাণীকে প্রতিধ্বনিত করেছেন দ্রষ্টা ঋষিরা। 

আমরা বলি, এর চেয়ে অপব্যাখ্যা আর কিছু হতে পারে না। কারণ অপৌরুষেয় কথার অর্থ হলো নিজের তুচ্ছ ব্যক্তিত্ব ছাপিয়ে যাওয়া। ছোট 'আমি'কে ছাড়িয়ে এক অমৃতময় বিশাল 'আমি'র সঙ্গে এক হওয়া। শিল্পী, কবি, সঙ্গীতসাধক, অধ্যাত্মসাধক, সকলেই নিজের মত করে অপৌরুষেয়কে প্রকাশ করতে পারেন সাধনায় সিদ্ধিলাভের পর। তখন তাঁরা এই সীমাবদ্ধ পৃথিবীর মধ্যে, সীমায়িত জীবনের সমস্ত স্খলন, গ্লানি, ত্রুটি, কুশ্রীতা, যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে চলতে চলতে অসীমের আপন সুর শোনেন। সেই অনন্ত, অপারকে নিজের মধ্যে প্রকাশিত হতে দেখেন। 

তে ইদ্ দেবানাং সধমাদ আসন্। 
ঋতাবানঃ কবয়ঃ পূর্বাস্যঃ।। 

পূর্ব কবিরা ছিলেন ঋতবান্, সৃষ্টির মূল সুরের দোহার, দেবতারা তাঁদের আনন্দসখা। এঁরা আমাদের পিতৃপুরুষ। এঁদের উচ্চারিত বাক্-এর অমোঘ ঋতরূপকে উচ্চারণ করতে চায় ঋতবাক। ঋতবাক ছুঁতে চায় মানুষের মধ্যের অগ্নিকে। রক্ষা করতে চায় তাকে। সে বারংবার বলে, অগ্নিমীড়ে পুরোহিতম্। ঋতবাক বিশ্বাস করে একজন কবি লেখক তখনই সার্থক হন যখন তিনি সত্যমন্ত্র। আর একমাত্র এই সত্যেরই কাছে সে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতার জন্য ঋতবাক মূল্য দিতেও প্রস্তুত। তার আপনজনে ছাড়লে তাকে সে বলে ভাবনা করা চলবে না। বন্ধ দুয়ার যদি বারে বারে ঠেলেও না খোলে তবু সে হার মানবে না। আড়াল সরিয়ে সরিয়ে সে খুঁজবে সত্যকে - যাকে অন্ধকার ঢেকে রাখে, আর ঢেকে রাখে আলোও! 

ঋতেন ঋতম্ অপিহিতিং ধ্রুবং বাম্  

ঋত দিয়ে ঢাকা আছে মহাঋত। তার সমস্ত স্বজন, শুভৈষী, সমপ্রাণ সখাদের সঙ্গে নিয়ে ঋতবাকের যাত্রা সেই সুদূরের দিকে যেখানে বাণীর ধারা হৃদয় সমুদ্র থেকে সতত উৎসারিত হয়। ঋষি কবির সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে তাই সে বলতে চায়: 

এতা অর্ষন্তি হৃদ্যাত্ সমুদ্রাত্ 
শতব্রজা রিপুণা নাবচক্ষে।
ঘৃতস্য ধারা অভি চাকশীমি
হিরণ্যয়ো বেতসো মধ্যে আসাম্ 

"একশো হয়ে আসছে ধেয়ে উজল রসের ধারা 
হৃৎ-পারাবার হতে আমার --- শত্রু কী তার জানে? 
মধ্যিখানে দুলছি আমি সোনার বেতস পারা 
চেয়ে চেয়ে দেখছি ওদের পানে।" [অনুবাদ : গৌরী ধর্মপাল]

শারদীয়ার প্রাক্কালে সমস্ত ঋতব্রতীকে ঋতবাকের আলোছোঁয়া শুভেচ্ছা। সকলে সুস্থ থাকুন, স্বস্থ থাকুন, সত্যকে ধারণ করে রাখুন।।




ঋণস্বীকার - সুহোত্র
1

সম্পাদকীয়

Posted in


ছবি - পল্লববরন পাল

সম্পাদকীয়



রবিপ্রদক্ষিণপথে জন্মদিবসের আবর্তন...

তেমনভাবে ধরতে গেলে ৩০শে অগস্টই ঋতবাকের জন্মদিন। ২০১৪ সালের ওই দিনই ওয়েবের পাতায় প্রথম প্রকাশ। তৃতীয় বছরের শুরুতে একেবারে নতুন বহিরঙ্গ সজ্জায় ‘নবরূপে ঋতবাক’। বয়স বাড়ছে, সঙ্গে দায়িত্বও। ভরসা ঋতবাকের রত্নসভার সহযাত্রী বন্ধুরা, আন্তরিকতায় যাঁরা খাঁটি সোনা দিয়ে বাঁধানো। এমনই বেঁধে বেঁধে থাকি যেন চিরকাল। 

গত ২৯শে জুলাই ছিলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবস। মেয়েদের জন্য যে এই মানুষটি কতকিছু করেছেন, ভাবলে কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে মন। এই সংখ্যায় রইলো এই মহামানবের প্রতি ঋতবাকের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য। 

আর ছিলো সেই এক দাড়ি বুড়োকে স্মরণ করার দিনও... যাঁর কথা বলতে গিয়ে উত্তর আধুনিক কবিও বলেন –

গানের সুরের আসনখানি পাতলে পথের ধারে, 
গানের ভিতর দিয়ে দেখাও জীবন আপামরে... 
সুর ভুলে যেই বেড়াই ঘুরে তুচ্ছ কোন কাজে, 
উধাও আকাশ, উদার ধরা হঠাৎ বুকে বাজে... 
তখন ভাবি সুরেই বাজে এই অকাজের প্রাণ, 
হেথায় থাকা শুধু বোধহয় গাইতে তোমার গান... 
এখনও কি ভাবো তুমি, হয়নি সে গান গাওয়া, 
ঢালা গানের স্বপ্নমালা বৃথাই হলো চাওয়া... 
খেলার ছলে সাজালে যে ঐ গানেরই বাণী, 
স্রোতের লীলায় ভাসালে যে দিনের তরীখানি...

-এই বুঝি ভালো। গঙ্গা জলেই গঙ্গা পুজো...


এরই মাঝে ‘না ফেরার দেশে’ চলে গেলেন ‘ফ্যাতারু’র মা। একটা পরিবারের তথা একটা যুগের অবসান। ভালো থেকো, তুমি অনির্বাণ উলগুলান...

ঋতবাক ৩য় বর্ষ, ২৫তম সংখ্যা থেকে শুরু হলো গ্রন্থ সমীক্ষা বিভাগ – বইঘর। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাহচর্যই ঋতবাকের একমাত্র পাথেয়। 

সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় ঋতবাকের যাত্রা পথ আরও মসৃণ ও সুগম হোক।

শুভেচ্ছা নিরন্তর

সুস্মিতা বসু সিং


1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



পূর্ণ করে আপনাকে সে দেবে,
রসের ভারে তাই সে অবনত...

আজ ২১শে জুলাই, ২০১৬। প্রকাশিত হলো ঋতবাক ২য় বর্ষ, ২৪তম সংখ্যা। পূর্ণ হলো দ্বিতীয় বর্ষ অতিক্রমণ। এই দুই বৎসরের যাত্রাপথ যে পুরোটাই মসৃণ ছিল, তা নয়। উপল বন্ধুর পথে বার বার হোঁচট খেতে খেতে এগিয়ে চলা। বার বার ভুল, আবার ভুলের মধ্যে দিয়েই ঠিকটাকে চিনে নেওয়া। অনেক বন্ধু এসেছেন, সাথে চলেছেন। আবার ত্যাগও করেছেন অনেকেই। তবু চলা থামেনি। আজ সঙ্গে পেয়েছি এমন সব বিশিষ্ট বিদ্বদ্জনদের, সহযাত্রী বন্ধুদের, যে তাঁদের আন্তরিকতার পূর্ণ মর্যাদা দিতে সামনে এগিয়ে চলা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। কৃতজ্ঞতা জানবেন সকলে। 

আগেও বহুবার বলেছি, আবারও বলছি, ঋতবাক ওয়েব ম্যাগাজিন নিয়ে অনেক স্বপ্ন, সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দায়ও আমাদের-ই। বিগত কুড়ি বছরের ওয়েব ম্যাগাজিনের অগ্রগতির ইতিহাস আমাকে আশান্বিত করে। প্রাকৃতিক এবং সমাজতাত্ত্বিক কারণেই মানব সভ্যতা রক্ষার প্রয়োজনে একদিন অবশ্যম্ভাবীভাবেই প্রিন্টেড ম্যাগাজিনের তুলনায় ওয়েব ম্যাগাজিনগুলির প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। সে ভবিষ্যৎ বিশেষ দূরে নয়। আর সেদিন যাঁরা ইতিহাসের এই বিবর্তনের মূল্যায়ন করবেন, অনিবার্য ভাবেই ঋতবাক-এর নাম তাঁদের উল্লেখ করতেই হবে, আমি নিশ্চিত।

শ্রাবণের এই দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা অনিবার্যভাবেই উৎসর্গীকৃত হলো সেই সে মহামানবটিকে স্মরণ করে, যাঁকে বাদ দিলে আজও বাঙালী অস্তিত্বসঙ্কটে বিব্রত বোধ করে। মৃত্যুতেও যেন তিনি বিজয়ী বীর... আসলে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণ, দুপুর বারোটা দশ – সেদিন সেখানে পড়ে রয়ে গিয়েছিল তো শুধু সেই নশ্বর আধারটুকুই... বাকি সমস্তটাই কী আজ এই নিদারুণ অস্থিরতার সঙ্কট মুহূর্তেও প্রবল প্রাণপ্রাচুর্যে সর্বব্যাপী অস্তিমানতা নিয়ে বিরাজিত নয়? আজও তো তিনি বাঙালীর বিপন্নতার শেষ আশ্রয়। যুগ বদলেছে, বদলেছে প্রজন্ম, আর তার সাথে দৃষ্টিভঙ্গী এবং গ্রহণীয়তাও। অন্যভাবে আছেন, তবু আছেন – উত্তর আধুনিক কবির ভাষায় ‘ভিতর বাহিরে, অন্তরে অন্তরে...’ তাঁর আসন কোনও দিনই শূন্য হয়নি, যে পূর্ণ করতে হবে! 

এদিকে ঋতবাক সাহিত্যপত্রের যুগপৎ অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ সজ্জার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত। এখন থেকে ব্লগের লেখা ফেসবুক, ট্যুইটর, গুগল প্লাস বা যেখানে খুশি শেয়ার করা যাবে সরাসরি লিঙ্কে ক্লিক করেই। মুদ্রণ সংখ্যার লেখা নির্বাচন পর্ব প্রায় শেষের পথে। গল্প প্রতিযোগিতায় অভূতপূর্ব সাড়া। ঋতবাক পাবলিকেশনেও বন্ধুদের বই ছাপার কাজ চলছে জোরকদমে। সবচেয়ে বড় খবর, ব্লগের উপদেষ্টামণ্ডলীকে সমৃদ্ধ করলেন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ সুদিন চট্টোপাধ্যায় ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী বিভাগীয় প্রধান চিন্ময় গুহ। ঋতবাক ঋদ্ধ হলো। 

আরও খবর, ঋতবাকের সর্বকালীন ইতিহাসে সম্ভবত জনপ্রিয়তম ধারাবাহিক ‘আমার বারুদবেলা’র প্রথম পর্ব শেষ হলো এই দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যাতেই। লেখক স্বপন দেবের কাছে অনুরোধ – দ্বিতীয় পর্বের ডালি নিয়ে ফিরে আসুন খুব শিগগিরি (জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, লেখক চলেছেন সুদূর বিদেশে পৌত্র সন্দর্শনে – এ বড়ো অপ্রতিরোধ্য অমোঘ টান)। এই সংখ্যা থেকেই শুরু হলো রাজর্ষি পি দাসের ধারাবাহিক উপন্যাস ‘ফেরা’। 

ঋতবাকের নিয়মিত বিভাগগুলিও যথারীতি ভরে উঠেছে অজস্র ভালো লেখায়। এমনই নিরন্তর সহযোগিতা ও দীর্ঘ সহযাত্রার কামনায় সম্পৃক্ত হয়ে ঋতবাকের যাত্রাপথ উত্তরোত্তর মসৃণ হোক, এই প্রত্যাশাই রাখি।



শুভেচ্ছা নিরন্তর

সুস্মিতা বসু সিং

1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



ওরে মন, পৃথিবীর গভীর - গভীরতর
                         অসুখ এখন। 

-বিমল ঘোষ 


আমাদের ফাল্গুনীদা মানে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় – এই প্রবাদপ্রতিম প্রবীণ ব্লগার, সাহিত্যব্রতী, বৃদ্ধ-যুবক মানুষটিই কেমন যেন ঋতবাক ২য় বর্ষ, ২৩তম সংখ্যার সম্পাদকীয়র সুরটি বেঁধে দিলেন তাঁর প্রচ্ছদ নিবন্ধে। সত্যিই ‘পৃথিবীর গভীর – গভীরতর অসুখ এখন’। বিবেকহীন দুর্বিনীত অশালীন ঔদ্ধত্যে উন্মত্ত পৃথ্বী... শিক্ষাও মানুষকে নম্র হতে, ভদ্র হতে শেখায়না আজ। আসলে শিক্ষা মানে তো শুধু অনেকখানি পড়ে নেওয়া নয়! শিক্ষা মানে সেই লব্ধ জ্ঞানকে হৃদয়ঙ্গম করা, আত্মস্থ করা। তেমনটা আর হচ্ছে কই! মুখে বলা আর কাজে করা – দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। যৌক্তিকতার বালাই নেই। সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই। বিবেকদংশন নেই। আত্ম অহংকার আছে, আত্ম সম্মান নেই। ক’টা টিশার্ট আছে, ক’জোড়া জুতো আছে, ক’টা GF/BF আছে, ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে, – সেই হিসেব নিয়েই ব্যস্ত। বেশ আছে কিন্তু! খাই-দাই কাঁসি বাজাই-গোছের স্ট্যাটাস। এরাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম – দেশের আগামী ইতিহাস নাকি এরাই রচনা করবে!! 

এত নৈরাশ্য, তবু আশার কথা তো শোনাতেই হবে, আশা নিয়েই তো বেঁচে থাকা। সেই ভরসার কথাটি হলো, এখনও বেশ কিছু সমপরিমান মান ও হুঁশ সমন্বিত সামাজিক প্রাণী রয়েছেন ভারসাম্য রক্ষার জন্য। আর তাই আজও সৌভ্রাতৃত্ববোধ আছে। শ্রদ্ধা আছে। প্রেম আছে। আছে কদম কেশর আর বকুল বিছানো পথ। আছে সপ্তপর্ণীর মাতাল করা সৌরভ। ভোরের স্নিগ্ধ আকাশ আছে, দীর্ঘ দগ্ধ অপরাহ্ণের বিষণ্ণতা আছে, বৃষ্টির শব্দ মুখরিত বিনিদ্র রাত্রি আছে। অহংকারী বলে, আমার কিছু পাওয়ার নেই, আমি শুধু দিতে চাই। আমি বলি, বিপুলা এই পৃথিবীকে কি-ই বা দেওয়ার আছে আমার! বরঞ্চ পাওয়ার আছে অনেক কিছু – রূপ রস গন্ধ বর্ণ – প্রেম প্রীতি – শ্রদ্ধা ভালোবাসা – কাব্য গীতি ... আরও আরও কত কিছু – অজস্র অফুরান...! নিত্য নৈমিত্তিক দিনযাপনের রুক্ষ রণক্ষেত্রকে এরাই তো মসৃণ করে রাখে। এ তত্ত্ব হয়ত ‘অ-সাধারণ’-এর বোধের অতীত। আমি বড় ছাপোষা, বড় সাধারণ। আমি জীবনকে এই ভাবেই দেখি। আর তাই তো আমার পৃথিবীটা আজও বড় সুন্দর, বড় প্রতিশ্রুতিময়! একজন্মে যেন সবটুকু পাওয়া হয় না – বার বার ফিরে ফিরে আসতে ইচ্ছে হয়! 

আচ্ছা, হয়েছে! অনেক দার্শনিক তত্ত্ব কথা হলো। এবার কিছু জাগতিক ইনফো দেওয়া যাক। উৎকর্ষের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ঋতবাকে অফিশিয়ালি সংযোজিত হলেন আরও কিছু বিশাল মাপের রত্নখচিত ব্যক্তিত্ব। ঋতবাক ঋদ্ধ হলো। ওদিকে ঋতবাক পাবলিকেশন বন্ধুদের বই ছাপার জন্য পুরোমাত্রায় প্রস্তুত। এদিকে আবার ঋতবাক বার্ষিক সংকলনে লেখা মনোনয়ন পর্বও শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনারা তো জানেনই, লেখা নির্বাচনের বিচার্য মাপকাঠি লেখার গুণগত মান, বানান বিধির বিশুদ্ধতা, রচনাশৈলী, বিষয়গত সারবত্তা এবং অবশ্যই বক্তব্যের যুক্তিগ্রাহ্য স্বচ্ছতা। তাই ভালো লেখা পাঠান অনেক অনেক।

আরে, লেখা পাঠানোর কথায় মনে পড়লো, ঋতবাকে ঘোষিত হয়েছে গল্প প্রতিযোগিতা – ‘এসো গল্প লিখি’। সেখানেও তো পাঠাতে হবে গল্প! সাবজেক্টে ‘বিষয় – এসো গল্প লিখি’ - লিখে RRITOBAK@gmail.com – এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন ন্যুনতম ৭০০ শব্দের গল্প, শেষ তারিখ ১৫ই জুলাই, ২০১৬। একজন গল্পকার সর্বাধিক ২টি গল্প পাঠাতে পারবেন। তবে আর অপেক্ষা কিসের! 

আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাহচর্যই ঋতবাকের একমাত্র পাথেয়। 

শুভেচ্ছা নিরন্তর

সুস্মিতা বসু সিং
2

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



ঝম ঝম করে কেটে গেল আরও একটা ঘটনাবহুল মাস। ভোটের প্রস্তুতি, ভোটের প্রচার, দাদা দিদি, জোট ঘোঁট, চাপান উতোর, মাঝে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস – রবীন্দ্রজয়ন্তী, আবার সেই কচাকচি – বিশ্লেষণ-বিশ্লেষণ-বিশ্লেষণ এবং অবশেষে ফলাফল ঘোষণা। উফ্‌... ‘ভোটের’ বাদ্যি থামলে মিষ্টি!! আবার ব্যাক টু স্কোয়ার ওয়ান – অনেক হয়েছে টাইম পাস – এবার সবাই মন দিন নিজ নিজ কাজে। আসছে নজরুল জয়ন্তী, চাইলে পালন করতেই পারেন। সদ্য গেল শিলচরের ভাষা শহীদ দিবস – ১৯শে মে। আজ, ২১শে মে, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণ করে প্রকাশিত হলো বাংলা ভাষায় এক ব্যতিক্রমী অনলাইন ম্যাগাজিন, ঋতবাক ২য় বর্ষ, ২২তম সংখ্যা। 

এ কথা তো অনস্বীকার্য যে, যে কোনও কাজের প্রতি আন্তরিক নিষ্ঠা কাজটিকে প্রতি দিন সমৃদ্ধ করে, উৎকৃষ্ট করে। এগিয়ে চলার পথে একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে চলার নিয়মেই আর একটা নতুন রাস্তা তৈরী হয়ে যায়, চলা তো থামে না। আর এই চলতে চলতেই কত নতুন নতুন মানুষ চেনা, মুহূর্তে মুহূর্তে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হওয়া। আজ এমনই কিছু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ঋতবাক। ঋতবাক পরিচালক গোষ্ঠীকে উৎকৃষ্ট করল জীবনের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এমনই কিছু নাম। ব্লগে সংযোজিত হলো উপদেষ্টামণ্ডলী। সেখানে রয়েছেন বাংলা বিভাগীয় প্রধান(কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), সাহিত্যিক গবেষক, ডঃ বিশ্বনাথ রায়, প্রবাদ প্রতিম প্রবীণ ব্লগার, সাহিত্য-ব্রতী, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, এযাবৎ ঋতবাক ফেসবুক গ্রুপ ও ম্যাগাজিনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সাহিত্য প্রেমী, স্বপন দেব এবং সম্পাদকের এই ম্যাগাজিন শুরুর ভাবনাকে অঙ্কুরিত করার প্রধান রূপকার, প্রাবন্ধিক – ব্লগার, শুভ্র ভট্টাচার্য। এঁরা যে এতদিন ছিলেন না, তা নয়। ছিলেন সেই প্রথম থেকেই। এত দিনে স্বীকৃতি দেওয়া গেল। ঋতবাক ধন্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন সকলে। 

এদিকে ঋতবাক পাবলিশার অ্যান্ড বুক সেলার পুরোদমে প্রস্তুত। সামনে বছর বইমেলার আগে অন্তত ২৪টি বই করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। উৎসাহী বন্ধুরা যোগাযোগ করুন সরাসরি। বই মেলার কথা আসতেই, প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ল ঋতবাক বার্ষিক সংকলনের কথা। লেখা মনোনয়ন ও নির্বাচন পর্ব শুরুর পথে। আপনারা তো জানেনই, লেখার গুনগত মান ও বক্তব্যের যুক্তিগ্রাহ্য স্বচ্ছতাই লেখা মনোনয়ন ও নির্বাচনের একমাত্র মাপকাঠি। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, অনেক অনেক ভালো ভালো লেখা পাঠান ঋতবাকে। 

সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় ঋতবাকের যাত্রা পথ আরও মসৃণ ও সুগম হোক। 

শুভেচ্ছা নিরন্তর...

সুস্মিতা বসু সিং