প্রচ্ছদ নিবন্ধ - রঞ্জন রায়
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ“ধর্মাবতার,
আপনি কি জানেন
আমাদের জনগণমনে
আপনার আসন রয়েছে পাতা ঈশ্বরের কাছাকাছি
হয়তো বা ঈশ্বরের দেড় ইঞ্চি নীচে।
অনেক বিলকিস আজও আপনার নামের মালা জপে
প্রতীক্ষায় আছে;
অনেক উঁচুতে আপনি
-- ঈশ্বরের কাছাকাছি,
ঈশ্বরের দেড় ইঞ্চি নীচে”।
কিসসা - ইলেক্টোরাল বণ্ড
[ইলেক্টোরাল বণ্ড নিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। কোন রাজনৈতিক দল কত কোটি টাকার বণ্ড উপহার পেয়েছে এবং কোন কোন কোম্পানি নিজেদের লাভের চেয়েও বেশি টাকা বিশেষ রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়েছে –এসব এখন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে সবাই জানেন।
কিন্তু এর অনৈকতা বুঝতে হলে, অর্থাৎ কীভাবে একটি ঘুষ দেওয়ার প্রকল্পকে আইনের চোলা পরিয়ে দেওয়া হল—সেটা বুঝতে পড়ুন এই লেখাটি]
গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ পাঁচ বছর ধরে লটকে থাকা ‘ইলেক্টোরাল বণ্ড স্কীম ২০১৮’ এর সাংবিধানিক যুক্তিযুক্ততার প্রশ্নে করা রিট পিটিশনের রায় ঘোষণা করে । ওই রায়ে সর্বসম্মতিতে ফাইনান্স অ্যাক্ট ২০১৭ এবং তার অন্তর্গত ওই নির্বাচনী বণ্ড যোজনাটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয় যা তৎকাল প্রভাবশীল হয়।
ঐতিহাসিক রায়টিতে বলা হয় যে কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৮ সালের নামহীন ক্রেতার নির্বাচনী বণ্ড (Electoral Bond 2018) সংবিধানের আর্টিকল ১৯(১) --জানবার অধিকার-- এবং ১৯(১)(ক) -- মতপ্রকাশের অধিকার--এর পরিপন্থী।
অতএব, ওই আইন খারিজ করে স্টেট ব্যাংককে নতুন কোন বণ্ড জারি করতে নিষেধ করা হচ্ছে এবং তাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে অবিলম্বে আজ অব্দি জারি করা সমস্ত বন্ডের ক্রেতার নাম, কেনার তারিখ, কার জন্যে এবং কত টাকার—সব বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দিতে হবে যাতে ওরা আগামী ১৩ই মার্চের মধ্যে ওদের সাইটে সমস্ত তথ্য জনসাধারণের গোচরে পেশ করতে পারে। তাহলে সাধারণ ভোটার, সরকারের পলিসি এবং তার সঙ্গে কোন বিশেষ দানদাতা কর্পোরেট হাউসের স্বার্থ জড়িত আছে কিনা (quid pro quo), সেটা নিজেরা দেখে বিচার করে নির্ণয় নিতে পারবে।
এই রায় পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চের সর্বসম্মতিতে জারি করা হয়েছে। ফলে এর বিরুদ্ধে আপিল হতে পারবে না। বড়জোর সরকার বর্তমান রায়ের পুনর্বিচার (revision) চেয়ে আবেদন করতে পারে। সেটার শুনানি ওই একই পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে হবে।
উক্ত রিট পিটিশনের চার আবেদনকারীরা হলেন মানবাধিকার সংস্থা The Association of Democratic Reforms (ADR), কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর, Communist Party of India (Marxist) এবং আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা Common Cause।
প্রথম ভাগ
বণ্ডের উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ঃ
বিগত ২০১৭ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট অধিবেশনের সময় তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি ফাইনান্স অ্যাক্ট ২০১৭ বিলের অন্তর্গত এই ‘অনামা দাতাদের ইলেক্টোরাল বণ্ড যোজনা’ লোকসভায় পেশ করেন।
তখন তিনি বলেছিলেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ফান্ডে দানের ব্যাপারটা স্বচ্ছ না হলে নির্বাচন অসম প্রতিযোগিতা হয়ে যাচ্ছে। আর সবার জন্য সমান খেলার মাঠ ( level playing ground) আমাদের সংবিধানের মূল ভাবনার (basic feature) অনুরূপ। এটি প্রদান করা রাষ্ট্রের কাজ। অথচ বিগত ৭০ বছর ধরে এ’বাবদ কিছুই হয়নি। এবার এই বণ্ডের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আসবে, দানদাতারা সুরক্ষিত থাকবে। তাদের অপছন্দের দল জিতে সরকার বানালে প্রতিহিংসা নেবে, ব্যবসায়ে বাধা দেবে –এই ভয় থাকবে না। তাদের পরিচয় গোপন থাকবে এবং তারা নির্ভয়ে নিজের নিজের পছন্দের দলকে চাঁদা দিতে পারবে।
এই বন্ড জারী করার সময় সরকার পক্ষের আরও বক্তব্য ছিল যে এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারে কালো টাকার প্রভাব বিদেয় করে সাদা টাকার ব্যবহার প্রচলনে আনা। বিশেষ করে নগদ টাকার ব্যবহার প্রায় বন্ধ করে ব্যাংকের এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয়কে স্বচ্ছ করা।
মনে রাখা দরকার, তার মাত্র কয়েক মাস আগে অক্টোবর ২০১৬এর এক রাত আটটায় দু’বছর আগে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের বিমুদ্রীকরণের (demonitization) নাটকীয় ঘোষণা করেন।
এই নতুন বিত্তীয় ইন্সট্রুমেন্ট হবে ধারক বণ্ড (bearer bond)। এর বৈশিষ্ট্য হবে বিনা সুদের promissory note ধরণের। এগুলো হবে পাঁচ রকম মূল্যের গুণিতকে—একহাজার, দশ হাজার, এক লাখ , দশ লাখ এবং এক কোটির।
দানদাতা স্টেট ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে এই বণ্ড কিনে নিজের পছন্দের এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে সেটি দান করতে পারে।
এই বিল কী করে রাজ্যসভায় পাশ হল? ২০১৭ সালে বর্তমান শাসক দল বিজেপি রাজ্যসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না তো?
সত্যি কথা। তাই বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হয় নি। লোকসভায় মানি বিলের মোড়কে পেশ করা হয়েছিল। ‘মানি বিল’এর জন্যে রাজ্যসভার অনুমোদন লাগে না। তবে একে মানি বিলের তকমা দেওয়া কতখানি আইনসম্মত সে’নিয়ে বিতর্ক আছে। এই নিয়ে সুপ্রীম কোর্টে রিট ঝুলে আছে। কিন্তু ইলেক্টোরাল বণ্ড আইনটিই বাতিল হয়ে যাওয়ায় ওই প্রশ্ন এবং পিটিশন হয় তো তামাদি হয়ে গেছে।
কে কিনতে পারে?
দেশের যে কোন নাগরিক বা ভারতে গঠিত কোন কর্পোরেট সংস্থা এটি কিনতে পারে। এমন কি বিদেশের কোন কোম্পানির ভারতে রেজিস্টার্ড কোন সাবসিডিয়ারিও স্টেটব্যাংক থেকে এই বন্ড কিনতে পারবে। এর জন্য কোন আয়কর দিতে হবে না, উলটে ১০০% ছাড় পাবে। আয়কর অধিনিয়মের ধারা 80 GGC অনু্যায়ী রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনী ট্রাস্টে চাঁদা দিলে পুরোটাই আয়কর ছাড় পাওয়ার যোগ্য।
তাকে শুধু স্টেট ব্যাংকের কোন শাখায় এই বন্ড কেনার জন্য একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং তার জন্য আবশ্যক শর্ত পূরণ (KYC norms) করতে হবে।
এক ব্যক্তি বা কোম্পানী অধিকতম কত টাকার বণ্ড কিনতে পারে?
--যে কোন পরিমাণ, কোন উর্ধসীমা নেই।
আগে কী ছিল?
---আগে ব্যবসায়ী সংস্থার জন্যে নিয়ম ছিল যে কেবল কোন মুনাফা অর্জনকারী সংস্থাই রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে চাঁদা বা দান দিতে পারে। কিন্তু সেই টাকা কোনমতেই তার মুনাফার ৭.৫% এর বেশি হবে না। কিন্তু ২০১৮ সালের বণ্ডের সময় কোম্পানী অ্যাক্টে সংশোধন করে সেই লক্ষণরেখা মুছে দেওয়া হয়েছে।
ফলে যে কোন সংস্থা, এমনকি যার মুনাফা নেই বা লোকসানে চলছে, সে’ও অসীমিত পরিমাণ রাশির ইলেকশন বণ্ড গোপনে কিনতে পারে। আয়কর বিভাগ বা ইডি কোন প্রশ্ন করবে না।
এই চাঁদার রাশির বিস্তৃত বিবরণ কি কোম্পানীর ব্যালান্স শীটে দেখা যাবে?
--না, শুধু কোন বছরে মোট কত টাকা নির্বাচনী চাঁদা দেওয়া হয়েছে তা দেখাতে হবে; কতভাগে এবং কাকে কাকে কবে দেওয়া হয়েছে সেটা গোপন থাকবে।
এই বণ্ড ভাঙানোর সময়সীমা কতটুকু ?
--১৫ দিন। তারপর সেটি তামাদি হয়ে যাবে।
ওই সময়ের মধ্যে যদি কোন বণ্ড ভাঙানো না হয়, তখন সেই বণ্ডের টাকার কী গতি হবে?
--- সোজা পিএম কেয়ার ফান্ডে জমা হবে।
সত্যিই কি এই বণ্ডের ক্রেতা ও প্রাপকের নাম গোপন থাকে?
ওই বণ্ড কিনতে হলে স্টেট ব্যাংকের কোন শাখায় ‘ডেজিগ্নেটেড অ্যাকাউন্ট’ খুলতে হবে , অর্থাৎ যা শুধু ঐ বণ্ড কিনতেই ব্যবহৃত হবে এবং তার জন্যে KYC norm (Know Your Client) পূর্ণ করতে হবে। ফলে স্টেট ব্যাংকের কাছে ক্রেতার ঠিকুজি কুষ্ঠি পুরো থাকবে, এবং সেই তথ্য দরকারমত সরকারের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন জানতে পারবে না ওই বণ্ডের অন্তিম ‘লাভার্থী’ কোন রাজনৈতিক দল। কে কত টাকার বণ্ড কিনে কোন দলকে কত দিল সেই তথ্য “দাতাদের স্বার্থে” নির্বাচন কমিশনের কাছেও অজানা থাকবে।
আগে কী হত?
--- এর আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই তাদের আয়কর রিটার্ন জমা করার সময় নির্বাচনী তহবিলে ২০,০০০/- টাকার চেয়ে বেশি চাঁদা দেওয়া লোকের নামধাম নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হত ।
কিন্তু ইলেক্টোরাল বন্ড কিনলে সেসব জানানোর প্রয়োজন নেই। বছরে মোট কত টাকা বণ্ডের মাধ্যমে পাওয়া গেছে সেটা জানালেই হল। বণ্ড ক্রেতার নাম কোনরকমেই ব্যাংক ও রাজনৈতিক দল ছাড়া কেউ জানবে না।
এইরকম “অনামাদাতা” ইলেক্টোরাল বণ্ডকে ২০১৮তে কার্যকরী করতে কোন কোন আইনে সংশোধন করতে হয়েছে?
উপরোক্ত উদ্দেশ্যে ফাইনান্স অ্যাক্ট ২০১৭তে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ আইনে সংশোধন করা হয়। যথা, জনপ্রতিনিধি আইন, ১৯৫১ (আর পি এ), আয়কর আইন, ১৯৬১ এবং কোম্পানি আইন, ২০১৩।
জনপ্রতিনিধি আইন, ১৯৫১ ধারা ২৯সি অনু্যায়ী প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে একটি আর্থিক বছরে কুড়ি হাজার টাকার বেশি যত দান পেয়েছে সেটা ঘোষণা করতে হত। বিশেষ করে জানাতে হত যে কোনগুলো ব্যক্তির থেকে পাওয়া আর কোনগুলো কোম্পানির থেকে।
ফাইনান্স অ্যাক্ট, ২০১৭ সংশোধনী জুড়ে দিল যে এই নিয়ম ইলেক্টোরাল বণ্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
আয়কর আইন, ১৯৬১ ধারা ১৩ এ (বি) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলকে সদস্যদের চাঁদার বাইরে কারও স্বেচ্ছায় দেওয়া চাঁদা বার্ষিক মোট আয়ের মধ্যে গুণতে হবে না। কিন্তু একটি রেজিস্টারে ২০০০০ টাকার চেয়ে বেশি চাঁদার পুরো রেকর্ড রাখতে হবে। তাতে অমন দানদাতাদের নাম-ঠিকানা সব নথিবিদ্ধ করতে হবে।
ফাইনান্স অ্যাক্ট, ২০১৭ সংশোধনী জুড়ে দিল যে এই নিয়ম ইলেক্টোরাল বণ্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
কোম্পানি আইন, ২০১৩ ধারা ১৮২(১) অনুযায়ী কোন কোম্পানি একটি আর্থিক বছরে কোন রাজনৈতিক দলকে তার গত তিন আর্থিক বছরের শুদ্ধ মুনাফার (net profit) গড় রাশির ৭.৫% এর বেশি চাঁদা/দান দিতে পারবে না।
ধারা ১৮২(৩) অনুযায়ী সমস্ত কোম্পানি যা যা চাঁদা/দান যে যে রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে সব জানাতে বাধ্য, মায় দলের নাম এবং কাকে কত টাকা।
ফাইনান্স অ্যাক্ট, ২০১৭ ওই দুটো ধারাই বাতিল করে বলল যে কোন কোম্পানি কোন রাজনৈতিক দলকে যতখুশি টাকা দিতে পারে, এবং সেইসব গ্রাহক দলের নাম ও কাকে কত টাকা কিছুই জানানোর দরকার নেই। খালি আর্থিক বছরে মোট কতটাকা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়েছে সেটুকু ব্যালান্স শীটে দেখালেই হবে। তাতে ১০০% আয়কর ছাড় পাওয়া যাবে।
সুপ্রীম কোর্ট তাদের বর্তমান রায়ে ফাইনান্স অ্যাক্ট ২০১৭র মাধ্যমে করা উপরোক্ত তিনটি আইনের সংশোধন বাতিল করে আগের স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে এনেছে।
২ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বাধিক বণ্ড বিক্রি হয়েছে কোলকাতায়। গত ৬ বছরে কোলকাতার স্টেট ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়ার শাখাগুলো থেকে বিক্রি হয়েছে ৭৮৩৪ বণ্ড। মুম্বাই ৫৪২৬, হায়দ্রাবাদ ৪৮১২, দিল্লি ৩৬৬২, চেন্নাই ১৮৬৯, গান্ধীনগরে ১১৮৯। সবচেয়ে কম পাটনায়, মাত্র ৮টি।
এই বন্ডের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল কত টাকার চাঁদা পেয়েছে?
কিছুদিন ইলেকশন কমিশনের সাইটের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ঘুরছিল। তাতে দেখান হয়েছে যে সিপিএম দলও ৩৬৭ কোটি টাকার বণ্ডের চাঁদা পেয়েছে। সত্যিটা কী?
--- লাইভ ল’ সাইট অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচুড় অন্যতম পিটিশনার সিপিএমের উকিল ফরসাতকে প্রশ্ন করেন—এ ডি আর এর রিপোর্ট অনুযায়ী আপনারাও তো কিছু ইলেক্টোরাল বন্ড পেয়েছেন।
ফরসাত—না ধর্মাবতার। আমরা বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করেছি যে আমরা কোন বণ্ড নিই নি।
গত ফেব্রুয়ারি ১৫ , ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিট) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দিল্লিতে সংবাদ সংস্থা এ এন আইকে বলেন যে সিপিএমই একমাত্র রাজনৈতিক দল যে ইলেকশন বণ্ডের মাধ্যমে চাঁদা দেওয়াকে আর্থিক দুর্নীতিকে আইনের জামা পরিয়ে দেওয়া বলে ঘোষণা করে । এমনকি আইন অনুয়ায়ী স্টেট ব্যাংকে যে ডেজিগ্নেটেড আকাউন্ট খোলার কথা তা’ও খোলে নি। বাকি অপপ্রচার। সিপিএমের উকিল চিফ জাস্টিসকে সেটাই বলেছেন। সিপিএম ইলেকশন বণ্ড মামলায় সুপ্রীম কোর্টে অন্যতম পিটিশনার।
Funds received through electoral bonds from 2017-18 to 2022-23
In Rs. Crore
BJP 6566
Cong 1123
TMC 1093
BJD 774
DMK 617
BRS 384
YSRCP 382
TDP 147
Shiv Sena 107
AAP 94
NCP 64
JD(S) 49
JD(U) 24
SP 14
Source: Supreme Court, Created with Datawrapper
দ্বিতীয় ভাগ
আইনের মারপ্যাঁচ
এই বিল তৈরির সময় কোন সরকারি সংস্থা বিত্ত মন্ত্রকের কাছে আপত্তি করেনি?
--করেছে তো! রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ও তৎকালীন নির্বাচনী কমিশন কড়া আপত্তি করেছিল, শোনা হয় নি।
কী তাদের আপত্তি?
রিজার্ভ ব্যাংকঃ বিত্ত মন্ত্রকের সঙ্গে ইলেকশন বণ্ড নিয়ে কয়েক দফা আলোচনার সময় রিজার্ভ ব্যাংক জানুয়ারি ২০১৭ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৭ নাগাদ যে আপত্তিগুলো করেছিল তা মোটামুটি এইরকমঃ
যদি রিজার্ভ ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন বাণিজ্যিক ব্যাংককে অমন ধারক বণ্ড (bearer bond instrument) জারি করতে দেওয়া হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিয়ারার বন্ড জারি করার ‘একমাত্র অধিকার’ ক্ষুণ্ণ হয়ে বিত্তীয় অরাজকতা হবে। অধিক সংখ্যায় জারি ইলেকশন বন্ড বাজারে এলে রিজার্ভ ব্যাংকের জারি টাকার উপরে মানুষের আস্থা কমে যাবে।
( নোটঃ রিজার্ভ ব্যাংক সমস্ত টাকা ইস্যু করে এবং সেসবই বিয়ারার বা ধারক বন্ড, ফলে ইলেকশন বন্ডও হাত ফেরতা হয়ে টাকার ভূমিকা পালন করবে এবং তাতে বাজারে টাকার যোগানের ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাংকের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।)
এটা ঠিক যে বণ্ডের প্রথম ক্রেতা এবং শেষ প্রাপ্তকর্তার পরিচয় ব্যাংকের কাছে গোপন থাকবে না, কিন্তু এর মাঝে যত লোকের হাত ফেরতা হয়ে বন্ড ব্যাংকে ফেরত আসবে, তাদের পরিচয় জানার কোন উপায় নেই। এটা প্রিভেনশন অফ মানি লণ্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২ (টাকার বেনামি হাওলা লেনদেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ), এর নীতির বিরুদ্ধে।
(নোটঃ ধরুন, ক এক লাখ টাকার ইলেকশন বন্ড কিনল, খ তার থেকে ওই বন্ড নগদ এক লাখ পঁচিশ হাজার দিয়ে কিনে নিল। গ তার থেকে ওই বন্ড দেড় লাখ টাকায় কিনে কোন ‘দেশভক্ত’ দলের অ্যাকাউন্টে জমা করে দিল।
ওই লেনদেনের মাধ্যমে ক এবং খ দুজনেই পঁচিশ হাজার করে কালো টাকা নগদে অর্জন করল এবং গ তার দেড় লাখ কালো টাকা সাদা করে ফেলল।)
রিজার্ভ ব্যাংকের শেষ বক্তব্যটি হল যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয় যে নির্বাচনী চাঁদা নগদ বা কালো টাকার বদলে আয়কর দেওয়া সাদা টাকার থেকে আসুক, তাহলে সেটা চেক, ডিমান্ড ড্রাফট বা ইলেক্ট্রনিক এবং ডিজিটাল ট্রান্সফারের মাধ্যমেই ভাল ভাবে সম্পন্ন হতে পারে। অহেতুক আলাদা করে ‘বিয়ারার বন্ড’ জারি করা কেন?
সেপ্টেম্বর ২০১৭ নাগাদ, যখন ইলেকশন বন্ডের ফাইনাল ড্রাফট তৈরি হচ্ছিল তখনও রিজার্ভ ব্যাংক তাদের আপত্তিতে অটল ছিল। আশংকা করছিল যে দেশি-বিদেশি শক্তির নকল (‘শেল’ কোম্পানি) এই বন্ড হাওলা লেনদনে ব্যবহার করবে। এছাড়া বাজারে দেশে বা সীমান্তের ওপার থেকে নকল বণ্ড আসার ভয় রয়েছে।
ইলেকশন কমিশন
কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৭ সালের বাজেটে ফাইনান্স অ্যাক্ট পাশ হওয়ার পর ইলেকশন কমিশন মে’ মাসেই বিত্ত মন্ত্রককে চিঠি লিখে তাদের তিনটে আপত্তির কথা জানাল। তাদের আপত্তি ছিল জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, আয়কর আইন এবং কোম্পানি আইনে যে সংশোধন করা হয়েছে তাতে রাজনৈতিক দলের বিত্তপোষণ নিয়ে আবশ্যক স্বচ্ছতার উপর বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
যে সংশোধনের ফলে রাজনৈতিক দলকে ইলেক্টোরাল বণ্ড থেকে প্রাপ্ত বড় বড় চাঁদা/অনুদানের তথ্য দেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা একটি প্রতিগামী কদম (retrograde step) সেটা রদ করতে হবে। কারণ, ওটা আবশ্যক স্বচ্ছতার জন্য ক্ষতি করবে।
কোম্পানি আইনে সংশোধনের ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে যে কোন রাজনৈতিক দলকে কে কত চাঁদা দিয়েছে তা গোপন রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটি বাতিল করে তাদের ‘লাভ-ক্ষতির হিসেবে’ (Profit Loss A/c) সেসব স্পষ্ট করে দেখানোর নির্দেশ দিতে হবে।
আগের নিয়মে একটি কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে মোট কত চাঁদা দিতে পারে তার উর্ধ্বসীমা বাঁধা ছিল। এখন নতুন আইনে কর্পোরেট ফান্ডিং এর অসীমিত ক্ষমতা দেওয়ায় শেল কোম্পানির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিত্তপোষণে কালো টাকার ভূমিকা বেড়ে যাবে।
সুপ্রীম কোর্ট বর্তমান রায়ে সরকার পক্ষের যুক্তি না মেনে উপরের আশংকাগুলোর সম্ভাবনাকে স্বীকার করে ফাইনান্স অ্যাক্ট ২০১৭তে উপরোক্ত তিনটে আইনের সংশোধনকে খারিজ করেছে।
সুপ্রীম কোর্টের মূল বক্তব্যঃ
এই বন্ড ভোটারের প্রার্থীর সম্বন্ধে জানবার এবং স্বাধীন বক্তব্য ও মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার -- আর্টিকল ১৯(১)-- হনন করছে।
এই বণ্ডের বা সরকারের উদ্দেশ্য যতই মহান হোক, এটা বাস্তবে আদৌ স্বচ্ছ না হয়ে আরও বেশি অস্পষ্ট (opaque) হয়েছে।
এই বণ্ডে সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকারের চেয়ে কর্পোরেট ঘরানার ‘গোপনীয়তা’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন ছাত্র, একজন শিক্ষক, কৃষক বা কর্মচারির তুলনায় একজন শিল্পপতি কেন বিশেষ সুবিধে পাবে?
আগে শুধু মুনাফা অর্জনকারী কোম্পানিই নির্বাচন ফান্ডে দান দিতে পারত, তারও মুনাফার উর্ধসীমা ৭.৫% বাঁধা ছিল। এবার সেসব তুলে দিয়ে বিদেশি কোম্পানী , শেল কোম্পানী (জালি) -সবার জন্যে রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে।
কোন লোকসানে চলা কোম্পানী কেন দান দেবে? কোত্থেকে দেবে? তাও যত ইচ্ছে? অবশ্যই কালো টাকা থেকে। তাহলে নির্বাচনী রাজনীতিতে কালো টাকার প্রবেশের পথ বন্ধ করার বদলে তাকে আইনি জামা পরিয়ে দেওয়া হল। যা সরকারের ঘোষিত উদ্দেশ্যের বিপরীত।
সরকার এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে কালো টাকা সাফ করার জন্যে এই ইলেকশন বন্ড জারি করা ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোন সহজ এবং স্বচ্ছ বিকল্প ছিল না।
গোপনে বিশাল টাকা কোন কর্পোরেট হাউস কেন দেবে? অবশ্যই বদলে কিছু প্রতিদান (quid pro quo) পাওয়ার আশায়। জনতার জানার অধিকার আছে সরকারের কোন নীতি কি দেশের হিতে নেওয়া হচ্ছে নাকি কোন ব্যবসায়ী ঘরানাকে বিশেষ লাভ পাইয়ে দিতে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য হল ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ অব্দি যত বন্ড বিক্রি হয়েছে তার ৯০% এক কোটি মূল্যের। অর্থাৎ এই সবই কেনা হয়েছে খুব বড় বড় কর্পোরেট ঘরানা থেকে।
সুপ্রীম কোর্টের আগের বিভিন্ন রায়ে ( আধার কার্ড, ডিমনিটাইজেশন ইত্যাদি) একটি নীতিকে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে। তা হল আনুপাতিক তুলনার পরীক্ষা (Proportionality Test)। অর্থাৎ যদি দুটো মৌলিক অধিকারের মধ্যে বিরোধ বাধে, তাহলে রাষ্ট্রকে কোন দিকে যাওয়া উচিত? যেটায় মৌলিক অধিকারে কম কাটছাঁট হবে সেদিকে। মানে রাষ্ট্র মৌলিক অধিকারে যত কম হস্তক্ষেপ করে তত ভাল। দেখতে হবে ব্যক্তি নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার আর সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদির সামুহিক কল্যাণে তথ্য জানবার অধিকার—কোনটা বেশি জরুরী।
এখানে প্রশ্ন ছিল দানদাতার গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার এবং সাধারণ ভোটারের জানবার মৌলিক অধিকারের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচারের। সরকার জোর দিচ্ছিল কর্পোরেট হাউসের দাতাদের গোপনীয়তা রক্ষার দিকে, কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের মতে সাধারণ ভোটারের জানবার অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাস্টিস খান্না তাঁর আলাদা লিখিত রায়ে বলেছেন—দানদাতার গোপনীয়তা রক্ষা রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত লক্ষ্য হতে পারে না এবং ভোটারের জানবার অধিকার রাজনৈতিক ফান্ডিং এর গোপনীয়তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব এই আইন বাতিল করে স্টেট ব্যাংককে নতুন কোন বণ্ড জারি করতে নিষেধ করা হচ্ছে এবং তাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে অবিলম্বে আজ অব্দি জারি করা সমস্ত বন্ডের ক্রেতার নাম, কেনার তারিখ, কার জন্যে এবং কত টাকার—সব বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দিতে যাতে ওরা ওদের সাইটে সমস্ত তথ্য প্রদর্শন করে জনসাধারণকে সরকারের পলিসি এবং quid pro quo দেখে নিজেরা বিচার করে নিতে পারে।
উপসংহার
এর পর কী হবে?
একটি আলোচনা চক্রে সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুর বলেন যে ওই রায়ের নির্দেশগুলো ঠিকমত কার্যকর না হলে এই ঐতিহাসিক রায় একটি ‘অ্যাকাডেমিক এক্সারসাইজ’ হয়ে ইতিহাসে স্থান পাবে।
কেন্দ্রীয় সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু একই সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে ‘রিভিশন’ এর পিটিশন দায়ের করতে পারে। তাতে শুনানি সম্পূর্ণ হতে হতে সংসদের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।
আর যতদিন রায়ের পুনর্বিচারের আবেদন চলছে, ততদিন ব্যাপারটি বিচারাধীন বলে স্টেট ব্যাংক এবং নির্বাচন কমিশন দাতাদের সূচী জনতার সামনে আনার কাজ স্থগিত রাখতে পারে।
সুপ্রীম কোর্টের থেকে আর কী আশা ছিল?
সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল বলেন যে নতুন করে ইলেকশন বণ্ড জারি হবে না বটে, কিন্তু আজ পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে শাসক দল বিজেপির কাছে ওই বণ্ড বাবদ ৬৫৬৬ কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। সেই টাকা বিজেপিকে, এবং অন্যান্য দল যা পেয়েছে সেটা, ডোনরকে ফেরত করে দেওয়া উচিত।
কারণ, বাতিল হওয়া ইলেকশন বণ্ড আইন যদিও সিভিল আইন তবু ওই বন্ড সুপ্রীম কোর্টের আইন অনুয়ায়ী সংবিধান বিরোধী। অতএব সেই বণ্ড কেনাবেচা সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন বে-আইনি লেনদেনের ফল। সুতরাং অন্তিম প্রাপক অর্থাৎ রাজনৈতিক দলকে সে টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। এই আদেশ সুপ্রীম কোর্ট জারি করলে ভাল হত।
আমার টিপ্পনীঃ কোন সামান্য নাগরিক বা বেতনভোগী কর্মচারী যদি সরকারের বা ব্যাংকের ত্রুটিতে অন্যায্য কোন টাকা পায়, বা তার অ্যকাউন্টে জমা হয়—তাহলে সেই টাকা তার থেকে ফেরত নেওয়া হয়। তাহলে এখানে কেন তার ব্যতিক্রম হবে?
এই টাকা দলের ফান্ডে গেছে। কিন্তু ইলেকশন ফান্ডের টাকা নির্বাচনেই খরচ হয়েছে কিনা তার প্রমাণ কী? ডিজিটাল খরচের কথা বলা হলেও নির্বাচনে বেশির ভাগ খরচ—গাড়িভাড়া, ভলান্টিয়ারদের পকেট মানি, খাওয়াদাওয়া, পোস্টার ইত্যাদির পেমেন্টের বেশির ভাগ এখনও নগদে হয়। তাহলে?
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বলেছেন যে নির্বাচন প্রার্থীর ব্যয়ের উর্ধ্বর্সীমা নির্ধারিত আছে –বিধানসভায় ৫৫ লাখ, লোকসভায় ৯০ লাখ। তাদের নির্বাচন শেষ হলেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খরচের হিসাব দাখিল করতে হয়, অডিট করাতে হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক দলকে পুরনো আইনেও শুধু নির্বাচনী তহবিলে আয়ের হিসেব বা চাঁদার হিসেব দেখাতে হয়, খরচের নয়, তাহলে?
সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বলের এবং কুরেশির মতে এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে সুপ্রীম কোর্ট বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মামলাটা ঝুলিয়ে রাখায় বিজেপি ইলেকশন বণ্ডের মাধ্যমে কর্পোরেট হাউসের থেকে নিয়মিত বিশাল টাকা পেয়ে ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচন এবং পরবর্তী বেশ কিছু বিধানসভা নির্বাচনে অন্যদলের তুলনায় বিষমানুপাতিক দরে খরচ করার সুবিধে পেয়ে গেল।
কিন্তু এতে কুইড প্রো কুয়ো গেম খেলাটি কীরকম?
সিব্বলের মতে অনেকরকম।—একটা চোখে পড়ছে, মাত্র গোটা কয়েক কর্পোরেট হাউসের অধিকাংশ মিডিয়া একের পর এক কিনে ফেলা, সেখান থেকে সরকারকে প্রশ্ন করা সাংবাদিকদের সরিয়ে রাজনৈতিক পরিদৃশ্যের একমাত্রিক আখ্যান নিয়মিত প্রচারিত করা এবং বদলে বিশাল অংকের সরকারী বিজ্ঞাপন পাওয়া।
আর কী হতে পারে?
এই রায়ের ফলে সুপ্রীম কোর্টে সাংবিধানিক প্রশ্নে লম্বিত আরও কয়েকটি মামলার সকারাত্মক (positive) রায়দানের সম্ভাবনা বেড়ে গেল, যেমন পিএম কেয়ার ফান্ডের মামলা। যে ফান্ডে ভারত সরকারের লোগো ব্যবহার হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী , গৃহমন্ত্রীরা পদাধিকারী এবং বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ওতার কর্মীদের থেকে দান নেওয়া হচ্ছে সে নাকি ‘প্রাইভেট এনটিটি’! অতএব তার তথ্য চেয়ে সুচনার অধিকার ২০০৫ (আর টি আই) আইনে আবেদন করা যাবে না; সরকারি সংস্থার মত অডিটও করা যাবে না!
প্রাক্তন মুখ্য কেন্দ্রীয় কমিশনার (আর টি আই) যশোবর্ধন আজাদ, আইপিএসের আশা যে ইলেকশন বন্ডের রায়ের ফলে আর টি আইকে আবার পুনর্জীবিত করার দিকে এগুনো যাবে। বর্তমানে ওই স্বতন্ত্র সাংবিধানিক পদটিকে আইন পাশ করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বেতনভোগী আমলা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনের ঘোটালা নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের সক্রিয় হস্তক্ষেপের পর ওই সম্ভাবনা একটু বেড়েছে। আশায় বাঁচে চাষা।
0 comments: