ধারাবাহিক - শৌনক দত্ত
Posted in ধারাবাহিক১১.
অমলকান্তি রোদ্দুর
প্রিয় সুস্মি
জন্মদিনের ঠিক আগের দিন তোমার চিঠি পেলাম। সঙ্গে বিবেক বিদায় পালা। ধন্যবাদ দেয়া উচিত কিনা বুঝতে পারছিনা বইটি আগে কখনো পড়া হয়নি এমন কি এই বই সম্পর্কে তোমার চিঠিতেই প্রথম জেনেছি। বহুবছর পরে জমকালো জন্মদিন পালন হলো আমার, নিজেকে বেশ বিখ্যাত মনে হচ্ছিল। তোমার পাঠানো বই দিয়েই শুরু এবছরের জন্মদিন উদযাপন। আগের রাতে কেক কেটে ভাগ্নি অনন্যার সেলিব্রেশন দিয়ে শুরু হলেও কর্তার (জামাইবাবু) স্বহস্তে রান্না করা পোলাও মাংস ছিল দারুণ পাওয়া। তোমাকে তো বলাই হয়নি আঠাশ বছর পরে আমার প্রথম বন্ধু মনতোষ (মনুয়া) কে খুঁজে পেয়েছি। জেনকিন্স স্কুলের সেই টেস্ট পরীক্ষার পরে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটি এখন ঘোর সংসারী। জানো, বেটা ঠিক সেই স্কুলের মতই আছে। যদিও দারুণ এক জীবনসঙ্গী পেয়েছে, ইনফেক্ট সেই বৈশাখী বা বৈশুই তো মেলালো আমাদের এত বছর পরে, ওদের মেয়ে শ্রীধা ডাকনাম গিনি ওকে যদি দেখো একদম পাকা বুড়ি একটা কিন্তু চার বছর বয়সী তার নাচের এক্সপ্রেশন দেখলে মুগ্ধ হবে। সেই বৈশু তিনদিন আগেই বলে রেখেছিল তাদের বাড়ি জন্মদিনের দিন বিকেলে যেতে হবে। আমার জন্মদিন মানেই বৃষ্টি তুমি সেটা জানো। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটেছি মনুয়া আর বৈশুর বাড়ি। মাথায় শয়তানী বুদ্ধি কিলবিল করছিল। তাই বৈশুর কল ধরছিলাম না সকাল থেকেই। সন্ধ্যার একটু আগে ওদের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে মনুয়াকে কল করে বললাম আমি পৌঁচ্ছে গেছি কিন্তু বৈশুকে বলবো আমি আসছি না। তোকে কল করলে আবার বলে দিস না আমি পৌঁচ্ছে গেছি। মনুয়ার সাথে কথা শেষ করে বৈশুকে কল করে বললাম খুব বৃষ্টি এখানে তাই আজ যাওয়া হচ্ছে না। সে কি রাগ বৈশুর, যদিও কলে বলছিলো উনি যার তার সাথে রাগ করেন না। অনেকক্ষণ এইসব করে যখন বুঝলাম উনি রেগে প্রায় কেঁদেই ফেলবেন তখন ওদের বাড়ির কলিং বেলে চাপ দিলাম। ঘরে ঢুকতেই গিনি আর বৈশুর চোখ মুখে আনন্দের লহর বয়ে গেলো। কতবছর পরে পায়েস খেয়ে জন্মদিন উদযাপন করলাম মনেই করতে পারিনি। রাতে মনুয়া কেক নিয়ে এলে কেক কাটা হলো বৈশু সারা সন্ধ্যা ধরে বানালো পোলাও চিকেন চিলি, রাত রঙ্গিন হলো আড্ডায়, স্মৃতিচারণে।
সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দা থেকে বৃষ্টির ছাঁট এসে পড়ছে খাবার টেবিলের পাশে, একটু আগে বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। বৈশুর সাথে কথা বলতে বলতে মনে পড়ল- ‘সারা দিন ধরে বৃষ্টি ঝরছে। নির্জন গলি। অন্ধ আবেগে/ উন্মাদ ঝোড়ো হাওয়া হেঁকে যায়, শীর্ণ পথের/ স্মৃতির জীর্ণ খোলস নাড়িয়ে ছুটে যায়; ফের/ শার্সিতে বাজে একটানা সুর/ বৃষ্টির, মৃদু কান্নার সুর একটানা বাজে’। তোমার মনে পড়ে এই কবিতাটি? সেদিনও শ্রাবণ মাস অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল তিনদিন ধরে কলেজ ক্যান্টিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি বিড়বিড় করছিলাম এই কবিতাটি আর তুমি পাশ থেকে বলে উঠেছিলে- একটু জোরে বলুন না প্লিজ! আমি বিস্ময়ে তাকিয়েছিলাম এর আগে কোনদিন কথা হয়নি আমাদের অথচ রোজ তোমাকে দেখতাম ক্লাসে, ক্যান্টিনে, লাইব্রেরীতে, জানতাম তুমি আমার পাড়াতেই থাকো কিন্তু কথা হয়নি। তুমি বহুবার জানতে চেয়েছো আমি কেন বিস্মিত হয়েছিলাম সেইদিন, তোমাকে তার কারণ বলেছিলাম কিনা মনে করতে পারছিনা এত দশক পরে তাই আজ বলি সে সময় সুনীল, শক্তি বা পূর্ণেন্দু পত্রীদের কবিতা নারী মনের যতটা কাছের যতটা জনপ্রিয় নীরেন্দ্রনাথ ঠিক ততটা মুখে মুখে ঘুরে ফেরেন না। তাই তোমার আগ্রহ আমাকে বিস্মিত করেছিল। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবন শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ শিক্ষিত বাঙালি পরিবারের ঘেরাটোপেই। ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে তাঁর জন্ম। নীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘... সেখান থেকে সব চেয়ে কাছের রেল-ইস্টিশানটিও ছিল চব্বিশ মাইল দূরে।... বাড়ির সংখ্যা বিশ থেকে বাইশের মধ্যে। পাকা বাড়ি কুল্যে একটি। তাও দোতলা নয়, একতলা।...’’ এমন এক পরিবেশই হয়তো সে দিন প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর কবিতার এই দুই সত্তাকে রোপণ করে দিয়েছিল তাঁর মধ্যে। পরে এক সময় বলেছিলেন, ‘‘যেমন বিশ্বপ্রকৃতি, তেমনি মানবপ্রকৃতি। এ-দুয়ের যোগসম্পর্ক এতই নিবিড় যে, একটায় যখন আস্থা হারাই, তখন অন্যটাতেও আস্থা থাকে না।’’ আর, হয়তো সেই কারণেই তাঁর কবিতার বইয়ের নাম দেন ‘নীরক্ত করবী’, ‘উলঙ্গ রাজা’ কিংবা ‘অন্ধকার বারান্দা’। ‘‘কোনও কোনও ঘটনায় ক্রুদ্ধ না হলে লিখতেই পারি না’’ এমন সহজ স্বীকারোক্তি কিংবা ‘‘আর না, মানুষ আর না’’ কথনের পরেও সাবলীল, ‘‘ওটা আসলে অভিমানের কথা। মানুষকে বড় ভালবাসি।’’এ কেবলই কথার কথা নয়। যে কোনও রকম প্রশ্নের কাছে তিনি কখনওই জ্ঞানীর দূরত্ব রাখেননি, বন্ধুর আন্তরিকতায় পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন, জানার অহমিকা নিয়ে নয়, জানানোর আনন্দ নিয়ে। মানুষের প্রতি ভালবাসাই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে মানুষের কাছে। এবং ক্রমশ এরই কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য এক প্রতিষ্ঠানস্বরূপ। নীল নির্জন থেকে শুরু হওয়া কবি, আনন্দমেলা-র যুগান্তকারী সম্পাদক, বাংলা ভাষার নীতি-নির্ধারক, গদ্যকার, শিক্ষিত বাঙালির শৈশবে হুল্লোড় তুলে দেওয়া টিনটিন অনুবাদক, জনপ্রিয় এই বহুমুখী লিখন প্রতিভাকে দেখতে হলে, তাঁর সময়কে খানিকটা পাশে রেখে হেঁটে আসা যেতে পারে।
রবীন্দ্রনাথের প্রভা ও প্রভাব থেকে তখনও বাংলা ভাষার কবিকুল পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি। অনেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত হতে, কিন্তু সফল হচ্ছেন না! ক্রমে ঘরে বাইরে বহুমাত্রিক সঙ্কট, আর সেই সঙ্কটের বাতাবরণেই যেন জন্ম হল ত্রিশ-পরবর্তী কবিকুলের। নীরেন্দ্রনাথেরও। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা তাঁর সময়কে নিখুঁত ভাবে হাজির করে আশাবাদের কথা বলে। তাঁর অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চায়। তাঁর কবিতার বালক রাজাকে দেখে উলঙ্গ বলে ডেকে ওঠে। তাঁর কবিতায় পরাজয় নেই। তাঁর কলমে বিদ্রোহ বা বিপ্লবের জন্য প্রত্যক্ষ হুঙ্কার হয়তো ছিল না, কিন্তু ছিল মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য অপরিসীম ভালবাসা। কবিতার জন্য নীরেন্দ্রনাথ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দীর্ঘ, সক্রিয় ও গতিশীল একটি জীবন তিনি যাপন করেছেন। পঁচানববই বছরের পথপরিক্রমায় কবিতার সঙ্গে কোনো দিনই বিচ্ছেদ রচিত হয়নি তাঁর। আর কবিতার বাইরে যা-কিছু লিখেছেন, সেখানে কবি নীরেন্দ্রনাথের আধিপত্যই নানা মাত্রায় উদ্ভাসিত। তাঁর গদ্য আক্ষরিক অর্থেই আপাদমস্তক একজন কবির গদ্য। গদ্যের সভায় তিনি কখনো আগন্তুক ছিলেন না, তাঁর পদচারণা রাজাধিরাজের মতো। আর এতেই যৌবন পেরনোর আগেই হয়ে উঠলেন খ্যাতিমান, জনপ্রিয়, সাহিত্যের প্রিয় জন। একেবারে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, চার পাশের দেখা-জানা জগৎ, কথা বা কাহিনিতে মানুষকে জড়িয়েই তাঁর কবিতা। অনেকটাই গল্পের প্রকৃতিতে রচিত ‘বাতাসী’, ‘হ্যালো দমদম’, ‘কলকাতার যিশু’, ‘জঙ্গলে এক উন্মাদিনী’, ‘স্বপ্নে দেখা ঘর-দুয়ার’ বা ‘কলঘরে চিলের কান্না’-র মতো অজস্র কবিতা মানুষের মুখে মুখে ফিরে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে আজ ইতিহাস করে দিয়েছে। নিজের কবিতা-আদর্শ বিষয়ে তিনি বহু জায়গায় স্পষ্ট ভাবে বলেছেন। সাহিত্য অকাদেমি আয়োজিত তরুণ কবিদের ‘পারস্পরিক বিনিময়’ শীর্ষক এক রুদ্ধদ্বার কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে তিনি বলছেন, “আমি নিজে গালাগাল খেয়েছি অনেক, যখন কবিতার মধ্যে গল্প ঢোকাবার চেষ্টা করেছি। আমার ধারণা ঢোকানো যায়। গল্প সেই অর্থে গল্প না, একটা গল্পের ছায়া কবিতায় পড়তেই পারে। আমাকে বলা হয়েছিল এটা ঠিক তো কবিতা হচ্ছে না। এটা ঠিক কবিতা হল কি? কবিতা কি এইসব সহ্য করে? কবিতা কি সহ্য করে আর না করে ফতোয়াটা কে দেবে? আমার ধারণা কবিতাকে দিয়ে সব রকমের কাজ করানো যায়, সব রকমের।” এই সব কাজের জন্যে প্রথম কাব্যগ্রন্থ নীল নির্জন-এর যে আখ্যানহীন নির্যাস, যার ভরকেন্দ্র মূলত প্রকৃতি নির্ভরতা, তা থেকে ক্রমশ সরে গিয়ে সচেতন সহজ বোধ্যতার দিকে চলে যাচ্ছেন। পৃথিবী যে পুষ্পশয্যা নয় এ-কথা সমস্ত সংবেদনশীল মানুষই অনুভব করেন। এই অনুভব ও উপলব্ধির তারগুলো সবার ক্ষেত্রে সমান তালে বাজে না বলেই বিচিত্র সংগীতের জন্ম অনিবার্য হয়ে ওঠে। ‘ধ্বংসের আগে’ শীর্ষক কবিতাটিতে ব্যর্থতার দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন কবি, ‘ব্যর্থবীর্য শয়তানের আবির্ভাব’ মেনে নিয়েছেন, ‘পাতালের সর্বনাশা অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে’ কবি দৃঢ়হাতে যবনিকা টেনে দেওয়ার কথা বলেছেন, বিষাদ বেদনার দৃঢ় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ঢালো গ্লানি, ঢালো মৃত্যু, শিল্পীর বেহালা ভেঙে ফেলে/ অন্ধকার রঙ্গমঞ্চে অট্টহাসি দু’হাতে ছড়াও। তবু কবির পথচলা, মানুষের জন্য কথা বলা কখনো থামবে না।
তুমি জানো কিনা জানিনা শিক্ষাজীবন শেষ করে নীরেন্দ্র্রনাথ শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতার কাজ। ‘প্রত্যহ’, ‘মাতৃভূমি’, ‘অ্যাডভান্স’, ‘ভারত’, ‘কিশোর’, ‘সত্যযুগ’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় কাজের পর ১৯৫১-তে আনন্দবাজার সংস্থায় যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীরেন্দ্রনাথকে দেখা গেল তুখড় সাংবাদিক হিসেবেই। আড্ডা-আলাপে বৈঠকি বাঙালির রসবোধে টইটম্বুর, সভায়-সমাবেশে স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা। ক্রিকেট ও ফুটবল-পাগল মানুষটি যৌবনে খেলার মাঠে যতখানি ক্ষিপ্র, ঠিক ততখানিই তাঁর ক্ষিপ্রতা, যখন তিনি ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকার সম্পাদক। কঠিন সম্পাদক কিংবা কোমল মানুষ ছাড়াও কবিতার জন্য নীরেন্দ্রনাথ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দীর্ঘ, সক্রিয় ও গতিশীল একটি জীবন তিনি যাপন করেছেন। পঁচানববই বছরের পথপরিক্রমায় কবিতার সঙ্গে কোনো দিনই বিচ্ছেদ রচিত হয়নি তাঁর। আর কবিতার বাইরে যা-কিছু লিখেছেন, সেখানে কবি নীরেন্দ্রনাথের আধিপত্যই নানা মাত্রায় উদ্ভাসিত। তাঁর গদ্য আক্ষরিক অর্থেই আপাদমস্তক একজন কবির গদ্য। গদ্যের সভায় তিনি কখনো আগন্তুক ছিলেন না, তাঁর পদচারণা রাজাধিরাজের মতো। নীরেন্দ্রনাথের কাছে বাংলা কবিতার মানুষ নন, বাংলাভাষার প্রত্যেকেই চিরকাল ঋণী থাকবেন হয়তো। বাংলা ভাষার বানানরীতি ও সাধারণ-মান্য ব্যাকরণের ভাবনায় তিনি আজীবন কাজ করে গিয়েছেন। ‘বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ কিংবা সম্পাদক ও লেখকদের জন্য একটি অভিধান রচনা ও সঙ্কলন তার সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর ‘কবিতার ক্লাস’ বা ‘কবিতার কী ও কেন’ বই দু’টিও কবিতার অনুরাগীর কাছে মূল্যবান। বাংলা ও ইংরেজি, দুই ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি সর্বজনবিদিত। অনুবাদের ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য, বিশেষ করে ছোটদের জন্য অনুবাদের বেলায় তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভার বিকাশ আজও অবাক করে দেয়। তাঁর কর্মজীবন আমাদের জানায় যে, বেহিসেবি, অলস, আপনভোলা, উদাসীন জাতীয় নানা অভিধায় কবিকুল চির দিন চিহ্নিত হলেও, সে অভিধাই শেষ কথা নয়।
সরস সুমধুর পরিশীলিত ব্যক্ত্বিত্বের অধিকারী নীরেন্দ্রনাথ বন্ধ ঘরের মানুষ নন, এই প্রবণতাটি যেন প্রথম থেকেই স্থির নির্দিষ্ট। সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে কবির একাকী নির্জন পথ তাঁর নয়, তিনি বিশ্ব নিখিলের বিরাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে চেয়েছেন। মোহনবাগান-এর গোঁড়া ভক্ত নীরেন্দ্রনাথ তাসের (ব্রিজ) নেশায় ছিলেন মশগুল। আবার, এই সমুদ্রভক্ত মানুষটি বাংলা কবিতার প্রতিনিধিত্ব করতে বহু বার পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে, ভারত উৎসবে। হয়তো সে কারণেই ক্রমশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিষ্ঠান-প্রতিম। অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে তাই তাঁকেই দেখলাম আমরা। দেখলাম সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় মানুষ তাঁকে বার বার টানছেন। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (’৭৪), আনন্দ পুরস্কার (’৭৬), শরৎস্মৃতি পুরস্কার (’৯৬), প্রভৃতি অজস্র সম্মানে বাংলা ও বাঙালি তাঁকে ভূষিত করেছে তাঁর নানাবিধ সাহিত্যকীর্তির জন্য। পেয়েছেন ‘বঙ্গবিভূষণ’। নীরেন্দ্রনাথের নিজের ভিতরে এক ভিন্ন খোঁজও ছিল। তিনি বেঁচে থাকবেন, বাংলা কবিতার মানুষ যত দিন বাঁচবে। কেননা, তিনিই তো বলেছেন তাঁদের, ‘ঈশ্বর! ঈশ্বর’ শীর্ষক কবিতায়, ‘ঈশ্বরের সঙ্গে আমি বিবাদ করিনি।/ তবুও ঈশ্বর/ হঠাৎ আমাকে ছেড়ে কোথায় গেলেন?/ অন্ধকার ঘর।/ আমি সেই ঘরের জানলায়/ মুখ রেখে/ দেখতে পাই, সমস্ত আকাশে লাল আভা,/ নিঃসঙ্গ পথিক দূর দিগন্তের দিকে চলেছেন’।
আরো অনেক কথা লেখা যায়। কিন্তু চিঠিটা আর দীর্ঘ করতে চাইছি না। তোমার কথা বলো খিচুড়ির সাথে অবশেষে কি নিয়েছিলে। আমি ভুল না হলে নিশ্চয়ই মাংস কষাই ছিল। উত্তরবঙ্গে এখন আর আগের মতন লাগাতার সাতদিন বৃষ্টি হয়না। কংক্রিটের শহরে বৃষ্টির শব্দও আর আগের মতন শোনা যায় না, আমাদের গেছে যে দিন সে কি তবে একেবারই গেছে? নিরন্তর ভালো থেকো।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সহ
বাসু
১৬ আগষ্ট, ২০২৫ । সন্ধ্যা
পুনশ্চ: এবার পূজা বিশ্বের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম বেনারসে কাটাবো। বর্ষায় বেনারসের ঘাটের সৌন্দর্য আলাদা। পরের চিঠিটা তোমাকে সেখান থেকেই লিখব।