Next
Previous
0

প্রবন্ধ - মনোজিৎকুমার দাস

Posted in








ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের স্বামী বিবেকানন্দ অন্যতম পুরোধা । তিনি হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।

স্বামী বিবেকানন্দের জীবন দর্শন শিক্ষা , ধর্ম,সমাজ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে। তিনি একজন সন্ন্যাসী হয়েও
মানুষের শিক্ষা, ধর্ম, সমাজ ইত্যাদিকে নিয়ে তার অমূল্য দর্শনকে তুলে ধরেছেন মানবিক ভঙ্গিতে, যা মানব কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। এমনভাবে কোন সন্ন্যাসী মানবতার দর্শন ও সমাজ সংস্কারের বাণী প্রচার করেছেন বলে মনে হয় না।

স্বামী বিবেকানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।তার সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাটি হল, "আমেরিকার ভাই ও বোনেরা ...," ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত চিকাগো বক্তৃতা, যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন।

জীবনের দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করার আগে তার ব্যক্তি জীবনের উপর বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না বলে মনে করি।

বিবেকানন্দের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত (ডাকনাম ছিল বীরেশ্বর বা বিলে এবং নরেন্দ্র বা নরেন)। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ১২ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি উৎসবের দিন উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে ৩ নম্বর গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতা উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী ছিলেন। বিবেকানন্দ একটি প্রথাগত বাঙালি কায়স্থ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যেখানে তার নয় জন ভাই-বোন ছিল।তার মধ্যম ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বিদেশ ভ্রমণে বিবেকানন্দের সঙ্গী। কনিষ্ঠ ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট সাম্যবাদী নেতা ও গ্রন্থকার।

ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে নরেন্দ্রনাথের আগ্রহ ফুটে ওঠে।স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শন প্রধানত মানবকেন্দ্রিক। উপনিষদ থেকেই তিনি এ শিক্ষা নিয়েছিলেন। মানুষকে নানা স্তরে বিশ্লেষণ করে, প্রত্যেক স্তরের পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে অবশেষে মানুষের নিগূঢ়তম সত্যের পরিচয় প্রদানই উপনিষদের লক্ষ্য। স্বামী বিবেকানন্দ মানুষকে উপনিষদের দৃষ্টি দিয়েই দেখতেন। মানুষের দেহ-মন আশা-আকাঙ্ক্ষা কোনটাই অবহেলা করার নয়- কিন্তু তার অন্তরতম সত্য সর্বাপেক্ষা আদরণীয়। মানুষ যদি এই সত্যকে ভুলে তার বাহিরের সত্যগুলোকেই বড় করে তুলতে চায় তা হলে সে শ্রেয়ের পথ থেকে বিচ্যুত। সে নিজের ব্যক্তিগত কল্যাণকে সম্পূর্ণ সমৃদ্ধ করতে তো পারবেই না উপরন্তু সমাজকল্যাণকেও সে পদে পদে ব্যাহত করবে। কেননা, মানুষের দৈবসত্তাকে বাদ দিলে মানুষ স্বার্থপর হতে বাধ্য। হিংসা, ঘৃণা, লোভ, দম্ভ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া তার পক্ষে স্বাভাবিক। স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন মানুষের দেবত্ব-উপলব্ধি ব্যাপকভাবে অভ্যাস করার সময় এসেছে। মানুষের শ্রেষ্ঠ সত্য তার জীবনের সর্বস্তরে প্রয়োগ করা যায় এবং করতে হবে। নতুবা মানবসভ্যতার সমূহ সঙ্কট। স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শনে এই প্রয়োগের নাম ‘কর্ম-পরিণত বেদান্ত’ । এছাড়া স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শনে ‘অভয়’ একটি প্রকৃষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর মতে, সাহস ও শক্তিমত্তা সর্বস্তরেই মানুষকে অগ্রগতিতে সাহায্য করে। সেজন্য তিনি কি ব্যক্তিগত, পরিবারগত অথবা সমাজগত, শিক্ষাগত কিংবা ধর্মগত সকল ক্ষেত্রেই উদ্যম, সাহস এবং নির্ভিকতার অনুশীলনের কথা বলতেন। তাঁর জীবনদর্শনের অন্যতম প্রতিজ্ঞা—সকল মানুষের অন্তরশায়ী আত্মা যিনি সর্বশক্তির আকর, চিরমুক্ত, চিরস্বচ্ছ, তাঁর জাগরণই মানুষের সকল কল্যাণের নিদান। বলেছেন তিনি, “উপায় শিক্ষার প্রচার। প্রথমত আত্মবিদ্যা—ঐ কথা বললেই যে জটাজূট, দণ্ড, কমণ্ডলু ও গিরিগুহা মনে আসে, আমার বক্তব্য তা নয়। তবে কি? যে জ্ঞানে ভববন্দন হতে মুক্তি পর্যন্ত পাওয়া যায়, তাতে আর সামান্য বৈষয়িক উন্নতি হয় না? অবশ্যই হয়। মুক্তি, বৈরাগ্য, ত্যাগ এসকল তো মহাশ্রেষ্ঠ আদর্শ; কিন্তু ‘স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ’। এই আত্মবিদ্যার সামান্য অনুষ্ঠানেও মানুষ মহাভয়ের হাত হইতে বাঁচিয়া যায়। মানুষের অন্তরে যে শক্তি রহিয়াছে, তাহা উদ্বুদ্ধ হইলে মানুষ অন্নবস্ত্রের সংস্থান হইতে আরম্ভ করিয়া সব কিছুই অনায়াসে করিতে পারি।” “এই শক্তির উদ্বোধন করিতে হইবে দ্বারে দ্বারে যাইয়া। দ্বিতীয়ত সেই সঙ্গে বিদ্যাশিক্ষা দিতে হইবে।” তার শিক্ষা দর্শন অসাধারণ, যা মানব জীবনকে পূর্ণতা দান করে।

স্বামী বিবেকানন্দ মানুষকে শুধু ইতিবাচক শিক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, নেতিবাচক চিন্তাগুলি মানুষকে দুর্বল করে দেয়। তিনি বলেছিলেন, যদি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সবসময় দোষারোপ না করে উৎসাহিত করা হয়, তবে তারা এক সময় উন্নতি করবেই।
নিউ ইয়র্কে বিবেকানন্দ দেখেছিলেন, আইরিশ উপনিবেশ-স্থাপকরা খুবই খারাপ অবস্থায় খুব সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে ভয়ে ভয়ে সেখানে এসেছিল, কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই তাদের পোষাকপরিচ্ছদ আচারব্যাবহার সব পালটে যায়। তখন তাদের মধ্যে সেই ভয়ভীতির ভাব সম্পূর্ণ তিরোহিত হয়েছিল। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিবেকানন্দ দেখেন যে, যদি বেদান্তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে বলতে হবে সেই আইরিশেরা স্বজাতীয়দের দেয়ারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং সবাই তাকে বলছিল, "প্যাট, তোমার কোনো আশা নেই, তুমি ক্রীতদাস হয়ে জন্মেছো এবং তাই থাকবে।" এই কারণে তার মনে হীনম্মন্যতা এসেছিল। কিন্তু আমেরিকায় আসার পর থেকে সবাই তাকে বলতে শুরু করল, "প্যাট, তুমিও মানুষ আমাদের মতো। মানুষই সব করে। তোমার আমার মতো মানুষেরাই করে। তাই সাহসী হও!" সেই জন্যই সে মাথা তুলে আত্মমর্যাদায় ভর করে চলছে। তাই বিবেকানন্দ বলেছেন, ম্যাকলের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভারতীয় বর্ণব্যবস্থা ছেলেমেয়েদের নেতিবাচক শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা থেকে তারা আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদার শিক্ষা পায় না। বিবেকানন্দের মতে, একমাত্র ইতিবাচক শিক্ষাই তাদের দেওয়া উচিত।

স্বামী বিবেকানন্দের জীবন দর্শনের পরিচয় পাই আমরা তার বাণী থেকে।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন , “ উপনিষদের প্রতি পাতায় আমাকে যার কথা বলা হয়েছে তা হল সাহস । এইটিই সবচেয়ে মনে রাখবার কথা । আমার জীবনে এই একটি বড়াে শিক্ষাই আমি নিয়েছি । হে মানুষ ! বীর্যবান হও , দুর্বল হােয়াে না ! ”

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন , “ জাতি হিসেবে আমরা যা কিছু । পেয়েছি সবই আমাদের দুর্বল করেছে । ” মনে হয় সেই সময় জাতির জীবনের একটিই উদ্দেশ্য ছিল , কী করে আমাদের দুর্বল থেকে দুর্বলতর করা যায় । শেষ পর্যন্ত আমরা কেচোতে পরিণত হয়েছি , যে কেউ তরবারি দেখিয়ে আমাদের পদানত করেছে তার । পায়ের তলায় থাকবার জন্যে ।

আমি যা চাই তা হল লৌহনির্মিত পেশী এবং স্বাস্থ্য । শক্ত ধাতুতে নির্মিত মন । পৌরুষের পূজা করাে ।

সব শক্তি তােমার মধ্যে আছে । তুমি সব কিছু করতে পার , তা বিশ্বাস করাে ভেবােনা তুমি দুর্বল । তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার । কারও নির্দেশ ছাড়াই । সবশক্তি তােমার মধ্যে আছে । উঠে দাঁড়িয়ে | তােমার ভিতরকার দেবত্বকে প্রকাশ করাে ।

তােমার দেশ বীর চায় , বীর হও । পাহাড়ের মত দৃঢ় হও । সত্য সর্বদা জয়ী হয় , দেশের লােক যা চায় তা হল জাতির ধমনীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ , দেশের মধ্যে প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে । সাহসী হও , মৃত্যু একবারই আসে । হিন্দুদের ভীরু হলে চলবে না । ভীরুতা আমি ঘৃণা করি । মনে গভীর শান্তি বজায় রাখাে । তােমার বিরুদ্ধে বালখিল্যের কী বলল তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করাে না । অগ্রাহ্য করাে ! অগ্রাহ্য করাে অগ্রাহ্য করাে ! সমস্ত বড়াে বড়াে কীর্তিই স্থাপিত হয়েছে বিশাল বিশাল বাধা অতিক্রম করে । পুরুষ ব্যঘের মত চেষ্টা করাে ।

বন্ধু , ক্রন্দন করছ কেন ? সমস্ত শক্তি তােমার মধ্যেই আছে , তােমার সর্বশক্তিমান স্বভাবকে জাগ্রত করাে । তাহলে সমগ্র বিশ্ব তােমার পায়ের তলে লুটিয়ে পড়বে । মুর্খরা কাতরস্বরে বলে , “ দুর্বল আমরা দুর্বল ” । জাতি চায় কাজ এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিভা । আমাদের প্রয়ােজন মহৎ আত্মা , প্রবল শক্তি এবং অসীম উৎসাহ । উদ্যোগী পুরুষসিংহেরই লক্ষ্মীলাভ হয় । পিছনে তাকানাের প্রয়ােজন নেই , আমরা চাই অসীম প্রাণশক্তি , অসীম উৎসাহ , অসীম । সাহস এবং ধৈর্য । একমাত্র তাহলেই বড়াে কিছু সাধিত হতে পারে ।

বেদ কোনও পাপ স্বীকার করে না , একমাত্র ভুল স্বীকার করে । বেদের মতে সব চেয়ে বড়াে ভুল এ কথা বলা যে তুমি দুর্বল , তুমি । পাপী , এক হতভাগ্য জীব , তােমার কোনও শক্তি নেই , তুমি এই কাজ , কি ওই কাজ করতে পার না ।

শক্তিই জীবন , দুর্বলতা মৃত্যু , শক্তি সুখ , জীবন অনন্ত মৃত্যুহীন । দুর্বলতা সর্বক্ষণের কষ্টভােগ , দুর্বলতা মৃত্যু । সদর্থক মনােভাবসম্পন্ন । হও , শক্তিশালী হও । শৈশব থেকেই এমন সব চিন্তা তােমার মস্তকে প্রবেশ করুক যে চিন্তা সহায়তাকারী । দুর্বলতাই দুঃখ ভােগের । একমাত্র কারণ । আমরা দুঃখভােগ করি , কারণ আমরা দুর্বল । আমরা মিথ্যা বলি , চুরি করি , খুন করি , অন্যান্য অপরাধ করি তার কারণ - আমরা দুর্বল , আমরা যন্ত্রণা পাই কারণ - আমরা দুর্বল । আমাদের মৃত্যু হয় কারণ আমরা দুর্বল । যেখানে দুর্বলতার কারণ । নেই , সেখানে মৃত্যু নেই , দুঃখ নেই , একমাত্র প্রয়ােজন শক্তি । শক্তি । জগতের ব্যাধির ঔষধ । প্রবলের দ্বারা অত্যাচারিত দুর্বলের ঔষধ শক্তি । বিদ্বানের দ্বারা অত্যাচারিত অজ্ঞ ব্যক্তির ঔষধ শক্তি । এক পাপী যখন অন্য পাপীর দ্বারা অত্যাচারিত হয় তার ঔষধ শক্তি । উঠে দাঁড়াও , সাহসী হও , শক্তিমান হও , সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নাও এবং জানাে , যে তুমি তােমার ভাগ্যের নিয়ন্তা । যত শক্তি , যত সহায়তা আমাদের চাই , সব তােমার নিজের মধ্যেই আছে । অতএব নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গঠন করাে ।

সারাক্ষণ যদি মনে করি আমরা ব্যধিগ্রস্ত , ব্যাধি সারবে না । দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে দিলে বিশেষ সহায়তা হয় না । সারাক্ষণ দুর্বলতার কথা । ভাবলে শক্তি আসে না , দুর্বলতা নিয়ে চিন্তা করলে তাতে দুর্বলতার অবসান হয় না , শক্তি নিয়ে চিন্তা করলে দুর্বলতার অবসান হয় ।

এই জগতে এবং ধর্মের জগতে এই সত্য । ভয়ই অধঃপতনের এবং পাপের নিশ্চিত কারণ । ভয়ই দুঃখকে ডেকে আনে । ভয়ই । মৃত্যুকে ডেকে আনে , ভয়ই অশুভের জন্ম দেয় ।

ভয় কোথা থেকে আসে ? আমাদের স্বভাব সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে । আমরা প্রত্যেকে রাজাধিরাজের অর্থাৎ ঈশ্বরের যুবরাজ । । জেনে রাখাে , সমস্ত পাপ , সমস্ত অশুভকে এক কথায় বলা যায় । দুর্বলতা । সমস্ত মন্দ কাজের পিছনে শক্তি জোগাচ্ছে দুর্বলতা । সমস্ত স্বার্থপরতার উৎস দুর্বলতা । দুর্বলতার কারণেই মানুষ মানুষকে আঘাত । করে , দুর্বলতার কারণেই মানুষ যা নয় নিজেকে সেই ভাবে দেখায় ।

আমাদের জনসাধারণের এখন যা প্রয়ােজন তা হল লােহার পেশী , ইস্পাতের স্নায়ু , প্রচণ্ড এক ইচ্ছা শক্তি , যাকে কিছুতেই প্রতিরােধ করতে পারে না , যা বিশ্বের রহস্য ভেদ করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে , যে কোনােভাবেই হােক , তার জন্যে যদি সাগরের তলে যেতে হয় , মৃত্যুর মুখােমুখি দাঁড়াতে হয় , তবুও ।

আমরা অনেক দিন ক্রন্দন করেছি , এখন নিজের পায়ে দাড়াও , মানুষ হও । আমাদের প্রয়ােজন এমন ধর্ম যা মানুষ তৈরি করে । আমাদের প্রয়ােজন এমন তত্ত্ব যা মানুষ তৈরি করে । আমাদের এমন সর্বাঙ্গীণ শিক্ষা প্রয়ােজন যা মানুষ তৈরি করে এবং এইখানেই সত্যের পরীক্ষা । যা কিছু তােমাকে শারীরিকভাবে , বুদ্ধি বৃত্তিকে আত্মিক শক্তিকে দুর্বল করে , তাকে খারিজ করাে । যাতে প্রাণ নেই , তা সত্য হতে পারে না । সত্য শক্তি দেয় , সত্য পরিত্রাতা , সত্য । সকল জ্ঞান । সত্য অবশ্যই শক্তিদাতা আলােকদাতা ।

আমরা তােতা পাখির মতাে অনেক কথা বলি , কিন্তু কাজ করি । । কথা বলা , কাজ না করা আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে । তার কারণ কী ? শারীরিক দুর্বলতা । এরকম দুর্বল মস্তিষ্ক কোনও কাজ করতে পারে না । মস্তিষ্কের শক্তি আমাদের বাড়াতে হবে । সর্ব প্রথম আমাদের যুবকদের সবল হতে হবে । ধর্ম আসবে তার পরে , কৃষ্ণের । বিশাল প্রতিভা ও বিশাল শক্তি তােমরা তখনই উপলব্ধি করতে পারবে যখন তােমাদের ধমনীতে শক্তিশালী রক্ত প্রবাহিত হবে । । তােমরা উপনিষদ এবং আত্মার মহিমা আরও ভাল করে বুঝতে পারবে , যখন তােমাদের শরীর তােমাদের পায়ের উপর শক্ত হয়ে । দাঁড়াতে পারবে এবং তােমরা অনুভব করবে যে তােমরা মানুষ ।

নীতি - পরায়ণ হও , সাহসী হও , সর্বান্তঃকারণে কঠোরভাবে নীতি - পরায়ণ মানুষ হও , সাহসী হও , বেপরােয়া হও । কাপুরুষেরা পাপ করে , সাহসীরা কখনােই নয় । প্রত্যেককে , সকলকে ভালােবাসার চেষ্টা করাে ।

উঠে দাঁড়াও , জোয়ালে কাঁধ লাগাও । জীবন কত দিনের ? একবার যখন পৃথিবীতে এসেছ , একটা চিহ্ন রেখে যাও । তা না হলে গাছ আর পাথরের সঙ্গে তােমার তফাৎ কী ? তারাও জন্মায় , তারাও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় , মারা যায় ।

সাহসী হও । আমার সন্তানেরা সবার উপরে সাসী হবে । কোনাে কারণে একটুও আপােস নয় । সর্বোচ্চ সত্য শেখাও। সম্মান হারানাের ভয় কোরাে না , অপ্রিয় সংঘাত সৃষ্টি করাকে ভয় করাে । না । জেনে রাখাে , সত্যকে ত্যাগ করার প্রলােভন সত্ত্বেও সত্যের সেবা করতে হবে ।

স্বামী বিবেকানন্দ ছাড়া আর কোন সন্ন্যাসী যুবাদের উদ্দেশ্যে এমন উপদেশ দেননি, এজন্যই তিনি মানবতাবাদী সমাজ সংস্কারক।