ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল
Posted in ধারাবাহিকএকুশ
আজ সুনীতা গ্রামের বাড়ি যাবে। সে পরিবারের সঙ্গে বাসস্টপে এসেছে ব্যাগপত্তর নিয়ে। সুনীতাকে দেখে অতনু কাছে এল। অতনুর মা বললেন, সুনীতার মুখে তোমার কথা শুনেছি। আজকে তোমাকে ছাড়ছি না। আমাদের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি পুজো দেখতে চল। অতনু বলল,আমি অনাথ পুজোবাড়িতে আমার স্থান হবে? সুনীতার মা বললেন, কে বললো তুমি অনাথ। তুমি আমাদের পরিবারের একজন হলে। আমরা আছি, চল। অতনু তার সঙ্গিদের বললো, আমি পুজোয় গ্রামে যাচ্ছি। তোরা সাবধানে থাকিস।
গ্রামের পুজোবাড়িতে আরতির বাজনা বাজছে। ধুনোর গন্ধে পুজোবাড়ি মাতোয়ারা। আর একটু পরেই ধুনুচি নাচ শুরু হবে।
সুনীতা ধুনুচি নাচ নাচছে। ধুনোর গন্ধে অতনু খুশি। একটা শিহরণ তার শিরায় শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। সুনীতার চোখ তার দিকে। সুনীতার মা অতনুকে হাত নেড়ে হাসিমুখে ডাকছেন। সুনীতার মায়ের মুখটা ঠিক দুর্গা প্রতিমার মত। তার চোখের দিকে তাকিয়ে অতনু এই প্রথম বলে উঠলো, মা, মা গো...।
রাজুকে বিপিন তার বাড়ি নিয়ে আসে,গল্পগুজব করে।সে বলে,তোমার যখন ইচ্ছে হবে আমার বাড়ি আসবে। এবার পুজোয় আমরা আবাডাঙা যাব।বিপিন বলে,শুনেছি ওখানে পটের ঠাকুর পূজিত হন।রাজু বলে,হ্যাঁ।দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল।রাজু বিপিনকে নিয়ে এল আবাডাঙা।সে বলল,বীরভূমের আবাডাঙা গ্রামে বাড়ুজ্জে পরিবারের পটের পুজো বিখ্যাত। পটের দুর্গা,পটের লক্ষী,পটের কার্তিক নানা জায়গায় পূজিত হন। পাটের থিম "পট ও পুতুল এর মাঝে এস ই ও " মূলত প্রতিটি জেলার হস্তশিল্পের তাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ।থিমটি প্রথমবারের মতো বাংলার ২৩টি জেলার প্রতিটি হস্তশিল্পের সারমর্ম। সমৃদ্ধসাংস্কৃতিক এই ঐতিহ্যকেই মূলত তুলে ধরতেই চেয়েছে এসইও।এসইও র এই উদযাপন শুধু বাসিন্দাদের জন্যই নয়।ঘরের মেয়ের এই আগমন উৎসব সমস্ত দর্শকদের উপভোগের জন্যও সমান খোলা থাকে। ভাস্করশিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের হাতে এবার তৈরি হচ্ছে তাদের মাতৃমূর্তি।দূরদূরান্ত থেকে লোক ছুটে আসে সিলভার ওকের এমন নির্মল ও কল্যাণময় মাতৃমূর্তি দেখতে। সারল্যই এই মূর্তির বৈশিষ্ট। মা পরে থাকেন সুতির শাড়ী। সহজ সরল গ্রাম্য মেয়ের সাজে সেজে ওঠেন ওখানে মা। সঞ্জায় দাসের সৃজনশীল নির্দেশনায় এবার সেজে উঠছে সিলভার ওকের মন্ডল। আলোকসজ্জ করছেন এবারে বিশ্বজিৎ সরকার। প্যান্ডেল ডিসাইনের দায়িত্বে আছেন সুরজিৎ সেন।
পূজার সময় একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবার। তাদের মধ্যে
প্রথম হলো আনন্দমেলা উৎসব এই উৎসবে বাড়ির শেফরা তাদের রান্নার দক্ষতা প্রদর্শন করবেন ।
দ্বিতীয়ত আবাসিকদের জন্য থাকছে ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, যেখানে নাটক, আবৃত্তি, নাচ, গান প্রভৃতি পরিবেশন করতে পারবেন ৮ থেকে ৮০ সকলে
তৃতীয়ত স্বনামধন্য গায়ক অনীক ধর ও উর্মি চৌধুরী আসছেন এই পুজোয় গান গাইতে।
চতুর্থত থাকছে মহাভোজ। এই চারদিন আবাসিকরা মণ্ডপেই পুজোর ভোগ খাবেন। আর খাওয়া দেওয়ার সাথেই চলতে থাকবে আড্ডা।
ভগ্নপ্রায় মন্দিরেই পুজো পান দেবী পটেশ্বরী। বর্ধমান রাজবাড়িতে যখন রাজা রাজত্ব করতেন তখন সাড়ম্বরে পূজা পেতেন দেবেন পটেশ্বরী। কিন্তু এখন সেই পুজোর জৌলুস খানিকটা মলিন হয়েছে। অতীতে বহু মানুষ এই পুজো দেখতে ভিড় জমাতেন। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই বাড়ির পুজো দেখতে। বর্ধমান রাজার তৈরি লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুরের বাড়িতে পুজো হতো।
এই পুজোতে বাড়ির মহিলারা কখনই সবার সামনে আসতেন না। গোপন রাস্তা দিতে তাঁরা মন্দিরে আসতেন এবং সেখানকার দ্বিতলে বসে পুজো দেখতে। পুজোটা আজও হয়। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দির প্রায় ভেঙে গিয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে জনসাধারণ এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি।
0 comments: