প্রবন্ধ - সমরেন্দ্র বিশ্বাস
Posted in প্রবন্ধচক্র বলতেই মনে আসে ছোটবেলায় ঠাকুরঘরে দেখা ফটোফ্রেমে বিষ্ণু ভগবানের হাতে এক মারাত্মক অস্ত্রের কথা – সুদর্শন চক্র! কিংবা বিনয় মজুমদারের কবিতা – ‘ফিরে এসো চাকা’! কেউ কেউ কথায় কথায় বলে ফেলেন – লোকটার ভাগ্যচক্র খারাপ চলছে। স্কুলের খাতায় একটা শিওর-শট প্রশ্ন – মেঘবৃষ্টি কিংবা প্রকৃতির ঋতুচক্র বর্ণনা করো। মহাভারতের সেই দৃশ্য, বীর কর্ণর রথযাণের চক্র মৃত্তিকাতে নিমজ্জিত; অর্থাৎ রথের চাকা মাটিতে বসে গেছে – গাড়ী এগোচ্ছে না, মৃত্যু অবধারিত! অতএব দেখা যাচ্ছে ‘চক্র’ বিষয়টা একটা বিশাল ব্যাপার। তাই ‘চক্র’ নিয়ে লিখতে গেলে ধন্ধ লাগে, কি ভাবে লিখবো, কতটা লিখবো। তাই ভাবছি, ‘চক্র’ নিয়ে বলতে বসে এখানকার মূল আলোচনাটা যান্ত্রিক ‘চক্র’কেই নিয়ে হোক। অতএব, আলোচনা শুরু করা যাক গাড়ীর চাকাকে নিয়ে।
চাকার কথা
দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই চাকার সঙ্গে পরিচিত। একটা বৃত্তাকার গোলাকৃতি বস্তু , যা তার কেন্দ্রের(Centre) চারদিকে ঘুরতে পারে। কিন্তু এই চাকা কি নিজে নিজেই ঘুরবে? না, তা হয় না। এই ঘোরানোর জন্যে চাই একটা শক্তি। গাড়ীর চাকাকে ঘোরানোর জন্যে তাই থাকে ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের উৎপন্ন শক্তি কিছু যান্ত্রিক ব্যবস্থার (গীয়ার, লিঙ্ক ইত্যাদি) সাহায্যে চাকাটাকে ঘোরাতে পারে।
একটা গোলাকার গাছের-গুড়ি ঢালু সমতল রাস্তায় রেখে দাও, সেই গুড়িটা নিজের কেন্দ্র বা অক্ষের (Axis) চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচের দিকে যাবে। এক্ষেত্রে গোলাকার জিনিষটাকে ঘূর্ণনে যে সাহায্য করলো, সেটা অভিকর্ষীয় বল (Gravitational Force)। গরুর গাড়ীর চাকা ঘুরছে, গাড়োয়ানের গাড়ী এগোচ্ছে, সেক্ষেত্রে কাজ করছে গরুর শরীরের পেশী শক্তি – যাকে আমরা বলতে পারি প্রানীর ভেতর থেকে উদ্ভুত একটা যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical Energy)। গরুর গাড়ীর চাকার ক্ষেত্রে চাকা যে ঘুরছে , ( না-ঘুরে ঘষটাচ্ছে না) তার জন্যে জরুরী মাটি ও চাকার সংযোগস্থলে ক্রিয়াশীল একটা ঘর্ষণ-জনিত বল (Frictional Force)। মাটিতে বা রাস্তায় চাকাকে ঘোরাবার জন্যে এমন একটা ঘর্ষণ-জনিত বল সব সময়ে জরুরী। কখনো কি দেখেছো, একটা ট্রাকের চাকাগুলো নরম পিছলা কাদা মাটিতে ঘুরেই যাচ্ছে, মানে চাকা স্কীড করছে। এখানে মাটি নরম থাকার জন্যে চাকা ও রাস্তার সংযোগস্থলে ঘর্ষণ-জনিত বলটা কাজ করছে না। তাই চাকা ঘুরছে না, গাড়ী এগোচ্ছে না। সে এক হ্যাপা! চাকাগুলোর নীচে ইট রাখো, পাথরের নুড়ি ঢালো, নইলে কাঠের তক্তা রাখো। এবার হয়তো চাকা স্লীপ না করে গাড়ীটা এগিয়ে আসবে।
এই চাকার উদ্ভব বা আবিষ্কারের ইতিহাসটা কি? সে একটা জটিল প্রশ্ন! যেমন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে মানব সভ্যতার জন্ম ও বিকাশের কালপঞ্জী বা ইতিহাসের কথা। তবে মনে করা হয় চাকার আবিষ্কার খ্রীষ্টের জন্মের দশ হাজার বছর আগেই (10000BC) হয়ে গেছিলো – যে যুগটাকে নিউলিথিক এজ বলা হয়। অন্যমত হিসেবে কেউ কেউ বলে থাকে খ্রীষ্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর আগেই (5000BC) মেসোপটেমিয়াতে প্রথম চাকার আবিষ্কার হয়।
কবে প্রথম চাকার আবিষ্কার হয়েছিলো, সে বিতর্কে যাবার দরকার নেই। বরং কল্পনায় দেখা যাক সেই আদিম মানুষগুলোকে, যাদের মাথায় প্রথম চাকার ধারণা এসেছিলো। একদিন সেই মানুষগুলো একটা ভারী গোল পাথরের চাই ঠেলতে চেষ্টা করছিলো , তারা সেটা করতে পারছিল না, পাথরটা এত ভারী যে সেটা এক অসম্ভব কাজ। তখন সেই মানুষগুলো নজর গেল সেরকমই আরেকটা গোলপাথরে, সেটা রাখা ছিল একটা খাড়া করে রাখা থালার মতো, বৃত্তীয় পাথরের পরিধিটা ছিলো জমি ছুঁয়ে। একটু ঠ্যালা দিতেই সেই পাথরটা অনায়াসে গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। পাথরটা নিজের কেন্দ্র বা অক্ষের চারপাশে কেমন সহজেই ঘুরে যাচ্ছে। তাকে ঠেলতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছেনা। সেই হলো মানুষের বোধগম্য প্রথম চাকা!
কিংবা ধরা যাক, একটা বিশাল মোটা গাছের গুড়িকে লোকগুলো টেনে নিয়ে যেতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো; তখন কেউ বললো , এটাকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। তখন দেখা গেলো টেনে নেয়ার বদলে গাছের গুড়িটাকে চাক্কার মতো ঠেলতেই সেটাকে অনেক সহজেই এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে। ব্যাস, সেইসব প্রাচীন দিনগুলোতে এমনি ভাবেই চলে এলো চাকার ধারনা। হয়তো আদিম ইতিহাসে চাকাকে এমনি ভাবেই প্রথম আবিষ্কার করা হয়েছিলো। এরপরে নানা পরিবর্তন ও নানা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সেদিনের সেই আবিষ্কার আজকের বর্তমান চাকার চেহারা নিয়েছে।
সেই সব মানুষগুলো যারা পাথর ঠুকে প্রথম আগুন জ্বালিয়েছিলো, কিংবা যারা গড়িয়ে দেয়া পাথরের চাকতির মধ্যে চাকার যান্ত্রিক সুবিধা আবিষ্কার করেছিলো, তাদের কোন সঠিক ইতিহাস নেই। তবুও এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় সভ্যতার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল আগুন জ্বালানো । তার অনেক অনেক পরে সভ্যতার আরেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হোল চাকার ব্যবহার, যার যান্ত্রিক সুবিধাকে নিজেদের মতো করে কাজে লাগানো গেল।
বানরের চেহারা থেকে নানা পরিবর্তনের পর মানুষের আধুনিক চেহারা এসেছে; তেমনি চাকার প্রাচীন চেহারার সঙ্গে তার বর্তমান চেহারার প্রচুর তফাৎ। একদম প্রথম যুগে ঠেলা গাড়ি বা রথের চাকায় ব্যবহৃত হতো নিরেট (Solid) কাঠের চাকতি। এখনকার গরুর গাড়ীর চাকার মতো স্পোকয়ালা হালকা ডিজাইন তখন ছিল না। একটা নিরেট কাঠের চাকা ওজনে খুব ভারী, তার তুলনায় গরুর গাড়ীর কাঠের চাকা ওজনে অনেক হাল্কা। হালকা চাকাকে টানতে বলও(Force) কম লাগে।
কালে কালে বিকাশের ধারায় কাঠের চাকার জায়গা দখল করলো লোহার চাকা। লোহা বলতে তখন ঢালাই লোহার (কাষ্ট আয়রণ)ব্যবহার ছিল। এরপর এলো স্টীলের চাকা, যা তুলনামূলক হাল্কা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটা হাল্কা স্টীল নির্মিত সাইকেলের চাকা, সরু সরু স্টীলের স্পোক লাগিয়ে যেটাকে প্রয়োজনীয় ভাবে মজবুত করা হয়েছে। কোন কোন গাড়ীতে স্টীলের চাকা দেখা যায়, তার চারপাশে রাবারের আস্তরণ বা লাইনিং লাগানো। চলতে গেলে মসৃণ রাস্তায় চাকা যাতে স্লিপ না করে, গাড়ী যাতে বরাবর এগোয়। এরপরে দেখা গেলো মোটর কার বা ট্রাকের টায়ার, এতে হালকা স্টীলের রিম, মাঝে হাওয়া ভরা টিউব আর বাইরে রাবারের মজবুত টায়ার। চাকার নামে খুলে গেল বড় বড় টায়ার কোম্পানী – ডানলপ, এম-আর-এফ ইত্যাদি। আজকাল তো চারচাক্কার যে সব মোটরগাড়ীগুলো আসছে, সেগুলোতে আছে টিউবলেস টায়ার, মাঝে হাওয়া ভরার জন্যে আলাদা করে টিউবের দরকার নেই।
প্রযুক্তি কেমন পালটে যায়। এক জামানায় ঠেলা গাড়ীর চাকার অক্ষ(Axle) ফিট করা থাকতো বিনা বিয়ারিং-এ, একটা গর্তের মধ্যে। বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত, যে কোন চাকার সাথে এখন লাগানো থাকে বিয়ারিং, যাতে কম শক্তি খরচ করে, কম মেহনতে চাকাটাকে ঘোরানো যায়।
চক্রের বিভিন্ন ব্যবহার
এবারে দেখা যাক, চক্রকে আমরা কি কি ভাবে কাজে লাগাতে পারি। গাড়ির চাক্কা ছাড়াও যে যে সব ক্ষেত্রে চক্রের ব্যবহার দেখা যায়, সেগুলোকে এক এক করে উল্লেখ করা যাক।
I. কুমার-এর চাকা – মাটির ভার, গ্লাস বা পাত্র তৈরী করতে একে ব্যবহার করা হয়। জমির সমান্তরালে ঘুরতে থাকা চাকাটির ঘূর্ণনের সাহায্যে কুমার মাটির পাত্র তৈরী করে।
II. চৌবাচ্চা থেকে জল তোলবার সময় আমরা দেখেছি পুলির (Pulley) ব্যবহার। যেকোন ভারী জিনিষ তোলার জন্যে পুলি নামক চাকাটির ব্যবহার খুব সুবিধাজনক। যে কোন ক্রেনেও এই ধরনের পুলির ব্যবহার সব সময় দেখা যায়।
III. যাতায় শস্য পেশাই করা। সেখানেও ব্যবহৃত হচ্ছে দুটো পাথরের চাকা।
IV. পুরাণো দিনের ছবিতে দেখেছি সেচের জন্যে তৈরী হয়েছে বিরাট চক্র, তাতে বালতির মতো পাত্র (Bucket) পর পর লাগনো। এদিয়ে নদী থেকে জল তোলা হতো। চক্রটা ধীরে ধীরে ঘুরলে একদিকের বালতিতে যখন নদীর জল ভরতো, তখন অন্যদিকের বালতির ভরা জল জমিতে খালি হতো। এরকমই ছিল পুরোনো দিনের সেচ-ব্যবস্থা।
V. বর্তমান যুগ হচ্ছে মেশিনারীর যুগ। যেকোন মেশিন খুললেই যে সব যন্ত্রাংশ পাওয়া যাবে তাতে অনেক রকম কলকব্জার মধ্যে থাকে বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা দাঁতয়ালা চাকা, যেগুলো ঘুরতে থাকে। এই গুলোকে বলা হয় গীয়ার – যা কিনা এক ধরণের চক্র।
VI. তাপ বিদ্যুত বা জল বিদ্যুত কেন্দ্রে টারবাইন ঘুরছে। এই টারবাইনের ভেতরে যেটা থাকে , সেটাও একধরনের ব্লেডয়ালা চাকা । এই টারবাইনের নিয়ন্ত্রিত ঘূর্ণনের ফল হিসেবেই বিদ্যুত তৈরী হয়।
VII. জাহাজ চলছে , বিমান উড়ছে। এখানেও আমরা দেখি ‘প্রপেলার’ নামক চক্রের ব্যবহার।
VIII. জল সরবরাহের জন্যে যেসব বড় বড় পাম্প থাকে, যা দিয়ে প্রেসারে জল পাঠানো যায়, সেসব পাম্পেও থাকে একধরনের ব্লেডয়ালা চক্র।
IX. নাগরদোলা – বাচ্চারা বড়োরা মেলার মাঠে নাগরদোলায় বসে চেঁচাচ্ছে। নাগরদোলার এই যে মজা, চক্র আবিষ্কৃত না হলে তা কি সম্ভব ছিলো?
X. ষ্টীয়ারিং হুইল – আমরা তো হামেশাই কার চালাই, গাড়ী চালানোর জন্যে সামনেই যে ষ্টীয়ারিংটা থাকে , সেটাও তো একটা চাকা।
XI. যে পায়ে-পঙ্গু মানুষটা নিজের হাতে হুইল-চেয়ারে এক যায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, লক্ষ করো, সেখানেও একাধিক চাকার ব্যবহার রয়েছে। মানুষটা যেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হুইল-চেয়ারটাকে সামনে পেছনে করছে, সেখানেও একটা সরু স্টীলের চাকা বা ষ্টীয়ারিং , যেটা লোকটার হাতে, তার আসহায়তার অবলম্বন।
এমনিভাবেই খুঁজে নিলে দেখা যাবে চাকা বা চক্রের অজস্র ব্যবহার!
অন্যান্য কিছু চক্রের কথা
আমার ‘চক্র’ নিয়ে এই লেখা পড়ে এক তান্ত্রিকমশাই তো খুব ক্ষেপে গেলেন! আপনি ইঞ্জিনীয়ারের চোখ দিয়েই শুধু ব্যাপারগুলো দেখেছেন, আপনার চক্র নিয়ে আলোচনাটা শুধুমাত্রই মেশিন আর গতিতে সীমাবদ্ধ রাখছেন, কেন ? আপনি কি জানেন ভৈরবচক্র, কুন্ডলিনী চক্রের কথা? জানেন, মানবদেহে এসবের ব্যবহার ঈশ্বর নির্দিষ্ট!
আসলে তন্ত্র মন্ত্রের এই সব চক্রের ব্যপারে আমার কোন ধারণা নেই। আমি ঈশ্বর-বিশ্বাসী নই। তাই তান্ত্রিকমহোদয়ের ভৈরবচক্র, কুন্ডলিনী চক্রের উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও মনে হয় লেখা শেষ করবার আগে চাকার যান্ত্রিক ব্যবহার ছাড়াও, আরো কিছু চক্রের কথা এখানে উল্লেখ করে দেয়া উচিত; যাতে পাঠকেরা এই নিবন্ধে আমার গতিবিদ্যা ও যান্ত্রিক সুবিধাবাদী লেকচারে ক্ষেপে না যায়।
বৃষ্টি চক্রের কথা তো আমরা জানি। জল-বাষ্প-মেঘ-বৃষ্টি-জল – এমনি ভাবেই তার ঘুরে ঘুরে আসা। জন্মচক্রের কথা বললেই মনে পড়ে জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য – এও এক আশ্চর্যজনক চক্র , যার কোন কিছুকেই আমরা এজীবনে বাদ দিতে পারিনা। এবারে আসি মেয়েদের মাসিক চক্রের কথায় – ঘুরে ঘুরে কি এক নিয়মে মহিলারা যৌবনে ঋতুমতী হয়। আমাদের ভেতরে যে রক্ত সংবহন পদ্ধতি সেটাও তো একটা চক্রের নিয়মে চলে। প্রজাপতির জীবনচক্র যদি ধরি, তবে তো শুয়োপোকা – গুটি - ডানা মেলা পতঙ্গ – সব মিলিয়ে কি অদ্ভুত ভাবে চক্রবৎ এই প্রজাপতির জন্মকথা। আবহাওয়া আর ঋতুচক্রকে বাদ দেই কিভাবে – এই যে বছরে বছরে পালা করে ছ’টা ঋতু – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত – এও এক অদ্ভুত চক্র, চাইলেই কি এর কোন কিছুকে আমাদের জীবন থেকে বাদ দেয়া যায়? আর সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে এই মহাকাশ, গ্রহমন্ডল। সেখানে চক্রবৎ গ্রহ , উপগ্রহ এসবের পরিক্রমা, জোয়ার ভাঁটা, পূর্ণিমা- অমাবস্যা। চক্রের অধীনে এমনি আরো কত যে বিস্ময়- এসব কিছু পরোপুরি জানতে আমাদের আরো অনেক সময় লেগে যাবে।
0 comments: