সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়শোনা যায় নোবেলজয়ী লেখক ভি এস নয়পলকে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, নয়পল সম্প্রতি কী কী বই পড়েছেন। উত্তরে নয়পল বলেছিলেন, তিনি একজন লেখক, পাঠক নন।
এবছরের সাহিত্যে নোবেল পাওয়া এবং তার পরবর্তী সামগ্রিক প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ একটি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠার, এমনকী অন্য আরেকটি ক্ষেত্রে তা হয়তো নোবেল না হলেও একটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
হাঙ্গেরির উত্তর আধুনিক কথাশিল্পী লাজলো ক্রাসনাহোরকাই তাঁর অসামান্য সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতি হিসাবে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের নোবেল পুরস্কার পেলেন। এর অব্যবহিত পর সমাজমাধ্যমে, বিশেষত বঙ্গভাষী পাঠকদের মধ্যে, যা প্রত্যক্ষ করা গেল, তাকে এক অত্যাশচর্য বিস্ফোরণ বললে মনে হয় অত্যুক্তি হবে না। একদল প্রমাণ করতে বসলেন, তাঁরা অনেক আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, যে ইনিই এবার নোবেল পেতে চলেছেন। আরেকদল, কেন তাঁরা এবিষয়ে তেমন জ্ঞাত ছিলেন না, তা নিয়ে লিখিতভাবে আক্ষেপ করতে লাগলেন। বিষয়টি মনস্তত্ত্বের গভীর অধ্যয়নের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে!
একটি বিশেষ পুরস্কার পাওয়া না পাওয়ায় কী এসে যায়? পৃথিবীকাঁপানো 'নরওয়েজিয়ান উডস' - এর লেখক হারুকি মুরাকামি এখনও নোবেল পাননি। প্রতিবছর তাঁর প্রিয় পাঠককূল অপেক্ষায় থাকেন ওই ঘোষণাটি হওয়ার। বিংশ শতাব্দীর একজন চরম প্রভাবশালী লেখক, ফ্রানৎস্ কাফকা কখনও এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হননি আর চিন্তার জগতে আরেক আলোড়ন-সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব জ্যঁ পল সার্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই সম্মান। বলেছিলেন, 'একজন লেখকের কখনও প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া উচিত নয়।'
এই পুরস্কারের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকেও এ কথা বলাই যায়, অনেক ক্ষণজন্মা প্রতিভাকে যথাযথ সম্মান জানিয়েছে এই পুরস্কার, কিন্তু সমসময়ে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁরা এই অভিধা পেতে পারতেন। উৎকর্ষের কি এমন তুল্যমূল্য বিচার হয়? আর একথাও ভাবা ঠিক নয় যে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পঠন একজন মেধাবী লেখকের জন্ম দেয়। সব শিল্পের মতো এই লিখনশিল্পটিও পারিপার্শ্বিক এবং একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি-নির্ভর। সেই অনুভূতি, যা একমাত্র লেখকেরই, তিনিই কেবল পারেন তাকে শব্দ দিয়ে ছুঁয়ে ছেনে নিতে। সেভাবেই জন্ম নেন চর্যাপদের লেখক, রবীন্দ্রনাথ কিংবা লাজলো ক্রাসনাহোরকাই।
সুস্থ থাকুন, সংযত থাকুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0 comments: