0

প্রবন্ধ - সেবিকা ধর

Posted in









যেকোনো সমাজের যে প্রতিচ্ছবি তা সাধারণভাবে ফুটে উঠে তার সাহিত্য নির্মাণে।ছবিতে, চলচ্চিত্রে, নাটকে, গানে। তবে সাহিত্যে যদি সেই সময়ের অভিঘাত ফুটে না উঠে তবে তাহলে সেই সাহিত্য কিন্তু সাহিত্য নয়। হাসনের গানে কি সেই সময়কার কথা ফুটে উঠেছে? হাসনের গানে যে প্রেমার্তি আছে, সে প্রেমার্তির সঙ্গে সঙ্গে সেই সময়ের যে সামাজিক বৈষম্য যে যন্ত্রণা তা প্রচ্ছন্ন ভাবে রয়েছে লালনের গানেও তাই।লালনের গানেও তাই।ফলে আজকের দিনে যদি যদি আমরা দেখি যে একজন লেখক যিনি সমাজ বিচ্ছিন্নভাবে বা সমাজচ্যুত ভাবে তিনি লিখে যাচ্ছেন শুধুমাত্র একটা পঞ্চাশ তলা বাড়ির মাথায় বসে, সেই কথা কিন্তু মানুষের কানে পৌঁছাবে না।মানুষের সার্বিক যে আয়োজন, সার্বিক বাঁচার যে প্রয়াস,সার্বিকভাবে এগোনর যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাই কিন্তু প্রকৃত লেখক যিনি তিনি তুলে ধরেন তাঁর গল্প এবং উপন্যাসে।

রবীন্দ্রনাথ সবচাইতে বড় উদাহরণ। যদি দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ কোনো একটু আখ্যান বুনছেন।সেই আখ্যান বুনতে বুনতে তিনি চার অধ্যায়ের এলা এবং মনসুর যে প্রেমার্তি এবং প্রেমাভিষেক তার মধ্যে কিন্তু যে স্বস্বস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যাকে রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করতেন না সেই মনহীন আন্দোলন রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস অনুযায়ী যদি সস্বস্ত্র বিপ্লবীদের অনেক আত্মত্যাগ আছে, থাকবেই।তারা রবীন্দ্রনাথকে খুব শ্রদ্ধা করতেন।সেটা অন্য প্রসঙ্গ।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সেটাকে নিয়ে আসেন।ফলে শুধুমাত্র যদি তিনি একটি প্রেমার্তির উপাখ্যান লিখতেন তাহলে আজকের প্রেক্ষিতে কিন্তু সেই লেখাটি আর পড়া হতো না।স্বাভাবিকভাবে ত্রিপুরার যাঁরা লেখক যাঁরা ত্রিপুরায় লিখতে এসেছেন বা ভাষা চর্চা করতে এসেছেন যাঁরা ছোটো গল্প নির্মাণ করেছেন ত্রিপুরায় তাঁরাও কিন্তু একই পথের পথিক। একই পথের পথিক মানে তারা রবীন্দ্রনাথকে যে অনুসরণ করছেন বা রবীন্দ্রনাথের পথেই অন্ধের মতো চলছেন তা নয়। তারা তাদের নিজেদের পথ খুঁজছেন সাহিত্যের কোদাল কেটে।সাহিত্যের কোদাল কেটে নতুন নতুন রাস্তা বের করছেন তাঁরা। সেই রাস্তার মধ্য দিয়ে তারা হাঁটতে চাইছেন স্বাভাবিকতায় নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের যে অভিঘাত এবং অন্যান্য সংঘর্ষ তাকে সঙ্গে নিয়ে।সেই সংঘর্ষ, সেই অভিঘাত মধ্যবিত্ত বাড়ির হতে পারে, হতে পারে কোনো উপজাতি পরিবারের আলোচ্য বিষয় , অথবা অন্যান্য আরও অনেক বিষয় যা ত্রিপুরারই সাংগঠনিকভাবে এবং বাস্তবিকভাবে ত্রিপুরারই। সেই ব্যাপারগুলো কিন্তু উঠে আসতে থাকে তাদের লেখার মধ্যে।তথাকথিত আর্বান জালিয়াতি অর্থাৎ নগুরে মনোভাব না থাকলে লেখা সার্বিকভাবে সফল হয় না।কিন্তু আর্বান লেখার মধ্যে একটা চালাকিও আছে। সেই আর্বান চালাকি যদি তারা করতেন তাহলে লেখাগুলি কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্রমশই একটা ধুসর স্তুপ হয়ে দাঁড়াত।তারা কিন্তু ধূসর স্তুপের কথা বলেন নি।বরঞ্চ তারা প্রাণবান,সজল,সচল প্রবহমান নদীর যেমন ধারা অথবা অরণ্যের গভীরে যেভাবে সবুজ পত্র মর্মরের কথা আমরা শুনতে পাই সেই কথাই তারা শুনিয়েছেন।এটা আশার কথা তাদের এই উচ্চারণ এবং ধারাবাহিক উচ্চারণের ফলে ত্রিপুরার সাহিত্য তা সমৃদ্ধ হয়েছে।ছোটো গল্পের ভুবন বিস্তৃত হয়েছে এবং নতুন করে নতুন ধরনের সাহিত্য গড়ে উঠেছে নতুন করে বলার ইচ্ছে গড়ে উঠেছে ত্রিপুরার জনমানসে এবং যারা লিখতে এসেছেন তাদের লেখায়।

0 comments: