0

ধারাবাহিক - শ্যামাপ্রসাদ সরকার

Posted in




















(৬)

শাস্ত্রনিষ্ঠ তাবড় ধনীসমাজের অনেকেই যদিও রামকান্ত রায়ের কনিষ্ঠ পুত্রটিকে দু-চক্ষে দেখতে পারেনা তবুও শহর কলকাতার বেশ কিছু নব‍্য ধনী রাজপুরুষ আবার রামমোহনকে বেশ ভক্তিশ্রদ্ধাও করে। বিশেষতঃ পিরালী বামুনদের নেতাগোছের ধনী জমিদার ও বণিকমহলে সুনাম আছে এমন এক প্রায় সমবয়সী যুবা দ্বারকানাথ, রামমোহনের চিন্তাভাবনার বিশেষ অনুগামী। ঘনিষ্ঠ মহলে পরস্পরকে এরা আজকাল "বেরাদর " বলে সম্বোধন করে। যদিও রামমোহন তার নিজের পিতৃকুল তথা পিতৃদেব স্বয়ং রামকান্তের কাছে এইসব বিধর্মীসুলভ কার্যকলাপের জন‍্য সুনাম খুইয়ে এখন একরকম ত‍্যাজ‍্যপুত্র হওয়ারই পথে।

....

আরও একটি মজার কথা এই যে সাকিন বর্ধমানের বর্তমান মহারাজ তেজচন্দ্রও রাজ‍্যভার সামলানোর কাজে তাঁর নিজের মায়ের অতিঅভিবাবকত্বের জন‍্য বেশ বিরক্ত। অবশ‍্য তিনি এসবের চেয়েও আরো বেশী বিরক্ত মাতার ঘনিষ্ঠ এই রামকান্ত রায়ের উপরে। রামকান্তর এখন বিষম নাজেহাল অবস্থা। একদিকে তাঁর ছোটছেলে রামমোহন অন‍্যদিকে মহারাজ তেজচন্দ্র এই দুজনেই তাঁকে যথেষ্ট জেরবার করে তুলেছে।

....

এদিকে বর্ধমানের সিংহাসনে বসেই তেজচন্দ্র তাঁর নিজের মা মহারানী বিষণকুমারী'র নামে কোম্পানি প্রদত্ত মাসোহারাটি বন্ধ করা সহ আরো নানারকম অশান্তির সূত্রপাত শুরু করেছেন। এমনকি তাঁর ইচ্ছা যে এই নবাবহাটের মন্দির সংলগ্ন খাসজমিগুলির বিনিময়ে আরও অর্থ উপার্জন করে তহবিল ভরানো।

যদিও তার বেশীটাই নর্তকী ও বারবনিতাদের পিছনে ব‍্যায় করতেই তিনি বেশী উৎসাহী। তাই আগামী পূণ‍্যাহের সময় এসব সম্পত্তিকে নাকি তিনি নীলামে তুলতেও চেয়েছিলেন।

তবে স্বস্তি এই যে রাজকর্মপরিচালনায় বিদগ্ধ প্রবীণ খানাকুলবাসী রামকান্ত রায়ের বুদ্ধিমত্তার জোরেই রানীমা বিষণকুমারী যেমন ইংরেজ কোম্পানির কাছে নিজের দাবী আদায়ে সফল হয়েছেন বলে আর বেনামে এই নীলামের দরপত্রটি রদ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সেজন‍্য পুত্রের তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও তাঁর খাসতালুকে তৈরী হওয়া সর্বমঙ্গলা মন্দির সহ এই নবাবগঞ্জের মন্দিরটিতেও তিনি সপ্তাহকালব‍্যাপী এক সুবিশাল অন্নকূট উৎসব করবেন।দেবানুগ্রহের ঋণস্বীকার ও তাঁর ব‍্যক্তিগত সংকটমোচনের উদযাপনটিকে তিনি বিশেষভাবে আরও মূল‍্যবান করে তুলতে চান বলে চৈত্রমাসে শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই এখানে এই অন্নকূট মহোৎসবটি পালিত হওয়ার কথা।

.....

নবাবহাটে আজ সুবিপুল লোকারণ‍‍্যের মধ‍্যে থেকে আর বন্ধুস্থানীয় একজন আড়তদার দিগম্বর বিশ্বাস এসে গোলকপতিকে ভীড়ভাট্টা থেকে সরিয়ে নিয়ে একটু আড়ালে এসে বলল,

" নগেনদা বলল তোমায় এক্কুনি খপরটা এসে দিয়ে যেতে। এ যে একেবারে ঘোড়ার মুকের খপর! শুনলুম যে তেজচাঁদ নাকি ষড় করে রানীমার খাবারে রাঁধুনির হাত দিয়ে বিষ দিতে গেচিল।

তাই একোন থেকে রানীমা ঠিক করেচেন যে রাজবাড়ির কোন কিচু মায় আনাজ পর্যন্ত ছোঁবেনা নে কো! তাই এবার থেকে তিনি নিজের এক বাজার সরকারের মাধ‍্যমে তৈজসপত্তরের বাজার করাবেন আর স্বপাকে যেমন একবেলা খান তাই খাবেন! তাই জোরকদমে তিনি একজন বিশ্বাসী ও সদ্বংশীয় একজনকে খুঁজচেন! তা সে বাউন না। হলেও হপে! একোন নাকি তেনার খাস বর্ধমানের সব লোকজনদের ওপর থেকে সঅঅব বিশ্বেস আর ভক্তি নাকি চটে গেচে.... তা দা'ঠাউর আপনি আর কেন ওখেনে গ‍্যে একটা কাজ নিচ্চেন নেকো? তাহলে আপনারও যেমন তাহলে একটা হিল্লে হয় আর নগেন'দা বা আমাদের মত আড়তদারেদেরও যে দুটো রোজগারপাতি হয়!

হে...হে..তা বেধবা হলেও তো রাজরাণী বলে কতা! ভগমান না করুন, এই উমরে পৌঁচে তিনি আর যে কটা দিন আচেন আর কি...মানে ইয়েএএ.....এখেনকার এই খাস আড়ত থেকে মাল না গেলে কি ওঁর মুকে রুচবে!

তা আজ দুপুরে অন্নছত্তরের সময় রাণীমাকে গ‍্যে এড্ডা পেন্নাম ঠুকে এসে নিজের সবটা ওঁকে গ‍্যে বলুন দিকি ! আরে বাবা...সেই বিক্রমপুর থেকে এসচেন বলে আপনি তো আর ভেসে আসা যেসে লোক নন মশাই..! "

0 comments: