ধারাবাহিক - অসিত কর্মকার
Posted in ধারাবাহিকপর্ব ৫
দুলকিগাঁয়ের সব পথ, গলিপথ এখন দক্ষিণখাড়ির দিকে। দলে দলে গ্রামবাসী ব্রিজ আদায়ের জন্য মিটিংএর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। অথচ দুপুর এখনও বিকেলের দিকে ঢলে পড়েনি। আসলে মানুষগুলোর যেন আর অপেক্ষা করে থাকার ধৈর্য নেই। এই মিটিংএই একটা ফয়সালা হয়ে যাক, এমনটাই চাইছে মানুষগুলো। হয় ব্রিজ হবে, নয়ত ভোট বয়কট। মাঝামাঝি রফা বলে কিছু নেই। বটগাছটার নীচে তিল ধারণের জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। এদিকে লোক বেড়েই চলেছে। কারোরই যেন আজ ঘরে মন বসছে না। মন টগবগ করে ফুটছে। কিছু একটা আদায় করার জন্য মনের যে দৃঢ়তা লাগে তা যেন এ কদিনের ঘটনার অভিঘাতের মধ্যে দিয়ে ওরা অর্জন করে নিয়েছে। জায়গা না পেয়ে অনেক মানুষ কাছেপিঠের গাছগুলোয় চড়ে বসেছে। এত এত মানুষের হাতে ধরা সবুজ ডালের সমারোহে যেন এক সবুজের সমাবেশ। স্লোগানের সঙ্গে ওদের হাতগুলো আন্দোলিত হতে দূর থেকে দেখে মনে হয়, সবুজের ঢেউ উঠছে বার বার।
বটগাছটার চাতালে বসে গয়ান, ঝগড়ু, ভুলন, ফকরা, কয়েকজন বয়স্ক মানুষ আর কয়েকটি যুবক। ওরা এই লড়াই আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে। দাবি লেখা ভাঙ্গা চালাগুলোকে ঠিকঠাক করে তাতে নতুন করে দাবির কথাগুলো লিখে সাঁকো আর গাছে গাছে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এদিকে হোপনা সোরেনের মাথার চুল ছেঁড়ার দশা। সে একরকম ধরেই নিয়েছে, রণে ভঙ্গ দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। বহু চেষ্টা করে, লোভ দেখিয়ে, এমন কী প্রচ্ছন্ন ভয়ভীতি দেখিয়েও একটিও লোকের হাতে তাদের দলের পতাকা ধরাতে পারেনি। সবার মুখে একটাই কথা, উটো ত হাতেট অনেক লিয়েছি কিন্তুক কাজট ত কুছু হয় লাই। ইখন থিকে হামরা হামাদের পতাকাটই হাতহে লিব।বলেই গাছের সবুজ ডাল দেখিয়ে দিয়েছে। হোপনা সোরেন অবাক হয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। গাছের ডাল কিনা পতাকা! মনে মনে হেসেছে। বিদ্রুপের হাসি। আহাম্মক আর কাকে বলে!কার মাথা থেকে যে এটা এসেছে! নিশ্চয়ই ওই বুড়ো গয়ানের। বয়সের সঙ্গে বুড়োটার মাথাটা একেবারে গেছে। বুজুংবাজুং বুঝিয়ে গ্রামের মানুষগুলোর মাথা খাচ্ছে। মাথার ওপর গাছের ডাল নাচালেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ওটা কি জাদুকাঠি নাকি যে দক্ষিণখাড়ির ভাঙ্গাচোরা সাঁকোটায় ছুঁইয়ে দিলেই ওটা মুহূর্তের মধ্যেই ভোজবাজির মতো উবে যাবে। আর সেখানে দুই পাড় জোট বেঁধে একটা আস্ত ব্রিজ হয়ে যাবে! হবে না জেনেই তো হোপনা সোরেন ওদের হাতে নগদ টাকা গুঁজে দিতে চেয়েছে। কিন্তু ওরা তা তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যানই করেছে শুধু নয় মুখের উপর মনের কথা উগড়ে দিয়েছে। ওই টাকায় দুদিনের ফুর্তিফার্তা তারা আর চায় না। টাকা দিয়ে যে ওদের আর ভোলানো যাবে না তা হোপনা সোরেন ভাল করেই বুঝতে পারছে।এই পরিস্থিতিতে জোর করে মিটিংএর দখল নিতে গেলে তুমুল প্রতিরোধের মধ্যে পড়তে হবে নির্ঘাত। ফলে ধুন্ধুমার এক পরিস্থিতি তৈরি হবেই। তা সামাল দেওয়ার মতো জনশক্তি তার পার্টির এই গ্রামে এখন নেই। উল্টে নেতাবাবুদের কাছে তাকে অপদস্থ হতে হবে। তাহলেই তো তার ধান্দাপাতি সব চৌপট। এখন সে ভাল করেই বুঝতে পারছে যে, ঝগড়ুর উপর অতটা হিংস্র হওয়া উচিৎ হয়নি তাদের। ওতেই তো আগুনে ঘি পড়ল। তবে বাঁচোয়া এই যে, ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ঝগড়ু থানাপুলিশ করেনি। করলে নির্ঘাত মিডিয়ার গোচরে এসে যেতই। তাতে করে পার্টির বদনাম হত। উপরমহলে তাকে কৈফিয়ত দিতে হত। তাতে উপরমহল সন্তুষ্ট না হলে তাকে হয়ত পার্টির লোক বলে অস্বীকারই করত। তখন তো তার অবস্থা সাঁতার না জানা মানুষের অথৈ জলে পড়ার মতো হত। মনে মনে তাই সে ঝগড়ুকে ধন্যবাদই দেয়। সেইসঙ্গে ঝগড়ুর ধৈর্যসহ্যের কথা ভেবে কম বিস্মিত হয় না। তবে এর পেছনে গয়ানের পরামর্শ যে কাজ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই তার। এও যে একরকম কৌশলী রাজনৈতিক পদক্ষেপ তা মানে সে।পুরো দুলকিগাঁয়ের সহানুভূতি আদায় করে নিল ঝগড়ু। ওদিকে বিরোধী দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে। ওই হতাশা থেকেই জন্ম নিচ্ছে ক্ষোভ আর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবনতা।যত মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বন্যা ছুটিয়ে দুলকিগাঁয়ের মানুষগুলোকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। হোপনা সোরেন যে এবার টাকা বিলিয়ে ভোট কুড়োতে ব্যর্থ হচ্ছে তা বিরোধী দলের গোচরে এসেছে। এতে করে ওরা যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। এই সুযোগে ভুরি ভুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওরা ভোট লুটতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দক্ষিণখাড়ির পাড়ে একটা বড় ব্যানার টানিয়েছে। তাতে লেখাটা জ্বলজ্বল করছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীকে জয়ী করুন। এক মাসের মধ্যে দক্ষিণখাড়ির উপর দিয়ে পাকা ব্রিজ তৈরি করে দেওয়া হবে।... চিহ্নে ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থী ডা.গুনধর সামন্তকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।মাঠের হাওয়ায়, নদীর হাওয়ায় ওটা দিনরাত এলোমেলো দোলে। দুলে দুলে যেন সবাইকে পড়তে আহ্বান করে। ব্যানারটা পড়ে শুধু দুলকিগাঁ কেন আশপাশের গ্রামের মানুষগুলো পর্যন্ত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। ওই পার্টিটার গ্রহণযোগ্যতা যে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে!
মিটিং শুরু হতে চলেছে।
ঝগড়ু লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জমায়েতটার উদ্দেশ্যে নমস্কার জানায়। জমায়েতটা তাদের হাতের ডালগুলো মাথার ওপর তুলে ঝগড়ুর নামে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে। গয়ানের নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি তোলে। গয়ান দুহাত তুলে ওদের অভিবাদন গ্রহণ করে। তারপর ইঙ্গিতে ওদের শান্ত হতে বলে।
ঝগড়ু জমায়েতটার উদ্দেশ্যে তাদের দেবতা মারাংবুরুর মহিমার কথা বলে। বলে তাদের পূর্ব পুরুষ তিলকা মাঝি, সিধহু, কানু আর বীরসা মুন্ডার বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কথা। দুলকিগাঁয়ের মানুষগুলোর মনে বিস্ময়ের ঘোর লাগে। তাদেরই পূর্ব পুরুষ কিনা এতই লড়াকু ছিল! তারা দিকু জমিদার, সুদখোর মহাজন, আর ইংরাজদের বিরুদ্ধে এত বড় বড় লড়াই দিয়েছিল! সে লড়াইয়ে প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করেছিল। ভাবতে ভাবতে মানুষগুলোর মন কঠিন সঙ্কল্পে উদ্বেলিত হয়ে উঠতে থাকে।ওদেরই উত্তরপুরুষ হয়ে তারা কেন সামান্য একটা ব্রিজ আদায় করতে পারবে না। ঝগড়ু তাদের নামে শপথ নেওয়ায় জমায়েতটাকে। মানুষগুলো তাদের দেবতা আর বীরপুরুষদের নামে জয়ধ্বণি দিয়ে হাতে ধরা ডালগুলোকে বারবার মাথার ওপর তুলে আন্দোলিত করতে থাকে। এভাবেই ঝগড়ু লড়াইয়ের জন্য ওদের মনটাকে তৈরি করে নিতে চায়। তারপর মিটিংএর মূল আলোচ্য বিষয়ে আসে। দুলকিগাঁয়ে তাদের বসবাস গড়ে ওঠা থেকে যাতায়াতে যে কী নিদারুণ কষ্টভোগ তা সে একে একে মানুষগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্রিজটা হলে তাদের যে কতরকম সুবিধা হবে তা বুঝিয়ে বলে। জমায়েতটা থেকে থেকে হাততালি দিয়ে ঝগড়ুকে সমর্থন জানায়। ঝগড়ু আবেদন রাখে, ব্রিজ না হলে কেউ যেন ভোট না দেয়। ভোট বয়কট। সবশেষে ঝগড়ু মারাংবুরু আর তাদের বীরযোদ্ধাদের নামে জয়ধ্বণি দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করে। জমায়েতটা সহসা ঝগড়ুর নামে হাততালি আর উল্লাসে ফেটে পড়ে। ওরা দাবির কথাগুলোর বারংবার স্লোগান দিতে থাকে। সেইসঙ্গে উত্তোলিত সবুজ মিলেমিশে এক আশ্চর্য রোমাঞ্চকর পরিবেশ এখন। যেন আকাশের নীচে সবুজ সমুদ্র ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলছে। ওদের মুহুর্মুহু স্লোগান ঢেউয়ের গর্জনের মতো শোনায়।
ওরা শান্ত হলে ঝগড়ু বলল, ইবার হামাদের গাঁটর মাথহা, সকলটর পূজ্যমান, গয়ান খুড়া কুছু কথাট বলবেক।
জমায়েতটা সহসা ফের উল্লাসে ফেটে পড়ে। গয়ানের নামে ফের জয়ধ্বণি দিয়ে ওঠে। ঘনঘন হাততালি দিতে থাকে। গয়ানের কথা শোনার জন্য ওরা এখন উদগ্রীব।
বসা থেকে ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়ায় গয়ান। সে তার বয়সের নরম ধরা গলায় বলা শুরু করে, হামার আর বলার কী আছহে, ঝগড়ুর কথহাগুলহানই হামার কথহা।হামি শুধহু দুটা কথহা বলবক, ইলিকশানট আসবেক যাবেক কিন্তুক বিরিজট লা হওয়া তক হামরা ভোটট দিবক লাই।হামরা হামাদের দেওতাগুলানের নামহে শপথট লিয়াছি, উয়া হামরা পরাণট দিইহে রখ্খাট করবক।লা হইলে উয়াদের আত্মাগুলান কষ্টট পাবেক।হামাদের ভালহট হবেক লাই।ব্যস, হামার ইটুকাই কথহা।
প্রবল হাততালি দিয়ে, চিৎকার করে গয়ানকে সমর্থন করে জমায়েতটা। এরই মধ্যে হঠাৎই বাহামনি ভিড়ের মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়ায়। সে চিৎকার করে গয়ানের উদ্দেশ্যে বলে, অ বুঢ্ ঢা, মানহুষগুলহানরে সাবধানটয় থাকহার কথাট বলহা লাই?
গয়ান বাহামনির কথা শুনে নিজের থেকে ফের কিছু বলতে শুরু করার আগেই বাহামনি নিজেই জমায়েতটার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, তুমহাদের হাঁসুয়াগুলহানে ধারট দিয়া রাইখহ। উয়ারা রক্তট লিতহে আইলে ছাড়বাক লাই!
সকলে মাথার ওপর ফের ডালগুলোকে আন্দোলিত করে বাহামনিকে সমর্থন জানায়।
মিটিংটা ভেঙে গেল। বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামছে পৃথিবীতে। মাথার ওপর মহাশূন্যে তারাদের উঁকিঝুঁকি দেখা যায়। তারই ফাঁকে হাতুড়ি পেটানো রূপোর পাতের মতো চাঁদটা জেগে উঠতে থাকে। গাছে গাছে ঘরে ফেরা পাখিদের কলরব। মিটিংএর মানুষগুলোরও মুখে মুখে নানা কথার গুঞ্জন। পায়ে পায়ে ধুলো ওড়ে। ওদের কথায় দেবতা মারাংবুরু আর বীরযোদ্ধাদের মহিমার কথা বারবার ঘুরেফিরে উচ্চারিত হতে থাকে। ওদের বুকগুলো গর্বে স্ফীত হয়ে উঠতে থাকে।ওদের প্রতিটি পদক্ষেপে দৃঢ়তা!
ওদিকে নদীর বুকে জোয়ার ঢেউ ভাঙছে। ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল ভাঙার শব্দ ভেসে আসছে। উপচে উঠছে নদী। দক্ষিণখাড়ির জীর্ণ শীর্ণ বুক ভরে উঠছে উপচানো জলে। ফের ভরা যৌবনবতী হয়ে উঠছে দক্ষিণখাড়ি।তাতে কচি চাঁদের শুদ্ধ আভার জড়ামুড়ি খেলা। ফের ভাটার দুঃখ না আসা পর্যন্ত দক্ষিণখাড়ির এটুকুই যা সারাদিনের সুখ!
পর্ব ৬
নির্বাচনের আর মাত্র কটা দিন বাকি। এতদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত একটা মিটিংএর আয়োজন করতে পারেনি হোপনা সোরেন। মিটিং ডাকলে যে দুলকিগাঁয়ের মানুষগুলোর সাড়া পাবে সেই ভরসা সে হারিয়েছে। নিজের গুটিকয় সাঙ্গপাঙ্গ ছাড়া মিটিংএ যে আর লোক হবে না তা সে ভাল করেই বুঝেছে। তাতে করে বড় নেতাদের কাছে তার মুখটাই পুড়বে। বিরোধী পার্টির তো চেষ্টা করার প্রশ্নই আসে না। তবুও অন্য নানাভাবে প্রচারের চেষ্টার কসুর করে না কোনও পক্ষই। হোপনা সোরেনের দল হাওয়ায় কথা ভাসায়, এতবছরেও ব্রিজ না হওয়ার হাস্যকর যুক্তি দেখায়। ব্রিজ হলে ওই দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে পুলিশ চোর, ডাকাত, খুনিদের ধরতে সরাসরি দুলকিগাঁয়ে ঢুকে যেতে পারবে। দোষীরা নিজেদের বাঁচানোর সময়টুকু পর্যন্ত পাবে না। এখন সাঁকোর ওপারে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তারপর পায়ে হেঁটে সাঁকো পেরিয়ে পুলিশ গাঁয়ে ঢোকে। ওপারে গাড়ি দাঁড় করানো মাত্র পুলিশ আসার খবরটা মুহূর্তে গাঁময় রাষ্ট্র হয়ে যায়, পুলিশ, পুলিশ! সাঁকো পেরিয়ে পুলিশ দুলকিগাঁয়ে পা রাখতে না রাখতে দোষীরা উত্তর খাড়ি সাঁতরে পার হয়ে যাকে বলে পগার পার! উত্তর খাড়ির ওপারে জনমানবশূণ্য ধূ ধূ চর। যেদিকে খুশি পালিয়ে যাওযার সহজ ব্যবস্থা। বিরোধীরা বিদ্রুপ করে কথা ভাসায়, ক্ষমতাসীন সরকার কি তাহলে দোষীদের এভাবে পিঠ বাঁচানোটাকে সমর্থন করছে। এ কথা থেকেই তো বোঝা যাচ্ছে দলটার আদর্শ বলে কিছু নেই। ন্যায় নীতিবোধ একেবারে জলাঞ্জলি দিয়েছে। নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে এই নির্লজ্জ অজুহাত, ভাবা যায় না! দোষীরা ধরা পড়ুক, শাস্তি পাক। এটাই তো সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য কাম্য। তাছাড়া চোর, ডাকাত, খুনি কোথায় না নেই? আঙুল তুলে শুধু দুলকিগাঁকে এই অপবাদ দেওয়া কেন? হোপনা সোরেনের দল ফের হাওয়ায় কথা ভাসায়, বিশেষ উপলক্ষে এক আধ বেলার জন্য গরীবগুর্বো মানুষগুলোকে একটু ভালমন্দ খাওয়ানোর ব্যবস্থা আমাদের পার্টি বরাবরই করে থাকে। এবারও ভোটের আগের রাতে সেই ব্যবস্থা থাকছে। তবে এবার আর কালো নয়, চীনা সাদা শোর, সঙ্গে বিলাইতি নেশা। বিরোধীরা হাতে যেন চাঁদ পায়। তারাও কথা ভাসায়, খাইয়ে ভুলিয়ে জনগনকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রাখার মতো সস্তার ঘৃণ্য রাজনীতি আমরা করি না। দুদিন না যেতেই সরকার পক্ষ ফের কথা ভাসায়, ব্রিজ তৈরির মালমেটেরিয়ালস আজ কালের মধ্যেই খাড়ির পাড়ে পড়ছেই। বিরোধীদের তাতে স্পষ্ট জবাব, দুলকিগাঁয়ের লোকেরা চোখে ঠুলি পরে বসে নেই, পড়লে ঠিকই দেখতে পাবে। আর ওসব পড়া মানেই ব্রিজ হয়ে যাওয়া নয়! আরও কত যে কথা ভাসে। কথার উপর কথা চাপে। কথার চাপানউতোর চলতেই থাকে। কথার জটে এখন দমবন্ধ দুলকিগাঁ।
ভোট আসছে, ভোট। দুলকিগাঁয়েও তার ছোঁয়া। গয়ান, ঝগড়ুরা শুধু চুপ। ওরা ওদের লক্ষ্যে অবিচল। ওরা বুঝেছে, হাওয়ায় কথা ভাসলেও সেখানে কিছু গড়া যায় না। পোড়া তুষের কালো আস্তরের নীচের গনগনে আগুনের মতো জমজমাট দুলকিগাঁয়ে ভোট। সে আগুনের হল্কায় পাতার আন্দোলন, সবুজের গন্ধ!
সমাপ্ত
0 comments: