ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়
Posted in ধারাবাহিক৬
কানাইদা ডেকেছেন!
কানাইদা, মানে যিনি এখন বড় মহারাজ হয়েছেন। মোটাসোটা মাঝবয়েসী চশমা চোখে, একটু টাকমাথা, গেরুয়া পাঞ্জাবীর নীচে একটা মোটা বেল্ট দিয়ে ভুঁড়িটাকে একটু তুলে বেঁধে রাখেন। ওঁর পোশাকী নাম স্বামী শান্তিময়ানন্দ।
তবে আমাদের সবাইকে উনি চুম্বকের মত টানেন। আমরা সবাই ওঁর ভক্ত, ওঁর ফ্যান।
উনি সাত্ত্বিক কম, রাজসিক বেশি। ওঁর ঘরের খাটে ফিনফিনে মশারিটি বেশ দামী; সিলিং ফ্যান ছাড়াও পাশের টুলে রয়েছে সিনি টেবিল ফ্যান, একটি ট্রানজিস্টর রেডিও; আর ছোট আলমারিতে বাংলা সাহিত্যের ভাল ভাল বই।
ওনার বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃতে সমান দখল। রোজ রাত্তিরে খাওয়া দাওয়ার পরে কিছু ছেলে যায় ওঁর ঘরে। তাদের উনি অনেক গল্প শোনান। ঘরে সব আলো নিভে গিয়ে নীল আলো জ্বলে।
আস্তে আস্তে ওনার চোখে ঘুম নেমে আসে। কিছু বাচ্চাও হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। বাকিরা সবাইকে তুলে ঘরে ফিরিয়ে আনে।
উনি আমাদের আশ্রমের ব্যান্ড পার্টি গড়ে দিয়েছেন। অনেকটা ইন্ডিয়ান নেভির মত ইউনিফর্ম স্কার্ফ ও টুপি পড়ে আমরা ড্রাম, কেটল ও বিউগল বাজাই। আমিও শিখেছি কেটল ড্রাম বাজাতে। ১লা বৈশাখে, ১৫ অগাস্টে, ২৬ জানুয়ারিতে আমাদের ব্যান্ড বাঁকুড়া মিউনিসিপ্যালিটির মাঠে পুলিশ ব্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিত।
উনি ক্রিকেট ম্যাচে কখনও সখনও আম্পায়ারিং করতেন। এল বি ডব্লিউয়ের নতুন নিয়ম উনি জানেন। প্রত্যেক বার আমাদের নাটকে উনি মিউজিক দিতেন। তার কিছু গান হিট হত; পরের দুয়েক বছরও সবাই সেগুলো গুনগুন করত। যেমন কুশধ্বজ নাটকে বলি চড়বার আগে মেমারি থেকে আসা ফুটফুটে ছেলেটি গাইল-- "পায়ের ধূলো, দাও গো দাদা! সময় যে আর নাই-ই-ই; এবার আ-আমি যাই।" গান এমন হিট হল যে ছেলেটির আসল নাম হারিয়ে গিয়ে নতুন নাম হল --কুশে!
ভর্তির সময়ই আমাদের হাতে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি নীল রঙের পাতলা বই--সংগীত সংকলন, সম্পাদনা--স্বামী শান্তিময়ানন্দ।
তাতে রামকৃষ্ণ আরাত্রিক থেকে শুরু করে প্রচুর গান-- সব গুলোর ওপরে রাগ ও তাল লিখে দেওয়া; পরিশিষ্টে মূল কয়েকটি তালের ঠেকার বোল ও মাত্রা এবং প্রধান রাগগুলোর ঠাট , জাতি, আরোহ, অবরোহ ও পকড় লিখে দেওয়া।
সপ্তাহে কয়েকদিন সন্ধ্যেয় ওঁর ঘরে তানপুরা নিয়ে আসর বসত। আসতেন বাঁকুড়া শহরের স্থানীয় মার্গসংগীতের গায়কেরা। আমি টিউটোরিয়াল থেকে পালিয়ে সেখানে চুপচাপ বসে থেকে শুনতাম , কখনও কেউ ধমক দেয় নি।
সেবার পুরুলিয়া মিশনের প্রোগ্রামে ওঁর সঙ্গে গেছি, স্টেজে জনৈক গায়ক গাইছেন অতি পরিচিত শ্যামাসংগীত--" গয়া -গঙ্গা -প্রভাসাদি, কাশী- কাঞ্চী কে বা চায়; কালী কালী কালী বলে অজপা যদি না ফুরায়"।
কানাইদার চোখ বড় বড়। গায়ক গান শেষ করে স্টেজ থেকে নামলে উনি তাঁকে কাছে ডেকে হাতে তাল দিয়ে দিয়ে দেখালেন যে গানটি ঝাঁপতালে, মানে ৫x ২ মাত্রায়, গায়কের দম ছাড়ার ভুলে সেটা হয়ে যাচ্ছে তেওড়া , মানে ৭x২ মাত্রা।
কানাইদার ঘরে আসেন বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদ গায়ক শ্যাম বাঁড়ুজ্জে । আর আসেন চশমা চোখে এক জন মহিলা বেশ পরিশীলিত চেহারা, সবাই বলে বিল্টুদি। ওঁকে নিয়ে কিছু হাসাহাসি কিছু রসালো মন্তব্য কানে আসে। কিন্তু আমি জানি ওসব বেয়াড়া সিনিয়র ছেলেদের বিকৃত রুচির ফল। সবকিছুতেই দাল মে কুছ কালা দেখার অভ্যেস। বিল্টুদি আমাদের একজন প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষকের মেয়ে। ওঁর ভাই ধ্রুপদ ও রবীন্দ্র সংগীত দুটোই গাইতে পারেন, শেখানও। বাজে কথা বল্লে হবে।।
আমরা তিনজন বিকেলে কানাইদার অফিসে গেলাম। টাইপিস্ট মানিদা বসে বসে একটা চিঠি টাইপ করছিলেন। বল্লেন--তোরা একটু অপেক্ষা কর। মহারাজ একটা জরুরী ফোনে আছেন, বেলুড়ের সঙ্গে। তারপরেই আসছেন।
অমিয়দা চুপচাপ থাকতে পারে না। বলে ওঠে -- মানিদার গাঁট্টা, পয়সায় আটটা!
মানিদা হেসে ফেলেন।
-- তোর কিসস্যু হবে না। সিনিয়র হয়েছিস, সেই চ্যাংড়া কে চ্যাংড়াই রয়ে গেলি! আর গাঁট্টা মারা কবেই ছেড়ে দিয়েছি, দীক্ষা নিয়েছি যে!
অমিয়দা বলতে যাচ্ছিল যে গাঁট্টার সাপ্লাই কমে দাম বেড়ে গেছে। এখন পয়্সায় একটার বেশি হবে না, তক্ষুণি কানাই মহারাজ ঢুকলেন।
কোন কারণে বেশ রেগে আছেন।
-- তোরা এসব কী শুরু করেছিস? হয়েছেটা কী?
আমরা চুপ। আমি টেবিল টপের সবুজ ভেলভেটের নকশা খুব মন দিয়ে দেখছি।
-- কী রে প্রদ্যুম্ন? তোর কি মাথাটাথা একেবারেই গেছে? আর অমিয়, তুই বোধহয় পালের গোদা? রাত জেগে পাহারা দেওয়া? তাহলে পড়াশুনো কখন হবে? বাবা-মা কি এইজন্যে এখানে পাঠিয়েছে?
কোন উত্তর নেই। শুধু মানিদার আঙুল টাইপরাইটারে দ্রুত চলছে।
এবার ওনার সুর একটু নরম হল।
--দেখ, একটা মাত্র ঘটনা ঘটেছে যেটা না ঘটলেই ভালো হত। আমার কাছে কমপ্লেন আসতেই কড়া স্টেপ নিয়েছি; ভবিষ্যতেও নেব--সে যেই হোক। তো? তোদের প্রবলেমটা কী?খামোখা স্টর্ম ইন এ টি -কাপ! এতে আশ্রমের বদনাম হবে না? তোরা সিনিয়র। তোদের থেকে আরও দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার আশা করেছিলাম। এবার যা! কোন কিছু ঘটলে সোজা আমার কাছে আসবি।
আমরা পেছন ফিরতেই উনি আবার ডাকলেন।
-- প্রদ্যুম্ন, শোন। আগামী মাসেই উৎসব ও সাধুসেবা। প্রথম দিন পথের পাঁচালী সিনেমা দেখানো হবে, তারপরে পাপেট শো। পরের দিন ভক্তিগীতি-- রামকুমার চট্টোপধ্যায় বলে ভদ্রলোক আর পূর্ণদাস বাউল; তার পরে যাত্রাপালা কংসবধ।
শেষদিন তোদের-- ছাত্রদের। এবার কী নাটক করছিস? কর্ণার্জুন?
-- না কানাইদা। ওটা গত বছর হয়ে গেছে। এবার আলেকজান্ডার-পুরু নিয়ে, নামটা মনে নেই। রিহার্সাল শুরু হয়ে গেছে।
-- গানগুলো?
আমি হেসে ফেলি।
--দেখুন না; রিহার্সাল রোজ রাতে সুনীলদা দেখছেন। একটা সীনে যুদ্ধবিজয়ের পর রাত্তিরে গ্রীকসৈন্যরা উৎসবে মেতেছে, গান গাইছে। কিন্তু সুনীলদা বলছেন গানটা হবে "জয় রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ বলরে আমার মন"!
উনি হেসে ফেলেন। না;, সুনীলকে নিয়ে আর পারা গেল না। পুরু-আলেকজান্ডার তো বিসি জমানায়; তখন রামকৃষ্ণ? আর গ্রীকসৈন্যরা হল যবন। ওরা এসব গাইবে? ঠিক আছে, বইয়ে কোন গান আছে?
-- হ্যাঁ, মহারাজ। "কাতারে কাতারে মোরা চলি সেনানী"।
-- ঠিক আছে, বইটার একটা বাড়তি কপি সন্ধ্যেবেলা প্রেয়ারের পরে আমার কাছে দিয়ে যা। তিনদিনে সুর করে দেব।
আর অমিয়, তুমি সবার সঙ্গে কথা বলে আমাকে উৎসবের জন্যে ষোলজন ভলান্টিয়রের নাম ঠিক করে কালকে লিস্টি দিয়ে যাবে। তুমিই কম্যান্ডার, বুঝলে!
বার্ষিক উৎসব ও সাধূসেবা।
প্রতিবছরই হয়; এবার যেন একটু অন্যরকম। আমরা ভলান্টিয়ার যে! ভলান্টিয়র মানে অন্যদের ওপর মাতব্বরি করার সুযোগ। খেলার মাঠ জুড়ে প্যান্ডাল বাঁধা হচ্ছে; কিছু কিছু ঘুগনি-চপ-ফুলুরির দোকান বসে গেছে। চারদিকে বেশ একটা ছুটি ছুটি ভাব; দিনের বেলায় ক্লাসে না গেলেও চলে, সন্ধ্যের থেকে উৎসব!
হেড মাস্টার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার যাই বলুন-- আমাদের ব্যাজ আছে। ডে-স্কলার ছেলেগুলো হিংসেয় জ্বলে মরে। বেশ কিছু স্কুলের বন্ধু একদিনে অপরিচিত হয়ে যায়।
সাধুসেবার দিন নানান প্রান্ত থেকে মিশনের সাধুরা আসছেন, কেউ কেউ হিন্দিটানে বাংলা বলেন। বেশির ভাগই আমাদের পাত্তা না দিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও গানগল্পে মেতে থাকেন। আমরা নানারকম ফাই ফরমাস খাটি।
ব্যতিক্রমী একজন -দেওঘরের মহারাজ-- আমাদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন। তোদের হইল কী রে! ই'রকম নিমপাতা মুখ কেন? শোন শোন, একটা ছেইলে নিমপাতা হাতে নিয়ে আসিতেছিল তো ওর নাম হইল নিমাই! যদি জামপাতা নিয়ে আসে তো কী নাম হইবে?
আমরা ইচ্ছে করে প্রত্যাশিত উত্তরটি না দিয়ে ভ্যাবাচাকা মুখ করি।
-- পারলি না তো?- জামাই--হা-হা-হা-হা!
আমরাও হেসে উঠি।
তারপর ওঁদের পাত পেড়ে খাওয়াতে লেগে যাই। কোমরে প্যান্টের ওপর সেই বাঁদিপোতার গামছা বেঁধে বালতি, পেতলের গামলা ও হাতা।
সে কী খাওয়া! বড় বড় মাছভাজা, ডিম সেদ্ধ, মাংসের ঝোল, চাটনি, ছানার পায়েস ও সন্দেশ; আর বেশ বড় বড় ফজলি আম।
কিন্তু কী আশ্চর্য! এসব সাধূদের জন্যে; আমাদের বাচ্চা ধাড়ি কারও জন্যে নয়। মনটা বিদ্রোহ করে ওঠে।
যে একান্নবর্তী পরিবার থেকে এসেছি সেখানে খাওয়াদাওয়ায় বাচ্চাদের অগ্রাধিকার। আর কাজের লোক ? ওরাও একই খাবার পাবে; হয়ত মাছের পিস শুধু একটা, তবুও পাবে তো! এখানে দেখছি আমরা যা পরিবেশন করছি তা পাব না! আমাদের কপালে সেই কারি পাউডার দিয়ে রাঁধা আধসেদ্ধ ঝোল। দুস্ শালা; আমাদের নজর লেগে ঠিক মহারাজদের পেট খারাপ হবে।
বিপ্লবকে বলি--একচোখোমিটা দেখলি?
ও হাসে। আরে, ওঁরা সন্ন্যাসী, সংসার ছেড়ে এসেছেন। ত্যাগ করেছেন। একদিন একটু ভাল- মন্দ খাবেন, তাতেও তোর ইল্লি!
--- হুঁঃ, অমন খাওয়া দাওয়া পেলে আমিও সন্ন্যাসী হব। সে ওরা খান, তাতে কিছু না। কিন্তু আমরা কেন পাব না? আমরা তো ফ্রি তে থাকছি না। আমাদের বাবা কাকারা রীতিমত হোস্টেলের চার্জ পে করছেন।
বিকেল তিনটে।
ডাইনিং হল খালি। শুধু আমরা যারা পরিবেশন করেছিলাম সেই চোদ্দজনের খেতে বসা বাকি। আমার কিছু ভাল লাগছে না। বলি--খেতে ইচ্ছে করছে না। রুমে যাচ্ছি।
বিপ্লব বলে-- ঠিক আছে, তোর খাবার আমি ঢাকা দিয়ে রুমে রেখে নেব। যখন খিদে পাবে খেয়ে নিবি।
দোতলায় উঠে নিজের রুমে শুতে যাব , কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বিরক্ত হয়ে খটখট করি, কোন সাড়া নেই। এবার দরজায় তিন লাথি! খোল শালা!
-- কে?
আরে ! এ যে আমার গুরু অমিয়দার গলা। খোল গুরু! কী ইয়ার্কি হচ্ছে?
-- তুই একা?
-- না, বরযাত্রী নিয়ে এসেছি। খোল বলছি।
দরজা খুলে যায় আর আমি ঢোকা মাত্র বন্ধ হয়।
আমার চোখ ছানাবড়া! ঘরের মধ্যে অন্ততঃ দশজন। তিনটে বালতি ভর্তি ফিশ ফ্রাই, ফজলি আম আর সন্দেশ! সবার মুখ ভর্তি। প্রাণপণে সাঁটাচ্ছে!
গুরুর মুখে লজ্জা লজ্জা হাসি।
-- এটা কী হল গুরু? এতবড় অপারেশন! তোমার ডানহাতও আছে, অন্য ছেলেরাও আছে। শুধু বাঁহাত আমিই বাদ? আমাকে বিশ্বাস কর না?
ডানহাত প্রশান্ত ফুট কাটে-- খাওয়াটা তো ডানহাতেরই ব্যাপার, বাঁ-হাত তো শুধু পোঁদ ধুতে কাজে লাগে। তখন তোকে খবর করা হবে।
বড় কিছু হবার আগেই গুরু মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
--ব্যস্ ব্যস্। খেতে শুরু কর। তুই রাগ করে খাস নি, খবর পেয়েছি। সবাই মিলে হাত চালা। কিছু বাঁচানো যাবে না। তারপরে খালি বালতিগুলো কায়দা করে ফেরত দিয়ে আসতে হবে।
খেয়ে দেয়ে জমপেশ ঘুম।
সন্ধ্যেয় স্নানটান সেজেগুজে প্যান্ডেলে। মেয়েদের লাইনে ভলান্টিইয়রি করা নিয়ে কম্পিটিশন আছে যে! আজ পথের পাঁচালি দেখানো হবে। বইটা পড়েছি। সিনেমাটার এত নাম! দেখতেই হবে।
কিন্তু তখন মুখের স্বাদ তেতো হয়ে গেল ।
সন্ধ্যের আলো-ঝলমল মঞ্চ এখন অন্ধকার।অতিথি শিল্পীরা তাঁদের কাজ করে ভূরিভোজ খেয়ে বিদায় নিয়েছেন। এখন সিনেমা দেখানো হবে। তাই অধিকাংশ আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা ভলান্টিয়াররা ফুরসত পেয়েছি; ঢের হল। আমাদের খাওয়া জুটবে সিনেমা শেষ হলে। অস্থায়ী মঞ্চের পাশে স্কুল বিল্ডিংয়ের লাগোয়া চারটে থাম দিয়ে তৈরি স্থায়ী সিমেন্টের স্টেজ। এখানেই যাত্রা হয়, নাটক হয়।
সেখানেই টাঙানো হয়েছে একটি সাদা পর্দা। ওদিকে আশ্রমের কর্মী গৌরদা ১৬ মিলিমিটারের প্রোজেক্টর নিয়ে পজিশন নিয়েছেন; স্পুল লাগানো হয়ে গেছে। ওঁর একটিই হাত, আরেকটি কব্জি থেকে নেই। কুলোকে বলে বোমা বাঁধতে গিয়ে এই হাল। তা উনি এক হাতেই ভলিবল ম্যাচে নেটের সামনে লাফিয়ে উঠে স্ম্যাশ করেন। সেই হাতেই সিনেমার প্রোজেক্টর অপারেট করেন। পান ভরা গালে স্মিত চেহারায় এমন একটা ভাব যেন দুনিয়ার কাছে ওঁর কিছু চাইবার নেই।
সিনেমা শুরু হল। সাদা কালো।
কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই খেই হারিয়ে ফেললাম। ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু। জোর করে তাকিয়ে দেখতে গিয়ে একবার ইন্দির ঠাকরুণের গাছের তলায় শুয়ে পড়া আর ঘটি গড়িয়ে যাওয়া চোখে পড়ল।
পাশের থেকে বিপ্লব গুঁতো মারল।
--কী হচ্ছে কী?
-- লাকি, সিনেমা দেখবি না গেঁয়ো ভূতের মত ঢুলে পড়বি?
-- ঘুম পাচ্ছে রে! ঘরের চাবিটা দে তো, আমি যাচ্ছি। খাবার ঘন্টা পড়লে ডেকে দিস।
উঠে রওনা দিলাম। কিন্তু ঘর যে অনেক দূর! আর ঘুটঘুটে অন্ধকারে এই নিস্তরঙ্গ জনসমুদ্রের মধ্যে থেকে ঘুম চোখে সাঁতরে বেরোনো?
বুদ্ধি খেলল।উল্টো দিকে হাঁটি। পর্দাটার কাছে। ওখানে অন্ধকারে থামে হেলান দিয়ে চমৎকার ঘুম দেব। কেউ দেখতে পারবে না, টেরও পাবে না। কাউকে ডিস্টার্ব না করে ভদ্রলোকের মত , জম্পেশ হবে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বাঁদিকের থামটায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। আমার ডান দিকে হাত পাঁচ দূরে লোহার চাকাওয়ালা ফ্রেমে সাদা পর্দায় অপূ দূর্গা হরিহর কি সব বলাবলি করছে। ওদের চেহারা দেখতে পারছি না; কথা কানে আসতে আসতে অস্পষ্ট হয়ে ভ্রমরগুঞ্জন।
আঃ, কোথায় শোনা একটা হিন্দিগানের কলি মাথার ভেতরে গুনগুন করছে-- আরাম বড়ী চিজ হ্যায় মুহ্ ঢাককে সোইয়ে!
কিন্তু মিনিট বিশেক পরে ঘুম ভেঙে গেল। একটা রীল শেষ হয়েছে। হাত কুড়ি দূরে একটা লাইট জ্বালিয়ে গৌরদা পরের রীলটা স্পুলে লাগাচ্ছেন। লোকজন কথাবার্তা শুরু করেছে। আর তক্ষুণি টের পেলাম পর্দার কাছে আমি একা নই।
ডানদিকের থামের গায়ে সিঁটিয়ে বসে আছে দুটো ছায়ামূর্তি, কিন্তু ঠিক বসে নেই। একজন আর একজনের কোলে।
দূর থেকে এসে পড়া হালকা আলোয় ওদের চিনতে পারছি। বড় ছেলেটা ইলেভেনের বিমলদা , বর্দ্ধমানের কোন ক্লাবের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। দু'বার ফেল মেরে এই থার্ড অ্যাটেম্প্ট। বয়সে বেশ বড়। কিন্তু আমরা সবাই ভয় পাই। ও নাকি কানাইদার স্পাই। ও আমাদের ঠ্যাঙালে নালিশ করা যায় না। সবাই জানে।
কিন্তু ওর কোলে ঢলে পড়ছে যে ছেলেটা ? ও তো টেন কমার্সের ফার্স্ট বয়! বুক কীপিংয়ে ওর একটা নম্বরও কাটা যায় না। হাফ ইয়ার্লিতে একশ তে আটানব্বই দেওয়ায় স্যারের সঙ্গে ঝগড়া করতে গেছল। সন্দীপদার বাবার কোলকাতা শহরের গড়িয়াহাটে রেডিমেড জামাকাপড়ের বড় দোকান। মাসে একবার সপরিবারে গাড়ি চড়ে আসেন ছেলেকে দেখে যেতে। তেল চুকচুকে কালো সন্দীপদার কোঁকড়ানো চুল, দুবেলা রেক্সোনা সাবান মেখে চান করে। স্টেনলেস স্টিলের থালাবাটিতে খায়। প্রেয়ার হলে পেছনের দিকে বসে অর্গান বাজায়। ওটা আশ্রমে আর কেউ পারে না। ওকে স্বামীজিরাও খুব পছন্দ করেন।
ওরাও যেন এখনই আমাকে খেয়াল করল, কিন্তু না দেখার ভান করে রইল। আমি অন্যদিকে তাকাচ্ছি, ঘুম মাথায় উঠেছে।বিমলদা উঠে কোথায় যেন গেল। সন্দীপদা অন্য সময় আমাকে পাত্তা দেয় না। এখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
বিমলদা ফিরে এসেছে , সঙ্গে কাগজের ঠোঙায় কয়েকটা সিঙারা। আমাকে একটা দিতে গেল, আমি না করলাম।
সিনেমা আবার শুরু হয়েছে।
এবার ওরা আর আমার পরোয়া করছে না। বিমলদা প্রাণপণে চটকাচ্ছে সন্দীপদাকে, চুমো খাচ্ছে। বিমলদাটা ওরকমই , কেমন গুন্ডামত। কিন্তু সন্দীপদা? আশ্রমে প্রেয়ার হলে অর্গান বাজানো বিরল প্রতিভা ? ও কেন অমন করছে? ও যে কী আনন্দ পাচ্ছে কে জানে! দেখে মনে পড়ছে শস্তা নভেলের সেই বস্তাপচা লাইন-- চরম সুখে ঢলিয়া পড়িল!
আমি যেন চুইংগাম দিয়ে সেঁটে গেছি। অন্ধকারে একাগ্র চোখে দুই ছায়ামূর্তির দিকে তাকিয়ে আছি।
কতক্ষণ? মিনিট পনের। হটাৎ দেখি দুজন নয়, ওরা এখন তিনজন, আরও কেউ এসে জুটেছে। ওরা ফিসফিস করছে। প্রোজেক্টর এর ঘরঘরানিতে কিছু শোনা যাচ্ছে না।
কিন্তু এ কী?
তিননম্বর যে নীচু হয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পর্দার পেছন দিয়ে আমার দিকেই আসছে। মারবে নাকি? বিমলদা আমাকে পেটাতে চাইছে? আমি তো কিছু করি নি! বাগড়া দিই নি। আমাকে কি চলে যেতে বলবে? ভাগ শালা! কেন যাব? আমি কি বিমলের বাবার চাকর? একবার গায়ে হাত তুলে দেখুক তো? এমন হল্লা মচাব! আমাদের পুরো ক্লাসে খুব ইউনিটি, কেউ সহজে ঘাঁটায় না। কিন্তু ছেলেটা কে?
তিন নম্বর এসে আমার পাশে বসে ফিসফিসিয়ে বলে- প্রদ্যুম্নদা, আমি তোমার কাছে একটু বসব।
আমি কিছু বলতে পারি না। এ যে ক্লাস সেভেনের অনিকেত। দু'বছর আগে আশ্রমে এসেছিল। এর মধ্যেই পেকে ঝানু হয়ে গেছে। ও নাকি বড়দের গোপন রেজিস্টারে হস্টেলের নগরবধূ! ওর জন্যে দু-তিনজন সিনিয়রদের মধ্যে মারপিট হয়ে গেছে।
আমাদের গ্রুপটা এদের এড়িয়ে চলে, বাইরে থেকে দেখলে এই ছটফটে বাচ্চাটাকে ভালই লাগে। ওর সম্বন্ধে চালু গল্পগুলোর একটাও বিশ্বাস করি না।
আমি মন দিয়ে সিনেমার ডায়লগ শোনার ভান করি। ও আমার হাতে হাত জড়িয়ে রাখে।
আমি কান পেতে শুনি-- অপু! দূর্গা! এরা সব গেল কোথায়?
আচমকা সব কথাবার্তা বন্ধ। কঁকিয়ে উঠেছে সেতার ও তারসানাই।
অনিকেত কখন সহজ সরল ভাবে আমার কোলেউঠে বসেছে। আমার ওকে এক্ষুণি নামিয়ে দেওয়া উচিত। জোর করে? হ্যাঁ, জোর করে।
কিন্তু আমার সব জোর কোথায় গেল! ও আমার গালে গাল ঘষছে। আমি কাঠ হয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকি। এবার কী হবে? কিছু একটা হতে চলেছে। না; কিছু হবে টবে না। একটা ছোট বাচ্চা কোলে এসে বসেছে তা নিয়ে এত কথা কিসের অ্যাঁ?
ও আস্তে আস্তে গালে গাল ঘষছে। আমি অসাড়; নাকে আসছে একটা গন্ধ, তেলের ও অন্যরকম।
লাইট জ্বলে উঠল, সিনেমা শেষ। আমরা দুই জোড়া একে অন্যকে দেখি।
বিমলদা ও সন্দীপদা আমার দিকে তাকিয়ে বুঝদারের মত হাসে। আমি তাকাতে পারি না।
ভীড় এবার যে যার ঘরমুখো হবে। আমার পকেটেই রুমের চাবি। পা চালাই। কিন্তু এই ঘটনাটা কাকে বলব? মিতাকে বলা কি ঠিক হবে? ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড; তালা খোলা কিন্তু আলো নেভানো, আর সমস্ত বিছানায় মশারি টাঙিয়ে ভালো করে গোঁজা। আমার বিছানায় মশারি কে টাঙিয়েছে?
কাছে গিয়ে দেখি ভেতরে কেউ শুয়ে রয়েছে। রাগে পিত্তি জ্বলে গেল। আমার বিছানায় কেউ আয়েস করে ঘুমুচ্ছে কিন্তু আমিই জানি না! এ তো সেই ট্রেসপাস না কি যেন বলে! আবার ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে!
--অ্যাই কে রে! কোন শালা ঢুকেছিস ? বেরিয়ে আয়!
প্রথমে কোন সাড়া নেই। কিন্তু নাক ডাকার শব্দ থেমে গেল। কী ব্যাপার?
লাইটের সুইচ টিপে দিই, আরও চড়া গলায় বলি-- বেরিয়ে আয় বলছি। ন্যাকামি হচ্ছে?
এবার ঘোঁৎ করে শব্দ করে মশারির কোনা তুলে বেরিয়ে এল এক মাঝবয়েসি মুশকো জোয়ান--বেশ মহিষাসুর মহিষাসুর চেহারা। আদুল গা, লুঙ্গির ঢিলে কষি বাঁধতে বাঁধতে কাঁচাঘুম ভাঙা রক্তচোখে তাকিয়ে বলল--কে র্যা? বাপের বয়সি লুককে তুই-তোকারি করছ, শালা -সুমুন্দি বলছ? এক চড়ে তোমার---!
ওরে বাবারে! পুরো বাক্য শোনার আগেই টেনে ছুট লাগাই। এক শ্বাসে সোজা ডাইনিং হল। পরিবেশন শুরু হয়েছে। একটা পিঁড়িতে বসে পড়েছি। আজ আর থালা ধোয়ার ঝামেলা নেই। এই কদিনের জন্যে বেশ কিছু শালপাতা আনানো হয়েছে, একটা টেনে নিলেই হল।
আজকে খিচুড়ি আর আলুভাজা। গোগ্রাসে খাই। তারপর হাতটাত ধুয়ে বন্ধুদের খোঁজ।
--উঃ, যা ভয় পেয়েছি না! ঘর খুলেছে কে? আর ওই সব মহিষাসুর লোকজন? আমি আর আজ রাত্তিরে আমার ঘরে যাচ্ছি না।
সবাই হেসে ওঠে। প্রশান্ত খ্যা-খ্যা করে হাসে। বলে--পোদো নিঘ্ঘাৎ মহিষবাথানের কোন মোষকে খেপিয়েছে।
-- মানে?
--শোন, ওরা হল আমাদের ক্লাসের গোলকপতির বাবা-কাকা- মা-কাকিমার দল । কোলকাতার কাছেই মহিষবাথান বলে একটা গাঁ থেকে এসেছে। ওদের মাছের ভেড়ি।
-- তা আমাদের বিছানায় ঢুকেছে কেন? আর তালা খুলল কী করে? আমাদের না জানিয়ে?
-- সবটা শোন না! ওরা ঠিক করেছেন যে রাত্তিরটা এখানেই থাকবেন, সকালে ফিরে যাবেন। তাই গোলক অমিয়দাকে ধরল। তুই আগে চাবি নিয়ে গেলি। কিন্তু ঘরে ফিরিস নি। তখন আমরা অমিয়দাকে দিয়ে অফিস থেকে ডুপ্লিকেট চাবি আনিয়ে ঘর খুলেছি। পর পর দুটো ঘর ছেড়েছি। একটায় গোলকের বাবা-কাকারা , আর অন্যটায় মা--কাকিমারা।
আমার রাগ যায় না। এসব কে ঠিক করেছে?
আমাদের গুরু অমিয়দা হেসে বলে-- আমি। রাগিস না, মাত্তর একটা রাত্তির।
--আর আমরা কি সারারাত্তির নিল-ডাউন হয়ে থাকব , না মুরগী হয়ে?
আবার একপ্রস্থ হাসি।
বিপ্লব বলে-- গুরুর উপর ভরসা রাখ তবে তো ভবদরিয়া পার হবে। আরে গুরু কানাই মহারাজকে বলে আজকের জন্যে স্পেশাল পারমিশন আদায় করেছে--আমরা ছোট ছাদে শোব।
মনটা খুশি খুশি হয়ে যায়। ছোট ছাদ? মানে আমাদের লুকিয়ে সিগ্রেট খাওয়ার ঠেক? নাঃ গুরুর প্রতিভা আছে।
আমরা বেশির ভাগ নতুন ধোঁয়া খাওয়া শিখেছি। মিন্ট দেওয়া 'কুল' দিয়ে শুরু করে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে ধরা পরার ভয় কাটিয়ে পাসিং শো, রেড অ্যান্ড হোয়াইট, লেক্স, সিজার পেরিয়ে এখন পানামায় স্থিতু হয়েছি। গুরু ও প্রশান্ত চার্মিনারে। ঘরে পাখা নেই, তাই একটা গুমোট থাকে।
ছাদে অনেক জায়গা। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বা পাশাপাশি চাদর পেতে শুয়েছি আমরা দশজন। আমি ও বিপ্লব একটু কোণার দিকে। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। সবার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একজন দুজন এখনও সিগ্রেটের শেষ টানগুলো দিচ্ছে। কেউ কেশে উঠল।
বিপ্লব আমার দিকে গড়িয়ে আসে।
--তুই তখন চাবি নিয়ে ঘরে যাবি বলে উঠে গেলি। কিন্তু ঘরে যাস নি। কোথায় গেছলি?
--- স্ক্রীনের কাছে থামের আড়ালে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছিলাম।
--তো আমাকে বলে যাস নি কেন? তুই তো বললি ঘরে যাবি।
-- আগে ভাবি নি তো! এমন ঘুম পেয়ে গেল যে--।
-- হটাৎ করে ঘুম পেয়ে গেল? তাই আর ঘরে গেলি না?
--এমন করে পুলিশি জেরা করছিস কেন মিতা?
-- আমি পুলিশের কুকুর বলে।
-- সে তো আমিও।
-- না লাকি; তুই আর সেই লাকি নেই।
--মানে?
--মানে পরিষ্কার। লাকি সত্যি কথা বলছে না। মিতার থেকে সত্যিটা লুকোচ্ছে।
-- কী বলতে চাস তুই?
-- ভাল করেই জানিস কী বলতে চাই। তুই ওই ছেনাল মাগী অনিকেতের সঙ্গে সাঁট করে ওখানে গেছলি। ঘুমুচ্ছিলি না; ওকে কোলে বসিয়ে চুমু খাচ্ছিলি।
-- মিথ্যে কথা!
-- আমি নিজের চোখে দেখেছি। অমিয়দা চাবির জন্যে তোকে খুঁজতে আমাকে পাঠাল। আমি একে তাকে জিগ্যেস করতে করতে স্ক্রীনের কাছে গিয়ে তোদের থেকে ফিরে এসে অমিয়দাকে বললাম ওকে কোথাও দেখছি না। আমি তোকে ধোঁকা দিই নি। কিন্তু তুই--?
--বিশ্বাস কর; আমি সত্যি কথা বলছি। ও এসে আমার কোলে বসেছিল। আর আমি চুমো খাইনি।
ও হিসহিসিয়ে ওঠে।
-- আচ্ছা? অনিকেত জানত যে প্রদ্যুম্নদা কোথায় কোন যমুনাতীরে কোন কদম্বগাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে আছেন?
আমি চুপ করে যাই। কী বলব? কেমন করে সত্যিটা বোঝাব? পাশ ফিরে একটা পানামা ধরাই।
সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গোটা ছাদ নিস্তব্ধ। কারো কারো মৃদু নাকডাকার আওয়াজ। আকাশে চাঁদ অনেক নীচে নেমে এসেছে। কোথাও একটা দুটো পাখি চাপাস্বরে ডেকে উঠছে। আমার ঘুম আসছে না, কিন্তু চোখ জ্বালা করছে।
বিপ্লব পাশ ফিরে কনুইয়ের উপর ভর করে আমার বুকের উপর ঝুঁকে পড়ে।
--- তোর এত চুমু খাওয়ার শখ তো আমাকে বলিস নি কেন লাকি? কেন ওই ঘেয়ো কুকুরটার জন্যে ছোঁক ছোঁক করছিস?
কিছু বোঝার আগেই ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটে চেপে বসে। সিগ্রেটের তিক্ত কষায় স্বাদ আর একটা অন্যরকম গন্ধ মুখের লালা মিলে মিশে যায়। একটু পরে আমাকে ছেড়ে দেয়।
-- আর কাউকে যদি কখনও চুমো খেয়েছিস তো তোর একদিন কি আমার একদিন। যা , এবার ঘুমো। কাল প্রেয়ারে যাব না।