সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
হুম। আবার বাংলা নিউইয়ার! ১৪২৫। অতএব একটা গোটা দিন সৌখিন পাঞ্জাবি-পায়জামা, লালপেড়ে শাড়ি খোঁপায় বেলফুল, ‘হ্যাপি নববর্ষ’, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আর তারপর মাসখানেকের মধ্যে এই “২৫” সংখ্যাটা ক্রমে ক্রমে অস্পষ্ট হতে থাকবে আমাদের মগজে – তারপর ফের সেই একই চিত্রনাট্য – ‘এই গুরু, এটা যেন বাংলা কত সাল - ২৩ নাকি ২৬?’
এই আমাদের বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা – আমাদের কোনও শাখা নাই – নাম ও সহি মিলাইয়া লইবেন।
এগারো মাসের বাচ্চা কিম্বা আশি বছরের বৃদ্ধা - কারুর রক্ষে নেই – সবাই মেয়েছেলে – রোজকার সংবাদপত্রের একঘেয়ে খবর – বিরক্ত লাগে আজকাল – এরা কি আর কোনও খবর পায় না? প্রথম প্রথম মোমবাতি নিয়ে হাঁটতেও হয়েছে বেশ কয়েকবার – সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে হ্যান্ডলুম কটনের শাড়ী, মোটা করে কাজল আর বড়ো টিপ পরে সকলের সঙ্গে মিছিলে - যদিও আমার বাড়িতে কোনও এগারো মাস বা আশি বছর নেই! পরের দিন আবার একগাদা টাকা খরচ - স্পা করাতে! তবু – ইটস্ মাই সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি –
এও আমাদের বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা – আমাদের কোনও শাখা নাই – নাম ও সহি মিলাইয়া লইবেন।
কলেজলাইফে খুব লাল সালওয়ার পরতাম – পরতে ভালোও বাসতাম - অনেক পরেছি, পরতে পরতে রঙ নষ্ট হয়ে গেছে, তবুও – এখন সাদা শাড়ী পড়ি, নীল পাড় – বেশ লাগে – এখনকার ফ্যাশন! ইদানিং আবার গেরুয়া ছেয়ে যাচ্ছে শপিংমলগুলো – নেক্সট মাসের স্যালারি পেলে – ভাবছি ...
হ্যাঁ, এও আমাদের বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা – আমাদের কোনও শাখা নাই – নাম ও সহি মিলাইয়া লইবেন।
ওমুকের ছেলে জয়েন্টে ক্র্যাশ করেছে – ওর ছ’টা মাস্টার ছিলো – তোমার সুপুত্রকে তো গুনে গুনে আট’টা দিয়েছিলাম – গত দু’বছর ধরে টেনেছি – স্মার্টফোন, ল্যাপটপ যেদিন চেয়েছে, পরেরদিনই এনে দিয়েছি – এই ইনভেস্টমেন্টের এই রিটার্ণ? আসলে আমারই বোঝা উচিৎ ছিলো – আরে বাবা, জিন বলে তো একটা ব্যাপার আছে, না? তোমার ছেলের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাটাই ভুল – ওমুকের তো ওই চাকরি, আমি কাউন্সিলারকে দিয়ে সময় ও জায়গামতো পালিশ না দিলে এতদিনে পথে বসতো – ঈশ্, আমার ‘পেস্টিজ এক্কেবারে পাংচার’!
আরে, এটাও আমাদের বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা – আমাদের কোনও শাখা নাই – নাম ও সহি মিলাইয়া লইবেন।
সামনে কবিপক্ষ – এই চল্, একটা পত্রিকা বের করি – বাংলায় লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের সঠিক সময় এই কবিপক্ষে। কেন? আমরাই লিখবো – সদনে পঁচিশে বৈশাখ ধুন্ধুমার বিক্রি করবো সবাই মিলে – দে, চাঁদা দে – সাতদিনের মধ্যে লেখাপত্র জমা দে – তারপর কম্পোজ-প্রেস-বাইণ্ডিং অনেক কাজ –
ঠিকই ধরেছেন, এও আমাদের বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা – আমাদের কোনও শাখা নাই – নাম ও সহি মিলাইয়া লইবেন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর