ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত
Posted in ধারাবাহিক৯
জেরাল্ডের এপার্টমেন্টেরও জেরাল্ডের মতই দু’খানা আলাদা সত্তা আছে। তাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের কোনও বিরোধ নেই। একজন আরেকজনের ব্যাপারে নাক গলায় না এবং একজন আরেকজনকে এতটুকুও জায়গা ছেড়ে দেয় না। সত্তা দুটি এতটাই আলাদা যে সত্যি সত্যিই একজনের সঙ্গে আরেকজনের সাক্ষাৎ হবার কিম্বা মিলেমিশে কাজ করবার সেরকম কোনও অবকাশ তৈরি হয় না। অবশ্য তাদের মালিকানা রয়েছে একজন মানুষের হাতে এবং সেই মানুষটির চারপাশের পরিবেশের মধ্যে একসঙ্গে ও প্রায় একই সময়ে তাদের স্ফুরণ ঘটতে থাকে। জেরাল্ডের প্রকৃত সত্তা কোনটি তা কেউ বলতে পারে না, এবং তিনি নিজেও যে কেন কোনও বিশেষ একটিকে অগ্রাধিকার দেন না, সেই বিষয়টা জানা যায় না। কিন্তু প্রাধান্য দেবার প্রাসঙ্গিকতা এখন শুধু গৌণ নয়, বেশ দেরি হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর, পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সের যুবক জেরাল্ড সন্দেহাতীত ভাবে দ্বৈতসত্তার অধিকারী। তবে তার সঠিক কারণটা কারো কাছেই বোধগম্য নয়। হয়তো বা শারীরিক এবং মানসিকভাবে তিনি খুব দুর্বল ছিলেন শিশু বয়সে। এমনটিও বলা হয় যে তাঁর রক্তে বিচিত্র জাতির মিশ্রণ ঘটেছে। তাঁর মা ছিলেন এক ইহুদি বিদ্বান পণ্ডিত ব্যক্তির কন্যা এবং তাঁর বাবা উত্তর ফ্রান্সের কৃষক পরিবারের সন্তান, যে পরিবারে এক দু’জন ধর্মযাজক ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ ছিল ক্ষেতখামারের মালিক। জেরাল্ড তাঁর পূর্বজদের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে পছন্দ করতেন, যেমন মনস্তত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহের বিষয়টা তিনি সম্ভবত তাঁর পিতামহের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন একজন যাজক। বিশাল বিদ্বান না হলেও তিনি ছিলেন সুবক্তা এবং মানুষের মন ও আত্মাকে পড়ে ফেলবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। অপরপক্ষে মানুষ বিষয়ে জেরাল্ডের বাবার সেরকম আগ্রহ ছিল না। তিনি কাঠখোট্টা, লাজুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। এক কৃষককন্যাকে বিবাহ করে গ্রামের খামারবাড়িতে বসবাস করে নিস্তরঙ্গ জীবন কাটানো ছাড়া বিশেষ কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না তাঁর। কিন্তু খামারের মালিকানা আসলে ছিল জেরাল্ডের বাবার খুড়তুতো দাদার এবং অবশেষে জেরাল্ডের বাবা কৃষককন্যার বদলে প্রফেসর রোজেনদালের জ্ঞানী এবং পরিশীলিত স্বভাবের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। সেই কন্যার ত্বক ছিল সম্পূর্ণ সাদা এবং হাতগুলো ছিল ভীষণ ফ্যাকাসে। জেরাল্ডের বাবা প্যারিস গিয়েছিলেন আইন বিষয়ে পড়াশুনা করবার জন্য, যদিও সে কার্যক্রম আর শেষ করে উঠতে পারেননি। এক বন্ধুর মাধ্যমে প্রফেসর রোজেনদালের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। একাকিত্ব, কঠোরতা এবং নিজস্ব ক্ষোভের বাতাবরণ সামলে উঠতে উঠতে কী ভাবে যেন প্রফেসর রোজেনদালের কন্যার প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। প্রথমে যদিও সেই কন্যাকে খুব অদ্ভুত মনে হত তাঁর। ওই কন্যার সৌন্দর্য তাঁর মনে অদ্ভুত ভীতির উর্দ্রেক করতো এবং আসলে তিনি সেই কন্যাকে ঘৃণা করতেই চেয়েছিলেন। মেয়েটি তাঁকে বন্য জন্তুর মত মনে করে, এ কথা বুঝতে পেরে মনে ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। কালেভদ্রে মেয়েটি তাঁর সঙ্গে কথা বলত। যেটুকু বলত, সে কথা ভারি সংযত। যদিও মেয়েটি খুবই জ্ঞানী ছিল, তবুও তাঁর সঙ্গে ছোটখাট সাধারণ বিষয়েই কথাবার্তা হত। মেয়েটি জানত যে সে ছাত্র, পড়াশুনা করে; তবুও ভারি ভারি তত্ত্বের কথা কোনো দিন বলেনি তাঁর সঙ্গে। তিনি অনুভব করেছিলেন যে সেই মেয়েটিও তাঁর প্রেমে পড়েছে। একদিন কাছে ডেকেছিলেন মেয়েটিকে এবং ধর্ষণ করেছিলেন। অবশেষে তাঁদের বিবাহ হয় এবং জেরাল্ডের জন্ম হয়। জন্মের সময় জেরাল্ডের মায়ের অবস্থা মরোমরো হয়েছিল, কারণ শিশু এত বিশাল আকারের ছিল যে সবাই ভেবেছিল বড় হয়ে বাবার মত দৈত্যাকৃতি চেহারা হবে। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে তাঁর ভারি অসুখ করেছিল এবং বাড়বৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। ছোটখাট চেহারা নিয়েই বেড়ে ওঠেন তিনি; প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই মায়ের মৃত্যু ঘটে। তাঁর বাবা প্যারিস শহরটার সঙ্গে কখনই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেননি; ফলে জেরাল্ডকে পড়াশুনার জন্য প্যারিসে রেখে দিয়ে তিনি গ্রামে ফিরে যান তাঁর নিঃসন্তান খুড়তুতো দাদার রেখে যাওয়া খামারবাড়িতে।
সেই থেকে জেরাল্ড নিজের মত থাকেন। তিনি ডাক্তারি পড়েছিলেন; প্যারিসের হাসপাতালে কয়েকবছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে করতে শল্যচিকিৎসক হিসেবে বেশ পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছিলেন এবং বুঝতেও পারেননি যে কবে যেন তিনি এক বিখ্যাত মানুষ হয়ে উঠেছেন। এই পর্বের শুরুতেই যে দু’খানা সত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, সেই বিষয়টার সঙ্গে জেরাল্ডের এক বিশেষ প্রতিভার গূঢ় সম্পর্ক আছে। যেমন, তাঁর একটা অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণী ক্ষমতা আছে। শল্যচিকিৎসক হিসেবে অবশ্য সেই প্রতিভার সদ্ব্যবহার করবার সুযোগ পান না তিনি। কিন্তু শল্যচিকিৎসক হিসেবে অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ঘটবার সুযোগ থাকে এবং অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে তাঁর পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। জেরাল্ড একেবারেই কৌতূহলী ব্যক্তি নন। যাঁদের পর্যবেক্ষণ করবার জন্য তাঁর আগ্রহ জন্মায়, তাঁদের তিনি একটু আলাদাভাবে খাতির করেন। তাঁদের জীবন বিষয়ে অবশ্য তিনি কিছু জানতে চান না। তাঁদের কার্যকলাপ অথবা মানুষ তাঁদের সম্বন্ধে কী বলে, সেসব নিয়েও তিনি এতটুকুও মাথা ঘামান না। কিন্তু তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন, ধীরস্থির ভাবে তাঁদের দিকে চেয়ে থাকেন, নানা কথাবার্তা বলেন, তাঁদের মুখমণ্ডলে আনন্দ অথবা বিষাদের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করতে থাকেন নিবিষ্টমনে। তাঁদের হাত নাড়া, চলাফেরা, বসে থাকা কিম্বা দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, কে কী ভাবে সিগারেট ধরাল… এইসব… সব কিছুই যেন মানুষগুলির মনোজগতের দরজা খুলে দেয় জেরাল্ডের কাছে। তিনি দাবি করেন যে অনেককিছুই মানুষ লুকিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু বাইরের চেহারায় মানুষের মনের ছবি ফুটে উঠবেই। মানুষের মনের ছবি খুঁজে বের করবার ইচ্ছেটাই জেরাল্ডের আগ্রহের প্রধান চালিকাশক্তি। তিনি প্রতারিত হতে চান না এই ব্যাপারে। সব সময় সত্যিটা খুঁজে বের করতে মন চায় তাঁর। বিভিন্ন বস্তুর আপেক্ষিকতা তাঁকে দীর্ণ করে। তিনি শিখেছেন যে মানুষকে মূল্য দেওয়া উচিত এবং কেউ কেউ তাঁকে এই শিক্ষা দিয়ে যায় যে তাঁর এই ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। যে ভাবে উৎকৃষ্ট শিল্পকর্মের নির্দিষ্ট মূল্য থাকে, সেইভাবেই মানুষকেও মূল্য দেওয়া উচিত বলে মনে হয় তাঁর; কিন্তু মাঝেমাঝে তিনি ভুল প্রমাণিত হন। কারণ, সবার সেই মূল্য পাবার যোগ্যতা থাকে না। মূল্য এবং অযোগ্যতার মধ্যে পার্থক্য না করতে পারার অক্ষমতা অবশ্য খুব বেশি বিরক্তিকর ব্যাপার নয়। কিন্তু অপরপক্ষে জেরাল্ড অনুভব করেন যে, বিপরীতে, তার এই ক্ষমতার সঙ্গে কল্পনা বা আত্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই; মানুষের যেমন দৃষ্টিশক্তি থাকে, ঠিক তেমনই এটি একটি শক্তি, একটি প্রতিভা এবং অবিশ্বাস্যভাবে তিনি এই ক্ষমতার অধিকারী। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবার জন্য তিনি শব্দ হাতড়ে ফিরতে থাকেন। এই ক্ষমতার গুণগত বৈশিষ্ট্য কথায় প্রকাশ করতে গেলে সেরকম কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম কিম্বা আইন নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে যে, নৈতিকতার মান দ্বারা মানুষকে বিচার করা চলে না এবং শিল্পকীর্তিগুলিও সব সময় সৌন্দর্যের মান দ্বারা বিচার করা সম্ভব হয় না। কারণ নৈতিকতা নির্বিকল্প নয়, এবং সৌন্দর্য মানুষের স্বাদের মত পরিবর্তনশীল। তবে যে সৌন্দর্য চিরকালীন এবং শাশ্বত, তার সঙ্গেই হয়তো বা একমাত্র তুলনা চলে জেরাল্ডের এই বিশেষ ক্ষমতার গুণমানের বিধিগুলির। যদিও বিষয়টা পুরোপুরি শিল্পকলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না, কারণ বিশ্বসংসারের নানা বিচিত্র প্রাণময় এবং জড়বস্তু… সব, সবকিছুর প্রতি জেরাল্ড আকর্ষিত বোধ করেন এবং এই আকর্ষণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর এই বিশেষ ক্ষমতার রহস্য।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জেরাল্ডকে আর পাঁচটা সাধারণ দ্বৈতসত্তাসম্পন্ন মানুষের শ্রেণিতে রাখা যাবে না। তাঁর ব্যাপারটা এমন নয় যে একটা বহির্জগতের পেশাগত সত্তা এবং আরেকটা ঘরোয়া সত্তা; এমন নয় যে একটা প্রকাশিত এবং আরেকটি গোপনীয়; এমন নয় যে একটা সত্তা দিনের বেলায় প্রকাশ পায় এবং আরেকটি রাতে। তাঁর ক্ষেত্রে এরকম অতিসরলীকরণ একেবারে অর্থহীন। তাঁকে দ্বিখণ্ডিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী বা দ্বৈতসত্তাসম্পন্ন মানুষ বলে সরাসরি দেগে দেওয়া যাবে না। আগেই বলেছি যে তাঁর ক্ষেত্রে একটি সত্তার সঙ্গে আরেকটির কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু তাঁর অন্তরে একটা গোপন নেশা আছে যেটা তাঁকে সত্যসন্ধানের জন্য তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি খুঁজে বের করতে চান যে এই জগতে ‘সত্য মূল্য’ বলতে ঠিক কী বোঝায়। আমাদের জীবনের দৈনন্দিন ওঠাপড়ায়, প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাকাতর মনুষ্যজীবনে কী সেই পরম প্রাপ্তি, কোন বস্তু একেবারে ধ্রুব, যার ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব আছে এবং যা একেবারে স্বতন্ত্র… এই সব তিনি খুঁজে ফিরতে থাকেন। আমরা যদি বলি যে জেরাল্ড প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের অন্বেষণে রত, তাহলে অসঙ্গত হবে না। জেরাল্ডের প্রতিদিনের সাধারণ জীবনযাপনে, পেশাগত কাজে যে সত্তা ব্যস্ত থাকে, তাঁর সঙ্গে যে মানুষটি পিয়ানো বাদনরত কিশোর বের্নহার্ডের মুখের দিকে তাকিয়েছিল, তাঁর কোনো মিল ছিল না। জেরাল্ড হঠাৎ যেন এক কোমল হাতের পরশ অনুভব করেছিলেন…
‘আমাদের সম্পদ…’ তিনি বলেছিলেন তাঁর সঙ্গীতশিক্ষক বন্ধুকে। তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন বের্নহার্ডের বাজনা শুনে এবং বলেছিলেন যে এই ছেলে একদিন খুব ভাল পিয়ানোবাদক হবে এবং কোনো কোনো মাপকাঠিতে এই কিশোরের প্রতিভা অসামান্য।
‘এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। অতি অবশ্যই এই কিশোরের সত্তা বিশেষ স্বতন্ত্র!’ বের্নহার্ডের হালকা বাদামি মুখমণ্ডলের বিষণ্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করলেন জেরাল্ড। তিনি এখনও জানেন না যে বের্নহার্ডের ঠিক কোন বৈশিষ্ট্য তাঁকে আকর্ষণ করছে। কিন্তু এত অল্পবয়সী একজন মানুষ কী ভাবে এত অনায়াসে বাখের কম্পোজিশন বাজিয়ে দিতে পারে? এই কিশোরের বাহ্যিক প্রকাশ এবং বাজনা সবকিছুই এক ছন্দে গাঁথা; কোথাও এতটুকু বিন্যাসের অভাব নেই। জেরাল্ড বাদ্যযন্ত্রের উপরে আনত কিশোরের ক্ষীণকায় শরীরের দিকে তাকিয়ে ভেবে চলেন… কাঁধ ঈষৎ ঝুঁকে পড়েছে, মুখ অদ্ভুত গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ, সুরের প্রতি সম্পূর্ণ নিবেদনে ডুবে আছে মন। গাঢ় সোনালী চুলের গুচ্ছ এসে পড়েছে কপালে, ধূসর চোখ বিষাদে ঢাকা, চেয়ে আছে পিয়ানোর চাবিগুলোর দিকে, মাঝে এক দু’ বার বাজনা থেকে মুখ তুলে জেরাল্ডের সঙ্গে চোখাচোখি হল। দুই হাত বড়, চওড়া, সুন্দর, উষ্ণ, বলিষ্ঠ কিশোরের হাত…
জেরাল্ড পরে বের্নহার্ডের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলেন যে সে কেমন যেন বিব্রত বোধ করছে কথা বলতে। তিনি তাঁর বাজনা এবং প্রতিভা ইত্যাদি নিয়ে প্রশংসা করছিলেন। কিন্তু এই কিশোর অপ্রতিভ ভঙ্গিতে চুপ করে থাকে। জেরাল্ড তাঁর অস্বস্তি কাটাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু বিশেষ লাভ হয় না। এক্ষেত্রে জেরাল্ডের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কিছুটা ধাক্কা খায়। বের্নহার্ডের বাজনা শুনে তাঁর মনে হয়েছিল যে এই কিশোর অত্যন্ত পরিণতমনস্ক এবং সপ্রতিভ। অথচ ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। অর্থাৎ তাঁর ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আসলে তিনি এই বয়সের ফরাসি ছেলেদের বিষয়েই সাধারণত জানেন, যারা শিক্ষা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সপ্রতিভ এবং বাক্যবাগীশ হিসেবে গড়ে তোলে। এই জায়গাতেও একটা প্রতিবন্ধ কাজ করছে, কারণ বের্নহার্ড এখনও ফরাসি ভাষা খুব ভাল শিখে উঠতে পারেনি। ফলে সে নিজেকে সাবলীলভাবে প্রকাশ করতে পারছে না।
শেষে জেরাল্ড বের্নহার্ডকে জানিয়েছিলেন যে কোনও প্রয়োজনে কিম্বা যদি কোনও বিষয়ে কিছু জানার দরকার হয়, তাহলে যেন সে অতি অবশ্যই জেরাল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রয়োজন ছাড়াও সে যখন ইচ্ছে যেতে পারে জেরাল্ডের কাছে। বের্নহার্ড তাঁকে ধন্যবাদ দেয় এবং তাঁর ঠিকানা ও ফোন নাম্বারের জন্য একটা ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেয়। জেরাল্ড আন্তরিকভাবে বলেন যে আবার তাঁর সঙ্গে দেখা করবার জন্য তিনি ইচ্ছুক। শীঘ্রই আবার যেন সে দেখা করে। কিন্তু জেরাল্ড সেদিন ভুল ভেবেছিলেন। বের্নহার্ড জেরাল্ডের সঙ্গে দেখা করেছিল ঠিকই। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেই সাক্ষাৎ ঘটেনি। বেশ অনেকগুলো সপ্তাহ চলে গিয়েছিল এবং সেই সময়টুকুর মাঝখানে বের্নহার্ডের জীবনে অনেককিছু বদলে গিয়েছিল।
(চলবে)
0 comments: