0

ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল

Posted in








সতেরো

বিজয়ের বৌ মুন চা করে কাপ দুটি টেবিলে রাখলো।তারপর বসলো বিজয়ের পাশে। গল্পে ডুব দিয়েছে বিজয়।

মুনের মন ফিরে গেলো, পাঁচ বছর আগে কলেজ জীবনে।তখন ওরা দুজনে দুজনকে চিনত না। একদিন কলেজের কমন রুমে বিজয় বসে আছে। এমন সময় মুন গিয়ে বসলো তার পাশে। একবার মুখ তুলে তাকিয়ে বিজয় আবার নিজের কাজ করতে লাগলো।মুন বললো,আপনি কোন ইয়ার?

------ থার্ড ইয়ার, বাংলা।

------আমারও বাংলা। ফার্ষ্ট ইয়ার।

-----ও তাই। কোথা থেকে আসেন।

------টিকিয়াপাড়া।

------ও আমি পটুয়া পাড়া থেকে।

-----তাহলে তো একই দিকে। খুব ভালো হলো একসঙ্গে যাওয়া আসা করা যাবে।

-----অবশ্যই।

তারপর থেকে ওরা একসাথে ওঠাবসা করতো।ভালোলাগা ক্রমশ ভালোবাসায় পরিণত হলো। তারপর বিয়ের। বিয়ের পরেই একটা ফার্মে চাকরী।এখন ওরা ঘর ভাড়া নিয়ে সুখে আছে।

মুন একটা গান গাইছিলো। বিজয়ের জামাটা আলনা থেকে টেনে গন্ধ শুঁকে দেখলো কাচতে হবে কি না। কাচতে হবে, তাই পকেট হাতড়ে টাকা পয়সা কাগজ বের করে টেবিলে রাখলো।মুন দেখলো,কাগজের সঙ্গে একটা রেলের টিকিট। মুন ভাবলো,অফিস তো সাইকেলে যায় তাহলে দাঁইহাটের টিকিট কেন? দাঁইহাটে আমাদের সাতকুলে কেউ থাকে না। তাহলে ওখানে কেন? কই বিজয় তো বলে নি, সে ওখানে গিয়েছিলো? তাহলে কি বিষয়টা বলার মত নয় বলে এড়িয়ে গেছে। সন্দেহ দানা বাঁধলো মুনের মনে। গান থেমে গেছে। অকারণে থালা, বাটি, গ্লাস ফেলে আওয়াজ করছে। বিজয় বললো,আস্তে কাজ করো।গল্প পড়ছি।

----আমি খেটে মরবো আর তুমি বাবুমশাই বসে গল্পের বই পড়বে?

---- কি হলো, অইভাবে কথা বলছো কেন?

----না বলবে না। আমি একা একা বাড়িতে থাকি আর উনি হিল্লি দিল্লি করে বেড়াচ্ছেন।

-----কি বলছো,বুঝতে পারছি না। পরিষ্কার করে বলো।

-----দাঁইহাট কেন গেছিলে।কার কাছে। নিশ্চয় প্রেমিকার কাছে। আমাকে তবে বিয়ে করলে কেন?

----আরে দাঁইহাটে কেন যাবো?

-----আবার মিথ্যে কথা। আমার কাছে প্রমাণ আছে।

----কি প্রমাণ। কই দেখাও।

মুন দাঁইহাটের টিকিট এনে খাটে ফেলে দিলো।বিজয় হেসে উঠলো জোরে। বললো,আজ বই কিনতে প্ল্যাটফরমে গেছিলাম।প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম দশ টাকা। আর দাঁইহাটের টিকিট পাঁচ টাকা। টিকিট একটা থাকলেই হলো। তাই পাঁচ টাকা বাঁচাতে দাঁইহাটের টিকিট কাটলাম।

সুমন আমার সঙ্গে ছিলো। ওকেই জিজ্ঞাসা করো।

তারপর মোবাইলে সুমনকে ধরে ফোনটা দিতে গেলো বিজয়। মুন ফোনটা কেটে দিয়ে হাসিমুখে বললো,আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। তারপর বিজয়ের গলা পেঁচিয়ে ধরে বললো,তুমি এমনি করেই শুধু আমার হয়ে থেকো চিরকাল।

বিজয় মুনকে আদর করার সময় শুনতে পেলো ভবিষ্যতের পদধ্বনি।

পাশাপাশি দুজনেই শুয়ে আছে বিছানায়। মুনকে বললো,আজ আমি তোমাকে আমার ছোটোবেলার গল্প শোনাই শোনো।

0 comments: