গল্প - সুমন্ত চ্যাটার্জী
Posted in গল্পবংশে পাগলামির রোগ তো ছিলই, কিন্তু তা বলে কলকাতার এত ভালো একটা কোম্পানির চাকরী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে এসে বসবে, কেউ কস্মিনকালেও ভাবেনি! কারণ জানতে চাইলে মন্টু বলতো, "মেশিন হয়ে যাচ্ছিলাম, দাদা"!
সকালে ওকে দেখা যেত পুকুরপাড়ের চায়ের দোকানে, বিকেলে খেলার মাঠে। নতুন ছেলেদের ক্রিকেট খেলা দেখতো বেশ আগ্রহের সাথে, চুপচাপ। একমনে তাকিয়ে থাকতো পশ্চিমের লালাভ সূর্যের দিকে, যেন বিগত কয়েকশো বছরে সূর্যাস্ত দেখেনি একবারও! ভাঙা মসজিদের পাশ দিয়ে শ্মশানের রাস্তাটায় হেঁটে এসে বসতো সন্ধ্যার দুর্গাদালানে। সেখানে বয়স্ক মানুষদের সাথে আড্ডা, কখনো আবার বাঁ-হাতে আধজ্বলন্ত বিড়ি নিয়ে ক্লাবের ক্যারম বোর্ডে ঝড় তুলে দিত পুরোনো দিনগুলোর মত! রাতে খাওয়া শেষে বাঁশের মাচায় বসে মাঝেমধ্যেই হেসে উঠতো আপনমনে, আবার পরক্ষণেই উদাস হয়ে যেত, হয়তো পুরোনো কিছুর কথা ভেবে! মোবাইলে হিন্দী গান চালিয়ে হাতড়ে বেড়াতো পুরোনো বন্ধুদের, প্রেয়সী, নাকি পুরোনো নিজেকেই?
এভাবেই পেরিয়ে গেছিল সাড়ে চারটে মাস। একদিন সকালে দেখা হয়ে গেল মন্টুর সাথে বাসস্ট্যান্ডে। কাঁধে ভারী ব্যাগ। বললো, "বাঁকুড়া যাচ্ছি দাদা, সোনামুখী। নতুন চাকরী। এখানে অমিত, ছোটকা, দাশু, বকুল, আলি, সোমনাথ কাউকেই দেখতে পেলাম না! ওরাও সবাই হয়তো কাজে ব্যস্ত! সবকিছু থেকেও যেন কিছুই নাই!" বুঝলাম, নদীর একই স্রোতকে দ্বিতীয়বার স্পর্শ করা যায় নাহ!
অসাধারণ, সত্যিই সময় বহিয়া যায় , নদীর স্রোতের প্রায়, টাইম মেশিন কি আবিষ্কার হবেনা?
ReplyDelete