Next
Previous
0

বইপোকা - রঞ্জন রায়

Posted in







ফসলের রাজনীতিঃ একটি পাঠ পরিক্রমা

আমরা, শহুরে মধ্যবিত্তরা,  অনেকেই বাজারে আলু পেঁয়াজের দাম বাড়লে হতাশ হই আর টোম্যাটোর দাম বাড়লে চিড়বিড়িয়ে উঠি। কিন্তু এই বাড়তি দামের কতটুকু লাভ চাষিরা পায় সে ব্যাপারে কথা বলতে গেলে মাথা চুলকোতে থাকি।  

 শুধু যখন টেলিভিশনে দিল্লি বা মুম্বাইয়ের পথে ঝাণ্ডা হাতে মানুষের ঢল নামতে দেখি তখন হঠাৎ টের পাই, চাষিরা ভালো নেই। একসময় চাষিদের আত্মহত্যার খবর কাগজে বেরোত। পি সাঁইনাথ এবং আরও কেউ কেউ এসব নিয়ে লিখতেন, সেমিনার করতেন। কখন যেন সুপ্রীম কোর্ট মনমোহন সরকারকে কড়া ভাষায় বলল—ফুড কর্পোরেশন অফ ইণ্ডিয়ার গুদামে চাল পচে যাচ্ছে আর কিছু লোক না খেয়ে রয়েছে? বিলি করে দাও! 

তো সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইন পাশ করল। মানে ভরপেট খেতে পাওয়া এখন সবার অধিকার এবং সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোভিডের দ্বিতীয় বছর থেকে ভারত সরকার দেশের আশি কোটি মানুষকে বিনা মূল্যে রেশন দিচ্ছে। এছাড়া আগের সরকারের সময় থেকেই গরীবি রেখার নীচে থাকা পরিবারের জন্যে নামমাত্র মূল্যে চাল গম দেওয়া হচ্ছে। তাহলে তো দেশের পঞ্চাশ প্রতিশত জনসংখ্যা, যারা কোন না কোন ভাবে চাষের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ভাল থাকার কথা।

কিন্তু দু’বছর আগে দেশের রাজধানীর রাজপথে একবছর ধরে পথে বসে থাকা কৃষকেরা আমাদের সুখনিদ্রা ভঙ্গ করল। হিন্দি বলয়ে যাদের বলা হয় গোটা দেশের ‘অন্নদাতা’ তারাই ভাল নেই! তাহলে আমরা কি বেশিদিন ভাল থাকব?

সমস্যাটা কী? 

নূন্যতম সমর্থন মূল্য (এম এস পি) আইন হলেই কি চাষিরা ভাল দাম পাবে?  ঘরের দোরগোড়ায় আসা ফড়েদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা বন্ধ হবে?

কয়েক দশক আগে অমর্ত্য সেন এবং অশোক রুদ্র, শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি কিছু গাঁ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে “ইকনমিক অ্যাণ্ড পলিটিক্যাল উইকলি” পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে (Non-maximising behaviour of Indian Farmer) দেখিয়েছিলেন কেন ছোট এবং প্রান্তিক চাষিরা অর্থনীতির টেক্সটবইয়ের এন্টারপ্রেনারের মত সর্বোচ্চ লাভে উৎপাদন বিক্রি না করে ঘরের প্রয়োজন এবং ধার মেটাতে খুব কম দামে নতুন ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। 

তাহলে নূন্যতম সমর্থন মূল্য (এম এস পি) নিয়ে এত বড় আন্দোলনে বাংলার চাষিরা কেন শরিক হন নি? বাংলার চাষিদের সমস্যা কি পাঞ্জাব এবং জাঠ এলাকার থেকে আলাদা?ফসল 

আর এম এস পি নির্ধারণে ফসল উৎপাদনের ব্যয়ের হিসেব কীভাবে হবে? স্বামীনাথন কমিটির সি-১ ও সি-২ ফর্মূলাগুলো কী? কেন সরকার শুধু সি-১ ধরে হিসেব করছে আর কৃষকেরা চাইছেন সি-২ ফর্মূলা মেনে নেওয়া হোক? 

ধানের চাষ কমিয়ে কি ক্যাশ ক্রপ, ধরুন ফুল ফল তরিতরকারি ফলানো উচিত?  কৃষি মণ্ডীর সংখ্যা বাড়াতে হবে কী কমাতে? আদানীদের বিশাল বিশাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামঘর বা সাইলো চাষিদের জন্যে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? আধুনিক চুক্তি চাষ কি নীলকরদের দাদন দেয়ার সমতূল্য? 

আর  কৃষি উৎপাদনের খরচ

এতসব প্রশ্নের জট ছাড়ানো বড় মুশকিল। 

তারপর আমরা যারা বঙ্গে ষাট সত্তরে বাম-রাজনীতির আবহাওয়ায় বড় হচ্ছিলাম তাদের চেতবায় ঢুকে গেছল  একটা কথা—কৃষি বিপ্লব। আমাদের বাবা-কাকারা জানতেন ‘লাঙল যার, জমি তার’। তাঁরা বড় হয়েছেন গণনাট্য সংঘের গান শুনেঃ

“চাষির দুঃখের কথা, বলে শোনাব কী তা,

অরণ্যে রোদন বৃথা, সে তো আমি জানি”। 

তারপর যখন বাম আমলে বঙ্গের ভাগচাষিরা পাট্টা পেল, আমরা ভাবলাম চাষির সমস্যার সমাধান প্রায় হয়ে গেল বলে। 

কিন্তু ছত্তিশগড়ের গ্রামেগঞ্জে চাকরি করতে গিয়ে দেখলাম যে ‘মার্কেটিং’ বা উৎপন্ন ফসলকে  বাজারজাত করা একটি এমন সমস্যা যা ছোট বড় সব চাষিকেই প্রভাবিত করে। 

 এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে পুরনো ঢঙে চাষবাস আর লাভজনক নয়। সমস্যাটি বহুমাত্রিক। কৃষি আইনের সংস্কার দরকার। না, ঠিক বর্তমান ভারত সরকারের আগে চাপিয়ে দিয়ে পরে মাফ চেয়ে ফেরত নেওয়া তিন আইন নয়। তাহলে সমাধান কোন পথে?

কৃষি বিপ্লব নাকি সংগঠিত বাজার? 

অর্থাৎ কৃষির সমস্যা কি মূলতঃ জমির মালিকানার সমস্যা? নাকি বিপণনের? 

ব্যাপারটা বোঝার জন্যে আসুন, একটা কুইজ খেলা যাক। এটার নাম বাংলার চাষের ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি?

প্রশ্নমালাঃ

১ ভারতে আলু চাষে বঙ্গের স্থান? 

  ক) প্রথম, খ) দশম, গ)  দ্বিতীয়,

২ ধান চাষে ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহারে বঙ্গের স্থান?

  ক) সবচেয়ে কম, খ) গড় পড়তা, গ) সবচেয়ে বেশি

৩ বাংলায় গরীব এবং প্রান্তিক চাষির অনুপাত?

 ক) ৮০% , খ) ৫০%  গ) ৯০%

৪  আমাদের গোটা দেশের চাষির গড়পড়তা মাসিক আয় প্রায় ১০২০০ টাকা (২০২২ এর হিসেব)। এর মধ্যে পাঞ্জাবের ২৬০০০, হরিয়ানার ২২০০০। তাহলে বাংলার চাষিদের গড় মাসিক আয় কত হতে পারে?

ক) ১২০০০, খ ৬৭০০ গ) ১০০০০ ঘ) ৫২০০।

৫ বাংলার চাষি আজকাল সবচেয়ে বেশি কিসের চাষ করে? 

  ক) শাকসবজি, খ) ধান, গ) ফুল

৬ ধানক্ষেতে চা-পাতার চাষ বিধিসম্মত, না বে-আইনি?

৭ নিজের বাগানে চা-পাতার চাষে লাভ না লোকসান?

৮ বাংলার অধিকাংশ চাষি কোথায় ফসল বিক্রি করেন?

  ক) সরকারি মণ্ডি, খ) খোলা বাজারে, গ) ঘরের দোরগোড়ায় ফড়ের কাছে

৯ মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস আইন হলে বঙ্গের চাষির লাভ না ক্ষতি?

 ক)  লাভ, খ) ক্ষতি, গ) কারও লাভ, কারও ক্ষতি, ঘ) বিশেষ কিছুই না।

১০ প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা চাষিদের জন্যে বাধ্যতামূলক?

১১ ফসলবীমা করলে চাষির লাভ না ক্ষতি?

   ক) লাভ, খ) ক্ষতি, গ) কখনও লাভ, কখনও ক্ষতি।

১২ সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়েছে কি?

১৩ সবুজ বিপ্লবের সময় থেকে কেমিক্যাল সার, হাইব্রীড বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করায় 

ক) জমি ঊর্বর হয়েছে, খ) বন্ধ্যা হয়েছে, গ) জলস্তর নেমে গেছে ঘ) উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।

১৪ ফসল নষ্ট হলে চাষের ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে মাপা হয়?

ক) ক্ষেতে গিয়ে ফসল মেপে, খ) উপগ্রহ দিয়ে ছবি তুলে, গ) পঞ্চায়েতকে প্রশ্ন করে, ঘ) ব্লক স্তরে স্যাম্পল সার্ভে করে গড় উৎপাদন কত, এবং ৩৬% থেকে কম হয়েছে কিনা সেটা দেখে। 

১৫ ধরা যাক, একজনের ক্ষেতে শিলাবৃষ্টির পর ৮০% ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রামের গড় উৎপাদন ৪৫%। অর্থাৎ ক্ষতির পরিমাণ ৫৫%। সেক্ষেত্রে ওই চাষি ফসল বীমার থেকে কত ক্ষতিপূরণ পাবে?

ক) ৫৫% , খ) ৮০%, গ) ৪৫%, ঘ) এক পয়সাও নয়। 

১৬ ফসল ক্ষতি মাপার সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি হলঃ

 ক) ক্ষেতে গিয়ে সার্ভে, খ) বীমা কোম্পানির জলবায়ু টাওয়ার থেকে স্যাম্পল সার্ভে, গ)  উপগ্রহ থেকে প্রত্যেক ক্ষেতের ফটো তুলে সার্ভে?

১৭ কোন রাজ্য ফসল ক্ষতির হিসেব করতে  উপগ্রহ পদ্ধতির প্রয়োগ সর্বপ্রথম শুরু করেছে?

   ক) মহারাষ্ট্র, খ) উত্তর প্রদেশ, গ) বঙ্গ, ঘ) হরিয়ানা। 

১৮ চুক্তি চাষে আলু চাষিদের লাভ হয়েছে, নাকি ক্ষতি?

    ক) লাভ, খ) ক্ষতি, গ) তেমন কিছু না।

১৯ প্রান্তিক চাষি পরিবারের খাওয়ার জন্যে সবজি ও ডাল কোত্থেকে পান?

  ক) নিজের ক্ষেত থেকে, খ) বাজার থেকে কিনে, গ)  বেশির ভাগটা কিনে, কিছুটা ক্ষেত থেকে।

২০  ব্যাংক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধে কে পায়?

   ক) সমস্ত চাষি, খ)  যে জমিতে লাঙল ধরে চাষ করে গ) যে ঠিকেতে অন্যের জমি নিয়ে চাষ করে, ঘ) কাগজপত্তরে যে জমির মালিক। 

২১ সারা ভারতে মাত্র ১৭% কৃষি জমির মালিক মেয়েরা। এর মধ্যে গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানাতে সেই অনুপাত ক্রমশঃ ১০ থেকে ৪৩% এর মধ্যে। 

তাহলে বঙ্গে কতজন জমির মালিক মেয়ে?

ক) ৩০%, খ) ২৯% , গ) ৩%, ঘ) ৪০%?

উত্তরমালা পাবেন লেখার শেষের দিকে। আগে উঁকি না মারলেই ভাল। বরং প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু ভাবুন। তাহলেই সমস্যার বহুমাত্রিকতা ধরা পড়বে। 

কিন্তু এসব নিয়ে আগে কোন গবেষণা, লেখাপত্র বা বই কি প্রকাশিত হয় নি? 

হবে না কেন? কিন্তু বেশির ভাগই সমস্যার অল্প কয়েকটি দিক নিয়ে কথাবার্তা। কেউ জোর দিচ্ছেন শুধু গ্রামে জমির মালিকানার নামে বেনামে কেন্দ্রীকরণ অথবা বাংলায় অপারেশন বর্গার ফলে চাষের ক্ষেতের গড় আয়তন এত ছোট হওয়া যা বাস্তবে আর লাভজনক নয়। অন্যদিকে যারা বাজারকেই সব সমস্যার সমাধান ভাবেন তাঁরা হাহুতাশ করেন কেন বাজারকে সরকারি আইনের বন্ধন থেকে আরও উন্মুক্ত করা হচ্ছে না!

এমন সময় হাতে এল একটি বই—“ফসলের রাজনীতিঃ বাংলার চাষির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ”। লিখেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য ও অশোক সরকার। 

সাবলীল টান টান লেখা। শেষ করে মনে হল চাষ এবং চাষিদের নিয়ে আমার কাছে যে আবছা প্রশ্নগুলো অনেকদিন ধরে নাড়া দিচ্ছিল তার অনেকটাই যেন এবার স্পষ্ট হল। 

স্বাতী আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথিতযশা সাংবাদিক। এর আগেও দার্শনিক প্রভা খৈতানের থিওরিকে অবলম্বন করে উনি বিভিন্ন দলের “পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি”র নৈতিকতা নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণী একটি চটি বই লিখেছিলেন। অশোকের পা রয়েছে শান্তিনিকেতনের জমিতে, পেশায় উনি বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। 

দুজনে মিলে একটা দারুণ কাজ করেছেন। ঘেঁটে ফেলেছেন কৃষি ও কৃষক নিয়ে উপলব্ধ সব তথ্য, রিপোর্ট, নথিপত্র। ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার গাঁয়েগঞ্জে, সরেজমিনে দেখেছেন চাষের অবস্থা, কথা বলেছেন বিভিন্ন জেলার চাষিদের সঙ্গে। 

এসবের ফল এই ২৪০ পাতার হার্ডকভার বইটি, প্রকাশক অনুষ্টুপ প্রকাশনী, দাম ৩৫০ টাকা।

এতে রয়েছে ২৪ পাতার একটি মূল্যবান ভূমিকা, ২৫টি পরিচ্ছেদ, চারটি পরিশিষ্ট এবং একটি তথ্যসূত্রের তালিকা। 

কয়েকটি পরিচ্ছেদের নাম দেখুনঃ

১ আলু, একটি রাজনৈতিক সবজি।

২ পেঁয়াজে লাভের গন্ধ

৪ এম এস পি’র মরীচিকা

৫ চাষির বাজার ধরা

৭ জৈব চাষ, এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি 

৯ কত বীজে কত ধান

১৪ চাষের টিউশন

১৫ ভূমি সংস্কারের ওপারে

১৬ আইনের গেরোয় চা

১৯ চুক্তি চাষ

২০ ফসল বীমাঃ আঁধারে আলো?

২২ ট্রাক্টর নয়া মজুর, কি চাই? 

২৩ কৃষক বধূ কেন নয় কৃষক? 

২৫ আত্মঘাতী চাষির খোঁজে 


বইটি নিয়ে দু’চার কথা

দেখতেই পাচ্ছেন এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের ( ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে। 

কারণ যার নামে জমি আছে কেবল সেই পাবে ইনপুটের জন্য সুলভ ঋণ, এবং সেই ঋণে সরকারি ভর্তুকি।  ফসল মার খেলে বীমার পয়সাও সেই পাবে। যে গরীব চাষি সম্পন্ন কৃষকের জমি ভাগে বা আধাআধি চুক্তিতে নিয়ে গাঁটের পয়সায় অথবা ধার করে বীজ-সার/কীটনাশক কিনছে, জলকাদায় নেমে বাস্তবে চাষ করছে—সে নয়।

অশোক এবং স্বাতী দেখিয়েছেন বাজারের সমস্যাটি আসলে কী। কেন ক্রিকেটের আম্পায়ার বা ফুটবলের রেফারির মত খোলা বাজারেও একজন নিয়ন্ত্রক/সরকার থাকা  দরকার। হাত গুটিয়ে নিলে চলবে না। 

এঁদের পদ্ধতি খানিকটা অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক ব্যানার্জি এবং এস্থার ডাফলোর কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়। একেবারে টেকনিক্যালি  আর সি টি (Randomised Control Trial) না হলেও লেখার মেজাজে মিল পাচ্ছি।

কোন পূর্বানুমানভিত্তিক ছবি এঁকে তার প্রমাণ খোঁজার বদলে এঁরা চাষিদের অভিজ্ঞতার থেকে তথ্য নিয়ে জট খোলার চেষ্টা করেছেন।

 দেখা যাচ্ছে চুক্তি চাষ মানেই খারাপ নয়, ঠিক যেমন বিদেশি আর্থিক সাহায্য মানেই আতংকিত না হয়ে দেখা দরকার তার শর্তগুলো কী এবং সেই সাহায্য কীভাবে খরচ হচ্ছে। তাই কোন ফসলে চুক্তি চাষ কৃষকের অবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে, কোথাও সর্বস্বান্ত করেছে। একই ভাবে এম এস পি আইন হলেও তার সফল প্রয়োগের জন্য সরকারের এবং চাষিদের কী করা দরকার, নইলে এটাও অনেক আইনের মত কেবল কাগজ-কলমে থেকে যাবে। 

হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি এবং সার্জারি—সবগুলো পদ্ধতিই ক্ষেত্রবিশেষে সফল, সর্বত্র  নয়। 

এঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন—জমির মালিকানায় মহিলাদের নাম না থাকা, এমনকি তাঁরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে চাষ করলেও নয়। 

এ’ব্যাপারে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর তুলনায় বঙ্গের রেকর্ড বেশ খারাপ, যদিও এই রাজ্যে একজন মহিলা সর্বোচ্চ ক্ষমতায় রয়েছেন।

এবার উত্তরমালা দেখে নিন।


উত্তরমালাঃ

১ গ

২ খ 

৩ গ 

৪ খ  

৫ ক 

৬ বে-আইনি। 

৭ লাভ

৮ গ

৯ গ

১০ না 

১১ গ

১২ হ্যাঁ। 

১৩ খ, গ এবং ঘ।

১৪ ঘ

১৫ ঘ

১৬ গ

১৭ গ 

১৮ ক

১৯ খ

২০ গ

২১ গ।



সবশেষে লেখকদের বক্তব্য একটু তুলে দিচ্ছিঃ

“ব্রকোলি থেকে ড্রাগন ফ্রুট –কী না হয় বাংলায়? হাল-বলদ ছেড়ে চাষি আজ চালান ট্রাক্টর, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর। বর্ষাতেও পেঁয়াজ ফলছে, গরমেও মিলছে ফুলকপি। তবু বাংলার চাষি কি বাজার ধরতে পা রছেন? বাড়ছে তাঁর রোজগার? 

কৃষিজীবীর জমির অধিকার, সরকারি সহায়তার কার্যকারিতা, কর্পোরেটের সঙ্গে চাষির বোঝাপড়া, খেতমজুরের ভিন রাজ্যে যাত্রা, মেয়েদের ‘কৃষক’ স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই—গত দুই দশকে পশ্চিমবঙ্গের চাষ ও চাষির হাল-হকিকত খতিয়ে দেখল এই বই”।

একেবারেই অতিশয়োক্তি নয়। আগামী দিনে কৃষি অর্থনীতি এবং রাজনীতির ‘ইনফর্মড’ বিতর্কে এই বইটি আকর গ্রন্থের স্বীকৃতি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।