গল্প - মনোজ কর
Posted in গল্পদ্বাদশ পর্ব
ক্লাইভের পলাশি অভিযান
২২শে জুন অর্থাৎ পলাশি যুদ্ধের আগের দিন ১৭৫৭ সকাল ৭টা নাগাদ ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী যাত্রা শুরু করে প্রথমে ভাগীরথী অতিক্রম করলো। অবিরাম বৃষ্টিতে জলে কাদায় পিচ্ছিল সমস্ত মাঠঘাট। জলীয় বাষ্পে ভারি হয়ে ওঠা বাতাসে উড়ন্ত বস্তুর গতি স্তিমিত হয়ে পড়ছে। বড় বড় ঘাসের নিচে জমে থাকা জল আর কাদা অতিক্রম করে পথ হাঁটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝেই ঝমঝম করে বৃষ্টি আসছে। এরই মধ্যে দিয়ে ক্লাইভের বাহিনী প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে একটু বিশ্রামের জন্য দাঁড়াল। বাহিনীর পিছিয়ে পড়া সৈন্যদের মূল বাহিনীতে এসে যোগ দিতে একটু সময়েরও দরকার। তারপর বিকাল ৪টায় যাত্রা শুরু করে এমনিভাবেই হাঁটতে হাঁটতে ,থামতে থামতে যখন ক্লাইভের বাহিনী পলাশির আমবাগানে পৌঁছল তখন মধ্যরাত্রি।
দৃশ্যতই ক্লাইভ সেদিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।তার প্রমাণ পাওয়া যায় সেদিন মিরজাফরের কাছ থেকে খবর আসার আগে এবং পরে মিরজাফরকে লেখা দুটো চিঠিতে। সকালে লেখা ক্লাইভের প্রথম চিঠির বয়ান অনেকটা এইরকম,
‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি যদিও আমি জানি আপনি এখনও আমাদের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন না।আমি আজ নদী অতিক্রম করে পলাশি পৌঁছব। আপনি যদি পলাশিতে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন তবে আমি আরও এগিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করব। তখন নবাব এবং তার সেনাবাহিনীর বুঝতে বাকি থাকবে না যে আমি আপনার পক্ষে যুদ্ধে প্রস্তুত। আপনি চিন্তা করে দেখুন এটা আপনার পক্ষে কতটা সম্মানের এবং গৌরবের। আপনি যদি আসেন তা হলে রাজসিংহাসন আপনার।আর যদি না আসেন তাহলে ঈশ্বর সাক্ষী থাকবেন যে সিরাজের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার জন্য আমার কোনও দোষ নেই। আমি আপনাকে কী করে বোঝাব যে আপনার সাফল্য এবং মঙ্গল আমারও সাফল্য এবং মঙ্গল।‘
ক্লাইভের সেনাবাহিনী যখন নদী অতিক্রম করল তখন মিরজাফরের চিঠি এসে পৌঁছল ক্লাইভের হাতে।
‘রবিবার আমি শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছি। পথের মধ্যে আমনিগজ্ঞে একরাত্রি থেকে আরও কিছু সৈন্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি। নবাব আজ তারকপুর থেকে সসৈন্য যাত্রা শুরু করে মানকারাতে সেতুর পাশে তাঁবু ফেলেছেন। আল্লার কৃপায় আমি কাল যাত্রা শুরু করে মঙ্গলবার পৌঁছে যাব। আমার থাকার ব্যবস্থা আপনার তাঁবুর কাছাকাছি হলে ভাল হয়। আমার মনে হয় যতশীঘ্র সম্ভব মানকারে আক্রমণ করলে ভালো হয়। তাহলে নবাব আক্রমণের পরবর্তী পরিকল্পনা করার সময় পাবে না। তার আগেই আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আপনি এখনও পরিকল্পনার মধ্যে আছেন। এখন পরিকল্পনা নয় , আক্রমণের সময়। আপনি আর একটু এগিয়ে এলেই আমি আপনার সঙ্গে যোগদান করব। যদি আপনি কাশিমবাজারের দিকে দু-তিনশো সৈন্য পাঠিয়ে দেন তাহলে নবাবের সৈন্যরা পিছু হটতে শুরু করবে। সেক্ষেত্রে বাকি যুদ্ধ আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে উঠবে। আপনার সঙ্গে দেখা হলে আরও কিছু গোপন খবর দেব। আমাকে জানান আপনি কখন যুদ্ধ শুরু করছেন।‘
যে গুপ্তচর চিঠি নয়ে এসেছিল তার হাতে মিরজাফরের উদ্দেশ্যে ক্লাইভ সন্ধ্যাবেলা আর একটি চিঠি পাঠাল। এই গুপ্তচর ছিল মিরজাফরের অত্যন্ত বিশ্বস্ত আমির বেগ। এই আমির বেগই সিরাজের কলকাতা আক্রমণের সময় ব্রিটিশ মহিলা এবং শিশুদের পালাবার ব্যবস্থা করে ব্রিটিশদের আস্থা অর্জন করেছিল। এই চিঠিতে যা লেখা ছিল তা মোটামুটি এইরকম,
‘আপনার চিঠি পেয়ে আমি এখনই পলাশির উদ্দেশ্যে যাত্রা করব বলে মনস্থ করেছি।আমার পক্ষে যা করা সম্ভব সব করেছি। আমার আর কিছু করার নেই। আপনি যদি দাউদপুরে আসেন তাহলে আমি পলাশি থেকে দাউদপুরে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করব।যদি না আসেন তাহলে নবাবের সঙ্গে আপস করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।‘
২৩শে জুন ভোরবেলা তিনটে নাগাদ সিরাজের বাহিনী পলাশি পৌঁছল। পৌঁছবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাইভ এবং তার দলবল বুঝতে পারল যে সিরাজ এবং তার বাহিনী ইতিমধ্যেই পলাশি পৌঁছে গেছে। আমবাগানে নিজেদের গুছিয়ে নেবার আগেই ক্লাইভকে অবাক করে ক্রমাগত ভেসে আসতে লাগল ড্রাম, সিঙ্গা, মাদলের আওয়াজ। এই আওয়াজ যে নবাবের সেনাবাহিনীর রাতপ্রহরীদের কাছ থেকে আসছে সে কথা ক্লাইভের বুঝতে বিলম্ব হল না। ক্লাইভ এও বুঝলো যে নবাবের বাহিনী এক মাইলের মধ্যেই আছে। আসলে সিরাজের কাছে যখন খবর এসেছিল যে ব্রিটিশরা কাটোয়া দখল করে নিয়েছে তখন সে বুঝেছিল যে এবার ওরা সব শক্তি নিয়ে মুর্শিদাবাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই মানাকারতে ঘাঁটি করার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দ্রুতগতিতে পলাশি পৌঁছে যাবার পরিকল্পনা করেছিল সিরাজ। ব্রিটিশরা পৌঁছোবার বারো ঘন্টা আগেই সকলের অজান্তে পলাশি পৌঁছে যায় সিরাজ এবং তার বাহিনী। ক্লাইভের কাছে খবর ছিল সিরাজের সৈন্যসংখ্যা প্রায় ছ’ হাজার, ক্লাইভের সৈন্যসংখ্যার চেয়ে অন্তত এক হাজার বেশি। সেইজন্য যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে ক্লাইভ সেইমুহূর্তে খুব একটা আশাবাদী ছিল না।
ক্লাইভের নির্দেশমতো সেনাবাহিনী যথেষ্ঠ সাবধানতার সঙ্গে নিজের নিজের জায়গায় পৌঁছে গেল। ২০০ ইউরোপিয়ান, ৩০০ সেপাই এবং দুটো কামান পলাশি হাউসের সামনে রাখা হল। এই পলাশি হাউস হল পলাশির আমবাগানের উত্তর পশ্চিমে নবাবের শিকারাবাস। ব্রিটিশ সেনারা এই খালি বাড়িটাকে দখল করে নিজেদের আস্তানা বানিয়ে নিল। বাড়িটা চারদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।আমবাগানের চারদিকে সেপাই মোতায়েন করা হল। পলাশি হাউসের অভ্যন্তরে সুরক্ষিত ক্লাইভ তিন বিশ্বাসঘাতকের অপেক্ষায় মুহূর্ত গুনতে থাকলো। এই তিন বিশ্বাসঘাতক হলো যথাক্রমে মিরজাফর, রাইদুর্লভ রাম এবং ইয়ার লতিফ।এই ইয়ার লতিফই নবাব হওয়ার দৌড়ে কিছুদিনের জন্য অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে একজনের সাড়া পাওয়া গেছে এখন অবধি। সর্বাগ্রে একটি বাহিনীকে সিরাজ পাঠিয়েছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার জন্য।অনেকটা এগিয়ে এসে আগে থেকে সবকিছু প্রস্তুত রাখার এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার দায়িত্ব ছিল এই বাহিনীর। এদের নির্দেশ পেলেই বাকি বাহিনী আগে রওনা হবে। এই বাহিনীর দায়িত্বে ছিল রাইদুর্লভ। রাইদুর্লভকে বাইরে থেকে দেখে যতই মনে হোক না কেন যে সে নবাবের আদেশ পালন করছে আসলে সে ব্যস্ত নিজের আখের গুছোতে। ব্রিটিশদের সঙ্গে তার গোপন চুক্তি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। এছাড়াও মিরজাফরের সঙ্গে চুক্তিতে ভবিষ্যতে নিজের সুবিধার জন্য আরও কিছু সর্ত যোগ করিয়েছে সে। শুধুমাত্র তাই নয় রোজই নিজের বাহিনীর কিছু অফিসারকেও টাকার লোভ দেখিয়ে ব্রিটিশদের দিকে নিয়ে আসছে রাইদুর্লভ। এর ফলে কেবলমাত্র গতির দিক থেকে এই বাহিনী শ্লথ হচ্ছে না, শক্তির দিক থেকেও দূর্বল হয়ে পড়ছে। বলা বাহুল্য যে রাইদুর্লভের ভূমিকায় ক্লাইভ বেশ খুশি। কিন্তু আরও দু’জনকে কাজে লাগাতে না পারলে যুদ্ধজয় অসম্ভব সে কথা ক্লাইভ ভালো ভাবেই জানে।
ওদিকে সিরাজের শিবিরে আতঙ্কের ছায়া। সকলে ভীত, সন্ত্রস্ত। কে জানে কখন কোনদিক থেকে আক্রমণ নেমে আসে। রাইদুর্লভের কাছ থেকে কোনও খবর নেই। প্রহরীপরিবৃত হয়ে সিরাজ অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ কিন্তু কোনও খবর আসছে না। সিরাজের চোখে মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট । সূর্যাস্তের সময় প্রহরীরা যখন প্রতিদিনের মত একে একে সবাই প্রার্থনা করতে গেল সিরাজ একাই অপেক্ষা করছিল শিবিরে। কিন্তু কী হলো কে জানে হঠাৎ উৎকণ্ঠিত সিরাজ প্রাণভয়ে চিৎকার করে প্রহরীদের ডাকতে থাকল আর বলতে থাকলো ‘ কোথায় গেলি তোরা? তোরা কি আমার মৃতদেহ দেখতে চাস? ‘ সিরাজ বোধহয় বুঝতে পেরেছিল যে পরাজয় আসন্ন। আর পরাজয় মানেই যে মৃত্যু তা কে না জানে? সিরাজ যখন জানতে পেরেছিল যে নদী পেরিয়ে ব্রিটিশবাহিনী এগিয়ে আসছে তখন উপায়ান্তর না দেখে দিদিমা সারফুন্নিসাকে পাঠিয়েছিল মিরজাফরের কাছে তার হয়ে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।মিরজাফর খুব ভালোভাবেই জানে সিরাজের কথা এবং কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আর মিরজাফর তখন বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব হবার স্বপ্নে মশগুল। এর পরেও সিরাজ যখন চুনাখালি থেকে বেরিয়ে পলাশির দিকে আসছিল এবং খবর পেল যে মিরজাফর তার বাহিনী নিয়ে মাত্র দু’ক্রোশ দূরে ঘাঁটি গেড়েছে তখনও তার চোখ খোলেনি। সিরাজের একান্ত বিশ্বস্ত মির মদন যে কিনা সিরাজের জন্য হাসতে হাসতে প্রাণ দিতে পারে সেও বলেছিল মিরজাফরের উস্কানিতেই ব্রিটিশরা যুদ্ধে নেমেছে এবং মিরজাফরকে খতম করে দিলে ব্রিটিশদের পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। তখন মির মদনকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল সিরাজ। এছাড়াও সিরাজের আর এক বিশ্বাসী দেওয়ান মোহনলাল রাগে অন্ধ হয়ে সিরাজকে বলেছিল,’ আমার মৃত্যু এবং আমার সন্তানদের অনাথ হয়ে যাওয়ার জন্য তুমি দায়বদ্ধ থাকবে। আমি বলেছিলাম মিরজাফর আর রাইদুর্লভকে কাটোয়া থেকে না সরাতে। ওদের প্রতি তোমার অন্ধ বিশ্বাস আমার মৃত্যুর কারণ হবে।‘
আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সিরাজ নিজের মনেই বললো,’ আমি মূর্খ, মোহনলাল। এতসব জেনেও মিরজাফরকে জীবিত রাখা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমি বেশ বুঝতে পারছি যে এর মূল্য আমাকে জীবন দিয়ে দিতে হবে।ইংরেজদের স্তোকবাক্যে আমি ভুলেছিলাম। কে জানতো যে ইংরেজরা মিথ্যাবাদির জাত? ওদের কথা মরিচীকার মতই অসত্য।কথায় ওরা যতটা মিষ্টি ,কাজে ওরা ততটাই নিষ্ঠুর এবং নির্মম। তোমায় কথা দিচ্ছি,মোহনলাল, যদি কাল সকাল অবধি আমি বেঁচে থাকি আর মিরজাফর ও বাকি নিমকহারামদের সঙ্গে আমার দেখা হয় তবে ওদের আর ওদের পরিবারের সকলের চোখ আমি উপড়ে নেব, ধড় মুন্ডু আমি আলাদা করে দেব।‘
সকাল ৭টা নাগাদ দেখা গেল সিরাজের বিশাল বাহিনী উত্তর, উত্তরপূর্ব এবং দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে সারিবদ্ধ ভাবে দু’টি লাইনে এগিয়ে আসছে।ক্লাইভের কাছে যা খবর ছিল তা ভুল প্রমাণ করে প্রায় ৫০০০০ পদাতিক, ১৮০০০ অশ্বারোহী এবং ৫০টি কামান ব্রিটিশ ঘাঁটির দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। ক্লাইভের ঘাঁটির পশ্চিমে ভাগীরথী। তার পাশের আমবাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্রিটিশ সেনারা। দক্ষিণে বিশাল অঞ্চলব্যাপী ভূখণ্ড জুড়ে রয়েছে সিরাজের তিন সুবিশাল বাহিনী যার নেতৃত্বে আছে তিন নিমকহারাম। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে এই তিনজনই সিরাজের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি এবং এই তিনজনের বাহিনীতেই আছে সিরাজের সবচেয়ে বেশি সৈন্য। বাকি সৈন্যরা উত্তরে যাদের নেতৃত্বে মির মদন এবং মোহনলালের এক জামাতা। প্রায় ৭০০০ পদাতিক এবং ৫০০০ অশ্বারোহী বিশিষ্ট এই বাহিনীই এখন সিরাজের ভরসা। কিন্তু এই বাহিনীর মধ্যে কোনও উদ্দীপনা নেই।যুদ্ধের নেশা আর এই দিনমজুর সৈন্যদের রক্ত উত্তপ্ত করেনা। দিশাহীন এই যুদ্ধ তাদের জীবনে বিপদ ছাড়া যে আর কিছু ডেকে আনবে না সে ব্যাপারে বেশিরভাগ সৈন্যই নিশ্চিত। তার ওপর তাদের অনেক টাকা মাইনে বাকি। বাড়িতে অভুক্ত, অর্ধভুক্ত স্ত্রী-পুত্র। বকেয়া টাকা না পেলে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে আসবে না ঠিক করেছিল এরা সবাই। কিন্তু মির মদন এবং মোহনলালের আদেশ অমান্য করতে না পেরে তারা শেষ অবধি অনিচ্ছাসত্ত্বেও আসতে রাজি হয়েছে। এই বাহিনীর সামনে ১১কেজি আর ১৫কেজির অনেকগুলো ছোট কামান আর তার সঙ্গে আড়াই টনের তিনটে বিশাল কামান । এই বড় কামানগুলো মাটি থেকে প্রায় ছ’ফুট উঁচু চাকাওয়ালা প্ল্যাটফর্মের ওপর রাখা। এগুলোকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পূর্ণিয়া থেকে নিয়ে আসা ৪০-৫০টি একধরণের বিশেষ প্রজাতির সাদা ষাঁড়। মাঝখানে আছে একটি প্রশিক্ষিত হাতি। কামানবাহী শকট যদি কোনও কারণে রাস্তায় গর্তে পড়ে তাহলে মাথা দিয়ে ঠেলা মেরে তুলে দিচ্ছে হাতিটি। তার পরে আছে চল্লিশজন ফরাসি সৈনিক। এরা ব্রিটিশ আক্রমণের সময় চন্দননগর থেকে পালিয়ে সিরাজের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল। এই বিশাল বাহিনী ব্রিটিশ সৈন্যদের থেকে দু’শ গজ দূরে এসে থামলো।
ওদিকে ৭৫০জন সৈন্য এবং ২১০০ সিপাইবিশিষ্ট ব্রিটিশবাহিনী চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পলাশি হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে রইল পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায়। এই চার ভাগের নেতৃত্বে আছে মেজর ক্লিপট্রিক, মেজর গ্রান্ট, মেজর কুটে এবং ক্যাপটেন গাপ। এছাড়া ৮টি কামান এবং একটি হাউইতজার।
পলাশি হাউসের ছাদ থেকে চতুর্দিকে লক্ষ্য রাখছে ক্লাইভ স্বয়ং। অন্যদিকে সৈন্যবাহিনীর একদম পিছনে সুরক্ষিত তাঁবুর মধ্যে অসংখ্য প্রহরীপরিবৃত হয়ে অবস্থান করছে সিরাজ। কথিত আছে সেদিন সিরাজকে ঘিরে শুধু প্রহরীরাই ছিল না , ছিল সিরাজের শতাধিক সঙ্গিনী আর উঠেছিল মদের ফোয়ারা। জীবনের অন্তিম সময়েও নারী ও সুরার নেশা সিরাজকে ছেড়ে যেতে পারেনি। ক্লাইভ এবং কুটের কাছে এখনও খবর এসে পৌঁছয়নি যে সিলেক্ট কমিটি অবশেষে মেজর কুটে এবং ক্লাইভের এই অভিযানকে স্বীকৃতি জানিয়েছে।
দাবার ঘুঁটি সাজানো শেষ। এবার যুদ্ধ শুরুর অপেক্ষা।
পরের সংখ্যায় –পলাশির যুদ্ধ