গল্প - সমরেন্দ্র বিশ্বাস
Posted in গল্পআবাসনের ন’তলায় পেন্ট হাউজের মধ্যে সীতাংশুবাবু আটকে ছিল। ঘরে সে একলা মানুষ। এলোমেলো বাসী বিছানায় শুয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া তার অন্য উপায়ও ছিল না। ঘরের মধ্যে একা থেকে থেকে ছটফট করছিল। কাজের মেয়েটা কিছু দিন হলো আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সীতাংশুবাবু বুঝতে পারছিল তার চারপাশের পৃথিবীর রঙটা ধূসর, গোলার্দ্ধটা খুব সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তার গায়ের শক্তি ফুরিয়ে আসছে। সে জানতো- মরে যাওয়ার পর যেমন সঙ্গে কেউ থাকে না, মরে যাবার আগেও তেমনি আজকাল ডাকলে কাউকে পাওয়া যায় না।
অসহ্য উদ্বেগে তাই একসময়ে সীতাংশুবাবু পালঙ্কের নীচটায় ঢুকে পড়েছিল! সেখানে ঘরের টিউব লাইটের আলো পৌঁছায় না। ধূলা ভরা প্রান্তরে গোধূলি নামলে যেমনটা থাকে, তেমনটাই খাটের নীচটা। শুভ্রার একান্ত মুখ দেখার মতো সে এক মুখ দেখা অন্ধকার। সে তো কতদিন আগের কথা। তার মেয়ে সুদেষ্ণা এখন কানাডায় থাকে। মাঝে মধ্যে ফোন করে। সামান্য কথাটথা হয়। অতোদূর থেকে ভেসে আসা কথাগুলো এই পেন্ট হাউজের ন’তলায় পৌঁছতে পৌঁছতে কেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
একসময়ে কি এক অলৌকিক শক্তিতে ভর করে সীতাংশুবাবু সেগুনের অলংকার খচিত খাটটার নীচে ঢুকে পড়েছিল। তখনও সেখানকার মুহূর্তটা ছিল সংকীর্ণ, ধূসর ও ম্লান আলোয় ভরা! অসহ্য যন্ত্রণা শরীরে। অবশ্য সেই মুহূর্তটা এখন অতীত কাল!
তারপর দিন কুড়ি কেটে গেছে। এইমাত্র পালঙ্কের তলা থেকে সন্তর্পনে বেরিয়ে এলো সে। সীতাংশুবাবু দেখলো তার ঘরের আসবাব পত্রের ফাঁকে ফাঁকে সুন্দর সুন্দর সব গাছপালা দাঁড়িয়ে আছে। গভীর রাত। ট্যাঁরা ট্যারা টি টি বলে কোন একটা পাখি অন্ধকার আকাশে উড়াল দিয়ে চলে যাচ্ছে। বন্ধ জানালার ক্ষয়ে যাওয়া রাবারের সীলের সামান্য ফাঁক দিয়ে সে আওয়াজ খুব সন্তর্পণে এই নির্জন ঘরে ঢুকে পড়ছে। অনেকদিন বাদে আবার ল্যান্ডলাইনে ফোনের ক্রীং ক্রীং আওয়াজ, কানাডা থেকে সুদেষ্ণার কল। না, এখন কিছুটা অভিমানেই সে ফোনটা রিসিভ করলো না। তার মোবাইল ফোনটা ডিসচার্জ হয়ে গেছে।
হাউজিংএর ন’তালা বিল্ডিংএর একটা বন্ধ ও নিঃসঙ্গ পেন্ট হাউজের ভেতরে সীতাংশুবাবু এখন ঘরের মেঝেতে স্বচ্ছন্দে পায়চারি করছে। হাঁটছে আর হাঁটছে। ডাইনিংএর টেবিল চেয়ারে ধূলো পড়ে আছে। শুভ্রা কতো পছন্দ করে এই দামী টেবিলটা আনিয়েছিল। দেয়ালে তার একটা আবক্ষ ফটো, সিঁথিতে জ্বলজ্বল করছে লাল টকটকে সিঁদুর। মা মারা যাবার পরেই সুদেষ্ণা দামী মেটাল ফ্রেমে তার মায়ের এই ছবিটাকে বাঁধিয়ে এনেছিল। তার বিশালাকায় ফ্রীজে নানা কিসিমের খাবার সব সময়েই প্রচুর পরিমানে স্টক থাকে। অন্য সময় হলে ফ্রীজারটা খুলে নিয়ে সে কিছু না কিছু খেয়ে নিতো। কিন্তু অনেকদিন না খেয়ে খেয়ে আজ আর তার কোন খিদেতেষ্টাই নেই।
সীতাংশুবাবুর হঠাৎ মনে পড়লো, তার এখনো অন্ত্যেষ্টি হয় নি। অথচ এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। পরমাত্মার শান্তির জন্যে প্রত্যেক মানুষের দাহ-অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া খুব জরুরী। অথচ কিছুদিন হলো সে আর ইহজগতে নেই। এই ফ্লাটটা তো তার গত জন্মের।
চিরকালই খুব উদ্যোগী মানুষ সে। নিজের অন্ত্যেষ্টির কথা সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সে নিজে নিজেই তৈরী হয়ে নিল। মনে পড়লো, আলমারীতে রাখা আছে ৫৮ বছরের পুরোণো সীলকরা ব্রান্ডেড হুইস্কিটার কথা। এটা তার বাবা অমলেন্দুশেখর সরকারের রেখে যাওয়া গিফট, ব্রান্ডেড মালটা বিলেত থেকে আনানো। অ্যালকোহল যতো পুরোণো হয় সেটা ততো দামী ও স্বাদিষ্ট হয়। ওটাকে আলমারীতে আরো অন্যান্য শো পিসের সাথে সাজিয়ে রাখা ছিল। কেউ এলে আভিজাত্যের নিদর্শন হিসেবে সেটা কখনো কখনো দেখানো হতো। সীতাংশুবাবু ভেবেছিল, সবাই মিলে এটা খুলে একদিন সেলিব্রেট করা যাবে। কিন্তু সেই সেলিব্রেশনটা এ জীবনে আর কই করা গ্যালো?
ঘর থেকে নিস্ক্রান্ত হবার আগে সীতাংশুবাবু ওই ব্রান্ডেড বোতলটাকেও ড্রয়িংরুমের ট্রান্সপারেণ্ট আলমারীর থেকে বের করে নিলো। কিচেন থেকে একটা ম্যাচবক্স। বেরোনোর সময়ে ফ্লাটের দরজাটাকে আলতো চাপ দিতে হয়। গোদরেজের দামী ইন্টারলক, ভেতর থেকে সেটিং করা, অটোমেটিক লকটা বন্ধ হয়ে গেলো। তার কাছে কোনো চাবি নেই। সীতাংশুবাবু জানে, এই যে বেরিয়ে পড়ছে, এই ফ্লাটে কোনোদিনও তার আর ফিরে আসা হবে না!
লা মার্টিনিয়া আবাসনে তাদের বিল্ডিং-এর গ্যারেজে একটা ভাঙ্গা গাড়ি থাকে। অনেক বছর আগেই গাড়িটার মৃত্যু ঘোষিত হয়ে গেছে। এই গভীর রাত্তিরে অন্য কেউ সাথ না দিলেও, সীতাংশুবাবু জানতো, এই লড়ঝড়ে ল্যাংড়া গাড়িটা তার সাথ দেবে। আবাসনের গার্ডটা ঘুমাচ্ছিল। সমস্ত রাস্তাঘাট শুনশান। ল্যাংড়া গাড়িটা নিয়েই সে নিজে নিজেই শেষ রাতে পৌছে গেলো শ্মশানঘাটে।
আজকাল সাধারনত মৃত্যুর লম্বা লম্বা লাইন। এখন এই শেষ রাত্তিরে সেটা অনেকটাই আলগা। অল্প কয়েকটা শবদেহ অপেক্ষা করছে। কিছু চিতা দাউ দাউ করে জ্বলছে। কিছু চিতার আগুন নিভু নিভু। ভীড় এড়াতে কাঠ ফেলে কয়েকটা চিতা আগাম সাজিয়েই রাখা আছে। শেষবার সে শ্মশানে এসেছিল তার স্ত্রী শুভ্রাকে নিয়ে, সাথে স্বর্গরথ লেখা ফুলমালা দিয়ে সাজানো গাড়িটা ছিল। এবার তার সাথে কেউ নেই। সে একেলা। তবুও অভিজ্ঞ একজন ভালো মানুষের মতো সে দেখে নিলো এককোনে নিরিবিলি সাজানো একটা চিতা। একটা নতুন আসা পার্টির সাথে শ্মশাণ কর্মীরা তখন দরাদরি করছে। ডেথ সার্টিফিকেট ঠিক ঠাক আছে কি নেই? সীতাংশুবাবু ওদের পাশ কাটিয়ে আধো অন্ধকারে এগিয়ে গেলো। তার অফিসের অধস্তন কর্মীরা যেভাবে খুব বিনয়ের সাথে তার মতো বড়োবাবুদের পাশ কাটিয়ে ডিউটি থেকে কাট মারতো! তার নিজের মাথাটাও আজ তেমন নীচু করা। কেননা সে জানতো, তাকে কাঁধে বয়ে নিয়ে আসার জন্যে কেউ নেই! তার যাত্রাপথে খই বা ফুল ছেটানোর কথা তো ভাবাই যায় না। পুলিশের বা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে তাকে যে এখানে নিয়ে আসবে, এই শহরে তার জন্যে তেমন কেউ অপেক্ষা করে নেই। কথায় বলে না নিজের হাত জগন্নাথ! সীতাংশুবাবু অত্যন্ত বিচক্ষণ, তাই তো ভাঙ্গা গাড়িটা ফুটপাথে ফেলে রেখে, নিজে নিজেই হেঁটে হেঁটে এই চিতাকাঠ পর্যন্ত চলে এসেছে। সে বুঝে গেছিল, এটাই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অন্তিম ও সুবর্ণ সুযোগ!
স্বর্গে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগটা সীতাংশুবাবু হাতছাড়া করলো না! নিজে নিজেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো চিতায় সাজানো কাঠের উপরে। সীল করা বোতলটা খুলতে বেশী সময় লাগলো না। নিপুন হাতে নিজের শরীরে ঢেলে দিল ৫৮ বছরের পুরোনো জমিয়ে রাখা তার অভিজাত ব্রান্ডেড অ্যালকোহলটা। যেন এতদিনকার পড়ে থাকা হুইস্কির সেলিব্রেশনের সময়টা এক্ষুনিই, এই মুহূর্তে। পুরো বোতলটাই নিজের চিৎ হয়ে থাকা শরীর, বুক আর পেটের উপরেই নিমেষে খালি হয়ে গেলো। দেশলাই তো সঙ্গে করেই এনেছিল। ফস্ করে আগুন জ্বলে উঠলো। কেউ কেউ দেখলো একটা সাজানো চিতা ধীরে ধীরে জ্বলে উঠছে। আগুনটা বাড়ছে আর বাড়ছে। এই সব শ্মশাণে নদীর কিনারে দিনে ২০০/৩০০ মড়া একদিনে জ্বলছে। কে কার হিসেব রাখে। শেষ রাতে শ্মশাণ কর্মীরা ক্লান্ত। ওরা বিষয়টা কেউই খেয়ালই করলো না। আর এটাও জানা কথা, কাঠ কিছু কম পড়ে গেলে ডোমেরা আরো কিছু শুকনো কাঠ এনে তার বুকের উপরে চাপিয়ে দেবে। ধীরে ধীরে সীতাংশুবাবু জ্বলতে লাগলো, জ্বলতে লাগলো!
বহু দিন আগে তুষার রায় নামে এক ছোকরার একটা কবিতা কেউ তাদের অফিসের আড্ডায় শুনিয়ে ছিল। ভালো লেগেছিলো সেই বেহেমিয়ান লাইনগুলো। মনে পড়ে গেলো কথাগুলো –
‘…… বিদায় বন্ধুগণ / গনগনে আঁচের মধ্যে শুয়ে এই / শিখার রুমাল নাড়ছি। / …… বন্ধুগণ, গনগনে আঁচের মধ্যে / শুয়ে এই শিখার রুমাল নাড়া / নিভে গেলে, ছাই ঘেটে দেখে নেবেন / পাপ ছিল কিনা। …… ’
এই ভাবে সীতাংশু সরকার ধীরে ধীরে জ্বলতে লাগলো। জ্বলতে লাগলো! এভাবেই সে ধীরে ধীরে নিজে নিজেই সদ্গতির দিকে পা বাড়ালো!
খুব ভোরে মিউনিসিপ্যালেটির কর্মীরা শ্মশানটার এদিক সেদিক ডি-স্যানিটাইজ করার নামে জলকামানের ফোয়ারায় তার নিভন্ত চিতাটার অবশিষ্ট হাড়-গোড় ধুইয়ে দিল। সূর্য ওঠার আগে ভাগেই শ্মশানের নালী আর নদী কিনারের ঢালু জমিন বেয়ে বেয়ে সীতাংশুবাবুর চিতা ভষ্ম পবিত্র নদীটার তীরভূমি আর তার জলস্রোতে হারিয়ে গেলো।
একটা প্রশ্ন ‘সীতাংশুবাবু লোকটা কোথায় গেছে?’ হাল্কা হাল্কা আবছা আবছা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। দীর্ঘ দিন সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে কানাঘুষো করছিল। এটাও স্বাভাবিক, কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভাবছিল, সীতাংশুবাবু আক্রান্ত ও অসুস্থ! অথচ ওরা কেউ সাহস করে ন’তালার কলিং বেলে আঙ্গুল পর্যন্ত ছোঁয়ায় নি! ওই ছাদে একটাই তো মাত্র ফ্লাট – আকাশ ছোঁয়া দামী একটাই পেণ্ট হাউজ! মহামারী আর ইনফেকশন বলে কথা! একজন তো বলেই দিলো, সীতাংশুবাবুর মেয়ে কানাডা থেকে উড়ে এসে প্রাইভেট প্লেনে মানুষটাকে নিজের দেশে নিয়ে গেছে! সেই লোকটা এটাও জানতো না, এখানে সব আন্তর্জাতিক প্লেন চলাচলই এ সময়ে বন্ধ!
আসলে অনেক আগেই সীতাংশুবাবু এটা বুঝতে পেরেছিল, নয় তালার পেণ্ট হাউজে থাকা তার খোঁজ এমনিই নিখোঁজ হয়ে থাকবে!
শ্মশানে নিজের স্বতঃস্ফুর্ত স্বেচ্ছা-অন্তেষ্টির পরে আরো এক মাস কেটে গেছে। সীতাংশুবাবু দেখতে পাচ্ছে, আবাসনের কিছু লোকের পরামর্শ মতো জাগরণী সংঘের ছেলেরা পিপিই কিট পরে ফ্লাট নম্বর -৯৯১ এর সামনে এসেছে। পুলিশের কাছে ফোন কল গেছিলো, ওদের একটা গাড়ি সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
ক্যামেরা আর নাকে মাস্ক বেঁধে সাংবাদিকেরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল এই কমপ্লেক্সে আসবার। লা মার্টিনিয়া আবাসনের একজন সম্ভ্রান্ত মানুষের বহুদিন ধরে খোঁজ নেই। পুলিশের গাড়ি আর কিছু মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ৯নম্বর বিল্ডিং-এর নীচে ধীরে ধীরে ভীড় জমছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু লোক তো সীতাংশুবাবুকে চেনেই না। দু একজন যারা চেনে তারা কমপ্লেন করলো – ভীষণ আনসোশাল মানুষ, কারোর সাথে মিশতো না। জনহিতকর কোন কাজের জন্যে চাঁদা চাইলে লোকটা নাকি উদাস হয়ে যেতো।
সংঘের ভলান্টিয়াররা খুব উদ্যোগী। ওরা ৯৯১ নাম্বার লেখা ফ্লাটের গোদরেজ ইন্টারলকটা খোলবার চেষ্টা করছে। ঘরের দরজায় ধাক্কা মারছে। শেষ পর্যন্ত ওরা অনেক কসরৎ করে দরজাটা ভেঙ্গে ফেললো!
সংঘের তিনটে ভলান্টিয়ার ছেলে ফ্লাটটার ভেতরে ঢুকলো। নাকে একটা দুর্গন্ধ! ঘরেও ভেতর দুচারটে লাইট দিনের বেলাতেও জ্বলছিল। ওরা সাবধানে চার দিকটা দেখতে লাগলো! ব্যাটারী লাগানো রয়্যাল সাইজের বিদেশী ঘড়িটা থেকে তখনো টিক টিক আওয়াজ আসছে। কিছুক্ষণ বাথরুম, ব্যলকনি, স্টোররুম এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি চললো। চার দিকে কোনো মানুষজন নেই। ওরা কি করে জানবে, সীতাংশুবাবু একটা রুমে তার পালঙ্কের নীচে লুকিয়ে আছে!
হঠাৎ করে তখনই একজন টর্চলাইটের আলোয় সীতাংশুবাবুকে আবিষ্কার করে ফেললো! পালঙ্কের নীচে পড়ে আছে একটা মরে যাওয়া শরীরের দেহাবশেষ। খাটের নীচেই নিঃসঙ্গ প্রান্তরের গোধূলি নামা আধো অন্ধকার। সেখানেই একজন সম্ভ্রান্ত ও সৌখীন মানুষের হাড়গোড় আর গলে যাওয়া দেহাবশেষটুকু পড়ে ছিল। ওরা নজর করে দেখলো, একটা মানুষের মরে যাওয়া শুকনো শরীরটার চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে নরকের কীট! তাতে একটাই তথ্য বোঝা গেল – ‘সীতাংশুবাবু মারা গেছে।’