Next
Previous
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



"If all the women who have been sexually harassed or assaulted wrote 'Me too.' as a status, we might give people a sense of the magnitude of the problem.” - Alyssa Milano

এই একটা টুইটে কত কাণ্ড! গেল গেল রব। একে হুজুগ বলে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত বলে চালাবার চেষ্টা। আর, নারীবাদ বলে গাল পাড়া! আচ্ছা, নারীবাদ বস্তুটা ঠিক কী বলুন তো? নারীর পুরুষের ওপর খবরদারি চালানোর অধিকার? নাকি মেয়েদের যখন তখন, যার তার সঙ্গে জোট বাঁধার অধিকার? এরকমই কিছু মনে না করলে শব্দটা একটা গালির মতো ব্যবহার করার কারণ কী? নারীবাদ তো একটা অবস্থানের নাম। একটা বিশেষ চোখে বিশ্ব দেখার নাম। উদাহরণ? নারীবাদ চায়, কোনও মেয়ে যদি মাধ্যমিকে ফিফথ্ হয়, তবে তাকে তাই বলা হোক। মেয়েদের মধ্যে প্রথম নয়। নারীবাদ চায়, ষাটের দশকের কবিদের মধ্যে শক্তি, সুনীল, প্রণবেন্দু, নবনীতা, কবিতা - এই নামগুলো একসঙ্গে উচ্চারণ করা হোক। কোনও সাহিত্যের ইতিহাসেই যেন মহিলাকবি বলে একটা আলাদা অধ্যায় না থাকে। খুব কঠিন কি কাজটা? খুব কঠিন সহনাগরিক ভাবা মহিলাদের? বোধহয় কঠিনই। কেননা, তা না হলে আজ এত জনকে তাদের শরীরে অবাঞ্ছিত নোংরা হাতের ছোঁয়ার কথা বলে সরব হতে হতো না। সবচেয়ে তাজ্জব ব্যাপার হলো, যে বাঙালি সমাজের পরতে পরতে মাতৃকাসাধনের এত চিহ্ন, সেখানেই এত নারীনিগ্রহের ঘটনা ঘটা। এই তো, এখনও, মণ্ডপে শোভা পাচ্ছেন এক নগ্নিকা দেবী। তাঁর নগ্নতাকে লালসার চোখ দিয়েই দেখেন কি পুরুষ ভক্তরা? বলা কঠিন জানেন! 'যৌনতা ও বাঙালি' বইতে ঋতবাকের প্রধান উপদেষ্টা নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ীর 'শৃঙ্গার' বলে একটা প্রবন্ধ আছে। তাতে তিনি এক পৌরাণিক শ্লোক ঊদ্ধৃত করেছেন : 

মত্রা সস্রা দুহিত্রা বা ন বিবিক্তাসনো ভবেৎ।
বলবান্ ইন্দ্রিয়গ্রামঃ বিদ্বাংসপি কর্যতি।।

এর অর্থ, মা, বোন অথবা মেয়ের সঙ্গেও নির্জনে কখনও বেশিক্ষণ থেকো না, কেননা প্রবল ইন্দ্রিয়বৃত্তি বুদ্ধিমান লোককেও মথিত করে। 

এই যদি পুরাণকারের ভারতীয় পুরুষ চরিত্রের মূল্যায়ন হয়, তবে আর কথা না বাড়ানোই ভালো ! 

কিন্তু, কোনওভাবেই যে এই মূল্যায়ন শেষ সত্য নয় তার প্রমাণ আমাদের ঘরে ঘরে। আমাদের বাবা, দাদা, ভাই, ছেলে, বন্ধু, সহকর্মীদের মধ্যে। সমস্যাটা অন্যত্র। বুঝতে হবে, একটা মেয়ের অধিকার, একটা ছেলের অধিকারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সে অধিকারটা তার শরীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কী নারী, কী পুরুষ, হেনস্থা মানে হেনস্থাই। নারীবাদের নয়। প্রশ্নটা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের। মেয়েরা মানুষ। মেয়েমানুষ নয়। 

ঋতবাকের যাত্রা আলোর পথে। সব ঋতব্রতীও আলোকপথযাত্রী। তাই, এইসব সামাজিক আঁধারের ওপর মননের আলো ফেলে, সে আঁধার  একদিন দূর করবেনই তাঁরা, এটা নিশ্চিত। কাল ছিলো আলোর উৎসব। আজ ভাইফোঁটা। সকলে আলোকস্নাত হোন। যমদুয়োরে কাঁটা পড়ুক সব্বার... 

শুভকামনা নিরন্তর।