Next
Previous
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



এবং যেন আবার জড়ো এক পুরনো কলধ্বনি
শুনতে যে পাই, কইছে কথা কিংবা কথার ফিসফিসানি
সন্দেহ, কি, জিহ্বা বাকি - তার বাদে সব উড়ন্ত ছাই
শ্রুতির মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, শব্দ তোমার সম্প্রীতি চাই। 

(ওমর খৈয়ামের রুবাই, অনুবাদ : শক্তি চট্টোপাধ্যায়।) 


ঋতবাকের চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নতুন। আবার, পুরনোও। ৩০শে অগাস্ট, ২০১৪তে যখন প্রথম আত্মপ্রকাশ করে আমাদের পত্রিকা, নিজেদের কাছে নিজেরা ক'টা কথা দিয়েছিলাম। যে দিকেই চলি না কেন, সত্যের পথ থেকে সরব না, নীতির ক্ষেত্রে আপোস করব না - এটা স্থির করে নিয়েছিলাম। যদি দরকার হয়, বদলে নেব নিজেদের। কিন্তু শব্দ, শ্রুতি আর বাকের সঙ্গে কোনও বেইমানি করব না কখনও : এই কথা বলে পথ চলা শুরু করেছিলাম। দেখলাম, বদলাতে হলো। ঋতবাক যা ছিল, যা হবে ভেবেছিলাম আর আজ যা হয়েছে তার মধ্যে ফারাক আছে বেশ। তবে, আমাদের পথ একই আছে কিন্তু। ছেড়ে দিলাম পথটা, বদলে গেল মতটা : এই মন্ত্রে বিশ্বাস করিনি আর করবও না। একদিকে বলার ইচ্ছে আর অন্যদিকে বোঝবার। এই দুইয়ে মিলে লেখা-পড়া চলে। লেখক লেখেন। পাঠক পড়েন। মাধ্যম হয় শব্দ। আমরা বরাবর চেয়েছি, শব্দের ধোঁয়ায় যেন বুঝ ঢাকা না পড়ে যায়। ঋতবাকের আঙিনায় সহজভাবে গভীর কথার আদান প্রদান চলে যেন। সরস কথা, আঁতের কথা, প্রাণের কথা। কথায় ভেজে চিঁড়ে, মুড়ি, খই, বাতাসা। সেইটুকুনই দেখতে আসা। বাণীর ধারা নেমে প্রাণের গভীর থেকে যেন উঠে আসেন বোধির জননী বাক্, যেন বিশ্বসৃষ্টির অলঙ্ঘ্য নিয়ম ঋতকে অক্ষর-অবয়বে প্রকাশের চেষ্টা নিয়ত করে চলেন আমাদের সমধর্মী ঋতব্রতীরা - এটাই চেয়ে আসছি শুরুর ক্ষণটি থেকে আজ পর্যন্ত। এই চাওয়াকে আড় চোখে দেখেছেন কেউ কেউ। খোলাবাজারে পণ্য করতে চেয়েছেন ঋতবাকের অস্তিত্ব। ঘাম আর রক্ত ঝরিয়ে চড়া নিয়ন আলোর প্রলোভনের সঙ্গে যুঝতে হয়েছে। আমরা জানি, টিঁকতে গেলে বাজারের সঙ্গে দুশমনি করা চলে না। তবে, বাজারকে শেষ কথা বলতে দিতেও আমরা নারাজ। আমরা ব্র্যন্ড ঋতবাক গড়তে চাই। বুদ্ধিদীপ্ত প্রবন্ধ, সরস কাহিনী, হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চিত্ত ঝলমলিয়ে দেওয়া কবিতা, হাতে গড়া বইয়ের ফ্যাকসিমিলি - এসব নিয়ে এখনও অবধি প্রায় ত্রিশটি গ্রন্থ নির্মাণ করে উঠতে পেরেছি : প্রতিটি তার স্বকীয়তায় ভাস্বর। এই কাজটা করেই যাব। কথা দিচ্ছি, ঋতবাকের বই বলতে বাজার বুঝবে আলাদা কিছু, নতুন রকম কিছু। চারটে বই আগামী সাতাশে অগাস্ট, রবিবার, বিকেল পাঁচটায় শোভাবাজার রাজবাড়ির গোপীনাথ জীউ-এর নাটমন্দিরে প্রকাশ পেতে চলেছে। এই সংখ্যার 'বইয়ের খবর'-এ তাদের সম্বন্ধে পড়লেই বুঝবেন, আমরা চোখ ঝলসাতে চাইনে। মন আলো করতে চাই। সফরের গোড়ার দিকে যাঁরা হামরাহী ছিলেন, তাঁরা অন্য পথ ধরেছেন একসময়। অগণন ধারালো শর হেনেছে অন্ধকার। হানছে এখনও। তবু চলব। সঙ্গে আপনারা আছেন। কোথায় চলেছি, সেটা আসল কথা নয়। চলাটাই আসল কথা। 

এই সংখ্যায় শুরু হলো নতুন বিভাগ, কৈশোরনামা। কিশোর-কিশোরীদের জন্য লেখা। তাদের নিয়ে লেখা। ঋতবাক রুচি গড়তে চায়। পাঠকের হাতে তুলে দিতে চায় বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতির রত্নভাণ্ডারের চাবি। এই গড়ার জন্যেই কাঁচা মনে পাকা ছাপ ফেলার দায়িত্বটা নিতেই হলো। 

আর কী? ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন। 

শুভ কামনা নিরন্তর।