Next
Previous
0

ধারাবাহিক- সুদীপ ঘোষাল

Posted in





পনেরো

তারপর বিজয় বলে,এরপরের দৃশ্য প্রতিমা বিসর্জন । কাছেই একটা পুকুর । রাত হলে সিদ্ধিলাভে(দামীটা না) আনন্দিত হয়ে নাচ তে নাচতে অবশেষে শেষের বাজনা বেজে উঠতো । মা তুই থাকবি কতক্ষণ, তুই যাবি বিসর্জন ।তার সাথে আমাদের মনটাও বিসর্জনের বাজনা শুনতো পড়ার ঘরে বেশ কিছুদিন ধরে...কথা শুনতে শুনতে জ্যোৎস্না আমাকে জড়িয়ে ধরেছে । আমার প্রবল কামনাকে কামড়ে ধরে নীলকন্ঠ হয়ে আছি । জ্যোৎস্না বললো, জানো বিদেশে এটা কোনো ব্যাপার নয় । এসো আমরা এক হই পরম সুখে । আমি হাত ছাড়িয়ে বাইরে এলাম ।জ্যোৎস্না কি ভুলে গেছে মনে ভাসা সবুজ সর নিয়ে ,দুঃখ কে জয় করার মানসিকতায় এক ভারতবর্ষীয় যাপনে আমি ডুব দিয়েছি জীবন সমুদ্রে....। তারপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। আমি একা থাকতেই ভালোবাসি। মাছ ছিপ দিয়ে ধরতে ভালোবাসি।

বিজয় বলে,এবার শোন ভূতের গল্প।

রমেন বলে,ছেলেমানুষী শুধু তোর। আবার ভূত দেখার বাল্যসখও আছে। অনেকে হয়তো আড়ালে হাসবেন।


(রবিবাবুর শহরে আগমন ও তার বাকি জীবনের কথা )।

রবিবাবু গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে চলে এলেন সাংসারিক বিভিন্ন চাপে।তখন তার বড় ছেলে সেভেনে পড়ে আর ছোটছেলে পড়ে ক্লাস ফোরে।শহরে এসে বাসাবাড়ি ভাড়া করলেন।স্ত্রী আলো খুব খুশি।আলাদা সংসার তিনি মন দিয়ে সাজালেন দশবছর পরে রবিবাবু শহরে জায়গা কিনে বাড়ি করলেন।ছেলেরা তখন লাভপুর কলেজে বড়ছেলে হোষ্টেলে থাকে আর ছোটছেলে কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।

তারপর ছেলেরা দুজনেই চাকরি পেল। রবিবাবু রিটায়ার্ড করলেন স্কুল থেকে।আলো দেবি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। রবিবাবু আলোকে দেখেন আর চুপ করে থাকেন।রবিবাবু চুপ মেরে গেলেন।ডাক্তার বলছে, মনরোগ। বাড়ির বড় ছেলে বাবাকে গল্পের বই কিনে দেন নিয়মিত।ছোটোছেলে গানের ক্যাসেট এনে দিলো। কিন্তু রবিবাবুর কোনো পরিবর্তন নেই। গল্পের বই পড়েন না। গান শোনেন না। অথচ এই রবিবাবু চিত্তরঞ্জনে একটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। পঁয়ত্রিশ বছর চাকরি জীবন তার। এই সময়ে তিনি স্কুলে যেতেন সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে। নিজের হাতে রান্না করে খেতে ভালোবাসতেন। ভোটের কাজে তিনি ছিলেন বিজ্ঞ। সকলে তার কাছেই পরামর্শ নিতে আসতেন। মহুকুমার মধ্যে তার মত গণিতজ্ঞ ছিলো না বললেই চলে। লোকে তাকে শ্রদ্ধা করতো। আর বিস্মিত হতো তার কর্মজীবনের সাফল্য দেখে।

একদিন বাড়িতে তার বড় ছেলে বললো, বাবা আজ আমরা বিরিয়ানী খাবো। তুমি রান্না করো। রবিবাবু বাজার থেকে সমস্ত কিছু জোগাড় করে এনে রান্না করে পরিবারের সকলকে বিরিয়ানী খাওয়ালেন।তিনি ছেলেদেরকে বলতেন, রান্না করা শিখে রাখবি। আগামী দিনে রান্নার লোক পাবি না। এখন হোম ডেলিভারির যুগ। ফলে পেটের সমস্যা বাড়বে। রান্না করা শিখতে পারলে খেতে পাবি নিজের মত। তা না হলে যা জুটবে তাই খেতে হবে। ছেলেরা বাবার কথামত রান্না করা শিখেছে।রবিবাবু সফলভাবে চাকরি জীবন সমাপ্ত করে যেদিন বাড়িতে এলেন বিরাট টাটা সুমো গাড়িতে চেপে,সেদিন তার উপহার রাখার জায়গা ছিলো না। বেছে বেছে তিনি একটা বিভূতিভূষণের বই রেখে দিয়েছিলেন যত্ন করে।

তার কিছুদিনের মধ্যে একটা স্কুলের পার্ট টাইম টিচারের পদে যোগদানের জন্য অনুরোধ এলো। তারা বললেন,আপনি এই এলাকার অঙ্কের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আপনি আসুন। অনেকে উপকৃত হবে। সাম্মানিক বেশ ভালো।

রবিবাবু বললেন, এত দিন তো এইসব করেই কাটালাম। এখন বড়ছেলে শিক্ষক হয়েছে। আর আমি শিক্ষকতা করবো না। ছেলেদের বারণ আছে।

এখন রবিবাবুর বড় ছেলে রতন ভাবেন , বাবা চাকরিটা করলে বোধহয় ভালো থাকতেন। চলাফেরা হতো। শরীর ভালো থাকতো।

কিন্তু তা তো হোলো না। বাবা এখন চুপচাপ থাকেন। কারও সঙ্গে কথাও বলেন না। মন গুমরে আজ তার শরীরটা পাটকাঠির মত হয়েছে।

তারপর বিপদ তো একা আসে না। সুখের সংসারে অভিশাপ হয়ে প্রবেশ করলো কর্কট রোগ। রতনের মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়লো। রবিবাবু সেদিন স্ত্রীকে বলে ফেললে, আর নয়। বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।

স্ত্রী আলো সব জেনে শুনেও রবিবাবুকে ধমক দিলেন, ছেলেরা থাকলো। তোমাকে দেখতে হবে। আমি তো এখন দুদিনের অতিথি।

রবিবাবু ভাবলেন, একটু কাঁদতে পারলে ভালো হতো। কিন্ত ছেলে বৌমা, নাতি নাতনিরা আছে। তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই কান্নাকে ব্যাথার বিপুল পাথরে চাপা দিয়ে রাখলেন।