গল্প - অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
Posted in গল্পলোকটি নরমমতো বড়োসড়ো কিছু একটা মাড়াল। সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করল যে পায়ে কিছু একটা কামড়েছে। এক লাফে সামনে এগিয়ে গেল। শাপ-শাপান্ত করে গালি দিয়ে পেছনে ফিরেই দেখতে পেল একটা বিশাল বিষধর সাপ (ভাইপার বা ইয়ারারাকুসু)নিজের মধ্যে পাক খেয়ে আবার আক্রমণের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।
লোকটি খুব দ্রুত নিজের পা-টা একবার দেখে নিল, যেখানে দুটো রক্তের ফোঁটা অস্বস্তিকরভাবে ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে । সে চট করে তার বেল্ট থেকে দা বার করল । বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরেই ভাইপার নিজের কুণ্ডলীর মধ্যে মাথাটা লুকিয়ে ফেলল। আর ঠিক তখনই ধারলো দাটা বিষাক্ত সাপটির পিঠের ওপর পড়ে তার মেরুদণ্ডটা একবারে ভেঙে দিল ।
লোকটি নিচু হয়ে সাপের কামড়ে হওয়া ক্ষতটা দেখল, তারপর রক্তের বিন্দুগুলো মুছে ফেলল। সেই মুহূর্তেই বিষয়টির গুরুত্ব ভালো করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করল। ওই বেগুনি বিন্দুদুটি থেকে ভয়ানক যন্ত্রণা শুরু হয়ে ক্রমশ তীব্রতর হয়ে সারা পায়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সে নিজের রুমাল দিয়ে গোড়ালিটা শক্ত করে বেঁধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খামারের দিকে রওনা হল।
পায়ের যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়তে লাগল। জায়গাটা ফুলে গিয়ে যেন ফেটে পড়ছে। দু-তিনবার বিদ্যুৎ ঝলকের মতো তীক্ষ্ণ সূঁচ-বেঁধানো ব্যথা তার ক্ষতস্থান থেকে হাঁটুর কাছাকাছি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে লাগল। পা ফেলতে অসম্ভব অসুবিধে হচ্ছিল। গলার মধ্যে যেন ধাতব শুষ্কতা, তার সঙ্গে জ্বলন্ত তৃষ্ণা। তার মুখ থেকে আবার একটা বিশ্রী গালি ছিটকে বেরিয়ে এল।
শেষ পর্যন্ত সে খামারে পৌঁছোল। দু-হাত ছড়িয়ে জলকলের চাকার ওপর আছড়ে পড়ল। দংশনের দুটি বেগুনি বিন্দু তখন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল যেহেতু পুরো পা-টাই বীভৎসভাবে ফুলে উঠেছিল। তার পায়ের চামড়া ভীষণ পাতলা হয়ে গিয়েছিল ,মনে হচ্ছিল একটু চাপ পড়লেই ফেটে যেতে পারে। সে নিজের বৌকে ডাকতে চাইল কিন্তু গলা ভেঙে গিয়ে একটা গোঙানি বেরিয়ে এল। গলার ভেতরটা অতিরিক্ত শুকিয়ে গিয়ে যেন টেনে ধরেছে। মারাত্মক তৃষ্ণা তাকে সম্পূর্ণ গ্রাস করল।
---দোরোতেয়া ! কোনোমতে সে ফ্যাসফ্যাসে গলায় চিৎকার করে উঠল। আমায় একটু মদ দাও!
তার বৌ একটা ভর্তি গ্লাস নিয়ে দৌড়ে এল, আর লোকটি তিন চুমুকেই শেষ করে দিল। কিন্তু সে মদের কোনো স্বাদ পেল না।
---তোমার কাছে মদ চেয়েছিলাম, জল নয় ! রেগে গিয়ে চিৎকার করল সে। আমায় মদ দাও !
---কিন্তু , এটা তো মদই পাউলিনো! তার বৌ ভয়ে ভয়ে প্রতিবাদ করল।
---না,তুমি আমায় জলই দিয়েছ ! আমি তোমায় বলছি তো, আমি মদই চাই!
তার বৌ দৌড়ে গিয়ে মদের পুরো পিপে নিয়ে ফিরে এল। লোকটি পরপর আরো দু- গ্লাস মদ পান করল, কিন্তু গলায় সে কিছুই অনুভব করল না। তার তৃষ্ণা একটুও মিটল না।
---নাঃ ; অবস্থাটা ক্রমশ আরও শোচনীয় হয়ে উঠছে ---সে নিজের পায়ের গ্যাংগ্রিনের মতো দগদগে ক্ষতস্থান দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বলল। রুমালের শক্ত বাঁধনের দুপাশ থেকে ফুলে ওঠা পা-টা যেন বিরাট রক্তাক্ত সসেজের মতো বেরিয়ে আসছিল ।
প্রচণ্ড ব্যথাটা ক্রমাগত চিড়িক চিড়িক করছিল বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আর সেটা পৌঁছে গিয়েছিল কুঁচকি পর্যন্ত। ভয়াবহভাবে গলাটা পুরোপুরি শুকিয়ে যাচ্ছিল,আর সেইসঙ্গে নিঃশ্বাসটাও যেন ক্রমশ আরো বেশি উষ্ণ হয়ে উঠছিল। যখন সে উঠে বসার চেষ্টা করল তখনই আধ মিনিটের জন্যে হঠাৎ ভয়ানক দমকে বমি ছিটকে এল তার মুখ থেকে, চাকার লাঠির ওপরে কপালটা রেখে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল।
লোকটির একেবারেই মরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, তীরে নেমে এসে তাড়াতাড়ি নিজের নৌকোয় চড়ে বসল। নৌকোর পেছনে বসে পারানা নদীর কেন্দ্রে পৌঁছোনোর জন্যে সে দাঁড় বাইতে শুরু করল। সেখানে ইগাজু জলপ্রপাতের কাছাকাছি নদীর স্রোত ঘন্টায় ছয় মাইল, নদীর এই দ্রুত গতি তাকে পাঁচ ঘন্টার আগেই তাকুরু-পুকুতে পৌঁছে দেবে।
ক্রমশ ঝিমিয়ে-আসা শক্তি নিয়ে কোনোভাবে মাঝনদীতে পৌঁছোল। কিন্তু ততক্ষণে তার হাতদুটি অবশ হয়ে গিয়ে দাঁড়গুলো নৌকোর মধ্যেই হাত থেকে খসে পড়ল। আবার সে বমি করল, এবারে রক্তবমি। সে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল সূর্য ইতিমধ্যেই পাহাড়ের আড়ালে চলে গেছে।
উরু পর্যন্ত তার পুরো পা-টা ফুলে গিয়ে এমন বিকৃত আকার ধারণ করেছে যে প্যান্টের সেলাই ফেটে বেরিয়ে আসছিল। সে প্যান্টের সেলাই কেটে ফেলল ছুরি দিয়ে, তার পেটের নীচের অংশটা ঝুলে গিয়ে বেরিয়ে এসেছিল, তার মধ্যে শিরা ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে বিচ্ছিরি বড়ো বড়ো দাগ হয়ে গিয়ে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছিল। তার মনে হল সে কিছুতেই একা তাকুরু-পুকুতে পৌঁছোতে পারবে না। সিদ্ধান্ত নিল যে তার বন্ধু আলভেস-এর সাহায্য নেবে, যদিও অনেকদিন ধরে আলভেস-এর সঙ্গে তার মোটেই সদ্ভাব ছিল না।
নদীর স্রোত এইসময় ব্রাজিলের তটবর্তী হয়ে দ্রুতগতিতে বইছিল, সে খুব সহজে নৌকো তীরে ভেড়াতে পারল । তারপর নিজেকে টেনে হিঁচড়ে ঢাল বেয়ে উঠল, পরিশ্রান্ত হয়ে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে রইল।
---আলভেস! যত জোরে পারল সে চিৎকার করল আর বৃথাই কান পেতে রইল।
---বন্ধু আলভেস ! আমায় এইসময় তুমি ফিরিয়ে দিও না!---মাটি থেকে মাথাটা সামান্য তুলে সে আবার বলল । অরণ্যের নিস্তব্ধতার মধ্যে থেকে সামান্য ফিসফিসানিও শোনা গেল না। লোকটি আবার ঢাল বেয়ে নীচে নেমে নৌকোয় উঠল। আবার নদীর স্রোত তাকে দ্রুগতিতে ভাসিয়ে নিয়ে চলল।
পারানা নদী বয়ে চলেছে সুগভীর খাদের মধ্যে দিয়ে, যার পাড় প্রায় একশো মিটার উঁচু। অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা নদীকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। নদীর তীরে ঘন কালো রঙের বাসাল্ট পাথরের চাঁই , সেখান থেকেই ওপরে উঠে গেছে জঙ্গল, সেটাও ঘন কৃষ্ণবর্ণের। তার সামনে নদীর তীরে অন্তহীন করুণ ,বিষণ্ণ অরণ্যের প্রাচীর ; জলের গভীরে ফেনিল ঘূর্ণি আর নদীর ভয়ানক হিংস্র স্রোত, বিষাক্ত জলের মধ্যে অবিরাম বুদবুদ আর ফেনা। সমগ্র প্রকৃতিই যেন আক্রমণের জন্যে উদ্যত, আর তার মধ্যেই নীরব, হিমশীতল মৃত্যুর রাজত্ব। সন্ধে নামছে কিন্তু ছায়াচ্ছন্ন সৌন্দর্য আর শান্তি এক অনন্য মহিমায় নিসর্গকে আবৃত করছে ।
ইতিমধ্যেই সূর্য অস্ত গিয়েছিল । লোকটি নৌকোর গভীরে আধশোয়া, তার একটা ভয়ঙ্কর শিহরণ হল, আশ্চর্যের বিষয় সে তার
ঝুঁকে –পড়া মাথাটা ধীরে ধীরে তুলতে পারল, এবারে একটু ভালো বোধ করতে লাগল। পায়ে যন্ত্রণা প্রায় হচ্ছেই না, তৃষ্ণাও অনেক কমে গেল, তার বুকের চাপ-ধরা ভাবটা চলে যাওয়ায় সে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে লাগল।
তার কোনো সন্দেহ রইল না যে শরীর থেকে বিষটা নেমে গেছে। সে অনেকটাই ভালো বোধ করছিল, যদিও তার হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ছিল না, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার জন্যে সে শিশিরবিন্দুর ওপর নির্ভর করে রইল। হিসেব করে দেখল যে তিন ঘন্টার আগেই সে তাকুরু-পুকু পৌঁছে যাবে।
সে ক্রমশ সুস্থ বোধ করতে লাগল। তার তন্দ্রাচ্ছন্নতা নানান স্মৃতিতে ভরে উঠল। তার পায়ে বা পেটে কোনো অনুভূতিই ছিল না। তার বন্ধু গোয়ানা কি এখনো তাকুরু-পুকুতেই থাকে ? হয়তো তার সঙ্গে দেখা হবে তার প্রাক্তন-মনিব মিস্টার ড্যুগাল্ডের, যে সকলের কাজের দেখাশোনা করত ও কাজ বুঝে নিত।
ও কি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবে ? সূর্যাস্তের আকাশ যেন একটা সোনারঙের পর্দা খুলে দিল আর নদীও সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠল। ইতিমধ্যেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পারাগুয়ের তটভূমি, পাহাড়েরা গোধূলির সতেজতা নিয়ে ঝুঁকে পড়েছে নদীর ওপরে, কমলাফুল আর বুনো মধুর আচ্ছন্ন ও আবিষ্ট করা সুগন্ধ নিয়ে। একজোড়া টিয়াপাখি অনেক উঁচু দিয়ে নীরবে উড়ে গেল পারাগুয়ের দিকে।
সেখানে , অনেক নীচ দিয়ে সোনার নদীর ওপরে নৌকো ভেসে চলল তীব্র গতিতে,কখনো বা জলের সফেন ঘূর্ণির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে। নদীর সঙ্গে যেতে যেতে প্রতি মুহূর্তে তার মনে হতে লাগল যে সে আরেকটু ভালো বোধ করছে, আর ভাবতে লাগল ঠিক কতদিন সে তার প্রাক্তন মনিবকে দেখেনি। তিন বছর ? না, হয়তো এতদিন নয়। দু-বছর নয় মাস? হয়তো। সাড়ে আট মাস? হ্যাঁ, এটাই সঠিক, সে একেবারে নিশ্চিত।
হঠাৎ সে অনুভব করল যে তার বুক পর্যন্ত বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কী হতে পারে ? এমনকী তার নিশ্বাসটাও ...
যে কাঠ নিত মিস্টার ড্যুগাল্ডের কাছ থেকে, লোরেঞ্জো কুব্যিইয়া, তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল পুয়ের্তো এস্পেরান্সায় (প্রতীক্ষা বন্দরে) গুড ফ্রাইডেতে ...শুক্রবার ? না কি পবিত্র বৃহস্পতিবারে...
লোকটি আস্তে আস্তে তার হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিল।
---এক বৃহস্পতিবারে ...
আর নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করল।
...........................................................................................
ওরাসিও কিরোগা (৩১/১২/১৮৭৮ ---১৯/০২/১৯৩৭)
উরুগুয়ের খ্যাতনামা নাট্যকার , কবি এবং ছোটোগল্পকারের জন্ম উরুগুয়ের সালতোয়। অরণ্য ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। আরণ্যক পটভূমিতে লেখা তাঁর লেখা ছোটোগল্পগুলিতে অতিপ্রাকৃত শক্তি, মানুষ ও পশুর বেঁচে-থাকার লড়াই এবং অসামান্য প্রকৃতি মিলেমিশে অপরূপ অনন্য ভুবন সৃজন করে। এডগার অ্যালান পো-র সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে তাঁর সৃষ্টিতে । পরবর্তীতে লাতিন আমেরিকার জাদু-বাস্তবতার অন্যতম পথিকৃৎ গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের রচনায় ও হুলিও কোর্তাসারের উত্তর-আধুনিক পরাবাস্তবতায় কিরোগার প্রভাব আমরা দেখতে পাই। কিরোগার কয়েকটি বিখ্যাত ছোটোগল্পের বই El Crimen del otro( অন্য কারো অপরাধ ); Cuentos de amor locura y de muerte (প্রেম,উন্মত্ততা ও মৃত্যুর গল্প); El desierto (মরুভূমি);El sillon del dolor (যন্ত্রণার চেয়ার) ইত্যাদি।
নাগরিক জীবনের পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছিলেন রহস্য- রোমাঞ্চপূর্ণ আরণ্যক জীবন। সপরিবারে সেখানেই বাস করতেন তিনি। নিসর্গ , মৃত্যু, মানুষের জীবনের সংগ্রাম –এসবই তাঁর ছোটোগল্পের বিষয়। অনূদিত গল্প ‘A la deriva’ (ভেসে যাওয়া) তাঁর বিখ্যাত
ছোটোগল্পের বই Cuentos de amor locura y de muerte –এর অন্তর্গত। মৃত্যু এবং মৃত্যুকালীন আচ্ছন্নতার এক মহাকব্যিক অনুপম আখ্যান অতি স্বল্প পরিসরে তিনি তুলে ধরেছেন এই গল্পে ।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (১৯৬৪) বর্তমানে গার্ডেন হাই স্কুলে বাংলার বিভাগীয় প্রধান। তার আগে শিক্ষকতা করেছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। বিশ্ব-সাহিত্য,লেখালিখি বিশেষত অনুবাদ তাঁর প্রিয় বিষয়। আলিয়াঁস ফ্রাঁসেজ থেকে ফরাসিতে দিপ্লোম সুপিরিওর করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্প্যানিশ চর্চার সঙ্গেও যুক্ত। তাঁর অনূদিত বই বোর্খেসের আউতোবিয়োগ্রাফিয়া, লোরকার ‘রক্তের বিবাহ’ (Bodas de sangre),স্পেনের কবি ভিয়োলেতা মেদিনার ‘ভাঙা আয়না’ [ স্প্যানিশ থেকে বাংলা] , মার্গেরিত দ্যুরাসের ‘হিরশিমা মনামুর’ [ফরাসি থেকে বাংলা]। এছাড়াও বিভিন্ন প্রবন্ধ , কবিতা ও গল্পের অনুবাদ সঙ্কলিত হয়েছে নানান বই ও পত্রপত্রিকায় । ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনুবাদগ্রন্থের সমালোচনা ।এছাড়াও পাবলো নেরুদা, ওক্তাভিও পাস, হুয়ান রামোন হিমেনেস এবং লোরকাকে নিয়ে প্রকাশিত সংকলন গ্রন্থগুলিতে লিখেছেন প্রবন্ধ, অনুবাদ করেছেন অসংখ্য কবিতা ও প্রবন্ধ। স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্য- চর্চায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান লোস ইস্পানোফিলোস –এর সদস্য ।