সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়বাড়ি ফেরার কথা ছিল অনেকগুলি মানুষের। হয়ে উঠলো না। চিরপ্রতীক্ষায় থেকে গেলেন তাঁদের আত্মীয়-পরিজন। কেউ গিয়েছিলেন পেশাগত কারণে, কেউবা নিছক বেড়াতে কিন্তু তাঁরা সবাই ঘরমুখো হয়েছিলেন যে ট্রেনটি চেপে, যাত্রা শুরু করার অল্পক্ষণের মধ্যেই সেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। অনেকেরই ফেরা হলো না আর।
এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কেউই এই ভয়ংকর বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করেননি। হাস্যকরভাবে মামলা রুজু হয়েছে যে মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে, তার চালকের বিরুদ্ধে, যিনি সেদিনই প্রাণ হারান। আরও ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এমন একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন এবং যিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এ তো কল্পনাতীত! বিশ্বের এক অন্যতম বৃহৎ রেল পরিষেবার মান ঠিক কীরকম হওয়া উচিত, সে নিয়ে ভারতবাসী হিসাবে আমাদের কোনও স্পষ্ট ধারণা আছে কি? আছে কি নির্দিষ্ট কোনও প্রত্যাশা? আমরা বরং চোখ - ধাঁধানো কিছু 'বন্দে ঘোষণা'য় যারপরনাই প্রীত।
রাজনৈতিক প্রভুদের সাফল্য ঠিক এইখানে। যে ন্যারেটিভটি তাঁরা আমাদের গলাধঃকরণ করতে বাধ্য করেছেন, আমাদের চাহিদার সীমারেখাটি ঠিক তার সঙ্গে মানানসই। কিন্তু অতর্কিতে, বলা যায়, বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হলো যাঁদের জীবনে, আলো নিভে গেলো বরাবরের মতো, তাঁদের পরিজনদের কী হবে? আরও কতটা পথ চললে আমরা আমাদের মানুষ বলে ভাবতে পারবো? উত্তরগর্ভ এই প্রশ্নগুলি আপাতত রইলো কিছু লাশচাপা।
সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।