Next
Previous
0

ধারাবাহিক - সুদীপ ঘোষাল

Posted in





বারো



রবিবাবুর স্ত্রীর নাম আলো। আলো পাশের বাড়ির বৌটার সঙ্গে মেশে।তার বরের নাম অভয়।

অনেকগুলো ছেলে মেয়ে জন্মের পর মরে যাওয়ায় অভয় এবারের ছেলের নাম রাখলো গু,য়ে। ভালো নাম রাকবো না রে। আবার যদি মরে যায়। পরের বছর যে হবে তার নাম রাকবো আকু। বললো,অভয়। গ্রামের পুরোহিত বললো,ঠিক করেছো। এইবার তোমার ছেলে,মেয়ে বাঁচবে।

ছেলে দুটো বাঁচার পরে আরও দুটো মেয়ে হলো। আর সন্তান নিলো না অভয়। অনেকে বললো,সংসার ছোটো রাকো,তাহলে অভাব হবে না। অভয় বললো,আমার বন্ধু রামুর তো নয়টা ছেলে আর দুটো মেয়ে। আছে তো দু বিঘে জমি। ওরা বুঝলো,তর্ক করে লাভ নেই। যে বোঝার নিজে থেকেই বোঝে।

তারপর বড় হয়ে স্কুলে ভরতি হওয়ার সময় আকুর নাম হলো সমর আর গুয়ের নাম হলো অমর। আর ভয় নেই। শিব ঠাকুরের কাছে মানত করে অভয়,ছেলেদের বললো,বছরে একবার গাজনের সময় ভক্ত হবি। তাহলে সব বিপদ কেটে যাবে। অভয় ভাবে,মেয়েরা তো তাড়াতাড়ি বাড়ে। বিয়ে দিতে হবে। অভাবের জন্য ওরা বেশিদূর পড়তে পারলো না। সমর মুদিখানার দোকানে কাজ নিলো। আর মেয়েরা বাড়ির কাজ করে। অমর পড়াশোনায় ভালো বলে স্কুল ছড়লো না। হেড মাষ্টার নিজে খরচ দিয়ে অমরকে পড়াতেন স্কুলে। তখনকার দিনে স্কুলে পড়তে গেলে টাকা,পয়সা লাগতো।কাদা, মাটির রাস্তা গ্রামে। বর্ষাকালে মুদিখানার মাল রেলস্টেশন থেকে সমর মাথায় করে নিয়ে আসতো। নুনের বস্তাও মাথায় করে আনতো। লোকে বলতো অভয়কে,অত খাটাস না ছেলেটাকে। চোখে, কোমরে রোগ ধরে যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

মেয়ে দুটোর একই দিনে বিয়ের ব্যবস্থা করলো অভয়। বড়ো মেয়ের বয়স সতেরো। আর ছোটো মেয়ের বয়স ষোলো। বেশ ধুমধাম হলো। কলা পাতা দিয়ে গেট বানানো হলো। সতরঞ্জি পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। গরীব মানুষ। তবু বাড়ির সকলে খুব আনন্দ করলো।বিয়ের দিনে বর পথে দুর্ঘটনায় মারা গেল। কপাল পুড়ল মেয়েটার।



তারপর চলে এল জগদ্ধাত্রী পুজো।এই গ্রামে ধূমধাম করে মশাল জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের পুজো হয়। গ্রামের বাজারে বহু বছর যাবৎ এই পুজো হয়ে আসছে। পাটকাঠির মশাল জ্বালিয়ে এই পুজো মহা সমারোহে পালন করা হয়। কথিত আছে জ্ঞানের আলো এই দেবি জগতে ছড়িয়ে দেন। তাই আলোময় মশাল জ্বালিয়ে দেবির পুজো করা হয়। ভিন্ন মতও অনেক আছে।

তবে মতবাদের ককচকচানির উর্ধ্বে উঠে সকল গ্রামবাসী এক হয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হন এই কটা দিন।পাটকাঠির বোঝা বেঁধে বড় বড় মশাল তৈরি হয়। মশালে আগুন ধরিয়ে ঢাক ঢোলের তালে তালে নাচতে থাকে ভক্তের দল। চারদিকে আলোয় আলোময় হয়ে ওঠে পুজোমন্ডপ। মশাল জ্বালিয়ে গ্রাম ঘোরে প্রতিমাসহ মশালবাহির দল। বড় সুন্দর এই দৃশ্য। সব মানুষ ভেদাভেদ ভুলে মেতে যান এই উৎসবে।আর কোথাও এই পুজো আছে কি না জানা নেই রবিবাবুর।তবে তিনি বলেন,এই পুজোয় গ্রামবাসীর আনন্দ তাকেও আনন্দিত করে তোলে।