সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারা। যে বিষয়গুলির ঢাল হয়ে উঠে অধঃপতনের গহ্বর থেকে সমাজকে রক্ষা করার কথা, তার প্রথম অবশ্যই মূল্যবোধ আর তার নীতিনিষ্ঠ প্রয়োগই একদিন জন্ম দিয়েছিল এই আইন নামক বিষম বস্তুটির। প্রণেতারা নিশ্চয়ই একথাই ভেবেছিলেন, যখন মানুষের অপরাধী প্রবৃত্তি মূল্যবোধের লক্ষণরেখা ভঙ্গ করবে, সমাজের গা দিয়ে চুইয়ে পড়বে পুঁজরক্ত, সেই ক্ষতস্থানের নিরাময়ের জন্য দরকার হবে আইনের।
সেইসময় একথা তাঁরা অবশ্যই মনে রাখেননি যে প্রাণীকূলে মানুষই সবচেয়ে ধূর্ত এবং বিপদে পড়লে, একটি বিশেষ পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্বে আনার জন্য অন্য অনেক প্রাণীর মতোই চকিতে বদলে ফেলতে পারে বাহ্যিক চেহারা।
আইনের অনুশাসন সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবিস্কৃত হল তার চোরা ফাঁকফোকরগুলি। বিষয়টি অধিক আক্ষেপের হয়ে ওঠে যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যে ন্যায়ালয়ের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের কাছে সুবিচার পৌঁছে দেওয়া এবং প্রমাণ করা আইন 'অন্ধ' হলেও তা নিরপেক্ষ, পবিত্র সেই স্থানটি থেকে একটি বিশেষ আইনের পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা করা হল। এই দেশেই।
৩৭৫ নম্বর এই বিশেষ ধারাটিতে স্পষ্ট বলা আছে কোনও নারীর অসম্মতিতে যে কোনও রকম যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অর্থ ধর্ষণ এবং একমাত্র ধর্ষণই। এই একই আইনে এতদিন অবশ্য বৈবাহিক সম্পর্ককে এই ব্যাখ্যার আওতায় রাখা হয়নি, ছাড় দেওয়া হয়েছিল 'স্বামী দেবতাকে'।
সম্প্রতি দেশের দুই প্রান্তের দুটি হাইকোর্ট আলাদা একই গোত্রের দুটি মামলায় এমন রায় দিলেন যাতে 'ধন্দ' শব্দটির যথার্থ মানে অনুধাবন করা গেল। একজন বিচারপতি বললেন, নারীর অসম্মতিতে যৌন মিলন হলে তা ধর্ষণই, বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আর অন্যজন বললেন, আলোচ্য ক্ষেত্রে মেয়েটির বয়স যদি হয় আঠারো বা তার অধিক, তাকে ধর্ষণ বলে গ্রাহ্য করা যাবে না।
সমাজের অভিমুখ কোনদিকে এর পর নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না! 'সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ'।
সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন
শুভেচ্ছা নিরন্তর