ধারাবাহিক - রাজা মুখোপাধ্যায়
Posted in ধারাবাহিকশেষ পর্ব
নটে গাছটি মুড়লো আপাতত
মূলত সম্পাদকের আগ্রহে আড়াই বছর আগে যখন এ ধারাবাহিক লেখা শুরু করি, কী লিখব, কেন লিখব এই দ্বন্দ্বে ব্যতিব্যস্ত ছিলাম। কারণ সত্যি কথা বলতে কি, আমি রান্নার জগতে কিছু কৌতূহল আর আবেগ সম্বল করে ঢুকে পড়েছিলাম কোনও এক সময়ে, এ কথা যত না সত্য, তার চেয়েও বড় সত্য হল জীবিকা এবং ভ্রমণের হাত ধরে নিজের অজান্তেই কোনও এক অসতর্ক ক্ষণে প্রবেশ করেছিলাম এই আশ্চর্য সুন্দর পৃথিবীতে। ধীরে ধীরে আপন খেয়ালেই কলকাঠি নেড়ে নিয়ন্তা কেউ যেন আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন একের পর এক পর্দা। শুরু হয়েছিল অভূতপূর্ব এক যাত্রা। কথিত আছে স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনে মানুষকে তা উপহার দিয়েছিলেন প্রমেথেউস। পড়েছিলেন দেবতা জিউসের রোষানলে। বিবর্তনের পথে মানুষ সেই আগুনকে ব্যবহার করতে শিখল ক্ষুন্নিবৃত্তির প্রয়োজনে। জন্ম হল ‘রান্না’ শব্দটির। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আঞ্চলিক যাপন সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ প্রভাব ফুটে উঠতে লাগল পাকশালাগুলির খুঁটিনাটি চারিত্রিকতায়। ক্রমশ বিশেষ একটি সমাজ ও সময়কে বোঝার ক্ষেত্রে রান্নাবান্নার হাল – হকিকত হয়ে উঠল এক প্রধান নির্ণায়ক। বিষয়টি এখানেই থেমে রইল না। বিশ্বব্যাপী প্রাচীন রন্ধনশৈলীগুলি লাভ করল বিশেষ স্বীকৃতি ও মর্যাদা। তৈরি হল অসংখ্য স্কুল – যেখান থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তরুণ রাঁধুনির দল ছড়িয়ে পড়তে লাগল সর্বত্র। সৃষ্টি হল একটি নির্দিষ্ট পেশার। যাকে আদর করে হসপিট্যালিটি ইন্ডাস্ট্রি কাছে টেনে নিল। কিন্তু আমার মতো একজন আনাড়ির এই ঘ্রাণে আকৃষ্ট হওয়ার কোনও আপাতগ্রাহ্য প্রেক্ষাপট না থাকলেও আমার মতো অজস্র মানুষের ক্ষেত্রে বারবার এমন ঘটেছে। ভবিষ্যতেও ঘটবে। আমার মতোই প্রত্যেকে আপন আপন চশমার ভিতর দিয়ে উঁকি মারার চেষ্টা করেছে আলাদা আলাদা রান্নাঘরগুলির অন্দরমহলে। রচিত হয়েছে আলাদা আলাদা হেঁশেল যাত্রা। এই কিসসা শেষ হবার নয়। কিন্তু দীর্ঘ কোনও যাত্রাপথে যেমন প্রয়োজন হয় একটু বিরতির, খানিক জিরিয়ে নেওয়ার, হেঁশেল যাত্রাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখনকার মতো তাই জিরেন। মগজের কোষগুলি আবার ভরে উঠুক হরেক রকম অচেনা খুশবুতে, তখন না হয় আবার আলসেমির সঙ্গে আরম্ভ হবে নতুন লড়াই।