Next
Previous
1

পথে প্রবাসে - অচিন্ত্য দাস

Posted in





যেসব খবরাখবর দিতে পারলে ভ্রমণ-পিপাসু লোকজনের সুবিধে হতে পারে, তা এই কদিনের ভেতরে প্রায় ভুলে গেছি। স্মৃতিতে যা রয়ে গেছে তা দেখছি সবই ব্যক্তিগত অনুভূতি। তাই এ লেখার পাঠক পাওয়া যাবে কি না জানি না। স্রেফ লেখার তাগিদেই লেখা।

কাম্বোজ দেশ মানে কাম্বোডিয়ার উত্তর পশ্চিম দিকটায় সিয়েম রিপ নামে একটি শহর আছে। বিমান থেকে নেমে বিমান-বন্দরটি দেখে চোখ আর মন দুইই জুড়িয়ে গেল। আজকালকার বড় বড় এয়ারপোর্টের মতো চকচকে ঝকঝকে কাচ আর ইষ্পাতের বিরাট বিরাট অট্টালিকা নেই। আছে গোটা চার-পাঁচ প্যাগোডা ধরনের বাদামী কাঠের ছাদওয়ালা প্রবেশ পথ। সবই একতলা, লিফ্ট বা চলন্ত সিড়ির কোনো ব্যাপার নেই। ভেতরে এসে দেখলাম আগমন ভবনটি (অ্যারাইভাল লবি র বাংলা করলাম) কয়েকটি পাথরের এবং কাঠের মূর্তি দিয়ে সাজানো। সুরুচিপূর্ণ, একটুও আতিশয্য নেই। কাম্বোডিয়ার এই মধুর আন্তরিক অভ্যর্থনা গত রাত্রির বিরক্তিকর অপেক্ষা আর রাতের-ঘুম-নষ্ট-করা বিমান যাত্রার ক্লান্তি অনেকটাই মুছে দিল।

সিয়েম রিপ শহরে প্রতিবছর সারা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ আসে শহরের উপকণ্ঠে বিশ্ব-বিখ্যাত আঙ্কর ভাট মন্দিরটি দেখতে। সিয়েম রিপ শহরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, এককালে এই শহরই ছিল এ দেশের রাজধানী। তারপর রাজধানী অবশ্য সরে গেছে মেকং নদীর ধারে নম পেন শহরে। সিয়েম রিপ শহরটি চমৎকার। বোধহয় সকলেরই ভালো লাগার মতো। ভারি পরিচ্ছন্ন আর সাজানো শহর। সন্ধেবেলায় দোকান-পাটে বিক্রি হয় নানা ধরনের স্যুভেনির, টি-শার্ট, বুদ্ধমূর্তি। বাজারের পাশে পান-ভোজনের জন্য আছে পাব সট্রীট। তা ছাড়া ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে হাজার রকমের খাবার আর পানীয়। সিয়েম রিপ নামে একটা নদী বয়ে গেছে শহরের মাঝখান দিয়ে (নদী না বলে খাল বলাই ভালো) আর তার ওপর অনেকগুলি আলো-ঝলমলে সেতু। সব মিলিয়ে খুশি আর উৎসাহে ভরপুর। তবে আজকের লেখার বিষয় আঙ্কর ভাট মন্দির, তাই পরের দিন সকালে আঙ্গকর ভাট মন্দিরে গিয়ে যা দেখেছিলাম, যা মনে হয়েছিল তাই লিখছি।

রাস্তায় যেখানে বাস থেকে নামতে হয় সেখান থেকে মন্দির অবধি অনেকটা পথ। পথটির দুপাশে ভারি সুন্দর সবুজ ঘাসের জমি। মাঝে মাঝে বড় বড় গাছ। বেশ কয়েকটা তাল গাছ চোখে পড়ল। এত দূর থেকেও মনে হলো বাপ রে, এত বড় এলাকা নিয়ে একটা মন্দির! মন্দিরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল এত বড় মন্দির চত্বর আর কোথাও দেখিনি। অবশ্য দেখবই বা কী করে। আঙ্গকর ভাটই তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মন্দির।

এক জায়গায় রাস্তার দুপাশে দুটো প্রাচীন ভবন দেখলাম। গাইড বলল এইখানে রক্ষিত থাকত সেকালের বহু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি-পত্র। মানে সে যুগের গ্রন্থাগার। এককালে বহু পণ্ডিত ব্যক্তি, বহু ছাত্র, বহু জ্ঞান-পিপাসু এখানে আসত অধ্যয়ন করতে। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে গেছে। খালি বাড়ি দুটি পড়ে আছে মাঠের মাঝে। অবশ্য বয়সের আন্দাজে মনে হলো পাথরের তৈরি ভবন দুটির অবস্থা যথেষ্ঠ ভালো।

এখানে মন্দিরসহ সবকিছুর নির্মাণে বেলে পাথর বা স্যান্ড স্টোন ব্যবহার হয়েছিল। প্রায় বিশ-ত্রিশ ক্রোশ দূরের এক পাহাড়ের ঢাল থেকে পাথর কেটে নিয়ে আসা হতো। প্রতিটা পাথরে একটা গোল করে ঘাট কাটা আছে। শুনলাম সেখানে আংটা লাগিয়ে পাথরগুলি হাতী, বলদ বা ঘোড়া দিয়ে টেনে আনা হতো। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে এই বিরাট কর্মকাণ্ড কল্পনা করলে ভারি অবাক লাগে।

একটা সেতু পার হতে হয়েছিল। গাইড ছেলেটি গর্বের সঙ্গে বলল যে এটি নাকি দুশ মিটার প্রশস্ত পরিখা, মন্দিরকে ঘিরে আছে। আমার কপালে ভাঁজ পড়ল। পরিখা তো দূর্গ বা কেল্লা বা বড়জোর রাজ-প্রাসাদের চারদিকে থাকতে পারে শত্রু আটকাবার জন্য। কিন্তু দেবস্থানে পরিখা?

উত্তর অবশ্য পেয়ে গেলাম একটু পরেই। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত আঙ্কর ভাটের ইতিহাস যুদ্ধ ও হিংসা কণ্টকিত। এ মন্দিরের আদি নাম ছিল ‘বিষ্ণুলোক’। কিন্তু তারপরের রাজা-রাজড়ারা বৌদ্ধ ধর্মের দিকে সরে আসাতে এ মন্দিরে ধ্বংসের তাণ্ডব শুরু হয়। বিষ্ণুমূর্তির চিহ্নমাত্র দেখলাম না। তবে এই শেষ নয়, এরপরে বৌদ্ধ রাজাদের দিন শেষ হয়ে যেতে মন্দিরের ভেতর আবার ধ্বংসের খেলা চলেছিল। ভাঙাচোরার সময় দেয়ালে আঁকা ছবিগুলোর দিকে বোধহয় কেউ তেমন নজর দেয়নি। মন্দিরের টানা দেয়াল জুড়ে রামায়ণ-মহাভারতের বহু ছবি আঁকা রয়েছে। সমুদ্র-মন্থনের ছবিও চোখে পড়ল।

গাইড ছেলেটিকে আমার প্রথম থেকেই ভালো লেগেছিল। ইস্কুল পাশ – কলেজে পড়েনি। ভারি সরল। আমি তেমন কিছু না জানলেও বুঝতে পারছি ছেলেটা ইতিহাস মাঝেসাঝে গুলিয়ে ফেলছে। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছিল এক ধনুকধারী ঊর্ধপানে তীর নিক্ষেপ করার জন্য তৈরি, ওপরে একটা চাকা ধরনের কিছু আছে। মানুষটার ছবি আবছা হয়ে গেছে, মনে হল সে নিচের দিকে তাকিয়ে। গাইড বলল – এই হলো রাম। সীতাকে বিয়ে করার জন্য এই কঠিন লক্ষ্যভেদের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। এই রে! রামের হরধনু ভাঙা আর অর্জুনের লক্ষ্যভেদ গুলিয়ে ফেলেছে! ভারতীয় জনতা তা মানবে কেন! অনেকে একসঙ্গে বলে উঠল – না, এ হচ্ছে অর্জুন। দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় লক্ষ্যভেদ করছে। গাইড দ্রৌপদীর নাম কোনোদিন শোনেনি, উচ্চারণও করতে পারল না। একজন ঠাট্টা করে বলল – তুমি তো রামায়ণ-মহাভারত মিশিয়ে ফেললে। তোমার তো বিরাট প্রতিভা! এতখানি বাংরেজি গাইড ছোকরা বুঝতে পারল না, তবে তাকে নিয়ে যে সকলে হাসছে, তা টের পেল। গোবেচারার মতো মুখ করে সে দাঁড়িয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল এখন যদি ছেলেটিকে কেউ ধমকের সুরে প্রশ্ন করে – হর-ধনু কে ভেঙেছিল বল... তাহলে পাঠশালার সেই বালকটির মতো গাইড বলবে – আমি ভাঙিনি স্যার, আমি জিনিসটা দেখিই নি…

এই যখন অবস্থা তখন অপ্রত্যাশিত ভাবে গাইড ছেলেটি এমন একটা উল্টো অস্ত্র ছাড়ল যেটা রাম বা অর্জুনের তূণে কোনোদিন ছিল না। জিনিসটা বরুণাস্ত্র ধরনের। সবকিছু গলিয়ে জল করে দিতে পারে।

গাইড ছেলেটি ভারি বিনয় করে বলল – আপনাদের মতো জ্ঞানীরা এখানে আসেন, তাই তো আমরা কিছু শিখতে পারি…

ব্যাস। সকলে ঠাণ্ডা, ভেতরে ভতরে খুশিও নিশ্চয়।

***

এই কয়েক মাস হলো, আমি আমার জীবন-সাথীকে হারিয়েছি। দুরারোগ্য অসুখে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই আমার ভেতরে কৃষ্ণ-গহ্বরের মতো বিরাট এক শূন্যতা পাকাপাকি ভাবে বাসা বেঁধেছে। একেক সময় সে শূন্য-গহ্বর আমার ভেতর থেকে বাইরে এসে পড়ে। অজগর সাপের মতো ঘিরে ফেলে আমাকে। আমি দলছুট হয়ে পড়ি। আনমনে রাস্তা চলি। সহযাত্রীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায়। পিছিয়ে পড়ি, ভাবতে থাকি কোথায় যাচ্ছি, কেনই বা যাচ্ছি। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের গানের লাইনটার মতো – ‘পথিকরা যায় আপন মনে, আমারে যায় পিছে রেখে …’।

আলাদা হয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকাবার পর বুঝলাম বাকি সকলে কাঠের সিড়ি দিয়ে মন্দিরের দোতলায় উঠে পড়েছেন। আমিও উঠলাম। একা একা উঠে যা দেখলাম তাতে মন খারাপ হয়ে গেল। একতলার বিষ্ণুমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে। আর এখানে সারিসারি বুদ্ধমূর্তি খণ্ডিত দেহে অবস্থান করছে। মূর্তির মাথা নেই, হাত নেই – বোঝাই যায় হামলাবাজেরা মুশল জাতীয় ভারী কিছু দিয়ে মূর্তিগুলি ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল। শুনলাম এগুলি স্থাপিত হয়েছিল বিষ্ণুমূর্তি ধ্বংস হবার পরে। সারকথা হলো মানুষের হিংসার কাছে সে বিষ্ণুই হোন বা বুদ্ধই হোন, কেউই পরিত্রাণ পাননি।

মন্দিরটি পাঁচ কিংবা সাত তলা ছিল। এখন তিন তলা অবধি ওঠা যায়। আবার কাঠের সিড়ি বেয়ে উঠলাম। সহযাত্রীদের অনেকজনই দেখলাম দোতলার চত্বরে ক্লান্তিতে বসে পড়েছেন। হয়তো পায়ের সমস্যা আছে – উরিক অ্যাসিড, গাউট বা আর্থারাইটিস। অথবা রদ্দুরের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তিতে আরও দেখার ইচ্ছে উবে গেছে।

তিনতলার অবস্থা দেখে মনে হলো, বহু শতাব্দী পূর্বে যে হামলাবাজেরা বুদ্ধমূর্তি ভাঙ্গতে এসেছিল, তাদেরও আর্থারাইটিস ধরনের ব্যথাশুলো ছিল। কারণ তিনতলায় তাণ্ডবলীলার চিহ্ন স্পষ্টতই কম মনে হচ্ছে। তিন-চারটে বুদ্ধমূর্তি দেখলাম অক্ষত রয়েছে। ভগবান বুদ্ধের আর্শীবাদের ভঙ্গীতে দাঁড়ানো একটি মূর্তির সামনে এক মহিলা ও এক পুরুষ খুব ভক্তিভরে পুজো বা ধ্যান করছে। থালায় রাখা রয়েছে কলা, ড্র্যাগন ফ্রুট, পারসেমন, আপেল জাতীয় গোটাগোটা ফল। কটা বিদেশি টাকা প্রণামীও দেওয়া হয়েছে। বেশ মোটা একগোছা ধূপ জ্বলছে, তার ধোঁয়া বাতাসে কিছুক্ষণ নকশা কেটে মিলিয়ে যাচ্ছে। এই দেশে হিন্দু পুজোআর্চার সঙ্গে বুদ্ধ-উপাসনা মিলেমিশে যে এক হয়ে গেছে তা বোঝাই যায়।

এই দুজনকে দেখে মনে হলো তারা একমনে ভগবান বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করছে। আমারও কি কিছু প্রার্থনা করার আছে?

মন্দিরের তিনতলা যথেষ্ঠ উঁচুতে, আলসের ফাঁক দিয়ে অনেক দূর অবধি দেখা যাচ্ছে। সবুজ ক্ষেত, দু-একটা বসতি, টিলা, কালো ফিতের মতো রাস্তা। আমার নিজের ঘর খালি হয়ে গেছে, একা ঘরে মন লাগে না বলে দেশ ঘুরতে বেরিয়েছি। ঘুরতে ঘুরতে এসেছি আঙ্কর ভাট মন্দিরে। সেখানে সিড়ি বেয়ে উঠে এসেছি অনেক উঁচু এই তিন তলায়। আগে জানতাম না কী দেখব, তাই খানিকটা না জেনে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই শাক্যমুনির মুখোমুখি হয়ে পড়েছি। সামনে লেখা রয়েছে সম্মান দেখানোর জন্য প্রতিকৃতির সামনে মাথার টুপি বা কালো চশমা যেন খুলে রাখা হয়। তাই করলাম।

দাঁড়িয়ে আছেন শাক্যমুনি সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ। প্রকোষ্ঠটি আধো-অন্ধকার। দু-দুবার ছবি তোলার চেষ্টা করে দেখলাম সুবিধে হলো না। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। মনে হলো যেন এখানে কিছু না করে কিছুক্ষণ শুধুই দাঁড়িয়ে থাকি। এমনকি কী প্রার্থনা করা উচিত তাও মাথায় এলো না।

এরকম একটা জায়গায় এমন একটা মুহূর্তে নিজের কথা বা ইচ্ছে নিয়ে প্রাথর্না করা পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় আর অবাস্তব ঠেকল। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ মনে হলো মানুষ যে প্রার্থনা বা উপাসনা করতে বসে তা কি শুধু বলার জন্য? তা তো শোনার জন্যও হতে পারে!

হয়তো। একতলার বিষ্ণুমূর্তি ইত্যাদি লুটপাট হয়ে গেছে, দোতলায় বুদ্ধমূর্তি হাত-পা-মাথা ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আঙ্কর ভাটের এই দুটো তলা আমাকে হয়তো বলতে চাইছে যা দেখলে তা হলো জীবনের দুঃখ-কষ্টের ছবি। তিনতলায়, মানে আরও উঁচুতে উঠতে পারলে ভগবান বুদ্ধের অক্ষত পূর্ণ অবয়ব দৃশ্যমান। খোলা মাঠের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাস এই উঁচুতেও এসে পড়ছে।। সে বাতাস কোনো সুখ নিয়ে আসছে না ঠিকই, তবে স্বস্তির স্পর্শ রেখে যাচ্ছে।

আমি অন্য দশজনের মতো নেহাৎ সাধারণ মানুষ, এসব দার্শনিক ভাবনা আমার ভেতরে বেশিক্ষণ টেকে না, সাবানের ফেনার মতো পুটপুট করে মিলিয়ে যায়। টের পেলাম খিদে পেয়েছে, তাই অন্য সহযাত্রীদের সঙ্গে মন্দির চৌহদ্দির বাইরে রেস্তোঁরায় গিয়ে বসলাম।

কাচের বড় বড় আলমারিতে বহু রকমের খাবার। কোনোটাই অবশ্য চিনতে পারলাম না। ওদেশের ভাষায় লেখা, লোকেরাও কেউ তেমন ইংরেজি বোঝে না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে এক কাপ আইস-ক্রীম নিলাম। একা একটা টেবিলে বসলাম, কারণ সহযাত্রীরা তখন জোর আলোচনায় ব্যস্ত। বিষয় – এখানে খাওয়া যাবে কি যাবে না, খেলে কী খাওয়া যেতে পারে। সাহায্য করার জন্য গাইডও একটা টেবিলে বসেছিল।

আইস-ক্রীমের দামটা একটু বেশি হলেও জিনিসটা ভালো। পরিমানটাও ভালো দিয়েছে। তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছিলাম। এমন সময় গাইড ছেলেটির একটা কথা রেস্তোঁরার চেঁচামিচি ছাপিয়ে তিন-চারটে টেবিল টপকে আমার কানে এলো। সে বলছিল এইখানে সরকারের নিয়ম আছে যে আঙ্কর ভাটের মন্দির-চূড়ার থেকে বেশি উঁচু বাড়ি বা অন্য কোনো কিছু নির্মাণ করা যাবে না। আঙ্গকর ভাট মন্দিরই সবার ওপরে।

এই সরল ছেলেটা না জেনে একটা গভীর সত্যি কথা যেন আমার কাছে পৌঁছে দিল। মন্দিরের ওই উচ্চতায় ভগবান বুদ্ধের সামনে যে অনুভূতি হয়েছিল তার থেকে বেশি সত্যি আর কী হতে পারে? আঙ্কর ভাটের স্মৃতি একদিন আবছা হয়ে যাবে, হয়তো ভুলে যাব কোথায় আছে ফোনের ভেতর জমিয়ে রাখা সাধের ছবিগুলো। যতদিন বেঁচে থাকব আঙ্কর ভাটের তিনতলার সেই উচ্চতা থেকে পাওয়া শিক্ষাটুকু কিন্তু সঙ্গে রয়ে যাবে। তবে খাড়া কাঠের সিড়ি বেয়ে অত উঁচুতে সময়-অসময় উঠতে পারা যাবে কি না জানি না।