গল্প - সমীক্ষণ সেনগুপ্ত
Posted in গল্পএমনি সাধারণ কথা বলতে বলতে কে কখন টাকা চেয়ে বসবে, সেটা বিমল আগাম টের পেত।
একেবারে ছোটবেলা থেকেই যে তার এই ক্ষমতা ছিল তা নয়, কিন্তু জীবনের নানা ঘাটে জল খেতে খেতে শিখে নিয়েছিল সে।
যেমন ধরা যাক, কলেজের বন্ধু বিকাশ, চাকরিতে ঢোকার পর প্রায় বছর দশেক কোন যোগাযোগ নেই, সে একদিন হঠাৎ মুম্বাই থেকে তাকে মনে করে বসল।
ফেসবুকে "কিরে কি খবর", "কেমন আছিস", "কতদিন পর কথা হচ্ছে", ইত্যাদি কিছুক্ষণ চলার পর আচমকা "তোদের তো কলকাতায় খুব বেশি প্যাকেজ দেয়না বল?", "তুই তাতে খুশি, নাকি এক্সট্রা কিছু..."।
ব্যাস, বিমল সাবধান হয়ে যায়। আর তাকায় ঘড়ির দিকে। মানে আর কতক্ষণ এই ভাট-কেত্তন চলতে পারে সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে।
এরপর "আমরা তো দারুন একটা কাজ করছি", "সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের কন্ট্যাক্ট", "গত বছর আমাদের এতো টার্ন ওভার", এই-সেই-এর ফাঁকে বিমল টুক করে জিজ্ঞাসা করে নেয়, "তোদের কোম্পানির নাম কি? হেড কোয়ার্টার কোথায়?"
উত্তর আসে, "গুগুল করে পাবি না রে নাম। আর সারা পৃথিবী জুড়েই তো আমাদের ব্রাঞ্চ আছে...অস্ট্রেলিয়া, হংকং, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন...বুঝলি?"
খুব বুঝতে পারে বিমল। প্রাচীন ইজিপশিয়ানরা যে পিরামিড বানাত, সেই সমনামী মার্কেটিং স্কিমের পাল্লায় পড়েছে সে। যেখানে একজন, অর্থের বিনিময়ে, "কোম্পানি"তে ঢোকায় দুজনকে। সেই দুজনের প্রতিজন আবার অর্থের বিনিময়ে আরো দুজনকে ঢোকায়। এতে প্রথম জন থেকে শুরু করে শেষ অব্দি সবার কমিশন বাঁধা থাকে। ঢোকাতে পারলেই কমিশন। নতুন মুরগি কাটলে বা আনলে তার মাংসের ভাগ তো সকলকেই দিতে হবে। তাই না? এভাবে ছোঁয়াচে রোগের মতো এগোতে থাকে ব্যাপারটা, এবং খুব অচিরেই কলাপ্স করে কারণ একটা সময় পরে নতুন জয়েন করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।
কথা আরও বাড়তে থাকে। যথা "সাইড ইনকাম", "বাড়ি বসে বসে কামাবি", "ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পয়সা পাবি", এইসব আর কি। বিমল ভাবে, বাড়ি থেকে অফিসের কাজের সময় বিমল মাঝে মাঝে দুপুরে আধ ঘণ্টা মতো ঘুমিয়ে নেয়, সেটাকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পয়সা উপার্জন করা বলে কি? কে জানে।
যাইহোক, আগে আগে বিমল এই আগাম টের পাওয়ার পরেও অপর-পক্ষকে বকতে দিত। হাজার হোক নিজের পয়সায় ফোন তো করেছে। হতে পারে টাটা ইন্ডিকম, তাও।
কিন্তু যখন এই বাকশিল্পীরা প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে তাঁদের কসরত দেখিয়ে যেতে লাগলেন, তখন তার মনে হোল - নাহ, এবার একটু দাঁড়ি টানা দরকার। গরীব বলে কি সময়ের দাম নেই নাকি?
এই সময়টায় তো সে অভিক সরকারের নতুন বইটার কয়েকটা গল্প পড়ে নিতে পারত, বা দেখে নিতে পারত "পিকি ব্লাইন্ডারসের" শেষ এপিসোডটা। কিছু না হলেও স্রেফ ল্যাদ খেতেও তো পারত, বা অফিসের কাজও কিছুটা সেরে রাখা যেত।
কাজেই সে "বক্তিয়ার খিলজির" বাক-স্রোতের সামনে ঢাল হিসাবে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে বসে - "তোদের কোম্পানি কাজটা কি করে? মানে প্রোডাক্ট না সার্ভিস?"
এইবার বক্তিয়ার একটু হোঁচট খায়।
বুদ্ধিমান হলে সেও টের পেয়ে যায় যে এই মাছ ওঠবার নয়। বরং লেজে খেলাচ্ছে, আর উল্টে তারই সময় নষ্ট হচ্ছে যেটা দিয়ে সে অন্য কোন (বোকা) মাছ গাঁথতে পারে। কাজেই সে-ই মানে মানে এটা-ওটা বলে ফোন ছেড়ে দেয় । এবং পরের দশ বছরে আবার তাদের কোন পাত্তা পাওয়া যায় না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পৃথিবীতে বোকা এবং তার চেয়েও বেশি মরীয়া বক্তিয়ারদেরই সংখ্যাধিক্য। এবং তাদের উত্তরগুলোও হয় বেশ চিত্তাকর্ষক। তাদের মতে তাদের কোম্পানি গায়ে মাখার সাবান থেকে ব্লকচেন মার্কেটিং সব কিছু করে থাকে, ডেবিট কার্ড থেকে লার্নিং মেটিরিয়াল - সব কিছু বেচে।
বিমল এদিকে হাই তুলতে থাকে। এবং শেষমেশ, "ভাই বাথ্রুম যাবো, ভেবে তোকে জানাচ্ছি" বলা ছাড়া কোন গতি থাকে না।
বক্তিয়াররা অনেক বার-টার খাইয়ে "ফোন করিস কিন্তু, তুই আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড (!) বলে তোকেই একমাত্র বললাম..." ইত্যাদি বলে সন্দিগ্ধ মনে ফোন ছাড়তে বাধ্য হয়।
*******************
বিমলের কোম্পানির নাম বেশ বড়-সড়, সবাই এক ডাকে চেনে। তার কাজটা অবশ্য বিশাল কিছু নয়। কিন্তু মফঃস্বলের প্রাইমারী স্কুল মাষ্টারের ছেলে তো, সে কাজের মূল্য তার কাছে অপরিসীম। খুব মন দিয়ে, মেহনত করে কাজ করে সে, যেরকম ভাবে জয়েন্টে র্যাঙ্ক করে কল্যাণী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করতো সে। দেখতে দেখতে দশ বছর হয়ে গেল চাকরিতে, টিম লিড পজিশনে উত্তীর্ণ হয়েছে, বিয়ে থা এখনও বছর তিনেক দেরী আছে। আশা - এভাবে চলতে থাকলে একদিন ম্যানেজারের পদটা পাবে।
মাইনে-পত্রও সে খারাপ পায় না, আর যেহেতু অবিবাহিত, মাসের শেষে বেশ কিছুটা টাকা তার হাতে থেকে যায়। এই উদ্বৃত্ত উপার্জনটাকেই টার্গেট করে ওই "বক্তিয়ার খিলজির" দল। বেশি টাকাকে আরও বেশি টাকায় রূপান্তরিত করার লোভ তো নেশার মতো। এরা সেই আগুনেই ধুয়ো দেয়।
এমনিতে খুব বেশি চাহিদা নেই বিমলের। সোদপুরে তাদের একতলার বাড়িটার দোতলা পাকা করা, একটা মোটামুটি গাড়ি, সময়মতো একটা স্ট্যান্ডার্ড বউ, এছাড়া ওই টুকটাক অল্পস্বল্প জামাকাপড়, বই-পত্তর। ব্যাস এইটুকুই।
আর একটা আশা আছে তার, কর্মসূত্রে বিদেশ যাওয়ার এবং গিয়ে বছর খানেক থাকার। ইতিমধ্যে এক-দুবার ইংল্যান্ডে গেছে সে, আর গিয়ে ভালো লেগে গেছে। সে এমনিতেই বেড়াতে ভালোবাসে, বিশেষ করে ইউরোপ তার স্বপ্নের জায়গা। পিঠের একটা ব্যাকপ্যাকে দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে দিন তিনেকের জন্য বেড়িয়ে পড়তে পারলে সে আর কিছু চায় না।
***********************
রোজকার নিয়মমতো আজকেও মকবুলের দোকানে চা খেতে নামল বিমল। সঙ্গে আরও তিন জন কলিগ - সুমন্ত, অসীম দা, সোনালি দি। বিকেলটা এখনও লাল হয়ে আছে, সূর্য অস্ত যেতে একটু দেরী আছে। অফিসের বাইরের "ঝুপস" মানে খাবার দোকানগুলো বিকেলের জন্য সেজে উঠছে। একটু দূরে জিলিপি ভাজা হচ্ছে, তার পাশে ফিস-ফ্রাই,চপ, কাটলেট, অনতিদূরে ঝালমুড়ি-ওয়ালা বসেছে পসার সাজিয়ে, এমনকি শোওয়ারমা-র দোকানও খুলেছে নতুন।
পাশের চায়ের দোকানটার সামনে একটা ছেঁড়া জামা-কাপড় পরা পাগল এসে "আমাকে একটা চা আর দুটো বিস্কুট দে না...আমার কাছে অনেক কয়েন আছে, তোকে দেবো। জানিস কতো কয়েন আছে? কুড়ি হাজার কয়েন আছে..." চায়ের দোকানের ছেলেগুলো হেসে কুটোপুটি। বলছে, "কাকা, এই তো আগের হপ্তায় দশ হাজার ছিল, এর মধ্যে কুড়ি হাজার হয়ে গেল? ডিম পাড়ছে নাকি?" পাগল বলল, "হাসছিস?" বলে গালাগাল করতে লাগল। বিমল দেখল পাগলকে দেখতে কিন্তু কিছুটা ভদ্রলোকের মতোই, মানে গোঁফ দাড়ি কামালে আর কি...
"ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে কাজ করেছিস?" এমন সময়ে গম্ভীর মুখে অসীমদা জিজ্ঞাসা করল।
- "ওই একটু আধটু..." জবাব দেয় বিমল, "সারটিফিকেশনটা করে রেখেছি..."
অসীম দা হাল্কা হাসল, "কাজের ছেলে তো...সামনের বছর প্রচুর কাজ আসছে, লেগে থাক। অনশোর থাকার চান্স আছে..."
মনটা খুশি হয়ে ওঠে বিমলের। এই কিছুদিন আগে অরিন্দমদার সাথে হঠাৎ কথা হয়েছে। সেই অরিন্দমদা, জয়েন করার সময় থেকে আলাপ, দুর্দান্ত কাজ করতো লোকটা। পুরো সুপারস্টার। কতো ডোমেনে যে কাজ করেছে হিসাবের বাইরে। এখন থাকে জার্মানির মিউনিখে, ওখানকার কোম্পানিতে কাজ করে। সত্যি ধক আছে লোকটার কিছু।
অরিন্দমদা যে বিমল কে মনে রেখেছে সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। অনেক কথা হোল, পুরনো দিনের গল্প, তখন বিমল শিফটে কাজ করতো।
নাইটে একদিন অরিন্দম দার সঙ্গে শিফট পড়েছিল। ও, অরিন্দমদা আর ভেঙ্কট মিলে অফিস মাইক্রোওয়েভে ম্যাগি বানিয়ে খাওয়া হয়েছিল। সে এক মজার সময় ছিল। তারপর তাদের সেই স্কিটের গল্প, ছোট্ট একটা স্কিট করেছিল তারা প্রজেক্টের সবাই মিলে। অরিন্দমদার ডিরেকশন। খুব আনন্দ হয়েছিল।
কথায় কথায় এক ঘণ্টা যে কোথা দিয়ে কেটে গেল টের পেল না বিমল। একেই বোধয় বলে "জার্নি ডাউন দ্য মেমোরি লেন"।
কথার শেষে অরিন্দমদা জিজ্ঞাসা করল, "এদেশে আসবি নাকি? কোন প্ল্যান আছে?"
বিমল তো এক পায়ে খাড়া, তাও উচ্ছ্বাস কিছুটা চেপে রেখে বলল, "হ্যাঁ ভালো অফার পেলে...অবশ্যই"
- "ঠিক আছে, সিভিটা আমাকে পাঠিয়ে রাখিস, দেখছি কি করা যায়..."
***************************
সেদিন কাজ মিটতে মিটতে প্রায় দেড়টা বেজে গেল। ক্লায়েন্ট এস্ক্যালেশন করেছিল, সেটাকে শান্ত করে সব কাজ শেষ করতে করতে দেরী হয়ে গেল।
বিমলের টিমের দোষ নয়, কিন্তু এস্ক্যালেশন হলে যা হয়, ম্যনেজারদের মাথা গরম থাকে। তাই শান্তনুদা কলের মধ্যে হঠাৎ বিমলকেই ঝেড়ে দিলেন। আই টি তে এরকমটা আকছার হয়, কিন্তু আজকে বিমলের একটু খারাপ লেগেছিল। নিজের পজিশন ক্ল্যারিফাই করাতে অবশ্য শান্তনুদা তাকে আলাদা করে ফোনে সরি বললেন। কিন্তু কাজের ঝামেলা, এস্ক্যালেশন, তিন ঘণ্টা টানা মিটিঙের শেষে বিমলের একটু টায়ার্ড লাগছিল বইকি। তার মধ্যে ফেব্রুআরির ঠাণ্ডা-গরম লেগে শরীরটা একটু খারাপও ছিল। ল্যাপটপটা ভাঁজ করে বিমল একটু চুপ করে শুল। এমনিতে মা-বাবা দক্ষিণ দিকের ঘরেটায় শোন। পুবের এই ছোট্ট ঘরটা ওর রাজত্ব। এর সঙ্গে লাগোয়া একটা ব্যালকনি আছে। বাইরে এসে দাঁড়ালে ঝিরঝিরে হাওয়া দেয়, আর দূর থেকে রেল লাইন দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে, দেখা যায়। ঘটাং-ঘটাং, ঘটাং-ঘটাং...
আজকে অবশ্য বিমলের কিছুই ভালো লাগছিল না। এমনকি সিগারেট খেতেও না। ক্লান্ত লাগছিল। এমনিতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘণ্টা-খানেক বই পড়ারনা সিনেমা দেখার অভ্যেস তার। কিন্তু আজকে হবে বলে মনে হচ্ছে না। চোখ বুজে বুজেই বিমল শুনতে পেল, দূরে একটা বাচ্চা কাঁদছে, পাশের বাড়ির শ্রাবণীর মেয়েটা বোধয়, শ্রাবণী ওর থেকে মাস ছয়েকের ছোট ছিল, এক ক্লাসেই পড়ত, দেখতে খারাপ ছিল না, উচ্চ-মাধ্যমিকের আগে বিমল ওকে একবার ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস বুঝিয়ে দিয়েছিল বলে খুব মিষ্টি করে হেসেছিল, ঠোঁটের তলায় একটা তিল ছিল মেয়েটার, মনে আছে বিমলের। যাইহোক, শ্রাবণীর উত্তরপাড়ায় বিয়ে হয়ে গেছে অনেক দিন, হাসব্যান্ড আবার নাম-করা উকিল, মস্ত গোঁফ আছে, আলাপ করাতে বিমলকে বলেছিল...
"ক্রিইইইইং...ক্রিইইইইং...ক্রিইইইইং" বিরক্ত হয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল বিমলের। "ইস, ফোনটা সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছিলাম..." ভাবল সে।
কিন্তু ফোনের নাম্বারটা দেখেই বিমল তড়াক করে উঠে বসল। অরিন্দমদা !!!
ফোনটা ধরেই বিমল, "আরে অরিন্দম দা, কি খবর বল? কেমন আছো?"
- "এই তো চলে যাচ্ছে ভাই, তোর কি খবর? এদিকে আসার কিছু ভাবলি?"
- তোমাকে পাঠালাম যে সি ভি...
এইভাবে কথা এগোতে থাকে। প্রথমে বিমল ভেবেছিল অরিন্দম দার হাতে এক্ষুনি কিছু একটা জব আছে বোধয়। তাই-ই ফোন করেছে। কিন্তু কথা এগোতে ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, সেরকম ব্যাপারটা নয়। জবগুলো যেমন উড়ে বেড়াচ্ছিল, তেমনই উড়ে বেড়াচ্ছে। অরিন্দমদা বড়জোর আঁকশিটা বাড়িয়ে রেখেছে ওর জন্য...হয়তো...
যাইহোক, তাই-ই বা কম কিসের? ভেবে একটু অধৈর্য হয়েই ঘড়ির দিকে তাকাল বিমল। দুটো পাঁচ বাজে। সবে বুধবার আজ, কাল আবার যুদ্ধ আছে।
এরকম সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই বিমল শুনল অরিন্দম দা ফোনে বলছে, "শোন না, তোকে একটা কথা বলার ছিল। একটা বিজনেস প্রপোজিশন..." বলে একটু ভাষণ দেওয়ার মতো করে বলল, "দেখ, আমরা সবাই জানি আমরা যা রোজগার করি, সেটা যথেষ্ট নয়। এখন এর সঙ্গে যদি সাইড ইনকাম কিছু করা যায়, মানে উইকে মাত্র ঘণ্টা তিনেক দিলেই হবে, বাড়ি বসে বসে টাকা কামাবি তুই, প্রায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলা যায়...হে হে.."
অরিন্দম দা আরও অনেক কিছু বলে যায়, বিমলের মাথা ভোঁ ভোঁ করে, কানে আর কিছু ঢোকে না। অরিন্দম দা, যে কিনা জার্মানিতে বসে লাখ লাখ ইউরো কামায়, যে কিনা তার দেখা সেরার সেরা লোক ছিল, সে রাত্তির দুটোর সময় ফোন করে এসব বলছে !!
অভ্যেসবশত বিমল জিজ্ঞাসা করে বসে, "তোমাদের প্রোডাক্ট টা কি? নাকি কিছু সার্ভিস?"
উত্তরে অরিন্দম দা কিছুক্ষণ চুপ করে তারপর হেসে বলে, "কি দরকার তোর প্রোডাক্ট- সার্ভিসের? এখানে টাকা রাখলে তুই এক বছরের মধ্যে চারগুণ রিটার্ন পাচ্ছিস কিনা, বল? ধর তুই আজকে দু লাখ টাকা দিয়ে আমার থেকে কয়েন কিনলি, তোর কাছে ধর দুহাজার কয়েন হোল, এর জন্য কোম্পানি তোকে মাসে মাসে দুটো করে কয়েন তোর একাউন্টে অ্যাড করবে কমিশন হিসাবে। এরপর তুই যদি কাউকে তোর আন্ডারে অ্যাড করিস, তখন কয়েনগুলো বেচতে পারবি, তখনকার দামে...বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা? এই তো আমাদের সাথে আছে ই এন্ড ওয়াই-এর মার্কেটিং হেড..."
বিমল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ঘড়ির দিকে তাকায়। দুটো পঁচিশ। প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।
তারপর বলল, "ঠিকাছে অরিন্দম দা, বুঝলাম। বলছি এখন একটু বাথ্রুম যাবো, ভেবে জানাচ্ছি তোমাকে ..."