গল্প - কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
Posted in গল্পভার্চুয়াল রিয়ালিটি
কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
কুর্চি নামটা অদ্ভুত লেগেছিলো সন্দীপের৷ সন্দীপের গল্প, কবিতার প্রশংসা করতো কুর্চি৷ ডিপিতে কুর্চি ফুলের ছবি দেখে সন্দীপ রাজী হয়নি ৷লাগাতার রিকোয়েস্ট মেসেজ আসছে অগত্যা...৷
সুন্দর করে লেখে মেয়েটা... যাকে বলে তন্নিষ্ঠ পাঠিকা৷ বছর বত্রিশের জীবনটা বেশ ঝলমলে রঙীন হয়ে উঠেছে কুর্চির আগমনে৷
— আপনার ক্লান্ত চাঁদ কবিতায় "গর্ভিনী চাঁদ" এর ইমেজারিটা বেশ ভালো লাগলো, একটা মলিন বিষণ্ণতা আছে জানেন৷
সন্দীপ মুগ্ধ হয়৷ মুগ্ধতা কি দুর্বলতা আনে? ফেসবুকে দেখতে থাকে কেন? রোজ কুর্চির প্রতিক্রিয়া এলো না কি?
কুর্চি এখন মেসেঞ্জারে মেসেজ করে ৷ অনেক রাতেও সবুজ আলো জ্বলতে থাকে ৷ বিনিদ্র রাত কাটতে থাকে দুজনের ৷
—কুহুকে এত কষ্ট দেন কেন? নারী জন্মে কষ্ট পেতে পেতে জীবনটাই দুর্বিষহ হয়! আপনার লেখাতেও কুহুর কষ্ট ৷ ভালো লাগে না৷
অবুঝ, বাচ্ছা মেয়ের মতো যেন ঠোঁট ফোলায় যেন কুর্চি৷ বেশ অনুভব করে সন্দীপ ৷ দেখতে পায় মানসচক্ষে ৷ কুর্চি বনে বসন্ত আসে কি? সন্দীপ এটুকু বোঝে শরৎ মেঘের মতই কখনো হাসতে কখনো কাঁদতে থাকে তার তন্নিষ্ঠ পাঠিকা৷
কদিন কুর্চির ডিপি বন্ধ ৷ ফোন নম্বর দিয়েছে কুর্চি অবশ্য৷ সুশান্ত সিং রাজপুত যেদিন আত্মহত্যা করলো কুর্চি লিখেছিলো মৃত্যু তো হেরে যাওয়া ৷ অনেকক্ষণ চ্যাটবক্সে দুজনের কথা লেখা হয়েছিল৷ উত্তর আর তার প্রত্যুত্তর ৷ কুর্চির কোটেশান দেখে সন্দীপ তাজ্জব হয়ে গেছিল ৷ সন্দীপের সব উপন্যাস গল্পের চরিত্রের মুখের সংলাপ মুখস্থ তার পাঠিকার৷
সাতদিন হলো কুর্চির দেখা নেই ৷ সন্দীপ চিন্তা করতে থাকে ৷ একটা দুশ্চিন্তা গ্রাস করে ৷ কী হল কুর্চির?
মনের দোলাচলে ভাসতে ভাসতে শেষে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় ...
অনেকক্ষণ ফোন বাজার পর একটা মহিলা কন্ঠ ধরে৷
—হ্যালো! আমি লেখক সন্দীপ বসু, কুর্চির সাথে কথা বলবো..
কান্নায় ভেঙে পড়ে অপর প্রান্তের মহিলা ৷ "বাবা, তিনদিন হলো কুর্চি মারা গেছে৷ ক্যানসারের থার্ড স্টেজ…"
হাত থেকে মোবাইলটা খসে পড়ে৷
এসব কিছুই বলেনি কুর্চি৷ এই নাকি বন্ধুত্ব! সন্দীপ ভাবতে থাকে এ জগতে সবই ভার্চুয়াল৷ এটাই রিয়ালিটি৷ কুর্চি গোপন করেছে সব কিছু ৷ চায়নি সহানুভূতি আদায় করতে৷ সন্দীপকে বিব্রত করেনি চরম কষ্ট সহ্য করেও৷ পাছে লেখার ক্ষতি হয় ৷ আশ্চর্য এক চরিত্র! কতটুকু চেনা যায় বাইরে থেকে! এ তো অনন্ত জিজ্ঞাসা৷
সন্দীপ ভাবতে থাকে ৷ লেখক জীবনে একটা বিরাট দায়বদ্ধতার পাশাপাশি অসীম শক্তি আছে৷৷ সবকিছু টাইমমেশিনে সে ফিরিয়ে আনতে পারে ৷ হাতের কলমটা নিয়ে রাইটিং প্যাডটা নিজের দিকে টেনে নেয় লেখক সন্দীপ বসু।
আনবে সে কুর্চিকে ফিরিয়ে তার লেখায়৷ আবার আসবে কুর্চিবনে বসন্ত৷