Next
Previous
0

পথে প্রবাসে - শিবাংশু দে

Posted in




টোটো-কোম্পানি

আমার ভারতবর্ষ-৯

আকবর বাদশা ও একজন বাঙালি কেরানি

যমুনা নদীর পাশে জায়গাটা আকবর নিজের সমাধির জন্য আগেই বেছে রেখেছিলেন। গ্রামটার নাম সুলতান সিকন্দর লোদির নামে ছিল, সিকন্দরা। কিন্তু কাজে হাত দেবার আগেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেলো। শাহজাদা সলিম আদেশ করলেন তাঁর ওয়ালিদের সম্মানের সঙ্গে মানানসই একটা স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করার জন্য। তিন বছর কেটে যাবার পরেও ১৬০৮ সালে সলিম (তখন জহাঙ্গির) গিয়ে দেখেন কাজ অসমাপ্ত। তার উপর যতটুকু নির্মাণ হয়ে ছিল তা তাঁর পছন্দ হলো না। পুরো ভেঙে দিয়ে আবার
কাজ শুরু হলো। ঠিক কতদিন আরও লেগেছিল লেখা নেই। সম্ভবত ১৬১৩-১৪ সাল নাগাদ কাজ শেষ হয়। খরচ হয়েছিল পনেরো লাখ টাকা। লাল কোটা পাথর আর শাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই সৌধটির ক্যালিগ্র্যাফির দায়িত্বে ছিলেন ইরানের শিরাজ থেকে আসা শিল্পী আবদুল হকশিরাজি। এই স্থাপত্যটির বৈশিষ্ট্য এর অতিসূক্ষ্ম কারুকাজ আর সংহত বিশালত্ব। আকবর বাদশার আসল সমাধিটি রয়েছে প্রথামতো সৌধটির মেঝের নীচে।
দিল্লিতে হুমায়ুঁর সমাধিটির স্থাপত্য আর আকবরের সমাধি সৌধের নক্শা একেবারে আলাদা। হুমায়ুঁর সমাধিসৌধের পরিকল্পনা মধ্য এশিয়ার ধরনে করা হয়েছিল। যা কেতিমুরিদ স্থাপত্য বলা হয়। কিন্তু আকবর বাদশার সমাধি সৌধটি ভারতীয় ও ইসলামি স্থাপত্যের বিশ্রুত সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কী, তাজমহলের প্রকৃত পূর্বসূরি হিসেবে এই নির্মাণটির কথাই মনে পড়ে।

অওরঙ্গজেবের সময় ভরতপুরের বিদ্রোহী জাঠ সর্দার রাজারাম জাঠ আকবরের সমাধি লুণ্ঠন করে বহু কিছু ধ্বংস করে দেন। এমন কী আকবরের সমাধি খুঁড়ে তাঁর দেহাবশেষকেও অসম্মানিত করেন। যদিও পরে অওরঙ্গজেব রাজারামকে পরাজিত করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন, কিন্তু আকবরের সমাধির বড়ো ক্ষতি হয়ে যায়। ইংরেজরা আসার পর প্রথমে লর্ড নর্থব্রুক ও পরে লর্ড কার্জনের পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধিটির পূর্ণ সংস্কার করা হয়।



যাঁরা মন দিয়ে এই নির্মাণটি দেখেছেন, তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু যাঁরা দেখেননি তাঁরা প্রথম সুযোগেই যেন দেখে নেন। আমাদের ঐতিহ্যে এই সমাধি সৌধটির জুড়ি নেই।