Next
Previous
0

ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়

Posted in

 




















চতুর্থ পর্ব

এই সময়ের কিছু কোলাজ:

এক, মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের জন্মদিন। উনি সাফারী স্যুট পরে হাসিমুখে বসে আছেন। সমানে লোকজন আসছে। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, পলিটিক্যালি করেক্ট বিহেভ করনেওয়ালা সমাজসেবী সংগঠন, কিচু এন জি ও। সবাই ফুলের তোড়া দিচ্ছে, কেউ কেউ পা' ছুঁয়ে আশীর্বাদ চাইছে। চমকাচ্ছে ফ্ল্যাশবাল্ব, চারদিক থেকে বন্দুকের ভোঁতা নলের মতন উঁচিয়ে আছে ভিডিও ক্যামেরা। আর সত্যিকারের বন্দুকও অগুনতি, আমরা যে মাওবাদী হামলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের নিবাসী!

এমন সময় বিবাদী সুর! রেণুবালা গুপ্তা ও রত্না রায় নামে দুই মহিলা ঢুকে শুরু করেছে প্যাচাল পারা,--- আপনার রাজ্যে আমরা কি ভাবে আছি! আপনার পুলিশের সঙ্গে সাঁঠগাঁঠ করে আমাদের বিল্ডার মাফিয়া ঘরছাড়া করেছে। ওদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৯৫ ধারায় ডাকাতির মামলা রুজু হওয়ার পরেও কেন আজ অব্দি কেউ গ্রেফতার হয় নি? আমরা ভাড়া বাড়িতে রায়পুরে কতদিন এভাবে থাকবো?

ক্যামেরা চমকাতে থাকে, ভালো বাইট!

মুখ্যমন্ত্রী হতভম্ব! এই সক্কালে যে বিলাসপুর থেকে জনাদশেক মেয়েমদ্দ-ছেলেছোকরা এসে ফুলদেয়ার সাথে সাথে কান্নাকাটি করে গেল! বিলাসপুরের পুলিশ নাকি রায়পুরের বড়কত্তাদের চাপে মেয়েমদ্দ-বুড়োহাবড়া-কোলের বাচ্চা সবার নামে ডাকাতির মামলা লাগিয়ে রোজ থানায় ডেকে জিগ্যেসাবাদের নমে পরেশান কচ্চে?

এরা আবার কি বলে! কোনটা সত্যি?

ছত্রধর মাহাতো না অর্ধেন্দুশেখর!

ইতিমধ্যে রেণুবালা হাউ হাউ করে এক বালতি কাঁদে। কাটা চুল, সিঁদুরবিহীন, আধুনিক পোশাকের চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই মহিলার কান্না, মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যস্ত।

ক্যামেরা চমকায়!

এবার বেসুর নয়, একেবারে ক্যাকোফনি! হার্মোনিয়ামের বেলো ফেটে গেছে। রত্না রায় মধ্যসপ্তকের কোমল নিষাদে কেটে কেটে ইংরেজিতে বলে-- Hon'ble Chief Minister! Don't u find it strange that -- blaa-blaa-blaa!

ক্যামেরা আর ভিডিও প্রচন্ড স্পীডে চলে।

রমন সিংহের চোয়াল ঝুলে পড়ে।

সন্ধ্যেবেলায় হরিদাস পাল বলে-- খামোকাই ইনজিরি খরচ করলে! উনি কবর্ধার আয়ুর্বেদ ডিগ্রি ধারি ডাক্তার। ঠিকমতো কম্যুনিকেশন হল না, খালি তোমার গায়ের ঝাল ঝাড়া হল, ব্যস্‌।

রত্না বলে-- কিছু একটা তো হল।

কিন্তু পরের দিন দু'গাড়ি পুলিস বৈশালি প্রাইডে পৌঁছোয়। ঘরে ঘরে গিয়ে নাম জিগ্যেস করে। সবাই জানায় ঐ নামে কেউ এখানে থাকে না। বাইরে গেছে, ইত্যাদি।

কয়েক ঘন্টা পরে পুলিশ খালি হাতে ফিরে যায়।

পরের দিন রেণুর স্পাই , মন্দিরের পূজারী খবর পাঠায় যে সবাই বিল্ডারের ঘরে সারাদিন লুকিয়ে ছিল।


কোলাজ-২

সমস্ত পত্রিকায় বেরুলো যে এই ব্যাপারটার তদন্ত করতে একটা জেলাস্তরের কমিটি তৈরি হয়েচে।

মি: কে এল ধ্রুব, এস পি (রুরাল)এর মুখ্য তদন্তকর্তা অফিসার। ওর অধীনস্থ একজন ট্রেনি ডি এস পি ও আর একজন নিকটস্থ থানার দারোগা জয়সোয়াল। রায়পুরের পুলিশের বড়কর্তারা বল্লেন-- কমিটির সঙ্গে কো-অপারেট করুন। যা যা জানতে চায় বলে দিন। একটু দেরি হবে, কিন্তু আখেরে ভাল হবে।

হরিদাস পাল রঞ্জন স্টেটমেন্ট দিতে বিলাসপুরে এস পি অফিসে গেল।

যে লিখবে সে প্রথমে লিখলো--"" মাইক থ্রি দ্বারা আদেশিত হইয়া আমি ইহা লিপিবদ্ধ করিতেছি-----""

এ আবার কি? হরিদাস পাল জানলো যে মাইক ওয়ান মানে জেলার আই জি। মাইক টু হলেন এস পি, থ্রি এস পি( রুরাল)।

সব তো হোলো, এখন এনকোয়ারি কবে শেষ হবে? কবে আই পি সি ৩৯৩ ধারাতে ওরা গ্রেফতার হবে?

হবে , হবে। ধৈর্য্য ধর। আরো একটু বাকি।

-- আচ্ছা, অত লক্ষ টাকার গয়না সত্যিই সেদিন আপনার কাছে ছিল? বানিয়ে বনছেন না তো? কোন প্রমাণ আছে? আর সেদিন আশি -নব্বুই হাজার টাকা আপনাত ঘরে কোত্থেকে এল? মানে হটাৎ? কোন প্রমাণ আছে?

রেণুবালা গয়না কেনার তিনটে রসীদ দেখায়,দুটো ওদের হরিয়ানার মহকুমা শহর ক্যায়্‌থালের, আর একটা বিলাসপুরের, গণেশ জুয়েলার্সের।

তিনদিন পরে হঠাৎ মোবাইলে বাজে বিলাসপুরের জুয়েলার্সের ভয়ে কাঁপা কন্ঠস্বর।

--দিদি! আপনি কোথায়? আপনার সঙ্গে দেখা হওয়া খুব জরুরি। ওরা আমাকে--- ওরা আমাকে--।

ফোন কেটে যায়, এমন হল দুদিন। তারপর রেণু ও রত্না ওই দোকানে বাচ্চাছেলেটার সঙ্গে দেখা করতে গেল।

দোকান বন্ধ, মস্ত তালা ঝুলছে। পাশের দোকানে জানা গেল যে ও শ্বশুরবাড়ি মুঙ্গেলী শহর গেছে কদিনের জন্যে। এও জানা গেল যে বিল্ডারের লোকজন ও স্থানীয় পুলিশ ওকে ধমকেছে।


কোলাজ-৩

হরিদাস পাল ঠিক করলো এমনি করে চলতে পারে না। ভাল উকিল ধরে বিল্ডারের বিরুদ্ধে নকশায় ঠকানোর ( মানে ওদের ফ্ল্যাট নম্বর ২০৫ ও ৩০৫ সামনের সারিতে, কিন্তু ওদের ঠকিয়ে পেছনের সারিতে ২০৫ ও ৩০৫কে জবরদস্তি গছানো হয়েছে। এবং কমন লিফট প্যাসেজে না থেকে শুধু ওদের দুটো ফ্ল্যাটের মধ্যে দিয়েই উঠেছে।ইত্যাদি) অপরাধে পেনাল কোদের ধারা ৪২০এ একটা ক্রিমিনাল কেস এবং ওই একই ডকুমেন্ট এর জোরে কনজিউমার ফোরাম স্টেট লেভেল এ ২০লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে কেস লাগানো হোক।

ঠিক হোল ক্রিমিনাল কেস প্রবীণ সরদানা নিজে করবে, কোন পয়সা নেবে না। ও নাকি হরিয়ানায় ভাল ক্রিমিনাল প্র্যাকটিস করত। রেণুর সঙ্গে প্রেম , বৌয়ের ডিভোর্স না দেয়া এইসব ঝমেলায় শহর ছেড়ে বিলাসপুরে চাষবাস করতে এসেছে, আমার কপালে জোটেও একেকটি স্যাম্পল।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ৪২০ এর পিটিশন পড়ে সিভিল লাইনস্‌ পুলিশকে তদন্ত করে একমাসের মধ্যে রিপোর্ট সাবমিট করতে বল্লেন। হরিদাস পাল খুশ হুয়া, কিছু তো হচ্ছে।

তারপর উপভোক্তা ফোরামের উক্লিলকে নিয়ে ঘর দেখাতে নিয়ে গেল রত্না আর রেণুবালা।

গিয়ে ওদের চক্ষুস্থির!

রেণুবালাদের ২১০ নম্বর ফ্ল্যাটের সেই ভাঙা দরজা এনে্‌কায়ারি অফিসার বিল্ডারকে দিয়ে খুলিয়ে রায়পুরে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্যে পাঠিয়েছে।

-- মশাই! আমার তালা ভেঙে বিল্ডারকে দিলেন কি করে?

-- না, মানে আপনি তো আর আসবেন না। কজেই--।

--ইয়ার্কি পেয়েছেন? অগ্রিম ভাড়া দেয়া আছে। আমি আবার এখানেই থাকবো। আপনি আমার তালা ও দরওজা ফেরৎ আনুন।

-- আর কতদিন লাগবে?

-- আগে থেকে কি করে বলবো? আমার আরো অনেক কাজ আছে।

---কোন টাইম ফ্রেম?

--- বলা মুশকিল! আর আমি আমার বড়কত্তাদের জানাবো। পিটিশনারদের জানাতে বাধ্য নই।

রত্না বলে-- আমরা হাইকোর্ট যাচ্ছি।

-- যান, সেখানে জবাব দেব, আপনাদের নয়।

ইতিমধ্যে দরজা লেগে যায়, প্রায় দুমাস বাদে।

আর রেণু ঘটনার আগের দিন ব্যাংক থেকে একলক্ষ টাকা তোলার প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক থেকে কম্পুটারাইজড্‌ স্টেটমেন্ট দেয়।

বিজলী বিভাগের কনজিউমার ফোরাম রত্নার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু স্থানীয় বিজলী বিভাগের অসহযোগ ও বিল্ডারের কথায় দিনকে রাত করার চেষ্টা স্পষ্ট হয়।

ইতিমধ্যে কিছু কমিক ইন্টারল্যুড ঘটে।

হরিদাস পাল ট্রেনে সহযাত্রীর কাছে জুতোচুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়। এছাড়া ব্যাংকে এক সেক্স ওয়ার্কার মহিলাকে লোন দেয়ার ব্যপার নিয়ে কেউ কেউ ওর স্ত্রীর কানে গুজগুজ-ফুসফুস করে।


কোলাজ-৪:

সন্ধ্যের দিকে ফেরার ট্রেন ধরতে গিয়ে রঞ্জন দেখলো লিংক এক্সপ্রেসে বড্ড ভীড়। এস-৪ এ উঠে বসার জায়গা খুঁজছে এমন সময় একটি অল্পবয়সী ছেলে এসে বল্লো-- আরে, এই যে বাঙ্গালীদাদা! আসুন, আসুন! চলুন আমার সঙ্গে।

সে চেপে ধরলো রঞ্জনের মেয়েলী হাত আর টেনে নিয়ে চললো। ভাবলাম বোধহয় আমার জন্যে বসার জায়গা রেখেছে। কিন্তু এই জাস্ট মুখচেনা ছেলেটির আমার জন্যে হটাৎ প্রেম?

রেলের কামরার শেষের দিকে নিয়ে দাঁড় করালো একগাদা অল্পবয়েসী ছেলেমেয়েদের সামনে। ওরা কৌতূহলের চোখে আমাকে দেখছে।

--- আপনি আজ সকালে আমার চটিজোড়া নিয়েছেন। আমার ভোগান্তির একশেষ। জানেন, বাধ্য হয়ে, এই মাসের শেষে পাঁচশো টাকা দিয়ে আজ একজোড়া জুতো কিনতে হল! সব আপনার জন্যে।

বলে কি রে! আমার চটি তো আমার পায়েই আছে। অন্যের চটি কেন নেব?

--- আরে দাদা, চোখের মাথা খেয়েছেন। একবার ভালো করে পায়ের দিকে তাকান।

কিছুই বুঝিনে, আমার পায়ে আমারই কালো চটি।

ও তখন বাংকের ওপর থেকে ওর থলে নামায়। হাতড়ে পলিথিনে মোড়া একজোড়া চটি মেজেতে আছড়ে ফ্যালে। কি আশচর্য! চটি জোড়া যে প্রায় আমারই মত দেখতে।

-- আপনি ভালো করে পায়ের দিকে তাকান। আপনার ডানপায়ের চটিটা আপনারই, কিন্তু বাঁ-পায়েরটি আমার। সকালে ট্রেনে যাওয়ার সময় আপনি চটি জোড়া পালিশ করিয়ে সীটে ঠ্যাং তুলে বই পড়ছিলেন আর আমি বাংকে শুয়েছিলাম।

ভাটাপাড়া স্টেশন এল, আপনি বই বন্ধ করে হুড়মুড়িয়ে চটি গলিয়ে নেমে গেলেন। দেখলেন না যে দু পায়ে দুটো আলাদা জোড়ার চটি। হ্যাঁ, দেখতে মিল আছে, তবে ডিজাইনটা একটু আলাদা। আমি ওপর থেকে নেমে দেখি এই কান্ড! আপনি মশাই দুপায়ে আলাদা জোড়া পরে সারাদিন ব্যাংকে কজ করতে পারেন, আমি পারিনে। মুখচেনা, আজ নয় কাল দেখা হবে ধরে নিয়ে এই অসবর্ণ চটিজোড়া প্যাক করে ব্যাগে ঢোকালাম।আর পাঁচশো টাকা দিয়ে জুতোজোড়া কিনলাম। অফিসে তো খালি পায়ে যেতে পারিনে। আপনি মশাই কিভাবে ব্যাংক চালান ভগাই জানে। আমার অহো ভাগ্য আজই আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নিন, একপায়ের চটি অদলাবদলি করে কেতাত্থ করুন। চ্যাংড়া-চিংড়িগুলোর হাসি থামতেই চায় না।

আমি সরি, সরি বলতে বলতে বাতহ্রুমের দিকে সরে যাই। ওখানেই থাকি রায়পুর স্টেশন না আসা পর্যন্ত।

মোবাইল বেজে ওঠে। রত্না জানায় যে বিজলী বিভাগ থেকে ওরা নাকি লিখিয়ে নিয়েছে যে ১৯শে সেপ্টেম্বরের ঘটনার দিন নাকি কোন হুকিং হয় নি। সবটাই আমাদের বানিয়ে বানিয়ে বলা!


কোলাজ-৫:

রঞ্জনের নামে প্রমোশনের জন্যে ইন্টারভিউ দেয়ার চিঠি এসেছে। ও জানে যে সিনিয়রিটিতে একেবারে সামনের দিকে এবং রেকর্ড ভালো হওয়া সঙ্কেÄও অলিখিত নিয়মে ওর প্রমোশন হবে না। কারণ, মাত্র সাত মাস বাকি রিটায়ার হতে, আর প্রবেশন একবছরের। কিন্তু শো' বজায় রাখতে ইন্টারভিউয়ে ডাকা।

রঞ্জন ভাবে খেলাটা হিমুসায়েবের মত খেলতে হবে। কি করে?

এই ব্যাপারটা সবাই জানে না। ফলে ইন্টারভিউয়ের সাতদিন আগে ডাকযোগে চেয়ারম্যান ও বৌয়ের কাছে একটি বেনামী কমপ্লেন আসে।

রঞ্জন রায় চরিত্রহীন। ও ভাটাপাড়ার প্রখ্যাত নগরবধূ রাজিম বাঈ কে বিশেষ কনসিডারেশনের বদলে ৫০০০০/- ব্যাংক লোন দিয়েছে। ফলে ওর প্রমোশন হওয়া দূর কী বাত, মর‌্যাল টার্পিচুড এর দায়ে চাকরি যাওয়া উচিৎ।

অবশ্যি এতে ব্যাংকের কোন হেলদোল হল না। আর রত্না রায় দাঁত বের করে বন্ধুদের বল্লো যে ও হচ্ছে ভীতুর ডিম। এদিক ওদিক অ্যাফেয়ার করতে যেটুকু সাহস লাগে তাও ওর নেই। তায় নগরবধূ!!

তবে এটা জানি যে রঞ্জনের একটা ব্যামো আছে, তাহল নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা দেখানোর চেষ্টা, ছোটবেলা থেকেই। একধরণের এগজিবিশনিজম্‌।

এদিকে ইন্টারভিউয়ের দিন এল। রঞ্জন প্রাণপণে হিমু হবার চেষ্টা করতে লাগলো।

ইন্টারভিউএ হাসি হাসি মিখ করে প্রথমেই বল্লো--- যে মাননীয় বোর্ড যদি অনুমতি দেন তবে শুরুতেই আমি কিছু নিবেদন করতে চাই।

অনুমতি পেয়ে বল্লো যে আমার সাতমাস বাদে রিটায়রমেন্ট, আমার মাথায় পোস্ট রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং ঘুরছে। কাজেই আমার মতে আমি এই প্রমোশনের যোগ্য নই। আমার সেই কলিগদের প্রমোশন দেয়া হোক যারা অনেক অনেক দিন ব্যাংককে সার্ভ করবে, মোটিভেট হয়ে বেটার আউটপুট দেবে।

বোর্ডের সদস্যরা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল।

তাহলে এবার আমাকে যাবার অনুমতি দিন।

-- দাঁড়াও, তুমি ব্যাংকের থেকে হ্যাপি হয়ে রিটায়ার হচ্ছ নাকি অন্যভাবে?

--- কি যে বলেন! কোলকাতায় পড়তে পড়তে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের অফার পেয়েছিলাম , আর ভিলাইয়ে বাবা রিটায়ার করায় সেখানে ঢোকার। কিন্তু কিরকম একরঙা নীরস জিন্দগী হোত, ভাবুন।

-- কোলকাতায় পড়েছেন? মৌলানা আজাদে? আমি স্কটিশচার্চের।

হিমু স্টেট ব্যাংকের অল্পবয়সী অফিসারের দিকে হেসে বাও করে।

তারপর বলতে থাকে গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ছত্তিশগড়ের আদিবাসে জনজীবনের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে পরার কথা, লেখার কথা। কোন রিসার্চ স্কলার এ সুযোগ পায়না ইত্যাদি।

তারপর ও বলতে থাকে বাংলালাইভের গল্প, গুরুচনডালীর গল্প।

বলতে থাকে মাননীয় চেয়ারম্যান, আপনি যে স্টেট ব্যাংকের স্টাফ অ্যাডমিন্সট্রেটিভ কলেজের অফিস হায়দ্রাবাদ থেকে এসেছেন সেখানে আপনার সহকর্মী অফিসার গুরুচন্ডালীর সুবাদে আমার বন্ধু হয়েছেন।

--- শিবাংশু? শিবাংশু দে'র কথা বলছ? ও তো এখন এইচআর চিফ, নয়?

এইভাবে নানান বকবক করে ও বোর্ডের থেকে পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লাইফের জন্যে শুভকামনা এবং মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে বেরিয়ে আসে।

বৌ হাসে, বলে ঠিক কথা। এখন প্রমোশন হলে সাতমাসের জন্যে বস্তার যেতে। কিন্তু তোমার নিজেকে আলাদা দেখানোর অসুখটা গেল না।

সেইদিনই রত্না যায় পুলিস হেডকোয়ার্টারে। ডিজি'র সঙ্গে আলোচনার সময় তিক্ত স্বরে বলে ডাকাতির চার্জ ধারা ৩৯৫ লাগিয়েছেন, কিন্তু আপনার বিলাসপুরের পুলিশ গ্রেফতর করছে না, এটা কি রকম? ডাকাতির জন্যে পুলিশের কোন আর্জেন্সি নেই? আমরা কতদিন নিজেদের ঘরদোর ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকবো। ডিজি সাতদিন সময় চাইলেন।

না : , এভাবে চলতে পারে না। কিছু একটা করতে হবে। হরিয়ানভী পরিবারটি খালি ওদের দিল্লিতে চেনাজানা, হরিয়ানা গ্রুপের সাপোর্ট ও ছত্তিশগড়ের সবকিছু খারাপ--- এইসব সাতকাহন করে বলতে থাকে।

রঞ্জনের এইসব বারফট্টাই পছন্দ নয়। লার্জার দ্যান লাইফ হিরোরা ওকে কোন দিন আকর্ষণ করেনি। ওর পছন্দ বিষম পরিস্থিতিতে অসম যূদ্ধে অশক্তের সাবভার্সিভ লড়াই।

ওর ছোটবেলার নায়ক ছিল "ঘরে বাইরে''র নিখিলেশ। কিন্তু পরে বুঝলো নিখিলেশের চরিত্রে ফচকেমি নেই। ওর মত ছ্যাবলা লোকের পক্ষে নিখিলেশকে রোল মডেল করা অসম্ভব।

ফলে ওর মডেল হল ঢাকার বাঙ্গাল হিমু আর চেক শোয়াইক। অবশি ডন কিহোতে আর মুল্লা নসরুদ্দিনও ওর খুব পছন্দ।

রঞ্জনের মনে হল বিল্ডারকে যেখানে মারলে ওর খুব লাগবে সেই জায়গাটাতেই হিট করা উচিত। আর অমিত শর্মা নামক এই শূকরশাবকটির দুর্বল স্থান হল ওর বিল্ডারের লাইসেন্স। এমন কিছু করতে হবে যাতে ওর গুডউইল এবং পয়সা আমদানীর স্রোত শুকিয়ে যায়।

ফলে যে রণনীতি তৈরি হল তা এই।

এক, রত্না রায় কাগজপত্তর নিয়ে মুকেশ বনসাল নামে কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত কমিশনার আই এ এস ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করবে।

দুই, রঞ্জন নিজের নামে বিল্ডারের বিরুদ্ধে অ্যাপ্‌র্‌যুভড প্ল্যান অনুযায়ী সামনের রো তে ফ্ল্যাট নাদিয়ে পেছনের রো তে দেয়া এবং লিফটকে প্যাসেজের বদলে রঞ্জনের ফ্ল্যাটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার চার্জে পেনাল কোডের ধারা ৪২০ নিয়ে চিটিং এর কেস লাগাবে,

তিন,এবং ঐ একই ডকুমেন্টের ভিত্তিতে স্টেট লেভেল কনজিউমার ফোরামে ২০লক্ষ টাকা ক্ষতিপূর্তির দাবী জানাবে, যাতে কয়েক মাস আগে বিজলী এবং জলের লাইন কেটে দেয়া ইত্যাদি সব ব্যাপার গুলো থাকবে।

তা উকিল ঠিক হল। কাগজ তৈরি হল। রত্না পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে উকিলকে নকশার সঙ্গে মিলিয়ে ফ্ল্যাট দেখাতে গেল।

গিয়ে দেখল জলের লাইন পুরো কেটে দেয়া হয়েছে। আর জালের দরজা আরও খানিকটা ভাঙ্গা। চারদিক থেকে উঁকিঝুঁকি, উড়ে আসা উটকো মন্তব্য। রায়পুর ফেরার আগে সিভিল লাইনস থানাতে গিয়ে দেখা করে জানতে পারল যে একটু আগে বিল্ডার -পত্নী শিবানী শর্মা ফ্ল্যাটের জনা দুই বাঙালী মহিলাকে নিয়ে এসে থানায় কমপ্লেন করেছেন যে রত্না রায় নাকি ওখানে গিয়ে সবাইকে দেখে নেবার ধমকি দিয়েছে ও রায়পুরের বড় পুলিস অফিসারের নাম নিয়ে চমকিয়েছে, ঝগড়া করেছে। ফলে ওদের প্রটেকশন চাই। রত্না রায়ের ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করা হোক। কিন্তু সঙ্গের পুলিশ কনস্টেবল জানিয়েছে এসব মিথ্যে । ফলে ওদের কমপ্লেন থানা নেয় নি।

কিছু হল। ডকুমেন্ট ফোর্জারি ও অন্যান্য প্রমিসড্‌ শর্ত পূঋন না করায় একজন কনজিউমার ফোরামের অনুভবী উকিল ধরে কেস রেজিস্টার হল।

স্টেট লেভেল ফোরামে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের পিটিশন ডকুমেন্ট চেক করার পর ফোরাম অ্যাকসেপ্ট করে বিল্ডারকে নিয়মানুসার দুমাসের নোটিস দিয়েছে--- ওদের জবাব ফাইল করতে। আমার ক্যালকুলশন হল ৩৬গড়ে স্টেট লেভেলে কেসের ভীড় কম। কাজেরি তুলনামূলক ভাবে তাড়াতাড়ি ফয়সালা হবে। ওরা অ্যাপীল করলে দিল্লিতে মেয়ে দেখে নেবে।

তারপর ওই একই দস্তাবেজের বেসিসে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে পেনাল কোডের ৪২০ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক ধারায় পিটিশন লাগালো হল। ম্যাজিস্ট্রেট সেকশন ২০০( cr.pc ) অনুযায়ী সিভিল লাইনস্‌ পুলিশকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বল্লেন।

আর রত্না রায় ও হরিয়ানা পরিবার রায়পুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তদ্বির করতে লাগলো-- ধারা ৩৯৫ অনুযায়ী ডাকাতির চার্জে ১৬জনকে অ্যারেস্ট করতে কতদিন লাগবে? তাহলে ৩৯৫ এর গুরুত্ব কি থাকে?

ওরা বিলাসপুরে গিয়ে এস পি, আই জি, রুরাল এস পি সবার সঙ্গে কথা বল্লো।

ওদের সেই এক কথা। মিসেস রায়, আপনি গিয়ে ওই বাড়িতে থাকতে পারেন, কিস্যু হবে না। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি।

আর আপনাদের বিরুদ্ধেও তো হরিজন অট্রোসিটি এবং আর্মস্‌ অ্যাক্টের চার্জশীট আছে। আপনাদেরও তো গ্রেফতার করা যায়। রত্না ও রেণু বালা বল্লো- আমরা রাজি। আমদেরও অ্যারেস্ট করুন আর ওই ১৬জনকেও করুন। আজই করুন।

রুরাল এস পি মি: ধ্রুব বল্লেন-- আরে, আজকাল তো জাজকে দশহাজার টাকা দিলে বেইল হয়ে যায়।

এইসব কথাবার্তা অবং ছবি রেণুর ব্লাউজে লুকোনো পেনড্রাইভের ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যায়।এতসব হওয়ার পরও "কাকস্য পরিবেদনা''? টেনিদার বা প্যালারামের ভাষায় কাক ও অশ্ব পড়ে পড়ে বেদনা পাচ্ছে!

তখন ডাইরেক্টর জেনারেল অফ পোলিস শ্রীমান বিশ্বরঞ্জন রেণু-রত্নাদের ঘ্যানঘ্যানানি শুনে বিলাসপুর ঘুরে এসে পুলিস হেডকোয়ার্টারে এদের বিকেল ৬টায় ডেকে পাঠালেন।

রাস্তায় রত্নার অটো রিকশা একজনকে ধাক্কা মেরে পালাতে গিয়ে অনেক দেরিতে পৌঁছলো। দেখা গেল ওনার কনফারেন্স রুমে বিলাসপুরের আইজি মি: শর্মা, এস পি মি: বিবেকানন্দ সিনহা , চেয়ারে সমাসীন আর রুরাল এস পি মি: ধ্রুব মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।

বোঝা গেল ডিজি এদের খুব ঝাড় দিচ্ছিলেন।

রত্না-রেণু কে ডেকে বল্লেন- আপনারা এনাদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। যত প্রশ্ন আছে সব করুন, নি:সংকোচে। আমি ক্যামেরা চালিয়ে দিচ্ছি। সব রেকর্ড করা থাকবে।

বলে উনি পাশের কামরায় কাঁচের বন্ধ দেয়ালের ওপাশে বসে সব শুনতে লাগলেন।

রত্না বল্লো- সবকিছুর একটা টাইম লিমিট থাকে। আই পি সি ৩৯৫এ ১৬জন বাই নেম অভিযুক্ত। এফ আই আর হওয়ার পরও আপনারা ৫ মাস ধরে অ্যারেস্ট করছেন না, এর মানে কি?

আর আপনি এস পি মশাই, সেবার আপনার পুলিশ রাত বারোটায় আগস্ট মাসে আমাদের ফ্ল্যাটে আমাকে ও রেণুবালাকে গ্রেফতার করতে এলো। পরে আপনি স্বীকার করলেন সেটা বে-আইনি। তাহলে ওই স্টেশন ইনচার্জের বিরুদ্ধে আপনি কি ব্যবস্থা নিলেন?

-- ওকে, মানে দীনেশ সাহুকে একই থানায় থানেদার পদ থেকে ডিমোট করে সাব ইনস্পেকটর করে দেয়া হয়েছে।

---- দেখাই যাচ্ছে সেটা যথেষ্ট নয়। ফলে আপনার ঐ পদচ্যুত অফিসারটি আমাদের ওপর বদলা নিতে ১৯ সেপ্টেম্বর স্থায়ী থানেদারের অনুপস্থিতে বিল্ডারের লোকজনের সঙ্গে প্ল্যান করে আমাদের ওপর হামলা করিয়ে আমাদের ঘরছাড়া করলো। এই ভবে আপনি ক্রাইমকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না কি? আর আপনি আমাকে ওদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলছেন? আমাদের ওপর হামলা হবে, আমাদের তারকাটা হবে, আমাদের লাইট-জল বন্ধ করা হবে, হরিজন থানায় মিথ্যা মামলা করা হবে,-- আর আমরাই ওদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করবো? আপনি বলছেন-- অতীতকে ভুলে যান। মানে দাঁড়াল ওদের ক্রাইমকে ভুলে যান?

না কি আমি ভুল বুঝেছি?

--আর আইজি মি: শর্মা, যখন রেণুবালাকে ফলস্‌ কেসে বিনা চালান, রাত্তিরে তুলে নিয়ে অ্যারেস্ট করা হল, তখন আমিআর রেণুর হাজব্যান্ড পুলিস হেড কোয়ার্টারের চিঠি নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আপনি সোজা আমাদের ভদ্রভাষায় ভাগিয়ে দিয়েছিলেন।

বলেছিলেন--যখন হেড কোয়ার্টারের মুরুব্বি ধরে এসেছো তো আমি কিছু করতে পারবো না। আমার বিবেক আমাকে এই কেসে কিছু করতে অনুমতি দিচ্ছে না।

--না, আমি ঠিক তা' মীন করিনি।

এইভাবে রত্না-রেণু ও ওই পুলিস অফিসারদের মধ্যে কিছু বার্তালাপ চলে। মাঝে মাঝে প্রবীণ সর্দানা মহিলাদের ধমকে বলে - এবার আপনারা চুপ করুন। আমাকে জিগাইতে দিন। বলুন সায়েবরা, ধারা ৩৯৫ এর চালান কবে পেশ করবেন?


এই অপূর্ব প্রহসন আধ ঘন্টা পরে শেষ হয়। ডিজি এদের বলেন-- আপনারা সন্তুষ্ট তো?

ঠিক হয় দুদিনের মধ্যে ওদের অ্যারেস্ট করা হবে।

এরা নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে দেখে অ্যাজমাপীড়িত রঞ্জন নেবুলাইজিং মেশিন চালিয়ে ভাপ নিচ্ছে।

চিকেন রান্না হয়, বেশ উৎসব-উৎসব ভাব।

পরের দিন বিলাসপুরের সমস্ত পত্রিকায় বেরোয় যে বৈশালী প্রাইড ডাকাতি মামলায় নাটকীয় মোড়। যারা অত্যাচারিত তারাই রায়পুর পুলিসের বড়্‌কত্তাদের চপে ডাকাতির দায়ে গ্রেফতার হবে। নগরীয় প্রশাসন মন্ত্রী অমর অগ্রওয়াল যদি এদের বাঁচাতে পারেন!

সেদিন জানা গেল যে ""স্টেট লেভেল কনজিউমার ফোরাম"" বিল্ডারের জালিয়াতি ও অন্য অপকর্মের সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে কনভিন্সড্‌ হয়ে রঞ্জনের ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা রেজিস্টার করে নিয়মমাফিক বিল্ডারকে জবাব দেয়ার জন্যে দুমাসের সময় দিয়েছেন।

রঞ্জন সবাইকে বিরিয়ানি খাওয়াল।

তারপর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে গিয়ে জানলো উনি ছুটিতে, ফলে ওই জালিয়াতির জন্যে দুই বিল্ডারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪২০ ধারায় সাত বছরের জেলের জন্যে কেস রেজিস্টার হওয়ার দিন এক মাস পেছিয়ে গেল।

কিন্তু লাভ হল ষোল আনা। ফাইল খুলে দেখা গেল বিল্ডার স্টেটমেন্ট দিয়েছে যে ওর দেয়া নকশা খাঁটি, রঞ্জনের দেয়া নকশাটা জাল। আর ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশের কর্তব্য ছিল ""সি আর পি সি" ধারা ২০০ অনুযায়ী আমার কমপ্লেনের তদন্ত করে আদালতকে রিপোর্ট দেয়া যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে কি না। পুলিশ সোজাসুজি সেসব না করে দু 'পক্ষের বক্তব্যের সামারি করে লিখেছে-- আমার মনে হয় বিল্ডারের নকশা ঠিক।

আ মোলো যা! এতে মনে হওয়ার কি আছে? নকশা তো কর্পোরেশনের। দুই বিরোধী দাবির কোনটা ঠিক জানতে হলে তো সোজা কর্পোরেশনের অফিসে ভারপ্রাপ্ত অধিকারীকে জিগাইতে হবে-- মশয়! কুনডা আপনাগো অনুমোদিত নকশা?

তা না, নিজের সবজের্ক্টিভ ওপিনিয়ন দিচ্ছে!

সেদিন দলের মধ্যে দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি করে আসা ছোট মেয়েও ছিল। ওকে নিয়েই বিলাসপুর আসা হয়েছিল। ফান্ডাটা হল ওকে ফিল করানো যে আমাদের ঘন ঘন বিলাসপুর আসাটা যথেষ্ট সেফ, এবং আমরা চাইলে পুলিশ প্রোটেক্‌শন পাই। ওর মন থেকে সেই ১৯সেপ্টেম্বর রাতের চোখে দেখা হামলার ট্রমা এখনও পুরোপুরি কাটেনি যে!

ওরা মা-মেয়ে কর্পোরেশন কমিশনরের অফিসে গিয়ে বল্লো--- রাইট টু ইন্‌ফর্মেশন অ্যাক্টের অধীনে আপনাদের থেকে পাওয়া নকশাটাকে বিল্ডার কোর্টে জালি বলছে। কাজের আমাদের কপিটা সার্টিফাই করে দেবেন?

মিস্টার তিওয়ারি( বিল্ডিং অফিসার) এককথায় করে দিয়ে বল্লেন দরকার হলে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্যও দিয়ে আসবো।

এবার কমিশনার মি: বনসাল এলেন। আমাদের কথা শুনে বল্লেন---কিছু সলিড প্রমাণ না পেলে আমরা কি করতে পারি। ম্যাডাম রায়, আপনি বলছে বিল্ডর কোন কিছু শোধরায় নি। সব মিথ্যে সার্টিফিকেট দিচ্ছে? আর ও কর্পোরেশনে মর্টগেজ রাখা আটটি ফ্ল্যাট বে-আইনি ভাবে বিক্কিরি করে দিয়েছে?

কিন্তু ও লিখে দিয়েছে--ম্যাডাম রায়ের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অসত্য। কোন বন্ধকী ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয় নি। আর সব ইনকম্লিট কাজ কমপ্লিট করা হয়েছে।

আপনার কথা সত্যি হলে সেল ডীড বা অন্য কোন ডকুমেন্ট দিন, নইলে কিসের ভিত্তিতে অ্যাকশন নেব? শুধু আপনর মুখের কথায়?

রত্না বলে--দেখুন, কিছু দলিল দেখাচ্ছি। অন্য একটি কেসে আপ্নাদের মর্টগেজ ফ্ল্যাট কিনে তাতে থাকছে বলে কয়েকজন শপথ পত্র কোর্টে জমা করেছে,---এই তার কপি।

তখন ছোট মেয়ে এগিয়ে এসে বলে-- স্যার, আমি দিল্লি থেকে এসেছি।লীগ্যাল প্র্যাকটিস করি। আসল মালিক আমিই। বাবা-মা থাকেন মাত্র, আর বিল্ডরের হাতে এইভাবে ভুগছেন। আজকে আমরা সবাই আছি। আপনি জনদুই আপনার অফিসার দিন। আমরা জয়েন্ট ইনস্পেকশন করে ফেলি। তাহলে "দুধ-কা-দুধ, পানি-কা-পানি" হয়ে যাবে। এটা সম্ভব কি?

কমিশনার একটু ভেবে রাজি হয়ে যান। দুই গাড়ি করে আমরা রওয়ানা হই।

বাস্তুহারা হওয়ার পর আমি এই প্রথম সি অ্যাপার্টমেন্টে গেলাম। হাট করে মেন গেট গুলো খোলা, কোন সিকিউরিটি নেই। রত্নার টবের গাছগুলো অযত্নে শুকিয়ে আছে, অ্যালুভেরার দশ বছরের বেশি পুরোনো গাছের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। রত্নার চোখ এই প্রথম ভিজে ওঠে।

পেছন দিক থেকে বিল্ডারের বৌয়ের স্কুলের ড্রাইভার বেরিয়ে এসে আমাদের দেখতে থাকে। তরপর মোবাইলে কথা বলতে শুরু করে। আমর সিভিল লাইনস্‌ থানায় ফোন করে বলি- একজন কনস্টেবল পাঠিয়ে দেবেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয় খালি ওদের মিথ্যে নালিশকে।

আমরা মি: তিওয়ারিকে দেখাই--- দেখুন, পার্কিংস্পেসের ঘেরা জায়গাটা আগের মতই আছে, আপনারা বল্লেও ভাঙেনি। দেখুন,রেইন- ওয়াটার হার্ভেস্টিং, গার্ডেন, পেভমেন্ট কিস্যু করা হয় নি। দেখুন, মিটারের প্যানেল বক্স খোলা--- যাতে হুকিং করা যায়। এই দেখুন, চারটে বন্ধকী ফ্ল্যাটের নামেও মিটার এসে গেছে। কি করে? আমরা ওপরে যাই। গোটা কয়েক বন্ধকী ফ্ল্যাটে গিয়ে তিওয়ারিজী কলিং বেল টেপেন। গুড্ডি সেনগুপ্ত ভেতর থেকে আমাদের দেখে দরজা খুললোই না। গুরবিন কউর খুলে প্রশ্নের জবাবে বল্লো-- হ্যাঁ, এই ফ্ল্যাট আমরা কিনেছি। তারপর যখন জানলো যে করপোরেশন থেকে লোক এসেছে তখন দুম করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

ওর হ্যাজব্যান্ড এসে বল্লো-- না, না, আমরা ভাড়ায় থাকি।

অন্য দুটো ফ্ল্যাটে তিওয়ারিজি বল্লেন- আমি ভাড়ায় থাকতে চাই, আপনার সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করবো। কাজেই জানা দরকার আপনি কিনেছেন কি না, আর কবে কি নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে!

উত্তরগুলো ওনার সহযোগী টুকে নেয়। ছাদে গিয়ে দেখাই-- বেআইনি পেন্ট হাউসের শুরু হওয়া কনস্ট্রাকশন আমাদের কমপ্লেনের ফলে থেমে আছে বটে, কিন্তু আদেশ মেনে পিলার-বিম এগুলো ভাঙা হয় নি।

এবার নীচে নামার পালা। ভীড় এককাট্টা হয়েছে। খবর পেয়ে হামলাকারীদের পালের গোদা বিল্ডারের বউ শিবানী শর্মা এসেছে। সে প্রথমে দূর থেকে, পরে কাছের থেকে আমাদের, বিশেষ করে মি: তিওয়ারি ও আমার মোবাইলে ফটো তোলার চেষ্টা করতে লগলো। শান্ত তিওয়ারিজির চোয়াল শক্ত হল। বল্লেন-- মহিলাটি কে?

হরিদাস পালের কুল কুল করে হাসি পাচ্ছিল। তাই শিবানী ম্যাডাম আমার কাছে আসতেই আমি হাই তোলার ভঙ্গিতে মাথার পেছনে দুই হাত তুলে আস্তে আস্তে ওনর ক্যামেরার দিকে পেছন করে ঘুরতে লগলাম। ফলে শিবানী আমার মুখের সামনে আসার জন্যে গোল গোল ঘুরতে লাগলেন। এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে সমবেত জনতার মধ্যে হাসির রোল উঠলো। আমরা করপোরেশনের অফিসারদের বল্লাম--এবার আমরা যাই, রায়পুরে ফিরতে হবে। আপনরা কিন্তু এখানে পাঁচমিনিট থেকে বন্ধকী ফ্ল্যাট ব্যাপারটা কি এবং যারা বিনা পারমিশন কিনেছে সেটা যে অবৈধ, কর্পোরেশন যেকোন দিন ওদের চাইলে খালি করাতে পারে--- এগুলো বুঝিয়ে দিন।