গল্প - আর্যা ভট্টাচার্য
Posted in গল্পহালকা ছাই রঙের আকাশটা, ধীরে ধীরে চাপা আলোয় ভরে যাচ্ছে, আর সেই আলো থেকে নেমে আসছে অলৌকিক মায়ার মতো, পেঁজা তুলোর মতো, যেন অজস্র জুঁই ফুল। প্রায় ভারহীন সুখের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ঋতজার শরীর জুড়ে। আহ্লাদে, আনন্দে আস্তে আস্তে বরফের বিছানায় শুয়ে থাকা তাকে একটু একটু করে ঢেকে দিচ্ছে। কী আশ্চর্য অনুভূতি। আঃ, এভাবেই যদি শুয়ে থাকা যায়! আর তাকে ঘিরে এই সুখ কোনোদিন শেষ না হয়! চলতে থাকে…চলতেই থাকে!
হঠাৎ একটা ঝাঁকুনিতে চমকে তাকায় ঋতজা। প্লেন এই মাটি ছুঁলো। যাব্বাবা, সীটবেল্ট টেল্ট বেঁধে রেডি হয়ে বসার পর, এইটুকু সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে টুমিয়ে, একেবারে স্বপ্ন ও দেখে ফেললো! স্বপ্নটা কিন্তু দারুণ ছিলো। একদম ইচ্ছে পূরণের। সেই ছোট্ট বেলায় রূপকথার বইয়ে ছবি দেখার পর থেকেই তার ভীষণ ভীষণ স্নো ফল দেখার ইচ্ছে। এখানে কী সেই ইচ্ছে পূরণ হবে? কে জানে! তবে ছোটোবেলা থেকেই তার ইউরোপে আসার ইচ্ছেটাও তো খুব প্রবল। তো সেটা যখন পূরণ হয়েছে, অন্যটাই বা হবে না কেন? নিশ্চয়ই হবে। আর সেই আশাতেই তো সে ডিসেম্বরের শীত অগ্রাহ্য করে, মৈনাকের কথা অগ্রাহ্য করে, কলিগদের ছানাবড়া চোখগুলো না দেখি, না দেখি করে, এই অসময়ে এখানে আসা ঠিক করেছে। এই শীতে যখন শ্লোভাকিয়ার কাজটা এসে পড়লো, সবার তো মাথায় বাজ। এই ঠাণ্ডায় কে যাবে ওখানে! মরার শখ হয়েছে নাকি? বোসদা তো স্পষ্ট বলেই দিল বসকে, “স্যর, আমার আ্যজমা আছে। আমাকে মাফ করুন”। কেয়াদি, রবীনদা, সুনন্দ সকলেই নানারকম অজুহাত দেখাতে লাগল। তবে নানা হাত ঘুরে অফারটা যখন ঋতজার কাছে এলো, সে একেবারে যেন লুফে নিল। যদিও অন্য সকলেরই এক আধবার বিদেশ ভ্রমন হয়ে গেছে। অফিসে সে আর মাত্র কয়েকজনই আছে যারা আজ ও দেশের বাইরে পা বাড়ায়নি। তাই প্রস্তাবটা আসতে, সে এককথাতেই রাজী হয়ে গিয়েছিল। স্নোফল আর বরফের আশাতেই। যদিও তার বুকের ভেতরটা ভয়ে শুকিয়ে গেছিলো। বিদেশ বিভূঁই। জীবনে কখনো পুরী আর দার্জিলিং ছাড়া কোথাও যায়নি। তাও আবার বাপী মায়ের সঙ্গে। পারবে তো একা একা? অসহায় একা বিদেশে! কিন্ত সেই ভয় সে নিজের মনের মধ্যেই লুকিয়ে রেখেছিল। কাউকে বুঝতে দেয়নি। পাছে নার্ভাসনেস দেখিয়ে ফেললে তার যাওয়াটা ভণ্ডুল হয়ে যায়! যাই হোক না কেন, এ সুযোগ ছাড়া যাবে না।
মৈনাক তো রেগেই গেছিল। যদিও রাগটা সে, সরাসরি প্রকাশ করেনি। খানিকটা ঠাট্টার সুরেই বলেছিল,
“অত যদি তোমার বরফের শখ, তাহলে ফ্রীজারে মাথাটা ঢুকিয়ে বসে থাকো। ঠাণ্ডা খাওয়াও হবে, আর মাথাটাও শান্ত হবে। আর না হলে চলো, একবার মাছপট্টি থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি, বরফ দেখার শখ মিটুক। আর একমাস বাদে আমাদের বিয়ে। আর এই সময়ে তুমি চললে ফরেন ট্যুর করতে! তাও একা একা। আমার ভালো লাগছেনা ঋতু। একদম না”
ওভার হেড কেবিন থেকে হ্যান্ড লাগেজটা বের করতে করতে মৈনাকের সেই সময়কার রাগী অভিমানী মুখটা মনে পোড়ে মনে মনেই হাসতে থাকে ঋতজা। মাত্র তো সাত দিনের ট্যুর। আর বাকী দু'দিন সে রেখেছে, একটু ঘুরে ফিরে বেড়ানোর জন্য। চারদিকটা দেখার জন্যে। ব্যস্, এই তো ব্যাপার। তারপর ফিরে গিয়ে বাকি শপিং এর জন্যে অনেক সময় পাওয়া যাবে। এটা নিয়ে, মৈনাক কী একটু বেশিই রিএ্যাক্ট করলো না? তাদের তো মাত্র এই তিন মাস হলো বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছোটমাসীর আনা সম্বন্ধ। দেখতে শুনতে ভালো। চার্টার্ড এ্যকাউন্টেন্ট। মা তো প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাপীও তথৈবচ। কিন্ত সে কী একটু তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো! আচ্ছা, সম্বন্ধ করে বিয়েতে রাজী হওয়াটা কী আদৌ ঠিক হলো? এখন অবধি মৈনাকের ওপর তার তেমন কোনো আকর্ষণ ও নেই। তাদের কমপ্যাটিবিলিটি নিয়েও এখন ঋতজার সন্দেহ হচ্ছে। তারা দুজনে আদৌ কী কমপ্যাটিবল! এর মধ্যেই তো, বাতিস্লাভায় আসার মতন দু'য়েকটা ব্যাপার নিয়ে মতের অমিল হয়ে গেল। মায়ের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, হাল ছেড়ে না দিয়ে, তার কী নিজের পছন্দের কারুর জন্য অপেক্ষা করা দরকার ছিল? এমন কেউ যে, তার সম্পর্কে কিছু না জেনেও, শুধু তার জন্যই তাকে ভালোবাসবে! মৈনাকের মতো আগে তার ক্রেডেনশিয়াল দেখে, অফিসে খোঁজ খবর নিয়ে, পেডিগ্রি দেখে তারপরে নয়। সে কী ভুল করলো? এইসব ভাবনার মধ্যেই, প্লেন থেকে বেরিয়ে এলো ঋতজা। আর অন্যসব যাত্রীদের পেছনে পেছনে হাঁটা দিল।
এই প্রথমবার তার বিদেশ আসা। কোনদিকে যেতে হবে কে জানে। অন্য সবার সঙ্গে থাকাই ভালো। সবাই তো বেরোবার গেটের দিকেই যাবে। সেও তাদের পেছন পেছন চলে যাবে। ট্রলী ব্যাগটাকে শক্ত করে ধরে, অন্য সব যাত্রীদের সঙ্গে তালমিলিয়ে, জোরে জোরে হাঁটতে থাকে ঋতজা। হঠাৎ একী! সব গেলো কোথায়! ভোজবাজি নাকি! এই ছিল, এই নেই! যাদের পেছনে পেছনে সে আসছিল, তারা তো কেউ কোথ্থাও নেই! তার সামনে এখন শুধুই কয়েকটা পথ; আর সেই চৌমাথার মোড়ে সে একা। উঃ, কী যে ভীষণ নার্ভাস লাগছে! তবু ভয় মনেই চেপে রেখে, কাছাকাছি একজন এয়ারপোর্ট অফিসিয়ালের কাছে গিয়ে ঋতজা প্রায় কাঁপা গলায় জিগ্যেস করলো,
“ এক্সকিউজ মি, আমি ব্রাতিস্লভায় যাবো। বাস ধরার জন্যে কত নম্বর গেট দিয়ে বেরতে হবে?”
একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে ভদ্রলোক বললেন, "এই ডানদিকের চার নম্বর গেট দিয়ে। একটু এগোলেই ব্রাতিস্লাভা যাবার বাসের টিকিট কাউন্টার।কিন্ত ব্রাতিস্লাভায় তো এখন সাংঘাতিক ঠাণ্ডা।
আপনি ভারী উলেন কিছু আনেননি? এই পোশাকে তো হবে না। ফ্রীজ করে যাবেন। এখন টেম্পারেচার তিন, চার মতন চলছে।“
“ আছে তো। কোট, টুপি, সোয়েটার সব। আমার স্যুটকেসে আছে।“
“ কোথায় স্যুটকেস? আপনি তো শুধু একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।“
“ এই যাঃ, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম”- লজ্জায় লাল হয়ে, জিভ টিভ কেটে বলে ওঠে ঋতজা।
নার্ভাসনেসের জ্বালায় লাগেজ নেবার কথা সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।
“ বাঁ দিক দিয়ে চলে যান। সামনেই কনভয়ার বেল্ট। আপনার লাগেজ মনে হয় এসে গেছে।“- তার দিকে কৌতুকের চোখে তাকিয়ে বলেন ভদ্রলোক, যার বুকের ওপর, এখন ঋতজার চোখে পরলো নাম লেখা আছে, মার্টিন। তাড়াতাড়ি কনভয়ার বেল্টের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, অপসৃয়মান স্যুটকেসগুলোর দিকে আকুল আগ্রহে তাকিয়ে রইল ঋতজা।
যদি আমি আমার লাগেজটা চিনতে না পারি! বা যদি আমার লাগেজটা হারিয়ে গিয়ে থাকে! যদি আর নাই আসে!- ভয়ে ভাবনায় ঋতজার মুখটা ক্রমশঃ ছোটো হয়ে আসে। কোনো কালো স্যুটকেস দেখলেই অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্ত না, কোনোটাই তার নয়। কেন যে কটকটে হলুদ বা ক্যাটক্যাটে গোলাপী রঙের স্যুটকেস কিনলো না! দূর থেকেই বেশ চেনা যেত! না, ওই তো। ওই তো তার স্যুটকেস। বড় বড় করে লেখা রয়েছে- ঋতজা রায়। ভাগ্যিস বাপী বুদ্ধি করে স্যুটকেসের গায়ে নাম লিখে দিয়েছিল! লাগেজ নিয়ে মুখে একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে গেটের কাছে আসতেই, গেটে দাঁড়ানো ভদ্রলোক- যার নাম এখন ঋতজা জানে, মার্টিন, হাসি মুখে বললেন, “ ডানদিক দিয়ে বেরিয়ে চলে যান। গেট দিয়ে বেরিয়ে একটু এগোলেই বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে একটু এগোলেই ট্যাক্সিস্ট্যান্ড।
"উইশ ইউ আ ওয়ান্ডারফুল জার্ণি এ্যন্ড আ হ্যাপী স্টে”
মোটামুটি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ব্রাতিস্লাভায়, তার হোটেলে পৌঁছে গেল ঋতজা। কিন্ত বরফ কই বরফ?মাঝেই ঝিপ ঝিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। আর তার সঙ্গে কনকনে হাওয়া। শীত ও খুব। কিন্ত যে বরফের জন্য আসা, সেই বরফই তো নেই। হোটেলের রিসেপশন ডেস্কের সুন্দরী মেয়েটির কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারা গেল যে, এখন বরফ পেতে গেলে টাট্রা পাহাড়ে যেতে হবেনা। ঘন্টা তিনেকের ড্রাইভ। তবে রাস্তার অবস্থা ভালো থাকলে আড়াই ঘন্টাই যথেষ্ট। আর ভাগ্য ভালো থাকলে স্নোফলও দেখা হয়ে যেতে পারে। আনন্দে ঋতজার মনটা কয়েক পাক নেচে নিল। তার পরের কয়েকটা দিন খুব দ্রুতই চলে গেল।নতুন কাজের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, কলকাতার অফিসকে রেগুলার আপডেট দেওয়া, হোটেলে ফিরে সারাদিনের রিপোর্ট তৈরি করা….কাজ অনেক। আর এই প্রথম বার কাজের দায়িত্ব নিয়ে সে এসেছে। বিদেশীদের সঙ্গে ডিল করছে, তাই কোথাও যেন কোনোরকম ভুলচুক না হয়। মাঝে মাঝে নার্ভাস ও লাগে। তবে বাপী সমানে ফোনে তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। রোজ বলে, “ তুই খুব ভালো কাজ করছিস। আমি জানি। কীপ ইট আপ মামনি”
তবে কাজ আছে বলে কী আর নতুন জায়গায় এসে একটু বেড়াবে না? তাই মাঝে মাঝে রাস্তায়, পার্কে, নদীর ধারে বেড়িয়ে এসেছে। দানিয়ুবের সামনে দাঁড়িয়ে ঋতজার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। সেই দানিয়ুব! ইতিহাসের দানিয়ুব! কত গল্প কবিতার দানিয়ুব! সেদিন অনেকক্ষণ নদীর ধারে দাঁড়িয়ে ছিল ঋতজা। তারপর শীতে কেঁপে উঠে পালিয়ে বেঁচেছে। মাঝখানে একদিন শনিবার। অফিস বন্ধ। কোনো কাজ ছিলো না। সেদিন গিয়ে ক্যাসলটাও দেখে এসেছে। তার থাকার দিন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, কিন্তু এখনও টাট্রা পাহাড়ে যাওয়া হল না।বরফ ছোঁয়া হল না। তবে তার সে আশাও মনে হয় পূর্ণ হতে চলেছে।গতকাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির কাছের কাফেটায় লাঞ্চে গেছিল ঋতজা। ঋতজার কাজ যেখানে, সেই অফিসেই লিন্ডা কাজ করে। ঋতজার সঙ্গে তার কথাবার্তা হয়। লিন্ডাই এই ক্যফেটার হদিশ দিয়েছে তাকে। ভালো খাবার পাওয়া যায়। দামও রিজনেবল্। সেখানে গিয়েই ডোরার সঙ্গে আলাপ। ডোরা ওই রেস্টুরেন্টের পার্টটাইম ওয়েট্রেস। তাছাড়া ইউনিভার্সিটিতে পার্টটাইম ক্লার্কের ও কাজ করে। ওর একটা ছোটো মেয়ে আছে। লিজি। এই দুবছরে পড়েছে। সিঙ্গল পেরেন্ট। ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মেয়েকে অনেকটা সময় দিতে হয়। তাই ফুল টাইম জব করতে পা্রছে না এখন। ভারী মিশুকে মেয়েটা। ঋতজাকে কফি দেবার পরে কৌতূহল ভরা মুখে জিজ্ঞাসা করেছিল, “মাফ করবেন, আপনাকে খুব ইন্টারেস্টিং দেখতে; আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন জিজ্ঞেস করতে পারি কী?”
“ ইন্ডিয়া”
“ইন্ডিয়া…গান্ধী… হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। আমি পড়েছি। আমার ঠাকুরদা একবার ইন্ডিয়াতে গেছিলেন। ছোটোবেলায় গল্প শুনেছি “
আগ্রহের আতিশয্যে সে ঋতজাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে আর কী।
“ আমার ডিউটি শেষ। এখনি ফিরে আসছি। তুমি ততক্ষণ কফিটা শেষ করো”-বলে ঋতজাকে একটা উজ্জ্বল প্রাণখোলা হাসি উপহার দিয়ে নো এন্ট্রি লেখা দরজাটা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় ডোরা।
আবার ফিরে আসে ঠিক পাঁচ মিনিট বাদেই। আর তারপরে তাদের কথা জমে উঠতে আর দেরি হয়নি।যেহেতু তখন ওর ডিউটি আওয়ার শেষ হয়ে গেছিল, তাই ঋতজার অনুরোধে ওর সাথে বসে চা খেতে মেয়েটির কোনো অসুবিধা হয়নি। ভারী মিশুকে মেয়ে ডোরা। হাসিখুশি। চনমনে। হুড়মুড় করে নিজের সব গল্প বলে ফেললো। আর ঋতজা ও কেন এসেছে, কী ব্যাপার সব প্রশ্ন করে জেনে নিল। গল্পে গল্পে বেশ অনেকটা সময়ই কেটে গিয়েছিল। সেদিন কথায় কথায় ডোরার কাছে ঋতজা টাট্রা পাহাড়ে যাবার ইচ্ছের কথা বলেছিল। ডোরা তো যেন আইডিয়াটা লুফে নিল।
“ফ্যান্টাসটিক আইডিয়া। আমার ও টাট্রায় কোনোদিন যাওয়া হয়নি, জানো। তবে দারুণ দারুণ সব ছবি দেখেছি। আমার এক চেনা লোক আছে। অল্পদিনের আলাপ। তবে বন্ধুই বলতে পার। বরিস। ওর বাবা জার্মান আর মা স্লোভাক। ওর মা টাট্রার কাছাকাছিই কোথাও থাকে। মাঝে মাঝে ওর মায়ের কাছে যায় তো, তাই এলাকাটা ও খুব ভালো চেনে। বরিসকে একটা কল করে, সব ডিটেলস জেনে নিলেই হবে।চলো, আমরা দুজনে ই যাই। যাব, যাব, করে কিছুতেই আমার যাওয়াটা হচ্ছে না। এই সুযোগে আমারও ঘোরা হয়ে যাবে।“ উত্তেজনায় ছোট বাচ্চার মতো লাফাতে শুরু করে ডোরা।
আর, একা একা যেতে হবে না, একজন ভালো সঙ্গী পাওয়া যাবে ভেবে ঋতজার ও মনটা খুশী খুশী হয়ে উঠলো। তাছাড়া একজন লোকাল লোক সঙ্গে থাকলে অনেকটাই ভরসা পাওয়া যায়। না হলে সে একাই যেত, কিন্তু মোর দ্য বেটার।
“তোমার মোবাইল নং টা দাও। তোমাকে সব জানিয়ে দেব',
অফিস থেকে যে সিমটা দিয়েছে, ঋতজা সেই নাম্বারটাই দিয়ে দিল। ডোরা সিরিয়াস কিনা, ও সত্যিই ফোন করবে কিনা, এ নিয়ে ঋতজার মনে কোনো সংশয় ছিল না বললে অবশ্য মিথ্যে বলা হয়। তবুও পুরো অবিশ্বাসও করতে পারেনি। খানিকটা ইগার হয়েই সে ফোনের অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু পরের দিন সন্ধ্যে পর্যন্ত ডোরার কোনো ফোনই এলো না। অফিস থেকে বেড়িয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে সে যখন স্থির করে ফেলেছে, মেয়েটি কথার কথা বলেছিল। ও যে সত্যিই ঋতজার সঙ্গে টাট্রা যাবে সেটা ধরে নেওয়া তার নিতান্ত বোকামি- তখনই ডোরার ফোনটা এল।
“হাই, বরিসের সঙ্গে কথা হয়েছে।‘-উত্তেজনা ফুটে উঠেছে ডোরার গলায়। “বরিস তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। মানে ঠিক কোন এলাকায় তুমি যেতে চাও। কী কী আ্যকটিভিটিজ করতে চাও- এ সবগুলো জানা থাকলে, ওর পক্ষে হেল্প করা সহজ হবে। কাল একবার কাফেতে আসতে পারবে?"
“উমম্,…হ্যাঁ। পাঁচ টা নাগাদ। বিকেলে।“
“ডান্”
পরের দিন কাফেতে বরিসের সঙ্গে দেখা হলো। খুবই সাধারণ চেহারা। হাইট, মুখ চোখ সব ই আ্যভারেজ। ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে মনে রাখার মতো নয়। তবে খুবই সভ্য, ভদ্র। যাকে বলে পারফেক্ট জেন্টলম্যান। ঋতজার টাট্রার ব্যাপারে প্রায় কিছুই ধারণা নেই শুনে, তার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল, যেন ভারী মজা পেয়েছে। তারপর ডোরার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি একটা গাড়ি হায়ার করে, ড্রাইভারের মোবাইল নম্বরটা আমাকে পাঠিয়ে দিও। যা বলার ড্রাইভারকে আমিই বলে দেব।‘
“ পরশু তো আমার ফেরার কথা। তাহলে কালকেই তো যেতে হয়।“
“পরশু কখন তোমার ফ্লাইট?’
ঋতজাকে জিজ্ঞেস করে বরিস।
“দেরীতে। রাত সাড়ে দশটায়। বেশি রাতের ফ্লাইটের দামটা একটু সস্তা হয় তো। তাই ওই ফ্লাইটের টিকিটটাই কাটলাম। পরদিন একদম ভোরে ভিয়েনা থেকে ইন্ডিয়ার ফ্লাইট।‘
“ বাঃ, ফ্যান্টাসটিক।‘
“তাহলে এক কাজ করো। মর্নিং এ হোটেল থেকে চেক আউট করে, একেবারে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে এসো। সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে, বাই সিক্স তুমি এয়ারপোর্টে পৌঁছে যেতে পারবে। ওই একই গাড়িতে। তোমার একদিনের হোটেল চার্জ বেঁচে যাবে আর একস্ট্রা ট্যাক্সির ভাড়াটাও সেভড্ হয়ে যাবে।‘
বরিসের পরামর্শটা দারুণ লাগসই লাগে ঋতজার। বরিসের বুদ্ধিতে বেশ খানিকটা মুগ্ধই হয়ে যায়। ওখানেই কথা পাকা হয়ে গেল। পরশু সে আর ডোরা টাট্রা পাহাড়ে যাচ্ছে। খরচা ফিফটি ফিফটি। তার আগে হোটেল থেকে চেক আউট করে নেবে। গাড়ি ডোরা ঠিক করবে। তবে বরিস তাদের সঙ্গে যেতে পারবে না। তার অন্য কাজ আছে। এই কথাটা শুনে ঋতজার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেন, তা সে নিজেও ঠিক বুঝতে পারছে না।
“কাছেই একটা চার্চ আছে। দেখেছো?’- ঋতজার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বরিস।
"না, তো!"
“এখন সময় আছে? টাট্রায় তো তোমাদের সঙ্গে যেতে পারছি না, চলো এটাই দেখিয়ে দিই”
ঋতজার চোখে চোখ রেখে বললো বরিস। ওর চোখের দৃষ্টিতে যেন কী ছিল। ভেতরে ভেতরে একটু লজ্জা পেয়ে যায় ঋতজা।
“তোমরা ঘুরে এসো। আমি আজ পারব না। আমার বেবীসিটার আজ তাড়াতাড়ি ছুটি চেয়েছে। আমাকে এখনই বেরতে হবে” হাসিমুখে তাদের দুজনকে বাই করে, ওভারকোটটা টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেল ডোরা।
“তোমার পাফার আছে তো? স্নো শু?”
ডোরার যাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বরিস।
“না, মানে, আমার কোট আছে আর রিবক শুজ”- একটু ইতস্তত করে উত্তর দেয় ঋতজা।
“সর্বনাশ, তুমি তো জমেই মরে যাবে। আর ঠাণ্ডায় যদি নাও মরো, ওই বরফে প্রপার স্নো শু ছাড়া পাহাড় থেকে পিছলে পড়ে তো তুমি মরবেই। মোটকথা, মরতে তোমাকে হবেই”- তার দিকে কৌতুকের চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে বরিস।
“কী হবে তাহলে? কী করবো?”
ঋতজার অসহায় মুখটা দেখে জো্রেই হেসে ওঠে বরিস।
“কী আবার হবে, কিনতে হবে। মলে যাও। ওখানে সব পাবে।“
“মল…মানে…ঠিক কোনদিকে..’
“চলো, আমি তোমাকে হেল্প করছি"
বরিসের সঙ্গেই মলে যাবার জন্য বেরিয়ে পরে ঋতজা। টুকটাক কথা বলতে বলতে তারা চলছিল, হঠাৎ একটা জোর ধমক আর কোমরে একটা হালকা টান। হতচকিত হয়ে ঋতজা দেখে একটা গাড়ি তার গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেলো। তার জানলার কাঁচ নামানো। আর ধমকটা সেখান থেকেই এসেছে।
“ কী করছো? দেখে চলো। চাপা পড়বে তো।‘
ঋতজার কোমর ধরে তাকে রাস্তা থেকে আর একটু নিজের কাছে টেনে এনে গম্ভীর গলায় বরিস বলে ওঠে।
মল থেকে পাফার, কোজাক সব কিছু কিনে হোটেলে ফেরার পরেও বরিসের ওই ছোঁয়া আর কথা অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঋতজার মনে ঘুরতে থাকে।
‘ কী কেয়ারিং বরিস। ইস্, মৈনাক যদি এরকম হতো!’
সেদিন রাতে সে বরিসের স্বপ্ন দেখল। পরের রাতেও ঠিক মতো ঘুম হল না ঋতজার। বরিসের কথাই বারবার মনে হতে লাগলো। ইশ্, বরিস যদি তাদের সঙ্গে যেতে পারতো! 'প্লিজ গড, প্লিজ আর একবার বরিসের সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও। বরিসকেও আমাদের সঙ্গে পাঠাও। আর কিছু চাইবোনা তোমার কাছে'
পরেরদিনটা কাজের মধ্যে দিয়ে কীভাবে কেটে গেল, যেন বোঝাই গেল না। শেষ দিন। সুতরাং পুরো ব্যাপারটা গুছিয়ে, সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরে ডোরার মেসেজটা পেল ঋতজা। পরেরদিন সকালে ক্যাব আসবে ঠিক সকাল ন'টায়। তার আগে সে যেন চেক আউট করে হোটেলের লবিতে অপেক্ষা করে। আর মৈনাকের ফোন এলো তার ঘন্টা খানেক বাদে।
“কালকেই রওনা হচ্ছো তো?’
“হ্যাঁ”- মৈনাক দেখতে পাবে না, তাও ছোট্ট করে ঘাড় নাড়ে ঋতজা।
“কাল তো রাতে ফ্লাইট। তো সারাদিনের কী প্রোগ্রাম? কাল তো অফিস ও নেই। নিশ্চয়ই গালা প্ল্যান বানিয়েছো”।
“সারপ্রাইজ। এখন কিচ্ছু বলবো না। যখন সব জানবে না, পুরো ট্যারা হয়ে যাবে”
“ঠিক আছে। পরেই বোলো। তুমি ফিরে এসো তো। আর ভালো লাগছেনা”
“আর তো মাত্র একটা দিন। তারপরেই দেখা হবে”
“আমাকে এখন গোছগাছ করতে হবে। বুঝলে? কাল কথা হবে।
"গুডনাইট”
“গুডনাইট”
পরদিন সকালে লাগেজ টানতে টানতে লবির বাইরে এসে ঋতজা তো অবাক! গাড়ি থেকে হাসিমুখে নেমে আসছে বরিস। মানে? বরিস যে যেতে পারবেনা বলেছিল! আর ডোরা? ডোরা কোথায়?
“ডোরার বাচ্চা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ও তাই আসতে পারলো না। ফলে আমাকেই গাড়ি নিয়ে আসতে হল। ক্যাব ক্যানসেল করে নিজের গাড়িই নিয়ে এলাম।“ ঋতজার না বলা প্রশ্ন যেন অনুমান করেই, ডিকিতে লাগেজ রাখতে রাখতে বলে যায় বরিস।
“ও, আচ্ছা”, বলে, গাড়িতে উঠে পড়ে ঋতজা।
আর গাড়িতে বসেই তার মনটা খুশী খুশী হয়ে ওঠে। গাড়ি চলতে শুরু করে। চলতে থাকে তাদের টুকটাক কথাও। বেশ খানিকটা যাবার পরে রাস্তার দুপাশে বরফের আভাস দেখা যেতেই, ঋতজা উচ্ছ্বাসে শিশুর মত চেঁচিয়ে উঠলো,”বরফ, বরফ” তার এই ছেলেমানুষের মতন আনন্দ দেখে, বরিসের মুখেও হালকা হাসি ফুটে ওঠে।
“এখনিই এত খুশি। আসল বরফ দেখলে তো পাগল হয়ে যাবে।“
“তোমাদের দেশে বরফ নেই?” গীয়ার বদল করতে করতে জিগ্গেস করে বরিস।
“নাঃ, গরম দেশ আমাদের। আমি বরফ খুব ভালোবাসি। তবে এই প্রথম সত্যিকারের বরফ দেখছি”
“আচ্ছা”-বলে বরিস চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকে।
ঋতজার ও আর বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করে না।একমনে চারদিকটা দেখতে থাকে। যেন একটা সামান্য জিনিস ও মিস্ করে না যায়। আস্তে আস্তে দুপাশের বরফ ক্রমশই বাড়তে থাকে, আর জানলার কাঁচে চোখ ঠেকিয়ে ঋতজা দুচোখ দিয়ে যেন সেই বরফ গিলতে থাকে। এত সাদা! এত সুন্দর! ইশ্, এখানেই যদি থেকে যাওয়া যেত চিরকাল! হাঁ করে তাকিয়ে থাকার জন্যেই কিনা কে জানে! ঋতজার গলাটা একটু শুকনো লাগে।
“অনেকক্ষণ তো হয়ে গেল, একটু চা, কফি খেয়ে নিলে হতো না? টাট্রা পৌঁছতে দেরি আছে তো। তাই না?”- বরিসের উদ্দেশ্যে বলে সে।
“হুম্, একটু। দেখছি”
একটু বাদেই খাঁ খাঁ বরফ রাজ্যের মাঝেখানে খেলনা বাড়ির মতন একটা লাল মিষ্টি বাড়ির সামনে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে বরিস বললো, ”যাও, ক্যফে থেকে চা, কফি যা চাই খেয়ে এসো। আমি গাড়ি নিয়ে পেছনের পার্কিং লটে আছি”
“ তুমি যাবে না?”
“না”
বরিস যাবে না শুনে, কেমন যেন একা, একা, ভয়ভয় লাগে ঋতজার।
“থাক তাহলে। এখন খাব না”
ঋতজার কথায় চুপচাপ বরিস গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে, বরফের সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে অন্য পথ নেয়। এখন দু'পাশে গভীর বরফ। আদিগন্ত বিস্তৃত বরফের সাগর যেন। যেন পরিচ্ছন্ন আইসক্রিম দিয়ে তৈরি একটা দেশ। যতো দূর চোখ যায়, খালি বরফ আর বরফ! ঋতজার বিস্ময় যেন কাটতেই চায় না। তার মুগ্ধতা বাঁধ মানে না। আশ্চর্য আনন্দে তার মন ভরে যায়। দূরে সারির পর সারি দেবদারু, পাইনের অরণ্য। কালচে সবুজে মোড়া। ঋতজার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে, হঠাৎ ডানদিকে টার্ন নিয়ে বরফের অনেকটা ভেতরে নিয়ে গিয়ে গাড়িটা একেবারে থামিয়ে দিল বরিস।
অন্য দিকে ঘুরে এসে, ঋতজার দিকের দরজা খুলে ধরে বললো, ”এসো। বাইরে এসো। বরফ উপভোগ করতে হলে, বরফের মধ্যে এসে করতে হয়। গাড়িতে বসে হয় না।"
গাড়ি থেকে নামতে নামতে ঋতজা তাকিয়ে দেখলো, বরিসের মুখ লাল, চকচক করছে।
তার মানে ও ও তারই মতো একসাইটেড। এই ঠাণ্ডাতেও ঋতজার হাত অল্প অল্প ঘামছে।
“কত্তো বরফ না? আর সেই বরফের মধ্যে আমি। বিশ্বাস ই হচ্ছে না যেন!”
“এখানে কী বরফ দেখছো। ঐ যে গাছগুলো দেখছো, ওখানে যে কী অপরূপ দৃশ্য তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে, তুমি ভাবতেও পারবে না।"
"এসো", বলে হাত বাড়িয়ে ঋতজার হাতটা শক্ত করে ধরে, বরফের ওপর দিয়ে হাঁটতে থাকে বরিস। আর তার সঙ্গে ঋতজা। নীচে প্রায় হাঁটু অবধি ডুবে যাওয়া নরম বরফ। বরিসের উষ্ণ হাত শক্ত করে ধরে রয়েছে তাকে। এসব কী স্বপ্ন? না সত্যি! এমনভাবেও মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয়?! খানিকটা আসার পর ঋতজা একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, রাস্তা থেকে তারা অনেক দূরে চলে এসেছে।
পাইন গাছগুলো রাস্তার দিকটা সম্পূর্ণ আড়াল করে দিয়েছে। হঠাৎ একটা কেমন যেন অনুভূতিতে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল ঋতজা। বরিসের মুখ তার মুখের খুব কাছে। ঋতজা একটু অবাকই হয়ে যায়। বরিসের চোখ থেকে চোখ সরাতে পারেনা। কেমন একটা তীক্ষ্ণ অথচ ঘোর লাগা দৃষ্টি বরিসের চোখে। বরিসের গ্লাভস পরা হাতদুটো তার দু'গালে মুহূর্ত থমকে থেকেই ধীরে একটু একটু করে নীচের দিকে নামতে থাকে। আপনেই ঋতজার চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে। শরীরে একটা কাঁপন। আর তখনই, লোহার সাড়াশির মতো দুটো হাত ঋতজার উইন্ড পাইপের ওপর চেপে বসতে থাকে। এক ঝটকায় ঋতজার বন্ধ চোখ খুলে যায়।
উঃ, একটু বাতাস! তার চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। প্রাণপণে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে সে, বরিসকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। একটু বাতাসের জন্য ছটফট করতে লাগলো ঋতজা। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উঃ, ভগবান? তার সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। সেই দমবন্ধ কষ্টের মধ্যেই ঋতজা বুঝতে পারছে তার প্রায় অবশ শরীরটা বরফের ওপর পড়ে যাচ্ছে। আকাশের দিকে মুখ করে চিৎ হয়ে পড়ে আছে সে। অনেক কষ্টে চোখটা একটু খুলে দেখল, এই শীতেও বরিসের টকটকে লাল হয়ে যাওয়া মুখ ঘামে ভিজে গেছে। এক অদ্ভুত তৃপ্তির দৃষ্টি তার চোখে। ঈষৎ বেঁকে যাওয়া ঠোঁট থেকে ফোঁটা ফোঁটা থুতু গড়িয়ে পড়ছে।
ও কী হাসছে?
বরিসের হাত আরো একবার প্রবল শক্তিতে তার গলাটা টিপে ধরলো। শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নেবার সময় ঋতজা অনুভব করলো, ছাইরঙ মুছে গিয়ে আকাশটা চাপা আলোয় ভরে যাচ্ছে আর পেঁজা তুলোর মতো, অলৌকিক স্বপ্নের মতো নেমে আসছে অজস্র বরফের ফুল। তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। স্নো ফল শুরু হয়ে গেছে।