সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
সময় স্থির নয়। ঘটনা পরম্পরাও অ্যাবসার্ড নাটককে মনে পড়াচ্ছে বার বার। যেমন, এই মুহূর্তের ডেঙ্গির ডঙ্কা। সেদিন সুমনদা’র প্রেসে বসে আছি। একটা মশা এক ভদ্রলোকের গায়ে এসে বসল।
- ডেঙ্গির মশা! সুমনদার দৃঢ় ঘোষণা।
- কী করে বুঝলে? আমাদের প্রশ্ন।
- মশাটা ওকে আই কার্ড দেখিয়েছিল। গম্ভীর মুখে বললেন মশকবাহক।
এই একটা বিষয় লক্ষ্য করে অবাক না হয়ে পারিনা। চূড়ান্ত অসুবিধের মধ্যে পড়েও মানুষ দিব্যি ঠাট্টা, তামাসা করে তা নিয়ে। এই মুহূর্তে মহামারীর সামনে দাঁড়িয়ে সে চুটকি লিখছে, কার্টুন আঁকছে, প্যারডি গাইছে। এককথায় বিপণ্ণতা হয়ে উঠছে শিল্প মাধ্যম। আসলে, কৌতুক সুখের আতিশয্য থেকে আসে না। হঠাৎ অসঙ্গতি, বিড়ম্বনা বা লজ্জার পীড়া থেকেই উঠে আসে। হাসির আড়ালে একরকম নিয়মভাঙার আমোদ থাকে। লুকোনো থাকে নিয়মতান্ত্রিকতাকে পরিহাস। হাসি প্রতিবাদের আরএক নাম। দেখুন না, এই পুজোতেই তো অসুররূপে মণ্ডপে হাজির হলেন ডাক্তারবাবুরা। তাই নিয়েও কত কৌতুক করলেন তাঁরা নিজেরাই। নিজেকে নিয়ে হাসা বড় হিম্মতের ব্যাপার। আর, যাঁরা যমের সঙ্গে রোজ পাঞ্জা লড়েন তাঁদের তো সে হিম্মত থাকবেই। তবে, সমস্যা হয়, যদি সহনশীলতার অভাব ঘটে, তখন। গণতান্ত্রিক পরিসরে নিজের মত প্রকাশ করতে গেলে যদি ক্ষমতা গলা টিপে ধরে। প্রতিবাদের জন্য হাঁটলে অরওয়েলের পৃথিবীর বড়দা’ এসে অতি মিহিন স্বরে প্রশ্ন করেন – গতকাল কোথায় ছিলেন? তখন গলাটা কেমন শুকিয়ে আসে। হাসি নয়, গলা চিরে বেরোতে চায় চিৎকার। তখন, সেই চিৎকারকেই অবলম্বন করে গাইতে হয়, আঁকতে হয়, লিখতে হয়। যদি সেটাও না পারি, তবে, ক্ষমতার আস্ফালনের মধ্যেই মাথা উঁচু রাখার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতেই হয়। সেটাই করে চলেছি। সঙ্গে আপনারা আছেন।
সকলে সজাগ থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা নিরন্তর।