সম্পাদকীয় : স্বপন দেব
Posted in সম্পাদকীয়
স্বপন দেব
বাংলা সাহিত্যকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল উনিশ শতকের প্রথম পর্বেই, এক ধরনের মুদ্রিত বই, যা বটতলার বই নামে পরিচিত। সস্তা দামে, অনেক সময় দুর্বল প্রোডাকশনে খ্যাত-অখ্যাত লেখকেরা তাঁদের সেলফ আইডেন্টিটিকে সোশ্যাল আইডেন্টিটির সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করার সুযোগ গ্রহণ করলেন। আজ যাকে আমরা ‘বাজার’ বলি, উনিশ শতকের সেই বাজারে এলো সেলফ আর সোশ্যালের এক জনপ্রিয় টেক্সট – বটতলা !
সমাজ কোনদিন এক জায়গায় থেমে থাকেনা। যুগ বদলায়, আসে নতুন রুচি, নতুন কালচার, নতুন টেকনোলোজি। বটতলা যে বাজার তৈরী করেছিল, তাকে কব্জা করতে উচ্চবর্গের মানুষরা সেদিন থেকে আজ অবধি এই বটতলাকে রুচিহীন অপসংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে এবং ঔপনিবেশিক শাসকের আঁতাতে বটতলার মুদ্রণ নিষিদ্ধ করে নিজেদের বই বাজারে চালু করলেন। সেই থেকে শুরু হোল মুদ্রণ শিল্পের অপ্রতিদ্বন্দী জয়যাত্রা।
পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে লিটল ম্যাগাজিন জনপ্রিয় হলেও এই চালু সাময়িক পত্রিকা গুলির খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। যুগ আরো এগোল। বিগত তিন দশক ধরে তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মানব সভ্যতা এবং তার অভ্যাস যে বেগে বদলে যাচ্ছে তার তুলনা ইতিহাসে নেই। এটা এখন এতোটাই বিকশিত যে একে উপেক্ষা করা আর কোনমতেই সম্ভব নয়।
ইন্টারনেট এর প্রসার আর তার ব্যবহার যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে তাকে একটা “বদল ঝড়” বলা যেতেই পারে আর মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্য চর্চার যে প্রচলিত ধারা, তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এই “অন লাইন” মাধ্যম। এই অন লাইনেই প্রকাশিত হচ্ছে নিত্য নতুন বিভিন্ন স্বাদের মাসিক পত্রিকা। ঋতবাক ও একটি অনলাইন বাংলা সাহিত্য নির্ভর মাসিক পত্রিকা। আর ঠিক এইখানেই আমার প্রশ্ন, বাংলা সাহিত্য কাকে বলে ? জানি, আপনারা সহজেই বলে দেবেন, বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যই ‘বাংলা সাহিত্য’।
কিন্তু, তাই কি ? তথ্য-প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অগ্রগতির ফলে সমগ্র পৃথিবীটাই তো এখন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এ পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক কারণেই এখন ইংরাজি ভাষা আর শুধুমাত্র ইংরেজদের নয়। এখন তা ‘গ্লোবাল ভাষা’। তাই দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে নিজেকে অন্বিত করতে প্রায় প্রত্যেকেই এখন এই ভাষার সাহায্য নিয়ে থাকেন। ইংরাজি জানেন না এমন লোকেরাও কিন্তু মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ল্যাপটপ, ডেস্ক টপ, নেটওয়ার্ক, উইন্ডোজ, টিভি, রিচার্জ, সিরিয়াল, কম্পিউটার, ব্যালান্স শব্দগুলি ব্যবহার করেন। স্বয়ং ঋতবাক সম্পাদিকাই ঋতবাকের কভার ফটো দেখে মন্তব্য করেছেন, Grt !! তাহলে কি বাংলা সাহিত্য কে ‘বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম’- এই গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখতে পারি ?
আসলে, ভাষা-কেন্দ্রিক সাহিত্যের সময় টা আমরা এক লাফে পেরিয়ে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক অগ্রগতি মানুষকে আর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকতে দিচ্ছেনা। সমস্ত পৃথিবীটাই তার আপন সমাজ। জন্ম নিয়েছে গ্লোবাল সংস্কৃতি। সুতরাং ভাষা নয়, নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর জীবন হয়ে উঠুক সাহিত্যের বা অন লাইন সাহিত্য পত্রিকার মানদণ্ড। তা যদি মানতে পারি, তবে বাঙ্গালীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইংরাজী ভাষায় রচিত সাহিত্যও ‘বাংলা সাহিত্য’।
ঋতবাক এর উদ্দেশ্য খুব প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা আছে। কিন্তু উদ্দেশ্য-সাধনের জন্যে চাই প্রচেষ্টা। আর এই প্রচেষ্টায় ঋতবাক জন্মলগ্ন থেকেই সফল। অন লাইন এই মাসিক পত্রিকার দর্শক ও পাঠকের সংখ্যা, নানা স্বাদের সাহিত্য প্রকাশ, এর অলঙ্করণ এবং নাম টি শুধু পাঠকদের নয়, লেখক কবিদের ও আকৃষ্ট করেছে। তাই ঈশানী রায়চৌধুরীর মত প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকেরাও লেখা পাঠাচ্ছেন ঋতবাক এ। তাই উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার মাপকাঠিতে আমার ঋতবাক কে ১০০য় ১০০ দিতে আপত্তি নেই !
আর একটি কথা। সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যম যেমন বদলেছে, সাহিত্য রচনার আঙ্গিক ও বদলের প্রয়োজন আছে। মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্যে কেবলমাত্র অক্ষর কলমে লিখেই ভাব প্রকাশ করার সুযোগ ছিল। অন লাইন পত্রিকায় কিন্তু আপনি অনেক বেশী সুযোগ পাচ্ছেন ভাব প্রকাশের। আপনার হাতের অ্যান্ড্রয়েড ফোন টি একই সঙ্গে ছবি, ভিডিও ক্লিপিং, বাংলায় লিখে সরাসরি মেল করার সুযোগ দিচ্ছে ! জুড়ে দিন না আপনার সাহিত্যকর্মের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি, কয়েক কলি গান কিংবা ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপিং ! আমি ইতিমধ্যেই এই নতুন আঙ্গিক ব্যবহার করা শুরু করেছি। আজ এই পর্যন্ত। ভালো থাকুন। ভালো ভাবুন ! ভালো লিখুন !!
সমাজ কোনদিন এক জায়গায় থেমে থাকেনা। যুগ বদলায়, আসে নতুন রুচি, নতুন কালচার, নতুন টেকনোলোজি। বটতলা যে বাজার তৈরী করেছিল, তাকে কব্জা করতে উচ্চবর্গের মানুষরা সেদিন থেকে আজ অবধি এই বটতলাকে রুচিহীন অপসংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে এবং ঔপনিবেশিক শাসকের আঁতাতে বটতলার মুদ্রণ নিষিদ্ধ করে নিজেদের বই বাজারে চালু করলেন। সেই থেকে শুরু হোল মুদ্রণ শিল্পের অপ্রতিদ্বন্দী জয়যাত্রা।
পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে লিটল ম্যাগাজিন জনপ্রিয় হলেও এই চালু সাময়িক পত্রিকা গুলির খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। যুগ আরো এগোল। বিগত তিন দশক ধরে তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মানব সভ্যতা এবং তার অভ্যাস যে বেগে বদলে যাচ্ছে তার তুলনা ইতিহাসে নেই। এটা এখন এতোটাই বিকশিত যে একে উপেক্ষা করা আর কোনমতেই সম্ভব নয়।
ইন্টারনেট এর প্রসার আর তার ব্যবহার যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে তাকে একটা “বদল ঝড়” বলা যেতেই পারে আর মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্য চর্চার যে প্রচলিত ধারা, তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এই “অন লাইন” মাধ্যম। এই অন লাইনেই প্রকাশিত হচ্ছে নিত্য নতুন বিভিন্ন স্বাদের মাসিক পত্রিকা। ঋতবাক ও একটি অনলাইন বাংলা সাহিত্য নির্ভর মাসিক পত্রিকা। আর ঠিক এইখানেই আমার প্রশ্ন, বাংলা সাহিত্য কাকে বলে ? জানি, আপনারা সহজেই বলে দেবেন, বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যই ‘বাংলা সাহিত্য’।
কিন্তু, তাই কি ? তথ্য-প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অগ্রগতির ফলে সমগ্র পৃথিবীটাই তো এখন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এ পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক কারণেই এখন ইংরাজি ভাষা আর শুধুমাত্র ইংরেজদের নয়। এখন তা ‘গ্লোবাল ভাষা’। তাই দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীর সাথে নিজেকে অন্বিত করতে প্রায় প্রত্যেকেই এখন এই ভাষার সাহায্য নিয়ে থাকেন। ইংরাজি জানেন না এমন লোকেরাও কিন্তু মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ল্যাপটপ, ডেস্ক টপ, নেটওয়ার্ক, উইন্ডোজ, টিভি, রিচার্জ, সিরিয়াল, কম্পিউটার, ব্যালান্স শব্দগুলি ব্যবহার করেন। স্বয়ং ঋতবাক সম্পাদিকাই ঋতবাকের কভার ফটো দেখে মন্তব্য করেছেন, Grt !! তাহলে কি বাংলা সাহিত্য কে ‘বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম’- এই গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখতে পারি ?
আসলে, ভাষা-কেন্দ্রিক সাহিত্যের সময় টা আমরা এক লাফে পেরিয়ে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক অগ্রগতি মানুষকে আর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকতে দিচ্ছেনা। সমস্ত পৃথিবীটাই তার আপন সমাজ। জন্ম নিয়েছে গ্লোবাল সংস্কৃতি। সুতরাং ভাষা নয়, নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর জীবন হয়ে উঠুক সাহিত্যের বা অন লাইন সাহিত্য পত্রিকার মানদণ্ড। তা যদি মানতে পারি, তবে বাঙ্গালীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইংরাজী ভাষায় রচিত সাহিত্যও ‘বাংলা সাহিত্য’।
ঋতবাক এর উদ্দেশ্য খুব প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা আছে। কিন্তু উদ্দেশ্য-সাধনের জন্যে চাই প্রচেষ্টা। আর এই প্রচেষ্টায় ঋতবাক জন্মলগ্ন থেকেই সফল। অন লাইন এই মাসিক পত্রিকার দর্শক ও পাঠকের সংখ্যা, নানা স্বাদের সাহিত্য প্রকাশ, এর অলঙ্করণ এবং নাম টি শুধু পাঠকদের নয়, লেখক কবিদের ও আকৃষ্ট করেছে। তাই ঈশানী রায়চৌধুরীর মত প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকেরাও লেখা পাঠাচ্ছেন ঋতবাক এ। তাই উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার মাপকাঠিতে আমার ঋতবাক কে ১০০য় ১০০ দিতে আপত্তি নেই !
আর একটি কথা। সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যম যেমন বদলেছে, সাহিত্য রচনার আঙ্গিক ও বদলের প্রয়োজন আছে। মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্যে কেবলমাত্র অক্ষর কলমে লিখেই ভাব প্রকাশ করার সুযোগ ছিল। অন লাইন পত্রিকায় কিন্তু আপনি অনেক বেশী সুযোগ পাচ্ছেন ভাব প্রকাশের। আপনার হাতের অ্যান্ড্রয়েড ফোন টি একই সঙ্গে ছবি, ভিডিও ক্লিপিং, বাংলায় লিখে সরাসরি মেল করার সুযোগ দিচ্ছে ! জুড়ে দিন না আপনার সাহিত্যকর্মের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি, কয়েক কলি গান কিংবা ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপিং ! আমি ইতিমধ্যেই এই নতুন আঙ্গিক ব্যবহার করা শুরু করেছি। আজ এই পর্যন্ত। ভালো থাকুন। ভালো ভাবুন ! ভালো লিখুন !!