গল্প - মনোজ কর
Posted in গল্পদশম পর্ব
রেবা দরজা খুলেই বললো,’ আসুন মিঃ রায়। আসুন সুন্দরী। একি! কৃষ্ণকালীবাবু আপনি…’
কৃষ্ণকালী বলল,’ আমিও চলে এলাম একসঙ্গে।‘
রেবা বলল,’ অভিনন্দন। জিনিয়ার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে?’
- না এখনও হয়নি।আমি একটু আগেই কাঠমান্ডু থেকে ফিরেছি। তারপর ব্যস্ত ছিলাম।‘
রেবা বলল,’ আপনার ভালোই লাগবে আপনার নতুন পুত্রবধূকে।আমি যখন কাঠমান্ডুতে ছিলাম ও তখন একটা হোটেলে কাজ করত। ভীষণ মিষ্টি স্বভাবের। আমি কয়েকটা চেয়ার ব্যবস্থা করি। আপনার কী নেবেন-চা,কফি বা অন্য কিছু পানীয়?’
কৃষ্ণকালী বলল,’ না ওসবের দরকার নেই। আমরা এখানে যে কাজে এসেছি সেই প্রসঙ্গে আসা যাক। আমি তোমার বাবার সম্বন্ধে কতগুলো কথা বলতে চাই। রেবা বলল,’বলুন।‘
-আমি কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলাম কিছু ব্যাপার নিজে পরখ করে দেখতে। আমার কিছু লোকজন আছে যাদের কাছ থেকে আমি অনেক খবর পাই। বলতে পার ওরা আমাকে প্রয়োজনমত খবর সরবরাহ করে। আমার কাছে এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই যার ভিত্তিতে আমি ওখানকার ওপরওয়ালাদের কাছে যেতে পারি। কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে শিবুলালই তোমার বাবার খুনী।
রেবা কঠিন স্বরে বলল,’ আমি যদি সন্ধ্যার একটু আগে জানতে পারতাম তাহলে ভালো হত।‘
-ঠিক আছে। এবার ব্যবসার কথায় আসা যাক। আমি ১৫শতাংশ কিনেছিলাম এই ভেবে যে তাতে তোমার সাহায্য হবে কারণ তোমার তো আমার পরিবারের একজন হওয়ারই কথা ছিল। সে যাই হোক ঐ মোটেলটা কিন্তু এভাবে আর চলবে না। ওটার দাম বাড়ছে। ট্যাক্স অনেক বেড়ে গেছে। আর তুমিও ওটা নিয়ে কিছু করতে পারবে না।উত্তরদিকের জমিটা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর দক্ষিণের জায়গাটা তো ঐ লোকগুলো কিনে রেখেছে। মোটেলটা হাতে পেলেই বিল্ডিং এর কাজ শুরু করে দেবে। তোমার পক্ষে বিক্রী করে দেওয়াই ভালো।
-ঠিকই বলেছেন। আমারও মনে হয় ওটা বিক্রী করে পাকাপাকিভাবে এখানে চলে আসাই ভালো হবে।
-আমার মনে হয় শিবুলাল খুব চালাক লোক। ও মনে হয় বেশি অংশটা হাতে নিয়ে ঐ লোকগুলোর সঙ্গে দরাদরি করতে চায়।লোকগুলোর পক্ষেও একজনের সঙ্গে কথা বলা সুবিধাজনক। আমার ইচ্ছে আমি সোজাসুজি ওই লোকগুলোর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা রফা করে নিই। মাঝখানে এই শিবুলালকে আমার একদম ঠিক লাগছে না। আমায় বল তুমি কত চাইছ?
-শিবুলাল আমাকে ত্রিশ লক্ষ বলেছে। আমার মনে হয় এটা খুব কম।
-কত পেলে তোমার মনে হয় ঠিক আছে?
-জানিনা। তবে ত্রিশ লক্ষ তো নিশ্চয়ই নয়।
-ঠিক আছে। তুমি আমাকে দশ দিন সময় দাও। আমি তোমার চল্লিশ শতাংশ আশি লক্ষ টাকায় বিক্রী করার চেষ্টা করব। যদি তার চেয়ে বেশি পাই তবে বেশিটার অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার। রাজি? আমার পনের শতাংশ আমি একই অনুপাতে বিক্রী করবো।
-আমি রাজি। তবে আমার সন্দেহ এই দামে আপনি বিক্রী করতে পারবেন না।
-এখানে প্রিন্টার আছে?
- হ্যাঁ আছে।
-তাহলে একটা চুক্তিপত্র তৈরি করা যাক। মিঃ রায় ,সুন্দরী আপনারা যদি একটা চুক্তিপত্র তৈরি করে দেন তাহলে আমি এখানেই সই করে রেবাকে দিয়ে দিচ্ছি।
পানু রায় বললেন,’ কাল সকালে করা যায় না?’ বড়কালী বলল,’ আজ রাতেই মিটিয়ে ফেলা ভালো।‘
রেবা ল্যাপটপ আর প্রিন্টার নিয়ে এল। সুন্দরী পানু রায়ের বয়ান অনুযায়ী টাইপ করে একটা সংক্ষিপ্ত চুক্তিপত্র তৈরি করে ফেলল। তারপর পানু রায়কে দেখিয়ে একটা প্রিন্ট নিয়ে রেবাকে এবং রেবার পড়া হয়ে গেলে বড়কালীকে দিল। বড়কালী না পড়ে রেবাকে জিজ্ঞাসা করল,’ ঠিক আছে?’ রেবা সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। বড়কালী সই করে দিল। ততক্ষণে আর এক কপি প্রিন্ট বের করে সুন্দরী রেবাকে দিয়ে সই করে নিল। তারপর কাগজ বিনিময় শেষ হলে পানু রায় বললেন ,’ তাহলে আমাদের কাজ আজ রাতের মত শেষ। কৃষ্ণকালী,তুমি আমার সঙ্গে কাল সকালে দেখা করবে?’ বড়কালী বলল,’দেখা যাক।‘ পানু রায় রেবাকে জিজ্ঞাসা করলেন,’ আপনাকে এখানে পাব?’ রেবা বলল,’কিছু দরকার হলে অবশ্যই।‘ বড়কালী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। সুন্দরী বলল,’ দাদু, এবার বাড়ি ফিরতে হবে। অনেক রাত হল। সবাই ডিনার টেবিলে অপেক্ষা করছে। আর তাছাড়া বাড়িতেও অনেক কাজ আছে।‘ পানু রায় বললেন,’ আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। ক্ষিদে পেলে আমার মাথা কাজ করে না।‘ বড়কালী বলল,’ রেবা, আমি একটু পরে ফিরব। এককাপ কফি হবে? মাথাটা ধরে গেছে।‘ রেবা পানু রায় আর সুন্দরীকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এল।
রাস্তায় বেরিয়ে পানু রায় সুন্দরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,’ আচ্ছা একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না যে শিবুলাল যদি পনের শতাংশের জন্য ত্রিশ লক্ষ টাকা দর দিল তাহলে চল্লিশ শতাংশের জন্যও কেন একই দাম দিল?’ সুন্দরী বলল,’ কেন? বুঝতে পারছি না।‘ পানু রায় বললেন,’ আমার দৃঢ় ধারণা ও আমাকে চল্লিশ শতাংশের জন্য আশি লক্ষ টাকাই দাম দিত যদিনা ঐ ফোনটা আসত।কিছুতো একটা ঘটেছিল।,’ সুন্দরী জিজ্ঞাসা করল,’ কেউ কি দেখা করেছিল?’ পানু রায় বললেন,’ না। আর তো কেউ আসেনি। চলো, কাল দেখা যাবে।ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে আমার।‘
(চলবে)
0 comments: