0

সম্পাদকীয়

Posted in







অশনি সংকেত সেদিনই ছিল। যেদিন কোনও অজ্ঞাত এক কারণে বদলে গিয়েছিল মুঘল সরাই জংশনের নাম। এর আগে পরে ঘটেছিল এমন কিছু ঘটনা, যাদের মধ্যে কোনও আপাত যোগসূত্র না থাকলেও, তাদের মধ্যে ছিল এক অদৃশ্য বন্ধনসূত্র। 

সম্প্রতি আমরা আলোড়িত দ্বাদশ শ্রেণীর জাতীয় পাঠক্রম থেকে ভারতবর্ষের মুঘল ইতিহাস সংক্রান্ত অধ্যায়গুলি অকস্মাৎ কোনও অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে বাদ পড়ায়। পাঠ্য পুস্তকের ওই অংশগুলো নাকি 'অপ্রাসঙ্গিক' হয়ে পড়েছিল। তাই এই পরিমার্জন। 

অপ্রাসঙ্গিক? নাকি কোনও এক নির্দিষ্ট নীতিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার মরিয়া চেষ্টা? যার পূতি গন্ধময় উপস্থিতি আজ শুধু সিলেবাস বদলে নয়, আমাদের প্রাত্যহিক যাপনের প্রায় সর্বত্র। 

এভাবেও কি হয়? মানুষের মগজে, মজ্জায়, রক্তস্রোত আর অস্তিত্বের গভীরে যা কিছু, তাকে আমরা ইতিহাস বলতে পারি বা নাও বলতে পারি, কিন্তু উত্তরাধিকারের যে বীজ প্রজন্ম ব্যাপী বিস্তৃত, তাকে কি এইভাবে উপড়ে ফেলা যায়? তাহলে তো ইসলামের পদার্পণের বহু আগে আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে নির্মিত অতিকায় বুদ্ধ মূর্তিগুলি বহু কাঠখড় পুড়িয়ে দীর্ঘদিনের অপচেষ্টায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও তো সেই প্রত্ন-রত্নগুলি আমাদের চেতনাকে আলোকিত করে রাখতো না। 

স্মৃতিকে তো মুছে দেওয়া যায় না! এমনকি প্রকৃতিও কখনও কখনও ব্যতিক্রমী হয় ঐতিহ্য রক্ষায়। তাই তো আজও আলতামিরার গুহামানবদের প্রাগৈতিহাসিক যুগের অঙ্কনশিল্প হাজার হাজার বছরের প্রাকৃতিক সব রোষানল মোকাবিলা করে বেঁচে রয়েছে আপন গরিমায়। 

তাই মানুষ নিজেই যখন নিজের হেঁটে আসা পথের মানচিত্র বদলে দিতে চায়, বিকৃত করতে চায়, সে ভুলে যায় সময়ের পাথরে লিপিবদ্ধ কাহিনী আসলে অপরিবর্তনীয়। অনেক অনেক জলস্রোত তার ওপর দিয়ে বয়ে গেলেও তার বুনিয়াদ রয়ে যায় অটুট।

সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।

শুভেচ্ছা অফুরান!

0 comments: