0

প্রবন্ধ - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in









আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। অর্থাৎ পার্বণ ছাড়া আমরা বাঁচিনা। পার্বণ মানেই গতানুগতিক জীবনের থেকে একটু অন্যরকম বাঁচা। স্বাদ বদল। তারপর আবার দৈনন্দিনতায় ফিরতে ভালো লাগে। একসময় পার্বণ বা উৎসবগুলো প্রবর্তন হয়েছিল সামাজিক কারণে। মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে। একসঙ্গে বাঁচতে শেখাতে। প্রকৃতির নানা দুর্বিপাকের মধ্যেও প্রাণের যে প্রকাশ আমাদের পূর্বপুরুষেরা লক্ষ্য করেছিলেন, এইসব সামাজিক পার্বণ তারই ফল। অন্তত আমাদের দেশের ক্ষেত্রে একথাটা সর্বৈব সত্য। তারপর ধীরে ধীরে আদিভারতের সঙ্গে বৈদিকভারতের মিলন ঘটল। জনজাতির পার্বণে ধর্মের প্রভাব পড়ল, নাকি ধর্মে জনজাতির পার্বণের প্রভাব পড়ল, সেটা রহস্য রইল। কিছু গুহ্যকথা রয়ে গেলো জনজাতীয় ধর্মের। আর আমরা দেখতে পেলাম, বেদান্তের শ্লোকে শ্লোকে অন্তরদেবতার প্রকাশ উদযাপন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বেদান্তে আনন্দকেই ব্রহ্ম বলা হয়েছে। কিন্তু ভেতরের সেই আনন্দের উৎস কিভাবে যে শুকিয়ে গেলো! আচারসর্বস্ব ধর্মের মধ্যে দিয়ে আমাদের সেইসব সামাজিক পার্বণের পুনঃপ্রকাশ ঘটল।

আসন্ন বসন্ত উৎসব এরকমই এক ফাল্গুনী পূর্ণিমায় আরম্ভ হয়েছিল নিশ্চয়। ফাল্গুন মাসে যখন প্রকৃতি স্ফুটনোন্মুখ সেই সময়ে মানবের যৌবন উৎসব। প্রাচীন কাব্যসাহিত্যেও আমরা বসন্ত উৎসবের প্রভূত উল্লেখ পাই। জীবন যেন অনন্ত এক প্রাণের উল্লাস। কিন্তু উৎসবের পরেই যেমন অবসাদ অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তেমনই আমরাও বিষাদে ডুবে যাই উৎসবের পর। অথচ কত না আয়োজন! কত ফুলের নির্যাস, কত লতাকুঞ্জের নির্মাণ! কত নব নব খেলার কৌশল! তবু শেষ রক্ষা হয়না। কুঞ্জের লতা ছিঁড়ে যায়। চারিদিক থেকে রাত্রিশেষের কুবাতাস বইতে থাকে। আমার মনে পড়ে বাসবদত্তার কথা। সেও এমনি এক উৎসবরাত্রিশেষে ফিরে আসছিল। সন্ন্যাসীর গায়ে পা পড়ে ছিল তার। লজ্জিত হয়ে তাঁকে গৃহে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ধারণা ছিল, হয়ত সন্ন্যাসী তার গৃহে গিয়ে তুষ্ট হবেন! কিসে তুষ্ট? তার সেবায়, তার রূপে, তার যৌবনে। কেননা তার যৌবনের উৎসব তখনও অব্যাহত। যেদিন ব্যাহত হলো সেদিন সে সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য পেলো। সেদিন জানা গেলো, বৃথা এই অহংকার। জীবন দুদিন বৈ তো নয়! তবু কেন আমরা জেনেশুনে এই খেলায় মাতি? মহাজনের পথে যাই বরং। হোরি বা ফাগুয়া খেলা উত্তর ভারতের ঐতিহ্য। সেখানে প্রবল শীত পড়ে। শীতে কুঁকড়ে থাকে প্রকৃতি ও প্রাণী, সকলেই। গাছের পাতা খসে পড়ে। ফুল ফোটেনা। বেশ কিছু জীব শীতঘুমে ডুবে থাকে। ফাল্গুন মাসে শীত কমলে সকলে জেগে উঠতে থাকে। গাছে গাছে নতুন পাতা ফুলের কুঁড়ি আড়মোড়া ভাঙে। শীতার্ত মানুষ তাই শীতবুড়ি হোলিকাকে রাক্ষসী মেনে পুড়িয়ে দেয়। সেই আগুনের তাতে নিজেদের সেঁকে নেয়। কিন্তু আমাদের এই পূর্বপ্রান্তে তো শীত তেমন জাঁকিয়ে পরেনা। শীত এখানে আরামদায়ক। তাই শীত চলে গেলে যে আমরা খুব খুশি হই তা নয়। তাই বসন্ত উৎসব বলে আমাদের তেমন কিছু নেই। বরং শারদোৎসব আছে। এমন সময়ে শ্রীচৈতন্যদেব গেলেন বৃন্দাবন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন ব্রজবাসী হোরি খেলে। ভারী একটা উৎসব হয়। ভক্তিতে প্রেমে বৃন্দাবনের মানুষ রঙখেলায় মেতে ওঠে। ফিরে এসে তিনি একটি বৈষ্ণব উৎসব প্রবর্তন করলেন। সে উৎসবের নাম দোলযাত্রা। কেন দোল? কারণ কৃষ্ণকে মনে করে আনন্দে মন আন্দোলিত হচ্ছে। মনে দোলা লাগছে। তাই দোল। মহাপ্রভু বললেন- তোমরা সকলে এই দিনে কৃষ্ণকে আবীর দেবে। আর পরস্পরকে আবীর দেবে ও মিষ্টিমুখ করাবে। কিন্তু আবীর দেবার আগে জিজ্ঞেস করে নেবে, তোমাকে রঙ দিতে পারি? সম্মতি বিনা রঙ দেবেনা। মহাপ্রভুর এমন নিয়মের ভিতরের কারণ কি? আমার মন কৃষ্ণপ্রেমের রাগে রঞ্জিত। তুমি কি আমার মতোই প্রেমানুরাগে রঞ্জিত? তবে এসো তোমায় সেই রাগের রঙে রাঙাই। আমরা যেন শ্রীরাধার মতোই কৃষ্ণপ্রেমে রঞ্জিত হই। তাই ক্রমে আমাদের চিদানন্দস্বরূপ কৃষ্ণ ও তাঁর অজস্র প্রেমাস্পদার আবীর খেলার কাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো দোল। তাই বসন্ত মানেই রঙ। কিসের রঙ? কৃষ্ণপ্রেমের রঙ। অনুরাগের রঙে অনুরঞ্জিত হবার দিন।

কিন্তু আমরা বাইরে রঙ খুঁজতে যাই। ভিতরে রঙ তো খুঁজে পাওয়া যায়না! তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ পায়। আমাদের অন্তর্মুখীনতা যত কমছে, ততই অন্তরের আনন্দের উৎস শুকিয়ে আসছে। অনেকেই বলতে পারেন, দোল তো বেশ একটা সেক্যুলার উৎসব। তো তার মধ্যে কৃষ্ণ কেন? অন্তত সব সামাজিক উৎসবেরই তো বিবর্তন আছে! তাই কৃষ্ণকেও একটু মেলে ধরা যাক। কৃষ্ণ অর্থাৎ যিনি আকর্ষণ করেন। মনের মানুষ তিনি। শরীরের মধ্যে থেকেই তিনি আমাদের আকর্ষণ করছেন প্রতিনিয়ত। তাঁকে কেউ ব্যক্তি ভাবেন, কেউ নিরাকার এক অস্তিত্ব ভাবেন, কেউবা চরাচর জুড়ে এক নিখিল অস্তিত্ব অনুভব করেন। বৈষ্ণবীয় উৎসবে পরম অস্তিত্বের এই ধারণাটুকু কিন্তু একটি অত্যাবশ্যক শর্ত।

কিন্তু বিবর্তন আমাদের কোথায় এনে ফেলেছে! সেই উপলব্ধির জগত অন্তর্হিত। সীমিত শরীরের সীমিত ইন্দ্রিয়বল দিয়ে আমরা মাত্র সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রঙ দেখতে পাই। এবং মূর্খের মতন ভেবে নিই, এ বিশ্বে মাত্র সাতটিই রঙ আছে। মিলিয়ে মিশিয়ে বাড়িয়ে কমিয়ে কিছু রকমফের ঘটতে পারে। তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু তাই কি? বিজ্ঞান তো বলছে আমাদের স্নায়ুকোষ মাত্র ওই কটি রঙের ছবিই মস্তিষ্কে পাঠাতে পারে। বাকি এই মহাবিশ্বে কত যে রঙ! হায় মানুষ! আলট্রা ইনফ্রার ছড়াছড়ি। ফ্রিকোয়েন্সি ধরবার মতন দেহ তৈরি নয়। আমরা তাই ওই দিয়েই নিজেদের ভরিয়ে রাখি। যে রঙ চোখে দেখা যায়না অথচ হৃদয়ে লাগে সেই রঙের সন্ধান করিনা আর।

অথচ বাইরের এই রূপ রস স্পর্শ গন্ধ শব্দ ও বর্ণের পৃথিবীর কিন্তু একটি আন্তরিক রূপ আছে। সেখানে সে অসীম। রবীন্দ্রনাথের রাজা নাটকে রাণী যখন রাজাকে দেখতে পেলেন তখন আঁধার। বাইরের সব আলো নিভে গেছে। চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে। অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহি রে। অথচ রাণীকি কম চেয়েছিলেন বাইরে রাজাকে দেখতে? তাঁর ধারনায় রাজার অনুপম সৌন্দর্য যে নয়ন ভরে দিতে পারত! কিন্তু আঁধারে, বাহ্যিক রূপের অন্তরালে এক অনুপম সৌন্দর্য তিনি উপলব্ধি করলেন। ঠিক যেমন আমরা অন্তরে পরমাস্পদের প্রেম অনুভব করি। সর্বসত্ত্বাকে এক শান্ত আনন্দে ভরিয়ে দেয় সেই অনুভুতি। অবশেষে রাজা ও রাণী সেই অনুরাগে রঞ্জিত হলেন। প্রেমের উৎসব, বসন্তের উৎসব শুরু হলো। তাদের সেই উৎসব জীবনকে অনন্তের স্পর্শ দিয়েছিল। কারণ তা আমোদ নয়। তাহলেই আসল কথাটা বলা হলো। যা আমোদ তা আনন্দ নয়। পার্বণের প্রয়োজন আছে বৈকি! কিন্তু হৃদয়ের একুল ওকুল ভাসানো যে আনন্দ আমরা উৎসব থেকে পেতে চাই তা পাওয়া হয়ে ওঠেনা।

আজকাল বেশির ভাগ সময়েই মনে হয়, আমরা বড় বেশি বাইরেটা নিয়ে মেতে আছি। তাৎক্ষণিক সুখ স্বাচ্ছন্দ আমোদ প্রমোদ আমাদের জীবনধারণের একমাত্র লক্ষ হয়ে উঠেছে। দুঃখ বস্তুটাকে আমরা সবলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। অথচ ওইটেরই প্রয়োজন জীবনে। দুঃখ আমাদের অন্তর্মুখ করে। নিজের মনের গহনে ডুব দিতে পারা যায়। নিজের সঙ্গে একা থাকতে থাকতে কখন যেন আত্মোপলব্ধি ঘটে যায়। তখন আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর, ভেবে ভেবে আকুল হই। ভালবাসার একটা উৎস খুলে যায়। বাইরে যা দেখি তাইই রঙিন লাগে। ধূসর মলিন সব সরে যায়। স্বার্থপরতা সরে যায়। দুঃখ আমাদের উদার করে। কিন্তু এখন আমরা ঘন ঘন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হচ্ছি। শোকের ওষুধ। দুঃখের ওষুধ। ব্যর্থতার ওষুধ। সফলতার ওষুধ। সব আছে। দুঃখের স্পর্শ থাকবেনা আর। সুখের খনির সন্ধান। প্লেজার হান্ট। ব্লিস নয়। যেন ডেড সী তে ভেসে আছি। উপরিতলেই সমুদ্র অবগাহন। অন্তরে কি আছে জানা নেই। এত যে শরীর আর মনকে আরামে আর সুখে রাখার চেষ্টা, আদতে তা যে কিসের জন্য তা আমরা জানিনা।

আর জানিনা বলেই মন্দিরে দেবতার থানে অবিরত ভিড়। মানতের বাড়াবাড়ি। কারণ ভগবান আমাদের সুখে রাখবেন। সুখ কি? জানিনা। ভগবানের কাছে কি চাইব? জানিনা। কি পেলে খুশি হই? জানিনা। জানিনা যে তার প্রমান, যা চাইছি তা পেলেই অনন্ত সুখের অধিকারি হতাম। হইনা। যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাইনা। এক মহামানব বলে গিয়েছেন, আমার মা সব জানে। আমি কিছু জানিনা। মাঙনে সে আদমি ছোটা হো যাতা। তুমি জীবন মানে কি, তাই জানোনা, কেন জন্মেছ তাই জানোনা, অথচ উদ্ভট সব জিনিস চাইছ। লালচুসী চাইছ। পাঁচ সের চালের ভাত খাবে ভাবছ। একজালা জল খাবে ভাবছ। তাই কি হয়? মহামানব বললেন বিকারের রোগীর অমন হয়। বিকার কি? আমি এই দেহ, এই ভাবা। বিকারের রোগীর উপসর্গ কি? এই দেহকে অনন্ত সুখ দেওয়ার চেষ্টা। সে জানেইনা যে এই দেহ পুড়ে দেড় সের ছাই হবে। তবু চাই। উপায়? দেহের অতীত সেই পরম অস্তিত্বের সন্ধান এই রোগের ওষুধ। বৈদ্য বসে আছেন চুপটি করে। নিষ্ক্রিয় কিনা। ধীরে ধীরে শোকেতাপে দুঃখে পুড়ে সোনা হয়ে উঠবে রোগী। তারপর সে পাবে অস্তিত্বের সেই হিরন্ময় বর্ণ। যা তাকে পরম আনন্দের সন্ধান দেবে। অনুরাগের রঙ। সোই অনুরাগ বাখানিতে তিলে তিলে নূতন হোয়। প্রতি মুহূর্তে সেই রঙ তার মর্মে লাগবে। সে ব্যাকুল হবে। বলবে – রঙ দে চুনারিয়া। এয়সি রঙ দে কি রঙ নাহি টুটে রে। বাইরের উৎসব ফিকে হয়ে যাবে। মহামানব বলেছিলেন। বাইরে থেকে মনকে রাঙানো যায়না। একজনের একটি গামলা ছিল। তাইতে শুধু জল ছিল। লোকে তার কাছে গিয়ে বলত- ওগো, আমার কাপড়টি এই রঙে ছুপিয়ে দাও। ওমনি সে সেই রঙে ছুপিয়ে দিতো। একজন দূর থেকে দেখছিল। সে কাছে গিয়ে বলল- ওগো, তুমি যে রঙ দিয়ে সব কাপড় ছুপিয়ে চলেছ, আমাকে সেই রঙটি দাও। এই যে দূরে দাঁড়িয়ে জীবনের চলমানতা দেখা, প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন আশা আকাঙ্ক্ষা চাওয়া পাওয়া দেখতে থাকা, এইই আমাদের অস্তিত্বের সেই নিষ্ক্রিয় পরমকে অনুভবে আনে। আমরা বলতে পারি- ওগো, তুমি এই দেহকাপড়টিকে যে রঙে রাঙাতে চাও, রাঙিয়ে দাও। বরং তোমার ওই অনুরাগের রঙ কিছু আমাকেও দাও। আমি বাইরে হোরি না খেলে অন্তরে রাঙিয়ে দিই। উৎসব চিরকালের হবে তবে।

একজন সন্ন্যাসী হতে চায়। সে গেরুয়া পরে এসে দাঁড়িয়েছে। মহামানব মুখ তুলে চাইলেন। একি? একটা কি যা হয় পরলেই হলো? গৈরিক ত্যাগের রঙ। মনে ত্যাগ হলোনা বাইরে একখানা কাপড় জড়ানো হলো। ভয়ঙ্কর। মনের রঙ দেহে লাগবে। দেহ থেকে রঙ মনে যাবেনা তো! সময়ের মতো একমুখী গতি যে। ত্যাগের রঙে ছোপানো কাপড় পরে অসংযম, ভোগ, সে তো মিথ্যাচার! মনে মিথ্যের রঙ লাগবে!আর প্রতিনিয়ত তাইই হচ্ছে।

আমাদের শরীরসর্বস্ব জীবন। নিত্যনতুন খাদ্যের আয়োজন। নতুন নতুন ভোগের উপকরন। ক্রমশ অস্থিরতা বাড়ছে। যা চাইছি তা তক্ষুনি চাইছি। ছেলের হাতের মোয়া। কারোর হাতে সময় নেই। সুখের সন্ধানে অবিরত ছুটে চলেছি। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! ফলে অনন্ত আনন্দের সন্ধান আর পাওয়া হয়না। এইসব চাওয়াপাওয়া ছেড়ে দিলে বেশ লাগে কিন্তু। চুপ করে সর্ষে খেতের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি ঘরছাড়া মানুষকে। কেমন শান্ত দৃষ্টি। কোনও চাওয়াপাওয়া নেই। আছে শুধু অনুভব। একা কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র রঙ দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, পৃথিবীর যত ক্লেদ বোধহয় ওই কালো কালো অসংখ্য পাহাড়। ওদের মধ্যে থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং ঈশ্বর। তাঁর শুভ্রশরীর আমার মনে যে কি অপরুপ ভালবাসা এনে দিয়েছে! পারলেই ছুটে ছুটে যাই সেখানে। এ কেমন ভালবাসা? এ কেমন প্রেম? মানুষে মানুষে যে প্রেম তা নিতান্তই স্বার্থভিত্তিক। পারস্পরিক আদানপ্রদানে তার পরমায়ু। কিন্তু এই যে প্রেম, ঈশ্বরের মতন, তা আবিষ্ট করে, উদবুদ্ধ করে, এবং অবশেষে তা শরীরের সীমিত গণ্ডি ছাপিয়ে যায়। আমাদের দেহবোধ ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বনিখিলে। ঠিক যেমন একমুঠো আবীর আকাশে ছুঁড়ে দিলে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সকলকে রঙিন করে। দোল তাই আনন্দের উৎসব। অনুরাগের রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার উৎসব। সেই রঙ যেন মোর মর্মে লাগে। আমার সকল কর্মে লাগে। হে পরম, আমাকে রাঙাও। আমি আনন্দে উজ্জীবিত হই।

[দোল সংখ্যা জাগ্রত বিবেক ২০১৯]

0 comments: