0

গল্প - শিবানী বিশ্বাস

Posted in

 






থাইকবি কইলাম... বাইরবি না কিন্তু… কেউ ডাইক দিলেও না... আমি আইয়া তিনটা টোকা দিয়া তর নাম ধইরা ডাইকলে তবে খুইলবি... বুঝ্ঝস?”...মেয়েকে বুঝিয়ে দরজা বন্ধ করে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিলো মঙ্গলা...

রেশন ডিলারের বাড়িতে কাজ করে মঙ্গলা। আগে তো অনেকসময়ই দেখেছে রেশনের জিনিস বাড়ির ঘরের মধ্যে রাখা। তারপর সেগুলো বাইরে বিক্রি হয়ে যেত বেশি দামে। কাজ করার ফাঁকে মঙ্গলার নজর সবদিকে ঘুরতো। কিন্তু দেখতোই শুধু করার তো কিছুই ছিলো না। প্রয়োজনে বৌদিমণি অবশ্য নানাভাবে সাহায্য করতো মঙ্গলাকে। মঙ্গলাও আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের কি দরকার এই ভেবে চুপ করে দেখেছে শুধু।

দু’মাসের মতো কাজ বন্ধ। তার উপর একমাসের টাকা দিয়ে কাজ ছাড়িয়ে দিয়েছিলো রেশন ডিলার তপন ধাড়া। বৌদিমণির কোনও কথাই শোনেনি সেদিন। একমাসের টাকা দিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে একটুও বাধেনি সেদিন। টাকাটুকু মুখের উপর ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু মেয়েটাকে কী খাওয়াবে? আঁচলে মুড়ে টাকাগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলো চোখের জল মুছতে মুছতে...

টাকা ফুরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন আগেই... সাহায্যের খাবারও শেষ... রেশন তুলতে গিয়ে শুনেছিলো একুশ তারিখের আগে চাল পাওয়া যাবে না। তাহলে এখনও বারোদিনের পর... তাহলে? চলবে কী করে তাদের? মেয়েকে কী দেবে খেতে? উঠতি বয়সের মেয়ে, খিদের টান তো বেশি... মাথাটা দিয়ে আর ভাবতে পারছিলো না মঙ্গলা... তারপর রওনা দিয়েছিলো তপন ধাড়ার বাড়ি যদি বৌদিমণির থেকে কিছু চাল নিয়ে আসা যায়...

বৌদিমণির দেখা পাওয়ার আগেই তপন ধারার সামনে পড়েছিলো মঙ্গলা। “দাদা দুটো চাইল দ্যান... ঘরে কিচ্ছুটি নাই... মাইয়াটাও না খাইয়া রইছে... আপনি মা বাপ... এট্টু দয়া করেন... আপনি না দেইখলে ক্যামনে হইব কন?” না শোনার ভান করে সরে গিয়েছিলো তপন ধাড়া...“দাদা যায়েন না... এট্টু শুনেন...” ...না, শোনার প্রয়োজন নেই তার। তবু হাল ছাড়ে না মঙ্গলা... তপন ধাড়ার সাথে সাথে সেও এগোতে থাকে... রেশন দোকানের পিছন দিকে গিয়ে অবাক... চালের বস্তা একটা টেম্পোতে উঠছে... তার মানে তাদের ন্যয্য পাওনা পাচার হয়ে যাচ্ছে বেশি টাকায়... মঙ্গলার দিকে চোখ পড়তেই হিসহিস করে উঠেছিলো তপন ধাড়া... “কী দেখছিস? যা এখান থেকে... কিচ্ছু পাবি না...” “দাদা মাইয়াটার জইন্য না হয় কিছু দ্যান...” “মেয়ের জন্য? পাঠিয়ে দিস সন্ধ্যেবেলায় রেশন দোকানের পিছনে... চাল দিয়ে দেবো”.... তপন ধাড়ার লালসাটুকু বুঝতে অসুবিধা হয়নি মঙ্গলার। চুপ করে বাড়ি চলে এসেছিলো...

সন্ধ্যেবেলায় মেয়েকে ঘরে রেখে মেয়ের বদলে চোখ মুখ ঢেকে নিজেই রওনা দিয়েছিলো। রেশন দোকানের পিছনে অন্ধকারে তপন ধাড়াকে চিনতে অসুবিধা হয়নি তার। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ও। লালসার হাতটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে বুঝতে পেরে কোমরে গোঁজা ধারালো কাস্তেটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো ও...

0 comments: