Next
Previous
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়

শুভ বিজয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রকাশিত হলো ঋতবাক ষষ্ঠ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা।

আজ আশ্বিন মাসের শুক্লা একাদশী তিথি। বাঙ্গালীর সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর রেশ এখনও কাটেনি। এই লেখা যখন লিখছি, বাইরে ঢাকের আওয়াজ, প্রতিমা নিরঞ্জনের মিছিল। 

মনটা ভারী হয়ে ওঠে। না, মা চলে যাচ্ছেন, সেই আবেগে নয়। কেননা জানি, যাওয়া তো নয় যাওয়া! এ তো ফেরার আয়োজন! মন ভারী হয়ে ওঠে অন্য কারণে। বিষদেই বলি।

"দুর্গা পুজোয় জগজ্জননী বসুন্ধরা হয়ে ওঠেন বিশ্বরূপা, ভয়ঙ্করী আদ্যাশক্তি রূপান্তরিতা হন শুভঙ্করীতে। এই জীবন প্রতিমতা থেকে জন্ম নেয় তার প্রতিমা। মাতৃপূজা হয়ে ওঠে মুক্তির পূজা, মানুষের পূজা। গার্হস্থ্য গরিমায় তিনি দেখা দেন মানবীমূর্তিতে।" - শাস্ত্র ও সাহিত্যের কচকচানি।

কিন্তু বাঙ্গালীর আগমনী এবং বিজয়া তো মূলতঃ বাংলার মাতৃহূদয়ের গান। এক অর্থে, বাঙ্গালীর কন্যা-পূজা। কিন্তু বছরের বাকি দিনগুলোয়? 

মানি, বাঙ্গালী সচেতন হয়েছেন। কিন্তু যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন কি? এখনও মেয়ে জন্মালেই ইনভেষ্টমেন্ট স্কীম অ্যানালিসিসে বসে যান বিচক্ষণ অভিভাবক। "অঞ্জলীর মান্থলি স্কীমে ১২ মাস জমালে এক মাস ফ্রী"! ...সত্যিই কিন্তু এখনও অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙ্গালী পরিবারের এটাই অত্যন্ত পরিচিত একটা চিত্রপট। 

তবুও আশার কথা, দিন একটু একটু করে বদলাচ্ছে। সেদিন শুনলাম, এক মধ্যবিত্ত পিতা তাঁর একমাত্র কন্যাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার যা টাকা আছে, তাতে করে হয় তোমায় ম্যানেজমেন্ট পড়াতে পারি, নয়তো বিয়ে দিতে পারি; তুমি কি চাও? মেয়ে এখন বড়ো কম্পানীতে উচ্চপদে চাকরীরতা। 

কিন্তু মানতেই হবে, এখনও এই চিত্র বিক্ষিপ্ত, অপ্রতুল, দুর্লভ। আসলে আমাদের কন্যা-পূজা সেই দিনই সার্থক হবে, কোনও পিতার জিজ্ঞাসার অপেক্ষা না রেখে যেদিন বিয়ে দেওয়া নয়, কন্যাকে স্বাবলম্বী করে তোলাটাই সমাজের নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে আর 'কন্যাদায়গ্রস্ত' শব্দবন্ধটি অভিধান থেকে অপ্রতুল ব্যবহারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, সৃষ্টিতে থাকুন...

শুভেচ্ছা নিরন্তর।