অতিথি সম্পাদকের কলমেঃ পিয়ালি বসু
Posted in সম্পাদকীয়
অতিথি সম্পাদকের কলমে
পিয়ালি বসু
ফেব্রুয়ারী মাস ! আর অবধারিত ভাবেই এসে পড়ছে ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস -এর কথা ।
মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে বরং একবার দেখে নেওয়া যাক বাংলা (ওটিই আমাদের মাতৃভাষা কিনা) ভাষা টিকে ।
মাগধী প্রাকৃত আর সংস্কৃত ভাষা-র অপভ্রংশ হিসেবেই বাংলা ভাষাটির জন্ম বলে ভাষাবিদ্রা দাবী করে থাকেন, Most Spoken language এবং ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে এ ভাষাটিই স্বীকৃত, নিজেকে বাঙালী ভেবে গর্বিত না হওয়ার কোন কারণ আছে কি এরপর ? পশ্চিমবঙ্গ আসাম, ত্রিপুরা আর বাংলাদেশ মিলিয়ে বাংলা ভাষাভাষী দের সংখ্যা নেহাত কম নয় কিন্তু । বাংলা নামক এই ভাষাটির ইতিহাস ঘাঁটলে এটুকু জানা যায় যে বাংলা ভাষাটিকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক এই তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, প্রাচীন বাংলাভাষার নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদ এর কথা বাংলা সাহিত্য নিয়ে নাড়াচাড়া করা যে কেউই বলতে পারবেন ।
পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই বাংলা ভাষা বেশ স্বাবলম্বী হল বলা যায় ! যতই আমরা ধর্মের নামে গলাবাজি করি না কেন, আসল ভিত কিন্তু সেই কৃত্তিবাসী রামায়ণ, বড়ু চণ্ডীদাস বা মালাধর বসুরই তৈরি করা । চৈতন্যভাগবত, চণ্ডীমঙ্গল আদতে কিন্তু ধর্মের মোড়কে গল্প কাহিনী । সপ্তদশ শতকে দৌলত কাজীর সতিময়না উপাখ্যান ছাড়া চোখে পড়ার মতো তেমন কিছুই নেই ।
বেশ ঢিমে তালে চলতে চলতে বাংলা ভাষা এসে বিরাট এক ধাক্কা খেলো উনবিংশ শতকে...বঙ্গ পণ্ডিতরা তাকে রেনেসাঁ বলেই চিহ্নিত করে থাকেন । ইতালীয় শব্দ রেনেসাঁ অর্থাৎ নবজাগরণ, নতুন ভাবে জেগে উঠলো বাংলা ভাষা তার শতবর্ষের নিদ্রা ভেঙে । মাইকেল মধুসূদন দত্ত আর বঙ্কিমচন্দ্র চট্ট্যোপাধ্যায় এসে হাল ধরলেন, জাগিয়ে তুললেন বাংলা কে। বঙ্কিমের আলালের ঘরের দুলাল, দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা-র পাশাপাশি নতুন আঙ্গিকে রামায়ণ কে দেখালেন মধুসূদন, তাঁর মেঘনাদ বধ কাব্যের মাধ্যমে । রাবণ নয়, বরং রামই হয়ে উঠলেন Anti Hero ।
এ সময়ে বাংলা সাহিত্য এতোটাই flourish করেছিলো, যে সত্যিই তাকে তালিকায় বেঁধে রাখা অসম্ভব, বিহারীলাল চক্রবর্তী, মোহিতলাল মজুমদার, গিরিশ্চন্দ্র ঘোষ, বিদ্যাসাগর, দীনবন্ধু মিত্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চট্ট্যোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, আরও পরে কল্লোল গোষ্ঠীর উদ্ভব এবং এক ঝাঁক নব্য টগবগে লেখকবর্গের আবির্ভাব ! বিভূতিভূষণ, মানিক, তারাশংকর বন্দ্যপাধ্যায়ের পাশাপাশি প্রমথনাথ বিশী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, রাজশেখর বসু, পরে সমরেশ বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গাঙ্গুলি, বুদ্ধদেব গুহ... তালিকাটা বড়োই দীর্ঘ এবং কোনোভাবেই সম্ভব নয় সে যুগের প্লাবন কে এভাবে তালিকাবন্দি করা, উচিতও নয় সম্ভবত ।
“এখনও যে টুকু বাংলা এটুকু থাকবে তো ? এটুকুও? আগে বাংলা ছিল, পরে টুকরো হয়ে পূব ও পশ্চিম; পূবে পাকিস্তান হল, পরে তাই হল বাংলাদেশ--- সাবেক বাংলার দুই তৃতীয়াংশ, তবুও তো, তবুও তা পুরো বাংলা নয়" ...
দুঃখজনক, তবুও এটাই আপাত সত্যিই, দেশ ভেঙেছে, ভেঙেছে সংসার, ঘর বাড়ি, এমনকি মন টাও...তবুও কষ্টে শিষ্টে আমরা টিকিয়ে রাখতে পেরেছি বাংলা ভাষাকে...
আজ বরং ২১ শে ফেব্রুয়ারীর দিকে তাকিয়ে আরও একবার ভালবাসি আমাদের মাতৃভাষাকে !