Next
Previous
Showing posts with label বইপোকার বইঘর. Show all posts
0

বইপোকার বইঘর - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in


বইপোকার বইঘর
অনিন্দিতা মণ্ডল




নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা 
লেখক – সন্মাত্রানন্দ 
প্রকাশক – ধানসিঁড়ি 
মূল্য – ৪৫০/-

বইয়ের প্রচ্ছদে এক সিল্যুয়েটে আঁকা একজন মানুষ। নীচে লেখা অতীশ দীপঙ্করের পৃথিবী। একজন অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এটুকুই যথেষ্ট। আমরা বাঙালিরা বিস্মৃতি ভালোবাসি বোধ হয়। আমাদের সহজেই ভুলিয়ে দেওয়া চলে বাঙালির উত্তরাধিকার একসময় সারা পৃথিবীতে শান্তিদীপ জ্বেলেছিল। যে কজন বাঙালিকে নিয়ে এখনও আমরা গর্ব বোধ করতে পারি তাদের মধ্যে একজন অতীশ। হয়ত তিনিই অগ্রগণ্য। বিবিসির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তাঁর নাম জ্বলজ্বল করছে। হাজার বছর পরেও। স্বাভাবিক ভাবেই আমি বইটি হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম এটি অতীশের জীবন কাহিনী। ৩৫৬ পৃষ্ঠায় বিস্তৃত তাঁর জীবন পড়বার আগ্রহ আমাকে এমনই ছুটিয়ে নিয়েছিল যে আমি নাওয়া খাওয়া ভুলে বইটিতে ডুবে গেলাম। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মাত্র তো ৩৫৬ পৃষ্ঠা! তাই পড়ে ফেলতে এহেন পরিশ্রম ও সময় কেন লাগবে? হ্যাঁ, লাগবে। কারণ বইটি প্রথমত একটি গবেষণা গ্রন্থ। কি নেই সে গবেষণায়! হাজার বছর আগের বাংলা তথা পূর্ব ভারত, তিব্বত, এবং বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন ও তন্ত্রযানের অনালোকিত প্রদেশে আলোকপাত। সেই সময়ের রাজনৈতিক সামাজিক ও ধর্মের দ্বন্দের নিপুণ চিত্র। কিন্তু লেখক তাঁর লব্ধ জ্ঞানের প্রমাণ দিতেই বইটি রচনা করেননি! এ বইতে তিনটি সময়সরণি পাশাপাশি চলেছে। কখনও কখনও তাদের দেখা হয়েছে যখন সমান্তরাল চলন ছেড়ে তারা একে অপরের যাত্রাপথে এসে পরেছে। আর সেই সব মুহূর্তে এমন আলো ছড়িয়েছে কাহিনীতে যা অতীন্দ্রিয় বলতেই ইচ্ছে করে। অতীশ ছাড়াও কাহিনীতে বাকি দুই সময় সরণির দুটি নায়ক আছেন। তাঁরাও কম চিত্তাকর্ষক নন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি অতীশেরই কাহিনী। সেই দীপঙ্করশ্রী জ্ঞানের কাহিনী, যিনি এখনও আমাদের আলো দেখাতে পারেন। বইটির বিষয়বস্তুর গভীরে নিয়ে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। এ বই দ্রুতপঠনের জন্য নয়। এটি প্রণয়কাব্যও বটে। বজ্রডাকিনী স্বয়ংবিদা লেখকের কল্পনা। ইতিহাসের চরিত্র নন। কিন্তু সেই সময়ে এমন বিদুষী ও সিদ্ধা নারী ছিলেন বলেই আমরা জানি। তাই কাহিনীর মধ্যে তাঁর উপস্থিতি একটি অন্য মাত্রা এনেছে। সর্বোপরি, অতীশের তথাকথিত বীরাচার সাধনার বিপ্রতীপে বাৎসল্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। বইটি অবশ্য সংগ্রহযোগ্য। এ বইয়ের আলোচনা বিদগ্ধ পাঠক আরও ভালো করবেন বলে আমি মনে করি। আপাতত আমি বাংলার সেই গৌরবময় যুগে নিঃশ্বাস নিয়ে চলেছি। কারণ, শেষ পর্যন্ত অতীশের অন্বেষার মূলে কাঠ নয় ধাতু নয় প্রস্তর নয়, মানুষের জীবন্ত মূর্তি। লেখক মনে করেন সেই অর্থে আমরা প্রত্যেকেই অতীশ। অতীশের উত্তরাধিকার বহন করি।
0

বইপোকার বইঘর - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in
বইপোকার বইঘর


নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর 'মন্দকথা'
অনিন্দিতা মণ্ডল


নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর লেখার আমি মুগ্ধ পাঠক। তাঁর উচ্চতার কোনও স্রস্টাকে পড়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করা কঠিন কাজ। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মতের মধ্যে মুগ্ধতার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব থেকে যায়। মন্দকথা তাঁর চিরাচরিত মহাকাব্য ও পুরাণের বিনির্মাণ জাতীয় লেখা নয়। এ বইতে তিনি হালকা চালে নিজের মনের কথা বলে গেছেন। শুরুতে আমার অন্তত সৈয়দ মুজতবা আলীকে মনে পড়ল। বৈদগ্ধ্যে জারিত আত্মকথা বা আড্ডা গোছের লেখায় তিনি অনুপম। মন্দকথা পড়তে পড়তে আমি আরও এক দার্শনিক ও ইন্টেলেকচুয়াল লেখককে পেলাম। হালকা কথার মধ্যেও কি সুন্দর তিনি বুনে দিয়েছেন জীবনের গূঢ় দর্শন! উদাহরণ দিতে গেলে পুরো বইটাই তুলে দিতে হয়। তবে ওঁকে অনুসরণ করে বোদলেয়ারের সেই অমোঘ উক্তিটি উদ্ধৃত করি। কিছু না করার চেয়ে খারাপ কিছু করে ফেলা ঢের ভালো। 
মানুষ চাইলেও তাঁর অধীত বিদ্যা তাঁর কর্মে পরিস্ফুট হবেই। বাইশটি ভিন্ন ভিন্ন রচনায় আদ্যন্ত খোশমেজাজী নৃসিংহপ্রসাদ অবশেষে বুনে দিয়েছেন তাঁর সেই জারিত দর্শন। লেখায় মহাভারত গীতা পুরাণ সংস্কৃত কাব্য, সব কিছু থেকেই চলে এসেছে উপমা। তুলনামূলক বিচারে পাঠক যাতে এই সময়ে দাঁড়িয়েও বুঝে নিতে পারেন ত্রিকালজয়ী সেই সব উচ্চারণ। এখনও কত বেশি প্রযোজ্য সেগুলি। 
যারা ভারী লেখা পড়তে ভালোবাসেন না, তারা বইটি পড়ে যেমন আনন্দ পাবেন, তেমন শিক্ষণীয় জীবনবোধও ফিরে পাবেন। নৃসিংহপ্রসাদ কিন্তু এই আড্ডায় চলিত শব্দ ও অপশব্দের বিপুল প্রয়োগ করেছেন। বইটি মাঝে মাঝেই পড়তে হবে আমায়। ঠিক যেমন পঞ্চতন্ত্র পড়ি।