0

প্রবন্ধ - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in






সময়টা ছিল অদ্ভুত! একদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শোষণ। ধর্মীয় ও সামাজিক কৃষ্ণ গহ্বরে বাস করতে করতে মানুষ কেবল পাঁকে মজে চলেছে। অন্যদিকে এসব কিছুকে তোয়াক্কা না করে মানুষের জন্য দেশের জন্য অপার ভালোবাসা নিয়ে কিছু মানুষ দিনকে রাত করে পরিশ্রম করে চলেছেন। সম্বল তাঁদের মেধা মনীষা এবং মানবিকতা। একদিকে বিদেশী মিশনারির প্রচার - ভারতবর্ষ ভূত প্রেত আর সঙ্কীর্ণ ধর্মীয় সংস্কারে ঠাসা এক দেশ। অন্যদিকে কলকাতার নব্য ধর্মের বাবুদের, এদানির ব্রহ্মজ্ঞানীদের বিরুদ্ধ প্রচার। হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা, এ ধর্মের শতেক আচার বিচার আসলে সঙ্কীর্ণ এক ধর্মের পরিচয়। ব্রাহ্ম ধর্ম তখন মানুষের ধর্মান্তরকরণ ঠেকাতে এমনই একটি অবস্থান নিয়েছিল। আদি সমাজ তৎকালীন হিন্দু নেতাদের সঙ্গ প্রায় ত্যাগ করেছিল। নববিধানীরা কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরের সেই সরল মানুষটির প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক কে স্মরনে রেখে হিন্দু ধর্মের মধ্যে মহৎ দর্শনকে স্বীকার করেছিলেন। তবে সে তাৎক্ষণিক। এই সময় যারা নিজের সমাজ সংস্কৃতি ও ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্যে জীবন পণ করেছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁদের অন্যতম। দেশের মানুষের চরম দারিদ্র, দুঃখ দুর্দশা, তাঁকে অহরহ কষ্ট দিত। সেই দুর্দশা নিবারণের জন্য তিনি তাঁর চরিত্রানুগ কর্মক্ষেত্র বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর পারিবারিক দুর্ভাগ্য এর সঙ্গে মিলে গিয়ে তাঁকে অস্থির করে তুলেছিল। তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না। অথচ স্বভাবের কারণেই আধ্যাত্মিক চেতনা ছিল প্রবল। তাঁর শৈশব ও বাল্যের বহু কাহিনী আমরা জানি যা তাঁর সেই চেতনার পরিচায়ক। দিন কতক ব্রাহ্ম সমাজে ঘোরাঘুরি করেছিলেন। তারপর দেখলেন স্বয়ং কেশবচন্দ্র গিয়ে পরেছেন দক্ষিণেশ্বরের সেই পুরোহিতের কাছে। কেশবচন্দ্রের মতো জ্ঞানী গুনী বিদ্বান মানুষ কিসের আকর্ষণে গেলেন তাঁর কাছে? সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সেদিনের উনিশ বছরের তরুণ গিয়ে পড়েছিলেন তাঁর কাছে। বাকি ইতিহাস। এরপর ভারতের ধর্মজগতে আমরা উজ্জ্বল কতগুলি নক্ষত্রের বিচরণ দেখতে পাই। তা সত্ত্বেও দেশের মানুষের অপমান দুর্দশা ঘোচেনি।

শিকাগো ধর্ম মহাসভা বসেছিল আমেরিকায়। ব্রিটিশদের দেশে নয়। সেখানে ভারতীয়রা দাস বলে চিহ্নিত ছিলোনা। ফলে ধর্ম মহাসভায় যখন স্বামী বিবেকানন্দের জয়জয়কার হলো তখন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের পত্রিকা গুলোতে সে সংবাদ কিঞ্চিত রেখে ঢেকে পরিবেশিত হয়েছিল। দাসেদের এই উত্থান তাদের চোখে বিষ ঠেকেছিল নিশ্চয়! স্বামিজীর ধর্ম মহাসভায় যোগদানের উল্লেখ তো ছিলোনা বললেই হয়। কেউ জানতেন না তিনি সেখানে যাচ্ছেন, এমনটি নিশ্চয় নয়! কিন্তু জয়ের খবর যখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরল তখন দেশের মানুষের আনন্দ দ্যাখে কে! আজ পর্যন্ত সাহেবদের থেকে দেশীয়দের সম্মান আদায় করতে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে সে সকলেরই জানা ১।কিন্তু এই প্রথম মানুষ দেখল যে স্বামিজী আত্মসম্মান বজায় রেখে কোনোরকম ত্যাগ স্বীকার না করেই কি বিপুল সম্মান আদায় করেছেন! তাদের মাথা উঁচু করেছেন। সারা প্রতীচ্য জানতে পেরেছে যে ভারতবাসী মাত্রই কিছু অসভ্য বর্বর নয়। তারাও উচ্চতর বিদ্যা ধর্ম ও দর্শনের অধিকারী। ধর্ম মহাসভার ভাষণ শেষে হল থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে এক শ্রোতা বলেছিলেন২ “এদের দেশে মিশনারীরা ধর্ম প্রচার করতে যায়? কেন? এরাই বরং এদেশে মিশনারী পাঠাক!” এই সম্মান এই শ্রদ্ধা স্বামী বিবেকানন্দের ভারতবাসীকে সর্বশ্রেষ্ঠ দান। এর আগে মানুষ মরমে মরে ছিল। মাথা উঁচু করে বাঁচতে তারা ভুলেছিল সেই চৈতন্য নিধনের সময় থেকে। হুজুরের গোলামি করতে করতে ভুলেছিল যে তারা কারোর ক্রীতদাস নয়। তারাও মানুষ। স্বামীজি এই দুঃখ তাঁর স্বদেশবাসীর জন্য বুকে বহন করে গিয়েছেন সারা জীবন। এই দুঃখ থেকেই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সুখ, ব্যাক্তিগত উন্নতি, এমনকি ব্যক্তিগত লক্ষ্যকেও গৌণ জ্ঞান করেছিলেন। এই ভালোবাসাই তাঁকে স্থির থাকতে দিতনা। নয়ত ত্যাগী সন্ন্যাসী স্বদেশে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে মানুষের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকবেন ভেবে বিদেশের পথে পথে বক্তৃতা দিয়ে অর্থ উপার্জনের কথা ভাবতে পারতেন? তাঁর শক্তি মূলত আধ্যাত্মিক। কিন্তু সে ক্ষেত্র সমষ্টির, ব্যষ্টির নয়। এইটি ফুটিয়ে তুলতে একটি উদাহরণ হাজির করা যাক। সবে বিলেত থেকে ফিরেছেন। ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ। উঠেছেন কাশীপুরে গোপাললাল শীলের বাগানবাড়িতে। তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিন স্টেশনে গিয়েছিলেন একটি তরুণ। নাম সুধীর চক্রবর্তী। সেই প্রথম সে স্বামিজীকে দেখেছে। এক অদ্ভুত আকর্ষণে সে হাজির হয়েছিল ওই বাগানবাড়িতে। সেখানে তখন উপস্থিত শরতচন্দ্র চক্রবর্তী। গুরুশিষ্যে আলাপ চলছে। সুধীর শুনছে। তার মনে একটি প্রশ্ন। কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছে না স্বামিজীকে জিজ্ঞেস করে। অবশেষে শরতচন্দ্র সাহস জোগানোয় সে প্রশ্ন করল – “অবতার ও মুক্ত বা সিদ্ধপুরুষে পার্থক্য কি? এত ভয়। অথচ স্বামিজী কি অবলীলায়, কত ভালোবেসেই না এই তরুণকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর প্রাণের কথা, তাঁর লক্ষ্য! কি বলেছিলেন তিনি? বলেছিলেন – “বিদেহমুক্তিই যে সর্বোচ্চ অবস্থা, এ আমার সিদ্ধান্ত। তবে আমি সাধনাবস্থায় যখন ভারতের নানাদিকে ভ্রমণ করতুম, তখন কত গুহায় নির্জনে বসে কতকাল কাটিয়েছি, কতবার মুক্তিলাভ হলো না বলে প্রায়োপবেশন করে দেহত্যাগ করবার সঙ্কল্প করেছি, কত ধ্যান কত সাধন ভজন করেছি, কিন্তু এখন আর মুক্তিলাভের জন্য সে বিজাতীয় আগ্রহ নেই। এখন কেবল মনে হয়, যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর একটা লোকও অমুক্ত থাকছে ততদিন আমার নিজের মুক্তির কোনও প্রয়োজন নেই।” এই কথা কটি কি ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে যে স্বামিজী বলেছিলেন তা ভাবলে বিস্ময় জাগে। আজকের স্বার্থপর লোভী পৃথিবীতে এই আবেগ বিলুপ্ত। তাই আমরা সারাক্ষণ ভাবতে থাকি, চরিত্রে ত্রুটি কোথায়, কোথায় তাঁর এতটুকু স্খলন। তবেই তাঁকে নিজের সঙ্গে সমান করে দেওয়া সম্ভব। অথচ সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর জগতের প্রতিটি মানুষের প্রতি কি অপার মায়া! তিনি একার মুক্তি চাননি। চেয়েছেন সারা জগতের মুক্তি। কখন? যখন ভারতবর্ষ দাসত্ব শৃঙ্খলে বদ্ধ হয়ে এক অপমানিত বন্দীদশা কাটাচ্ছে। মনুষ্যত্বের নিদারুন অপমানের জ্বালা বুকে বয়ে শত শত তরুণ যখন এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে। সমসাময়িক বিপ্লবীদের জীবন আলোচনা করলে দেখা যাবে তাঁরা অধিকাংশ স্বামিজীর রচনা পড়ে তাঁর বানীতে আকৃষ্ট হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে নামেন। স্বামিজীও মুক্তি চেয়েছিলেন, এঁরাও চেয়েছেন। এঁরা চেয়েছেন ব্যবহারিক মুক্তি। সম্মানের সঙ্গে বাঁচার স্বাধীনতা। আর স্বামিজী চেয়েছিলেন চেতনার মুক্তি। আধ্যাত্মিক মুক্তি। সেই তো প্রকৃত মুক্তি! কিন্তু এহেন মুক্তির সঙ্গে আত্মসম্মানের প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। আর সে সম্মানের শুরু অন্নহীনের শ্রদ্ধার অন্ন পাওয়ার মধ্যে দিয়ে। নিরাশ্রয়ের আশ্রয় পাওয়ার মধ্যে দিয়ে। কারণ – খালিপেটে ধর্ম হয়না, একথা তাঁর পরমপুরুষটি বলে গিয়েছেন। ক্ষুধার্তকে ধর্মকথা শোনানো পাপ। মনুষ্যত্বের অপমান। তাঁর সেই পরমপুরুষের ভাব ছিল একান্ত নির্ভরতার। তিনি জানতেন জগতে যা কিছু ঘটছে তা সবই শক্তির খেলা। এই ঘটমান কালই কালী। সেখানে ‘গাছের পাতাটিও নড়ে তাঁর ইচ্ছেয়’। এই নির্ভরতা থেকে একরকমের নিষ্ক্রিয়তা আসে। কর্মবিমুখতা। বেশি কাজে না জড়ানো। ‘আমি খাই দাই আর থাকি। আর সব মা জানে’। এই যে জীবনের প্রবাহ, তা থেকে একটু সরে দাঁড়ানো। একটু দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করা। এও এক ধরনের বোধ। যে বোধ থেকে তিনি বলেছিলেন – ‘সেবা যারা করে তারা অন্য থাকের লোক’। কারণ মনুষ্য জীবনের একটিই উদ্দেশ্য। তা হলো, ঈশ্বর দর্শন ও ঈশ্বর লাভ। তবে তাঁর প্রধান শিষ্যটি কি আদর্শচ্যুত হলেন? এ বড় জটিল প্রশ্ন। এখানে কিছুটা প্রকৃতির কথা আসে। স্বামিজীর প্রকৃতি তাঁকে এই কল্যাণ কর্মে জড়িয়েছে। ‘তাঁর ইচ্ছে’। এই প্রকৃতি থেকেই স্বামিজী তাঁর শিষ্য বিরজানন্দকে বলছেন – দ্যাখ, যদি নিজের মুক্তি খুঁজিস তো জাহান্নামে যাবি, আর অপরের মুক্তির জন্য যদি কাজ করিস তো এখনই মুক্ত হয়ে যাবি ৩। সেই পরমপুরুষের অসাধারণ স্থৈর্য তাঁকে স্থিতিশক্তি জুগিয়েছিল। আর স্বামিজীর অস্বাভাবিক তেজ, তাঁর শক্তি, তাঁকে স্থির হতে দেয়নি। এর ফল যে সবসময় ভালো হতো তা নয়। তাঁর কোনও কোনও গুরুভাই মনে করেছিলেন তাঁদের গুরুর আদর্শে তাঁরা সাধন ভজন করেই দিন কাটিয়ে দেবেন। অন্তর্মুখ সন্ন্যাসীমণ্ডলী পরে শুধু স্বামিজীর কারণেই কি বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজেদের নিযুক্ত করেছেন ভাবলে অবাক হতে হয়। গুরু নয়, গুরুভ্রাতার প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য। সোজা কথা? ঈশ্বর দর্শনই যখন উদ্দেশ্য তখন জাগতিক সব যোগ ছিন্ন হোক, এই ছিল তাঁদের মনের কথা। স্বামিজী যখন বিদেশে, চিঠিপত্র, সংবাদে জানা যাচ্ছে তাঁর বক্তৃতার অংশবিশেষ। তাঁর খ্যাতি ও প্রাপ্তির কথা। এর ফলে শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অন্যতম প্রধান সন্ন্যাসী স্বামী প্রেমানন্দ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন খুব ৪। এক চরম হতাশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। এর আগে স্বামিজী একবার পওহারী বাবার কাছে দীক্ষা নেবার জন্য ব্যাকুল হয়েছিলেন। পুনরায় ফিরে আসেন এখানে। কারণ – ‘তাঁর গুরুর জুড়ি নেই’। সেই থেকে বাবুরাম মহারাজের মনে সন্দেহ ছিল তাঁকে নিয়ে। বিদেশের খবরে স্বভাবতই বিচলিত হয়ে তিনি মনে করেছিলেন নরেন্দ্রনাথ তবে ব্যক্তিগত খ্যাতি ও উচ্চাশার জন্যই এত কাঠখড় পুড়িয়েছেন। গুরুর নাম কোথাও নেই কেন? হয়ত পরে নিজের সঙ্গে নিজেই আপোস করেছেন বাবুরাম মহারাজ। পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি শান্ত হয়েছিলেন। কারণ নরেনের পত্রে উল্লেখ আছে – এখানে কেউ মুষ্টিভিক্ষা দেয়না। এখানে বক্তৃতায় পয়সা পাওয়া যায়। গুরুর নাম করলে পাছে লোকে তাঁকে হেয় করে, তাই আগে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে হচ্ছে। এ থেকে অনুভব করা যায় যে বিশ্বখ্যাত স্বামীজিকেও কিছু বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। শর্তহীন আনুগত্য তিনিও প্রথমে পাননি। এইখানেই সমকালের সীমাবদ্ধতা। কেশবচন্দ্র সেনের প্রচারের পরে একমাত্র স্বামী বিবেকানন্দর খ্যাতিতেই সারা বিশ্ব শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসর কথা জানতে পারল।

বিদেশ যাত্রা প্রাক্কালে স্বামীজি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেখেছিলেন তাঁর গুরু তাঁকে বিস্তীর্ণ সাগরের ওপারে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন। তিনি এর অর্থ করেছিলেন – তিনি তাঁকে বিদেশ যাত্রায় ডাকছেন। ধর্ম মহাসভায় যোগ দিতে বলছেন। সে সময় তাঁর অশান্ত মনে দেশের সম্মানের জন্য, সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার জন্য যে আকুলিবিকুলি সেটিই তাঁকে বিচলিত করেছিল। তিনি স্বপ্নের এই অর্থ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মনে একটিই অর্থ ভাসে। সেটি হলো – মামনুসর। আমাকে, আমার আদর্শকে অনুসরণ করো। যা আমরা বুঝেছি, তা স্বামীজির মতো মানুষ উপলব্ধি করেননি এ ভাবা নির্বুদ্ধিতা। তবে তিনি নিজের অন্তরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন না কেন? এমন দ্বিধায় কেন পরলেন? আসলে তাঁর প্রকৃতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনও একটি মহৎ কর্মে জড়াতে না পারলে শান্তি হতো না তাঁর।

এ শুধু একটি দিক। যেদিকটিতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বিশ্বচেতনা সমগ্র জগতে ছড়িয়ে। আর একটি দিক থেকে তিনি কখনও কখনও সেই পরমপুরুষের ভাবে র’সে থাকতেন। আলমোড়াতে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে শ্রান্ত সন্ন্যাসী কখনও বলতেন – জীবনের কটা দিন এরকম নির্জনে ভগবৎ আরাধনায় অতিবাহিত করতে চাই। এই আমার শেষ ইচ্ছা। কিন্তু এ আর ঘটে ওঠেনি। ঈশরোপলব্ধির চরম কথাটি বলতে গিয়ে বলেছেন – Being one with divinity, there cannot be any further progress in that sense. তাঁর কাছে Divinity হলো এই অনন্ত জনসমুদ্র। তার সাথে এক হওয়া। এই একত্ববোধই, এই point of unionই তাঁর আজীবনের আরাধ্য ছিল। এই একত্ববোধ থেকেই তিনি জাতিভেদকে ঘৃণা করেছেন। শ্রেনীভেদকে ঘৃণা করেছেন। আমরা স্বামীজির শত ভুল খাড়া করতে পারি, তাঁকে হাজার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারি, কিন্তু মানবপ্রেমিক এই সন্ন্যাসীর মতো করে মানুষকে ভালোবাসতে পারবনা। সেই ক্ষমতা যদি কেউ অর্জন করেন তবেই তাঁর পক্ষে স্বামীজির কাজের পর্যালোচনা সম্ভব। তাঁর উপলব্ধির সেই কথাটি – ত্বং জাতো ভবসি বিশ্বতোমুখঃ, তুমিই এ বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, আপাতত এই উপলব্ধিতে উত্তীর্ণ হবার প্রয়াস করি বরং।



তথ্য সূত্র

১) শঙ্করীপ্রসাদ বসু, বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৭৭, মণ্ডল বুক হাউস।
২) তদেব
৩) স্বামী অব্জজানন্দ, স্বামিজীর পদপ্রান্তে, ১৯৮৩, রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ, বেলুড় মঠ।
৪) মহেন্দ্রনাথ দত্ত,শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৭৪


অতিরিক্ত পাঠ

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, শ্রীম কথিত।

[ঋতবাক মুদ্রিত ২০১৮]

0 comments: