প্রবন্ধ - রঞ্জন রায়
Posted in প্রবন্ধগৌরচন্দ্রিকা
ইতিহাস কোন অনড় অজর প্রস্তরখণ্ড নয়। যুগের পরিবর্তনে এবং নতুন তথ্যের আলোকে ইতিহাসের পুনর্লিখন স্বাভাবিক এবং কাম্য। ইতিহাস-চর্চায় পূর্বাগ্রহকে একেবারে সরিয়ে রেখে বিশুদ্ধ বা পুরোপুরি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হয় না, হতে পারে না। এজন্যেই যাঁরা চর্চা করবেন তাঁদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সজাগ থাকতে হবে যাতে নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এসে নির্বিবাদ তথ্য ও সাক্ষ্যকে খারিজ না করে দেয়।
আপাত বিরোধী তথ্যগুলোর উৎস, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং যাচাই করে নেওয়ার পদ্ধতিগত নিষ্ঠাকে (methodological rigour) মেনে চলা দরকার। সততার সঙ্গে নিজের বিশ্বাস ও পাশাপাশি বিরোধীমতের উল্লেখ করা দরকার। যাতে বিতর্কের ও চর্চার পথ খোলা থাকে।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য ইদানীং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নতুন ভাষ্য লেখা এবং প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যগত নিষ্ঠার অভাব বা তথ্যসূত্র এবং পরিপ্রেক্ষিতের উল্লেখ না করে মনগড়া একপেশে বর্ণনা চোখে পড়ছে। ফলে ইতিহাস-পুরুষদের নিয়ে পক্ষে- বিপক্ষে মিথ নির্মাণ শুরু হয়েছে।
এই ব্যাপারটি বিশেষ করে চোখে পড়ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বিতর্কিত প্রবাদ পুরুষ বিনায়ক দামোদর সাভারকর বা ‘বীর’ সাভারকরের জীবনের নবনির্মাণ নিয়ে। বিরোধীরা বলছেন কাপুরুষ এবং বিশ্বাসঘাতক আর সমর্থকেরা বলছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেনাপতি।
এই সাদা কালো ছবির মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, তার নানা চোরাস্রোত এবং বাঁক বদলের প্রেক্ষিত।
সাভারকর—মারাঠি মানুষের কাল্ট ফিগার
আমরা বাঙালীরা যেমন আমাদের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বদের—রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, সত্যজিত রায় এবং হেমন্ত কুমার—সম্বন্ধে অতিরিক্ত স্পর্শকাতর এবং কিছুটা অসহিষ্ণু, তেমনই মারাঠিদের আইকন হলেন ছত্রপতি শিবাজী ও ‘স্বাতন্ত্র্যবীর’ বিনায়ক দামোদর সাভারকর বা বীর সাভারকর এবং লতা মঙ্গেশকর।
দেখা যাক, বিনায়ক দামোদর সাভারকর কেমন করে বীর সাভারকর হলেন?
আন্দামানে দশ বছর জেল খেটে দেশে ফিরে আসার পর ওঁকে মহারাষ্ট্রের (তৎকালীন বোম্বে রাজ্য) যারবেদা এবং রত্নাগিরির জেলে আরও তিন বছর বন্দী থাকতে হয়। তারপর ১৯২৪ সালে ওঁকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রত্নাগিরি জেলায় সপরিবারে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়, কিন্তু জেলার বাইরে যাবেন না এবং কোন রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করবেন না এই শর্তে।
১৯৩৭ সালে ওঁর উপর থেকে ওই সব শর্ত তুলে নেওয়া হল। তখন সেসময়ের খ্যাতনামা মারাঠি নাট্যকার ,লেখক, এবং ফিল্ম-নির্মাতা পি কে আত্রে তাঁর পুণের বালমোহন থিয়েটার গ্রুপের তরফ থেকে এক সম্বর্ধনা সভা ডেকে সাভারকরকে “স্বতন্ত্রবীর” উপাধি দিলেন। সেটাই লোকের মুখে মুখে ‘বীর’ সাভারকর হয়ে গেল।[1]
বিনায়ক দামোদর সাভারকর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিতর্কিত নায়ক।
স্বাধীন ভারতে গান্ধীহত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগের থেকে জনমানসে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তার ফলে তিনি ক্রমশঃ রাজনীতির মূল ধারার থেকে সরে প্রান্তিক হয়ে যান, একরকম স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। এরপর ভগ্নস্বাস্থ্য ও ভাঙা মন নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ তারিখে প্রয়াত হন। [2]
কিন্তু বর্তমানে দেশের ক্ষমতাসীন এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে গত দু ’দশক ধরে তাঁর পুনর্বাসন হয়েছে। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার এয়ারপোর্টের নতুন নাম হয়েছে বীর সাভারকর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। দাবি উঠছে তাঁকে ভারত রত্ন দেওয়ার।
এরপর পক্ষে বিপক্ষে রাজনৈতিক তর্জা শুরু হয়েছে এবং প্রায় দু’দশক পরেও তা অব্যাহত। বর্তমান প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে আমি চেষ্টা করব পক্ষে বিপক্ষের বিভিন্ন বহু-প্রচারিত মিথগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটির সত্যতা যাচাই করতে, অবশ্যই উপলব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে।
সাভারকরের বিরুদ্ধে প্রচারিত মিথগুলো
· সাভারকর ভীরু কাপুরুষ, ইংরেজের কাছে বারবার মার্জনা ভিক্ষা করে মুক্তি পেয়েছেন।
-- সাভারকরকে ভীরু কাপুরুষ বলা মানে গোড়ায় গণ্ডগোল।
যিনি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু লন্ডনে বসে তাদের বিরুদ্ধে এজিটেশন , প্যাম্ফলেট লেখা এবং সশস্ত্র আক্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন, তিনি আর যাই হোন, ভীরু নন কিছুতেই। ব্যাপারটা অত সরল নয়।
না, মার্সি পিটিশন লিখে সেলুলার জেল থেকে কোন রাজবন্দী ছাড়া পান নি, সাভারকর, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ বা অন্য কেউ নয়। ইংরেজ সরকার সাভারকরের পিটিশনে সহজে বিশ্বাস করে নি। আন্দামানের সেলুলার জেলের ১৯০৯ থেকে ১৯১৬ পর্য্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাসিক, আলিপুর, দিল্লি, লাহোর ইত্যাদি ষড়যন্ত্র মামলায় দ্বীপান্তরের শাস্তি পাওয়া বাঙালী , মারাঠী, শিখ এবং অন্য রাজবন্দীরা সবাই ছাড়া পেয়েছিলেন ১৯১৯ থেকে ১৯২১ এর মধ্যে। এদের দেশে ফেরত পাঠানো এবং কয়েকজনকে মুক্তি দেওয়া হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের আনন্দে ব্রিটেনের সম্রাটের ‘রাজকীয় ক্ষমা’ বা রয়্যাল ক্লেমেন্সির ঘোষণা অনুযায়ী।
বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র, উপেন্দ্রনাথ এবং শচীন সান্যাল ও কুড়ি জন গদর পার্টির শিখবন্দী ছাড়া পান ১৯১৯শে। সাভারকর ভাইয়েরা, ঝাঁসিওয়ালে পরমানন্দ, ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীরা ছাড়া পান ১৯২১শে। কিন্তু সাভারকরকে ভারতে পুণের যারবেদা এবং রত্নাগিরি জেলে আরও তিন বছর থাকতে হয়েছিল। ইংরেজের জেল থেকে বেরিয়ে নিজের পরিবারে ফেরার অনুমতি পান ১৯২৪ সালে।
· সাভারকর ছাড়া আর কোন রাজবন্দী ক্ষমা ভিক্ষা করে আবেদন দেন নি।
--এই কথাটিও ঠিক নয়। সেলুলার জেলে এসে বারীন্দ্রনাথ ঘোষ– ভুল করেছিলাম, এখন ছাড়া পেলে বিপ্লবের পথ মাড়াব না, শান্তিপূর্ণ অরাজনৈতিক জীবন কাটাবো—লিখে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন এবং হোম সেক্রেটারি ক্র্যাডক ১৯১৪ সালে সেলুলার জেল পরিদর্শনে এলে ওই চিঠির ভিত্তিতে ওঁর সঙ্গে আলাদা করে দেখা করেছিলেন।
এ নিয়ে বারীন্দ্র ঘোষের আফশোস ছিল। দিল্লি এবং পরে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার শচীন্দ্রনাথ সান্যালের স্মৃতিকথায় দেখছি আন্দামান থেকে দেশে ফেরার সময় জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে বিষণ্ন বারীন বলছিলেন—আমরা বীর নই, মাথা উঁচু রাখতে পারি নি[3]।
· সাভারকর ’৪২ এর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। কাজেই উনি বিশ্বাসঘাতক।
--শুধু ওই একটি ঘটনাকে ভিত্তি করে অমন রায় দেওয়া অনুচিত। তখন আরও অনেকে ওই আন্দোলনে যোগ দেন নি এবং কেউ কেউ বিরোধিতা করেছিলেন—যেমন, জিন্না, আম্বেদকর, রামস্বামী নাইকার এবং অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি। এঁরা কি বিশ্বাসঘাতক?
আসলে সবার আলাদা আলাদা এজেন্ডা ছিল। যেমন , জিন্না চাইছিলেন মুসলমানদের জন্যে আলাদা দেশ, সাভারকর চাইছিলেন বেশি বেশি করে হিন্দু যুবকদের ব্রিটিশ ফৌজে ভর্তি করে অস্ত্রশিক্ষা দেওয়ানো আম্বেদকার এবং তামিলনাড়ুর দ্রাবিড় আন্দোলনের প্রণেতা রামস্বামী নাইকার চাইছিলেন দলিতদের বিশেষ অধিকার এবং কন্সটিট্যুয়েন্সি। কমিউনিস্ট পার্টি ফ্যাশিস্তদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ‘জনযুদ্ধে’ মিত্রশক্তির সমর্থনে দাঁড়িয়েছিল, তাই ব্রিটেনকে তাৎকালিক সমর্থন।
সাভারকরের কাছে এটা ছিল হিন্দু যুবকদের বিশেষ সুযোগ-- বৃটিশ ফৌজে ঢুকে যুদ্ধবিদ্যা অস্ত্রচালনায় পারঙ্গম হয়ে আগামী দিনের মহাসমরের জন্যে (মুসলিম-মুক্ত ভারত) প্রস্তুত হওয়া।[4]
হিটলারের জার্মানি ১৯৩৮শের মার্চে অস্ট্রিয়া দখল করায় সাভারকর হিটলারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এটা ওঁর চোখে জার্মানির ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার উদাহরণ! উনি মনে করলেন এইভাবেই ‘হিন্দু ভারত’ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে । নেহরুর হিটলার এবং মুসোলিনির নিন্দা সাভারকরের চোখে ‘অনাবশ্যক’ ।[5]
· তিনি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী এবং শুরু থেকেই মুসলমান বিদ্বেষী।
--এটাও আংশিক সত্য। লণ্ডনে আইন পড়তে যাওয়া ২৪ বছরের সাভারকর ছিলেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রচারক। সে সময় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে উনি একটি বই লেখেন, তাতে ওই বিদ্রোহকে উনি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই বইয়ের ভূমিকায় এবং আরও অনেক জায়গায় বারবার বলেছেন-- ইংরেজদের তাড়াতে হলে দরকার হিন্দু-মুসলিম ঐক্য। এও বলেছেন যে চতুর ইংরেজ দুই ধর্মের বিভাজনের ফাঁদ পেতে রাজত্ব করতে চায়। শিক্ষিত হিন্দুরা যেন ওই ফাঁদে পা না দেয়।
“The Englishmen will try now also their old work of deception, they will try to incite the Hindus to rise against Mossalmans, and the Mohomedans to rise against the Hindus. But, Hindu Brothers! Do not fall into their nets. It is hardly necessary to tell our clever Hindu Brethren that the English never keep their promises”[6].
কিন্তু আন্দামান থেকে ১৯২১ সালে ভারতে ফিরে এলেন অন্য এক সাভারকর। যিনি ‘হিন্দুত্ব’ এবং ‘হিন্দুপদ পাদশাহী’ বলে দুটি বই লিখে প্রচার করেন যে ভারতের সভ্যতা মানে বৈদিক হিন্দু সভ্যতা। মুসলমানরা বাইরে থেকে আসা আক্রমণকারী, ওদের পিতৃভূমি এবং পূণ্যভূমি আলাদা। কাজেই ভারত স্বাধীন হলে সেটা হিন্দুরাষ্ট্র হবে, তার জাতীয় পতাকা হবে শিবাজীর গৈরিক পতাকা। ওই ভারতে মুসলমানদের সমান অধিকার থাকতে পারে না।
সাভারকরের জীবনী লেখক পুরন্দরে বলছেন যে যাঁরা ভারতের বহুত্ববাদী আপাতবিরোধী ধর্মাচরণ এবং জীবনযাপনের সমন্বয়ের কথা বলতেন তাঁদের বিপরীতে সাভারকর দাঁড়ালেন এমন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণা নিয়ে যা মুসলিম-ক্রীশ্চানদের বাদ দিয়ে শুধু হিন্দু ভারতের কথা বলে।[7]
শেষ বয়সে লেখা 'সিক্স গ্লোরিয়াস ইপোক্স অফ ইন্ডিয়ান হিস্টরি' বলে ওঁর বইটি পড়লে দেখা যাবে এমন এক অতীতমুখী মন যার চেতনা শুধু অতীতের হিন্দু-মুসলিম বাইনারিতে আবদ্ধ হয়ে হিন্দুর কথিত বিক্রমগাথায় সান্ত্বনা খোঁজে। শুধু তাই নয় , এই মানস একটি প্যারানইয়া--- শিগগিরই মুসলিমরা ভারতে মেজরিটি জনগোষ্ঠী হয়ে উঠবে --- থেকে আত্মসমর্পণকারী বন্দী মুসলিমদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হত্যা তথা 'টু পে ইন দেয়ার ওন কয়েন' নীতিতে মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণকে উচিৎ বা কর্তব্য বলে ওকালত করে। বৃদ্ধ অসুস্থ সাভারকরের লেখাটির ইংরেজি অনুবাদে সহকারী এস টি গোড়বোলের চোখে এগুলো রীতিমত ‘শকিং’ মনে হয়েছিল।[8]
তাঁর অন্য এক মারাঠি ভাষায় জীবনী রচয়িতা ডি এন গোখলের মতে সাভারকরের এই ‘বদলা’ নেবার থিওরি হিন্দুধর্মের কিছু বেসিক ভ্যালুজকে --যেমন’ ক্ষমা, নারীর প্রতি সম্মান, উদার হৃদয় হওয়া’—খারিজ করে । তাই এর তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।[9]
১.২ সাভারকরের সমর্থনে বহুপ্রচারিত মিথগুলো
· সাভারকরের পঞ্চাশ বছর কালাপানির শাস্তি হয়েছিল এবং সাভারকর রাজনৈতিক বন্দীদের মধ্যে আন্দামানের সেলুলার জেলে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন।
--শুধু প্রথম অংশ টুকু সত্যি। সাভারকরের দুটি মামলায়-- নাসিকের ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকসনকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং লণ্ডন থেকে বোম্বাইয়ে গোপনে কুড়িটি পিস্তল পাঠানো-- আলাদা করে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। তখন যাবজ্জীবন মানে ছিল পঁচিশ বছর। কিন্তু বলা হল দুটো শাস্তি একসঙ্গে নয়, একের পর এক চলবে। মানে সাভারকরকে পঞ্চাশ বছর আন্দামানে কাটাতে হবে! এত বড় শাস্তি ইংরেজ সরকার আর কাউকে দেয় নি।
তবে সাভারকরকে আন্দামানে দশ বছরের এক মাস আগেই ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বারীন ঘোষেরা ১৯০৯ সালে সেলুলার জেলে এসে ১৯১৯ সালে ছাড়া পান, অর্থাৎ দশ বছর। সাভারকর জুলাই ১৯১১ সালে সেলুলার জেলে এসে জুন ১৯২১ সালে ছাড়া পান। অর্থাৎ ওনারও কালাপানি বাস প্রায় দশ বছর, তার বেশি নয়। লণ্ডনে বন্দী হওয়া থেকে রত্নগিরি জেল থেকে ১৯২৪ সালে মুক্তি পাওয়া পর্য্যন্ত ধরলে ইংরেজের জেলে তাঁর বন্দী জীবন ১৪ বছরের বেশি নয়,
আর শচীন্দ্র সান্যাল দু-দুবার সেলুলার জেলে বন্দী হয়ে মোট তের বছর ওখানে কাটিয়েছেন। ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (মহারাজ)ও আন্দামানের সেলুলার এবং ব্রহ্মদেশের মান্দালয় মিলিয়ে ভারতের বাইরের জেলে ওঁর চেয়ে বেশি সময় রয়েছেন।
মহারাজ লিখেছেন--“আমি ১৯০৮ সন হইতে ১৯৪৬ সন পর্য্যন্ত ৩০ বছর কারাগারে কাটাইয়াছি’।[10] ত্রৈলোক্য মহারাজের কালাপানি এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত, বর্মার মান্দালয়, ইসনিন ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জেল মিলিয়ে মোট জেলযাত্রা ৩০ বছরের। উনি এবং আরও অনেকে মুক্তির প্রলোভন সত্ত্বেও মাফিনামা দেননি। [11]
· শুধু সাভারকরকে বছরের পর বছর আন্দামানে নারকোলের ছোবড়া পিটিয়ে, দড়ি পাকিয়ে এবং তেলঘানিতে জুতে রাখা হয়েছিল।
--পুরোপুরি সত্যি নয়। সাভারকর কোন ব্যতিক্রম ছিলেন না। ওই অমানুষিক বেগার শ্রম তখন সেলুলার জেলে সব রাজবন্দীকেই করতে হত। বারীন ঘোষ[12], উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়[13], ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী—সবার আন্দামানের স্মৃতিকথায় এর গ্রাফিক বর্ণনা রয়েছে।
আর তাঁর জেল টিকেটের রেকর্ড( কনভিক্ট নং ৩২৭৭৮) অনুযায়ী শুধু প্রথম তিনটে বছর, অর্থাৎ ১৯১১ থেকে ১৯১৪ পর্য্যন্ত তাঁকে ওভাবে খাটানো হয়েছিল। এর মধ্যে উনি তিনটে পিটিশন দিয়েছেন। হোম সেক্রেটারি ক্র্যাডকের সঙ্গে জেলে দেখা করে সদাচরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ওঁকে আর এসব করতে হয় নি। উনি দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদি হয়ে গেলেন এবং প্রথমে একজন কেরাণীর দায়িত্ব পেলেন এবং তারপর ১৯২০ সালের মাঝামাঝি তেলঘানির ফোরম্যান হয়ে অন্য কয়েদিদের উপর হুকুম চালানোর অধিকার পেলেন, মাসিক একটাকা মাইনে।[14]
· সাভারকর কোন মার্জনা ভিক্ষা করে কোন পিটিশন দেন নি।
--- ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ের মারাঠি খবরের কাগজ লোকসত্তায়[15] লেখা হয় সাভারকর আদৌ কোন পিটিশন --পাঠান নি, আর যদিও পাঠিয়ে থাকেন তাহলেও তাতে কোন মার্জনা ভিক্ষা (ask for clemency) করেন নি। এর দেড় দশক আগে, ওয়াই ডি ফড়কে লেখেন – মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী সাভারকর কখনও ব্রিটিশ শাসকের সঙ্গে সহযোগিতা করেন নি[16]।
কিন্তু সাভারকরের গবেষণাভিত্তিক জীবনী লেখক বৈভব পুরন্দরে জানাচ্ছেন কথাটা সত্যি নয়, কারণ সাভারকর নিজেই ক্লেমেন্সি পিটিশন লেখার কথা অস্বীকার করেন নি। [17]
কতগুলো লিখেছিলেন?
এ নিয়ে অনেকে বলছেন ৫টি বা ৬টি, কিন্তু পুরন্দরে বলছেন ৭টি। পুরন্দরে তারিখগুলো নিয়েছেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র সাভারকরের জেল হিস্ট্রি টিকেট (কনভিক্ট নং ৩২৭৭৮) থেকে। উনি যে তারিখগুলো দিয়েছেন সে হিসেবে দেখলে নীচের ছবিটা পাই।
সাভারকর প্রথম পিটিশন লেখেন আন্দামানে আসার দু’মাসের মাথায়, ৩০ অগাস্ট ১৯১১ তারিখে। ওটা চারদিনের মাথায় খারিজ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় পিটিশন পাঠান চোদ্দমাস পরে, ২৯ অক্টোবর, ১৯১২ তারিখে। তাতে বলেন যে ওঁর আচার আচরণ এখন অনেক ভাল, কাজেই জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হোক।
তৃতীয় এবং চতুর্থ পিটিশন পাঠান হয় যথাক্রমে, নভেম্বর ১৯১৩ এবং সেপ্টেম্বর ১৯১৪ তারিখে। তৃতীয়টি সাভারকর পোর্ট ব্লেয়ারে জেল পরিদর্শনে আসা হোম সেক্রেটারি স্যার ক্র্যাডকের সঙ্গে দেখা করে হাতে দেন এবং সাক্ষাতকারে নিজের চিন্তায় পরিবর্তনের কথা বলে সশস্ত্র বিপ্লবের ভুল পথ ছেড়ে সাংবিধানিক পথে সহযোগিতার রাজনীতি করার আশ্বাস দেন।
সাভারকর ভাইসরয়ের কাছে মার্জনা চেয়ে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ পিটিশন পাঠান ১৯১৫ এবং ১৯১৭ সালে।
সপ্তম এবং শেষবারের মত আপিল করেন ৩০ মার্চ, ১৯২০ তারিখে।[18]
এখানে বলে রাখা ভাল যে এখন সাভারকরের মৃত্যুর পরে ন্যাশনাল আর্কাইভ থেকে ওনার পিটিশনগুলো পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে। ফলে এ নিয়ে কোন কন্ট্রোভার্সি হওয়ার কথা নয়। আর প্রথম পিটিশনটি পাওয়া যায় নি। কিন্তু তার উল্লেখ জেল টিকেটে এবং সাভারকরের দ্বিতীয় পিটিশনে রয়েছে।
দুটো জিনিস গুলিয়ে ফেলা হয়। জেলে থাকতে ক্ষমা চেয়ে মার্সি পিটিশন দেওয়া এবং জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা এবং সদাচরণের প্রতিশ্রুতির বণ্ড দেওয়া।
নিয়মমাফিক জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় শাস্তিপ্রাপ্তদের যেটা সাইন করতে হয় সেটা সদাচরণের বণ্ড যেটা সব বিপ্লবীকেই দিতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ আগে বার বার মার্জনা ভিক্ষা করে আবেদন দেন নি।
· সাভারকর গান্ধীজির নির্দেশে ক্ষমাভিক্ষার আর্জি লিখেছিলেন।
--প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বল্লেন- সাভারকর মার্জনা ভিক্ষা করে আবেদন দিয়েছিলেন, কিন্তু গান্ধীজির নির্দেশে।[19] বিরোধীপক্ষ চটপট মনে করিয়ে দেয় যে সাভারকার একাধিক মাফিনামা লিখেছিলেন। এবং প্রথম পাঁচটি - লেখার সময় ---১৯১১ থেকে ১৯১৫ সাল -- গান্ধীজি সাউথ আফ্রিকায় আন্দোলনরত এবং নিজে ওখানকার জেলে বন্দী। কিন্তু কথাটা উঠেছে কেন?
১৯২০ সালে সাভারকরের ছোটভাই ডাক্তার নারায়ণ রাও গিয়ে গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করে দাদার মুক্তির জন্য কিছু করার অনুরোধ করলে গান্ধীজি বলেছিলেন আর একবার আবেদন পাঠাতে, উনি চেষ্টা করবেন। তখন সাভারকর শেষ বা সাতনম্বর মাফিনামাটি লেখেন এবং ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’য় সাভারকরের মুক্তির দাবিতে গান্ধীজির জোরালো প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ।
· অন্য সবাই অমন মুচলেকা দিয়েছিল। এমনকি বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল—সবাই।
--এটাও ভুল।
আমরা স্যার ক্র্যাডকের রিপোর্ট (Home Deptt. Poll A. Feb. 1915, Nos. 68—160) থেকে ১৯১৩ সালে সেলুলার জেলে দু’দফায় দশজন বিপ্লবীদের সংগে কথাবার্তা নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।
ওঁর মতে সাভারকর এবং বারীন ছাড়া কেউ মাফিনামা চেয়ে পিটিশন দেন নি। সম্পাদক নন্দগোপাল এবং হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল অন্য কয়েদিদের প্রতি অন্যায় এবং জেলের সামগ্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবিতে পিটিশন দিয়েছিলেন।
বারীন্দ্র নিজের জন্যে মাফিনামা দিয়ে ছাড়া পেলে আর বিপ্লবের পথে যাবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
সাভারকর বললেন—উনি নিজে বিপ্লবের ভুল পথ ছেড়ে সংবিধানসম্মত সহযোগিতার পথে চলবেন তো বটেই, সঙ্গে যাঁরা ওনার নেতৃত্বে আস্থা রাখে এমন সব ভুল পথে পা বাড়ানো বিপ্লবীদের বুঝিয়ে সুজিয়ে ফিরিয়ে আনার এবং সরকার যা দায়িত্ব দেবে তা পালন করার কথা দিলেন।
পরের চিঠিতে (অক্টোবর ১৯১৪) উনি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেই যুদ্ধে বৃটিশ সাম্রাজ্য রক্ষার সৈনিক হবার শর্তে মুক্তি চাইলেন। এটি আর কেউ করেন নি।
ইতিহাসবিদ এবং সাভারকরের প্রশংসক ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদারের ‘দ্য পেনাল সেটলমেন্টস অফ আন্দামান অ্যান্ড নিকোবর’ একটি গবেষণাভিত্তিক প্রামাণ্য দস্তাবেজ। উনি বলছেন যে বারীন্দ্র, সাভারকরদের ক্ষমাভিক্ষা দেখে মনে হচ্ছে কালাপানির সাজা, নিঃসন্দেহে, ওই মহান বিপ্লবীদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিয়েছে এবং তারা আর সশস্ত্র ক্রান্তি অথবা গুপ্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসন ধ্বংস করার কথা ভাবছেন না।[20]
শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কোন মার্সি পিটিশন বা বন্ড দেন নি। আন্দামান থেকে ফিরে কোলকাতায় তাঁর ব্যারিস্টার নরমপন্থী কংগ্রেসি নেতা বি সি চ্যাটার্জির বাড়িতে দেখা করতে গেলে উনি তাঁকে শচীনের নিজের ভাইকে আন্দামান থেকে লেখা একটি পোস্টকার্ড দেখান, যাতে শচীন মন্টেগু -চেমস্ফোর্ড রিফর্ম অ্যাক্টের বিল (১৯১৮) নিয়ে মত প্রকাশ করেছিলেন যে সত্যিই কন্সটিট্যুশনে অমন রিফর্ম হয়ে ভারতীয়দের নিজেদের দেশ পরিচালনায় কিছুটা অধিকার দিলে কে আর ঘর ছেড়ে সশস্ত্র বিপ্লবের পথে পা বাড়াবে!
ওটা দেখে শচীন ব্যারিস্টার চ্যাটার্জিকে বললেনঃ
“বিনায়ক দামোদর সাভারকরও তো তার চিঠিতে আমার মতই চিন্তা ব্যক্ত করেছে। তাহলে আমাকে ছেড়ে দিল ওকে ছাড়ল না কেন”[21]?
ওঁর “বন্দী জীবন” স্মৃতিকথা থেকে এই বক্তব্যটিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে উল্লেখ করে বলা হয়—দেখ, শচীন্দ্র সান্যালও তো মুক্তির জন্যে চিঠি লিখেছিলেন।
এঁরা ঘুলিয়ে দেন যে শচীন্দ্রের লেখা চিঠিটি নিজের ভাইকে লেখা ব্যক্তিগত পোস্টকার্ড[22] আর সাভারকরেরটি বৃটিশ হোম ডিপার্টমেন্টকে ক্ষমা চেয়ে লেখা লম্বা এক পিটিশন।
এছাড়া বৈভব পুরন্দরে , সম্পত বিক্রম এবং ধনঞ্জয় কীর প্রমুখ সাভারকরের মারাঠি ইতিহাসবিদেরা শচীন্দ্রের “বন্দী জীবন” বইয়ে উল্লিখিত নিচের ঘটনাটি চেপে গেছেন।
পুলিশ অধিকর্তা স্যাণ্ডার্স শচীন্দ্রকে বারাণসীতে ১০০ টাকা মাইনের সরকারি চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বললেন –একটাই শর্ত, সমস্ত রাজনৈতিক কাজকর্ম ছেড়ে দিতে হবে।
শচীন্দ্র ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তর দিলেন-- যখন আন্দামান থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় কোন শর্ত মেনে নিইনি তখন আজ কেন কোন শর্ত মানতে যাব? সরকারী চাকরির করার মানে সরকারের নিয়ম কানুন মেনে কাজ করা। এর অতিরিক্ত কোন শর্ত মানা সম্ভব নয়’[23]।
এর থেকেই স্পষ্ট শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কোন মার্সি পিটিশন লেখেন নি। সাভারকরকে বড় করতে গেলে কি শচীন্দ্রকে ছোট করতে হবে?
আগের সাক্ষাতকারে শচীন্দ্র ব্যারিস্টার বি সি চ্যাটার্জিকে বললেন যে ওনার ইংরেজের সুবুদ্ধির উপর ভরসা নেই। তাই সহজে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ ছাড়বেন না[24]। তারপর উনি হিন্দুস্থান রিপাবলিক্যান আর্মি সংগঠিত করতে লাগলেন। ভগত সিং তাঁরই রিক্রুট।
· বৃটিশ সরকার সাভারকরকে দেশজুড়ে আন্দোলনের ফলে মুক্তি দিয়েছিল। উনি কোন মুচলেকা দেন নি।
-- এটাও সত্যি নয়। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রথমে দুটো শর্তে সাইন করে মুচলেকা দিতে বলল।
এক, পাঁচ বছর কোন রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করা চলবে না।
দুই, পাঁচ বছর রত্নাগিরি জেলার বাইরে পা রাখা যাবে না।
এবং পাঁচবছর পর ওনার চালচলন নিয়ে সমীক্ষা করা হবে। দরকার হলে এই প্রোবেশন পিরিয়ড বাড়ানো যেতে পারে।
সাভারকর মুচলেকায় দস্তখত করলেন।
কিন্তু শেষসময়ে আরও দুটো অপমানজনক শর্ত জুড়ে দেওয়া হল।
সাভারকরকে লিখে দিতে হবে যেঃ
এক, উনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন এবং তাঁর উচিত শাস্তি হয়েছিল।
দুই, হিংসার পথকে নিন্দা করে বিবৃতি দিতে হবে।
সাভারকর দুটো শর্তই মেনে মুচলেকা দিলেন। [25]
অবশেষে সাভারকর ৬ জানুয়ারি ১৯২৪ তারিখে ব্রিটিশ জেলের বাইরে পা রাখলেন।
আর দেশে সবাই হতবাক। ইন্দুপ্রকাশ, কেশরী ইত্যাদি মারাঠি দৈনিক ওই অপমানজনক শর্তের কথা প্রকাশিত করল। বুদ্ধিজীবিরা একজন নামকরা স্বাধীনতা সংগ্রামীর অমন বন্ডে দস্তখত করা নিয়ে বিষণ্ন। কানপুরের ‘প্রতাপ’ পত্রিকার সম্পাদক গণেশশংকর বিদ্যার্থী ৩ আগস্ট, ১৯২৮ তারিখে শ্রদ্ধানন্দ পত্রিকায় লিখলেন—এমন সব করার চেয়ে তাদের কি মরে যাওয়াই ভাল ছিল না?[26]
· সাভারকরের লণ্ডনে আইন পড়ার সময় লেনিন স্বয়ং ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে ইন্ডিয়া হাউসে তিনদিন বা চারদিনের জন্যে শেল্টার নিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
-- ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর যখন বেলোনিয়া এবং অন্য জায়গায় লেনিনের স্ট্যাচুর মুণ্ডচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন চ্যানেলে ও পত্রিকায় দলের মুখপাত্রেরা এটিকে উচিত কার্য বলে প্রশংসা করছেন তখন ইন্ডিয়া টুডে (৭ই মার্চ, ২০১৮) জনৈক প্রভাস কুমার দত্তের একটি লেখা প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় যে সাভারকরের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া হাউস নাকি প্রায় বিশ্ব বিপ্লবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তাতে আইরিশ, চৈনিক, রুশ, মিশরীয়, তুর্কি, ইরান এবং অন্যদেশের বিপ্লবীরা সম্মিলিত হতেন।
তখন নাকি লণ্ডনের অ্যানার্কিস্ট সমাজবাদী নেতা গাই অ্যালড্রেডের প্রয়াসে লেনিন ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে ইন্ডিয়া হাউসে চারবার এসেছিলেন এবং সাভারকরের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছিলেন। কী নিয়ে আলোচনা সেটা জানা যায় নি। লেখকের সূত্রঃ Savarkar.org 22/5/2017
এরপর সাভারকরের জীবন ও কাজের সাম্প্রতিক ব্যাখ্যাকার ইতিহাসবিদ বিক্রম সম্পত ও লেনিনের ইন্ডিয়া হাউসে এসে সাভারকরের সঙ্গে দেখা করার গল্পটি ফের আউড়ে দিলেন, কিন্তু কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই। [27]
এরপর hindi.opindia.com এ ২৮/০৫/২০২০ , সাভারকরের জন্মদিনে লেখা হল সাভারকর পলাতক রুশ বিপ্লবী লেনিনকে ইন্ডিয়া হাউসে তিনদিন শেল্টার দিয়েছিলেন। সাভারকর সারাদিন কাজে , ব্যস্ত ছিলেন। রাতে খাওয়ার সময় লেনিনকে জিজ্ঞেস করলেন--ক্ষমতায় এলে রুশদেশে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার কীভাবে উন্নতি করবেন? লেনিন নাকি জবাবে বলেছিলেন যে আগে ক্ষমতায় আসি, তারপরে ভাবব। ।
তখন নাকি মদনলাল ধিংড়াও (যিনি মাস দুয়েক পরে কার্জন-উইলিকে হত্যা করবেন) সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
এ জাতীয় অনেক অর্বাচীন লেখা আজকাল বিভিন্ন সাইট ও পত্রিকায় টুইটারে দেখা যাচ্ছে।
এই প্রচারের স্পষ্ট উদ্দেশ্য, আইন পড়তে লণ্ডনে যাওয়া তরুণ সাভারকর তখনই কত পরিপক্ক আন্তর্জাতিক নেতা তা প্রমাণ করা, বলা বাহুল্য কেউ এর সমর্থনে কোন তথ্য দেওয়ার দরকার মনে করেননি।
লেনিন তখন কোথায় ছিলেন?
১৯০৫ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয় এবং মেনশেভিক ও বলশেভিকদের মধ্যে বিতর্ক উগ্র রূপ নেয়। ১৯০৮ সালে লেনিন বগদানভের দার্শনিক প্রবন্ধের জবাবে অভিজ্ঞতাবাদ ও সত্যের আপেক্ষিক রূপ ও ব্যক্তিনিরপেক্ষ রূপ, এবং অন্তিম সত্য বলে আদৌ কিছু হয় কিনা—এইসব নিয়ে একটি গ্রামভারী দর্শনের বই লেখায় ব্যস্ত। বইটি হল “মেটিরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম—ক্রিটিক্যাল কমেন্টস অন এ রিয়্যাকশনারি ফিলজফি’।
লেনিন ১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্য্যন্ত জেনেভায় বসে বইটি লেখেন। তাতে পদার্থবিদ্যার দার্শনিক ব্যাখ্যা নিয়ে একটি অধ্যায় যোগ করার উদ্দেশ্যে নভেম্বরে লণ্ডন গিয়ে একমাস ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করেন।
তারপর ডিসেম্বরে প্যারিস গিয়ে এপ্রিল ১৯০৯ পর্য্যন্ত ওখানে বসে প্রুফ দেখেন। বইটি ১৯০৯ সালের মে মাসে রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়।[28]
তাহলে ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে লেনিন ইন্ডিয়া হাউস যান কী করে?
এই উদ্ভট থিওরির অন্য আপত্তিগুলোঃ
· সাভারকর দেশি বিদেশি অনেক বিপ্লবীদের নিয়ে লিখেছেন বা উল্লেখ করেছেন –কিন্তু লেনিনের সঙ্গে আলাপ? কোথাও এমন দাবি করেন নি।
· ইন্ডিয়া হাউসে সাভারকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এম বি পি টি আচার্য, যিনি পরে কাবুলে ১৯২০ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন, এবং লেনিনের সঙ্গে দেখা করেন, তিনিও সাভারকরের সঙ্গে ইন্ডিয়া হাউসে লেনিনের পরিচয় নিয়ে কিছু লেখেন নি।
· রয়-লেনিন থিসিসের এম এন রায়, যিনি কমিন্টার্নের প্রতিনিধি হিসেবে মেক্সিকো , চীন এবং কাবুল গিয়েছেন, ১৯৩৭ সালে সাভারকর মুক্তি পেলে দেখা করতে তাঁর বাড়ি গিয়েছেন—তিনিও কোথাও এমন কিছু লেখেন নি।
· সাভারকর এবং তাঁর সহকারী বাল সাভারকর দাবি করেছেন যে নেতাজি সুভাষ ১৯৪০ সালে তাঁর বোম্বের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। তখন সাভারকর তাঁকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে জাপান/জার্মানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী সুভাষ ১৯৪২ সালে পালিয়ে জার্মানি পৌঁছে যান এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন।[29]
এ নিয়ে তাঁর প্রথম জীবনী লেখক ধনঞ্জয় কীর লেখেন যে সাভারকর হলেন ভারতের মাজ্জিনি (ইতালীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী) এবং শিবাজীর রাজনীতির ভক্ত সুভাষ চন্দ্র তাঁর অনুগামী, অর্থাৎ ভারতের গ্যারিবল্ডি। সুভাষ যা করেছেন সব সাভারকরের নির্দেশ মেনে![30]
জানুয়ারি ১৯৪১ এ ভারত থেকে নাটকীয় অন্তর্ধানের ছ’মাস আগে নেতাজি ২২শে জুন, ১৯৪০ তারিখে বোম্বের সাভারকর সদনে গিয়ে ওঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তখন সাভারকর বোসকে দেশের বাইরে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে পরামর্শ দেন[31]।
---- এর মধ্যে সত্যি কতটুক? এটা ঠিক যে নেতাজি ২২ জুন, ১৯৪০ তারিখে বোম্বের সাভারকর সদনে সাভারকরের কাছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য সমর্থন চাইতে গিয়েছিলেন এবং তার আগে উনি একই কারণে জিন্নার সঙ্গেও দেখা করে এসেছেন।
সেদিনের আলোচনা প্রসঙ্গে নেতাজি নিজে তাঁর বইয়ে লিখে গেছেন—‘ দেখলাম মিঃ সাভারকর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কিছুই বোঝেন না। ওনার একটাই চিন্তা—কী করে হিন্দু যুবকদের ব্রিটিশ ফৌজে ভর্তি করিয়ে মিলিটারি ট্রেনিং দেওয়া যায়’![32]
রাসবিহারী বসু মার্চ, ১৯৪২শে ( কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলন শুরুর ঠিক আগে) টোকিও থেকে এক চিঠি লিখে সাভারকরকে অনুরোধ করলেন যাতে উনি বৃটিশের এই দুর্বল সময়ে ওদের সমর্থন না করেন, শত প্রলোভন এমনকি স্বাধীনতার আশ্বাসেও বিশ্বাস না করেন।-- দেশের সব অনিষ্টের মূল বৃটিশ শক্তিকে ধ্বংস করতে জাপানের সংগে হাত মেলালে কেমন হয় ?[33]
সাভারকর হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে ওদের বিশিষ্ট নেতা জি ভি কেলকরের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া তাঁর সভাপতির অভিভাষণে বললেন—হিন্দুরা ‘এক মিনিট সময় নষ্ট না করে’ ফৌজে যোগ দিক। কারণ , জাপান অক্ষশক্তিতে যোগ দিয়েছে । এখন বৃটিশের শত্রুদের ভারতের মাটিতে ঠেকাতে আমাদের ভারত রক্ষার জন্যে সরকারের যুদ্ধপ্রচেষ্টাকে সবরকমে সাহায্য করতে হবে।[34]
অগাস্ট, ৪২ এর শেষে সুভাষ চন্দ্র বোস জার্মানি থেকে এক রেডিও ব্রডকাস্টে বললেন ‘কুইট ইন্ডিয়া’ আন্দোলনে ভারতাবাসী জেগে উঠেছে এবং এই আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে । উনি আরও বললেন, ‘ আমি মিঃ জিন্নাহ, মিঃ সাভারকর এবং আরও যারা এখনও বৃটিশের সংগে সমঝোতার কথা ভাবছেন তাঁদের বলছি -- তাঁরা শেষবারের মত বুঝে নিন যে আগামী দিনে বৃটিশ সাম্রাজ্য বলে কিছু থাকবে না । আজ যারা স্বাধীনতার জন্যে লড়ছেন শুধু তাঁরাই স্বাধীন ভারতে সম্মান পাবেন এবং যাঁরা আজ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বাভাবিকভাবেই তুচ্ছ বলে গণ্য হবেন’।[35]
সাভারকর সুভাষ চন্দ্র বোসের রাজনীতি নিয়ে কী ভাবতেন?
১৯৩৭ সালে সাভারকরের উপর থেকে রাজনৈতিক কাজকর্মের বিধিনিষেধ উঠে গেলে সুভাষচন্দ্র বসু সাভারকরের বাড়িতে দেখা করতে গেলেন। উদ্দেশ্য সাভারকরকে কংগ্রেসের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত করা।
সাভারকর সুভাষচন্দ্রকে ফিরিয়ে দিলেন। কারণ, হিন্দু মুসলমান প্রশ্নে সুভাষচন্দ্রের অবস্থান সাভারকরের বিপরীত। জীবনীকার ধনঞ্জয় কীর জানাচ্ছেন সাভারকরের অভিমতে সুভাষচন্দ্র ‘কংগ্রেস ক্যাম্পের কুটিল নেতা’। [36]
১৯৩৮ সালেই দুজনের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়। সুভাষ চন্দ্র (তখনও কংগ্রেসের সভাপতি) বললেন যে ভারতীয় ভাষা দেবনাগরী লিপির বদলে রোমান হরফে লেখা উচিত। সাভারকর ওঁর সমালোচনা করে বললেন যে আদৌ নয়, সংস্কৃত ঘেঁষা হিন্দিই আমাদের জাতীয় ভাষা হওয়া উচিত, এবং তার থেকে উর্দূ শব্দগুলো বেছে বেছে বাদ দিয়ে তবে[37]।
পুণে শহরে অগাস্ট ১৯৩৯ এর জনসভায় উনি সমালোচনা করলেন গান্ধীইজম, বোসইজম, এবং রয়ইজম (মানবেন্দ্রনাথ রায়ের চিন্তাধারা) –তিন রাজনীতিরই। কিন্তু সব চেয়ে কড়া কথাটি বললেন সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে—মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বোসের খুব বেশি তফাৎ নেই, কিন্তু মুসলিম তোষণের ব্যাপারে ও আরও একধাপ এগিয়ে আছে’[38]।
ফরওয়ার্ড ব্লক গঠনের পরে ১৯৪১ সালে হিন্দু মহাসভার ভাগলপুর অধিবেশনের সময় সাভারকর লিখলেন—
‘কিন্তু কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক এবং ভারতের ওই সব সংগঠন, যারা ভৌগলিক রাষ্ট্রবাদের মিথ্যে ধারণাকে মানে, তারা বাস্তবিক রাষ্ট্রবাদের এই অবধারণার বিরুদ্ধে পাপের অংশীদার’[39]।
এখানে ‘বাস্তবিক রাষ্ট্রবাদ’ বলতে সাভারকরের সাংস্কৃতিক হিন্দু রাষ্ট্রবাদকে বোঝানো হয়েছে।
জীবনীলেখক ধনঞ্জয় কীরের মনে হল না যে জাপানকে আটকাতে বৃটিশ ফৌজে যোগ দিয়ে লড়াই করা এবং জাপান-জার্মানির সঙ্গে মিলে ব্রিটিশ ফৌজের সঙ্গে লড়াই করার পরামর্শ একেবারে পরস্পরবিরোধী অবস্থান?
এ’ধরণের আরও গল্পকথা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব চোখে পড়ে। লণ্ডনে গান্ধীজিকে ১৯০৬ সালে নিরিমিষ খাওয়া নিয়ে ব্যঙ্গ, আন্দামানে বাঙালী বিপ্লবী ননীগোপালের অনশন ভাঙাতে সাভারকরের উদ্যম, গদর পার্টির নেতা লালা হরদয়ালকে সমাজবাদীর বদলে হিন্দুত্ববাদী বলে প্রচার, ঝাঁসির পণ্ডিত পরমানন্দকে এবং মেদিনীপুরের গাঁয়ের ড্রইং শিক্ষক এবং ভিটেমাটি বেচে প্যারিসে গিয়ে বোমা বানানো শেখা হেমচন্দ্র দাস কানুনগোকে (মানিকতলা বোমার মামলার মূল এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট) সাভারকরের শিষ্য এবং ওঁর অভিনব ভারত দলের সদস্য বলে প্রচার ইত্যাদি।
সে’সব প্রসঙ্গ বারান্তরে হবে।
কিন্তু এই ধরণের কাজ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস চর্চার ধারাকে হালকা করে দিচ্ছে। একমাত্র উপায় সঠিক তথ্য এবং দলিলকে উপযুক্ত প্রমাণ সহ পাঠকদের সামনে পেশ করা। তাই এই লেখা।
======================================================================
[1] আত্রে, “কড়েছে পানি”, খন্ড-২ পৃঃ ৩১৫-১৬।
[2] ঐ, পৃঃ ৪৩২।
[3] শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, ‘বন্দীজীবন’(হিন্দি), পৃঃ ১৯৬-৯৭।সাক্ষী প্রকাশন, দিল্লি, ২০২০ সংস্করণ।
[4] সাভারকর; “হোয়ার্লউইন্ড প্রোপাগান্ডা,; পৃঃ ১৫৭-৬৮।
[5] সাভারকর; “হোয়ার্লউইন্ড প্রোপাগান্ডা, পৃঃ ৫০-৫১।
[6] Savarkar, “The First Indian War of Independence—1957”, pp: 140-41.
[7] পুরন্দরে; ““সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ১৭৭।
[8] “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ৩৩৩।
[9] গোখলে, “স্বতন্ত্রবীর সাভারকর”, পৃঃ ১১৫-১৮।
[10] ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী, “জেলে তিরিশ বছর’, প্রকাশক শ্রী সুরেশ চন্দ্র মজুমদার, গৌরাঙ্গ প্রেস, আনন্দ -হিন্দুস্থান প্রকাশনী, কলিকাতা, ১৯৫৪।
[11] ঐ ।
[12] বারীন্দ্র নাথ ঘোষ, ‘দ্য টেল অফ মাই এক্সাইল-টুয়েল্ভ ইয়ার্স ইন আন্দামান’, আর্্য অফিস, পণ্ডিচেরি, ১৯২২।
[13] উপেন্দ্রানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’, পারুল প্রকাশন, কোলকাতা, ২০২০।
[14] সাভারকর সমগ্র, খন্ড ২, প্রভাত প্রকাশন, দিল্লি, পৃঃ ২৪২; এবং লেখক অশোক কুমার মিশ্রের “সাভারকর, কালাপানি অউর উসকে বাদ”, রাজকমল পেপারব্যাক্স, দিল্লি, ২০২২, পৃঃ ৯৬; এবং ধনঞ্জয় কীর, ‘বীর সাভারকর’, পপুলার প্রকাশন, মুম্বাই, চতুর্থ সংস্করণ, ২০১৯; পৃঃ ১৫৫।
[15] লোকসত্তা, ২৭ মে, ২০১৮।
[16] ‘ এ কমপ্লেক্স হিরো’, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৩১ অগস্ট, ২০০৪, দিল্লি।
[17] পুরন্দরে, ‘সাভারকর’, পৃঃ ১৭২।
[18] ঐ , পৃঃ ১৫৯।
[19] ১৪ অক্টোবর, ২০২১ এর টাইমস্ অফ ইণ্ডিয়া এবং ডেকান হেরাল্ড।
[20] আর সি মজুমদার, দ্য পেনাল সেটলমেন্টস অফ আন্দামান অ্যান্ড নিকোবর, মিনিস্ট্রি অফ কালচার, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, ১৯৭৫; পৃঃ ১৪৫-১৭৫ এবং পৃঃ ১৯৮।
[21] শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, “বন্দী জীবন” (হিন্দি), পৃঃ ২২৩, সাক্ষী প্রকাশন, দিল্লি , ২০২০ সংস্করণ।
[22] ঐ, পৃঃ ২০৬।
[23] ঐ, পৃঃ ২৫৯।
[24] ঐ, পৃঃ ২২৩-২২৪।
[25] Bombay Chronicle, 21 February, 1924 এবং বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর”, পৃঃ ১৬৮।
[26] বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর”, পৃঃ ১৭০।
[27] বিক্রম সম্পত, ‘ইকোজ ফ্রম এ ডিস্ট্যান্ট পাস্ট’, পেঙ্গুইন(২০১৯), পৃঃ ১৪৯।
[28] Lenin, Collected Works, Vol.14, Progress Publishers, Moscow. 1972. Pp-17-362 & Marxist.org
[29] বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর”, পৃঃ ২৫৬।
[30] ধনঞ্জয় কীর, বীর সাভারকর, পৃঃ ২৬০।
[31] ধনঞ্জয় কীর, বীর সাভারকর, পৃঃ ২৬০।
[32] সুভাষ চন্দ্র বসু,” দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’, পৃঃ ৩৪।
[33] রথ এন্ড চ্যাটার্জি; “ রাসবিহারী বসু”, পৃঃ ১৭১-৭৪।
[34] বম্বে ক্রনিকল, ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৪১।
[35] সুভাষচন্দ্র বোস, “টেস্টামেন্ট অফ সুভাষ বোস”, পৃঃ ২১-২৪।
[36] ঐ, পৃঃ ১৯৮।
[37] সাভারকর, ‘বিবিধ লেখ’, পৃঃ ৮০-৯১ , এবং পুরন্দরে, ‘সাভারকর’, পৃঃ ২৪৩।
[38] বোম্বে ক্রনিকল, ৪ আগস্ট, ১৯৩৯ এবং বৈভব পুরন্দরে “সাভারকর”, পৃঃ
[39] সাভারকর, হিন্দু রাষ্ট্র দর্শন, পৃঃ ১০২; Savarkar.org/en/pdfs
0 comments: