undefined
undefined
undefined
ধারাবাহিক - শ্যামাপ্রসাদ সরকার
Posted in ধারাবাহিক(৬)
অবশেষে আজ শনিবার। রাইএর মনটা সকাল থেকে আনন্দে নাচছে। অরাতিদমনের সাথে সাউথসিটির ফুডকোর্টে ঠিক বিকেল পাঁচটার সময় রাইএর সাথে দেখা হওয়ার কথা। সোমেশকে অফিস বেরোবার আগে কর্নফ্লেক্স আর ফ্রুটজ্যুস্ করে দিয়ে নিজে এককাপ কালো কফি নিয়ে ব্যালকনিতে রাখা দোলনায় এসে বসলো। কদিন আগেই সরস্বতী পুজো হয়ে গেছে বলে বাতাসে একটা আলগা বসন্তের আমেজ ঘুরপাক খাচ্ছে। রাই কিন্তু এখনও সরস্বতীপুজোর আগে কুল খায়না। তিতলি থাকার সময় যদিও বা পুজোটা হত বাড়িতেই , এখন অবশ্য সে সব পাট উঠেই গেছে। গ্রীনউইচ্ কলোনীর গ্রোভের ধার গুলোতে থাকা সারিবদ্ধ গাছেদের ভীড়ে দু একটা রাধাচূড়া গাছ থেকে হলদে ফুল ঝরে পরে ড্রাইভওয়েটা হলুদ বাসন্তিকায় ভরিয়ে দিয়েছে । আর তার ফাঁকে এদিক ওদিকে তাকালে দেখা দিচ্ছে শিমূল পলাশের রক্তিম লাস্যও। রাইএর বুকে সতেরোর ভীরু স্পন্দনটা ধুকপুক করে উঠছে থেকে থেকেই। অরাতির জন্যই কি শেষে পত্রহীন শাখার দৈন্য বিমোচিত হবে?
" তুমি যারে বান্ধুলির ফুল বলে চেনো
আমি তারে কৃষ্ণ ঢলানি...
সমূহ আখরে জড়ানোর আগে শূন্যতায় ভাসাই
যমুনা, মোহনবাঁশি, ডোলি নিয়ে আসা চারো কাহার,
তারপর তাদের পদশব্দ বিন্দু বিন্দু হয়ে গলে গেলে,
দেখি রেখে গেছে শীত আর কয়েক ছটাক ঘুম!
কান পেতে পেতে পেতে পেতে সেই নির্ঘুম রাতে
ঘুমকে শুনি, জানি,
আমার আনন্দ এই,
আমি কলঙ্কে ডুবছি কিন্তু পালাচ্ছি না...
ক্রমে...
যত শীত যত বাড়ে, ব্যথা তত ঝরে,
বুঝি, আ-চেতন ঘুমের কাছে ফেরার পথ ক্রমাগত মসৃন হচ্ছে..."
এই লাইনগুলোই আঙুলের ডগায় কেমন একটা অনুরণনের মত এসে গেল। রাই অস্থির হয় ভিতরে ভিতরে।
এত উন্মাদনা এখনও কি মানায়?
**************************
আজ ধূলোর ঝড়ের দাপাদাপিতে চারদিক খানিকক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে রইল। রাধা তার বাবার কাছে একবার গল্প শুনেছিল যে তৃণাবর্ত অসুর নাকি এমন ঝড়ের বেশে এসে ছোট্ট কানহাইয়াকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে কানহাইয়ার কাছে নিজেই অলৌকিকভাবে বধ হয়ে গেছিল। আজ অবশ্য সমস্ত আর্যাবর্তে তার চেয়ে অনেক বড় ঝড় কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে উঠতে চলেছে।
ব্রজভূমিতেও সে খবর আজকাল লোকের মুখে মুখে ফিরছে। আসলে হাতের মুঠো গলে অনেকটা বয়স আর সময় এখন পার হয়ে গেছে। রাধা শুনতে পায় এই মহাযুদ্ধের মূল নায়ক নাকি কানহাইয়া'ই!
নিজে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র থেকে সে কি করে পারে এমন অদ্ভূত কান্ড ঘটাতে?
রাধা জানে আজকের দ্বারকাধীশ কৃষ্ণ কিছুতেই আর তার কানহাইয়া হয়ে এই জীবনে ফিরতে পারবে না। সে এখন এক বৃহত্তর পৃথিবীর অংশ। এই ক্ষুদ্র ব্রজমন্ডল বা গোপবালাদের আকূল হৃদয়ে তাকে আর ধরে রাখতে পারা যাবেনা। রাধার কিন্তু তবুও বিশ্বাস হয় না, যে কানহাইয়াতে সে সদা নিমগ্ন, যে কানহাইয়া আর সে অভেদ সত্ত্বা বলে চিরঅনুভূত, সেই কানহাইয়ার সাথে যতদিন সে বাঁচবে আর কখনোই সাক্ষাৎ লীলাযাপন হবে না। এমনই নিষ্ঠুর বিধিলিপি রাধার জন্য বাকী জীবনভর বইতে হবে ।
রাধার প্রিয়তম কানহাইয়া আর তাদের ফেলে আসা দিনরাত্রির কথামালাগুলো আগামীদিনের ব্রজভূমি, কদম্ববন, মাধবীকুঞ্জ, রাসমঞ্চ এইসবের মধ্যেই অস্পষ্ট এক অপসৃয়মান স্মৃতির সারণী হয়ে রয়ে যাবে।
আর যমুনার জলে শুধু বয়ে যাবে সময়ের স্রোত।
এই পৃথিবীতে যতদিন প্রেম আর উৎসর্জন থাকবে ততদিন তাদের মান-অভিমান, সমর্পণ আর বিসর্জন থেকে যাবে স্বকীয়া আর পরকীয়ার বৃথা দ্বন্দ্ব আস্ফালনে।
রাধা এখন চুপিচুপি একটাই প্রার্থনা করে, মনখারাপ লাগলে তার কানহাইয়া যতই বড়মানুষ হয়ে যাক না কেন, কোনো নিরালা জনশূন্য কোণে গিয়েও যেন সে সব চাপা অভিমান আর কষ্টগুলো একবার সেই রাখালিয়া আড়বাঁশীর সুরে ফুৎকার দিয়ে অচিরেই ভাসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাটুকু যেন কখনো না হারিয়ে ফেলে। কানহাইয়ার সেই বাঁশীর সুর লক্ষ লক্ষ যুগ অতিক্রম করে রাধা এমনকি জন্ম জন্মান্তর পরেও ঠিক একবার শুনেই চিনতে পারবে।
আজ কানহাইয়া মানে যদি দ্বারকাপতি কৃষ্ণই হয়, তার সাথে আয়ানঘরণী ব্রজাঙ্গনা রাধার আর দেখা না হওয়াই শ্রেয়। সেই কানহাইয়া বরং 'রাজা' হয়েই আজীবন থেকে যাক রাধার মাঝবয়েসী হৃদয়ে, তাতে আর তার কোনো অভিযোগ নেই।
********************
ঠিক বিকেল চারটের সময় ফোনটা এল। রাই স্থাণুর মত হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ফোনটা যেন একটা ঝোড়ো হাওয়ার মত এসে একরাশ ধূলোর মেঘ উড়িয়ে দিয়ে দাঁড়াল রাইএর কাছে। বাইপাসের ধারে মেরীল্যান্ড নার্সিংহোম থেকে প্রবাল মানে সোমেশের ব্যাবসার ম্যানেজার ছেলেটি জানাচ্ছে আজ অফিসে কাজ করতে করতে লাঞ্চের একটু পরে আচমকা একটা কার্ডিয়াক এ্যাটাকে সোমেশ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ায় ওরা সোমেশকে তড়িঘড়ি এখানে এনে ভর্তি করেই ওকে খবরটা জানাতে ফোনটা করছে। একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে প্রবাল বলে -' বৌদি! তাড়াতাড়ি চলে মেরীল্যান্ড নার্সিংহোমে চলে এস, দাদা এখনো সেন্সলেস্। ওরা ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাবার কথা বলছে...কিছুউউউ ফর্মালিটিইইই আছেএএএ গোওওওও তোমাআআআর। " শেষের কথাগুলো দীর্ঘায়িত যান্ত্রিক স্বরে যেন ভেসে এল গহন অতীত থেকে। আসলে সোমেশের কদিন প্রেশারটা বেড়েছিল ঠিকই, তাই বলে এরকম একটা বিপদ আসবে তা যেন ভাবাই যায়না।
রাই আলিকে গাড়ি বের করতে বলে জলদি তৈরী হতে যায়। হাতঘড়িতে সময় বলছে এখন বিকেল পাঁচটা বাজতে আর দশমিনিট বাকী।
*************
সনাতনকে সামনে দেখলে মীরার মনে শ্রদ্ধা জাগে ঠিকই, কিন্তু তার পরমরতনের খোঁজ তিনিও এতদিনে তাকে দিতে পারেননি। স্বয়ং শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর দর্শন পেলে বোধহয় এমনটা হত না। মীরার সেই আফশোস টা আজীবন থেকেই যাবে।
বিভিন্ন তীর্থ একবার ঘুরে দেখতে চায় মীরা। আবার নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে নিজেকে। সনাতন তাই প্রসন্নমনেই অনুমতি দেন। যাক, কিছুদিন অন্তত দীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারটা পিছিয়ে দেওয়া গেল। মীরা যে একজন নারী এই প্রভেদটি সনাতন আজও কাটিয়ে উঠিয়ে সহজ হতে পারেননি। অথচ মীরা কি ভয়ঙ্কর সত্যিটা সহজে বলতে পারে,
' বৃন্দাবনে শুধু বিহারীজীই পুরুষ! আর সবাই নারী! শুধু দৈহিক চিহ্নে নয়, আত্মবোধেও...'।
দ্বারকায় এসে কিছুদিন থাকবার মনটা কাশীর জন্য উতলা হয়েছে বলে মীরা আবার পথ চলতে শুরু করে। মধ্যবয়সিনী সাধ্বী হলেও তার রূপ এখনো অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মীরা এইসব বাধা কাটিয়ে 'পরম' এর অণ্বেষণে পথে বেড়িয়েছে। এখনই তো আসল পরীক্ষা।
অসি'ঘাটের বুরুজে মীরা এসে বসে। সূর্যাস্তের পর এখনো গৈরিক আভা গঙ্গার বুকে দোল খাচ্ছে। সন্ধে নামার আগে যেন যোগিনীর বেশ ছেড়ে অভিসারিকা হবে পৃথিবী এবার।
" হেরী ম হাঁসু হরি বিন রহ্যো ন জার
সাসু লড়ে, মেরি ননদ খিজারে,রাণা রহ্যো রিসার/ পহরো ভী রাখ্যো,চৌকী বিঠায়,তালা দিওত হাজার/মীরা কে প্রভু গিরিধারী নাগর,আওরণ মোহে তুহারীঁ দ্বার...."
গান গাইতে গাইতে মীরা দেখতে পেল একজন পলকা রোগা চেহারার একটি লোককে। মীরার চেয়ে বোধহয় একটু ছোটই হবে বয়সে,চোখ বুজে তার গানের তালে তালে মাথা নাড়ছিল।মীরার মনে হল একে কি আগে কোথাও সে দেখেছে? কিন্তু....না...লোকটি এবার নিজেই এগিয়ে এসে নমস্তে জানাল মীরাকে। মীরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবে কে ইনি? স্মিত হেসে লোকটি যেন ওর মনের দ্বন্দ্বটি পড়তে পারে। ভারী মিঠে গলায় সে বলে ' কৃষ্ণসাধিকা মীরা'বাঈকে এত কাছে দেখতে পেয়েও না চিনতে পারলে নিজেই ঠকতে হয়!' মীরা এবার নিজেই হেসে ওঠে। বলে 'আপনি কি তুলসীদাস জী?' হো হো করে এবার লোকটিও হেসে ওঠে। বলে ' আরে বাপ রে! আমি তো জন্ম মূর্খ! রাম! রাম! আমি লিখব রামচরিতমানস? তবে উনি এই কদিন আগেও ছিলেন আমাদের মধ্যে, ক'মাস আগেই ওঁর স্বর্গবাস হয়েছে!'
মীরা লোকটির চোখে চোখ রেখে দেখতে পায় সেখানে ভাবরাজ্যের হদিশ লেখা রয়েছে যেন। কে আসলে এই লোকটি, কোনও সন্ত হবেন নিশ্চয়ই। ততোক্ষণে একটু হালুয়া আর মিছরির জল নিয়ে সে এসে হাজির হয় মীরা'র জন্য। সত্যি এবারে অস্বস্তিতে পরে মীরা। লোকটি কিন্তু এতক্ষণে একবারও মীরার চোখ থেকে নিজের চোখ সরায়নি। মীরাকে অবাক করে দিয়ে সে বলে ওঠে -' পানী মেঁ মীন পিয়াসী/দেখত লাগতক হাসি! লোকে আমায় বলে 'কবীর দাস'! আমিও আপনার মত 'পরম'কে খুঁজছি। রাস্তা আলাদা হলেও আমাদের গন্তব্য কিন্তু এক!" গঙ্গার জোলো হাওয়া মেখে ততোক্ষণে সন্ধে নেমে এসেছে। মীরা'র মনে হয় এর সাথে কুড়ি বছর আগে কেন তার দেখা হলনা। দুজনে না হয় দুটো আলাদা পথ ধরেই এসে এক জায়গায় এসে মিলিত হত! মীরার দুচোখ জলে চিকচিক করে ওঠে। কবীর এরপর কাছে এগিয়ে এসে মীরার হাত দুটো ধরে প্রথমে নিজের বুকে স্পর্শ করে তারপর মাথায় রাখে স্বস্তিস্পর্শের যাচনায়। মীরা যেন পাথর হয়ে গেছে। কবীরের চোখের ভিতর দিয়ে তবে কি সেই 'পরম ধনে'র ঠিকানা লেখা আছে? কিছুক্ষণ চুপ করে দুজনে গঙ্গার ঘাটে বসে থাকে। সময় আর জীবন বইতে থাকে গঙ্গার জলে।অলৌকিক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মীরার শূন্যহৃদয়ের অব্যক্ত মুহূর্ত আজ বদলে গেছে পারমার্থিক সম্পদে। 'গিরিধারী নাগর' এতদিনে মীরার মনষ্কামনা পূর্ণ করলেন। কবীর উঠে পরে এরপরে। মীরাকে বলে কাছেই আছে রণছোড়জীর আখড়া, ওখানে চাইলে সে রাতে থাকতে পারে। ওটি বিধবা মহিলাদের আশ্রম। মীরার পক্ষে সেটা নিরাপদ হবে। মীরার মুখে কথা যোগায় না। সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। কবীর উঠে চলে যেতে যেতে দু লাইন পদের ধূয়ো গেয়ে ওঠে,
"জ্যো নৈনো মেঁ পুতলী, ত্যো মালিক ঘট মাহীঁ
মুরখ লোগ ন জানহিঁ; বাহির ঢুঁঢন জাহীঁ..."
মীরার বুকে ওঠে আনন্দসাগরের হিল্লোল!
****************************
নার্সিংহোমে পৌঁছে রাই জানতে পারল সোমেশকে যদিও ভেন্টিলেশনে নিয়ে যেতে হয়নি তবুও বাহাত্তর ঘন্টার আগে কিছু বলা যাবেনা। জ্ঞান ফিরলেও একটা ডিজিনেস আছে। এই পর্যায়টা যে কোন মুহূর্তেই ক্রিটিক্যাল হয়ে যেতে পারে। অবস্থা যে সিরিয়াস এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তিতলিকে এখনো কিছু জানায়নি। কাল পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর বলবে। ফ্লাইটের টিকিটও পাঠিয়ে দেবে না হয়। নার্সিংহোমের লোকেরা ওর পরিচয় জানতে পেরে সোমেশের পার্স, মঁ ব্লা কলম আর ফোনটা রাইকে এসে ফেরত দিয়ে গেল।
এই কয়েকঘন্টায় রাই নিজেকে এত একা আর কখনো ভাবেনি। সোমেশের এই অবস্থাটা এতটাই অকল্পনীয় যে রাই শুধু যন্ত্রের মত রিঅ্যাক্ট করে গেছে এতক্ষণ। অরাতির সাথে দেখা হবার কথাই ইনফ্যাক্ট মাথায় ছিল না। ও বোধহয় এসে ফিরে যাচ্ছে নিশ্চয়ই।
ডাক্তার মজুমদার রাইকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন। সোমেশের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। এখানে আনতে আর দশটা মিনিট দেরী হলেও বিপদ হতে পারতো। তবে উনি কেবিনে এক্ষুণি ভিজিটর এ্যালাও করতে রাজি নন। বাইরে থেকে শুধু রাইকে একবার দেখতে দেবেন অবশ্যই। প্রবাল বলল - 'তুমি যাও বৌদি দেখে এস ,আমি নীচে ওয়েট করছি। ফেরার পথে আমায় পাটুলী মোড়ে একটু লিফ্ট দিয়ে দিলেই হবে।'
কাঁচের জানলা দিয়ে দেখতে পেল নানা রকম লাল নীল আলো আর যন্ত্রের আঁকিবুঁকির মধ্যে সোমেশ শুয়ে আছে। অক্সিজেন চলছে। চোখ বন্ধ। রাইএর চোখে একটুও কান্না অবশিষ্ট নেই কেন আজ? রাই আর না দাঁড়িয়ে থেকে নীচে নেমে এল।
প্রবালকে নামিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে রাই অরাতির নম্বরটা ডায়াল করল একবার।
কি আশ্চর্যের ব্যাপার ব্যাগের মধ্যেও ঠিক তখনই সোমেশের ফোনটাও বেজে উঠল। নিশ্চয়ই কেউ খবর নিতে ফোন করছে ভেবে ফোনটা বের করে দেখে রাই।
মোবাইলের স্ক্রীনে যে নম্বরটা ভাসছে সেটা আসলে রাই এর নম্বর। অরাতির নম্বর আর সোমেশের ফোনে তার মানে এতদিনের সবকিছু তাহলে সোমেশেরই কীর্তি তাই কি সে ভিডিও কল বা ফোন ধরায় অনীহা দেখাত ধরা পড়ে যাবার ভয়ে? সোমেশ রাই কে সন্দেহ করতো তাহলে? চাপা টেনশন আর নিজেকে মুক্ত না করতে পারার কষ্টই কি এই এ্যাটাকটার কারণ....নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় রাই এর! সমস্ত দূনিয়া ওলটপালট হয়ে আসে।
বাইপাসের রাস্তায় অসংখ্য গাড়ীর ভিতরে রাই ওদের গাড়ীর মধ্যে বসে কুঁকড়ে যায় ভিতর থেকে। এত অভিমান, এত ছলনা সব কি এই হৃদয়ের অবাধ্যতার জন্য!
রাই ঘরে এসে চোখের জলে উন্মুক্ত করে নিজেকে। এত জল কোথায় ছিল এই মরা নদীর অগভীর খাত জুড়ে?
অরাতিদমন সকাল এগারোটার সময় একটা টেক্সট করেছিল। বিকেলে দেখা করতে যাওয়ার আনন্দে আর উত্তেজনায় সেটা পড়ে দেখা হয়নি এতক্ষণ!
বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ ভেসে এল এই প্রথম তার প্রেমিকের লেখায়-
"কোথায় হারাবে পাখি
ফাগুন আগুন জ্বালায় যখন
আমি যত্নে তোমায় বুকের মাঝে রাখি
তুমি কোথায় হারাবে পাখি?
আড়াল টেনে আছি, চোখ বেঁধে আছি
তোমার থেকে দূরে, মৃত্যুর কাছাকাছি...."
_________সমাপ্ত__________
# কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ১. মীরা মন বৃন্দাবন - অমিয় সিদ্ধার্থ
২. মীরার জীবন ও সাধনা- মিতা দে বিশ্বাস
0 comments: